নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তবতার এই কঠিন বেড়াজালে আমি স্বপ্নের মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। স্বপ্ন গুলো অনেক বড় হলেও মানুষটা আমি খুবই সাধারন।

সাকিন সিকদার (জেন)

একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি!!!

সাকিন সিকদার (জেন) › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিশাতের স্মৃতিচারন

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৬



সময়টা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, নিশাত চলে যাবার পর কেন জানি সব কিছু আবছা আবছা লাগে। ওর দেওয়া কষ্ট গুলো এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। বিকেলের দিকে কলেজ মাঠে বসে ছিলাম। মুরাদ আমাকে অনেক উপদেশ দিলো যে "সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, কত মেয়ে এরকম আসবে যাবে, তুই টেনশন নিস না, পড়াশোনায় মন দে " আমি সত্যি টেনশন নিচ্ছি না, খালি তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে, বিশেষ করে রাতের বেলা!! বেশ সুন্দর লাগে আকাশ টাকে।  কিছুক্ষনের জন্য ভিতরের যন্ত্রনাটাকে ভুলে থাকতে পারি।  একটা সময় মনে হত নিশাতকে নিয়ে রাতের বেলা আকাশের তারা গুলো দেখবো!! ও হয়তো এরকম কিছু একটা ভাবতো,  আচ্ছা এখনো কি এরকম  ভাবে আমার জন্য নাকি ওর কল্পনাতে এখন অন্য কেউ।  মুরাদের সাথে আরো অনেক কথা হলো। ও আসলে আমাকে এটাই বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করছিলো, যে নিশাত আর কখনো আমার কাছে ফিরবে না!!
*
টিউশনি তে গিয়ে দেখি সোমা মুখ কালো করে বসে আছে।  আমি ওর অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- কি হয়েছে?
.
--- আপনি সব সময় এভাবে কেন থাকেন? দেবদাসের মতো!!
.
--- ও তাই কিন্তু দেবদাস তো মদ খেতো, আমি তো মদ খাই না।
.
--- তা খান না।  তবে আপনার চলাফেরায় অনেকটা দেবদাস দেবদাস ভাব।   আর আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস গুলো দেখলে আর কি বলবো.... উফফফ!!! মনে হয় আপনি এখনই মরে যাবেন।
.
--- বাহ! ভালোই তো খোজ খবর রাখো দেখি আমার
.
--- হুম।  রাখবোই তো আপনি আমার স্যার না!!
.
তারপর  সোমার মুখে কেমন জানি লালচে আভা দেখতে পেলাম..
*
মায়া জিনিসটা আসলেই অনেক খারাপ, একবার পড়ে গেলে সেখান থেকে বের হওয়া আসলেই অনেক কষ্ট সাধ্য। এখন সোমা যেটা দেখানোর চেষ্টা করছে, আগে নিশাত দেখাতো।  নিশাতের চোখে একধরনের পবিত্র ভালোবাসা দেখতাম কিন্তু আমি জানতাম না ওই চোখের পিছনে একটা বড় ধরেনের ছলনা লুকিয়ে ছিলো।  মিন্টুরোডের দিকে হাটতে লাগলাম।  নিশাত কে নিয়ে মাঝে মাঝে ওখানে যেতাম। নিশাত চলে যাওয়ার পর আর ওদিকে যাওয়া হয় নি।  তবে আজকে যাচ্ছি, কেন জানি মনে হচ্ছে ওদিকে গেলে নিশাতের দেখা পাবো।
*
