| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- কোন প্রাণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ পাক হারাম করেছেন আর হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- আজকের এ দিন যেমন পবিত্র তেমনি প্রতিটি মুসলমানগণ উনাদের জান-মালও পবিত্র । লক্ষ লক্ষ বঙ্গ সন্তান হত্যাকারী, সম্ভ্রম হরণকারী, মাল-সম্পদ লুন্ঠনকারী, স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা শরীয়তেরই নির্দেশ; দেশ ও স্বাধীনতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে ’৭১-এর রাজাকার, আল বাদর, জামাতী, ওহাবী, খারিজীরা অত্যন্ত ঘৃণিত অপরাধী। আর সে অপরাধের বিচার না করাও মহা অপরাধ।
বিচার কোনভাবেই দেরী করা যাবেনাঃ
রাজাকার, আল বাদর, জামাতী, ওহাবী, দেওবন্দীদের বিচারের ক্ষেত্রে ৪২ বছর হেলাফেলায় পার হয়ে গেছে বলে সে বিষয়টি এভাবেই থেকে যাবে তা নয়। ৪২ বছরের হেলাফেলা থেকে তওবা করা যাবে না তাও নয়। অথবা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নেক কাজ এখন শুরু করা যাবে না তাও নয়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে বলে তওবা করা যাবে না অথবা নেক কাজ করা যাবে না তাও নয়। বরং যখনই বোধের উদয় হয় তখনই তওবা করা বা নেক কাজ শুরু করা উচিত।
স্বল্পতম সময়ে সবচেয়ে বড় গণহত্যাঃ
১৯৮১ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণায় বলা হয়েছে, মানব ইতিহাসে যত গণহত্যা হয়েছে তার মধ্যে স্বল্পতম সময়ে সব থেকে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যায়। দৈনিক গড়ে ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার মানুষকে তখন হত্যা করা হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দৃষ্টিতে বিচারঃ
সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৪৫ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি এ কিতাবে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং জখমসমূহের বিনিময় সমান জখম। অতঃপর যে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনিময় প্রদান করে সে গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ পাক যা অবতীর্ণ করেছেন, তদানুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই জালিম।”
সূরা মায়িদা শরীফ উনার ৩২ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “এ কারণেই আমি বণী ইসরাইলের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ ব্যতীত অথবা পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে সে যেন সবার জীবনই রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুত এরপরও তাদের অনেক লোক পৃথিবীতে সীমা অতিক্রম করে।”
আর আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কিসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে জ্ঞানীগণ! কিসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।” (সূরা বাক্বারা শরীফ- ১৭৮, ১৭৯)
সূরা নিসা উনার মধ্যে ২৯ ও ৩০ নম্বর আয়াত শরীফ-উনার মধ্যে আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু। আর যে কেউ সীমালঙ্ঘন কিংবা জুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে, তাকে খুব শীঘ্রই আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। এটা আল্লাহ পাক-এর পক্ষে খুবই সহজসাধ্য।”
সূরা নিসা’ উনার মধ্যে ৯২ নম্বর আয়াত শরীফ-উনার মধ্যে আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক ফরমান, “কোন মুসলমানের কাজ নয় যে, কোন মুসলমানকে ভুলক্রমে অপরাধ ব্যতীত হত্যা করে, কিন্তু ভুলক্রমে যে ব্যক্তি মুসলমানকে হত্যা করে সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে। যদি তারা ক্ষমা না করে। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয় এবং মুসলমান হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায় সে আল্লাহ পাক-এর কাছ থেকে গুনাহ মাফ করানোর জন্য উপর্যুপরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ পাক মহা জ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।”
সূরা বণী ইসরাইল উনার মধ্যে ৩৩ নম্বর আয়াত শরীফ-উনার মধ্যে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “কোন প্রাণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয় আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন না করে।”
