নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সজিব তৌহিদ এর তুফান তারুণ্য

I am waiting for someone and I know she will ever come.

সজিব তৌহিদ

Student,Debater

সজিব তৌহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী শিক্ষা উন্নয়ন ও সামাজিক আন্দোলনের অনন্য নাম কাউনিয়ার বড়ুয়াহাট বি.এম কলেজ

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৭



‘এক বার বিদায় দে মা ঘুরে আসি..’। না বিপ্লবী খুদিরামের মত সেই চির বিদায় নিয়ে নয়; কয়েক ঘন্টার জন্য মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমাদের ঘুরে আসা উচিত রংপুর থেকে ১৬ কি.মি দূরে নিভৃত পল্লীতে অবস্থিত কাউনিয়া উপজেলার বড়–য়াহাট বি.এম কলেজ। এখানে না আসলে বিশ্বাসই হবে না কিভাবে ছেলেদের পাশাপাশি সুপ্ত, শুদ্ধ নারী শিক্ষার বিকাশ হচ্ছে নিরবধি...? ১০ কি.মি. দূর থেকে যখন রীতা রানী রায়, ৮ কি.মি. দূর থেকে যখন তহমিনা আক্তার বখাটে ছেলেদের উৎপাত মাড়িয়ে আলোকিত মানুষ হবার স্বপ্নে বাই সাইকেল চালিয়ে নিত্যদিন কলেজে আসে। সেই দৃশ্য দেখে দ্বিধাহীন চিত্তে বলা যায় ৫৬ হাজার বর্গ মাইলের এই দেশে ৮৭,৩১৯ টি গ্রামে তথা ৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে এই দৃশ্য খুব একটা বেশি নয়। এখানে জিপিএ-৪/৫ এবং শতভাগ শিক্ষার্থী পাশের রেকর্ড এখন স্বাভাবিকই বলা যায়। ২০০২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার জন্য নানাবিধ কাজ করে যাচ্ছে । মুক্তিযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, দুর্নীতি বিরোধী র‌্যালি, পরিবেশ বিষয়ক সেমিনার, বার্ষিক বিতর্ক কর্মশালা ও উৎসব, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, অনুষ্ঠান ও নাটক মঞ্চায়ন, শিতবস্ত্র বিতরণ, পহেলা বৈশাখে ঘুড়ি উৎসব, জাতীয় কোন সমস্যায় প্রতিবাদ ও সমাবেশ অন্যতম। ষোলআনা বাঙালি ঢংয়ে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণে প্রাণে স্পন্দনে পহেলা বৈশাখের দিনব্যাপি ‘ঘুড়ি উৎসব’ এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।

শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, প্রকৃত অর্থে মানুষ হবার জন্য শিক্ষার্থীদের আর্থ সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত থাকা উচিত বলে মনে করেন প্রচার বিমুখ এই কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দ। সেই বোধ থেকেই এই তো সেদিন স্থানীয় দাতা গোষ্ঠী, এলাকার সন্তান ঢাকার বিআইবিএম এর প্রফেসর ড. শাহ আহসান হাবীব, কাউনিয়া উপজেলার প্রাক্তন সাব- রেজিস্টার আফসানা বেগম মুন্নী এবং কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতায় কলেজের পক্ষ থেকে চলতি শীত মৌসুমে দরিদ্র শিক্ষার্থী ও এলাকার সুবিধা বঞ্চিত দুস্থ-অসহায় মানুষদের মধ্যে ৩০০ কম্বল বিতরণ করা হয়। সারা বছর নানা কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বড়ুয়াহাট বি.এম কলেজ। দুইটি হাফ বিল্ডিং এবং একটি চারচালা টিনের অবকাঠামোয় গঠিত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর পদচারণায় উচ্ছ্বসিত ও মুখরিত হয় গ্রামের ক্যাম্পাসটি। শিক্ষার্থী আল আমিন, মিশু, রবিউল, রিংকি, খলিল, তিথি, রিয়াদ, নাছরিন, সুইটি, রোকসানা, আসমা, নাছরিনসহ সতীর্থ বন্ধুদের খুনসুটি, চাঞ্চল্য আর তারুণ্যের উন্মাদনা যে কোন ব্যস্ত মানুষকে শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দিবে, ‘আয় ফিরে তোর প্রাণের বারান্দায়...।’

