নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তবতার এই কঠিন বেড়াজালে আমি স্বপ্নের মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। স্বপ্ন গুলো অনেক বড় হলেও মানুষটা আমি খুবই সাধারন।

সাকিন সিকদার (জেন)

একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি!!!

সাকিন সিকদার (জেন) › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুর্বার বাসা......

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৬




বৃস্টিটা টুপ টুপ করে পড়ছে। দেওয়ালে কিছুটা শেওলা জমে গেছে। পুরনো বাড়ি হলে যা অবস্থা হয় আর কি! পেপারটা হাতে নিয়ে বসে আছি আর বারান্দার দেওয়ালের অবস্থা দেখিছি। বৃস্টিটা এতোক্ষনে বেড়ে গেছে, একেবারে ঝুম বৃস্টি! হঠাৎ অনিকা এসে বললো,,,
.
----আব্বু আমি রেডি হয়েছি!
.
আমি চেয়ার থেকে উঠে বললাম,,,,
.
----হ্যা চলো আম্মু।
.
---- কিন্তু বাইরে তো অনেক বৃস্টি!
.
----সমস্যা নেই,,, তোমাকে রেইন কোট পড়িয়ে দিবো।
.
---- আর তুমি?
.
---- আমি ছাতা নিয়ে বের হবো।
.
তখন রান্না ঘর থেকে পুর্বার ডাক শুনলাম,,,
.
'এই অনিকা নাস্তা খেতে আয়!!'
.
আমি অনিকাকে কোলে নিয়ে ডাইনিং রুমে গেলাম। দেখি পুর্বা অনিকার স্কুল ব্যাগ গোছাচ্ছে। আমি অনিকাকে চেয়ারে বসিয়ে, নাস্তা খাওয়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। খাওয়া-দাওয়ার প্রতি মেয়েটার যথেষ্ট অনীহা, কিছুতেই বাসার খাবার খেতে চায় না! হঠাৎ পুর্বা চেচিয়ে উঠলো,
.
--- এই!!! নাস্তা খাচ্ছিস না কেন স্কুলে যেতে হবে না। তোর জন্য আমরা বসে থাকবো নাকি!
.
কথাটা শুনে অনিকা ফোপাতে লাগলো,,আমি পুর্বাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,,
.
--- কি ব্যাপার! বকতেছো কেন মেয়েটাকে...
.
--- তো কি করবো.. দেখ না কি ঢং মেয়েটার!! চকলেট-মিষ্টি এনে দিলে তখন খেতে তার কোন সমস্যা নেই।
.
--- বাদ দাও না! ছোট মানুষ কত টুকুই বা খেতে পারবে
.
--- তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না, বাপ- মেয়ে হয়েছে একরকম! সবসময় কোন না, কোন অজুহাত দেখাবেই।
.
আমি পুর্বাকে আর পাত্তা না দিয়ে অনিকার চোখ মুছে দিয়ে বললাম,,,
.
--- একটু খেয়ে নাও আম্মু, তারপর তোমাকে স্কুলে গিয়ে চকলেট কিনে দিবো।
.
মলিন মুখটাতে আবার হাসির ঝিলিক দেখতে পেলাম। আমি অনিকার মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম। আর আড় চোখে তাকিয়ে দেখি পুর্বা আমাদের দিকে রাগে কিটমিট করে তাকিয়ে আছে!

অফিসে এসে দেখি কেউ আসে নি শুধু মিথিলা আর সোহেল ছাড়া! আমি ডেস্কে বসতে বসতে সোহেলকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- কিরে সবাই কই?
.
--- কেন তুই জানিস না, আজকে সবাই ফ্যাক্টরি ভিজিটে গেছে, ইরা আপার সাথে!
.
--- কই আমাকে তো কেউ কিছু বললো না!
.
--- তুই মেইল চেক কর আগে,,,
.
আমি ইনবক্স চেক করে দেখি, কাল সন্ধ্যার দিকে ইরা আপা একটা মেইল পাঠিয়েছে আমাকে।ওপেন করে দেখি একটা লিস্ট এবং লিস্টের নিচে আমাদের অফিসের অনেকে কলিগের নাম আছে, সেই সাথে আমারো। আর নিচে লিখা " উপরোক্ত নামের সবাইকে ফ্যাক্টরি ভিজিটের জন্য কাল সকাল ৮ঃ১৫ ঘটিকায় উপস্থিত থাকতে হবে" আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯ঃ২৩ বাজে। যাহ! এতক্ষনে সবাই ওখানে মনে হয় পৌছে গেছে, বুঝচ্ছি আজকেও আমাকে ঝাড়ি খেতে হবে ইরা আপার কাছে! আর এখন ফ্যাক্টরির দিকে রওনা দিয়েও লাভ নেই,, আমি যেতে যেতে, ততক্ষনে ভিজিট প্রক্রিয়া শেষও হয়ে যাবে! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে আনমনে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ মনে হলো পুর্বাকে একটা কল দেই! দেখি বৌ টা আমার কি করছে এখন, ফোন দিলাম আর সেটা অনেক্ষন বাজার পর ওপাশ থেকে পুর্বা রিসিভ করলো, সেই সাথে রান্না পুড়ার আওয়াজ ও পেলাম,,
.
--- হ্যা বলো কি হয়েছে!
.
--- কি করো?
.
--- লুডু খেলতেছি, তুমি জানো না আমি কি করি এসময়!
.
--- আচ্ছা তুমি এভাবে কথা বলতেছো কেন,,
.
--- তো কিভাবে বলবো!
.
--- বিয়ের পর কেমন জানি হয়ে গেছো, আগের মতো রোমান্টিকতা দেখাও না!
.
--- দেখো এতো পিরিতি দেখানোর টাইম নাই, ফোন রাখছি এখন... রান্না শেষ করে অনিকাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে হবে!
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি রান্না করো, বাই
.
--- হুম বাই।
.
তারপর পুর্বা ফোনটা কেটে
দিলো, আমি বাইরের দিকে তাকালাম, বৃস্টিটা অনেক খানি কমে গেছে কিন্তু ফোটা ফোটা পড়ছে, আকাশটা একদম কালো মেঘে ঢাকা! মনে হচ্ছে এখনই বৃস্টি পড়বে আবার। এরকমই মেঘলা দিনে পুর্বাকে আমি প্রথম দেখি। প্রায় ৯/১০ বছর আগের কথা, তখন সবেমাত্র আমার অনার্স শেষ হয়েছে, চাকরী-বাকরী নিয়ে অতটা সিরিয়াস ছিলাম না আর বেশিরভাগ সময় ইফতির ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকনে আড্ডা দিতাম যেখানে আমার বন্ধুরা অনেকেই তাদের ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নামকরা কোম্পানিতে জবের জন্য চেষ্টা করছে। একদিন ইফতির দোকানের বাইরে সিগেরেট ফুকছিলাম। এমন সময় আমার চোখ গেল কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়ের দিকে, ছাতা হাতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তো আমি আর ওদিকে খেয়াল না করে আমার মতো সিগেরেট ফুঁকছিলাম আর ও আমার পাশ দিয়ে হেটে চলে গেল কিন্তু যাওয়ার সময় একটা অদ্ভুত ধরনের গন্ধ পেলাম। এটা ওর কাছ থেকে আসছিলো নাকি অন্য কোথাও থেকে সেটা ধরতে পারছিলাম না কারন পাশেই একটা পারফিউমের দোকান আছে!

অফিসে একটা প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছিলাম। গত রাতে বাসায় এটা কমপ্লিট করতে পারি নি। এমন সময়ে আমাদের অফিসের কলিগদের দেখলাম, অফিস রুমে আসতে, সেই সাথে ইরা আপাকেও। উনি আমার ডেস্কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে, নিজের রুমে ঢুকলেন! আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মন দিয়ে কাজ করতে লাগলাম, এমনভাব করলাম যেন আমি কিছুই জানি না। কিছুক্ষন পর আমাদের অফিসের পিয়ন রফিক এসে বললো, " আপা আপনাকে স্মরণ করছে"। তারপর কিছু ফাইল দিয়ে চলে গেল।আমি ফাইল গুলো আর না দেখে, ইরা আপার রুমের সামনে চলে গেলাম। দরজায় নক দিয়ে বললাম,
.
--- আপা আসবো!
.
--- হুম আসো (গম্ভীর গলায় বললো)
.
আমি বসতে যাবো, ঠিক তখনই ইরা আপা মাথা তুলে বললেন,
.
--- দাড়াও! তুমি আজকে ফ্যাক্টরি ভিজিটে আসো নি কেন??
.
--- জি আসলে আমি আপনার মেইলটা পাইনি?
.
--- পাওনি মানে! গত রাতেই তো পাঠালাম।
.
--- ইয়ে মানে চেক করতে পারি নি, আজকে অফিসে এসে দেখলাম।
.
--- তো সেটা কি আমার ফল্ট!
.
আমি মাথা নিচু কর বললাম,,,
.
--- না।
.
তারপর ইরা আপা একটা গভীর শ্বাস ফেলে বললেন,,,
.
--- ডেস্কে কিছু ফাইল পাঠিয়েছি, সেগুলা কালকের মধ্যে কম্পলিট করে আমার ডেস্কে পৌছে দিবে!
.
--- কিন্তু কাল তো শুক্রবার!
.
কথাটা শুনে ইরা আপা আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,,
.
--- তো!!
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি করে দিবো।
.
--- হুম। এখন আসতে পারো। (গম্ভীর গলায় বললো)
.
আমি রুম থেকে বেরিয়ে আমার ডেস্কে গিয়ে বসলাম। পাশ থেকে মিথিলার মিটমিট হাসির আওয়াজ পাচ্ছিলাম। দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- কি হলো হাসছো কেন!
.
--- আপনার অবস্থা দেখে! (এই বলে খিল খিল করে হাসতে থাকলো)
.
--- হাসো হাসো!! বিয়ে যখন করবা তখন বুঝবা কত ধানে কত চাল।
.
--- শুনুন বিয়ে করলে ছেলেদের অবস্থা এরকম হয়! মেয়েদের না। মেয়েরা আলাদা একটা অধিকার পায়, ছেলেদের উপর।
.
কথাটা বলে মিথিলা আবার হাসতে থাকলো। আর আমি অসহায় দৃস্টিতে ওর হাসি দেখছিলাম। আসলেই তো আমি পুর্বার উপর তেমন কোন অধিকার খাটাতে পারি না কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখি ওই আমার উপর অধিকার খাটাচ্ছে!!

