![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মতামতের ভিন্নতা এবং বিরুদ্ধ মতের প্রতি পারস্পরিক স্রদ্ধা থাকবে । মানুষ তার নিজের অধিকার বিষয়ে সচেতন হবে এবং অপরের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।
সাংবিধানিক আইনের পরিপূর্ণ ধারনার জন্য জন্য একটি দেশের সাধারন আইন সম্পর্কে ধারনা থাকা আবশ্যক । একটি দেশের আইনকে মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
ক। সরকার সম্পর্কিত আইন (Public Law) এবং
খ। ব্যাক্তি সম্পর্কিত আইন ( Private Law)।
ক। সরকার সম্পর্কিত আইন
যে আইনে রাষ্ট্রের প্রকৃতি , সরকারের গঠন,কারযাবলি,ক্ষমতা,সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন,সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব, ও কার্যাবলী এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে তাকে সরকার সম্পর্কিত আইন বলে।
সরকার সম্পর্কিত আইনের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভাগ নিম্নরূপ ঃ
১। সাংবিধানিক আইন (Constitutional Law) এবং
২।প্রশাসনিক আইন (Administrative Law)
১। সাংবিধানিক আইনঃ সাংবিধানিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বোঝায় যা রাষ্ট্রের প্রকৃতি, সরকারের ধরন, কার্যাবলী , ক্ষমতা, সরকারের প্রধান প্রধান বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
২। প্রশাস নিক আইন ঃপ্রশাসনিক আইন বলতে সরকার সম্পর্কিত সেই আইনকে বোঝায় যা সরকারের বিভিন্ন বিভাগের শুধু প্রশাসনিক দিক নিয়ন্ত্রন করে অর্থাৎ অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়- দায়িত্ব , তাদের মাঝে ক্ষমতার বণ্টন, ব্যক্তি এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের মাঝে সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
সাংবিধানিক আইন ও প্রশাসনিক আইনের মাঝে পার্থক্য বুঝতে হবে । সাংবিধানিক আইন প্রধানত সরকারের প্রধান প্রধান বিভাগের গঠন ও ক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু প্রশাসনিক আইন সরকারের বিভিন্ন বিভাগের বাদ বাকী যাবতীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রন করে। উদাহরন স্বরূপ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ধরন কীরূপ হবে, গঠন কীরূপ হবে,সামগ্রিকভাবে তারা কে কি দায়িত্ব পালন করবে তা সাংবিধানিক আইনে বলা থাকে। কিন্তু এ সকল বিভাগের আভ্যন্তরীণ অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দায়- দায়িত্ব , তাদের ক্ষমতা , আচরন, নিয়ন্ত্রন , কে কত বেতন ভোগ করবে , কিভাবে প্রত্যেক বিভাগের কার্যাবলী পরিচালিত হবে এসব বিষয় প্রশাসনিক আইন আলোচনা করে।
খ. ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন
যে আইনে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক নির্ধারণ করে তথা নাগরিকদের পারস্পারিক অধিকার সংজ্ঞায়িত করে এবং অধিকারগুলো রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন বলে, উদাহরন স্বরূপ, Law of person, Law of property , Law of contract ইত্যাদি ব্যক্তি সংক্রান্ত আইন।
ব্যক্তি সংক্রান্ত আইনকে আবার দু’ ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
১। তত্ত্বগত আইন ( Substantive Law) এবং
২। পদ্ধতিগত আইন ( Procedural Law)