বিচারের জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ মওজুদঃ
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারের তথ্য প্রমাণাদি যে নেই তা নয়। যা আছে তাই যথেষ্ট। এর থেকেও কম প্রমাণ নিয়ে আর্জেন্টিনায় নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। এর বাইরে সম্প্রতি চিলি, কম্বোডিয়া ও কসোভোর গণহত্যার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ প্রমাণে বিভিন্ন দেশের গোপনীয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোকেও পেশ করা যায়।
বিচারের আইন ও নজিরঃ
১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট এখনো বহাল আছে। একই সঙ্গে ১৯৭৩ সালের প্রশাসনিক নির্দেশে ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণাকে নতুন একটি প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে অকার্যকর করা যায়। সম্প্রতি জার্মান ও জাপানের যুদ্ধাপরাধীদের সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশেও এটি সম্ভব। যারা বলছে এদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই তারা পক্ষান্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেই অস্বীকার করছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তারা অভিযুক্ত। কাজেই কথিত রাষ্ট্রদোহী হিসেবেও তারা বিচারের উপযুক্ত।
১৯৭২-এ দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে গ্রেফতার করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পররর্তীতে এ ধারা ব্যহত হয়।
ওই সময় ৫০০ জনের মতো যুদ্ধাপরাধীর অপরাধ বিভিন্ন আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় সাজাও হয়। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৫-এর ডিসেম্বর মাসে সামরিক সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর দালাল আইন বাতিল ঘোষণা করে। তখন ওই সব অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধী হাইকোর্টে আপিল করে ছাড়া পেয়ে যায়। কিন্তু হাইকোর্টের এ রায় শরীয়তসম্মত হয়নি।
১৯৯০ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে কার্যকর সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় প্রান্তিক পর্যায়ের দালাল ও রাজাকারদের ক্ষমা করা হয়েছে। হত্যা, লুটপাট, রাহাজানি এবং স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এবং নেতৃস্থানীয় কোন দালাল ঘাতককে এই ক্ষমা ঘোষণার আওতায় নেয়া হয়নি।
বিদায় হজ্জের খুৎবা শরীফ এবং হক্কুল ইবাদঃ
বিদায় হজ্জের খুৎবা শরীফ উনার মধ্যে, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “আজকের এ দিন যেমন পবিত্র তেমনি প্রতিটি মুসলমানের জান-মালও পবিত্র। এমনকি তিনি মুসলমানের জান-মাল রক্ষার জন্য জিহাদের অনুমতিও দেন।”
রাজাকার, আল বাদররা যে নরহত্যা, সম্ভ্রমহরণ ও লুণ্ঠন করেছে তাতে তারা লাখ-লাখ বান্দার হক্ব নষ্ট করেছে, অর্থাৎ হক্কুল ইবাদ নষ্ট করেছে। আর আমভাবে হক্কুল ইবাদের গুনাহ আল্লাহ পাক ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বান্দা তা ক্ষমা না করে।
রাজাকার, আল বাদর, জামাতী, খারেজী ওহাবী দেওবন্দীরা ’৭১-এ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা বরং আজ পর্যন্ত তাদের অপরাধ প্রকশ্যে ক্ষমা চায়নি। আর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাবে, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ না দিবে সন্তুষ্ট না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে তাদের তওবা কবুল হবে না। তারা জাহান্নামী বলে সাব্যস্ত হবে।
যারা বিচার করবে না তারাও অপরাধীঃ
নরহত্যার বদলা সম্পর্কে কুরআন শরীফ-উনার মধ্যে এত আয়াত শরীফ ও কঠোর নির্দেশ থাকার পরও আজও যারা যুদ্ধাপরাধী জামাতী, ওহাবী, খারিজীদের বিচার করছে না তারাও পবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে মহাঅপরাধী।
লক্ষ লক্ষ বঙ্গ সন্তান হত্যাকারী, সম্ভ্রম হরণকারী, মাল-সম্পদ লুন্ঠনকারী, স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা শরীয়তেরই নির্দেশ। তাই দেশ ও স্বাধীনতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
©somewhere in net ltd.