নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তবতার এই কঠিন বেড়াজালে আমি স্বপ্নের মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। স্বপ্ন গুলো অনেক বড় হলেও মানুষটা আমি খুবই সাধারন।

সাকিন সিকদার (জেন)

একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি!!!

সাকিন সিকদার (জেন) › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা

০৯ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮


*

সেই কখন থেকে নিলুর জন্য বসে আছি, এখনো আসছে না কেন! কি ব্যাপার আজকে মেয়েটা এতো লেট করছে কেন! প্রতিদিন তো যথা সময়েই আসে। আমি মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখি ৫:১৫ বাজে! অথচ ওর ৪:৩০ এর দিকে এখানে থাকার কথা। বেঞ্চি তে বসে পা দোলাচ্ছি আর এদিক - ওদিক তাকাচ্ছি, কিছু কাপলদের ও দেখলাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আজকাল ভালোই লাগে কাপলদের দেখতে, অনেকটা লাভ-বার্ডসের মতো। তবে বোরিং নেস টা অনেক বেশি লাগছে এখন, তাই আবার পকেট থেকে মোবাইল টা চতুর্থ বারের মতো বের করে নিলুকে কল দিতে যাবো, ঠিক তখন ই পিছন থেকে,,,,
.
--- সরি!!!!
.
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি নিলু কানে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে,,,
.
--- কি ব্যাপার এতো লেট যে,, আর ফোন দিচ্ছি সেই কখন!
.
নিলু কান থেকে হাত নামিয়ে, আমার পাশে বসতে বসতে বললো,,,,
.
--- সরি সরি সরি,, আসলে বাসা থেকে বের হতে বের হতে একটু লেট হয়ে গিয়েছে। আর মোবাইলটা সাইলেন্ট মুডে থাকার কারনে তোমার কল রিসিভ করতে পারিনি!
.
--- ও!! ভাইব্রেশন নেই?
.
--- আমি আসলে মোবাইল ভাইব্রেট করে রাখি না,, কেমন জানি লাগে শুনতে।
.
--- হুম।
.
হঠাৎ খেয়াল হলো নিলু আজকে অনেক সেজেছে! মনে হয় সাজুগুজোতে বেশি সময় দেওয়ার কারনেই ওর এখানে আসতে দেরী হয়েছে। মেয়েদের এই ব্যাপারটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগে,,বিশেষ করে সুন্দরি মেয়েদের... একবার সাজতে বসলে আর কোন হুশ থাকে নাহ!
.
--- এই কি দেখছো এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে!!
.
আমি আরো একটু ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি নিলুর মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে! তবে সেটা মেক আপের কারনে কিনা তা নিয়ে আমার অবশ্য একটু খটকা আছে!!

--- থ্যাংক্স (নিলু)
.
--- কিসের জন্য!(আমি)
.
--- এই যে এতো সুন্দর সময় আজকে আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য!!
.
--- আমি তো শুধু হাটলাম মাত্র তোমার সাথে!!
.
--- ওটাই আমার কাছে অনেক কিছু সোহাগ, তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্তই আমার কাছে স্পেশাল।
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর মেসেজের রিপ্লাই দিলাম,,,
.
--- হুম
.
--- এই তুমি কি আমার কথায় বোর হচ্ছো!!
.
--- আরে নাহ,,বোর হবো কেন!!! বরঞ্চ ভালো লাগে তোমার কথা শুনতে।
.
--- সত্যি!!
.
--- হুম সত্যি।
.
--- তুমি না অনেক ভালো!
.
--- হা হা হা! তাই?
.
--- হুম।
.
কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমি কিছুটা বোর হচ্ছিলাম নিলুর কথায়, তবে ওকে ব্যাপারটা বুঝতে দেই নাহ সহজে! ব্যাপার টা বুঝতে পারলে মেয়েটা অনেক কষ্ট পাবে।
.
--- এই কি হলো চুপ হয়ে গেলে যে (নিলু)
.
--- নাহ কিছু নাহ!!! আর নিলু আমি তোমাকে পরে ফেবিতে নক দিবো,, আম্মু ডাকছে ভাত খেতে।
.
--- ওকে বাই,, তবে আর একটু কথা বললে ভালো লাগতো,, আচ্ছা সমস্যা নেই কাল তো দেখা হচ্ছেই আমাদের!!
.
--- হুম।
.
এই বলে আমি ফেবি থেকে বেরিয়ে আসলাম!! আসলে আম্মু ডাকে নি, আমার নিলুর সাথে কেন জানি কথা বলতে ইচ্ছা করছিলো নাহ! মন টা কেমন কেমন জানি করছে। বিছানা থেকে উঠে বারন্দায় গিয়ে দাড়ালাম,, আজকে আকাশ টা অনেক পরিস্কার,, তারাগুলো স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।

