নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীনতা মানে অন্যের স্বাধীনতা হরন করা নয়।

সজীববুরী

স্বাধীনতা মানে অন্যের স্বাধীনতা হরন করা নয়।

সজীববুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢাকার জলাবদ্ধতা, ৪০০ বছরের পুরনো ভুল এবং আমাদের ঋতুকালিন অনভ্যস্ততা।

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৪০



বর্ষায় ঢাকার জলাবদ্ধতায় সকলের বিরক্তি দেখলে কেন যেন অস্বস্তি লাগে। সকলের বিরক্তিতে মনে হয় জলাবদ্ধতা যেন হুট করে এ শহরের এসে বাসা বেঁধেছে এবং আমরা একেবারেই নতুন এ ভোগান্তির সাথে। সময়টা যে বর্ষাকাল আমরা যেন তা ভুলে যাই। অথবা আমরা যারা ঢাকার বাহির থেকে ঢাকায় এসে জুটেছি তারা যেন বর্ষাকালের চরিত্রে নিজের গ্রামের অবস্থার কথাও ভুলতে বসেছি। এ শহরের জনসংখ্যা তো আর একদিনে ২ কোটিতে পৌছায়নি। প্রতিদিন বেড়েছে এ শহরের উপর চাপ। ২০ বছর আগেও এ শহরে বর্ষায় পানি জমেছে, তখন যদিও ঢাকায় কিছু খাল সহ অনেক জলাধার বেঁচে ছিল। আজ ২০১৭ সালে এসেও সেই ভারী বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। এটাই হচ্ছে ঢাকার জন্মগত বৈশিষ্ট্য। ঢাকার বাহিরে গ্রামঞ্চলে যেখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই সেখানে বর্ষায় ভারী বৃষ্টির কারনে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে কিন্তু আমরা এতটা বিরক্ত হই না, হায় হুতাশ করিনা। ঢাকার মত সমুদ্রের পাশের শহর চট্টগ্রামও ভারী বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যায়। জলাধার ভরাট হয়ে যাওয়াতে ঢাকায় জলাবদ্ধতা সেটাও আমরা জোর গলায় বলতে পারিনা। চট্টগ্রাম শহরের পানি তো খুব সহজে নদীতে সমুদ্রে চলে যেতে পারে। তাহলে চট্টগ্রামে কেন পানি জমে?

আপনি একটি খালি গ্লাসকে এক গ্লাস পরিমান পানি দিয়ে পূর্ণ করতে পারবেন। সেই গ্লাস যদি আগে থেকেই পানিতে পূর্ণ থাকে তাহলে নতুন করে পানি ঢাললে সেটা উপচে পরে চারপাশ ভাসাবে এটাই তো বাস্তবতা। বর্ষাকালে বাংলাদেশের অবস্থাটা এই পানি ভর্তি গ্লাসের মত। উজান থেকে আসা ঢলের পানি, এবং স্বাভাবিক বৃষ্টির পানিতে জলাধার গুলো আগে থেকেই পূর্ণ থাকে। এর সাথে বর্ষা ঋতুর স্বাভাবিক চরিত্র ভারী বৃষ্টি যোগ হলে পানি যাবে কোথায়? জমে থাকে সারা দেশ সহ আমাদের দুই রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামে। পানি যত দ্রুত নদি হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পরে জলাবদ্ধতাও তত দ্রুত কমে যায়। তবে কথা হচ্ছে প্রবাহমান নদ নদীর তলদেশ যদি পলিতে ভরে যায় এবং সমুদ্রের পানি যদি উচ্চতায় বেশী হয়ে যায় তাহলে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তি দীর্ঘ হয়ে পরে।

