নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তবতার এই কঠিন বেড়াজালে আমি স্বপ্নের মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। স্বপ্ন গুলো অনেক বড় হলেও মানুষটা আমি খুবই সাধারন।

সাকিন সিকদার (জেন)

একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি!!!

সাকিন সিকদার (জেন) › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেইম-এইজ-ফ্যাক্ট

০১ লা এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:৫৬


.......

ট্রাক থেকে জিনিসপত্র নামাচ্ছিলাম আমি আর আমার কাজিন ইমু!! পিছন থেকে নিঝু ভাইয়া আমাদেরকে হেল্প করছিলো। সাথে আরো দুজন শ্রমিক। আর ওদিকে আব্বু পুরো ব্যাপারটা তদরিক করছে। আসলে এক বাসা থেকে আর এক বাসা শিফট হওয়া অনেক ঝামেলার ব্যাপার। ব্যাচেলার হলে কোন সমস্যা নেই,,যেকোনো জায়গায় সহজেই শিফট হওয়া যায়!কিন্তু ফ্যামিলি নিয়ে শিফট হতে গেলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়! শুধু মাত্র আব্বুর পোস্টিং এর কারনেই ঢাকায় আসতে হলো। যেটা আমার একদম ই ভালো লাগেনি, সত্যি কথা বলতে চিটাগাং ই আমার সব বন্ধু-বান্ধব ছিলো! এসএসসির পর আমাদের সবার প্ল্যান ছিলো একি কলেজে ভর্তি হওয়ার,, কিন্তু হঠাৎ করে আব্বুর পোস্টিং হওয়াতে এখানে আসতে হলো। আমি অবশ্য চিটাগাং এ থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু আম্মুর জোড়াজুড়িতে সেটাও আর হলো নাহ!! বাধ্য ছেলের মতো ফ্যামিলিরর সাথেই ঢাকায় চলে আসলাম। এখন মালপত্র গুলো নতুন বাসায় উঠাচ্ছি। ছয় তলা বিলিডিং এর তিন তলার বাম পাশের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছি। আর ঢাকা মানেই বিলিডিং এর জংগল! চিটাগাং তাও একটু খোলামেলা ছিলো,, এখানে সেটাও নেই। পিপড়ার মতো মানুষগুলো গিজ গিজ করে এখানে! এখন অবশ্য আর এগুলা ভেবে কোন লাভ নেই, এসে যেহেতু গিয়েছি এডজাস্ট তো করতেই হবে নতুন পরিবেশের সাথে। আমি আর ইমু সোফা গুলো আস্তে আস্তে ট্রাক থেকে নামাচ্ছি। শেষ সোফাটা নামাতে যাবো তখন পিছন থেকে কার সাথে যেন ধাক্কা লেগে গেল!! ভাবলাম শ্রমিকদের কেউ হবে কিন্তু পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে!! দেখতে আমার বয়সি হবে বা ২/১ বছরের ছোট, পড়নে হালকা বেগুনি কালারে সালোয়ার কামিজ, মাথায় ওড়না দেওয়া,, শ্যামলা চেহারা এবং চেহারার মধ্যে একটু মায়া মায় ভাব,,আর সেখানে অসম্ভব রকমের বিরক্তির ছাপ!! কিছুটা হুংকার দিয়েই বললো,,,
.
"কি হলো!!! দেখে চলতে পারেন নাহ? মেয়ে মানুষ দেখলেই গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে....."
.
মেয়েটার কথা শুনে আমি তো পুরোই থ!! মাথায় গোলমাল আছে নাকি এর,,,,
.
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মেয়েটা বললো,,,
.
"পথ ছাড়ুন!!! "
.
আমি সড়ে দাড়ালাম,, আর মেয়েটা হন হন করে চলে গেল। পুরা আজিব কিসিমের একটা মেয়ে মনে হলো আমার!! ইচ্ছা হচ্ছিলো সামনে গিয়ে দু/চারটে কথা শুনিয়ে দিয়ে আসি কিন্তু এলাকায় নতুন এসেছি তাই কোন ঝামেলা পাকাতে ইচ্ছা হলো নাহ আর এদিকে পাশে তাকিয়ে দেখি ইমু মিট মিট করে হাসছে!!

