নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাকিব হোসেন ০০

সাকিব হোসেন ০০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন্ম-মৃত্যু-ভালবাসা

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:০৬



কিভাব শুরু করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা...
সম্পর্কের হাতেখড়ি সেই ২০০৫ সালে, যখন আমি ক্লাস নবম শ্রেণীতে এ পড়ি । মাঝখানে চলে গেল প্রায় ১১ টা বছর। যতদূর মনে পড়ে আমাদের মাঝে মিষ্টতার চেয়ে তিক্তার মান অভিমানের পরিমানই ছিল বেশী, যা মাঝে মাঝে হাতাহাতির পর্যায়েও চলে যেত। গত ৫ বছর ধরে আমার জানা মতে আমিই খুব কাছে বসবাস করতাম তার, কিন্তু মান অভিমানের রেশ ধরে কখনো এক ছটাক দেখাও করা হয়নি। হ্যা গত বছরে আমার এক বন্ধুকে দিয়ে অনেক রিকুয়েস্ট করেছিলে যেন আমি আসি but যাওয়া হয়নি । কিন্তু বিশ্বাস কর কিভাবে কিভাবে যেন তোমার সমস্ত update আমি পেয়ে যেতাম কারও না কারও কাছ থেকে। গত মাসে যখন শুনলাম তুমি গুরুতর অসুস্থ, বিশ্বাস কর ঐদিন থেকেই আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম দেখা করবই এবার। খুব ইচ্ছা ছিল হাসপাতালে গিয়েই দেখা করার , কিন্তু লজ্জা আর সামাজিকতার ভয়ে তাও পারলামনা।
অবশেষে গত দুদিন আগে তুমিই ফোন দিলে, বললে তুমি কি খুব ব্যস্ত, তোমার কি সামনে কোন পরীক্ষা আছে, ঊত্তরে আমি শুধু বললাম না। এরপর বললা একটু আসতে পারবা, অনেকদিন ত হয়ে গেল কোন দেখা সাক্ষাত নাই; আমি বললাম হুম তা প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর হবে। এরপর বললাম আচ্ছা আসব সময় করে একদিন। পরদিন আবার সে ফোন দিল, বলল কি হল আসবানা। আমি বললাম হ্যা আসব। সে বলল কবে, আমি বললিাম ১২ তারিখে আসি ( কারন ১২ তারিখে আমার একটা exam ছিল) । সে বলল এতদেরী, ১০ তারিখে (বৃহস্পতিবার) আসবা, ১২.৩০ থেকে ১.৩০ টার মধ্যে, সারাদিন আমার বাসায় থাকবা, আমরা অনেক গল্প করব। আমি আর তাকে না বললতে পারলাম না, ভললাম ঠিক আছে আসব। পরক্ষনেই আমার মনে হল, শুক্রবার ছুটির দিন, শুক্রবারে গেলেই ত পারি। আবার ওকে ফোন দিলাম, বললাম শুক্রবার আসি। সে বলল না plz ১০ তারিখেই আস। পরে হঠাত মনে হল আরে ১০ তািরিখে ত ওর জন্মদিন। টেনশনে পরে গেলাম কি গিফ্ট দেয়া যায়। একে ওকে অনেক জিঙ্গাসা করলাম কি দেয়া যায়, কিন্তু কি কিনব ঠিক বুঝে উঠতে পারলামনা। তো যাই হোক, ওর পছন্দের খাবার চকলেট নিয়েই আমি আর আমার আর এক বন্ধুকে ( মোর্শেদ) নিয়ে রওনা হলাম। এরপর আর কি দেখা করলাম, আংটি (aunty) অনেক আইটেম রান্না করছিল সেগুলো খাইলাম, অনেকক্ষন (দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত) অতিতের স্মৃতি গুলো নিয়ে টানা হেচড়া করলাম। সে আমাকে বলল relation আছে কারও সাথে, বললাম না। পরক্ষনে ও আবার সে বলল কেন প্রিয়ার ( সিলেটে বাড়ি, ফোনে পরিচয় যখন আমি কলেজে পড়ি) কি খবর, বললাম ওটা relation ছিলনা, একটা ভ্রান্ত আবেগ ছিল । এরপর আমি বললাম তোমার relation নাই কারও সাথে, ও বলল ছিল এখন আর নাই। বললাম কে সে, ও বলল আরমি অফিসার। আমি বললাম ও শুনেছিলাম, ও বলল তুমি কিভাবে জান? বললাম আমার এক বন্ধু ( লিমন-আরমি অফিসার) বলেছিল। লিমন আমাকে অনেক আগেই বলেছিল ওই ছেলের কথা, যার স্বভাব ছিল তার status কে কাজে লাগিয়ে শুধু মেয়ে পটানো, বিয়ে করা না। ও শুধু চুপ করে কথা গুলো শুনল, কোন প্রতিবাদ করলনা, আর করবেই বা কেন, ও তো এখন সব জেনেই গিয়েছে। আমি বললাম তৃষা এগুলোকে love বা relation বলেনা। ও শুধু আমার দিকে তাকাল কিছু বললনা......এরপর স্কুল জীবনের অনেক কথাই হল.....
