নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জমে থাকা কথাগুলো থরে থরে সাজাতে চাই ব্লগে

দূর পাহাড়ে

দূর পাহাড়ে › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাশ্মীরের পাহাড়ে

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২


দিগন্তের শেষ মনে হচ্ছে। ওইতো পাহাড়টার উপরে আকাশ ঢলে পড়েছে। গিরিপথের দুই পাশে আপেলের গাছ। গাছগুলোতে ফল কেবল ছোট ছোট ও সবুজ। মনে হচ্ছে হাত বাড়িয়ে ফলগুলো ছুঁয়ে দিই। পাহাড়ে গাড়িটা চলছে ধীর গতিতে। সমতল রাস্তায় পাহাড়ি গাড়িগুলো দ্রুত চলে। ড্রাইভার ত্রিরভু ভাল গাড়ি চালাতে পারে। বললাম একটু আস্তে আস্তে চালাও। দুপাশের দৃশ্য দেখবো। কাশ্মিরের পাহাড়গুলো যেন স্বর্গ। আগেও কয়েকবার এসেছি কিন্তু এবারের ভ্রমণটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে। কারণ পারিবারিক ঝামেলাটা আর নেই। সঙ্গে আমার স্ত্রী। এখন ও অনেক সুস্থ। পাহাড়ের গলিতে বাতাস যেন ঘোড়ার শক্তি ফিরে পেয়েছে। শনশন শব্দে চারদিক খলখল করে উঠছে। ওপাশে তাকাতেই দেখা গেল পাহাড়ের ঢালে বিশাল এলাকাজুড়ে আনারস বাগান। পাহাড়ি কাশ্মিরি লোকজন অত্যন্ত ভদ্র। মাঝেমধ্যে পাহাড়ি মাটির ছোঁয়া পেতে গাড়ি থেকে নেমে শীতল বাতাসে গা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। রমার শীত লাগতে শুরু করেছে। বাতাসের তীব্রতায় ও শরীর জুড়ে কাপড় জড়িয়ে নিয়েছে। দূর থেকে কিসের একটা সুর শুনতে পাচ্ছিলাম। খেয়াল করে শুনে বুঝতে পারলাম আযানের শব্দ। ওপাশে খোলা আকাশে মেঘ নেমে এসেছে। আমরা ঢালটা পেরোলেই মেঘের রাজ্যে ঢুকে যাব। কারণ মাথার ওপরেই মেঘ। গন্তব্য পাহাড় চূড়া। চূড়ার মাথায় ছোট্ট শহর মিশা। সেখান থেকে মেঘ থাকবে দুই হাজার ফুট নিচে। ভাবতেই ভাল লাগছে। মেঘরাজ্য পেরিয়ে যাচ্ছি আমরা।
ফিজি সরকারের বহুমুখি প্রকল্প দ্য নেশনের কাজে আমরা কাশ্মিরে এসেছি। লম্বা ছুটি থাকায় রমা আমার সাথি হয়েছে। ও কলেজে চাকরি করে। ওর ছাত্রছাত্রীদের কাছে ও খুবই বিখ্যাত। এভিয়েশনের থিওরি পড়াতে দারুন উস্তাদ রমা। তবে কাশ্মিরে পাহাড়ি পথের থিওরি বুঝতে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে দুটি ব্যাগ। একটি ছোট যেটি রমার কাঁধে ঝুলছে প্রায় ভারহীন। শুধু ল্যাপটপ ছাড়া ওতে কিছুই নেই। আর রাতের জন্য দুটি নাইট গগলস নিয়ে এসেছে সে। রাতকে সে খুবই ভয় পায়।
আরও দুই কিলোমিটার পথ উপরে উঠতে হবে মিশায় পৌঁছাতে। গাড়ি চলছে আরও ধীর গতিতে। কারণ এ পথটুকু চরম রিসকি। মেঘের শিশির রাস্তা ভিজিয়ে দিয়েছে। এজন্য রাস্তার বাঁকগুলো মৃতু্ ফাঁদ হয়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে থেমেই যাচ্ছে গাড়ি। রমার ভয় করতে শুরু করেছে। ওর বুক দুরু দুরু কাঁপছে। আমি অভয় দিলাম। বেচারি একটু একটু সাহস পেতে শুরু করেছে। ড্রাইভারের দক্ষতা উপলব্ধি করতে লাগলাম। দক্ষতার সঙ্গে বাঁকগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে সে। দূর থেকে মিশার ছোট ছোট বাড়িগুলো দেখা যাচ্ছে। আলোয় ঝলমল চারদিক। দূরে আকাশ আরও উপরে। ধোঁয়াসা মনে হচ্ছে। তবে বাতাস ঠাণ্ডা আর ফ্রেস। দু'জনেই শরীরে কাপড় জড়িয়ে নিলাম। বামপাশে জানালার কাঁচে ফোটা ফোটা শিশিরের পানি জমেছে। মনে পড়ে গেল জীবনানন্দের কথা। সন্ধ্যা আসে শিশিরের শব্দের মতো- কবিতার বিখ্যাত লাইন। রমা আমার শরীরে ঢলে পড়েছে। ঘুম এসে গেছে তার। চারদিন নিথর নীরব। পাহাড়ি গাড়ি চলাচল প্রায় থেমে গেছে। শা শা শব্দে আমাদের গাড়ি উঠতে শুরু করেছে মিশার শেষ ধাপে। একটু পরেই সমতল শুরু। তবে এবড়ো থেবড়ো পথ। গাড়ি মুখ সমান্তরালে নেমেছে। নিশিদার বাসায় উঠে পড়ব একটু পরেই। মিশা শহরে দীর্ঘদিন আছে ওরা। কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রী নিশিদা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.