সারাদিন লেগে গেলো ঘর ঠিক করতে। এখন নিজের রুমে শুয়ে আছি,, খুব ক্লান্ত লাগছে!! বালবের আলো একটু নিভছে নিভছে ভাব, মনে হয় ভোল্টেজ উঠা-নামা করছে। আমি এক মনে ব্যাপারটা দেখছি,, হঠাৎ কিছু কথা মনে পড়ে গেল, আসলে সত্যি কথা বলতে কি,,, বন্ধুদের ফেলে এখানে এসে যতটা না খারাপ লাগছে,, তারচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে এই ভেবে যে মিরার সাথে বোধহয় আর কখনো দেখা হবে নাহ! মিরার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় যখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। ও আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে উঠেছিলো! কিন্তু ওর সাথে আমার কথা শুরু হয় ঠিক দুই বছর পর যখন আমরা ক্লাস এইটে উঠি এবং দুজনেই একই টিচারের কাছে পড়া শুরু করি। প্রথম প্রথম শুধু পড়াশোনার ব্যাপারেই কথা হতো কিন্তু শেষের দিকে আমাদের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। মোটামুটি ভাবে আমরা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই। কিন্তু আমাদের মধ্যে কখনো তুই-তুকারি সম্পর্ক গড়ে উঠেনি! দুজন দুজনকে তুমি বলেই সম্ববোধন করতাম। ব্যাপরটা আমার কাছে অদ্ভুত লাগতো! মিরাকে আমার শুরু থেকে অনেক ভালো লাগতো কিন্তু ওর সাথে কখনো আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেনি হয়তো সে সুযোগই হয়নি কিংবা কেন জানি ওকে নিজের মনের কথা বলতে পারিনি! মিরা হয়তো অপেক্ষায় ছিলো আমি কখন ওকে প্রপোজ করবো কিন্তু তারপরেও আমি ওকে নিয়ে কেমন জানি একটা দোটানায় থাকতাম! এটাকেই কি ভালোবাসা বলে নাকি অন্য কিছু কারন তখন যাকেই দেখতাম তাকেই ভালো লাগতো। বলতে গেলে মিরার ব্যাপারে আমি কিছুটা কনফিউজড ছিলাম!!! আমাদের শেষ দেখা হয় যখন আমরা এসএসসির সার্টিফিকেট তুলতে আসি। যখন ওকে বলি আমি ঢাকা চলে যাবো তখন ওর চেহারায় অনেকটা কালো মেঘের ছায়া পড়ে গেছে এমন একটা ভাব কিন্তু পরক্ষনেই মুখে এক চিলতি হাসি নিয়ে বললো,,
.
"হুম!! ভালো তো। ওখানে অনেক ভালো ভালো কলেজ আছে। তুমি পড়াশোনা জন্য ভালো পরিবেশ পাবে। "
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,,
.
"তুমি ভালো থেকো মিরা!!"
.
"হুম থাকবো! যেহেতু তুমি বলেছো আমাকে ভালো থাকতেই হবে "
.
কথাটা শুনার পর বুকের মাঝখানটায় কেমন জানি করতে শুরু করলো। এরপর আর কথা হয়নি!! কথা হয় নি বলতে কথা আর বলতে পারিনি শুধু দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম।