প্রায় ২ বছর আগের কথা,,,, তখন ভবগুরে হয়ে ঘুরতাম বন্ধুদের সাথে,, পড়াশোনা করতে ভালো লাগতো না, বলতে গেলে কিছুই ভালো লাগতো নাহ! কেমন জানি লাইফের প্রতিও একধরনের বিরক্তি বিরক্তি ভাব চলে আসছিলো ফেবিতে অবশ্য একটা পেজের এডমিনো ছিলাম। আমরা কলেজের কিছু ফ্রেন্ডরা মিলে পেজ টা খুলে ছিলাম। পেজটাতে বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন ট্রল আর মাঝে মাঝে বিরহরের কিছু পোস্ট দিতাম!! আস্তে আস্তে রিসপন্স পাচ্ছিলাম পেজটাতে। আমার আবার মেয়েদের সাথে টাংকী বাজি করার একটা বদ অভ্যাস ছিলো! আর এসবের জন্য ফেসবুকটা একদম পারফেক্ট জায়গা। তো এই ধান্দায় একদিন ফাইন্ড ফ্রেন্ডস ঘাটছিলাম,, আর বিভিন্ন নামের মেয়েদেরকে রিকুয়েস্ট পাঠাচ্ছিলাম। তো কিছুক্ষন পর একটা নোটিফিকেশন আসলো, চেক করি দেখি নিলা আহসান নামে একটা আইডি আমার রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেছে! তো কিছু টা আগ্রহ নিয়েই আইডিটা ঘাটলাম,, ভাবছিলাম ফেইক হবে কিন্তু সেরকম কিছু মনে হলো না!! আর আইডিটা দেখে মনে হচ্ছে কিছুদিন আগে রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম,,,মিউচুয়াল ফ্রেন্ড ছিলো সম্ভবত!! তো আমি খুব স্বাভাবিকভাবেই আইডিটার প্রোফাইলটা ঘাটতে লাগলাম, ঘেটে মনে হলো আইডিটা ফেইক না!! তাই মেসেঞ্জারে গিয়ে একটা নক দিলাম,,,
.
--- হাই!
.
--- হাই। কেমন আছেন?(নিলা আহসান)
.
এরকম দ্রুত রিপ্লাই দেখে কিছুটা অবাক হলাম!! সাধারনতো মেয়েরা ফেবিতে অপরিচতো কাউকে এতো দ্রুত রিপ্লাই দেয় না!!
.
--- জি ভালো আপনি?
.
--- হুম ভালো আছি! তো কি করছেন এখন!!
.
--- আসলে তেমন কিছু না,, তবে আপনাকে পটানোর কিছুটা চেষ্টা করছি!!
.
আমার মেসেজটা সিন করার পর আইডি টা থেকে কয়েকটা হাসির ইমো আসলো, তারপর মেসেজ দিলো,,,
.
--- হুম ভালো, চেষ্টা করতে থাকুন দেখি পটাতে পারেন কিনা!!!
.
আমিও কয়েক টা হাসির ইমো দিয়ে বললাম,,,,
.
--- সেটা কি আর না করে পারি বলুন!!!
.
ওদিন প্রায় দুই /আড়াই ঘন্টার মতো কথা বললাম,, নিলা আহসান নামের আইডিটার সাথে! অনেক কিছুই জানালো ওর ব্যাপারে!! কিসে পড়াশোনা করছে, বাসা কোথায়, কয় ভাই বোন, বাবা কি করে, ইত্যাদি । আমিও নিজের ব্যাপারে তাকে অনেক কিছু বললাম,, তবে সেগুলো একটু বাড়িয়ে!! যাতে মেয়েটাকে তাড়াতাড়ি ইম্প্রেস করতে পারি। তবে আমার কেমন জানি একটু খটকা লাগছিলো ওর ব্যাপারে, মনে হচ্ছিলো শুরুতে ও আমার ই মেসেজের অপেক্ষা করছিলো! সাধারনতো মেয়েরা নিজে থেকে মেসেজ দেয় না,,বিশেষ করে যেই মানুষটাকে পছন্দ করে সেই মানুষের কাছ থেকেই প্রথম রিসপন্সটা আশা করে, আচ্ছা নিলা আহসানের মধ্যেও কি এরকম কিছু কাজ করছে!!!