অফিস থেকে বের হয়েই পুর্বার ফোন! রিসিভ করে বললাম,
.
--- হুম বলো!
.
--- মাছ আর তরকারি আনতে হবে।
.
--- মানে!
.
--- মানে, ঘরে বাজার নেই।
.
--- তো এখন আমি অফিস থেকে আবার কচুক্ষেতে যাবো বাজার করতে!!
.
--- ঠিক আছে। কালকে তাহলে শুধু ডাল আর ভাত দিয়ে খাবার খেয়!
.
এই বলে ফট করে ফোনটা কেটে দিলো। মেজাজ টা যা খারাপ হলো না! কিছু বলতেও পারলাম না। আর ২য় বার ফোন দিয়েও কোন লাভ নেই। ও ফোন আর রিসিভ করবে না। কিছু বলতেও পারি না মেয়েটাকে। কেন জানি খুব মায়া হয় পুর্বার জন্য! মেয়েটা একেবারে সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে আমার কাছে চলে এসেছে।

বাসায় এসে দেখি পুর্বা টিভি দেখছে আর অনিকাকে দেখলাম খুব মনোযোগ দিয়ে পুতুল একটার উপর রং পেন্সিল দিয়ে কি যেন আকছে।পুর্বা আমার দিকে একবার তাকালো, তারপর টিভির দিকে তাকিয়ে বললো,,"বাজারটা রেখে ফ্রেশ হয়ে আসো" আমি বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে অনিকার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
.
--- কি করছো আম্মু?
.
আমাকে দেখে মুখভরা হাসি নিয়ে বললো....
.
--- পুতুলে রঙ করছি!
.
--- এটা তো নষ্ট করে ফেলবা!
.
--- উমহু! নষ্ট হবে না। আমি এটাকে আরো সুন্দর করছি।
.
সুন্দর তো দুরের কথা পুতুলটাকে কেমন জানি পেত্নী পেত্নী লাগছে! বুঝছি কদিন পর আবার তাকে নতুন পুতুল কিনে দিতে হবে। কিছুদিন আকাঝুকি করার পর পুতুলটা সে নিজেই একদিন জানলা দিয়ে ফেলে দিবে। বাচ্চা মানুষ কিছু বলাও যায় না, বললেই কান্নাকাটি শুরু করে দিবে। আর অনিকার কান্না আমি একদমই সহ্য করতে পারি না!

নতুন একটা রোগ শুরু হয়েছে আজকাল, রোগ নাকি অভ্যাস বুঝতেছি না, প্রায়ই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়। অনেকেরেই টেনশনে এই ব্যাপারটা ঘটে কিন্তু আমার সেরকম কিছুই না। হঠাৎ করেই এরকম হয়, ঠিক বরাবর রাত ৩/৩ঃ৩০ এর দিকে! পুর্বাকে বলছিলাম ব্যাপারটা। ও তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে বলে" ভালো কোন সাইকোলজির সাথে কথা বলো" । আমিও সেরকম কিছু ভাবছিলাম।তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ঘুম এতো কম হওয়া সত্তেও ক্লান্তি ভাবটা তেমন অনুভব করি না। বারান্দায় চাদের আলো পড়েছে, কারেন্ট নেই। পাশে অনিকা আর পুর্বা ঘুমিয়ে আছে। মা আর মেয়ে দেখতে প্রায় একরকম হয়েছে। আর দুজনের ঘুমানোর অভ্যাসো সেইম। সবসময় ডান দিকে মুখ করে ঘুমাবে। ওদিনের পর থেকে পুর্বাকে প্রায়ই দেখতাম। ও সব সময় ছাতা হাতে নিয়ে আসতো, বৃস্টি/রোদ যাই থাকুক না কেন! মাঝে মাঝে চোখাচোখি হতো কিন্তু আমি অতটা গুরুত্ব দিতাম না। আর পুর্বারো হয়তো ওই সময় ওরকম কিছু ফিল হতো না আমার জন্য! তবে ও যখন সামনে দিয়ে যেতো তখন অদ্ভুত রকমের হালকা গন্ধ অনুভব করতাম! তো এরকমই একদিন পুর্বাকে কলেজের দিকে যেতে দেখলাম, সামনে কয়েকটা ইট রাখা ছিলো, রাস্তার কাজ চলছিলো বিধায়। হঠাৎ ও রাস্তার একটা ইটের সাথে উসঠা খেয়ে নিজের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে ধপাস করে কাদার মধ্যে পড়ে গেল। আশপাশের লোকজন ব্যাপারটা দেখে মজা নেওয়ার চেষ্টা করছিলো। আমি আর কিছু না ভেবে, ওর কাছে গিয়ে ওকে তুলতে সাহায্য করতে লাগলাম। হুম!!! সেই অদ্ভুত রকমের গন্ধটা তখন তীব্রভাবে অনুভব করছিলাম। মেয়েটা আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
.
--- থ্যাংকস
.
--- চলুন আপনাকে কলেজ পর্যন্ত এগিয়ে দেই।
.
--- এই অবস্থায় মনে হয় না আমার আজকে কলেজে যাওয়া হবে।
.
--- ও!!!
.
--- আমাকে বাসায় গিয়ে আবার গোসল করতে হবে।
.
--- তাহলে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দেই আপনাকে।
.
--- না থাক লাগবে না। আর আমি যাই এখন। ভালো থাকবেন।
.
--- আপনি ও!
.
পুর্বা চলে যাচ্ছিলো আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা দেখছিলাম। মেয়েটা খুরিয়ে খুরিয়ে হাটছিলো, মনে হয় পায়ে একটু বেশি ব্যথা পেয়েছে!

অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। এমন সময় পুর্বা ঘরে ঢুকে একটু হকচকিয়ে বললো,,,
.
--- কি ব্যাপার! এই সাত সকালে ফিট-ফাট হয়ে কই যাচ্ছো?
.
আমি ওর দিক না তাকিয়ে বললাম ,,,
.
--- অফিসে।
.
কথাটা শুনার পর পুর্বা হকচকিয়ে গেলো কিছুটা কিন্তু সে সেটা সহজে প্রকাশ করলো না।
.
--- অনিকাকে নিয়ে না, তোমার আজকে বই মেলায় যাওয়ার কথা।
.
--- হ্যা যাবো! বিকেলের দিকে। আমি দুপুরের আগেই চলে আসবো। তারপর তিন জন একসাথে আজকে বাইরে লাঞ্চ করবো।
.
--- আমি যাবো না, তোমরা বাইরে খেয়ে নিও।
.
--- কেন!!
.
--- এখন আর বাইরে ঘুরাঘুরি করতে ইচ্ছা করে না
.
--- তো এভাবে বাসায় থাকতে ভালো লাগে, মাঝে মাঝে তো কোথাও ঘুরতে যেতে হয়। তাই না!
.
--- দেখ সকাল সকাল তোমার সাথে কোন ফালতু প্যাচাল পাড়ার টাইম আমার নেই।
.
এই বলে অনিকাকে উঠাতে লাগলো। অনিকা ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে বললো,,,
.
--- আব্বু আজকে আমরা বই মেলায় যাবা না?
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,
.
--- হ্যা! যাবো আম্মু।

অফিসে ঢুকেই দেখি শুধু ইরা আপা বসে তার রুমে কাজ করছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার খটকা লাগলো। আমি রুমের দরজা টোকা দিয়ে বললাম,,,
.
--- আপা কোন সমস্যা?
.
--- আরে!! কালকে সকালবেলা এমডি স্যার আসবে অফিস ভিজিটে, এসেই আমাদের অফিসের সব ডকুমেন্ট চেক করবে আর একটা মিটিং হবে।
.
এই বলে উনি আবার কি-বোর্ডে টাইপ করতে থাকলেন কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে তাকিয়ে! আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। নিজের ডেস্কে গিয়ে ফাইল গুলো রেডি করতে লাগলাম। ঘন্টা দেড়েক কাজ করার পর দেখি বোর লাগছে, তাই ভাবলাম ফেসবুকে লগ ইন দেই। নোটিফিকেশন আর মেসেজ চেক করার পর মনে হলো পুর্বার প্রোফাইলে ঘুরে আসি। গিয়ে দেখি সেই পাচ বছর আগের ছবি এখনো প্রো পিকে দেওয়া আছে। নতুন কোন স্ট্যাটাস নেই। আগে এই আইডি থেকে কত মেসেজ আসতো! আমি প্রো-পিকটা বড় করে দেখলাম, ছবিতে আমি আর পুর্বা, আর পুর্বার কোলে অনিকা, সম্ভবত তখন অনিকার বয়স এক মাস! পুর্বাকে অনেক হাসি -খুশি দেখচ্ছে, তখন ওকে অনেক বেশি পরিমানে কিউট লাগে। তার থেকেও কিউট লাগছে অনিকাকে! একেবারের ফুলের মতো পবিত্র। নাহ! ফুলের চেয়েও বেশি। ওর জন্মের তিন দিন পর আমরা নামকরণ করি, "অনিকা আহসান সিকদার"

