নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাস্তবতার এই কঠিন বেড়াজালে আমি স্বপ্নের মধ্যে থাকতে ভালোবাসি। স্বপ্ন গুলো অনেক বড় হলেও মানুষটা আমি খুবই সাধারন।

সাকিন সিকদার (জেন)

একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি!!!

সাকিন সিকদার (জেন) › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনের অন্তরালে,,,,

০৬ ই মে, ২০১৭ ভোর ৬:১৩





রুপার হাসিটা অন্যরকম! কেমন যেন মায়া জড়ানো একটা চেহারা, আসলেই অন্যরকম কিন্তু আমি ওকে সহজে বুঝতে দেই না ব্যাপারটা, বুঝে গেলে তখন আর আমি এটার মজা নিতে পারবো নাহ, ও যতটুকু কেয়ার করুক না আমায়, আমি ওকে অনেক বেশি বেশি কেয়ার করতে চাই। এবং করিও কিন্তু আমার কাছে তাতেও কম মনে হয়! তবে ও যদি কখনো কস্ট পেয়ে কান্না করে, তখন কেন জানি আমি নিজেও কেঁদে দেই। তবে সেটা ওর সামনে নয়,,, তাই কোন কারনে ওর মন খারাপ হয়ে গেলে, আমি যথাসম্ভভ চেষ্টা করি রুপার মন ভালো করার। আর যাই হউক রুপাকে সব সময় আমি হাসি-খুশি দেখতে চাই! অবশ্য সব সময় হাসি-খুশি থাকে। সামান্য মজার কোন ঘটনা ঘটলেই রুপা খিল খিল করে হেসে ফেলে, ওর এই ব্যাপারটা অনেকেই পছন্দ করে।

রুপাকে নিয়ে আমার প্রায় এদিক-ওদিক ঘুরতে বের হতে হয়। বিশেষ করে কাচা-বাজারে যাওয়ার সময়। পরিবারে রুপারা তিন বোন, তার মধ্যে রুপাই বড়। ওর বাবা প্রবাসী হওয়ার কারনে পরিবারের দেখা-শোনা রুপাকেই করতে হয়! আর অবশ্যই সে আমাকে সাথে নিয়ে যাবে। তবে রুপার একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগে, আর সেটা হলো এই যুগের মেয়েদের মতো ওর তেমন কোন চাহিদা নেই, বছরে মাত্র একবারই জামা কিনবে, রুপার বোন গুলাও ওর মতো, সব সময় টাকা জমানোর প্রবনতা কাজ করে রুপার ফ্যামিলিতে । আসলে মধ্যবিত্ত হলে যা হয় আর কি, তার উপর উপার্জন যখন চাহিদা অনুযায়ী কম থকে! সত্যি কথা বলতে আমি রুপার চোখে অনেক স্বপ্ন দেখেছি, বিশেষ করে ওর পরিবারকে নিয়ে!! কিন্তু বাস্তবতাই এখন রুপার সবচেয়ে বড় বাধা,, আর সেই বাস্তবতাটা হলো "অভাব"। আমি অনেকভাবেই রুপাকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বরাবরই তার কাছ থেকে না শুনতে হয়েছে। প্রথম প্রথম জোড় করলেও, এখন আর কিছু বলি নাহ!ও যদি নিজে নিজে এগুতে চায় কারো সাহায্য ছাড়াই, তাহলে যাক নাহ! আমি তো থাকবোই ওর পাশে,,,,

রুপা অনেকটাই ভেঙে পড়ে যখন ওর ছোট বোন সম্পা মারা যায়, এবং মৃত্যুটা খুব রহস্যজনক ছিলো। ঘুমের মধ্যেই সম্পার মৃত্যু হয়। ওর বাসায় সবাই কান্নাকাটি করলেও, রুপা একটু কাদেনি, পাথরের মতো নিথর হয়ে বসেছিলো! আমি সেদিন রুপাদের বাসায় সারাদিন ছিলাম। আসলে তখন ওকে কি বলে শান্তনা দিবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম নাহ! এবং পরেরদিন ই রুপা খুব স্বাভাবিক হয়ে যায়!! অনেকটা অবাকই হই আমি ওর এরকম আচরন দেখে, মানুষ এতো দ্রুত কিভাবে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে, হয়তো বা পারে কিংবা অভিনয় করে। যেমন রুপা করেছিলো!