প্রায় ৭/৮ মাসের মতো হয়ে গেল নিলা আহসানের সাথে
আমার এখন রেগুলার চ্যাট হয়,, তবে ওকে এখন নিলা নয়,, নিলু নামে সম্বধোন করি। নিলা নামটা কেমন জানি লাগে,, ওর সাথে নামটার আমি কোন ম্যাচিং পাই না। আর ওকে নিলু নাম ধরে ডাকাতেই ভালো লাগে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ওর সাথে আমার মেন্টালিটিরও যথেষ্ট মিল পাই!! কথা বার্তায়,, চাল চলনে,, বা অন্য যে কোন ব্যাপারে!! প্রথম প্রথম অবশ্য আমি কনফিউশন থাকতাম ওকে নিয়ে কিছুটা,, কিন্তু ও নিজে থেকেই আস্তে আস্তে কাছাকাছি আসার সকল রকমের জটিলতা দূর করে দেয়! বলতে গেলে অনেক ফ্রি হয়ে যায় আমার সাথে,,, মাঝে মাঝে ওকে বন্ধুর চেয়েও অনেক বেশি কিছু মনে হতো। অবশ্য অনলাইনে রিলেশন আমি একদমই বিশ্বাস করতাম না। যেখানে বাস্তবের রিলেশনশিপ গুলাই তাসের ঘরের মতো!! কিন্তু নিলুর ক্ষেত্রে আমার ব্যাপারটা আলাদা লাগতো। আমি যতই ওকে অনান্যদের সাথে যাচাই করতাম,, ততই ওর প্রতি মুগ্ধ হতাম। হয়তো আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ছি ওর উপর !! প্রথম প্রথম এটাকে উড়িয়ে দিতাম,, যে ক্রাশ তো খেতেই পারি এতে এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে!!! কিন্তু ধীরে ধীরে এই সিরিয়াসনেস টা আসতে থাকলো আমার। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না,, আবার কি নতুন কোন ভুল করতে যাচ্ছিলাম! আচ্ছা নিলাকে কি বলে দিবো আমার মনের কথাটা,, আচ্ছা যদি নিলা আমাকে না করে দেয় বা যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। একটা অদ্ভুত ব্যাপার নিজের মধ্যেই একটু একটু লক্ষ্য করেছি,, নিলুর ব্যাপারে যখন খুব সিরিয়াস হয়ে যাই তখন ওকে মনে মনে নিলা বলে ডাকি!! আচ্ছা কেন ডাকি ওকে এরকম!! আবার কেন ওকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে যখন ও অফলাইন হয়ে যায়। অনেকটাই আশ্চর্যই হই আমি!!! মানুষের মন এতো তাড়াতাড়ি বদলায় যায় কিভাবে এক আল্লাহ মাবুদই ভালো জানেন। আমি এর চেয়ে বেশি নিলুর ব্যাপারে কিছুই ভাবতে পারছিলাম না,,, আচ্ছা নিলু ও কি আমার মতো দোটানায় আছে!!