নতুন কলেজ, নতুন পরিবেশ!! অন্যরকম একটা অনুভুতি ভিতরে । কিছু নতুন বন্ধু-বান্ধবী জুটলো। তবে স্যার /ম্যাডাম গুলো অনেক ভালো এই কলেজে! পড়া যথেষ্ট ভালো বুঝায়। আর কলেজের রেপুটেশনো খুব একটা খারাপ নাহ। অনেক জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রী এখানে ভর্তি হয়েছে। যতটা নেগেটিভ আশা করেছিলাম,, অতটা নেগেটিভ কিছু হয় নি। সব কিছু ভালোই যাচ্ছে শুধু একটা ব্যাপারেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল,, সেটা হলো ওই ঝগড়াটে মেয়েটার সাথে কলেজে আবার দেখা হওয়া! এবং দেখাটা হয়েছে কলেজে ভর্তি হওয়ার সপ্তাহখানিক পর,,আমি কলেজ গেটে ঢুকতে যাবো, ঠিক তখনই একটা রিক্সা এসে থামলো কলেজ গেটে। এবং মেয়েটি নেমেই আমাকে দেখে পুরোপুরি থ!! ওর চেহারা দেখে বুঝাই যাচ্ছিলো আমাকে সে এখানে দেখবে এরকম কিছু আশা করেনি। আর আমাকে দেখা মাত্রই সেই বিরক্তিভাবটা চেহারায় ফুটে উঠলো, যেটার সাথে আমি কিছুদিন আগেই পরিচিত হয়েছি। এবং পরে জানতে পারি মেয়েটাও ফাস্ট ইয়ারের,, তবে সে অন্য সেকশনে। ওইদিন মেয়েটার সাথে কলেজ গেটে কোন কথা হয়নি,, ও আমাকে দেখেই হন হন করে কলেজ গেটের ভিতর ঢুকে গেল,, মনে হয় ভুত দেখছে এমন একটা ভাব!!!

দেখতে দেখতে ফাস্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসলো!! সবাই যার যার পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত সেই সাথে আমিও। তো প্রথম দিন বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষা ছিলো। আমি যথা সময়ে কলেজে গেটের সামনে পৌছালাম,, দেখি ততক্ষনে ইরিন ও রিক্সা করে চলে আসছে। ইরিন মানে সেই ঝগড়াটে মেয়েটা! আর ওর শুধু আমার সাথেই ক্যাচাল লাগেনি, আমাদের কলেজের অনেক ছেলে,, এমনকি সিনিয়র ভাইদের সাথেও পর্য়ন্ত ওর কথা কাটা-কাটি হয়েছে। আমার কেমন জানি লাগে মেয়েটাকে দেখলে,, গা জ্বলে উঠে অনেকটা। আর ইরিনের এই খিটখিটে মেজাজের কারনেই কলেজে ঝাগড়াটি নামে ফেমাস হতে বেশি দিন সময় লাগলো নাহ,, মোটামুটি প্রায় কলেজের সব ছেলেরা ওকে এড়িয়ে চলে! দরকার ছাড়া কেউ কথা বলে নাহ। আর এখন সে ঝগড়া করছে রিক্সাওলার সাথে, কারন রিক্সা ওয়ালার কাছে ৫০০ টাকার ভাংতি নেই,, আর ইরিনের কাছে খুচড়া টাকা নেই,, আমি দাঁড়িয়ে ব্যাপার টার মজা নিচ্ছি। কিছুক্ষন পর ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র ১০ মিনিট বাকি। আমি সামনে গিয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকা বার করে রিক্সাওয়ালাকে বললাম,,,
.
"এই নিন মামা ভাড়া!"
.
ব্যাপারটা দেখে ইরিন রিতিমতো হুংকার দিয়ে বললো,,
.
" তোমাকে কে বলছে ভাড়া দিতে!!"
.
রিক্সাওয়ালা ইরিনের কথার কোন তোয়াক্কা না করে, আমার কাছ থেকে ভাড়াটা নিয়ে চলে গেল। ব্যাপারটা দেখে ইরিন পুরোই অবাক!!! মনে হচ্ছে এই ব্যাপার রিএক্ট করবে কি করবে না ইরিন সেটা নিজেই বুঝতে পারছে নাহ। তারপর আমি খুব শান্ত গলায় ইরিনকে বললাম,,
.
"চলো ক্লাসে যাই। একটু পরেই পর পরীক্ষা শুরু হবে!"
.
আমার কথা শুনে মেয়েটা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আমার দিকে!