পুর্বাকে অনেক জোড়াজোড়ি করা সত্তেও সে বাইরে যেতে রাজি হলো না। আর কি করার! অনিকাকে নিয়েই একুশে বই মেলার দিকে রওনা দিলাম। ভিড় প্রচুর!একটা বইয়ের দোকান চোখে পড়ে গেল। কবিতা, ছোটদের গল্প এধরনের কিছু বই বিক্রি করতে দেখলাম। আমি অনিকাকে নিয়ে সেদিকে গিয়ে দোকানদারে সাথে দড়াদড়ি করার পর দুই/তিনটা গল্পের বই কিনলাম অনিকার জন্য!! যেহেতু সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিলো, তাই এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি না করে অনিকা কে নিয়ে বের হতে যাবো তখনই অনিকা বললো,,,
.
--- আব্বু আইস্ক্রিম খাবো!
.
--- এখন! আর একদিন খাবো আমরা আম্মু।
.
--- না এখনই।
.
ওর জোড়াজুড়িতে আর পারা গেল না! সামনে একটা আইস্ক্রিমের স্টল থেকে একটা কাপ কিনে অনিকার হাতে ধরিয়ে দিলাম। খেয়াল করলাম পাশের একটা দোকানে হুমায়ুন আহমেদের কিছু বই বিক্রি করতে। সেদিনো একুশে বই মেলায় আসছিলাম, মিসির আলীর কিছু বই কিনতে। স্টলে অনেক ভীড় ছিলো তাই ভিতরে ঢুকা যাচ্ছিলো না। হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলাম। দেখি সেই মেয়েটা, যাকে আমি ওদিন কাদার মধ্যে থেকে তুলতে সাহায্য করেছিলাম। মেয়েটা রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে, তখনই সে আমাকে চিনতে পেরে বললো,,,
.
--- আরে আপনি!
.
--- জি আমি।
.
--- এখানে কি করছেন?
.
--- মানুষ যা কিনতে আসে।
.
--- ওহ সরি, বই কিনতেই তো এসেছেন।
.
--- হা হা। আপনি একা?
.
--- হ্যা। বান্ধবী একটা আসার কথা ছিলো কিন্তু আসেনি! তাই একাই চলে এসেছি বই কিনতে আর আজকে তো মেলার শেষ দিন।
.
--- ও, ভালো ।
.
--- আচ্ছা চলুন ওদিকটাতে যাই, এদিকে অনেক ভীড়।
.
--- হ্যা চলুন।
.
--- তো হুমায়ুন আহমেদের কোন বই টা নিতে আসছিলেন?
.
--- মিসির আলী। আপনি?
.
--- হিমুসমগ্র।
.
--- আমি বুঝি না আপনারা হিমু কিভাবে পড়েন! বিরক্ত লাগে না?
.
--- বিরক্ত লাগবে কেন!! বরঞ্চ হাসি পায়, ওর কাজ কারবার দেখলে।
.
--- আমার কাছে আজব লাগে! কেমন জানি পিকুলিয়ার টাইপের।
.
--- আমার সেরকম কিছু মনে হয়নি। বরঞ্চ মিসির আলীকেই আমার অদ্ভুত লাগে আর উনি যেসব সমস্যার সমাধান করেন সেগুলো ও কেমন জানি!
.
--- কিরকম?
.
--- কিরকম বলতে আমার কাছে এগুলা আজগুবি মনে হয়!
.
হিমু আর মিসির আলীকে নিয়ে আমাদের মধ্যে আরো কিছুক্ষন কথা হলো। ওর সম্পর্কেও কিছু জানলাম। মেয়েটার বাবা রিটায়ার্ড করেছে এক বছর হলো। মা নেই। বড় বোনের বিয়ের কথাবার্তা চলছে।আর ওরা ঢাকায় নতুন এসেছে এর আগে গাজীপুর থাকতো। আমার সম্পর্কেও বললাম, যে আব্বা-আম্মা গ্রামে থাকে, ছোট বোন ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছে আর আমি চাকরির জন্য হন্য হয়ে খুজছি(যেটা একদমই সত্যি না, মেয়ে মানুষ তাই ভাব নিলাম আর কি!)। এক পর্যায়ে বই ও কিনে ফেললাম দুজন কিন্তু ও কিনলো মিসির আলী আর আমি নিলাম হিমু সমগ্র। আসলে দুজন দুজনকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলাম যে কার কোনটা ভালো লাগবে। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুতই ছিলো! এদিক -সেদিক আরো কিছু বইয়ের স্টলে ঘুরার পর দুপুরের দিকে আমরা মেলা থেকে বের হয়ে গেলাম। ও বলে ওর নানু বাসায় যাবে, তাই তাড়াতাড়ি বের হলাম আর তাছাড়া আমারো বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসের টিকিট কাটতে হবে আজকে। মেলার গেট থেকে বের হয়ে ও আমাকে বিদায় দিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর আবার আমার কাছে এসে বললো,
.
--- ওহ সরি! নিজের নামটাইতো আপনাকে বলতে ভুলে গেলাম। আমি পুর্বা আহসান!!
১০
অফিসে এসে দেখি, মিথিলা নেই। সোহেলকে জিজ্ঞেস করলাম,
.
--- মিথিলা কই!
.
--- কি জানি! দেখলাম তো না কোথাও। কেন?
.
--- আরে কিছু ফাইল দিয়েছিলাম ওকে। আজকে সেগুলা আনার কথা!
.
--- আরে আসবে আর কি! তুই এতো টেন্স হচ্ছোস কেন! হয়তো জামে আটকা পড়েছে সেজন্য আসতে হয়তো লেট হচ্ছে।
.
--- আরে আমি টেন্স হচ্ছি না। প্রতিদিন তো ও আমার আগেই আসে। তাই একটু খটকা লাগলো।
.
--- খটকা লাগার কি আছে। মাঝে মাঝে এদিক-সেদিক হতেই পারে। তুই কাজ কর।
.
--- হুম।
.
আমি চেয়ারটা হেলান দিয়ে বসে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। ৯ঃ১৫ বাজে। ইরা আপা ৯ঃ৩০ এ ফ্যাক্টরি ভিজিটে যাবে ফাইল গুলো নিয়ে(যেই ফাইল গুলো আজকে মিথিলার আনার কথা ছিলো) যাবে। আসলে ফাইল গুলো আমারই রেডি করার কথা ছিলো কিন্তু সাংসারিক ব্যস্ততার কারনে মেয়েটাকে দিয়েছিলাম করতে। আমি অফিসে জয়েন্ট করার ৬ মাস পর মিথিলা জয়েন্ট করে। মেয়েটা যথেষ্ট হেল্পফুল এবং নিস্ঠার সাথে কাজ করার একটা প্রবনতা আছে। আর তার চেয়ে বড় কথা সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতে পারে, যেটা আমাদের অফিসের অনেকেরেই সমস্যা হয়। এজন্য ইরা আপাও ওকে পছন্দ করে। হঠাৎ পিয়ন আমার ডেক্সে এসে বললো বললো- "আপা আপনাকে স্বরন করেছে"। বুজছি! আজকে বড় রকমের একটা ঝাড়ি খেতে হবে। আমি ভয়ে ভয়ে উনার রুমের দরজা নক দিয়ে বললাম,
.
--- আপা আসবো?
.
--- হ্যা আসো।
.
কার যেন সিভি দেখছিলেন, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
.
--- দাঁড়িয়ে আছো কেন! বসো।
.
তারপর আমি বসতে বসতে আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম,,
.
--- আপা ফাইলগুলো কিছুক্ষন পরে পাঠাই।
.
উনি ভ্রু কুচকে বললেন,,,,
.
--- কিসের ফাইল!
.
--- ওই যে ফ্যাক্টরির ফাইল গুলো।
.
--- ও হ্যা। ও গুলো তো কালকে মিথিলার বাসা থেকে পিয়নের মাধ্যমে আনিয়ে নিয়েছি।
.
আমি খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- আপনি কিভাবে জানলেন আমি ফাইল গুলো মিথিলাকে দিয়েছি!
.
--- ওই ফোন দিয়ে আমাকে বলেছে, যে ফাইল গুলো ওর কাছে।
.
--- তো অফিসে আসলো না কেন!
.
--- ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
.
--- কি!! কবে? কখন?
.
--- কাল সন্ধ্যায়। আসলে বিয়েটা শুধুই দুই পরিবারের মাঝখানে হয়েছে। কোন রিলেটিভ বা পরিচিতদের দাওয়াত করে নি।
.
--- ও!! তো কবে জয়েন্ট করবে মিথিলা অফিসে আবার?
.
--- আর করবে না। গত পরশু ফাইল গুলোএ সাথে রিজাইন লেটারো পাঠিয়েছে আমাকে।
.
কথাটা শুনার পর মনটা হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেল।
আমার চেহারার অবস্থা দেখে, ইরা আপা আমাকে আস্বস্ত স্বরে বললেন,
.
--- আরে চিন্তার কিছু নেই। এই দুই/একদিনের মধ্যেই নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,,
.
--- নতুন কেউ কি মিথিলার মতো কাজ করতে পারবে।
.
--- দেখ আমার ই বা কি করা আছে! বিষয়টা ওর আর ওর পরিবারের একান্ত ব্যাপার।
.
আমি আর কিছু না বলে উঠতে যাবো তখন ইরা আপা বললেন,,,
.
--- কই যাচ্ছো! আসল কথাই তো বলা হলো না।
.
আমি কিছুটা হকচকিয়ে বললাম,,,,
.
--- আরো কোন খবর আছে নাকি!
.
--- বসো! বলছি।
.
এই বলে ইরা আপা এদিক-সেদিক তাকালো,আশেপাশে কেউ আছে কিনা! তারপর গলার স্বর নিচু করে বললেন
.
--- আমাদের কোম্পানিতে বিরাট একটা ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা চলছে।
.
--- মানে!
.
--- এমডি স্যার গতকাল আমাকে শুধু এই কথাটা বলেছে। আরো বলেছে যদি কারো উপর সন্দেহ হয় তাহলে উপযুক্ত প্রমানসহ উনাকে রিপোর্ট করতে।
