![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন স্বপ্নবাজ মানুষ আমি!!!
নিধি বেশ কিছুক্ষন ধরে রাগে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে! মেয়েটার মধ্যে চট করেই রাগ-ভাবটা চলে আসে। ওর এই অবস্থা দেখলে মনের ভিতর কেন যেন খুব আনন্দ হয়! রাগ করলেই ওর গালটা কেমন যেন ফুলে যায়! তখন ওকে আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি অস্পরী মনে হয়, আবার কেমন যেন একটু ভয় ও হয়। কারন নিধির রাগ ভাঙানোটা বেশ মুশকিল! এবং ও একটুতেই যেকোন ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর সহজেই কোন ঘটনা ভোলে নাহ, বিশেষ করে ওর সাথে আমার ঝগড়ার ব্যাপার গুলো! কিন্তু তারপরেও মেয়েটা আমাকে বেশ ভালোবাসে আর আমিও নিধিকে অনেক ভালোবাসি।
আমি নিধির কাধে হাত রাখতেই ওমনি চেচিয়ে উঠলো!
.
" এই গায়ে হাত দিবা নাহা"
.
কিছুটা কাচু-মুচু হয়ে বললাম,,
" কেন?"
.
"নিজের হাতের আংগুলের দিকে তাকিয়ে দেখো, নক গুলো কত্ত বড় হয়ে গিয়েছে!"
.
খানিকটা ইতস্তত হয়ে বললাম,,,
.
"আসলে সময় পায়নি"
.
আমার কথাট শুনে নিধি অনেকটা চটে গিয়ে বললো,,,
.
"তোমার আর কাজটা কি হুম! সারাদিন বাইকে টাল্টিবাজি করা ছাড়া, পড়ালেখাটা তো ইদানীং ঠিকমতো করো নাহ!"
.
নিধিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে বললাম,
.
"আচ্ছা ঠিক আছে সোনা, আমি এরপর থেকে এমন কিছু করবো না, যেটাতে তোমার খারাপ লাগে!"
.
"এই আচ্ছা ঠিক আছে কথাটা তো সেই রিলেশনের শুরু থেকেই শুনে আসছি অমিত, তুমি কখনোই কোন কিছু সিরিয়াসলি নেও নাহ!"
.
আমি ওর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, কি অজুহাত দিবো বুঝে উঠতে পারছি নাহ! আমার এরকম চুপ থাক দেখে নিধি বললো,,
.
" কি হলো চুপ যে! কোন অজুহাত পাচ্ছো না, আমাকে দেখানোর, তাই নাহ!!"
.
নিধির এরকম কথা শুনে আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। রিলেশনের পর থেকেই মেয়েটা কিভাবে যেন চট করেই যে কোন ব্যাপারে আমার মনের কথা ধরে ফেলতে পারে!!
নিধির রাগ অবশ্য এখন অনেকটাই কমেছে!! যখন আমি ওর রাগ ভাঙাতে না পারি, তখন আপনা আপনি যেন ওর রাগ ভেঙে যায়। আর এছাড়াও আমাদের ঝগড়া আধা-ঘন্টার বেশি থাকে নাহ, মানে আমরা দুজন-দুজনের সাথে বেশিক্ষন রাগ কিংবা অভিমান করে থাকতে পারি নাহ, কখনো ও আমাকে সরি বলে, বা কখনো আমি ওকে!তবে প্রায়সই আমাকেই সরি বলতে হয়, যাতে দ্রুত নিধিকে শান্ত করতে পারি, আর নিধির রাগ বেশি উঠলে খুব মন খারাপ করে ফেলে, যেটা আমার কাছে একদমই ভালো লাগে নাহ,ওর চঞ্চল-হাসি খুশি মুখ আমার খুব পছন্দ!