" আচ্ছা প্রতিদিন তুই এখানে কেন নিয়ে আসিস আমায়"
.
"ভালো লাগে আমার এই জায়গাটা অনেক! কেন তোর ভালো লাগে নাহ!"
.
কথাটা শুনে রুপা কেমন জানি চুপসে গেল! তারপর অনেকটা দায়সারা ভাব নিয়ে বললো,
.
"লাগে ভালো! কিন্তু প্রায় এক জায়াগাতে আসতে আসতে বোর হয়ে গেছি!"
.
আমি একটু মুচকি হেসে বললাম,,
.
"ঢাকা শহরে এরকম কাছাকাছি ঘুরার জায়গা থাকলে বল, সেখানে নিয়ে যাবো তোকে!"
.
আমার কথা শুনে রুপা অনেকটা আশাহত দৃস্টিতে বললো,,,
.
" হুম তাও ঠিক! আসলেই ঘুরার তেমন কোন জায়গাই নেই এই অস্থিরতার শহরে।"
.
আমি রুপাকে আশ্বস্ত করে বললাম,,,,,
.
"শহর ঠিকই স্থির রয়েছে সেই আগের মতোনই, শুধু মানুষগুলো কেমন যেন অস্থির হয়ে পড়েছে, কেমন যেন একটা তাড়াহুরা কাজ করে সবার মাঝে"
.
" হুম!! একদম ঠিক বলেছিসরে, আর মানুষগুলো কথা কি বলবো, আমি নিজেই কেমন অস্থির হয়ে গেছি এই জীবনে"
.
রুপার কথা শুনে কেন যেন খুব মায়া হলো,,,,ওকে বললাম
.
"সব ঠিক হয়ে যাবেরে রুপা, তুই একটু ধৈর্য ধর!"
.
রুপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,
.
"তাই যেন হয়"
.
আমি আর কিছু বললাম না, শুধু চুপটি করে ওর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম আর আড় চোখে ওর চুলগুলো দেখছিলাম। এবং সেগুলা বাতাসে উড়ছিলো। অনেক ইচ্ছা হচ্ছিলো চুলগুলো আলতো করে ছুয়ে দিতে! সেই অধিকার টুকু অবশ্য নেই, তবে খুব ইচ্ছা আছে রুপার সেই অধিকারটার অধীকারী হওয়ার। শুধু বিড় বিড় করে এটাই বলতে লাগলাম, "সত্যি তোকে অনেক ভালোবাসিরে রুপা"!!! হঠাৎ রুপা আমাকে চমকে দিয়ে বললো,,
.
"কিরে কি বিড়বিড় করছিস এরকম!"
.
"কই কিছু না তো!!"(আমি)

"আচ্ছা এখন কি করা ঠিক হবে!"
.
অনেকটা অসস্তি নিয়ে কথাটা বললো রুপা,,,
.
"কেন ঠিক হবে নাহ, আর তুই তো যথেষ্ট ম্যাচুয়র! আংকেল যেটা বলছে সেটা মেনে নেহ"
.
রুপা অনেকটা দ্বিধা জড়ানো গলায় বললো,,
.
"আচ্ছা আমি ভেবে দেখি কিছুদিন, কি করা যায়!!"
.
" সময় নিতে পারিস, তবে আমার মনে হয় নাহ এখানে ভাবার কিছু আছে!"
.
রুপা আমার কথা শুনে অনেকটাই অবাক হয়ে বললো,,,
.
"কেন!!"
.
"দেখ আমার মতে রাজি হয়ে যাওয়াটাই ভালো,আর এতে তো আমি খারাপ কিছু দেখছি নাহ!"
.
"কিন্ত আব্বু আর আমার মেঝ বোনটার কি হবে!"
.
" কি হবে আর! ঈশ্বর যেটা সামনে রেখেছেন সেটাই হবে, তুই ঘাব্রাইস নাহ, রাজি হয়ে যা। "
.
রুপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,,,
.
"তারপরেও অমিত, আমার সময় লাগবেরে, হুট করে বললেই তো রাজি হয়ে যাওয়া যায় নাহ!"
.
"হুম দেখ, তুই যেটা ভালো মনে করস! তবে আমার মতে, অন্তত আংকেলে কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে যাওয়াই ভালো। "
.
আমার কথা শুনে রুপা আর কিছু বললো নাহ, শুধু একটা মন খারাপ ভাব নিয়ে চুপ করে আমার পাশে বসে রইলো।