আরো ২/১ মাস চলে গেল,, আমার অবস্থা যেই লাউ,, সেই কদু!! বলবো বলবো করে এখনো বলতে পারছি না নিলুকে কিছু। ও মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে -"তুমি কি কিছু বলতে চাও আমাকে"। আমি কোন না আজুহাত দিয়ে বিষয়টা এরিয়ে যায়,, মাঝে মাঝে মনে হয় ব্যাপারটা হয়তো নিলু কিছুটা আচ করতে পেরেছে। কিন্তু আমার কেন জানি ২য় বার এরকম ঝামেলায় আবার পড়তে ইচ্ছে করছে নাহ! ওদিকে নিজের মন টাও আবার লাগামহীন ঘোড়ার মত শুরু করেছে। পুরনো সেই অস্থিরতা আবার একটু একটু করে টের পাচ্ছি!!

--- তুমি কি কিছু বলতে চাও আমাকে?
.
--- কই না তো!!
.
--- না তুমি এই ২/১ মাসে কেমন জানি হয়ে গেছো?
.
--- কিরকম!!!
.
--- ঠিক জানি না তবে, ইদানীং তোমার কথাবার্তায় মনে হচ্ছে তুমি কিছু বলতে চাও আমাকে!
.
এই যা!! নিলু কি সব বুঝে ফেললো নাকি?
.
--- এই কি হলো চুপ হয়ে গেলে যে? (নিলু)
.
আমি আর কিছু না ভেবেই ওকে মেসেঞ্জারের ইনবক্সে
একটা লাভ ইমো দিয়ে বলে দিলাম,,,
.
--- আই লাভ উ!!
.
সংগে সংগে নিলু রিপ্লাই দিলো...
.
--- কি!!!!
.
আমি প্রতিউত্তরে লিখলাম,,,
.
--- কিছু না নিলু!! তবে যেটা আমি ফিল করি তোমাকে নিয়ে সেটা বললাম!!
.
--- দেখো সোহাগ তুমি হয়তো আবেগের ঘোরে আছো এজন্য এরকম বলছো।
.
--- জানি না!! তবে যেটা ফিল করি তোমার ব্যাপারে আমি সেটাই বললাম.
.
এরপর আর নিলুর রিপ্লাই আসলো না,,,, কিছুক্ষন পর দেখলাম অফলাইন হয়ে গেছে!! মনে মনে ভাবলাম
হয়তো কিছুক্ষন পর ব্লক ই করে দিবে,, সাধারনতো মেয়েরা ফেবিতে যেটা করে থাকে। ওর আর সারা না পেয়ে আমিও অফলাইন হয়ে,, খাবার টেবিলে চলে গেলাম!! খাওয়ার সময় হঠাৎ মোবাইলটা কেপে উঠলো মেসেজে!! ওপেন করে দেখি নিলুর মেসেজ,,
" আমি ভেবে দেখবো সোহাগ,, তুমি ডিনার করে নিও"

ঠিক দুদিন পরই নিলু আমার প্রপোজাল গ্রহন করে। আমার অবশ্য তখন অনেক ভালো লাগলো,, যে নিলুকে আমার জীবনে পাবো,, সেই সাথে কিছুটা দ্বিধাও কাজ করতে লাগলো মনের ভিতর,, আসলেই ওকে পাবো তো!! নিলুও অবশ্য রিলেশনের শুরুতে প্রায়ই বলতো যে,, " আমি যদি তোমাকে কখনো ছেড়ে চলে যাই, তুমি কষ্ট পাবে না তো" আমি মুখে শুধু একটা হাসি আনতাম,, কিছু বলতাম না!! তারপর ও খুব শক্ত করে আমার হাত দুটো ধরে, আমার চোখে-চোখ রেখে বলতো " চিন্তা করো না আমি কখনোই তোমাকে কষ্ট দিবো না, কখনোই তোমায় ছেড়ে যাবো না, " কথা গুলো এর আগেও অনেকবার শুনেছি, কিন্তু নিলুর মুখ থেকে যখন শুনতাম তখন কেমন জানি লাগতো!! কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করতাম!দিন যেতে যেতে ব্যাপার টাতে একটা পর্যায়ে অভ্যস্ত হয়ে যাই। আর নিলুর ভালোবাসাটাও আস্তে আস্তে অনেক গভীর হয়ে যায়। আমাদের ফেসবুকে যোগাযোগ কমে যায়, বেশির ভাগ সময় ফোনেই কথা হয়! নরমাল কাপল রা যেভাবে তাদের রিলেশন কন্টিনিউ করে,, আমরা সেভাবে আমাদের রিলেশন কন্টিনিউয়াস করতে লাগলাম। তবে নিলুর সাথে ঝগড়া অনেক কম হতো, বলতে গেলে হতোই না,, ও অনেকটা নরম স্বভাবের মেয়ে!! আর সি-আর বি ৭ রাস্তার মোড়টা আমাদের দুজনের ফেভারিট ছিলো। ওখানেই আমরা প্রায়ই দেখা করতাম। তবে নিলুর ফুচকা অনেক পছন্দ ছিলো,, যেদিন দেখা হবে সেদিন ওকে ফুচকা খাওয়াতেই হবে, নাহলে ওর মুড অফ হয়ে যায়। আর শুধু ও একা খাবে না,, আমাকেও ওর সাথে খেতে হবে। তবে মেয়েটার মধ্যে কেমন জানি একটা সরলতা কাজ করতো আমার প্রতি!! আর সেটা আমি ওর চোখে স্পষ্ট দেখতে পেতাম,,,,,