নিধির সাথে প্রেম এখন বলতে গেলে আমার এখন অনেকটা অভ্যাসের মতো হয়ে গিয়েছে এবং সেটা অনেক কঠিন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে,যা ছাড়াটা আমার পক্ষে এক কথায় অসম্ভব! নিধির ক্ষেত্রেও আরো বেশি হবে হয়তো, মেয়েটা আমার সাথে একদিন ফোনে কিংবা ফেবিতে না কথা বলতে পারলে কেমন যেন পাগল পাগল হয়ে যায়। রিলেশনের শুরুর দিকে অবশ্য খুব একটা এরকম আবেগ কাজ করতো নাহ নিধির, কিন্তু আস্তে আস্তে বিষয়টা গাড় হতে থাকে, অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ি দুজন দুজনের প্রতি, আবার অভিমানো জন্মে, তবে নিধির মতো চট করে সেটা প্রকাশ করতে পারি নাহ! আবার নিধির মতো কেন যেন ভালোবাসতেও পারি নাহ, যেমনটা নিধি আমাকে গুছিয়ে রাখে, আমাকে ভালোবাসে! মাঝে মাঝে নিজেকে সত্যি অনেক ভাগ্যবান মনে হয়, যে এরকম একটা ভালো মানুষের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পেরে!! কিছুক্ষন নদীর পাড়ে থাকার পর আমরা বাসার দিকে রওনা দিলাম, জায়গাটা বেশ নিরিবিলি, নদীর প্রবাহের সাথে সাথে এক রকম মাতাল হাওয়া বয়ে যায় চারদিকে, সকালের দিকে মানুষের কিছুটা আনাগোনা থাকলেও দুপুরের দিকে সেটা অনেকটাই কমে আসে, আর কারো সাথে মন ভরে প্রেম নিবেদন করার জন্য এধরনের জায়গা গুলো পারফেক্ট!
আমি বাইক চালাচ্ছি আর নিধি খুব শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। ওর এই ব্যাপারটা আমার বেশ ভালোলাগে, ভিতরে কেমন যেন স্বর্গীয় অনুভুতি কাজ করে! শুধু এই সময়টাতেই আমি নিধির এতোটা কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ পাই। অবশ্য অন্য সময়ে চেষ্টা করেছি কাছাকাছি হওয়ার কিন্তু ও সাফ মানা করে দিয়েছে যে " বিয়ের আগে এগুলা কিচ্ছু হবে নাহ" এই কথা গুলো এখনকার মেয়েদের একটা কমন ডায়লগ হয়ে গেছে। তবে আমি কখনো এসব ব্যাপারে ওকে জোড় করিনি, হয়তো খুব ভালোবাসি বলে, আমার শুধু ওর পাশে থাকাটাই জরুরী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত
নিধিকে বাসায় পৌছে দিতে গিয়ে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। নিধি বাইকে থেকে নেমেই,,,
.
"এই ঠিক ভাবে বাসায় যাবা, আর কালকে ১ টা নাগাদ আমার এক্সাম শেষ হয়ে যাবে, তুমি পনে ১টার মধ্যে আমার কলেজে সামনে চলে আসবা, আমি কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারবো নাহ, তোমার জন্য!"
.
আমি চোখ টিপ মেরে বললাম,,
.
"আচ্ছা ঠিক আছে"
.
"এই তুমি চোখ টিপ মারলা কেন! কাল যদি লেট করে আসো না,তোমার খবর আছে!"
.
এই বলে মুখে একটা ভেংচি কেটে নিধি বাসার দিকে চলে গেল! আমি ওর চলে যাওয়া দেখে হাসতে থাকলাম, মেয়েটা বড্ড পাগল! তারপরেও আমার অনেক অনেক ভালো লাগে নিধিকে। নিধি যখন চশমা পড়ে তখন ওর সৌন্দর্যের রুপটা আরো যেন বেড়ে যায়, তবে ওর একটা মুদ্রা দোষ আছে আর সেটা হলো, একটু পর পর চশমা পড়বে আবার খুলবে,, এই ব্যাপারটা অনেক মজা লাগে! তবে নিধিকে যদি কখনো হারিয়ে ফেলি আমি, সত্যি নিঃস্ব হয়ে পড়বো, হয়তো পাগল ও হয়ে যেতে পারি। আর আমার সকল অনুভুতি নিধিকে ঘিরেই,হয়তো নিধিরও একি অবস্থা, বিয়েটাও যেন এখন তাড়াতাড়ি হয়ে যায়, কোন প্রকার ঝুটঝামেলা ছাড়াই! এটাই এখন উপর আল্লাহ কাছে প্রার্থনা!!!