কাউনিয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় আয়োজনে ২০১২ সালের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ৮ টি কলেজকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব বড়–য়াহাট বি.এম কলেজ ও তার অধ্যক্ষ শাহ্ মো: রেজাউল ইসলাম রেজা এখন আইকনে পরিণত হয়েছেন। অধ্যেক্ষর ভাষায়, “ আমাদের সাধ্যের ঘাটতি থাকতে পারে কিন্তু ভালোবাসা আর আন্তরিকতার কমতি নেই বলে আমার সহযোগী শিক্ষক কামরুল, মিঠু, জুয়েল, সাজু, শার্মিনাজ এবং শিউলীসহ সবার প্রচেষ্টায় এবং শিক্ষার্থীদের পরম ভালোবাসায় সরকারী তেমন সহযোগিতা না থাকা সত্ত্বেও আমরা মানবিক ও গঠণমূলক কাজের মাধ্যমে ধীরে হলেও কলেজটি কে সুন্দর আগামীর পথে এগিয়ে নিতে পাচ্ছি।” কলেজের সামগ্রিক পরিস্থিতি ও হালচাল জানতে গিয়ে একটি বিষয়ে গভীর ব্যতীথ হতে হলো। তালিকাভুক্ত ১৪ জন শিক্ষক ও কর্মচারীর মধ্যে বেতন পাচ্ছেন মাত্র ৩ জন। প্রায় ৮/১০ বছর যাবৎ এখানে বেশ কিছু শিক্ষক বিনা পারিশ্রমে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা ‘ নীলফামারীর আলোচিত সেই রজ্ঞিত স্যারের মত একবেলা মাদ্রাসায় ক্লাস অন্য বেলায় ইটভাটায় কাজ করে তীব্র সংগামে করে জীবন অতি বাহিত করার মত অবস্থা।’ একটাবার এদেশের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভেবে দেখেছেন কি...? দিনের পর দিন, বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করে এই শিক্ষকদের পরিবার ও পরিজন বাঁচে কিভাবে...? একই সঙ্গে কলেজের নানামুখী সাফল্য এবং শিক্ষকদের বেতনবিহীন চরম মানবেতর জীবনের চিত্র দেখে হতবাক আর বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। প্রতি বছর সরকার এই শিক্ষকদের চাকরি এমপিও ভুক্ত করার আশ্বাস দিলেও বিগত ৮/১০ বছর ধরে তা উপেক্ষিত এবং অবহেলিতই রয়ে গেছে। তাই শত কষ্টের মধ্যেও আশার শেষ প্রদীপটুকু জ্বালিয়ে রাখা ছাড়া তাদের আর কোন গতান্তর নেই। ‘একটি আলোর কণা পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে/ একটি মানুষ হলে বিশ্ব জগৎ টলে...’। সম্ভবত সেই বিশ্বাস থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলো ছড়ানো উদ্দ্যেশে এখনো হাল ছাড়েন নি বেতনহীন শিক্ষকবৃন্দ। কলেজ অধ্যক্ষ শাহ্ মো: রেজাউল ইসলাম এবং তার সহকর্মীরা কলকাতার এক সময়কার বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ডিরোজিওর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে চরম কষ্টে, ক্লিষ্টে নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন এই প্রত্যয়ে,‘ মানুষ জাগবে ফের, পুনরায় জাগবে মানুষ...।’

লেখক: ব্লগার ও সাংবাদিক।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.