নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অামি শাহজাহান অালী\nসবে মাত্র এমএসএস অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করলাম। ব্যাচেলার আছি। বর্তমানে ঢাকার একটি প্রাইেভট স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছি। গল্প, কবিতা, সংবাদপত্র পড়তে ভালবাসি।

শাহজাহান আলী

খুব খারাপ মানুষ না

শাহজাহান আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চার বন্ধুর গল্প ( শেষ পর্ব)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩

চার বন্ধুর একজন রাজপুত্র, একজন ব্যবসায়ীর ছেলে, একজন সুদর্শন যুবক আর অন্যজন ছিল সুঠাম দেহী কৃষকের ছেলে। রাজপুত্রের পালা এলো। রাজপুত্র ঘটনাচক্রে ওই দেশের বাদশাহ নির্বাচিত হলো। তকদিরে বিশ্বাসী তরুণ বাদশাহ সিংহাসনে বসার পর রাজদরবারের সভাসদদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেয়। বক্তৃতা শুনে এক বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়ে বলে আমার একটা কাহিনী মনে পড়ে গেল।
বলছিলাম এই চার যুবকই ছিল দরিদ্র। তাদের কারও কাছেই পরনের জামা-কাপড় ছাড়া আর কিছুই ছিল না। রুটি-রুজি বা কামাই করার জন্য তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। যাই হোক পথে নিজেদের মাঝে পরিচয় হবার পর তারা যখন শহরে গিয়ে পৌঁছলো, শহরের পাশেই একটা জায়গা তারা বসবাস করার জন্য নির্বাচন করলো। উপার্জনের পথ নিয়ে যে যেরকম বর্ণনা দিয়েছিল এক এক করে তারা অনুক্রমিকভাবে নিজেদের বক্তব্য প্রমাণ করলো। চতুর্থদিন ছিল শাহজাদার পালা। শাহজাদা সেদিন শহরে যেতেই দেখে ওই শহরের বাদশা মারা গেছে এবং লোকজন বাদশার লাশ নিয়ে যাচ্ছে দাফন করার জন্য। শাহজাদা ওই দাফনের মিছিলে যায় এবং গোয়েন্দা হিসেবে ধরা পড়ে কারাবন্দী হয়।

ঘটনাক্রমে বাদশার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচন নিয়ে গোলমাল দেখা দেয় এবং সেখানে ডাক পড়ে গোয়েন্দা হিসেবে আটকে পড়া শাহজাদার। শাহজাদা সেখানে গিয়ে শাহজাদা তার প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরে এবং এই শহরে আসার কারণ সবার সামনে তুলে ধরে। বাদশার ছেলে তার ভাইয়ের ষড়যন্ত্রে দেশ ছেড়ে আসায় মুরব্বিদের মনে সহানুভূতি জাগে এবং সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় তাকেই বাদশাহ হিসেবে নির্বাচন করবে। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়, শাহজাদাকেই বাদশা হিসেবে মনোনীত করে সবাই। তাদের যুক্তি ছিল শাহজাদা যেহেতু রাজবংশের ছেলে, কীভাবে দেশ পরিচালনা করা হয় সে ভালো করে জানে কেননা কাছে থেকেই সেসব দেখেছে সে।

বাদশাহ হবার পা তাকে সাদা হাতীর পিঠে চড়িয়ে শহর ঘুরানোর সময় শহরের ওই দরোজার সামনে আসতেই বাদশাহ বললো: এই দরোজায় লিখে রাখো: ‘জ্ঞান-বুদ্ধি, চেষ্টা-প্রচেষ্টা এবং সৌন্দর্য তখনই ফল বয়ে আনে আল্লাহর ইচ্ছা অর্থাৎ তাঁর অনুগ্রহ যখন তার সাথে থাকে। আমি যে একদিনেই বাদশাহ হয়ে গেলাম তা-ই আমার এ বক্তব্যের পক্ষে বাস্তব প্রমাণ’। বাদশার আদেশে তার বন্ধুদেরকে প্রাসাদে নিয়ে আসা হয় এবং একেকজনকে একেক পদে নিয়োগ দেয়। এরপর গণ্যমান্য এবং জ্ঞানীগুণী লোকদের সমাবেশে তার এবং তার বন্ধুদের গল্প বলেন। সবশেষে বলেন যে যত বুদ্ধিমান আর জ্ঞানীই হোক না কেন আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কারও পক্ষেই কোনো পদে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়। বাদশার কথা শেষে এক বৃদ্ধ উঠে দাঁড়িয়ে বলে: সত্যিই বলেছো, আল্লাহর ইচ্ছা না থাকলে তুমি কোনোভাবেই এই বাদশাহীর আসনে বসতে পারতে না। একটা কাহিনী মনে পড়ে গেল, অনুমতি দিলে বলতে চাচ্ছি।

সবার মাঝ থেকে বৃদ্ধ লোকটি উঠে দাঁড়িয়ে বললো: বহু বছর আগে যখন আমি তরুণ ছিলাম, তখন এক মহান ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। তারুণ্যের সময়টা কেমন যেন বাতাসের মতো পেরিয়ে গেল আর আমি আস্তে আস্তে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম যে এই পৃথিবীটা নশ্বর এবং একেবারেই মূল্যহীন। একরাতে আমি খুব চিন্তা করলাম এবং নিজেকে নিজে সতর্ক করলাম এই বলে যে: ‘তুমি এমন এক পৃথিবীর প্রেমে পড়েছো, এমন পার্থিব জগত চিন্তায় পড়েছো যে জগত থেকে হাজার হাজার বাদশাহ চলে গেছে। সুতরাং সময় থাকতে সচেতন হও, সময় খুবই কম, জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত’। সিদ্ধান্ত নিয়েই বাদশার খেদমত ছেড়ে দিয়ে ইবাদাতে মশগুল হলাম।