মাগরিবের সময় বের হলাম, নামায পরে হলে আসলাম। বিছানায় শোয়া মাত্রই আমার এক ডক্তার বন্ধুর (শরিফুল) ফোন আসল, বলল তুমি একটু দৌড়ে তৃষাদের বাসায় যাও, সম্ভবত ওর কিছু হইছে......দৌড় দিলাম....পথিমধ্যে আবার ও ফোন দিল, বলল তৃষা মারা গেছে.......
আমি থ..............
আমি বললাম এটা কি করে সম্ভব, কালকে ত আবার তোমাকে নিয়ে আমার ওর সাথে দেখা করার কথা ছিল...... তাড়াতাড়ি ওর বাসায় আবার গেলাম, তখন প্রায় সন্ধ্রা ৮.৩০ টা বাজে....দেখি মরা দেহটা স্থির হয়ে পড়ে আছে....... আমি তখন নির্বাক....কি করব বুঝতেছিলামনা.....যদি বাংলা সিনামার মত বুকে নিয়ে কাদতে পারতাম.........
রাত ১১.০০ টা নাগাদ ambulance আসল, আমি মোর্শেদ আর নাম না জানা দুইজন লোক মিলে ওর লাশটা ৫ তালা থেকে নামালাম....কি যে এক অনুভুতি বলে বোঝাতে পারবনা....এই প্রথম আমি কারও লাশ বহন করলাম, আর সে হলে তুমি....ambulance এ উঠলাম, তার ঠিক মাথার পাশে বসার সৌভাগ্য হল......বসে বসে কাদছিলাম আর ভাবছিলাম:..
আমাকে সে আজ বলেছিল...সাকিব, আমাকে কি আর কোন ছেলে ভালবাসবে, কেও কি আমাকে আর বিয়ে করবে.....সাকিব পারবা আমার জন্যে একটা ছেলে খুজে দিতে.....আমি ত না বলিনি....বলেছিলাম পারব..... আরও অবাক হলাম যখন তার শেষ FB Status টা পড়লাম.....তার শেষ status ছিল এই...
”আজ আমার জন্মদিন।অনেক আনন্দে ছিলাম দিনটা নিয়ে।স্কুলের ২/৩ জন ফ্রেন্ড কে আসতে বলছিলাম।সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল হঠাত আমার বুক পিঠ ব্যথা শুরু উঠল।শাস নিতে পারছিলাম না।প্রচন্ড ব্যথায় আমি কাতর।আম্মু আব্বু বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করতে লাগল আমার ব্যথা কমাবার।অনেক্ষন পর মোটামুটি কমলো ব্যথাটা।এটাই আমার লাস্ট বার্থডে হতে পারত বা পারে,,,,”
পোস্টটা পড়ার পর আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না....বুঝতে পারলাম ও আগে থেকে সবই জানত.... যদি ১২ তারিখে exam না থাকত, তাহলে হয়ত তোমার সাথে তোমার গ্রমের বাড়িতেও যেতাম, তোমার জানাযায় শরীক হওয়াের জন্য। আফসোস ১২ তারিখে exam টা হবেনা (১৫ তারিখে হবে) , জানতে পারলাম আজ.....কি যে মনে হচ্ছিল তখন বলতে পারবনা......১০ তারিখে এলে, ১০ তারখেই চলে গেলে...
দীর্ঘ ১১ বছরের এই অভিমানের দর কষাকষির যুদ্ধে শেস পর্যন্ত তুমিই জয়ী হলে..আর প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেলাম এই আমি..... কেনই বা এত বছর পরে ডাকলে... শেষ পর্যন্ত ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কি বা চাইলে..?????

এই সুন্দর পৃথিবীতে আসলে, চলেও গেলে, রেখে গেলে শুধু ভালবাসা.....

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৫

সুমন কর বলেছেন: আবেগী লেখা, ভালো লাগল।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪

সাকিব হোসেন ০০ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৫

জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন: এটা কি গল্প না বাস্তব ?

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

সাকিব হোসেন ০০ বলেছেন: আমি বাস্তবে বিশ্বাসী...এটা বাস্তব ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.