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে আমি এই ব্যাপারটার উপর খেয়াল রাখবো ।
.
--- এখানে সবচেয়ে বেশি তোমাকে আর মিথিলাকেই আপন ভাবি। মিথিলা তো নেই শুধু তুমি আছো, তাই সম্পুর্ন দায়িত্ব টা তোমার। আর আমাকে প্রায়ই ফ্যাক্টরি ভিজিটে যেতে হয়, তাই এদিকে খুব একটা নজর দিতে পারি না।
.
--- জি আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না! কোন সমস্যা হলে অবশ্যই জানাবো আপনাকে।
.
--- থ্যাংক উ সাকিন। তুমি এখন আসতে পারো। আমাকে একটু পর ফ্যাক্টরিতে যেতে হবে।
.
--- জি আচ্ছা।
.
তারপর আমি রুম থেকে বেরিয়ে নিজের ডেক্সে গিয়ে বসে পড়লাম। এখন দেখি আমাকে জেমস বন্ডের মতো কাজ করতে হবে! পাশে তাকিয়ে দেখি ডেক্সটা খালি। মিথিলা আর বসবে না এই ডেক্সটাতে,,,,,
১১
রাতের খাবার খেয়ে ফেসবুক ওপেন করে দেখি! মিথিলা কয়েকটা ছবি আমাকে ট্যাগ করেছে সেখানে ওর আর ওর জামাইয়ের ছবি সেই সাথে ওদের পরিবারেরো। মিথিলাকে খুব সুন্দর লাগছে, একেবারে পরীর মতো! তবে সেটা মেক আপের কারনে কি না, তা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে। অবশ্য মেয়েদেরকে বিয়ের শাড়িতে এমনেতেও অনেক সুন্দর লাগে। বাসর রাতে পুর্বা যখন এরকম বিয়ের শাড়ি পড়েছিলো, তখন ওকেও অনেক কিউট লাগছিলো!! আমি তো লজ্জায় ওর দিকে তাকাতেই পারছিলাম না। সাত-আট মিনিট এরকম যাওয়ার পর, ও নিজেই মুখ খুললো,,
.
--- দেখ সাকিন এতো ঢং করো না তো। এমনিতেই শরীরটা ভালো লাগছে না। তুমি লাইট টা অফ করে শুয়ে পড়ো।
.
কথাটা শুনার পরই মন টা খারাপ হয়ে গেল। ভাবছি একটু রোমান্স করবো, কই না! কি আর করার চুপ চাপ শুয়ে পরলাম। শোবার পর পরই ক্লান্ত ভাবটা অনুভব করলাম। বুঝলাম যে পুর্বার মতো আমি ও টায়ার্ড হয়ে গেছি। আর সারাদিনে যে ধকল গেছে আমাদের উপর তাতে শরীরে ক্লান্তি ভাবটা আসাটাই স্বাভাবিক। আস্তে আস্তে আমার চোখ টা বন্ধ হয়ে আসলো। হঠাৎ মাঝ রাতের ফোপানোর আওয়াজ পেলাম। প্রথমে একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম, এতো রাতে কে এভাবে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে। পরে খেয়াল করে শুনে দেখি পাশে পুর্বা কাঁদছে । আমি তো অবাক! কি ব্যাপার ও কাঁদছে কেন? আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলি ,,,,
.
--- কি হয়েছে!
.
--- আব্বুর কথা অনেক মনে পড়ছে। ওনাকে এভাবে কষ্ট দেওয়া আমার উচিত হয় নি।
.
আমি কি বলবো কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না!
.
--- আচ্ছা সাকিন আমরা কি কাজটা ঠিক করেছি!
.
আমি ওকে আশস্ত করে বললাম,,,
.
--- আচ্ছা আমরা কাল সকালে তোমার বাসায় যাবো। দেখি কি হয়! আশা করি উনি এবার মেনে নিবেন। তুমি টেন শন করো না। ঘুমিয়ে পড়ো।
.
--- আচ্ছা।
.
এই বলে পুর্বা ওর মাথাটা আমার বুকে গুজে দিলো। আমি ওর মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলাম। মেয়েটা তখনো কাদছিলো!!
১২
অফিসে এসে দেখি মিথিলার ডেক্সে একটা মেয়ে বসে আছে সাদা সালোয়ার কামিজ পড়া! আমাকে দেখেই
উঠে দাড়িয়ে বললো,,,
.
--- স্যার আসসালামু আলাইকুম! ভালো আছেন?
.
--- ওয়ালিকুম আসসালাম! আপনি কে?
.
--- জি সোমা আক্তার। আজকেই অফিসে জয়েন্ট করেছি।
.
--- ও হ্যা ইরা আপা বলেছিলো আপনার কথা আমাকে। আপনি বসুন।
.
--- জি স্যার।
.
--- এটাই তো আপনার প্রথম চাকরি! তাই না,
.
--- জি স্যার।
.
--- আপনাকে ভালোভাবে কাজ শিখতে হবে। যদি কাজ ভালো না করতে পারেন, প্রাইভেট সেক্টরে আপনার চাকরী যেতে দুই মিনিটো লাগবে না। আর কোন ভুল করবেন না। যেটাতে কনফিউশন লাগবে আমাকে জিজ্ঞেস করে নিবেন।
.
--- জি স্যার, আমি বুঝতে পেরেছি।
.
--- ধন্যবাদ বুঝার জন্য, এখন কাজ ঠিক ভাবে করতে পারলেই হয়।
.
--- স্যার আমি চেষ্টা করবো আর একটা অনুরোধ ছিলো!
.
--- জি বলুন।
.
--- আমাকে আপনি "তুমি" করে ডাকবেন। আমি আপনার অনেক ছোট!
.
কথাটা শুনার পর আমি মেয়েটাকে ভালোভাবে দেখলাম। দেখে তো মনে হচ্ছে বয়স ২৩/২৪ হবে। তারপর আমি নিজের ডেক্সটপ টা ওপেন করে মনিটর স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
অফিসের কাজ সেরে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সালার একটা রিক্সাও পাওয়া যাচ্ছে না। আমার পাশ দিয়ে যত গুলো রিক্সা যাচ্ছে, সব গুলোই ভরা। খালি রিক্সা পাওয়াই যাচ্ছে না! এমন সময় সোমা রিক্সা নিয়ে হাজির। আমি পুরাই থ। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো,,,
.
--- স্যার উঠেন?
.
--- আরে না না! তুমি যাও।
.
--- আপনি কোথায় যাবেন?
.
--- মিরপুরে।
.
--- আমার বাসাও মিরপুরের দিকে। উঠুন তো! অনেক কস্টে রিক্সাটা ম্যানেজ করেছি।
.
আমি আর কিছু না বলে রিক্সায় চড়ে গেলার। রিক্সা তার গতির মতো চলতে লাগলো। কিছুক্ষন পর সোমা জিজ্ঞেস করলো,
.
--- বাসায় কে কে আছে আপনার?
.
--- এইতো তোমার ভাবি আর অনিকা।
.
--- অনিকা টা আবার কে?
.
--- আমার কন্যা সন্তান।
.
আমার কথা শুনে সোমা হেসে দিয়ে বলো,,,
.
--- ও আচ্ছা!
.
এরপর আর কোন কথা হলো না দুজনের মাঝে। কিছুক্ষন পরই আমি আমার বাসার এলাকায় পৌছে গেলাম। রিক্সায়ালাকে থামাতে বললাম,,
.
--- তো আপনি এখানে থাকেন(সোমা)
.
আমি রিক্সা থেকে নামতে নামতে বললাম,,,
.
--- হ্যা।
.
--- ও আমরা সামনের কলোনি তে থাকি!
.
--- সামনের কলোনি? কই কখনো তোমাকে দেখিনি তো এর আগে এখানে!
.
--- আসলে দুই সপ্তাহ হলো আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে এখানে উঠেছি।
.
--- ও আচ্ছা!
.
এই বলে মানিব্যাগটা বের করে ভাড়া দিতে যাবো, তখনই সোমা বলে উঠলো,,
.
--- আরে স্যার লাগবে না, আমি দিয়ে দিবো।
.
আমিও আর জোড়াজোড়ি করলাম না। খুব ক্লান্ত লাগছে। সোমাকে বিদায় দিয়ে, বাসার দিকে হাটতে লাগলাম, গিয়েই ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিবো।
১৩
সকালে উঠে দেখি পুর্বা আর অনিকা বিছানার পাশে নেই। হামি দিতে দিতে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি ৮ঃ৪২ বাজে। খাইছে! অফিস ৯ঃ১৫ এ। আমি ধর মড় করে উঠে, বাথরুম গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে, শার্ট- প্যান্ট পড়ে, ইন করতে করতে রুম থেকে বের হলাম। দেখি প্রতিদিনকার মতো পুর্বা অনিকার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। আমি পুর্বাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- আমাক ঘুম থেকে ডাকো নি কেন?
.
--- আমি ভাবছি তুমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছো। আর প্রতিদিন তো এলার্ম দাও, আজকে এলার্ম দাও নি তাই মনে হলো তোমার অফিস নেই।
.
কথাটা শুনে কেন জানি হঠাৎ মাথাট খারাপ হয়ে গেল।
.
--- আমি কি তোমাকে বলসি আমার আজ অফিস ছুটি!
.
পুর্বা খানিকটা অবাক হয়ে বললো,,,
.
--- চেত্তেসো কেন?
.
--- জানি না!
.
এই বলে আমি হন্তদন্ত করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। পুর্বা মনে হয় আরো কিছু বলছিলো পিছন থেকে! আমি আর খেয়াল করিনি। অফিসে পৌছে দেখি, ৯ঃ২৭ বাজে। যাক মিটিং শুরু হতে আরো তিন মিনিট। আমি পিসি টা ওপেন করে ফাইল গুলো পেনড্রাইভ নিয়ে নিলাম। এগুলো আজকে মিটিং এ প্রজেক্টর দিয়ে শো করতে হবে। কিছুক্ষন পর পিয়ন এসে বললো "আপা আপনাকে স্বরন করসে" ততক্ষনে ফাইল গুলা পেইন ড্রাইভে চলে গেছে।