শুরুর দিকে নিধির সাথে আমার পরিচয়টা খুব একটা শুভ হয়নি, ওকে প্রথম দেখি আমাদের স্কুলের এক অনুষ্ঠানে, তখন আমি স্কুলের বিএনসিসির চিফ গার্ড হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম! আচমকা কলেজে একটা গন্ডগোল লেগে যায় বাহিরের ছেলেদের সাথে স্কুলের ছাত্রদের, সামন্য একটা মেয়েঘটিত ব্যাপারকে কেন্দ্র করে, যার দরুন কলেজে আসা সংস্কৃতি কর্মীরা যাতে এই ঝামেলা না জড়িয়ে পড়ে সেজন্য তাদের স্টেজ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয় স্কুল প্রশাসন। সেই অনুযায়ী আমরা সংস্কৃতকর্মীদের সরাতে গেলে, একরকম বাগ-বিতন্ডতা বেধে যায়, তারা জিদ ধরে বসে যে স্টেজে পারফর্ম না করা পর্যন্ত কোথাও যাবে নাহ! যেহেতু অনেক কষ্ট করে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে, এজন্য যে করেই হোক স্টেজে পারফর্ম করবেই!! পরে বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আসতে হলো, হেড স্যারের আশ্বাসে তারা শান্ত হলো, আর নিধি আমার দিকে তখন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, পারলে আমাকে জুতা-পিটা করবে এমন অবস্থা! কারন শেষের দিকে নিধির সাথে আমার তর্ক শুরু হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে আমি আচ্ছা মতো অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দেই ওকে, ঠিক ওই সময় হেড স্যার এসে হাজির পরিস্থিতি অনুকুলে আনার লক্ষ্যে, যার দরুন নিধি আর কোন কথা বলা সূযোগ পায়নি!
২য় বার দেখা হলো আপুর বিয়ের দিন, প্রায় ৩/৪ মাস পরে ওর সাথে আবার দেখা হবে এভাবে, যথেষ্টই অবাক হলাম! মজার ব্যাপার হলো সে আপুর ননদ! আর ওই দিনই জানতে পারি। পরিচয় হয়েছি দুলাভাই এর মাধ্যমে, নিধিও খুব অবাক আমাকে দেখে! এভাবে এখানে দেখবে সেটা হয়তো আশা করেনি, না করাটাই স্বাভাবিক! অপ্রত্যাশিত ব্যাপার গুলোই কেন যেন জীবনে বার বার ঘটে যায়!! সেদিন শুধু পরিচিত হয়েছি এর বেশি কথা হয়নি, তবে এরপর থেকে দেখা সাক্ষাত হওয়া শুরু হলো নিধির সাথে, হালকা-পাতলা কথা বলতাম। তবে ওর প্রতি যে একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো, সেটা অনেকটাই কেটে গেছে আমার! দেখা হলে "কেমন আছেন-ভালো আছেন" এটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকতো! তবে ও যখম চশমা খুলতো, তখন ওকে আর একটু অন্যরকম লাগতো! ওর খালি চোখের নয়নগুলো একটা অদ্ভুত রকমের নিষ্পাপ ভাব সৃষ্টি করতো ওর চেহারায়, আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, যখন চোখা-চোখি হতো! তখন খুব দ্রুত মাথা নিচু করে ফেলতাম!