নিহি আর নিলুর মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। তবে দুজনেই যথেষ্ট সুন্দরী আমার কাছে!! একজন অনেক রাগি আর একজন অনেক ঠাণ্ডা,, তবে কেন জানি নিলুর ঠাণ্ডা স্বভাবের চেয়ে নিহির রাগী স্বভাবটাই মিস করতাম বেশি,,, হয়তো প্রথম ভালোবাসা ছিলো তাই!! রাতের বেলা যখন শুতে যেতাম,, বিশেষ করে নিলুর সাথে কথা বলার পর!! ঠিক তখন নিহির কথা অনেক মনে হতো,, মনে হতো ইস এখন যদি নিলুর জায়গায় নিহি থাকতে পারতো!!! কিন্ত সেটা এখন একেবারেই অসম্ভব। আমি শত আশা নিয়ে বসে থাকলেও নিহি আর আসবে না!!। হঠাৎ নিলুর ফোন আসলো,, রিসিভ করতে না করতেই বললো,,,
.
--- এই কি করছো?
.
--- কি ব্যাপার এতো অস্থির হয়ে গেছো কেন!!
.
--- আসলে এক্সাম দেওয়ার সময় তোমার কথা খুব মনে হচ্ছিল! তাই এক্সাম পেপারটা ম্যামের কাছে দিয়েই
তোমাকে এখন কল দিলাম। আচ্ছা বলো না কি করছো এখন?
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,
.
--- এই তো বৃস্টি দেখছি!!
.
--- ইস!! এখন যদি তোমার সাথে বৃস্টিতে ভিজতে পারতাম।
.
--- হ্যা হয়েছে,, আর ভিজতে হবে না,, শেষ বার বৃস্টিতে ভিজে নিজেও নিউমোনিয়াতে ভুগছো,, আর আমারো জ্বর আনিয়েছো!!
.
কথাটা শুনার পর নিলু খুব জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো,,,আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
--- কি হলো হাসছো কেন!!
.
--- এই যে তোমার কথা শুনে,,,,
.
এই বলে ফোনের ওপাশ থেকে আবার অট্টহাসির আওয়াজ শুনতেপেলাম,,নিলুর মধ্যে এই ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন জানি অন্যরকম লাগে! একবার হাসা শুরু করলে একদমই থামতে চায় নাহ মেয়েটা। তবে ও যখন হাসে তখন ওর চেহারার নিস্পাপ ব্যাপারটা আরো গভীর ভাবে ফুটে ওঠে।
.
--- এই কি হলো কথা বলছো না যে? (নিলু)
.
আমি প্রসঙ্গটা পালটে দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,,
.
--- নাহ কিছু না,, তুমি ছাতা আনছো?
.
--- হ্যা আনছি, ব্যাগে আছে।
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যেও! আর বাসায় গিয়ে আমাকে একটা কল দিও!
.
--- ওকে।
.
--- হুম ওকে। বাই!
.
--- বাই জান!!
.
তারপর আমি ফোনটা টেবিলের উপর রেখে,আবার বৃস্টি দেখতে লাগলাম!! আচ্ছা নিহিও কি,, আমার মতো মাঝে মাঝে বৃস্টি দেখে.......

