![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুঃসাহসী স্বপ্ন দেখা তরুণ। জন্ম \'সাগরকন্যা\' পটুয়াখালী জেলায়। স্বপ্নচারী। ভ্রমণপ্রেমী। অলস। ভীষণ ঘুমকাতুরে। ভালো লাগে গল্পের বই পড়তে। সবথেকে বেশি পছন্দ করি রহস্য-রোমাঞ্চ-থ্রিলার ও রম্য লেখা।
অনেক ভণ্ড পীরেরা যেভাবে আস্তানা গেঁড়ে বসে থাকেন, তেমনি ভাবে আস্তানা গেড়েছেন আমাদের এলাকার ফটকু ঘটক। ঘটক হিসেবে তার মতো সক্রিয় ব্যক্তি দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া ভার। আমাদের মাঝে মাঝে মনে হয়, ফটকু ঘটকের মতো যদি আরো কয়েকজন ঘটক এই বঙ্গ দেশে জন্ম নিতেন তাহলে আর কোনো ঘরেই চিরকুমার ছেলে কিংবা মেয়ের দেখা মিলত না। এদিকে আমিও আছি মহা টেনশনে। ফটকু ঘটক এত ব্যস্ত যে আমার প্রেমিকার সাথে একটা হিল্লে করার ব্যবস্থাও করতে পারছি না। মুঠোফোনে প্রেম। কয়েকদিন দেখা সাক্ষাৎও হয়েছে। ফটকু ঘটক আবার প্রেম-পিরিতির বিয়ে সমর্থন করে না। ওদিকে মেয়ের বাবা তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন।
যাই হোক, একদিন ফটকু ঘটকের শুনাম শুনে পাশের গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এলেন। আমাকে বললেন, ফটকু ঘটকের আস্তানা চেনেন না। আমি যদি তাকে নিয়ে যাই, তাহলে তিনি কৃতার্থ হবেন। বেশ আগ্রহ নিয়ে ফটকু ঘটকের কাছে নিয়ে গেলাম তাকে। তাকে দেখা মাত্রই ফটকু ঘটক চেঁচিয়ে উঠল, ‘আসুন, আসুুন আপনার জন্যই তো আমার যতো চেষ্টা।’
আগন্তুক ভদ্রলোক মনে হলো ভরকে গেলেন। বললেন, ‘ইয়ে মানে...ঘটক সাহেব ঠিক বুঝলাম না।’
ফটকু ঘটক হেসে বলল, ‘না বুজোনের তো কিচ্ছু নেই। আমার কাছে আইছেন, নিশ্চয় আমার কাজ-কারবার সম্পর্কে জেনেই আইছেন। এখন বলেন কেমন পাত্রী চাই আপনার?’
আমিও অবাক হলাম। মধ্যবয়স্ক এই লোকটিকে কি ভিমরতিতে ধরেছে। এখন আবার বিয়ে করতে চাইছেন।
কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে তিনি বললেন, ‘ইয়ে মানে... পাত্রী তো আমার চাই না। পাত্রী বরং আমার কাছেই আছে। একখানা ভালা পাত্র চাই।’
ফটকু ঘটক অবাক হয়ে বলল, ‘টাসকি খায়া গেলাম মিয়া ভাই। আপনিও যে আমার সগোত্রীয়, মানে ঘটক, সেটা তো বুঝতে পানি নাই। অহন গুরুর কাছে পরামর্শ চাইতে এসেছেন, তাই তো?’
ভদ্রলোক বেশ বিব্রত। বললেন, ‘না, মানে... তাও না। আসলে আমারই একখানা বিবাহ উপযোাগী কন্যা আছে। তার জন্যই পাত্র চাই।’
‘আবারো টাসকি খায়া গেলাম রে ভাই। আপনি এত অল্প বয়সেই বিবাহ উপযোগী কন্যার বাপ! কাহিনীডা কী?’
‘আসলে স্কুল জীবনেই আফনার ভাবিরে নিয়া পালাইয়া গিয়া বিয়া করছিলাম কিনা...’
‘না কাজটা আপনি মোটেই ভালা করেন নাই।’
ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন, ‘এ কথা বলছেন কেন?’
ফটকু ঘটক বলল, ‘আপনি যদি পারিবারিকভাবে বিয়া করতেন, তাইলে আমার মতো কোন এক ঘটকের কিছু ইনকাম হইতো। অন্তত একটা ছাতি হইলেও সে উপহার পাইতো। ¯^-জাতি ভাইদের জন্য কিছুটা চিন্তা ভাবনা তো আছে আমার, কী বলেন।’
‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন তো আর কিছু পাল্টানো যাবে না। অহন আমার মেয়ের একটা হিল্লে করেন।’
‘আপনি আপনার মেয়ের জন্য এতটা উতলা হয়েছেন কেন?’
‘ আরে, বুজেন নাম পারিবারিক ইতিহাস বলে একটা ব্যাপার আছে না! সেও যদি তার মায়ের মতো...’
