নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাকিব হোসেন ০০

সাকিব হোসেন ০০ › বিস্তারিত পোস্টঃ

Tragedy of Research Life

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩১




প্রায় পাঁচ বছর পর বন্ধু রাজের সাথে দেখা।সে এখন ডাক্তার।সবে মাত্র ডাক্তারি পেশার প্রাথমিক পর্যায় শেষ করেছে।আর আমি গতমাসে পিএইডি ডিগ্রী শেষ করে দেশে এসেছি।রাজ অবশ্যই আমার থেকে ভাল ছাত্র ছিল। প্রমান চাইলে বলব সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে, কিন্তু আমি পাইনি। মেডিকেলে চান্স না পাইলে সবার সাথে যা ঘটে , আমার সাথেও তাই ঘটেছিল। তো যাইহোক অনেক চড়াই উৎরাই পার করে অবশ্য একটা বিশ্ববিদ্যায়ে চান্স পেয়েছিলাম, সাবজেক্ট ছিল বয়োক্যামিষ্ট্রি।তারই রেশ ধরে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করে এই বছরেই পিএইডি টাও সম্পূর্ন করে দশে ফিরলাম।
কথা নাই বার্তা নাই, হুট করেই রাজ প্রশ্ন করে বসল- তো রিসার্চার (গবেষক) সাহেব বিয়ে ঠা করেছেন, নাকি এখনও ব্যাচেলর।সরাসরি বললাম ওকে, না বন্ধু এখনও করা হয়নি। তোর কি অবস্থা, তুই করেছিস।ও বলল, না এখন পর্যন্ত না, তবে একটা প্রসেসিং এ আছে।কাল ওর বাসায় যাব একবার, তোকেও নিয়ে যাব ভাবছি- কি সময় হবে তো ? একটু অপ্রস্তুত ভাবেই বললাম-আ....মি, আমি গিয়ে আবার কি করব !!! কি করবি মানে, অভিজ্ঞতা নিবি, বিয়ে ঠা করবিই না নাকি, নাকি শুধু খোঁজ দ্যা সার্চ-ই করে যাবি (মানে গবেষনা আর কি)।এত গবেষনা করে তোরা যে কি মজা পাস, বুজিইনা বাপু। এই তোর সাবজেক্ট যেন কি ছিল, বয়োক্যামিষ্ট্রি তাইনা, এই সাবজেক্ট এ এত কি যে পড়িস তোরা, আমরা তো প্রথম বর্ষেই শেষ করে দেই এই সাবজেক্টটা। আমার উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার বলতে শুরু করল, এত বছর তো পার করলি, কই একটাকেও কি বশ করতে পারছস, না ডজনখানেক সম্বোন্ধ পাইছস আমারমত। এই আমাকে দেখ ম্যাডিকেলে চান্স পাওয়ার পর থেকে কত যে ওফার পাইছি বন্ধু, হাতে গুনে শেষ করতে পারবিনা।অবশেষে একটা কপালে জুটল, অত্যন্ত সামাজিক এবং সুশিল। ও আরও বকবক করল, বুঝছ বন্ধু প্রেম তো যারতার সাথেই করা যায়, মাগার বিয়ে কিন্তু দেখেশুনে করা চাই। আর নিতে পারলাম না, কোন প্রশ্নের উত্তরও দিলামনা, শুধু বললাম কাল কখন যাবি। রাজ বলল বিকালে যাব, আমি বললাম ওকে -কালকে দেখা হবে।আর কিছু না বলে, ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে উঠে পড়লাম।

পরদিন বিকেলে কথামত গিয়েছিলাম বন্ধুবরের হবু স্ত্রীর বাসায়। সে এক বিশাল আয়োজন ছিল তাদের, হাজার হলেও জামাই ডাক্তার বলে কথা।মেয়ের বাবার সাথে অনেক গল্প হয়েছিল, সে তো রাজের প্রশংসায় একেবারে পঞ্চমুখ ছিল।বলেছিল, বুঝলা বাবা আমার মেয়ের সাত জন্মের কপাল যে রাজের মত একজন ডাক্তার জামাইকে ও জীবনসঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে, আমার আর কোন চিন্তা থাকলনা।তার কথাগুলো শুনে কেন জানি আমার অনেক হাসি পাচ্ছিল, অনেক কষ্টে হাসি চেপে ধরে শুধু বলেছিলাম- জি আংক্যাল।তো যাইহোক কিছু দিনের মধ্যে বন্ধু রাজ বিয়ে করল, আর আমি আমার মত সিঙ্গেলেই থাকলাম|