.
মিটিং রুম থেকে বের হয়ে পেটে অনেক ক্ষুদা অনুভব করলাম। আজকে অনেকক্ষন মিটিং হয়েছে। মোবাইলের দিকে দেখি ২:০০ বাজে! হুম, লাঞ্চের টাইমো হয়ে গেছে। অফিস ক্যান্টিনে গিয়ে একটা টেবিলে বসে পড়লাম। বসার কিছুক্ষন পর মনে হলো আজকে বাসা থেকে খাবার আনতে ভুলে গেছি। যাহ! সালা, পুর্বা মনে হয় তখন এজন্যই পিছন থেকে ডাক দিয়েছিলো। ক্যন্টিন থেকে কিছু খাবার নিতে যাবো, ঠিক তখনই পিছন থেকে সোমা এসে বললো,
.
--- কি ভুলে গেছেন?
.
আমি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম,,,
.
--- আসলে তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হয়েছি তো, আর খেয়াল ছিলো না।
.
--- ও!! আচ্ছা আসুন, আজকে আমার সাথে লাঞ্চ করবেন।
.
--- না না ঠিক আছে। আমি ক্যান্টিন থেকেই খেয়ে নিবো।
.
--- দেখুন এখানে সিংগারা/সমচা ছাড়া আর তেমন কিছুই পাবেন। তাছাড়া এগুলা সম্ভবত খুব সকালে বানিয়েছে, এখন বাশি হয়ে গেছে খাবার গুলো। এর থেকে চলুন আমার সাথে খাবেন।
.
মেয়েটা এমনভাবে অনুরোধ করল যে মানা না করে পারলাম না, আর তাছাড়াও ক্ষুদাও অনেক বেশি লেগেছে।
.
--- ঠিক আছে চলুন।
.
--- স্যার প্লিজ! আমাকে তুমি করে বলবেন, আমি আপনার অনেক ছোট।
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে চলো।
.
তারপর সোমা যেই টেবিলে লাঞ্চ বক্স রেখেছে সেখানে বসে পড়লাম। ও আমাকে খাবার বাড়তে বাড়তে বললো,
.
--- ভাবি আর আনিকা কেমন আছে?
.
--- হুম ভালোই।
.
--- ঘুরতে যান না! অনিকা আর ভাবিকে নিয়ে?
.
--- আসলে সেই সময় হয়ে উঠে না।
.
--- আমার কেন জানি মনে হয় আপনি ভাবিকে নিয়ে ঘুরতে চান! কিন্তু সে আপনাকে ঠিক মতো সায় দেয় না।
.
কথাটা শুনে চমকে উঠলাম কিন্তু সেটা প্রকাশ করলাম না। তারপর হাসার চেষ্টা করে বললাম,,,,
.
--- আরে না তেমন কিছু না!
.
--- ও!! আচ্ছা শুরু করুন তাড়াতাড়ি, খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
.
কথাটার মধ্যে পুর্বার একধরনের আচ পেলাম। রিলেশন চলাকালীন সময়ে প্রায়ই দুপুরের দিকে আমি আর পুর্বা আমাদের এলাকার একটা ছোট্ট পার্কে দেখা করতাম। ও আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতো বাসা থেকে প্রায় সবসময়। আসলে মেসের খাবার খুব একটা ভালোছিলো না, আর পুর্বার সেটা খারাপ লাগতো যে আমাকে কস্ট করে মেসের খাবার খেতে হতো। তবে কেন জানি একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটতো আমার সাথে, ওর সাথে যতক্ষন সময় কাটাতাম! তখন সব কিছুই ভুলে যেতাম, এক ধরনের ধ্যানে মগ্ন থাকতাম ওর প্রতি। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ব্যাপারটা আস্তে আস্তে কমে যায়!
১৪
বাসার গেট খুলতেই পুর্বা কিছুটা হাসার চেষ্টা করে বললো,,,
.
--- সরি!
.
--- নাহ! ঠিক আছে।
.
--- দুপুরে কি খেয়েছো?
.
--- আচ্ছা আগে বাসায় ঢুকতে তো দিবে, ফ্রেশ হয়ে নেই, তারপর কথা বলি।
.
--- হুম।
.
ড্রইং রুমে দেখি অনিকা টিভি দেখছে, আমাকে দেখে বললো,,
.
--- আব্বু!!
.
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
.
--- আমার আম্মুটা কি করছে!
.
--- এইতো কার্টুন দেখি।
.
আমি ওর গালে একটা চুমু দিয়ে বললাম,,
.
--- ওকে আমার সোনা বাবুটা! আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। তারপর এসে জিজ্ঞেস করবো আজকে স্কুলে কি করেছো!
.
--- আচ্ছা।
.
এরপর মেয়েটা গভীর মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে! আমি ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দেখি পুর্বা আমার জন্য চা নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। অনেক টা সিরিয়াস মুডে। ওর চেহারার অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- কি হলো ওরকম গোমড়া মুখ নিয়ে বসে আছো কেন?
.
--- আব্বু খুব অসুস্থ!!
.
--- ও তাহলে কাল সকালে তোমাদের বাসায় যাই।
.
--- আচ্ছা কিন্তু উনি যদি দেখা না করতে চান!
.
--- তুমি অস্থির হচ্ছো কেন! সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
.
--- হুম।
.
রাতে খাওয়ার পর ল্যাপটপে ফেসবুক চালাচ্ছিলাম, তখন সোমার আক্তার নামে একটা আইডি থেকে রিকুয়েস্ট আসে। একসেপ্ট করবো কি করবো না চিন্তা করছি! সেদিন পুর্বাকে বিদায় দেওয়ার পর বাস কাউন্টারে বাসের অপেক্ষা করছিলাম আর মোবাইলে ফেসবুক গুত্তাচ্ছিলাম। হঠাৎ ফেবি রিকুয়েস্টের নোটিফিকেশন পেলাম। নোটিফিকেশন টা চেক করে দেখি যে "পুর্বা আহসান" নামে এক আইডি থেকে রিকুয়েস্ট আসছে । সেখানে পুর্বার সাদাকালো একটা ছবি দেওয়া। একসেপ্ট করার কিচ্ছুক্ষন পরেই মেসেজ আসলো।
.
--- হাই, কেমন আছেন
.
--- ভালো আপনি?
.
--- হুম আমিও। কি করেন?
.
--- এইতো বাস কাউন্টারে বসে আছি। আপনি?
.
--- ও! আমি বারন্দায়।
.
--- আচ্ছা আপনি আমার আইডি পেলেন কিভাবে?
.
--- আসলে কিছুক্ষন আগে ফাইন্ড ফ্রেন্ডস ঘাটছিলাম তখন "সাকিন সিকদার" নামে একটা আইডি চোখে পড়ে যায়। তো আইডিটাতে ক্লিক করার পর কভার ফোটোতে দেখি আপনার বন্ধুদের সাথে একটা ছবি দিয়েছেন। তারপর তো রিকুয়েস্ট ই পাঠালাম আপনাকে!
.
--- ও ভালো। আচ্ছা আমার বাস চলে আসছে! পরে কথা হবে বাই।
.
--- হুম। বাই! ভালো থাকবেন।
.
--- আপনি ও
১৫
অফিস থেকে আধাবেলা ছুটি নিয়ে বানিজ্য মেলায় চলে আসলাম। পুর্বা কিছু লিস্ট দিয়েছে, সেগুলো কিনতে হবে। বিভিন্ন দোকান ঘুরতে ঘুরতে প্রানের একটা স্টলের সামনে দাড়ালাম। খুব পিপাসা লাগছে! স্টল থেকে একটা জুস কিনে যখন পিছন থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠের আওয়াজ পেলাম,,,
.
--- আরে স্যার আপনি এখানে?
.
পিছনে ঘুরে দেখি সোমা! অনেকটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- কি ব্যাপার! তুমি এখানে কি করছো?
.
সোমা মুখে একটা হাসির ঝিলিক দিয়ে বললো,,
.
--- মানুষ এখানে যা করতে আসে।
.
--- ও হ্যা তাই তো। কি মার্কেটিং করলে?
.
--- মাত্রই তো ঢুকলাম। ঢুকেই আপনাকে প্রান স্টলের সামনে দেখলাম!
.
--- ও!!
.
--- তো আপনি কি কিনলেন?
.
--- সেই এক ঘন্টা ধরে ঘুরছি। এখনো কিছু কিনা হয় নি।
.
--- ও!! আচ্ছা ওদিক টাতে চলুন। দেখি কি পাওয়া যায়,,
.
--- হুম। চলো।
.
সোমা আমাকে অনেক হেল্প করলো কিনা-কাটা করতে। পুর্বার দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী প্রায় সব গুলোই জিনিস কিনলাম। সন্ধ্যার দিকে আমরা মেলা থেকে বের হয়ে একটা সি.এন.জি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
.
--- তো অফিস ছুটি নিয়েছো কি এজন্য!!
.
আমার কথা শুনে সোমা হেসে দিয়ে বললো,
.
--- আমার আসলে ঘুরতে ভালো লাগে আর অফিস করতে করতে বোর হয়ে গিয়েছিলাম। তাই ভাবলাম একদিনের ছুটি নিয়ে বাণিজ্য মেলায় ঘুরে আসি আর তাছাড়াও কিছু কিনকাটার দরকার ছিলো।
.
--- হুম।
.
--- কি হলো স্যার হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন যে!
.
--- নাহ এমনি।
.
--- আচ্ছা ভাবী আর অনিকা নিয়ে আসলেন না যে!
.
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,
.
--- তোমার ভাবী এখন কোথাও যেতে চায় না,
.
--- কেন!!
.
--- কি জানি এই কয় বছর ও কেমন জানি চেঞ্জ হয়ে গেছে! বিশেষ করে অনিকা জন্মের পর।
.
--- ও!!
.
--- হুম
.
