![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(যুগের চাহিদা বোঝার ক্ষমতা সম্পন্ন চির অকৃতদার আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’ বইয়ের এটা একটা সিনোপ্সিস। কালের আয়নায় দেখতে অভ্যস্ত যারা তারা নিশ্চয় জানেন ছফার মননশিলতা,মনিশা,বুদ্ধির সমন্বয় আর বাস্তবতার নিরিখে তার সাহিত্যে বাস্তব চিন্তাধারার ছাপ।)
প্রাককথন
ধর্মপরায়ন বাবার একমাত্র বি এ পাশ করা লাজুক ছেলেটি অকর্মার মত শুধু শুধু চেয়ে চেয়েই থাকতো । বাবার হুলস্থলি কায় কারবার,মায়ের জায়নামাজে অনবরত সিজদায় পড়ে থেকে অশ্রু বিসর্জন,বয়সের কারনে একমাত্র ছোট বোনটি ছাড়া আর সবার বিয়ে হয়ে যাওয়া ,আবু নসর মোক্তার সাহেবের আইউব খান স্টাইলে মোক্তার গিরি ,পাশের বাড়ির হিন্দু লোকটির জমি জমা দখল কিছূই তার নজর এড়ায় নি। স্কুল কলেজে পড়াশুনা শেষে অসুস্থ বাবার আগের কর্মের নির্ঘাত অধঃপতন ,মোক্তার সাহেবের মসাহেবি-পরামর্শে অন্যের ভিটায় ঘুঘু চড়ানো ,কথায় কথায় মামলা ঠুকে দেয়া , বিখ্যাত মিথ্যা সাক্ষিদাতাকে কাছ থেকে বিরামহীন অবলোকন আর বোবা বউয়ের কথা বলার অপরিসীম ইচ্ছা আগ্রহ ,শেষে বাংলাদেশ নাম উচ্চারন করতে গিয়ে কন্ঠ ফেটে রক্ত গড়িয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা এসব কিছুই আমরা দেখতে পাই তার এ বইটিতে।
১)
আটটি অধ্যায়ে বিভক্ত বইটির প্রথম অংশে লেখকের কল্পিত নায়কের পারিবারিক তালুকদারি,পুর্বপুরুষের ওতিহ্য আর সম্পদ,বাবার আলিশান কল্পনা,মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে চাতকের ন্যায় খিটখিটে মেজাজে সময় পার ,বাবার যৌবনের একটি অশোভন স্বীকারোক্তি , মামলাবাজি আর আবু নসর সাহবের কুটচাল বিধৃত হয়েছে ।
২)
মামলার দিনে বাড়িতে খাওয়ার ধুম,আনন্দের বন্যা,ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মোকদ্দমার দিনের জন্য নির্বুদ্ধির ‘নিষ্পাপ’ অপেক্ষা ,সাক্ষীর আনাগোনা ,মিথ্যা সাক্ষীর রিহার্সেল ,মিথ্যা মামলায় বাবার জড়ানো ,অবশেষে তালুকের একটা অংশ বিক্রি করে মুক্তি, অপমানে আর মানুষের উৎপাতে বিতৃষ্ণা, মামলায় হেরে গিয়ে চুপচাপ বাড়ির অন্দরে অবস্থান,মোক্তার সাহেবের সুদূরপ্রসারী প্লান আভাসিত হওয়া এসব নিয়ে ২য় অংশ।
৩)
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইটির ৩য় অংশে আলোচনা করা হয়েছে যুক্তফ্রন্ট সরকারের ক্ষমতায় আসা ,বাবার নিঃশব্দ সময় কাটানো , গ্রামের মানুষের খাজনা দিতে ছ্যাঁচড়ামি,হাইকোর্টের মামলায় গরু হারা হারার পর বাবার শরীরটা ভেঙ্গে পরছে,দিনকে দিনকে দিন শুকিয়ে কাঠ হওয়া , বাড়ি থেকে উচ্ছেদের হুমকি,পুলিশ দিয়ে ঠেঙ্গানো , অসুস্থ অবস্থায় বাবার এককালের প্রধান উপদেষ্টার আগমন, সহজ ভঙ্গিতে বাবার পাশে বসে দেখা,আগের চাইতেও মাকে বেশি শ্রদ্ধা , বাবার অলক্ষ্যে পাশে ডেকে নিয়ে নারকেল গাছের নিচে মায়ের কাছে ওনার মানে শ্বশুরের বোবা মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব , বিনিময়ে বাবাকে শহুরে ডাক্তার দেখানো, ঘর দোর সংস্কার করে দেয়া ,বাড়িতে থাকার আশ্বাস ,পুকুর ঘাটের মালিকানা সবই থাকবে।আমি হা বললুম ।মা মতামত দিলেন না।বাবা আগের মত তেজি গলায় শুয়ে শুয়েই বললেন--- না না !