একদিন নিধি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে, বলতে গেলে জ্বর ওকে পুরো কাবু করে ফেলেছে এমন অবস্থা! ওদিন আমি, আপু এবং নিধি বাসায় ছিলাম। বাকিরা তখন গ্রামে ছিলো ঈদ উপলক্ষে, নিধির ঈদের পর পর পরীক্ষার থাকার কারনে নিধিকে বাসায় থাকতে হয়, সেই সাথে নিধির জন্য আপু এবার দেশের বাড়ি যায়নি আর দুলাভাই অফিসের কাজে রাজশাহীতে ছিলো, বেচারা ঈদের ছুটি পায়নি সেবার। ঈদের ১ দিন পর আমি আপুর শ্বশুরবাড়ি যাই, আপুর সাথে দেখা করতেই, উনি আমাকে কিছুদিন থেকে যেতে বলেন দুলাভাই না আসা পর্যন্ত! আমার থাকার জন্য নিচের গেস্ট হাউজ রেডি করে দেওয়া হলো। বাড়িটা অনেক বড়-সড়! মানুষ জন বেশি না থাকলে একরকম ফাকাই লাগে! নিধির সাথে দেখা হওয়ার তখনো সুযোগ হয়নি, এই বাসায় আসলে কেন যেন নিধিকে বার বার দেখতে ইচ্ছে করে! একটা অদ্ভুত টান অনুভব হয় মনে ওর জন্য, আর ইদানীং ওকে যখন দেখি মনের ভিতর কেমন একটা ঝড় শুরু হয়ে যায়!! আগে কখনো কারো প্রতি এরকম হয় নাই, নাকি ও অতি সুন্দরী সেজন্য প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছি। রিলেটিভ এর মধ্যে না পড়লে হয়তো প্রপোজ করতে সংকচবোধটা কাজ করতো নাহ! আর তার চেয়ে আসল কথা হলো আমি কি ওকে আসলেই ভালোবাসি নাকি এটা মোহ!! নিজেই সিধান্তহীনতায় পড়ে যাই মাঝে মাঝে, আর এসব চিন্তা তখনই শুরু হয় যখন আমি আপুর বাসায় আসি, মেয়েটা দৃস্টির আড়াল হলে কেন যেন ভালো লাগে নাহ!
ঈদের ৩য়দিন রাতে নিধির হঠাৎ জ্বরের উপস্থিতি! ওর অবস্থা দেখে আপু অনেক ভয় পেয়ে যায়, আমাকে ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনতে বলে, আমি হন্তদন্ত হয়ে ওষুধ নিয়ে ওর রুমে গিয়ে দেখি মেয়েটার চেহারা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে, চোখ গুলো ফুলা ফুলা আর মাথার চুলগুলো এবড়োথেবড়রো, খুব মায়া জাগলো বুকের ভিতর,অবশ্য কদিনের মধ্যে নিধি ভালো হয় যায়, আর অন্য দিক থেকে ওর প্রতি অনুভিত মায়াটা, মনে একরকম পবিত্র ভালোবাসার জন্ম দেয় শুধু নিধির জন্যে!
এরপর থেকে ছক আকি ওর কাছাকাছি যাওয়ার, ওকে নিজের আপন করে নেওয়ার! ইদানীং বেশ ঘন ঘন যেতে ইচ্ছা করে নিধিদের বাসায় , তখন আবার আষাঢ় মাস চলে এসেছে, বৃস্টি আমার স্কুল থেকেই অসহ্য লাগতো,পুরো রাস্তা কাদা-পানি করে দিয়ে যেতো , আর সেই রাস্তাতে যাতায়াত করা সত্যিই একটা চরম বিড়ম্বনা মনে হতো আমার কাছে! তবে এখন সেই বিরম্বনাটা কেন জানি খুব ভালো লাগে, গুড়ি গুড়ি বৃস্টির ফোটা গুলা এখন মন ছুয়ে দেয় আমার! ভিজতে ইচ্ছে করে কারো সাথে, আর সেটা হয়তো নিধি! অদ্ভুত মেয়েটার রুপলিলা, ধনুক থেকে তীর ছাড়লে যেমন সেটা আর ফিরানো অসম্ভব! নিধির ক্ষেত্রেও আমার তখন সেরকম অবস্থা, প্রায়সয়ই ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে কলেজে যেতে দেখাতাম, তবে সেটাতে খুব একটা লাভ হলো নাহ! ব্যাপারটা শুধু আমিই বুঝতে পারবো যে ওর প্রতি আমার যে গভীর অনুভুতির সৃষ্টি হয়েছে এবং সেটা অপ্রকাশিত থেকে যাবে আর এরকম সরাসরি দেখা করাটাও বড্ড বেমানান দেখাবে, তাই এক ফাকে ফেবি আইডিটা সরাসরি চেয়ে