ভারী বৃষ্টিতে শহর তলিয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। এ শুধু ঢাকায় হয় আর পৃথিবীর অন্য কোথাও হয় না তাও কিন্তু নয়। ভারী বৃষ্টিতে জমা যাওয়া পানি সরে যাবার সময়টুকু আমাদের দিতে হবে। ঢাকায় অন্তত যারা অনেক বছর ধরে আছেন তাদের কিন্তু বিষয়টা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা উচিৎ। তবে নতুন যারা ঢাকাকে ভিন গ্রহের অংশ মনে করেন তারা হয়তো ঋতু বৈচিত্র ভুলে যান, বর্ষা কাল কি সেটা ভুলে যান, অথবা বর্ষায় ভারী বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ভুলে যান। এমনকি আশ্বিন কার্তিক মাসে আইত্তান-কাইত্তান সম্পর্কে জানেনি না। অনেকে আছেন যারা আবার ওয়াসা সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলতে পারলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের থেকে প্রায় ৫২ গুণ বড় দেশ অস্ট্রেলিয়ায় যেখানে ২.৪৫ কোটি মানুষের বসবাস সেখানে খোদ ঢাকাতেই বসবাস ২ কোটি লোকের। আরও বলতে গেলে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের আয়তন ১২৩৬৭ বর্গ কিঃমিঃ যার জনসংখ্যা মাত্র ৫০ লক্ষ, ঢাকার আয়তন মাত্র ৩০৬ বর্গ কিঃমিঃ কিন্তু জনসংখ্যা ২ কোটি! এই ২ কোটি লোকের মল-মুত্র সহ ব্যবহার্য সকল তরল বর্জ্য কিন্তু ঠিকই প্রবাহমান।

ভারী বর্ষায় শহরে পানি জমে গেলেই শুরু হয়ে যায় ব্যর্থতার দায় কার সেটার তদন্ত। দেশের হাজারো বিশেষজ্ঞ তাদের জ্ঞান উজার করে দেন আলোচনার টেবিলে। সমাধান! না কোনই সমাধান নেই। ৪০০ বছর আগে ঢাকার বয়স যখন ১ বছর তখনই ঢাকার চরিত্র বুঝতে ভুল করা হয়েছে। এ ঢাকা শহরের প্রতিটা সড়ক, অলি গলি সবই ৪০০ বছর আগে পানি প্রবাহের উন্মুক্ত খাল ছিল। তখন থেকেই ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিৎ ছিল পানি কেন্দ্রিক। যার উদাহরণ আমরা ইটালির ভেনিস নগরকে দেখতে পাই। এখন এই ৪০০ বছর পরের ঢাকায় গত ৪৫ বছরে ২ কোটি মানুষের ভার বহন করতে যেয়ে সব জলাধার গলা টিপে মেরে ফেলা হয়েছে। এখন পরিকল্পনা যাই হোক, সময় এবং অর্থ যাই খরচ করা হোক ঢাকার জালাধার গুলো ফিরে পাওয়া যাবে না। ওয়াসা যত বড় ড্রেনেজ ব্যবস্থাই গড়ে তুলুক বর্ষায় পানি পূর্ণ গ্লাসে পানি ঢালতে তো আর পারবে না। করনীয় কাজের মধ্যে সব থেকে বড় কাজ হচ্ছে নদ নদীর তলদেশ থেকে পলি অপসারণ করে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তাতে যদি ভোগান্তির পরিমান কিছুটা হলে কমে। না হলে এ ভোগান্তি থাকবে চিরকাল। যা এদেশের এবং শহরের সবার বাস্তবতা মেনে সেভাবে ঋতুকালিন প্রস্তুতি নিয়ে জীবনধারণ করাটা বুদ্ধিমানের।