লাল শাড়িতে রুপাকে হেব্বী লাগছে! মেয়েটা যে এতো সুন্দর সেটা আজ আরো ভালোভাবে বুঝতে পারলাম। অবশ্য আমার কাছে ও সব সময়ই সুন্দর। তবে আজকে ওকে সব কিছুতেই একটু বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। এখানে এসে প্রথম প্রথম অনেক খারাপ লাগলেও, এখন অবশ্য ভালোই লাগছে রুপাকে দেখে। মেয়েটা চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে, অনেক নিষ্পাপ লাগছে রুপাকে। ইচ্ছা করছে কাছে গিয়ে ওর গালে একটা চুমা দিয়ে দেই। তবে যাই হউক আজ আমি অনেক খুশি রুপার জন্য!! আচ্ছা আসলেই কি আমি খুশি, নাকি সবার সামনে হাসি-খুশি থাকার ভান করছি।

সপ্তাহখানিক পর,,রুপার ফোন পেয়ে কেমন জানি নিজের ভেতরই কেপে উঠলাম!! ফোনটা ধরে অনেকটা কাপা কাপা গলায় বললাম,,
.
" হ্যালো!!"
.
"কিরে এরকম কাপতেছিস কেন,, অসুস্থ নাকি!!"
.
"না না,, অসুস্থ হব কেন!! তার আগে বল তুই কেমন আছিস"
.
" ভালো না, ওর সাথে এখনো মানিয়ে নিতে পারছি নারে!"
.
" আরে চিন্তা করিস নাহ, আস্তে আস্তে ব্যাপারটা ঠিক হয়ে যাবে!"
.
"হুম তাই যেন হয়! আচ্ছা তোর কি খবর বল?"
.
"কোন খবর নেই! আছি আর কি, যেমন টা থাকি প্রতিদিন"
.
"আমাকে অনেক মিস করিস তাই নাহ!!"
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,,,
.
"সেটাই তো স্বাভাবিক তাই নাহ!!"
.
" হুম!!"
.
কথাটা বলে রুপা মিনিট পাচকে চুপ করে থাকলো। তারপর হঠাৎ নিরবতা ভেঙে বললো,,
.
"আচ্ছা এখন রাখিরে, ও কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবে। ওর জন্য আবার টেবিলে খাবার রেডি করতে হবে"
.
বলেই ফোনটা কেটে দিলো!! আমি অনেকক্ষন ধরে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু এখন আর সেটা পারলাম নাহ!!

রুপাকে নিয়ে প্রায়ই হাতির ঝিলে আসতাম। এখন অবশ্য একা একাই আসি। জায়গাটা আমার অনেক পছন্দের অবশ্য রুপা থাকলে আরো ভালো লাগতো। ও অনেক দুষ্টুমি করে কথা বলতে পারতো। এক হিসেবে রুপার আমার অনেক ভালো বান্ধবী ছিলো এবং ওকে আমার সবার চেয়ে আলাদা লাগতো, এবং ওর সাথে নিজের সব কিছু শেয়ার করতাম, সেই সাথে রুপাও। চেয়েছিলাম ওর সাথে থাকতে আজীবন কিন্তু ধর্মটাই আমাদের একমাত্র বাধা হয়ে দাড়ালো। এবং সমাজের এই অদৃশ্য দেওয়ালের কারনেই দুজন-দুজনের কাছ থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়ি। হিন্দু-মুসলিম প্রেম সেটা হয়তো সিনেমাতেই সম্ভব কিন্তু বাস্তবে এই সমাজে সেভাবে থাকা কোন দিন ও সম্ভব নয়, হয়তো আমাকে মুসলিম হতে হবে বা ওকে হিন্দু!! নতুবা সমাজ আমাদের একঘরে থাকতে দিবে নাহ,, সত্যি ভালোবাসা গুলো মাঝে মাঝে অনেক অসহায় হয়ে পড়ে, এই বাস্তব পৃথিবীতে, ভেঙে দিতে হয়ে বিন্দু বিন্দু করে গড়ে তোলা নিজের স্বপ্ন গুলো.........
-----------
সমাপ্ত
........
লিখাঃ সাকিন সিকদার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:১০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম।

উল্টোটাও কিন্তু সমাজে আছে!!!

০৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:২৫

সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: আছে সেটা খুব কম!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.