১। তত্ত্বগত আইন: যে আইন ব্যক্তির অধিকারকে সৃষ্টি করে বা সংজ্ঞায়িত করে তাকে তত্ত্বগত আইন বলে । যেমন-সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, চুক্তি আইন ইত্যাদি।
২। পদ্ধতিগত আইন ঃ যে আইনে অধিকারকে রক্ষা করার পদ্ধতি নির্ধারণ করে তাকে পদ্ধতিগত আইন বলে। যেমন- ফৌজদারি কার্যবিধি , দেওয়ানী কার্যবিধি ইত্যাদি ।
উদাহরণস্বরূপ ঃ কোন সম্পত্তিতে আমার অধিইকার আছে কিনা তা তত্ত্বগত আইনের বিষয় কিন্তু কখন কোন আদালতে আমাকে মামলা করতে হবে তা পদ্ধতিগত আইন নির্ধারণ করে।
এতক্ষন পর্যন্ত একটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইন সম্পর্কে যে ধারনা দেয়া হয়েছে তাতে মনে হতে পারে যে, সাংবিধানিক আইন অন্যান্য আইনের সমপর্যায়ের । কিন্তু তা নয় , কারন সাংবিধানিক আইনকে কোন দেশের মৌলিক বা সর্বচ্চো (Fundamental or supreme) আইন বলে গণ্য করা হয়। এই অর্থে ইহা মৌলিক আইন যে, ইহা সকল আইনের উরধে স্থান লাভ করে থাকে। গেটেলের ভাষায়-
“ইহা রাষ্ট্রের মধ্যে সার্বভৌম শক্তির অবস্থান ক্ষেত্র নির্ণয় করে এবং আইনের উৎসের নির্দেশ করে”।
একটি দেশের কোন আইনই সাংবিধানিক আইনের তুলনায় মর্যাদা সম্পন্ন হতে পারে না । সাংবিধানিক আইন থেকেই অন্যান্য আইন বৈধতা লাভ করে। একটি দেশের তত্ত্বগত, পদ্ধতিগত, প্রশাসনিক ইত্যাদি সকল আইন সাংবিধানিক আইনের নিম্নতর পর্যায়ে অবস্থান করে । এ সকল আইনের কোন বিধানই সাংবিধানিক আইনের বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। এ কারনেই সাংবিধানিক আইন একটি দেশের সর্বচ্চো আইন। ইহাকে অন্যান্য আইনের বৈধতা নির্ণয়ের মাপকাঠি বা কষ্টিপাথর (touch stone) বলা হয়।
সাংবিধানিক আইনকে যদি একটি দেশের মৌলিক আইন ধরা হয় তাহলে একটি দেশের আইনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়ঃ
ক।সাংবিধানিক আইন বা মৌলিক আইন (Constitutional or fundamental law) এবং
খ। সাধারন আইন (ordinary Law)
রাষ্ট্রের সকল প্রশাসনিক , পদ্ধতিগত ও তত্ত্বগত আইন সাধারন আইনের পর্যায়ে পরে।এগুলোকে সাধারন আইন বলার কারন হলো যে, এরা সাংবিধানিক আইনের চেয়ে কম মর্যাদা সম্পন্ন এবং সাংবিধানিক আইনের কোন বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না । এ ধরনের আইন পাশ করতে সাধারন সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাংবিধানিক আইন পাশ করা ও পরিবর্তন করার জন্য জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। যেমন, দুই –তৃতীয়াংশ বা তিন চতুর্থাংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, সাধারন আইন ও সাংবিধানিক আইনের মাঝে পার্থক্য শুধুমাত্র লিখিত সংবিধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । সংবিধান যদি লিখিত ও দুস্পরিবর্তনীয় না হয় তাহলে সেখানে সাংবিধানিক আইন বিশেষ মর্যাদা সম্পন্ন মৌলিক আইন হিসেবে থাকে না; সাধারন আইনের সাথে সমমর্যাদা থাকে। ফলে সাংবিধানিক আইন ও সাধারন আইনের মাঝে কোন পার্থক্য করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেনে কোন লিখিত সংবিধান নেই, পার্লামেন্টের আইন প্রনয়ন ক্ষমতার উপর কোন সীমাবদ্ধতা নেই; ফলে পার্লামেন্ট একই পদ্ধতিতে সাংবিধানিক আইন ও সাধারন আইন পাশ করতে পারে।
©somewhere in net ltd.