বিয়ের পর মোক্তার সাহেব মেয়ে দিলেন সাথে শহরে বড় চাকরি, জির্ন অট্টালিকা দখল করে আলো ঝলমল করা বাড়ি, শান বাধানো পুকুর ঘাট,ছায়া ঘেরা সুনিবিড় পরিবেশে স্ত্রী ,আর আদুরে ছোট্ট বোনটি সহ থাকা শুরু।
বোবা মেয়ের জন্য বাবার এরকম ভালবাসা কমই দেখা যায় ।একমাত্র মা মরা মেয়ের সুখের জন্য কিনা করেছেন দেশদ্রোহী আবু নসর। মোক্তারি বুদ্ধি দিয়ে জামাইকে দিয়েছেন সুখের নহর। ভালবাসার নীড়ে তার সব ই আছে । নেই শুধু বউয়ের কথা বলার ক্ষমতা ।
অফিসের স্টাফদের বউ নিয়ে মুখরোচক আলোচনা ,কথার ভঙ্গিমা,মাধুরীমাখা সোহাগের ডাক , ঢলাঢলির গল্প ,সুরের মুর্ছনায় আবেশিত মানুষের এসব কথা শুনে বউয়ের উপর দিন দিন রাগ বেড়ে যাচ্ছে । আবার করারও কিছু নেই ।যদি শ্বশুর মশাই মেয়েকে নিয়ে সব কিছু থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে যাও-- এখন যেথায় খুশি।
ছোট বোনের সাথে দূরত কমিয়ে আনা , আস্তে আস্তে সহজ হয়ে গিয়ে দুজনে পারিবারিক হারানো ঐতিহ্যের গল্প করতে করতে দিন কাটছিল । কারন এসময় একদিকে ছিল বিষণ্ণতা আরেকদিকে বউয়ের গল্প করতে না পারা।
৪)
৪র্থ ভাগে মেয়ে দেয়ার সাথে সাথে যে আরও কিছু দিয়েছেন মোক্তার সাহেব সে কথা নির্দিধায় স্বীকার করেছেন গল্পের নায়ক। বোবা মেয়ে বিয়ে করার কারনে কলিগদের টিটকারি , নৃপেনের অপরিমিত যৌন সম্ভোগের ফলে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ , নায়কের চিরকালীন ইচ্ছাসক্তিহিনতা , অফিস থেকে বাসায় ফিরলেই বোবা বউয়ের আগ্রহ নিয়ে ছুটে এসে ভালবাসার নিখাদতা , তার কথা বলার সীমাহীন প্রচেস্টা নিয়ে বিধৃত হয়েছে ।
৫)
পরের অংশে স্ত্রীর গানের সাথে সুর মেলাতে গিয়ে নির্বাক প্রচেষ্টা ,সুরের মোহনীয় ঝংকারের প্রতি তার সীমাহীন আবেগ,বেহালা হাঁতে বাজানোর নিস্ফল প্রয়াস নিয়ে লেখক কথা বলেছেন ।
৬)
তারপর......
দুই মাসের ছুটি নিয়ে টানা বাসায় অবস্থান , সোহাগীর চুলে ফুল গোজার চেস্টা,আয়নায় অনবরত তাকিয়ে থেকে সোন্দরজের তিয়াস মেটানো , কোমরে শক্ত করে শাড়ি বাঁধা, রাতে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গিনীকে বিছানায় না পাওয়া, খুজতে খুজতে বোনের হারমোনিয়াম কোলে নিয়ে বসে থাকা এসব কিছুর প্রতি ভাললাগা, ভালবাসার একটা নজির লেখক তুলে ধরেছেন ।
মাঝরাতে ঘুম বাদ দিয়ে নারিকেলের গাছের নিচে বসে হাওয়া খেতে যাওয়া বউকে দেখতে পাওয়া যায় পুকুর ঘাটের টঙয়ে ।
৭)
দ্রুত পরিবর্তনের কালে শেখ মুজিব যখন জেলে, আগরতলা মামলার বিচার চলছে, উত্তপ্ত সময়ে আইয়ুব খানের দালাল শ্বশুর কে নিয়ে চিন্তার রেখাপাত পরিলক্ষিত হয় ,চিন্তার সায়রে হারানোর ভয়, লাল লাল ছোপের পোসটার, বাসায় বসে বসে ছায়া কুঞ্জের গহিনে বোবার হাতছানিতে চিন্তা মগ্ন নায়কের অনুভুতিও লেখক তুলে ধরেছেন ।
৮)
মিছিল বিরোধী লোকের পাল্লায় মিছিল প্রিয় বউ যেন ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’ । মিছিলে উত্তালের এই সময়টাতে উচ্চকিত আওাজ শুনতে পেলেই বউ গিয়ে দাঁড়াত জানালাটায় । বারংবার নিশেধ করেও মা মরা মেয়েটিকে থামানো না যাওয়ায় দিনকে দিন মেজাজ কেন যেন বিগড়ে যাবার উপক্রম। তাছাড়া আসাদের শহিদের দশ বার দিন পর থেকে আন্দোলন ক্রমেই সহিংসতায় রুপ নিচ্ছিল। আবার মিছিল কারিদের সউন্দর্জ এঁর কথা ও উঠে এসেছে।
সর্বসেশ মিছিলের দিকে তাকিয়ে থাকা সে যেন তার অঙ্গ ভঙ্গি দিয়ে মিছিলে যোগদান করছিল। মিছিলের সুরে সুরে সেও যেন কি বলতে চাচ্ছিল। উত্তাল বাংলাদেশের উন্নমত্ত জনতার মিছিলের সমর্থনে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে গ্রিল ধরে থেকে নুড়ি পাথরের মত গোলগাল শব্দ করলো । গোঁ গোঁ করতে করতে কি যেন বলতে চাচ্ছে । মিছিল কারিদের সাথে সেও মনে হয় ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারন করতে চাচ্ছিল ।
আচানক লাফিয়ে উঠে স্পষ্ট ‘বাংলা’ শব্দ উচ্চারন করলো। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরলে সাথে সাথেই সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলে।
তখন নায়ক অস্ফুট কণ্ঠে নিজেকে প্রশ্ন করে “কোন রক্ত বশি লাল? শহিদ আসাদের না তার বোবা বউয়ের ?”
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:৪৬
মুসাফির মাহফুজ বলেছেন: অস্বাধারন ।