‘ভুলেও না, ভুলেও না। আমি ঘটক ফটকা মিয়া থাকতে তেমন হওয়ার কুনু ভরসা নাই, থুক্কু চান্স নাই।’
‘হুমম, বুজলাম। কিন্তু আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে আমার কথা শুনে আপনার মধ্যে কিছু একটা ঝড় সৃষ্টি করে ফেলেছে। কাহিনীডা কী?’
এবার ফটকু ঘটক আফসোসের সুরে বলর, ‘এই পেশায় কী আইছি সাধে!’
‘কেন, কেন আসছেন ফটকু ভাই?’
‘আর বইলেন না। আফনার মতো আমিও একজনরে নিয়া ভাগছিলাম। তারপর থেইক্কা লাইফটাই ‘জীবন’ হয়া গেল! আর কেউ যাতে আমার মতো ফাঁটা বাঁশে না আটকায় সেই জন্যই সবাইরে পারিবারিক বিয়াতে উৎসাহী করতাছি!’
এতদিনে আমার কাছে ফটকু ঘটকের এত তোড়জোরের কারণ উন্মোচিত হলো। এ কারণেই সবাইকে পারিবারিক বিয়ের আয়োজনে তিনি সতেষ্ট। একটু পরে আমার প্রেমিকার ফোন, ‘এই শুনছো। আব্বু, নাকি ঘটকের খোঁজে তোমাদের গ্রামের ওই দিকে গেছেন।’
দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে আমার বেশি সময় লাগলো না।
এরপরের ঘটনা আরো মজার। ফটকু ঘটককে ঘুষ খাইয়ে আমার প্রেমিকার সাথে আমার ‘পারিবারিক’ বিয়ে সম্পন্ন হলো! আমার শশুর টের পেলেন না, আমি তাদের থেকেও এক ধাপ এগিয়ে!
২.
পাত্রী দেখে আসার পর থেকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি-পাত্রী কার কাছে কেমন মনে হলো এই নিয়ে। সবারই এক কথা-পাত্রী সুপার ক্লাস। বিয়ে বাজারে এমন পাত্রীর দাম আকাশ ছোঁয়া। পাত্রের ছোট ভাই ও মেজ ভাইয়ের পাত্রী পছন্দ। আমি পাত্রের বন্ধু, কাম এ পক্ষের ঘটক হিসেবে কাজ করছি। ওই পক্ষের ঘটক আমার আরেক বন্ধু। যাই হোক, পাত্রকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘পাত্রীকে কেমন মনে হলো?’
বন্ধু আমার লাজুক কণ্ঠে বলল, ‘বড়রা যেইটা চাইবে, আমারও তাই চাওয়া। তারা না চাইলে ‘না’, আর চাইলে ‘হ্যাঁ’।’
আমরা তো অবাক। পাত্রী দেখতেই গেছি আমরা চারজন-পাত্ররা তিন ভাই আর আমি। সেখানে বড়দের চাওয়া না চাওয়া আর পছন্দ-অপন্দের কী হলো? তবে, বুজলাম বেচারা লজ্জায় নিজের পছন্দের কথাটা বলতে পারছে না। কিন্তু কথা তো ওকে মুখ ফুটে বলাতেই হবে।
একটু পরে পাত্রী পক্ষের ঘটক আমার বন্ধুবরের ফোন। পাত্রী পক্ষ মতামত জানতে চায়। আমি বললাম, ‘বন্ধু ফোনটা পাত্রীকে দাও।’
পাত্ররা তিন ভাই ইতোমধ্যে অমার ফোনে কান লাগিয়ে বসে আছে।
পাত্রীকে ফোনটা দেওয়ার সাথে সাথেই মজা করে বলে ফেললাম, ‘বিয়ে আপনার এবারে হয়েই যাচ্ছে। আপনাকে আর ছাড়ছি না।’
মেয়েটি লাজুক হেসে বলল, ‘সত্যি! আমাকে পছন্দ করেছে।’
আমি আবারো মজা করে বললাম, ‘পছন্দ করেছে মানে... সবাই পছন্দর করে ফেলেছি। আমরা চারজনের সবাইÑই আপনাকে বিয়ে করতে এক পায়ে রাজি।’
লাজুক মেয়েটি সাথে সাথে ফোন কেটে দিল।
আমার বর বন্ধুবর মহা তো ক্ষ্যাপা, ‘এটা কেমন কথা বললি তুই?’
আমি বললাম, ‘ঠিকই তো বললাম, তুই বললি বড়রা মত না দিলে বিয়ে করবি না, তুই না করলে তখন আমি করব।’
পাত্রের মেজ ভাই ত্বরিৎ বলল, ‘দাদা বিয়ে না করতে আমি করব।’
ছোট ভাইটও কম যায় না, সে বলল, ‘মেজদা তোমার সাথে আমার লড়াই হবে। আমিও বিয়ে করতে চাই!’
আমি মুচকি হেসে বন্ধুকে বললাম, ‘তাহলে তো হলোই, আমি বললাম না যে এইবারে তার আর রক্ষে নেই।’
বন্ধুটি মুখ গোমড়া করে বলল, ‘তোরা বেটা সংকেতও বুঝোস না। আমিও তো মেয়েকে দেখার পর থেকেই মত দিয়ে বসে আছি। আমি কি বলেছি যে বিয়ে করব না!’
২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:০১
সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ++