![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্ব-বিরোধিতা এবং আত্ম সংশোধনের তাগিদেই এই লেখাটি।
সময়ের পরিবর্তন হয়েছে, সমাজে নারীদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে, অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু নারীরা যে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত হয়েছে তা কোনভাবেই বলা যাবে না। তাঁদের প্রতি মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তনও কিছুটা হয়েছে, এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে একটু খেয়াল করলেই এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, নারী অধিকার যতই সুপ্রতিষ্ঠিত হোক আর নারী যত বড় পদেই আসীন হোক না কেন, তাদের চিন্তা-চেতনা, চলন-বলন এবং কর্ম পরিকল্পনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পুরুষের সুস্পষ্ট কর্তৃত্ব বিদ্যমান।
যে দুইটি বিষয় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতন তার একটি হল বিলবোর্ড, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্র এবং মিডিয়াতে নারীদের ঠিক পন্যের মত করে ব্যাবহার করা হচ্ছে। একটি পন্যের পাশে একটি নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতে ঐ নারীকে যথাযোগ্য মর্যাদাপূর্ন নারী হিসাবে মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে যায়। সিনেমা বা নাটকের ক্ষেত্রেও অনেক সময় অহেতুক খোলামেলা ভাবে উপস্থাপিত নারীদের দেখে আমাদের বিব্রত হতে হয়।
দ্বিতীয় বিষয়টি হল নারীদের চলাফেরা ও পোশাক পরিচ্ছদের অশালীনতা। ইচ্ছাকৃত বিরোধিতা করার ইচ্ছা না থাকলে অনেকেই একমত হবেন যে, অনেক নারীই এখন যে ধরনের পোশাকে অভ্যস্ত হয়েছে বা হচ্ছে তা আমাদের বাঙ্গালি মূল্যবোধ ও সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ন নয়। এটি বরং অত্যন্ত বেমানান এবং না বুঝে নিজেকে স্রোতের তালে ভাসিয়ে দিয়ে নিজেকেই অপমানিত করার একটি প্রতিযোগিতা মাত্র।
এখন যদি মূল প্রশ্নগুলোতে আসি, নারীরা এগুলো কেন করছে, কাদেরকে খুশি করার জন্য করছে, কাদের প্ররোচনায় করছে? ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে এবং ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন করলে এর পিছনে যাদেরকে পাওয়া যাবে তার শতকরা নিরানব্বই জনই পুরুষ। লিখতে খারাপ লাগলেও বা অনেকের কাছে শুনতে খারাপ লাগলেও এটিই ধ্রুব সত্য। এখন সবচেয়ে বড় তামাশা হল, একদল পুরুষ নারীদের ইচ্ছামত ব্যাবহার করছে, কখনো দেবীরূপে বন্দনা তো কখনো দাসী হিসাবে, কখনো মাতৃ আসনে তো কখনো নাচঘরে, কখনো সঙ্গিনী তো কখনো পন্যরূপে। আরেকদল পুরুষ নারী কর্মের স্বীকৃতি দিতে পিছপা হলেও সমালোচনায় হচ্ছেন মঞ্চমুখ।
এখন পুরুষের এই দ্বি-স্বত্বা এই হীনমন্যতা অত্যন্ত লজ্জার। কিন্তু দুঃখ হল আদিকাল থেকে পুরুষের কাছে ব্যবহৃত হয়ে আসা নারীদের অনেকেই এখনো তাদের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারছে না। কি তাদের করা উচিৎ, কিসে তাদের মানায় না মানায় সেগুলোর তেমন কোন তোয়াক্কা না করে কিছু নারী পুরুষের প্ররোচনায় আগে থেকে বিভ্রান্ত নারীদের অন্ধভাবে অনুসরণ করছে, অনুকরণ করছে। আর তাতে বাধা পড়লে নিজের অধিকার ও স্বাধীনতা খর্পের অভিযোগ তুলছে। মানুষ সৃষ্টির সেরা, চিন্তা চেতনায়, কর্মে, চলনে মননে তার স্পষ্ট ছাপ থাকা বাঞ্চনীয়। কিছু চৌকশ পুরুষ লোক নারীদের লোভনীয় করে তুলবে, কিছু পুরুষ লোক সমালোনার ঝড় তুলবে আর নারীরা পুরুষ দ্বারা একই সঙ্গে লোভনীয় ও সমালোচিত হবে তা কি করে হয়?
অনেকেই যদি সুস্বাস্থ্যের লোভে বিষপান শুরু করে, তাহলে নিজেও না বুঝে সেটি করতে হবে এর কোন যৌক্তিকতা নেই। সত্যিকারে অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে আত্ম উপলব্ধি, ভাল মন্দের পার্থক্য, বন্ধু ও শত্রু চেনা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। স্বাধীনতার সঙ্গে শালীনতা জরুরী, চিত্তাকর্ষক উপস্থিতির চেয়ে মর্যাদাপূর্ন উপস্থিতি বেশি প্রয়োজন। খোদ নারীবাদী নেত্রীরাও অনেক ক্ষেত্রে নারীদের ভুল পথে পরিচালিত করছে, কারণ এই নারীদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে দিয়েছে কিছু পুরুষ মানুষ, তার সঙ্গে তাদের মগজে পর্যাপ্ত রসদও ঢুকিয়ে দিয়েছে যাতে এই সব পুরুষদের সাদা পোশাকের নিচে লুকানো দুরভিসন্ধি নারীরা কখনোই উদঘাটন করতে না পারে। তাই পরিস্থিতির চিরঅবসানে সচেতন ও মর্যাদাপূর্ন নারীদের এগিয়ে আসতেই হবে। নাহলে যুগ বদলাবে, নতুন দিন আসবে কিন্তু কিছু সুবিধালোভী পুরুষের মোহময় অদৃশ্য জাল থেকে নারী মুক্তি কোনদিনই হবে না।
একজন নারী আমার মা, একজন পুরুষ আমার বাবা, তাই স্বীকার করে নেয়া ভাল যে, এই সকল অভিযোগ, অনুযোগ একটি নির্দিষ্ট শ্রেনীর পুরুষ বা নারীর বিপক্ষে, সবার বিপক্ষে নয়। আর অভিযোগ শুধুমাত্র অভিযোগের জন্যও নয়, এর থেকে পরিত্রাণের আশায়।
©somewhere in net ltd.