বসলাম! নিধিও কোন প্রকার ভনিতা ছাড়াই ওর নাম্বার দিয়ে দিলো, বললো, "নাম্বার দিয়ে আইডি খুজে নিও" এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃস্টি! চাইলাম আইডি, পেয়ে গেলাম নাম্বার! ও হয়তো আমার মতিগতি জানে নাহ, তাই নাম্বার দিয়ে দিতে তেমন দ্বিধা-বোধ করেনি! ফোন নাম্বার থাকা সত্তেও ফোনের বদলে ফেবিতে টুক-টাক নক দিতাম, মাঝে মাঝে পড়াশুনার টপিক নিয়ে আলোচনা করতাম, আসলে সবই ছিলো আমার উছিলা ওর সাথে সহজ হওয়ার লক্ষ্যে! একটা পর্যায়ে নিধি আমার ফাদে পরে, দুজনের মধ্যে হাসি-ঠাট্টার সম্পর্ক তৈরি হয়, এক কথায় ভালো বন্ধু! রিলেশনের আগে ওর সাথে হঠাৎ হঠাৎ রিক্সা নিয়ে ঘুরতে বের হতাম, উদ্দেশ্য থাকতো একটা ওকে প্রপোজ করা! কিন্তু বরাবরের মতোই নিজেকে ব্যর্থ প্রেমিক হিসেবে প্রমাণিত করেছি নিধির কাছে, বাকি সব কথাই মুখ থেকে বের হতো শুধু "আই লাভ উ " নামক ইংরেজি বাক্য ছাড়া! আজকাল প্রপোজের ধরনটাও ইংরেজি ভাষা দখল করে নিয়েছে, আগেকার দিনের মতো কাব্যিকভাবে ভালোবাসার আদান-প্রদান এখন বিলুপ্ত তথ্য-প্রযুক্তির আদলে!! কয়েকদিন সময় নিয়ে ভাবলাম নিধিকে এরকম কাব্য আকারে প্রপোজ করবো, যাতে ও মুগ্ধ হয়, আর আমার ভালোবাসার কথা যেন সুইয়ের মতো ওর মনে গেথে যায়! ভালোবাসার মানুষটির কাছ থেকে প্রাপ্য প্রেম পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। আমি নিধির কাছ থেকে সেটাই পেতে চাই অনন্ত কাল! একদিন ভনিতা ছাড়াই নিধিকে বলে দিলাম, যা আছে আমার মনে ওর জন্য, বলে দিলাম সব কিছু, উপমা কিংবা কবিতার ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি! আর এরপর থেকে ওর মেসেজের রিপ্লাই আসেনি, ও শুধু আমার মেসেজ গুলো সিন করে রাখতো, কয়েকবার সরিও বললাম, তবুও কোন লাভ হলো নাহ! মনে হচ্ছিলো, ওর আইডির ব্লক লিস্টে চলে যাবো, ঠিক ৩ দিন পর ওর জন্মদিনে ওকে টিস্যুতে "I love u" লিখে আবার ওকে প্রপোজ করি, ঘুরে ফিরে সেই ইংরেজি বাক্যেই আবদ্ধ হলাম। প্রতি উত্তরে নিধি কিছু বললো নাহ, টিস্যুটা নিয়ে নিজের কপালের ঘাম মুছে ছিড়ে ফেলে দিলো জানলা দিয়ে! আমি থ হয়ে ওর দিকে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম, নিধি আমাকে একটা ভেংচি কেটে ওর বান্ধবী দের সাথে কথা বলতে চলে গেলো, খুবই হতাশ লাগছিলো তখন, মন খারাপ করে সোফায় বসে থাকলাম চুপচাপ, সবার হাসি-ঠাট্টা পরিবেশের মাঝে নিজেকে বেশ একা মনে হচ্ছিলো! পারলে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিবো এমন অবস্থা, একটা সময় যখন মনে হলো পারবো নাহ আটকাতে নিজের চোখের পানি! তখন আস্তে করে সবাইকে ফাকি দিয়ে আপুদের বাসা থেকে বেরিয়ে আসলাম, রাস্তায় নামতেই হুর হুর করে কেঁদে দিলাম, বুঝলাম নাহ কি চলছে আমার মাথায়, শুধু এটুকু মনে হতে থাকলো যে আমার অনেক বড় কিছু একটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আর সেক্ষেত্রে যেন আমার কিছুই করার নেই!!নিজেকে খুব নিঃস্ব নিঃস্ব লাগতে লাগলো! বাসায় এসে দেখি তেমন আর কান্না পাচ্ছে নাহ, তবে ভিতরটা কেমন যেন ভারি ভারি লাগছে, আমি হাত মুখ ধুয়ে ফেবি খুলতেই দেখি নিধির মেসেজ!!