বর্ষা ছাড়া ঢাকায় যখন জলাবদ্ধতা দেখা দেয় তখন বিষয়টা আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ। এক মহাদেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সমান জনসংখ্যা বসবাস যখন এই ঢাকায় সে হিসেবে এখনো ঢাকা শহর টিকে থাকাটা আসলেই আল্লাহ্‌র আশীর্বাদ। মাঝে মাঝে মনে হয় এ শহরের সকল বাসিন্দা একসাথে টয়লেট ব্যবহারে গেলে সম্পূর্ণ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরবে। এত অল্প সামর্থ্য নিয়ে এত বৃহৎ সংখ্যক বাসিন্দার সেবা নিশ্চিত কিন্তু সহজ কথা নয়। তারপরেও আমরা এ শহরে বেঁচে আছি। আমরা ২ কোটি শহরবাসী যদি সচেতন হতাম, নিজেদের ভ্রাম্যমাণ আবর্জনা গুলো নিজ দায়িত্বে যথাস্থানে ফেলতাম এবং নগর পিতারা সন্তানদের জন্য প্রয়োজনীয় দায়িত্বটুকু পালন করতেন তাহলে কিন্তু সত্যি সত্যি আমরা অস্ট্রেলিয়ার চাইতেও বেশী দক্ষতার পরিচয় দিতে পারতাম। আমরা কেওই আমাদের দায়িত্বটুকু পালন না করে অন্যর আশায় বসে থাকি। ফলে আমরা ২ কোটি অসচেতন মানুষ নিজেদের আবর্জনায় নিজেরাই পানিবন্ধি হয়ে থাকি বর্ষা ছাড়াও।

জলাবদ্ধতার চাইতে সব থেকে ভয়ংকর দুর্ভোগ হচ্ছে বর্ষাকালে এ দেশের সড়ক গুলোর বেহাল অবস্থা। ভারী বর্ষায় যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তা সর্বচ্চ ১ দিনের মধ্যেই কমে যায়। পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে বের হয়ে আসে সড়ক গুলোর কঙ্কাল দসা। যার জন্য দেশের যথাযথ পক্ষগুলোর দায় সব চাইতে বেশি। সড়ক গুলোর উন্নয়ন কাজ করা হয় নিম্নমানে এবং এর স্থায়িত্ব শেষ হয়ে যায় বর্ষার পানির সাথে সাথে। একদিকে জনগণের উচিৎ টেকসই উন্নয়নের জন্য সোচ্চার হওয়া, অন্যদিকে যথাযথ পক্ষ গুলোর উচিৎ টেকসই উন্নয়নের প্রতি যত্নবান হওয়া। ফলে যে কোন উন্নয়নের স্থায়িত্ব যেমন বাড়বে, এক কাজ বারবার করা বন্ধ হলে অর্থের অবচয় বন্ধ হবার সাথে সাথে কমবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১২

ঢাকাবাসী বলেছেন: অপদার্থ অযোগ্য অশিক্ষিত লোভী দুর্নীতিবাজ অকর্মন্য কিছু গুরুত্বপুর্ণ লোকের কারণে ১৬ কােটি মানুষই আজ বিপন্ন দুর্দশাগ্রস্হ। সামনে আরো ভয়াবহ দিন আসছে।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৭

প্রোলার্ড বলেছেন: উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ । পানিতে গাড়ি চালানোর পারদর্শীতা ঢাকার গাড়িচালকেরা ভালই জানেন। সকল বাঁধা বিপত্তি পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ যে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এই ছবি তারই প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


ঢাকার নদীগুলো ভরাট হয়েছে, এবং শহরের বৃস্টির পানি নদী যেতে পারছে না স্বাভাবিক গতিতে।

৪| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৩

অঞ্জন ঝনঝন বলেছেন: সবাই যখন সরকারকে গালি দিয়েই খালাস সেখানে আপনার সুন্দর বিশ্লেষণে মুগ্ধ হলাম। ধন্যবাদ। আশা করি নদীর তলদেশ থেকে পলি অপসারণে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যাবস্থা নেবেন।

৫| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: মন্ত্রী তো কইলো আগামী বছর আর জলাবদ্ধতা আর হবে না? আহ এভাবে কত মন্ত্রীর কথা শুনলাম বছরের পর বছর...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.