এরমধ্যে কেটে গেল প্রায় তিন বছর।আমি তখন পোস্ট পি.এইস.ডি করছিলাম ইউরোপে। হঠাৎ একদিন রাজ আমাকে ফোন করল স্কাইপে।বললাম কি অবস্থা ডাক্তারসাব কেমন আছেন, এতদিন পর মনে পড়ল তাহলে।সে শুধু বলল আছি কোন রকম, তুই? বুঝলাম সে ভাল নেই, যদি ভাল থাকত তবে ওর কণ্ঠের মধ্যে একধরনের চাঞ্চল্য প্রকাশ পেত, যা আজকে নেই। ভনিতা না করে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম, কি হইছে বন্ধু? বলা যায় আমাকে? হুম, বলা যায় -ও বলল: আমি মনে হয় শান্তাকে (রাজের স্ত্রী) আর বাঁচাতে পারবনারে, বলেই কাঁদতে শুরু করল।আমি বললাম মানে কি, কি হইছে ওর? রাজ বলল, Spinocerebellar Ataxia, এটা একটা জেনেটিক রোগ, মেডিকেল শাস্ত্রে যার কোন প্রতিকার নেই।এই রোগে আক্রান্ত রোগী তার দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হারাতে হারাতে মৃত্যুর কোলে ধলে পড়ে। আজও পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।বুঝলাম মেডিকেলের কোন এক বইয়ের পৃষ্ঠার কিছু লাইন মুখস্ত ঝারল আমাকে।বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যপটের কমন ডায়ালগ (বক্তৃতা) যেমন আইন নিজের হাতে তুলে নিবেননা, ঠিক তেমনি মেডিকেলে পড়ুয়া ছাত্রের কমন ডায়ালগ এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই (কারন হয়ত বইগুলোতে এখনও বিষয়গুলো ছাপনো হয়নি)।ছাপানো থাকলে অবশ্যই তারা বিষয়গুলো মুখস্থ করত এবং তাদের মনেও থাকত, হাজার হলেও দেশের টপ মেরিট লিস্টে তাদের অবস্থান।ওনারা রোগ নির্ণয় করেই মহাখুশি। এরপর যদি রোগের প্রতিষেধকের কথা বইয়ের পাতায় উল্লেখ থাকে, তাহলে প্রেসক্রিপশনে সেগুলো লিখে দেয়; আর যদি না থাকে তাহলে বলে দেয় আমরা দুঃখিত এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই ( কারন আমাদের বইয়ের পাতায় উল্লেখ নাই)।

