![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মতামতের ভিন্নতা এবং বিরুদ্ধ মতের প্রতি পারস্পরিক স্রদ্ধা থাকবে । মানুষ তার নিজের অধিকার বিষয়ে সচেতন হবে এবং অপরের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।
বিংশ শতাব্দীতে কল্যাণ রাষ্ট্রের উত্থানের সাথে সাথে আইনগত সহায়তা প্রদানের ধারনাটিও উত্থাপিত হয়। এই ধারনাটির উৎপত্তি ঘটে মূলতঃ তাদের জন্য যারা মামলা মোকদ্দমা চালিয়ে জাবার খরচ বহনে অসমর্থ । আইনগত সহায়তা বলতে বুঝায় দরিদ্র বিচার প্রার্থীকে আদালতের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় দিকে আরথিক সহযোগিতা করা ।সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার অনুচ্ছেদ৭-এ প্রণীত হয়েছে এর মূলনীতি-“আইনের চোখে সবাই সমান এবং বৈষম্যহিনভাবে আইনের সুরক্ষা পাবার অধিকার ।
সাংবিধানিক অধিকার ঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানেরর মুখবন্ধে ন্যায়বিচারে সাম্যনীতি পালনের অঙ্গিকার করা হয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭নং অনুচ্ছেদে এই নীতি সংরক্ষিত আছে । এই নীতির প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার কারনেই বাংলাদেশের সংবিধানে এই অঙ্গীকার করা হয়েছে । সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদ এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে যে, আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী ।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা ঃ
১৯৯৪ সালে একটি Resolution এর মাধ্যমে সরকার সর্বপ্রথম জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান কমিটি গঠন করে । এই কার্যক্রমই পরবর্তীতে সরকারকে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন,২০০০ এবং আইনগত সহায়তা প্রদান বিধিমালা, ২০০১ প্রনয়ন করে । এই আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা স্থাপন করা হয়।
আইনগত সহায়তা বলতে বোঝায়,২০০০ সালের আইনগত সহায়তা প্রদান আইনের ২(ক) উপ-ধারা অনুযায়ী “ আইনগত সহায়তা” অর্থ আর্থিকভাবে অসচ্ছল , সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারনে প্রার্থিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীকে---
(ক) কোণ আদালত দায়েরযোগ্য,দায়েরকৃত বা বিচারাধীন মামলায় আইনগত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান;
(খ) মামলার প্রাসাঙ্গিক খরচ প্রদানসহ অন্য যে কোণ সহায়তা প্রদান।
আইনগত সহায়তা প্রাপকের যোগ্যতা ঃ
আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০০১ এর ২নং বিধি মোতাবেক নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগন আইনগত সহায়তা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে, যথা--
(১) কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম , কর্মহীন বা বার্ষিক ৬০০০ টাকার উপর আয় করতে অক্ষম।
(২) বয়স্ক ভাতা পাচ্ছে এমন কেউ ।
(৩) ভি জি ডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা।
(৪) পাচারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ নারী-পুরুষ।
(৫) এসিডদগ্ধ নারী বা শিশু ।
(৬) ভুমি বরাদ্দ প্রাপক কোণ ব্যক্তি।
(৭) আয়ে অক্ষম এবং সহায় সম্বলহীন প্রতিবন্ধী ।
(৮) জেল কর্মকর্তাদের সুপারিশ কৃত আর্থিকভাবে যিনি অসহায়। এছাড়াও উক্ত আইনে অসহায় হিসেবে যাদের কথা বলা হয়েছে।
আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন ঃ
“আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০০১” আবেদন পত্র তৈরি করার নিয়ম ঃ
(১) এই আইনের অধীনে আইনগত সহায়তার জন্য জন্য সকল আবেদন বোর্ড বা ক্ষেত্রমত জেলা কমিটির নিকট আবেদন পেশ করতে হবে ।
(২) সহায়তা পাবার উদ্দেশে্য কোণ ব্যক্তি তার নাম, পূর্ণ ঠিকানা এবং সহায়তা চাওয়ার উল্লেখ করে একটি সাদা কাগজে আবেদন করবেন।
(৩) যে বিষয়ে আইনি সহায়তা চাওয়া হয়েছে তা সুপ্রিম কোর্টের কোণ বিভাগের বিচারের বিষয় হলে আইনগত সহায়তা সংস্থার চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য আদালতের বিচারের বিষয় হলে তা জেলা কমিটির চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে ।
(৪) কোন আবেদনপত্র দাখিল করা হলে সংস্থা বা ক্ষেত্রমতে জেলা কমিটি তাতে একটা নাম্বার প্রদান করে নির্ধারিত রেজিস্ট্রারে আবেদন পত্রটির উপর সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সংস্থা বা জেলা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের ব্যবস্থা করবে।
(৫) সংস্থা বা জেলা কমিটি আবেদন পত্রটির বিষয় সহায়তা প্রদানের সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা সংস্থা বা জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত আবেদনকারীকে অবহিত করা হবে।
এনজিও বা বেসরকারী প্রতিস্থানের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা ঃ
ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন,যেমন—আইনগত সহায়তা প্রদান সমিতি,সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান,আইন বিদ্যালয়ের সহযোগিতা,আইনজীবী সমিতির প্রভৃতি সংগঠনের ব্যাপক ও গভীর প্রচেষ্টার কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইনগত সহায়তার গতি প্রদান করে। বাংলাদেশেরও বেশ কিছু বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এই গতির অগ্রপথিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—বাংলাদেশ লিগ্যাল এন্ড সার্ভিসেসে ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিস কেন্দ্র ( আসক ), মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি,নাগরিক অধিকার-বরগুনা,বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ইত্যাদি । যদিও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সমগ্র দেশব্যাপী কাজ করার আইনগত অবস্থানে রয়েছে,তবুও এই সকল প্রতিষ্ঠান তাদের সহায়তা একটি নির্দিষ্ট পরিসরের মধ্যেই প্রদান করে । আদালতে মামলা পরিচালনা করা ছাড়াও এই সকল প্রতিষ্ঠান দরিদ্র বিচারপ্রার্থীকে তাদের আইনগত সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষে প্রশিক্ষণ,মধ্যস্থতা,আইন বিষয়ে সচেতনতা এবং পরামর্শ প্রদান করে।
©somewhere in net ltd.