হরতালের কারনে আমাদের পরীক্ষা সপ্তাহখানিক পিছিয়ে গেল! যেটা প্রতিটা ছাত্র-ছাত্রীর কাছে যথেষ্ট বিরক্তিকর। কারন এসব হুট-হাট বন্ধের কারনে পরীক্ষা গুলো খারাপ হয় বেশি, বলতে গেলে প্রিপারেশনের মুডটাই নষ্ট হয়ে যায়। ইফতি কিছু সাজেশন দিছিলো ওগুলা বইতে দাগাচ্ছি। এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো,, আমি তাকিয়ে দেখি ইরিন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে!! কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
" কি ব্যাপার!! তুমি এখানে?"
.
" নাহ আন্টির সাথে দেখা করতে এসেছি"
.
আমি মনে মনে বললাম, এতো মিষ্টি সুরে কথা বলছে কেন আমার সাথে,, কোন ফন্দি আছে নাকি!! তারপর আমি বললাম,,,
.
"কিছু বলবে?"
.
" না মানে ইয়ে, তোমার কাছে ম্যাথের কোন সাজেশন আছে?"
.
ও আচ্ছা এজন্যই এতো মিষ্টি সুরে কথা আমার সাথে!! আমি ইফতির দেওয়া সাজেশনটা ওকে দিয়ে দিলাম। এরপর আর কোন কথা হয়নি ওদিন!

অনেকেরই ফাস্ট ইয়ার ফাইনালের রেজাল্ট ভালো আসলেও, আমি অতটা ভালো করতে পারিনি। পরে শুনলাম ইরিনের রেজাল্টো খুব খারাপ আসছে। ওর মা,, আমার আম্মুকে বলে আমাকে আর ইরিনকে একই টিচারের কাছে পাঠালো পড়ার জন্য! টিচারটা অবশ্য আমাদের কলেজের। নাম শাখাওয়াত হোসেন এবং আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব আগে থেকেই শাখাওয়াত স্যারের কাছে পড়তো,,আর ওদের ফাস্ট ইয়ারের রেজাল্ট অনেক ভালো আসে। যার দরুন আমাদের অভিভাবকরা অতি উৎসাহী হয়ে উনার কাছে পড়ানোর জন্য পাঠালো। উনার কাছে আমরা সবাই দেড় ঘন্টার মতো পড়তাম। বিকাল ৩:৩০ থেকে ৫:০০। ইরিনের সাথে আমার অবশ্য আগের চেয়ে অনেক বেশি যোগাযোগ বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি দেখা হতো গ্রুপ স্টাডির সময়। কখনো ও আমার বাসায় আসতো,, আবার কখনো আমি ওর বাসায় যেতাম। ভালোই চলছিলো আমাদের ফ্রেন্ডশিপ। তবে ৩/৪ মাস যাওয়ার পর ইরিনের মধ্যে কিছু অদ্ভুত রকমের পরিবর্তন লক্ষ করি,, যেটা আগে মিরার মধ্যে দেখতাম। আগে ছেলেদের মধ্যে ইরিন শুধু আমার সাথেই ঠিকমতো কথা বলতো,, তবে এখন সে শুধু আমার সাথেই কথা বলে মানে ইরিনের ঘনিষ্ঠ যেসব বান্ধবী আছে, ওদের সাথে অনেকেটা যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। ব্যাপারটা ইরিনকে জিজ্ঞেস করাতে ও এড়িয়ে যেতো। মাঝে মাঝে আমাকে বলতো ওর বলে আমার সাথেই শুধু কথা বলতে ভালো লাগে। আমি এর কোন প্রতি উত্তর খুজে পেতাম নাহ,কিছুটা কনফিউজড হয়ে যেতাম ওর কথা শুনে!!তবে ইরিনকে যতটা রাগী ভেবে ছিলাম,, ততটা রাগী মেয়ে সে নয়। ভিতরে যথেষ্ট সরল মেয়েটা! মনে হয় ওর সরলতাটা যেন কেউ টের না পায় সেজন্য হয়তো সবার সাথে রেগে রেগে কথা বলে। কিন্তু আমাকে কেন বুঝতে দিলো ওর ভিতরের ব্যাপারটা!! ও কি আমাকে শুধু বন্ধু হিসেবে বিশ্বাস করে নাকি এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করে অনেকটা মিরার মতো। মনে হচ্ছে আবারো দোটানায় পড়ে যাবো!!