আমার এপোয়েন্ট মেন্ট লেটার টা দেখে নিলু অনেক বেশি খুশি হয়ে গেল,, ওর ভাব/সাব দেখে মনে হলো যেন একেবারে হাতে ঈদের চাঁদ পেয়ে গেছে। আমি নিলুকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,
.
--- একটা এপোয়েন্ট মেন্ট লেটার ই তো! এরকম ভাবে দেখার কি আছে?
.
নিলু প্রসঙ্গটা পালটে দিয়ে বললো,,,
.
--- চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি!!
.
--- যাহ!! কি বলো,,, এখনো তো তোমার ফ্যামিলি কিছুই জানে নাহ.....
.
--- তাতে কি!! বিয়ের পর জানবে।
.
--- আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে আন্টির সাথে কথা বলো,,, দেখো কি বলে!! আর আমিও তোমার ব্যাপারটা আম্মুকে জানাবো।
.
নিলু এক চিলতি হাসি দিয়ে বললো,,,
.
--- ওকে বাবু!
.
হঠাৎ আমার মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগলো এবং সেটা সাথে সাথেই নিলুকে বলে ফেললাম,,,,,
.
--- আচ্ছা নিলা আজ আমার যদি চাকরী না হতো,, তাহলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে!
.
কথাটা শুনার পর নিলু খানিকটা চুপ হয়ে গেলো, তারপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো,,,,
.
--- তাহলে আমি চাকরী যোগাড় করে তোমাকে বিয়ে করতাম!
.
--- আর তোমার ফ্যামিলি?
.
--- চেষ্টা করতাম তাদের ম্যানেজ করার!
.
--- আর যদি না পারতে!
.
--- তাহলে আর কি,, তাদের হয়তো ছেড়ে আসতে হতো!! আর তাছাড়াও মেয়েদেরকে একটা না একটা সময় তাদের নিজেদের ফ্যামিলিকে ছেড়ে অন্যের ঘরে যেতেই হয়,,,, সেটা না হয় তোমার ঘরেই গেলাম।
.
--- কেন নিলা!!!
.
--- কারন বড্ড ভালোবাসি যে তোমায়....
.
কথাটা বলেই নিলু চুপ হয়ে গেল,,,আমি আর একটু ভালোভাবে খেয়াল করে ওর দিকে তাকালাম,, আর দেখলাম ওর চোখ টা ছল ছল করছে!!!!
১০
বারান্দায় বসে বসে আকাশের তারাগুলো দেখছি, মেঘ কেটে যাবার পর তারাগুলো অনেক ঝলমল করছে! বুঝাই যাচ্ছে আকাশে তেমন কোন মেঘ নেই!! হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠলো,, দেখি নিলার ফোন... রিসিভ করতেই বললো,,,
.
--- হ্যালো জান! একটা খুশির সংবাদ আছে!! আম্মু আমাদের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে।
.
আমি ওর কথায় তেমন এক্সাইটেড হলাম নাহ!! খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম,,
.
--- ভালো তো!
.
আমার কথার ধরনটা শুনে নিলা মনে হয় কিছুটা অবাক হয়েছে। তারপর জিজ্ঞেস করলো,,,
.
--- তুমি খুশি হও নি?
.
--- হুম হয়েছি তো!!
.
--- নাহ তোমার কথার ধরন শুনে মনে হচ্ছে তুমি কোন ব্যাপারে আপসেট!! আচ্ছা কি হয়েছে তোমার বলো তো আমাকে?
.
--- তুমি টেন্স নিও না তো। তেমন কিছুই হয় নি!
.
--- সত্যি তো!!
.
--- হুম সত্যি। আচ্ছা শোন, মা ডাকছে আমি তোমার সাথে রাতে ডিনার করার পর কথা বলবো, আর তুমিও ডিনার করে নিও কেমন!!!
.
ফোনের ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘনিশ্বাস শুনতে পেলাম,,,
.