--- উনার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলসেন?
.
--- বলসি। কিন্তু ওকে এখন কেন জানি আর বুঝতে পারি না!
.
--- স্যার অনিকা আর একটু বড় হউক! তারপর দেখবেনে সব কিছু আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
.
আমি লম্বা নিশ্বাস ফেলে বললাম,,,
.
--- কি জানি!
.
আর আড় চোখে দেখলাম সোমা কেমন জানি এক করুনার দৃস্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
১৬
প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো সোমা আমাদের কোম্পানিতে চাকরী করছে। তবে আজকে সে অনেক খুশি, কারন আজকে তার প্রমোশন হয়েছে। আর মেয়েটা এতোদিনে আমার অনেক ভক্ত হয়ে গেছে। সব সময় হাসি-মুখে কথা বলে, মাঝে মাঝে এক সাথে লাঞ্চ ও হয়। তাছাড়া আমাকে বিভিন্ন কাজে নিজে থেকেই সাহায্য করে। মিথিলা ও এতোটা হেল্পফুল ছিলো না ওর মতো। আমার জন্য অবশ্য ভালো হয়েছে। অফিসে আমার অর্ধেক কাজ কমে গেল। মানে আগে যে চাপটা অনুভব করতাম, সেটা এখন আর নেই এবং সেটা সোমার কারনে। কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে কাজ করছিলাম , এমন সময় সোমা আমার সামনে এসে বললো!
.
--- স্যার আজকে আধাবেলা অফিস করবেন।
.
--- কেন!!
.
--- আজকে আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো! মানে ট্রিট দিতে চাই আপনাকে।
.
--- oh that's great. কিন্ত আজকে পারবো না সোমা। আর অনিকাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো!
.
--- ও!! কি হয়েছে অনিকার।
.
--- আড়াই সপ্তাহ ধরে জ্বর।
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে, আমি বুঝতে পেরেছি।
.
তারপর সোমা মুখটা ফ্যাকাসে করে কাজ করা শুরু করলো। ওর চেহারাটা দেখে মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। আমি আশ্বস্ত্য স্বরে ওকে বললাম,,
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে। লাঞ্চের সময় আমরা বের হবো নে!
.
পরক্ষনেই সোমার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। পুর্বা যখন কোন খুশির সংবাদ শুন্তো তখনো এরকম মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে। কেন জানি পুর্বার সাথে সোমার অনেক হ্যাবিটের মিল পাই নাকি মিল খোজার চেষ্টা করি! সেদিন পুর্বার সাথে ফেবিতে এড হওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে চ্যটিং এ আমাদের কথা-বার্তা বাড়তে থাকে। ছয়-সাত মাসের মধ্যেই আমরা মোটামুটি ভালো ফ্রেন্ড হয় যাই। আর রেগুলার ই চ্যাটিং হতো আমাদের মধ্যে। একটা শিডিউলের মতো হয়ে গিয়েছিলো। বিকাল আর রাত দশ-এগারোটা। আসলে এই সময়গুলোতেই ফ্রি থাকতো বেশিরভাগ সময়। আর যখনই ফেবিতে আসতো, তখনই আমাকে নক দিতো। এভাবে দেখতে দেখতে দুইবছর কেটে যায়! ততদিনে পুর্বা ইন্টার পাস করে ফেলে আর আমারো একটা বাইং হাউজে চাকরী হয়ে যায়। আর ওই সময়ে আমাদের হেড ছিলেন মোস্তফা নাইম উদ্দীন আর এসিসটেন্ট হেড ছিলেন ইরা আপা। অবশ্য মোস্তফা স্যারের রিটায়ারের পর কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ইরা আপাকে প্রোমোশন দিয়ে ডিপার্টমেন্ট হেডের পদে বসায়। এসিস্টেন্ট পদ টা শুন্য রাখে। তারপর থেকে ইরা আপাই আমাদের ডিপার্টমেন্টের সব কিছু সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
১৭
--- তিন দিনের জন্য চট্টগ্রাম যাবো! (আমি)
.
--- কি অফিসের কাজে (পুর্বা)
.
--- হ্যা!
.
--- কবে যাবা?
.
--- এইতো পরশু দিন।
.
--- ও, কখন যাবে?
.
--- এইতো ভোর সকালে।
.
--- আচ্ছা!
.
--- কিছু বলবে পুর্বা?
.
--- নাহ কি বলবো।
.
পুর্বা আর আমি বারান্দায় বসে আছি। ছুটির দিনে বিকেলের দিকে আমরা বারান্দায় বসে সময়টা পার করি। বিয়ের প্রথম প্রথম খুব কথা বলতাম আমরা বারান্দায় বসে! এখনো বারান্দায় বসি কিন্তু আগের মতো আমাদের মাঝে কথা হয় না জরুরি কথা ছাড়া। আসলে বলার মতো তেমন কোন কথাই খুজে পাই না। নিচে তাকিয়ে দেখি অনিকা খেলছে!
.
সোমা আমার পাশের সিটে বসে আছে, কিছুক্ষন পর বাস ছাড়বে। হঠাৎ সোমা বলে উঠলো,,,,
.
--- স্যার আজকে আপনাকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগতেছে।
.
--- তাই! তোমাকেও অনেক সুন্দর লাগছে।
.
--- ধন্যবাদ স্যার।
.
--- হুম।
.
ঢাকা থেকে বের হওয়ার পর সোমা কিছুটা অনুনয় করে আমাকে বললো,,
.
--- স্যার বাসে আমার বমির সমস্যা হয়! আমি কি জানলা পাশে বসতে পারি?
.
--- তো প্রথম বললেই তো হতো!
.
--- সরি স্যার। খেয়াল ছিলো না!
.
--- আচ্ছা আসো তাহলে!
.
--- কোথায আসবো স্যার?
.
কথাটা শুনে গেল মেজাজটা খারাপ হয়ে,,,
.
--- আরে সিট চেঞ্জ করো!
.
সোমা খানিকটা কাচুমুচু করে বললো,,,,
.
--- জি স্যার করছি।
.
সোমার জানলার পাশে আর আমি ওর পাশের সিটে বসলাম। দেখলাম মেয়েটা খুব আগ্রহ দৃস্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে প্রথম সে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। বাতাসে সোমার চুল গুলো উড়ছে। খুব মায়াবী লাগছে মেয়েটাকে! ইচ্ছে করছে মেয়েটার চুল গুলো সরিয়ে দেই। আয় হায়!! কি ভাবছি এগুলা, ও তো আমার জুনিয়ার কলিগ। আর তার উপর আমি বিবাহিত। কেমন জানি নিজের মধ্যে কিছুটা ধাধায় পড়ে গেলাম
.
প্রায় সাড়ে সাত ঘন্টা পর আমরা চিটাগাং এর আনোয়ারাতে এসে পৌছলাম। জায়গাটা চারদিকে খুব সুন্দর। বলতে গেলে পুরোটাই গ্রাম! বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে গেল আনোয়ারা তে এসে। প্রকৃতি
আসলেই অনেক সুন্দর। আর চারিদিকে বিস্তির্ন এলাকা। শহরের ধুলাবালি থেকে বের হয়ে এখানে এসে আসলেই অনেক ভালো লাগছে। এক ধরনের শান্তি শান্তি ভাব চারদিকে! তবে কোম্পানি তো আমাকে প্রকৃতি দেখার জন্য পাঠায় নাই, পাঠিয়েছে প্রোজেক্টের ব্যাপারে রিপোর্ট করে কোম্পানি কে জমা দেওয়ার জন্য। টানা দুদিন ধরে রিপোর্ট তৈরির কাজ করলাম, আমরা প্রোজেক্ট সাইটের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখলাম, প্রোজেক্টের মডেল ভালোভাবে যাচাই করলাম ইত্যাদি আরো কিছু ব্যাপার দেখার পর মিটিং রুমে সবাই মিলে একটা রিপোর্ট তৈরি করে ফেললাম। রিপোর্ট শেষ করে সবাই রেস্ট হাউজের যার যার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি রাতের খাবার টেবিলে রেডি করে দিয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে, খাবার খেয়ে, মোবাইলে ফেসবুক লগ ইন করে দেখি সোমা আমাকে একটা ছবি ট্যাগ করেছে, যেখানে অফিসের আমরা সবাই আছি। ছবিটি চট্টগ্রামে আসার আগে তুলা। ইদানীং ফেসবুক লগ ইন করলে আগের কথা গুলো মনে পড়ে যায়! একটা সময় ছিলো পুর্বার সাথে আমার প্রায় ই কথা হতো ফেবিতে। অনেক টা অভ্যাসের মতো হয়ে গিয়েছিলো, আমাদের রেগুলার চ্যাটিং করা। একদিন ওর বড় বোন ব্যাপারটা কিভাবে জানি জেনে ফেললো! আমাকে অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন দিয়ে যা তা বললো- " আমি ওকে ফোনে ডিস্টার্ব করি, ফেবিতে বিভিন্ন আইডি থেকে আজে-বাজে মেসেজ পাঠাই, রাস্তায় ওকে দেখলেই শিষ বাজাই, ইত্যাদি আরো অনেক কথা শুনালো। ওই সময় খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার মেজাজটা বিগড়ে গেল। ফোনটা কেটে দেওয়ার পর সংগে সংগে পুর্বাকে ব্লক করে দিলাম, সেই সাথে কনট্যাক্ট নাম্বারো!!
১৮