সন্ধ্যায় বাসায় এসে ড্রয়ার ঘাটতে লাগলাম। সালা ক্যালকুলেটর  পাচ্ছি না।  কালকে এসাইনমেন্ট,  অংক গুলো এখনো করা হয় নি। আর মিন্টু রোড থেকে হলে আসতে আসতেও অনেক লেট হয়ে গেছে! ঘাটতে ঘাটতে একটা নুপুর আবিষ্কার করলাম। হঠাৎ পুরনো কিছু অনুভুতি নাড়া দিয়ে উঠলো। মিন্টু রোডে নিশাতের সাথে আমার শেষ দেখা হয়। আমার দেওয়া নুপুর টি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো" আমি হতে পারবো না,  তোমার এই নুপুরের অধিকারীনি" কথাটা শুনার পর আমার তেমন কিছু অনুভব হচ্ছিলো না, আসলে আমি ওর কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,,, এখনো বিশ্বাস হয় না!!!
*
সকাল বেলা উঠে দেখি ঝুম বৃস্টি হচ্ছে,  হালকা দমকা হাওয়া জানলা দিয়ে আসছে সেই সাথে বৃস্টির পানি। আমি তড়িঘড়ি করে জানলা বন্ধ করে দিলাম।  বৃস্টির পানি অবশ্য তেমন রুমের ভিতর আসছিলো না কিন্তু এই বাতাসটা আমার কাছে ভালো লাগছিলো না! বৃস্টির ঠাণ্ডা বাতাস, নিশাতের কথা অনেক মনে করিয়ে দিচ্ছিলো।  যেটা আমি চাচ্ছিলাম না, আর কি হবেই বা মনে করে ও তো এখন আর আমার না। শেষবার যখন আমরা দুজন কলেজ মাঠে  ভিজিছিলাম তখনো এরকম ঝুম বৃস্টি পড়ছিলো।  আসলে আমার ইচ্ছাই ছিলো না বৃস্টিতে ভিজার কিন্তু নিশাতের জোড়াজোড়িতে আর পারা গেল না, পরে ভিজতেই হলো।  ওদিন রাতেই আমার জ্বর  আসে,,,
আসলে আমার বৃস্টিতে ভিজার একদমই অভ্যাস নেই। নিশাত ফোন দিয়ে ফোপাতে থাকে আর আমি ফোনের ওপাশ থেকে ওর ফোপানোর আওয়াজ শুনছিলাম! আর ভাবছিলাম মেয়েটা এরকম কেন...
.
--- আমি আসলেই অনেক খারাপ!! (নিশাত)
.
--- কেন আবার কি হলো? (আমি)
.
--- এই যে তুমি মানা করা সত্তেও তোমাকে নিয়ে বৃস্টিতে ভিজলাম!  আমি কি জানতাম তোমার নিউমোনিয়ার সমস্যা,,,
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দাও না, যা হবার হয়েছে।
.
--- না কোন  বাদ দেওয়া হবে না, কালকে তুমি আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যাবে
.
--- এইটুকু জ্বরের জন্য আবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে!!
.
--- যতটুকুই জ্বর হউক, তুমি আমার সাথে যাবা.. আর এটাই শেষ কথা!!!
.
শেষে বাক্যটা খুব জোর দিয়ে বলেছিলো , ওর কথায় কেমন যেন একটা টান টান ভাব দেখতে পাই আমার জন্য। তবে ওদিন মনে হচ্ছিলো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ!!
*
বিকেলের দিকে আবার কলেজ মাঠে গেলাম। সকালে ঝুম বৃস্টি ছিলো আর এখন চকচকে রোদ। কি অদ্ভুতই না প্রকৃতির নিয়ম!! মাঠের দক্ষিন দিকে একটা ছোট্ট পুকুর আছে,  ওখানে গিয়ে বসলাম।  আগে নিশাতের সাথে প্রতিদিন এখানে দেখা করতাম।  এখন মাঝে মাঝে আসি,  বিশেষ করে যখন মন খুব খারাপ থাকে। গত বছরের এই দিনটাতেই নিশাতের বিয়ে হয়। আমি যখন যাই তখন ওর বিয়ে শেষ হয়ে যায়, গিয়ে দেখি নিশাত ওর আব্বুকে জড়িয়ে কাদতেছে!! আমি কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা দেখতে লাগলাম। কোন কিছু অনুভব করতে পারছিলাম না, নিজেকে কেমন জানি রোবট রোবট লাগছিলো কিন্তু খারাপ লাগলো তখনই যখন ওকে ফুলসজ্জা গাড়ির ভিতরে উঠতে দেখলাম।  আর সইতে পারছিলাম না কিছু, তাই বাধ্য হয়ে চলে আসলাম ওখান থেকে,, আচ্ছা ও কি দেখেছিলো আমাকে!!
মাঝে মাঝেই এই প্রশ্নটা মাথার মধ্যে ঘুর পাক খায়। আজো এই ছোট্ট পুকুরপাড়টাত বসে থাকি, এই হয়তো নিশাত আসবে বলে!!!
.
সমাপ্ত
.
written by sakin shikder(xen)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.