আর একটা কাজ ইরিন প্রায়ই করে থাকে,, সেটা হলো যখনই কলেজে কোন মেয়ের সাথে কথা বলি, তখনই ও কোথা থেকে যেন হাজির হয়ে যায়! এবং কথার মধ্যে ইন্টারাপ্ট করার চেষ্টা করে,, যাতে মেয়েরা বেশিক্ষন কথা বলতে না পারে আমার সাথে। আর ইরিন কেন জানি এখন আর সরাসরি রাগ দেখাতে পারে নাহ আমার উপর! আমার সাথে কথা বললেই ও কেমন জানি নরম হয়ে যায়। আবার আজকে বললো ওর প্র‍্যাক্টিকালটা করে দিতে। ও বলে ২/৩ দিনের জন্য ওর নানুবাড়ি যাবে। আর স্যারই কালই আমাদের প্র‍্যাক্টিকাল নিবেন। অনেক অনুনয়-বিনয় করলো মেয়েটা।আর আমিও ওকে মানা করতে পারলাম নাহ,, কেমন জানি মায়া পড়ে গেছে মেয়েটার উপর!!

প্র‍্যাক্টিকাল খাতাটা দেখে আমি যথেষ্ট অবাক হয়েছি। কারন খাতাটা পুরোপুরি রেডি করা। কিন্তু খাতার প্রথম পাতায় একটা চিরকুট পেলাম! চিরকুটটা মনে হয় ইরিন সরাসরি দিতে চাইছিলো না, তাই হয়তো প্র‍্যাক্টিকাল খাতাটা আমাকে দেওয়াটা একটা অজুহাত ছিলো মাত্র। আমি চিরকুটটা খুলে দেখি!!!
.
"বাধনে রেখেছি তোকে আমার হৃদয়ে"
.
"সারাটিসময় ভাবে তোকে এই মন"
.
"জানি নাহ তোকে পাবো কিনাহ"
.
"তবে বাচতে চাই আজীবন তোর সাথে"
.
"তুই কি থাকবি আমার হয়ে আমার সাথে"
.
ওর এই ছন্দমাখা বাক্যগুলো পড়ে মোটামুটিভাবে শিউরি হয়ে গেলাম মেয়েটা আমাকে প্রপোজ করেছে। তবে ইরিন যে এরকম কাব্যিকভাবে আমাকে তার নিজের মনে কথা আমাকে জানাবে,, সেটাতে সত্যি অবাক হতে হয়। কারন আমি যতদুর জানি কবিতা ইরিনের কাছে অনেক বোরিং লাগে!!এখন নিজের মনে নিজেই হাসি পাচ্ছে,, কি অদ্ভুত মেয়েরে বাবা!! ইস মিরাও যদি আমাকে এভাবে প্রপোজ করতো,,,,,