তো যাইহোক, ঘটনাটা শুনে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল প্রথমে। ওকে সান্তনামূলক কিছু কথা বলার পর বললাম, দেখ বন্ধু তোমরা কিভাবে যে এত সহজে বলে ফেল এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই, তা আমার জানা নাই।হতে পারে তোমাদের পাঠ্য বইগুলোতে এসব চিকিৎসার কোন উপায় বা পদ্ধতি লেখা নাই, তাই তোমরাও মনে কর আসলেই এসব রোগের কোন চিকিৎসা নাই। আগে তো সামান্য ডায়েরিয়া, আমাশয়, প্লেগ হইলেই মানুষ মারা যেত। কই এখন কি আর কেও মারা যায়? আমি একজন গবেষক হিসেবে কখনই বলব না যে, কোন রোগের কোন চিকিৎসা নাই।যদি তাই হত, তাহলে ডাক্তার আর গবেষকদের মধ্যে পার্থক্য কি? গবেষকদের কাজই হচ্ছে হ্যা বলা, পজিটিভ চিন্তা করা, তার পজিটিভ চিন্তার পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করা, আর অক্লান্ত পরিশ্রম করে নতুন নতুন রোগের নতুন নতুন প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা।যা তোমরা মানে ডাক্তাররা কয়েক মিনিটের মধ্যে মুখস্ত করে রোগীদের প্রেসক্রিপশন করে দাও।তোমাদের লিখিত ঔষুধ খেয়ে রোগীরা যখন সুস্থ হয়, তখন তোমরা অনেক বাহবা পাও। সবাই তোমাদের মান্য করে, দেশ ও জাতি তোমাদেরকে এক নামে চেনে। মেয়েদের বাবারা তাদের মেয়েদেরকে নিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে তোমাদের পিছনে।একবারও কি চিন্তা করে দেখেছিস রাজ, প্রতিদিন তোরা যতগুলো ওষুধের নাম প্রেসক্রিপশনে লিখিস প্রত্যেকটা ঔষুধ একেকটা গবেষকের সারাজীবনের ফসল। তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে, জীবনের স্বাদ আহ্লাদকে বিসর্জন দিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ড্রাগ, রোগের কারন, রোগের উপসর্গ ইত্যাদি ইত্যাদি উদ্ভাবন করে যাচ্ছে, যা পরবর্তিতে তোদের পাঠ্য বইগুলোতে সংযোযিত হচ্ছে, তোরা সেগুলো মুখস্থ করছিস, রোগীদেরকে ওষুধ লিখে দিচ্ছিস, রোগীরা সুস্থ হচ্ছে, আর তোরা বাড়ি, গাড়ি, নারী, খ্যাতি সব কুড়াচ্ছিস।আফসোস কেও জানলনা এসবের পিছনে মূল অবদান কাদের।মাত্র নয় মাস যুদ্ধ করেছে বলে সরকার তাদের সহ তাদের ছেলেপুলে-নাতিনাতনীদের কত কিছুইনা দিল।আর একজন গবেষক যে বছরের পর বছর যুদ্ধ করে গোটা মানবজতিকে আজও পৃথিবীর বুকে টিকে রেখেছে, তাদের নিয়ে কেও ভাবলনা। এদেরকে কি কোন কোঠার আওতায় ফেলানো যায়না। শুধু কি রক্তপাত আর গোলাগুলিকেই যুদ্ধ বলে?
এতক্ষন পরে রাজ বলে উঠল, আমি কিন্তু কিছুই বুঝছিনা, এসব কথা তুই আমাকে বলছিস কেন।আমি বললাম, আমি নিজেও জানিনা, তবে যা বলেছি ভুলে যা। কাজের কথায় আয় এখন, শোন ভাগ্যবশত আমি আর আমার প্রফেসর এতদিন যে রোগটা নিয়ে গবেষনা করেছি, সেই রোগটাই তোর বউয়ের হয়েছে মানে Spinocerebellar Ataxia, মেডিকেল শাস্ত্রে যার কোন চিকিৎসা নাই। আমরা একটা ড্রাগ ডিজাইন করেছি, যার মাধ্যমে রোগটা পুরাপুরি ভাল করা যাবেনা বটে, তবে রোগটাকে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হবে এবং আশা করছি রোগী সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে। তবে সমস্যা হচ্ছে ড্র্যগটা approval পেতে, বাজারে আসতে মিনিমামতো ৭-১০ বছর সময় লাগবে।রাজ উদ্দীপ্ত কণ্ঠে বলে উঠল, তাহলে কি করা যায় বন্ধু, কোন উপায় কি নেই??? আমি বললাম উপায় একটা আছে, তবে রিস্ক থেকে যায়। সে পরক্ষনেই বলে উঠল কি সেই উপায়? আমি বললাম, আমার ল্যাব থেকে কিছু স্যাম্পল গোপনে তোকে পাঠাব, তুই তোর বউকে ২-৩ মাস খাওয়াবি আর পর্যবেক্ষন করবি যে আসলেই ওষুধটা কাজ করছে কিনা । তবে খুব সাবধান বিষয়টা যেন কোনভাবেই ফাঁস না হয়, তাহলে কিন্তু আমি শেষ। রাজ বলল কখনই হবে না বন্ধু।
যে কথা সেই কাজ। কথামত গোপনে কিছু ওষুধ পাঠালাম এবং গত তিন বছর ধরে পাঠিয়েই যাচ্ছি। কি আর করার আছে ওষুধে যে কাজ করছে। সারাজীবনের প্রচেষ্টা কি এভাবে ব্যর্থ হতে পারে।আল্লাহ তাআলা সত্যিই কোন পরিশ্রমকেই ব্যর্থ হতে দেননা।আর যদি করতই তাহলে এতদিনে পুরা চিকিৎসা শাস্ত্রই লাটে উঠত।তো যাইহোক আমাদের উদ্ভাবিত ওষুধটা এখনও বাজারে ছাড়ার অনুমোদন পায়নি, হয়ত এখনও কয়েক বছর লাগবে। তখন হয়ত মেডিকেলের বইগুলোতে এই রোগের treatment সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা থাকবে, হয়ত আমাদের drug টার নামও থাকবে।সেই বছরে মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীরা হয়ত মুখস্থ-ঠোঁটস্থ করবে এই রোগের treatment সম্পর্কে, আর সুস্থ করে তুলবে অসংখ্য রোগীকে, ফলে তাদের নাম হবে, লোকেরা তাদের একনামে চিনবে। আর আমাদের মত গবেষকরা আজীবন অচেনা থেকে যাব সবার মাঝে......
ক্রিং ক্রিং...ফোনের আওয়াজ....প্রফেসরের ফোন ছিল....
বলল নতুন আরেকটা প্রযেক্ট পেয়েছি, Cancer এর উপর, আমেরিকান রোগীদের নিয়ে কাজ করতে হবে (বুঝলাম আমেরিকায় কাজ করতে হবে), পাঁচ বছরের প্রজেক্ট, কাজ করবা আমার সাথে নাকি দেশে ফিরে যাবা। মনে মনে ভাবলাম দেশে গিয়ে কি করব, সরকারী চাকরীর বয়স শেষ, শিক্ষকতা করব: তারও উপায় নাই- কারন আমার তো লোবিংও নাই, কাড়ি কাড়ি টাকাও নাই, সর্বোপরী আমাদেরতো কোন কোঠাও নাই।তারচেয়ে বরং এই প্রজেক্টে যোগ দিলে পাঁচ বছর নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। তাই স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা স্বত্তেও বললাম......আসছি প্রফেসর আমি আসছি.........
"00"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১

সেলিম৮৩ বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।
অাল্লাহপাক অাপনার রিসার্সের জ্ঞান অারো বাড়িয়ে দিক।

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১২

সাকিব হোসেন ০০ বলেছেন: আমিন.........।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

ইফতি সৌরভ বলেছেন: কিছু অপ্রিয় সত্য এত সুন্দর ভাবে কতজন পারে তুলে ধরতে?

অসাধারণ!!

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১১

সাকিব হোসেন ০০ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই..।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.