--- হুম করে নিবো।
.
--- বাই!
.
--- হুম বাই জান।
.
তারপর আমি ফোনটা কেটে দিলাম,, বুঝতে পারছিলাম নিলু আমার সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু আমার কেন জানি ইচ্ছা করছিলো না। হঠাৎ নিহির কথা মনে পড়ে গেল,, এই ব্যাপারটা প্রায়ই ঘটে ইদানীং আমার সাথে,, নিলুর সাথে কথা বলার পরপরই নিহির কথা হুট করে মনে পড়ে যায়। নিহির সাথে আমার প্রথম দেখা হয় স্কুলে থাকতে,, প্রথম দেখাতেই ওকে আমার ভাল লেগে যায়। তাই প্রপোজ করে ফেলি,, আর ও সাথে সাথে রিজেক্ট করে দেয় কিন্তু ব্যাপারটা খুব একটা এফেক্ট করেনি সেই সময়, কারন তখন যাকেই দেখতাম তাকেই আমার ভালো লাগতো । ঠিক তার দুবছর পর অবশ্য ততদিনে আমি কলেজে উঠে গেছি, তখন নিহির বোনের মাধ্যমে জানতে পারি যে নিহিও আমাকে পছন্দ করে। যেহেতু তখন সিংগেলই ছিলাম, তাই ভেবেছিলাম একটা রিলেশন করেই দেখি নাহ,,, কি এমন আসে-যায়!! কিন্তু ওটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো যেটার পরিণাম আজ আমি হারে হারে টের পাচ্ছি। রিলেশনের প্রথম ৩ বছরে আমি অতটা সিরিয়াস ছিলাম না, যতটা নিহি ছিলো। অসম্ভব রকমের রাগী মেয়ে ছিলো নিহি,, আর ঝগড়া হলেই মেয়েটা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেলতো। আর সময় মতো দেখা না করলে অনেক কান্নাকাটি করতো!! এভাবে ৩ টা বছর আমি নিহির পাগলামিতে অতিষ্ঠ হয়ে একটাপর্যায়ে ব্রেক আপের পথে হাটা ধরি কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর ওর অনুপুস্থিতিটা প্রচণ্ড ভাবে অনুভব করি নিজের মাঝে!! পরে বাধ্য হয়ে ওকে আবার কাছে টেনে নেই। এই বার দুজনেই অনেক সিরিয়াস হই নিজেদের রিলেশনের ব্যাপারে,, দেখতে দেখতে ১ বছর চলে যায়ে! এর মাঝে দুজনের ফ্যামিলিকেও ম্যানেজ করে ফেলি আমাদের বিয়ের ব্যাপারে! কিন্তু হঠাৎ একটা ভালো প্রপোজাল চলে আসে নিহির বাসায় এবং আশ্চর্যজনকভাবে নিহির ফ্যামিলিও রাজি হয়ে যায়। শুনেছিলাম ছেলেটা নাকি অনেক টাকাওয়ালা!!! বিয়ের আগে নিহি আমাকে বলেছিলো" প্লিজ সোহাগ কিছু একটা করো, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও" কিন্তু আমার কিছুই করার ক্ষমতা ছিলো না, কারন তখনো আমার অনার্স শেষ হয় নি। তার চেয়ে বড় কথা নিহির ফ্যামিলি কোন অবস্থাতেই এই প্রপোজালটা রিজেক্ট করবে না!! আর নিহিও ওর ফ্যামিলির কাছে একটা পর্যায়ে অনেক উইক হয়ে পড়েছিলো। একটা সময় আমি নিরব দর্শকের মতো নিহির বিয়েটা দেখে গেলাম। ওর বিয়ে ঠেকাতে আমি কিছুই করতে পারলাম না,,, যখন একা থাকতাম বাসায়,, তখন কেন জানি চোখ দিয়ে পানি পড়তো খালি ! আচ্ছা নিহিও কি এখন আমার মতো রাতের আকাশের ঝলমলে তারাগুলো দেখছে! ও কি এখনো আমার জন্য কিছু অনুভব করে............
.
(সমাপ্ত)
---------------------------------

লিখা: সাকিন সিকদার।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: বুঝি নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.