"টিস্যু বয় আমি হতে চাই তোমার যদি তুমি তোমার টিস্যুতে আমাকে জড়িয়ে নাও!! আর হ্যা তুমি চলে গেলে কেন এভাবে হুট করে!আর হ্যা সরি ওভাবে টিস্যু টা ফেলে দেওয়ার জন্য, নাহলে অনেকেই ব্যাপারটা অন্যভাবে নিবে!আর তুমিও একটা বুদ্ধু এভাবে কেউ প্রপোজ করে, আচ্ছা বাদ দাও কাল দুপুরের দিকে অবশ্যই চলে আসবা বাসায়, তোমার প্রিয় খাবার গুলো রান্না করবো, দেরী করো নাহ। শুভ রাত্রি"
মেসেজটা পড়তেই আবার চোখে পানি চলে আসলো! সত্যিই খুব ভালো লাগতে লাগলো নিজের মনের ভিতর, মাথার উপর যেই বস্তা ভরা চাপ ছিলো, সেটা অনেকটাই কেটে যায়, মনে হচ্ছে আজ রাতে খুব শান্তিতে ঘুমাতে পারবো! হয়তো খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখবো, সেই সপ্নীল জগতে থাকবো আমি আর নিধি, বুনবো নিজেদের স্বপ্ন গুলো!
বছরখানিক কেটে যায় আমাদের প্রেমময়-ভালোবাসার, যেখানে সত্যি নিধিকে জড়িয়ে রেখে ছিলাম আমার হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে! আজকে কি জানি জরুরি কথা বলবে আমাকে, তাই ওর বাসার সামনে থাকতে বললো, আমি চোখে সানগ্লাস পড়ে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আপুর বাসা থেকে একটু দূরে, যাতে আপু কিংবা আপুর শ্বশুর বাড়ির লোক না দেখতে পায় আমাকে!! খানিক্ষন পর নিধিকে গেট থেকে বেরিয়ে আমার দিকে আসতে দেখলাম! আমার কাছে এসে ইশারায় বুঝিয়ে দিলে নদীর পারে যেতে! "কেমন আছো-ভালো আছো" কিছুই বললো নাহ, নিশ্চয়ই খুব সিরিয়াস কিছু হয়েছে!! আমারো আস্তে আস্তে টেনশন বাড়তে থাকলো ওর এরকম কালো করা মুখ দেখে!ঘটনা কি হতে পারে সেটা মনে মনে আন্দাজ করতে লাগলাম,
নদীর পাড়ে এসেও নিধি চুপচাপ!!মিনিট দশেক পর নিরবতা ভেঙে বললো, " কাল পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে" আমি ওর কথা শুনে একেবার থ হয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে রইলাম!! ও আমার দিকে একবার তাকিয়ে, আবার মাথা নিচু করে বললো"আমি চেষ্টা করবো সবকিছু ঠিক করার, বাসার সবাই প্রপোজালটা নিয়ে খুব এক্সাইটেড! " আবার চুপ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো"আমি এখন তোমাকে কোন শিউরিটি দিতে পারছি নাহ" এই বলে নিধি চলে গেলো, আমার বাইকের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলো, সেই সাথে দাত দিয়ে নক কামড়ানো তো আছেই! নিধি যখন কোন ডিসিশন নিতে পারে নাহ, তখন এভাবে দাত দিয়ে নক কামড়ায়! আমার দেখতে ভালোই লাগে ওকে ওই অবস্থায়! কিন্তু আজ ওর এরকম আচরন, আমাকে খুব চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে! কি করবো না করবো কিছুই ভাবতে পারছি নাহ, আমি এখন উঠে গেলে নিধিকে বাসায় পৌছে দিতে হবে, তাই ইচ্ছা করেই বসে রইলাম শুধু ওকে আরো কিছুক্ষন দেখার জন্য, জানি নাহ এটাই আমাদের শেষ দেখা হবে কি নাহ!! নাকি ও সবকিছু ঠিক ভাবে সামলে আবার ফিরে আসবে আমার কাছে,,,,,
-----------
লিখাঃ সাকিন সিকদার
১৬ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬
সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: হা হা!! লিখাটা কেমন হয়েছে?
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:১৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
ছবিতে আপনাকে ও নিধিকে মানিয়েছে বেশ।