আমার আর ইরিনের রিলেশনটা খুবই সিম্পল ছিলো। ২০০৭ এর জুনের দিকে আমাদের রিলেশন শুরু হয়। ইরিন আর আমার বাসা পাশাপাশি ছিলো, তাই দুজনের যোগাযোগ করতে খুব একটা অসুবিধা হতো নাহ। ইরিন প্রায়ই আমার বাসায় এসে আম্মুকে হেল্প করতো। তখন আমার ওকে দেখে মনে হতো আমার বিয়ে করা বৌ বুঝি আম্মুকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। অনেক কিউট লাগতো তখন মেয়েটাকে। ও যতক্ষন রান্না ঘরে থাকতো আমি এক দৃস্টিতে তাকিয়ে থাকতাম ওর দিকে। ইরিন ও মাঝে মাঝে আড় চোখে আমাকে দেখতো আর দেখেই একটা মুচকি হাসি দিতো। শুরুর দিকে আমরা চিরকুট দিয়েই নিজেদের মনের কথা আদান-প্রদান করতাম। কিন্তু পরে ইরিন ই বন্ধ করে দিতে বলে। কারন ওর মা বলে আমাদের ব্যাপারে কিছু একটা আচ করতে পেরেছে। পরে আমরা মোবাইলেই মেসেজিং করি। আর কলেজে এবং প্রাইভেটে রেগুলার তো দেখা হয়ই! ইরিনকে নিয়ে খুব একটা ঘোরাঘুরি করা হয় নি। মাঝে মাঝে সময় পেলে প্রাইভেট শেষ করার পর বাসার সামনের একটা বিরানি হাউজে ইরিনকে নিয়ে যেতাম। তবে মজার ব্যাপার হলো আমাদের রিলেশনের ব্যাপারটা শুধু আমি আর ইরিন ই জানাতাম। কলেজে কিংবা প্রাইভেটে আমরা এমনভাবে রিএক্ট করতাম যেন আমরা খুব ভালো বন্ধু।
ইরিন কে নিয়ে অবশ্য একবার সিনেমা হলে গিয়েছিলাম। তবে সেটা সিনেমা দেখার জন্য নয়,, দুজনকে আরো কাছাকাছি জানার জন্যে!!! দিন গুলো বেশ ভালোই যাচ্ছে। চারদিকে কেমন জানি মাতাল হাওয়া মাতাল হাওয়া ভাব!! এখন মনে হচ্ছে মিরার সাথে আমার রিলেশন না হয়ে ভালোই হয়েছে,,,,,
১০
এইচএসসি এক্সাম শুরু হতে আর মাত্র ১৫ দিন বাকি!! ইরিন প্রথম দিকে পড়াশুনার ব্যাপারে যেরকম সিরিয়াস ছিলো,, তার চেয়ে বেশি আরো ঢিলা দিয়ে ফেলেছে। ওর বলে পড়তে বসলেই শুধু আমার কথা মনে হয়। আমাকে ছাড়া তার বলে কিছুই ভালো লাগে নাহ। আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি এক্সাম নিয়ে সিরিয়াস হতে। কিন্তু ইরিনের কোন পাত্তাই নেই,, ফলে এক্সামটাও হেলা-ফেলা করে দেয়। এক্সাম শেষ হওয়ার পর আমাদের প্রেম আরো অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। একই কোচিং এ ভর্তি হই। খাওয়া, ঘুম আর ক্লাস বাদে সারাক্ষন ইরিনের সাথেই কথা হতো, সেটা মেসেজ,কল কিংবা সরাসরি দেখা করাই হউক না কেন!! কিন্তু বিপত্তিটা বাধে এইচএসসি রেজাল্ট দেওয়ার পর। আমার মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করলেও ইরিন দুর্ভাগ্যবসত একটা বিষয়ে ফেল করে বসে। ওর বাবা এতে ভিষন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এবং হুট করেই সিধান্ত নেয় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার!!!
১১
ছাদে আমি আর ইরিন দাঁড়িয়ে আছি,, চারদিকে দমকা হাওয়া! মনে হচ্ছে এখনই অঝোর ধারায় বৃস্টি পড়বে এবং সেই সাথে প্রচুর বাতাস!! এমন একটা ভাব,,,,
.
"এখন কি করবো" (ইরিন)
.
আমি ওকে শান্তনা দেওয়ার চেস্টা করে বললাম,,,
.
"আমার ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করতে পারবে নাহ?"
.
