![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নদীর পাড়ে সেই পুরনো ঘাটে রবি প্রায় প্রতিদিনই বসে থাকে। কেউ জানে না সে কেন আসে। কেউ জিজ্ঞেসও করে না। কারণ শহরের কেউ তার উপস্থিতি নিয়ে খুব বেশি ভাবেও না—সে এমন একজন, যে কারো চোখে পড়লেও পড়ে না। কিন্তু রবি ঠিক যেন শহরের বাইরের কেউ নয়, ভেতরেরও নয়—একটি সীমানাহীন মধ্যবর্তী অঞ্চল, যেখান থেকে সে পুরো পৃথিবীটাকে দেখে নিজের মতো করে।
ঘাটের শেষ পাথুরে ধাপে সে বসে থাকে, ঘোলা জলের দিকে তাকিয়ে। তার চোখে পানি নেই, কিন্তু দৃষ্টি যেন ভেজা—নরম, গভীর। পাশের চায়ের দোকানদার বলে, “ছেলেটার চোখে যেন কিছু খুঁজে ফেরে।” আর কেউ বোঝে না, রবি কী খুঁজছে।
সে নদী দেখে, যেন নদী তার কোনো পুরনো বন্ধু। বাতাসে কাঁপতে থাকা পাতাগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সে ভাবে, “এই কাঁপনটাই হয়তো জীবন। সবসময় নাড়া খাচ্ছে কোথাও না কোথাও।”
রবির কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই। তবে রবি একা নয়—সে তার সঙ্গে নিজের ‘চিন্তা’ নামের এক সঙ্গীকে নিয়ে চলে। সে কথা বলে না, শোনে বেশি। অনেকেই ভাবে, সে হয়তো ঠান্ডা বা নির্লিপ্ত। কিন্তু কেউ যদি একবার রবির চোখে চোখ রাখে, তারা দেখতে পাবে—সেখানে এক সমুদ্র অপেক্ষা করছে।
একদিন, এক অপরিচিত মেয়ে এসে বসলো তার পাশে। ছেলেটার মতো তাকিয়ে ছিল সে-ও নদীর দিকে।
“তুমি এখানে প্রতিদিন বসো?”—মেয়েটির কণ্ঠস্বর ভাঙা ছিল, ঠিক যেমন নদীর কূল ভাঙে নিঃশব্দে।
রবি উত্তর দিলো না, শুধু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
কিছুক্ষণ পর সে বলল, “এই নদীটা কেমন জানো? একটানা চলে, কোনো কথা বলে না। কিন্তু তবুও কেউ কেউ তার শব্দে গল্প শুনে।”
মেয়েটি একটু চমকালো, তারপর হেসে বলল, “তুমি অদ্ভুত। বাকিরা শুধু পানির ঢেউ দেখে, তুমি তার মন পড়ো।”
রবি তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। “সবাই দেখে, কিন্তু সবাই বোঝে না।”
সেদিনের পর থেকে মেয়েটি প্রায়ই আসত। তার নাম ছিল মীম। রবির মতো সেও কিছুটা নিঃসঙ্গ, কিছুটা ভাবুক। তাদের কথাবার্তা বেশি না, তবে চুপ করে বসে থাকার মধ্যেই একধরনের গভীর সংলাপ গড়ে উঠেছিল।
রবি কখনো তাকে বলেছিল না যে সে প্রেমে পড়েছে। সে শুধু তার চোখে পড়া খেয়াল করত, তার কণ্ঠের ছন্দ বুঝে নিতে চাইত। তার কাছে প্রেম মানে ছিলো না 'প্রেমিকা' পাওয়া, বরং কারো ভেতরের দুঃখকে স্পর্শ করতে পারা।
কিন্তু একদিন হঠাৎ মীম আর এল না। কয়েকদিন, তারপর কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল। রবি প্রতিদিন একইভাবে ঘাটে আসে, নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে, আকাশ দেখে। তার হাতে ছোট্ট একটা কাগজের খাম—যেটাতে মীম একবার লিখেছিল, “তুমি একা নও, তুমি শুধু সবাই থেকে আলাদা।”
আজও রবি বসে থাকে সেই ঘাটে। নদী বয়ে যায়। পাখিরা ডাকে। আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। আর রবি... সে চুপ করে শুনে যায় সেই শব্দহীন কথোপকথন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:২৬
বাকপ্রবাস বলেছেন: কিছু কিছু বিষয় বিক্ষিপ্ত লেগেছে, একটা চরিত্র একটা জায়গায় এসে ভাবে, আরেকটা চরিত্র হঠাৎ এসে আবার চলে যায়, চরিত্রগুলো শুরুটা বিক্ষিপ্ত লেগেছে কিন্তু গল্প সাবলিল সুন্দর।