একদিন বাজারে ঘুরাফেরা করছিলাম। এক শিকারিকে দেখলাম তার খাঁচায় দুটি পাখি। সেগুলো বিক্রি করার জন্য ক্রেতা খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমার মন চাচ্ছিলো পাখি দুটোকে মুক্ত করে দিতে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম পাখি দুটোর দাম কতো? শিকারি বললো: ‘দুই দেরহাম’। আমার কাছে অবশ্য দুই দেরহামের বেশি ছিলো না। মনে মনে ভাবছিলাম দুটো দেরহামই যদি শিকারিকে দিয়ে দেই তাহলে তো কিছুই থাকবে না পকেটে। কী করা যায়, ভাবছিলাম। দোদুল্যমান হয়ে পড়লাম। একবার ভাবছি পাখি কেনার চিন্তা বাদ দেই। আবার ভাবি দুই দেরহামই তো, কিনেই ফেলি পাখি দুটোকে। আল্লাহ তো অনেক বড়ো, অনেক দয়ালু। রুজির মালিক তো তিনিই। পাখি দুটোর জন্য মনটা পুড়ছিল। ওই পোড়া মনটাকে সমুদ্র বিশালতায় ছেড়ে দিলাম। কিনেই ফেললাম পাখি দুটোকে।

খাঁচার দরোজাটা খুলতে চাইলাম পাখিদের মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। আবার মনে ভয় হচ্ছিল কেউ পাখিগুলোকে আবার বন্দি করে না বসে। তাই চলে গেলাম শহরের বাইরে। সবুজ শ্যামল এক প্রান্তরে গিয়ে তাদের ছেড়ে দিলাম। পাখি দুটো মুক্তি পেয়ে মনের আনন্দে ডালে বসে উড়ে উড়ে গান গাচ্ছিলো। আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পাখিরা বললো: আমাদের জন্য অনেক বড় কাজ করেছো তুমি। ভেবো না কেবল দুই দেরহাম দিয়ে আমাদের কিনেছো। বরং তুমি দুটি পাখিকে মুক্তি দিয়েছো! স্বাধীন জীবন দিয়েছো। আমরা যদি তোমার পায়ে হাজারটা গুপ্তধনও রাখি তবু তোমার উপকারের কৃতজ্ঞতা আদায় করা হবে না। এই মুহূর্তে আমি ওই গাছের নীচে একটা গুপ্তধন দেখতে পাচ্ছি। মাটি খুঁড়ে ওই গুপ্তধন তুমি নিয়ে নাও!

পাখিদের কথা শুনে আমি তো থ’ বনে গেলাম। জিজ্ঞেস তোমরা গুপ্তধন দেখতে পাও, তাহলে শিকারির পাতা ফাঁদ কেন দেখতে পেলে না, কেন তার জালে আটকা পড়লে!

পাখিদের একটি বললো: ‘আল্লাহর ইচ্ছে ছিল এরকম। তিনি মহান। তিনি আমাদের ফাঁদে ফেলে এই গুপ্তধন দেখালেন। এসবই তাঁর কৌশল, সবই তাঁর ইনসাফ’।

কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়লাম। বিশাল এক গুপ্তধন ভাণ্ডার পেলাম। পার্থিব জগতের সম্পদের আর কোনো প্রয়োজন রইলো না। কিন্তু এসব সম্পদ দিয়ে নিজেকে আবারও দূষিত করতে চাইলাম না। যেখানে ওই ভাণ্ডারটি ছিল সেখানেই পুঁতে রাখলাম। বাদশাহ অনুমতি দিলে ওই ভাণ্ডারটি নিয়ে আসতে পারি’।

তরুণ বাদশা বললেন: ‘না, ওই গুপ্তধন তোমারই প্রাপ্য। তুমি এ কাজ করে বহু কল্যাণের বীজ বুনেছো। তুমি যদি গুপ্তধন ভাণ্ডার সত্যিই না চাও, তাহলে নিয়ে আসো, গরিব মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দাও’।

এভাবেই রাস্তায় পরিচিত হওয়া চার বন্ধুর কাহিনী শেষ হয়। তরুণ বাদশার কথা শুনে সবাই মেনে নেয় যে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে অর্থাৎ তকদিরের বাইরে কোনো কিছু হতে পারে না। চার বন্ধুই তার প্রমাণ। তাদের জীবনের কোনো লক্ষ্য ছিল না। অথচ এখন তারা সবাই ভালো অবস্থানে রয়েছে। তাদের ভাগ্য খুলে গেছে। শেষ পর্যন্ত তারা মেনে নেয় যে আল্লাহর চাওয়াই সবচেয়ে বড়ো চাওয়া। প্রত্যেকেরই কপাল বা ভাগ্য তাঁরই হাতে।#

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪

ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: ভাল. :-P :D :D :D :D :D

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৬

শাহজাহান আলী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.