"অসম্ভব!! আব্বু পারলে আজকেই বিয়ে দিয়ে দিবে আমাকে বাসায় এমন অবস্থা। আর তুমি তো জানো আমি আমার বাবা-মা র একমাত্র মেয়ে, উনারা আমাকে নিয়ে অনেক সপ্ন দেখেছিলো কিন্তু মাঝখানে এরকম কিছু হবে সেটা তারা আশা করেনি। "
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,
.
"কদিনের জন্য আম্মুকে নিয়ে নানু বাড়ি যেতে হবে"
.
" হঠাৎ!!"
.
" নানু খুব অসুস্থ সেজন্য"
.
ইরিন অনেকটা মুখ কালো করে বললো,,
.
"তাড়াতাড়ি ফিরে এসো"
.
" চিন্তা করো নাহ,, আমি ফিরে এসেই আমার ফ্যামিলিকে দিয়ে তোমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলাবো। বাকিটা আল্লাহ ভরসা!!
.
আমার কথাটা শুনার সাথে সাথেই ইরিনের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো!!
.
"ইনশাল্লাহ। সব ঠিক হয়ে যাবে।"
.
কথাটা শুনার পর আমি আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,
.
"সেটাই যেন হয়!!"
১২
গতকাল থেকেই ইরিনের মোবাইলটা অফ!!আর এখন ইরিনের বাসায় তালা দেওয়া। বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু উনাকে বলে কিছু বলে যায়নি। কেমন জানি হুট করেই চলে গেছে। হঠাৎ ফোনটা কেপে উঠলো,,
.
"হ্যালো!"
.
"জি আপনি কি সাকিন বলছেন?"
.
আমি কিছুটা কৌতুহুল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
.
" জি। কিন্তু আপনি কে? "
.
" আমি ইরিনের বান্ধবী তমা বলছি। আপনি কি আজ বিকেলে কলেজ গেটের সামনে দেখা করতে পারবেন। ইরিন একটা চিঠি দিয়ে গেছে আপনাকে, সেটা নেওয়ার জন্য!"
.
মেয়েটার কথা শুনার পর কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে পড়লাম। মনের ভিতর অনেক আনন্দ হচ্ছিলো। যাক ইরিনের খোজ পাওয়া গেছে,,চিঠিতে নিশ্চয়ই ইরিন ভালো কোন মেসেজ দিয়ে গেছে!!!
১৩
তমার কাছ থেকে ইরিনের চিঠিটা পেয়ে ওখানেই সেটা খুলে পড়তে লাগলাম,,,,,
"যতক্ষনে তুমি এই চিঠিটা পড়ছো,, ততক্ষনে মনে হয় আমার বিয়ে হয়ে যাবে। আমি সত্যি অনেক দুঃখিত সাকিন, যে তোমাকে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলাম নাহ। বুঝতে পারিনি আব্বু এরকম কায়দা করে আমাকে অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। প্রতিবাদ করার কোন সুযোগই পাইনি। আমি খুবই লজ্জিত তোমার কাছে, কেন যেন নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে। নিজের যত্ন নিও ভালোভাবে,, ক্যারিয়ারটাই এখন তোমার কাছে সবচেয়ে বড়, এটার দিকেই ফোকাস করো । আর কিছু লিখতে পারছি কেন জানি!! শুধু এটুকুই বলবো ভালো থাকার চেষ্টা করো, তোমাকে এখন ভালো থাকতেই হবে আমায় ছাড়া,,,,,
ইতি
তোমরাই ইরিন"
.
চিঠিটা পড়ার সাথে সাথে আমার কেন জানি খুব কান্না পেতে লাগলো। এবং আমি কিছুক্ষন পরই হুহুহু করে কেদে দিলাম। তমা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো,, কিন্তু আমি কিছুতেই যেন নিজের কান্না থামাতে পারছিলাম নাহ!!!!
.
(সমাপ্ত)
----------------------------------
লিখাঃ সাকিন সিকদার.......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.