সোমা আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। আমার হাতে প্রমোশন লেটার। যেই এসিসট্যান্ট ম্যানেজার পদটা এতো দিন শুন্য রয়েছে, সেটাতে এরপর থেকে আমি বসবো। যতটা না খুশি হইছি তার থেকে অবাক হয়েছি অনেক বেশি ! কারন আমাদের অফিসের অনেকেই পদটি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। একটু নার্ভাসো ফিল করছিলাম। হঠাৎ সোমা বলে উঠলো,,,,,
.
--- স্যার আজকে কিন্তু আমাকে ট্রিট দিতে হবে।
.
আমি মুখে একটু হাসি নেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,,
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
--- হুম। স্যার আপনি কি নার্ভাস!
.
--- নাহ!
.
--- তাহলে চিন্তিত দেখাচ্ছে আপনাকে?
.
--- ও কিছু না।
.
এই বলে উঠতে লাগলাম, তখন সোমা বললো,,,
.
--- স্যার কই যান!
.
--- এমনি একটু বাইরে।
.
এই বলে ডেস্ক থেকে উঠে পড়লাম। সোমাকে আর কথা বলার সুযোগ দিলাম না। অফিস থেকে বেরিয়ে একটা চায়ের স্টল থেকে সিগেরেট নিয়ে, সেটা ফুকছিলাম আর পায়াচারি করছিলাম। সিগেরেট শরীরের ক্ষতি করলেও, নার্ভাসনেস কমাতে সাহায্য করে। আসলে ঠিক ওরকম নার্ভাস নেস ও নেই, কিন্তু কেন জানি একটু ভয় করছে। সেদিন পুর্বাকে ইফতির দোকানে সামনে দেখেও এরকম নার্ভাস হয়ে গিয়েছিলাম। এক্সেপ্ট করিনি যে ও আমার জন্য এখানে অপেক্ষা করবে। আমি কাছে আসতে রেগে গিয়ে বললো,,,,
.
--- আপনি যে এক নাম্বারের ফাজিল, সেটা কি জানেন!
.
--- আমি আবার কি করলাম!
.
--- সেই সাত/আট দিন ধরে আপনার কোন খবর নেই!
.
--- তোমার বোন তো চায় না, যে আমি তোমার সাথে যোগাযোগ রাখি!
.
কথাটা শুনার পরই পুর্বা মন খারাপ করে বললো,,,
.
--- কিন্তু আমি তো চাই।
.
--- না থাকাই ভালো পুর্বা! শুধু শুধু তুমি ঝামেলায় পড়বে।
.
আমার কথা শুনে পুর্বা রেগে গিয়ে বললো,,,
.
--- ঝামেলায় পড়লে আমি পড়বো,তাতে আপনার কোন সমস্যা আছে।
.
আমি কিছুটা কাচুমুচু হয়ে বললাম,,,
.
--- না মানে ইয়ে, তোমার বোন!
.
--- সেটা আমি বুঝবো।
.
কথাটা বলার পর পুর্বা আমার দিকে অগ্নিমুর্তি ধারন করে রাখলো। মনে হচ্ছে ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে মহা অন্যায় করে ফেলেছি! এরপর থেকে আবার আমাদের দুজনের মাঝে যোগাযোগ শুরু হয়। তবে এবার আরো অনেক বেশি। গাড় থেকে গাড় হয় আমাদের সম্পর্ক! ওর সাথে যখন কথা বলতাম, তখন কেমন জানি অজানা একটা ভালো লাগা কাজ করতো। কখনো কখনো মনে হতো ওর ও এরকম ফিলিং কাজ করছে। একটা সময় পুর্বা নিজেই আমাকে প্রপোজ করে বসে। তখন ও অনার্স প্রথম বর্ষে পরে আর আমি সবে একটা কোম্পানিতে জব করা শুরু করেছি। ওর প্রপোজাল সাথে সাথেই একসেপ্ট করে ফেলি, কারন আমারো তখন আর তর সইছিলো না। অন্যান্য কাপোলদের মতো আমারাও অনেক স্বপ্ন দেখতাম। নিজেদেরকে অনেক লাকি মনে করতাম, যে আমরা দুজন দুজনকে পেয়েছি। তবে পুর্বার কেয়ারিং টা আমার অনেক ভালো লাগতো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বুঝতে পারতাম যে মেয়েটা আমাকে কত ভালো বাসে!!
১৯
ফোনে পুর্বার কান্নাকাটি শুনে ভালো লাগছিলো না একদমই! মেয়েটাকে যে কি বলে সান্তনা দিবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আসলে বাবা-মা মারা গেলে সন্তানের কষ্ট হওয়া খুব স্বাভাবিক। কাল রাতে পুর্বার বাবা মারা গেছে, সেটা আজকে সকালে পুর্বার বড় বোন পুর্বাকে জানালো! লোকটার সাথে আমার একবারই দেখা হয়েছে। পুর্বার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো অন্য আর একজনের সাথে, তাই বাধ্য হয়ে আমরা দুজন কাজি অফিসে বিয়ে করে ফেলি। তারপর ওকে নিয়ে ওর বাসায় যাই! আমাদের ব্যাপার টা ওর ফ্যামিলিকে জানানোর জন্য। ওর বাবা আমাদের দেখে প্রথমেই খুব শান্ত ভাবে ওর বড় বোন কে বললেন," ওই বাসার দলিল টা নিয়ে আয় যেটা ওর মা ওর নামে করে দিয়ে গেছে " লোকটার কথামত ওর বড় বোন মানে তানজিল আপা দলিল টা নিয়ে এসে ওর বাবার হাতে দিলো। তারপর উনি দলিল টা পুর্বার দিকে ছুড়ে দিয়ে খুব ঠাণ্ডা গলায় বললো, " বেরিয়ে যাহ আমার বাসা থেকে, তোর এই মুখ যেন আমি কোনদিন না দেখি!!" দলিল টা হাতে নিয়ে পুর্বা খুব স্বাভাবিক ভাবে আমার হাত ধরে ওর বাসা থেকে বেরিয়ে আসলো। আর আমরা এখন যেখানে থাকি সেটাই হলো পুর্বার বাসা!
২০
আজকে সোমা আমাকে একটা রেস্ট্রুরেন্টে নিয়ে আসছে লাঞ্চ করানোর জন্য! ব্যাপারটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো। এভাবে হুট করে অফিস ছুটির পর আমাকে নিয়ে আসলো! কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই, কোথাও। সোমা আমার দিকে খুব হাসি- খুশি ভাবে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ওকে,,,
.
--- কিছু বলবা!
.
--- নাহ স্যার ।
.
--- হুম
.
কিচ্ছুক্ষন চুপ থাকার পর সোমার আবার বললো,,,
.
--- স্যার একটা কথা বলার ছিলো!
.
--- হুম বলে ফেল।
.
--- আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি!!
.
আমি কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম,,,,
.
--- কি!!!!!
.
--- জি মানে, আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে আর গত ৬ মাস ধরে এটাই বলার চেষ্টা করছি।
.
--- তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে! তুমি ভালো করেই জানো আমি বিবাহিত।
.
--- জি। কিন্তু আমি যে তোমাকে,, সরি আপনাকে যে ভালোবাসি।
.
--- এটা কোনদিনো সম্ভব না সোমা। আর আমার মনে হয় আমাকে এখান থেকে উঠতে হবে।
.
আমি যখন উঠতে যাবো, তখন আমার হাত টা ধরে বললো,,,
.
--- প্লিজ আমাকে বুঝার চেষ্টা করো!!
.
--- নাহ সোমা,তুমি আমাকে বোঝার চেষ্টা করো। এই রিলেশনে জড়ানো আমার পক্ষে অসম্ভব! কারন আমি পুর্বাকে অনেক ভালোবাসি।
.
কথাটা বলেই আমি ওর হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রেস্ট্রুরেন্টের বাইরে চলে আসলাম!!! সব কিছু ই কেমন জানি এলোমেলো লাগছে, ঠিক বুঝতে পারছি না কিছু! সোমার কাছ থেকে আমি কখনোই এটা একসেপ্ট করিনি। মেয়েটাও নিশ্চয়ই আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে অনেক কিন্তু আমারো যে এখানে কিছু করার নেই।
২১
বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি পুর্বা বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছে। কিছুক্ষন পর মনে হলো, ও কাঁদছে! আমি কিছুটা অবাক হয়ে ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
.
--- কি হয়েছে পুর্বা?
.
আমার দিকে যখন তাকালো তখন, আমি অনেকটাই ভড়কে গেলাম, ওর চোখ দুটো লাল, মানুষ অনেক্ষন ধরে কাদলে যেটা হয়,,,,
.
--- কি ব্যাপার! চেহারার অবস্থা এরকম করে রেখেছো কেন?
.
--- কবে থেকে চলছে এসব!!
.
আমি ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,
.
--- কি চলছে আবার?
.
পুর্বা আমার মোবাইল টা হাতে নিয়ে একটা মেসেজ দেখালো, যেখানে অনেক বার " I love u" লিখা এবং মেসেজ টা সোমার নাম্বার থেকে আসছে। আমি কি বলবো বা কিভাবে বুঝাবো পুর্বাকে যে ও যেটা ভাবছে সেরকম কিছু ই না!! হঠাৎ পুর্বা আমার মোবাইল টা রুমের দরজার দিকে ছুড়ে মেড়ে, চিৎকার দিয়ে বললো
.
--- আর একটা কথাও বলবা না, আমার সাথে!!
.
ওর চিৎকার শুনে, অনিকা ড্রইংরুম থেকে হুরমুড় এসে বললো,,,,
.
--- কি হয়েছে কি হয়েছে! আম্মু চিৎকার করছো কেন আব্বু?
২২
