নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গাঙচিল

আমার লেখালেখি এবং চিন্তাভাবনা নিয়েই আমার ব্লগ।

সালেহ মাহমুদ

আমি একজন কথাশিল্পী। অনেকটা শখের বশেই লিখি। প্রধানত ছোটগল্প-ই লিখি। মাঝে মাঝে দু'একটি কবিতাও লিখে ফেলি কেমন করে যেন। আমার প্রথম গল্পগ্রন্থের পান্ডুলিপি'র নাম দিয়েছি "কয়েকটি কুকুর অথবা মানুষ"। গল্পগ্রন্থটি প্রকাশের পথে। এই গ্রন্থের সবগুলো গল্পই আমার ছোটগল্প বিভাগে পড়া যাবে।

সালেহ মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শৈশব এত ছোট কেন?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১১

আজ ছুটির দিন। কাল থেকে ক্রমাগত ঝরঝর বৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল বুঝি বর্ষা ফিরে এসেছে আবার। কখনো টিপটিপ কখনো ঝরো ঝরো কখনো উদ্দাম উচ্ছ্বাসে বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। দুপুরে আচ্ছা করে বৃষ্টিতে ভিজলাম ছাদে গিয়ে। শরীর কাঁপাকাঁপি না করা পর্যন্ত ভিজলাম। প্রশান্তি লাভ করলাম। জ্বরের ভয় যে নেই তা নয়। কিন্তু মন যে মানে না! বৃষ্টি এলে আমার গা ভেজাতে হবেই। না হলে কি যেন অপূর্ণতা থেকে যায়। সেই শৈশব থেকেই আমার এই অভ্যাস। এখন অনেকটা বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। মনে করুন, অফিস থেকে ফিরছি। বৃষ্টি শুরু হলো। আমি বাস থেকে নামার আগেই মানিব্যাগের কোণে সংরক্ষিত বড় মাপের পলিথিনের ভিতর মানিব্যাগ, মোবাইল, হাতের-পকেটের কাগজপত্র, কোমরের বেল্ট ঢুকিয়ে নেই। তারপর বাস থেকে নেমে মহানন্দে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরি। আমার স্ত্রী যথারীতি হেসে আমার পলিথিনের প্যাকেটটা আগে ধরে তারপর লুঙ্গি বাড়িয়ে দেয়।
তারপরও আমার আজ মন ভালো নেই। আমার একমাত্র ছেলে আর ছোট্ট মেয়েটা কাল থেকে ভীষণ অসুস্থ। জ্বর। সম্ভবত ঋতুর পালাবদলের জ্বর। বিষয় সেটা নয়। বিষয় হলো ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছিল। বৃষ্টিতে ভিজলে আমার মেয়েটা উদ্দাম হয়ে ওঠে। ওর উচ্ছ্বাস দেখে ভীষণ ভালো লাগে। আমার সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। শৈশবে আমিও বৃষ্টিতে অমন ভিজতাম। ভিজে ভিজে পিছল খেলতাম। এক পিছলে কে কতদূর যেতে পারে সেই প্রতিযোগিতাই চলতো আমার বন্ধুদের সাথে। তারপর গা কাদা মাখামাখি হলে আমাদের সে কি উচ্ছ্বাস! বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই গায়ের ময়লা পরিষ্কার করতাম। তারপর দৌড়ে গিয়ে লাফ দিয়ে নামতাম পুকুরে। আহ্ সেই শৈশব আর ফিরে পাবো না! ফিরে পাবো না সেই সোনালী দিনগুলো। আমাদের শিশুরা তো কাদা কি তা-ই জানে না। তারা ময়লা-আবর্জনা আর ইট-কংক্রিট দেখে দেখে বড় হচ্ছে। পুকুর দেখলেই আনন্দ করে, কিন্তু পানিতে নামতে ভয়! যদি ডুবে যায়! কত দুর্ভাগ্য আমাদের সন্তানেরা- তারা সাঁতার শেখারও সুযোগ পায় না! হায়রে শহর, হায়রে আধুনিক সভ্যতা! এই শহুরে ফার্মের বাচ্চারা একদিন প্রকৃতিকে ভুলে যাবে নিঃসন্দেহে।
একটু আগে ফেসবুক খুলে দেখি আমার বড় মেয়েটা বেলকনির গ্রিলের বৃষ্টির ফোঁটার ছবি তুলে দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে- এর চেয়ে ভালোভাবে শহরে বৃষ্টি উপভোগ করা যায় না।

ওর পোস্টটা আমাকে একটা ধাক্কা দিল। আসলেও তো তাই। শহরের মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না, বৃষ্টিতে হাঁটতে পারে না, পুকুরে নেমে গোসল করতে পারে না। বৃষ্টি মানেই শহুরে মেয়েদের জন্য এক বিড়ম্বনা। অথচ আমার শৈশবে আমার সমবয়সী মেয়েরাও আমাদের সাথে বৃষ্টিতে কাকভেজা হতো। পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়তো। পুকুরের এপাড় ওপাড় সাঁতার দিতো। সে সময় আমরা টিভি সিরিয়াল দেখতাম six million dollar man আর the bionic woman

তো হলো কি আমাদের সাথে দৌড়-ঝাঁপ করা একটা মেয়েকে বায়োনিক ওমেন-এর নায়িকার মতো মনে হতো। কতোবার ভেবেছি ওই মেয়েটাকে কথাটা বলবো। কিন্তু আর কোনদিন বলা হয় নি। এমন আরো কত কত মজার কথা মনে পড়ে যায় আমার মেয়ের দীর্ঘশ্বাস থেকে। এখন আফসোস হয়- শৈশব এত ছোট কেন?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৩৬

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আসলেই...শৈশব কেন এখন তো জীবনটাই খুব ছোট হয়ে গেল। কত দ্রুত জীবনের শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি...

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩

সালেহ মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ। খুশি হলাম আবেগের মিলের জন্য...

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

সুমন কর বলেছেন: আসলেই, এখন আফসোস হয়- শৈশব এত ছোট কেন?

লেখা ভালো লাগল। +।

২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪

সালেহ মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন কর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.