গত চার দিন ধরে পুর্বা আমার সাথে কথা বলে নি। এমনকি আমাদের শোবার রুমেও আসেনি! শুধু খাবার টেবিলে আমরা একসাথে বসেছি। রাতে পুর্বা গেস্ট রুমে শোয়ে আর আমি আর অনিকা আমাদের বেডরুমে। ওকে কিছু বলতেও পারছি না, কিভাবে বুঝাবো যে এটার সাথে আমি ইনভলব না। বারান্দায় বসে এগুলাই ভাবছিলাম। তবে আজ বিকেলের আকাশ টা অন্য রকম! আকাশটাতে একধরনের লালচে লালচে ভাব। পুর্বার এধরনের আবহাওয়া খুব পছন্দের। ওর মতে, আকাশের যখন খুব মন খারাপ থাকে তখন এরকম লালচে আকার ধারন করে!!
.
--- তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো(পুর্বা)
.
পিছনে ফিরে দেখি, পুর্বা দাঁড়িয়ে আছে,,,,
.
--- হ্যা! বলো,, কি বলবে?
.
--- তুমি তোমার চাকরী টা ছেড়ে দিবে!
.
আমি অনেক টাই অবাক হয়ে বললাম,,,
.
--- চাকরী ছেড়ে দিলে খাবো কি!!
.
--- জানি না, তবে তুমি ওই কোম্পানিতে আর জব করবে না। মোট কথা তুমি আর কোন কোম্পানিতেই জব করবে না!
.
--- মানে!!
.
--- মানে তুমি মুদির দোকান দিবে! আর ব্যংকে যা টাকা পয়সা আছে, ওটা দিয়ে দোকান দিতে আশা করি কোন সমস্যা হবে না।
.
--- তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে পুর্বা!!
.
আমার কথা শুনে পুর্বা হঠাৎ করে চোখ টা গরম করে ফেললো!!
.
--- জানি না, তবে আমার যেটা বলার বলে দিয়েছি। আর আমার সাথে সংসার করার ইচ্ছা থাকলে তুমি নিশ্চয়ই আমার কথা রাখবে!
.
এই বলে পুর্বা বারান্দা থেকে চলে গেল, আমি কি করবো এখন কিছুই বুঝতে পারছি না!
২৩
আমার রেজিগনেশন লেটার দেখে ইরা আপা মিট মিট করে হাসছে!
.
--- আপনি হাসতেছেন! এদিকে আমার সংসার যায় যায় অবস্থা।
.
আমার কথা শুনে ইরা আপা একটা অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,
.
--- আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি তোমার অবস্থা! এক কাজ করো রেজিগনেশনের দরকার নেই। তুমি বরং এক মাসের জন্য লিভ নাও। ততদিনে আমি সোমাকে অন্য ডিপার্টমেন্টে ট্রান্সফার করে দিবো
.
--- কিন্তু পুর্বা তো মানবে না!
.
--- ওর সাথে আমি কথা বলবো। তুমি বরং অফিস লিভ এর জন্য এপ্লিকেশন করে আমার পিয়ন কে দিয়ে দিও।
.
--- অনেক ধন্যবাদ আপা! আপনাকে।
.
--- হুম। এখন আসতে পারো।
.
বাসায় এসে দেখি পুর্বা আজকে অনেক কিছু রান্না করেছে। কি ব্যাপার আজকে কোন অনুষ্ঠান নাকি!! কই আমার তো কিছু মনে পড়ছে না। তাই আমি পুর্বাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- আজকে কোন অনুষ্ঠান নাকি!!
.
পুর্বা কিছুটা অবাক হয়ে বললো,,,,
.
--- অনুষ্ঠান হবে কেন!
.
--- না। আজকে এতো আয়োজন করলে যে!
.
আমার কথা শুনে পুর্বা একটু মুচকি হেসে বললো
.
--- অনুষ্ঠান হলেই কি ভালো খাবার রান্না করতে হবে বাসায়!! এমনে কি করা যায় না।
.
--- হুম করা যায় পুর্বা!
.
--- তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো, তারপর একসাথে খাবো।
.
ওর কথার মধ্যে কেমন জানি, একটা মায়া মায়া ভাব পেলাম, মনে হলো অধীর আগ্রহে সে আমার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করবে!! আমি ফ্রেশ হয়ে খেতে বসবো, তখন পুর্বা বললো,,,
.
--- সরি! ওদিন তোমার মোবাইল টা ভেঙে ফেলার জন্য।
.
আমি ওকে আশস্ত করে বললাম,,
.
--- না না ঠিক আছে।
.
তারপর পুর্বা আমার হাত ধরে বললো,
.
--- সরি!! তোমার সাথে ওদিন এতো খারাপ ব্যবহার করার জন্য! ইরা আপা আমাকে ফোন দিয়ে সব কিছু খুলে বলেছে। আমি সত্যি ই তোমাকে বুঝতে পারিনি সাকিন। I am really really sorry.
.
--- it's okay. purba! ভুলা বোঝাবুঝি হতেই পারে। তবে তুমি যে সত্যি ই টা জানতে পেরেছো, এতেই আমি অনেক খুশি।
.
--- তাই!!
.
--- হুম। তোমাকে অনেক ভালোবাসি পুর্বা!
.
--- হইছে!এখন খেয়ে নাও, নাহলে ফ্যানের বাতাসে খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
.
এই বলে অনিকাকে ডাক দিলো,,,,
.
--- এই অনিকা!! কিরে পোলাও খাবি না।
.
মেয়েটার পোলাও খুব পছন্দ, তাই পুর্বার ডাক শুনে অমনি টিভি রুম থেকে দৌড়ে এসে খাবার টেবিলের সামনে হাজির হলো।
২৪
আইসিউর সামনে আমি আর তানজিল আপা বসে আছি। বসে বসে আগের কথা গুলো ভাবছিলাম। আজকে সকালে পুর্বা আর অনিকা মাইক্রোবাসের সাথে এক্সিডেন্ট করেছে এবং সেটা গুরুতরো ভাবে। এরকম দিন যে আসবে কখনো চিন্তাও করিনি। পুর্বা আর অনিকা, এই দুজনেই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। সব কিছুই যেন ঠিক হয়ে যায়, এই প্রার্থনাই আল্লাহর কাছে করছি। প্রায় দেড় /দুই ঘন্টা পড় ডাক্তার এসে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললো,,,
.
--- আপনার স্ত্রীর ডান পা টা কেটে ফেলতে হবে আর আপনার মেয়ে,,,,,
.
উনি আর কিছু বললেন না, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ হয়ে গেলেন।
২৫
গুড়ি গুড়ি বৃস্টি হচ্ছে, মাটি ভিজা তাই কবর খোড়তে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না! আমি ঠিক করছি কবর টা বাসার বারান্দার সামনেই খুরবো যাতে মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখতে পারি। আর বেশিরভাগ সময় আমার বারান্দায় বসা হয়ে থাকে। কবর যেখানে খুড়ছি তার কিছুদুরে পুর্বা হুইল চেয়ারে বসে আছে। ওর মুখ টা একদম নিথর হয়ে গেছে, দেখে মনে হচ্ছে ও প্যারালাইস রোগী। আমি আবার কবর খোড়ার দিকে মন দিলাম। আমার পাশে এলাকার পরিচিত কিছু লোক আছে আর মসজিদের হুজুড়!। উনারা সাহায্য করতে চেয়েছিলো আমাকে কিন্তু আমি তাদেরকে সরাসরি মানা করে দিয়েছি কিছু কাজ নিজের করতে হয়। কবর খোড়ার পর দু-তিন জন সাহায্য করতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি তাদেরকে বাধা দিয়ে অনিকার লাশটা নিজেই উঠিয়ে খোড়া কবরে রেখে দিয়ে, মাটি গুলো পুততে লাগলাম। হাত গুলো একদম অবশ হয়ে আসছিলো, তেমন শক্তিই পাচ্ছিলাম না, সেই সাথে ভিতরের শুন্যতাও তীব্র থেকে তীব্র হতে যাচ্ছিলো। কাঁদতে ও পারছিলাম না, মনে হচ্ছে চোখের সব পানি ফুরিয়ে গেছে। কবর দেওয়ার পর যখন হুযুর দোয়া পড়তে যাবে, তখন পুর্বা উচ্চস্বরে হাসতে থাকলো, ওর হাসি শুনে আমরা অনেকটাই চমকে উঠলাম! আমি তড়িঘড়ি করে পুর্বার কাছে গিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম কিন্তু ওর হাসি কিছুতেই থামাতে পারছি না। পরে বাধ্য হয়ে ওর মুখটা চেপে ধরি, তারপরেও মেয়েটা হেসেই যাচ্ছে!!!!
.
সমাপ্ত
.
----------------------------------

written by sakin shikder (xen)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৮

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: দীর্ঘ... কিন্তু শেষটায় এসে সময়ের জন্যে আক্ষেপ হয়না। রোমান্টিক এন্ড ট্রাজিক স্টোরি।

২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৫১

সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: জি ধন্যবাদ।

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৫

রায়হান চৌঃ বলেছেন: এক কথায় অসাধারন...........
তবে শেষ টুকু এতটা করুণ ভাবে না হলেই ভালো হতো

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩২

সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: জি ধন্যবাদ। গল্পের স্বার্থেই শেষ অংশ টা লিখা হয়েছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.