নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জমে থাকা কথাগুলো থরে থরে সাজাতে চাই ব্লগে

দূর পাহাড়ে

দূর পাহাড়ে › বিস্তারিত পোস্টঃ

দোষ শুধু বদরুলের, ছাত্রলীগের নয়! ## পড়ুন আসিফ নজরুলের লেখাটি

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:১২


আমার স্ত্রী শীলা আহমেদকে চেনেন অনেকে। আগুনের পরশমণি আর আজ রবিবার-এর সময় সে ছিল মিষ্টি এক কিশোরী। এখন সে মধ্য তিরিশের নারী। কিছু জিনিস তবু বদলায়নি তার। এখনো সে ভূত, অন্ধকার আর পোকামাকড় ভয় পায়। রক্তপাত, নৃশংসতা বা কদর্যতার কথা শুনতে পারে না। বানানো গল্পের অ্যাকশন ছবি, তাও সহ্য করতে পারে না।
এমন নরম হৃদয়ের মেয়েটি সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরে গম্ভীর হয়ে। ইউএসএইডর একটি প্রকল্পের অর্থনীতিবিদ হিসেবে সে কাজ করছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু অফিসের গাম্ভীর্য কখনো বাড়িতে বয়ে নিয়ে আসে না। আজ সে গম্ভীর কেন?
কারণ, আজ একজন অমানুষের নৃশংসতার কথা শুনে এসেছে। রাস্তার পাগলা কুকুরকে যেভাবে পিটিয়ে মারে মানুষ, সেই অমানুষ তারচেয়েও শতগুণ নৃশংসতায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে এক তরুণীকে। শীলা আমাকে তার ফালি ফালি হয়ে যাওয়া মাথার ছবিটির কথা বলে! কোপ খেয়ে কুঁকড়ে গোল হয়ে বাঁচার চেষ্টার কথা বলে। রক্তে ভেসে যাওয়া মুখের কথা বলে।
অমানুষটাকে চিনি না আমি, সে আমার ছাত্র না, এমনকি আমার বিশ্ববিদ্যালয়েরও কেউ না। কিন্তু তবু কেন মনে হয়, কিছু কি করার ছিল আমার, কিছু কি করার আছে। আমি শীলাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যই হয়তো বলি: ভালো হয়েছে তাকে পিটিয়েছে মানুষ!
আমার কথা তেমন স্পর্শ করে না তাকে। সে বরং স্থিরকণ্ঠে বলে: তাকে সেখানেই মেরে ফেলা উচিত ছিল!
আমি চমকে যাই। বিশ বছর ধরে চিনি তাকে। শান্ত জলাশয়ের মতো হৃদয় তার। কতটা আক্ষেপে, কী যন্ত্রণায় তার মতো একটা মেয়ে বলতে পারে এমন কঠিন কথা!
হায় রে বদরুল! সে কি শুধু খাদিজার মাথা কুপিয়েছে! সারা দেশে কত মানুষের মস্তিষ্ক আর হৃদয় কুপিয়ে ফালা ফালা করেছে সে! কত মানুষের বুকে জ্বালিয়েছে অক্ষম আগুনের শিখা! এই বদরুলের কি বিচার হবে? তার বিচার কি সম্ভব এই নশ্বর ভুবনে? ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াড কিছুই কি হতে পারে তার উপযুক্ত শাস্তি!
মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি আছে, ফেসবুকে অভিযোগ আর অভিশাপ আছে, শিয়ালের চেয়ে শতগুণ ধূর্ত হিসাব-নিকাশ আছে। বদরুলের তাই কিছু শাস্তি হবে হয়তো। কিন্তু বদরুলের কারিগরদের? তাদের কি শাস্তি হবে কোনো? বদরুলদের তৈরির কারখানা কি বন্ধ হবে কখনো?

২.
আমরা ভাবতে চাই না কিছু জিনিস। কিন্তু এটি তো সত্যি বদরুল পশু হয়ে জন্ম নেয়নি। তার বাবা-মা হাতে চাপাতি তুলে নেওয়ার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়নি। যেকোনো বদরুলের বাবা-মা সন্তানকে কষ্ট করে শিক্ষিত করে। আশা করে, সম্মান আর স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন হবে তাদের। চাপাতি বদরুলকে তাহলে জন্ম দিল কে?
আমরা চট করে ছাত্রলীগের দোষ খুঁজি। বিএনপি আমলে চাপাতি বা বন্দুকের দোষ দিই ছাত্রদলকে। তারা এক পক্ষ অন্য পক্ষকে মেরে ফেলে, হিসাব না মিললে নিজেরা নিজেদের মারে। রক্তে খুনের নেশা গাঢ় হয়ে উঠলে একসময় চাপাতি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে খাদিজার মতো অন্য কারও ওপর। ক্ষমতাকালে তাদের আছে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের তকমা। এই তকমার জোরে সাহস বাড়ে তাদের, এর জোরে বেঁচে যায় তারা। ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের দোষ তো তাই দেবই আমরা।
কিন্তু দোষ কি শুধু বদরুল বা বদরুলের ছাত্রসংগঠনের? দোষ কি ‘চাপাতি বদরুল’দের মাতৃজঠরের নয়? যেখানে সে জন্মে আর
ক্রমেই আরও দানবীয় হয়ে ওঠে, সেই কারখানার নয়?
বদরুলের জন্ম যে কারখানায় তার নাম রাজনীতি। এই রাজনীতি সিপিবি বা বাম মোর্চার রাজনীতি নয়। এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপির নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিও নয়। এই রাজনীতি নোংরা কৌশলের রাজনীতি।

৩.
ক্ষমতার রাজনীতির কুশীলবেরা জানে র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা, বিজিবি দিয়েও সব সময় টিকে থাকা যায় না ক্ষমতায়। কখন মানুষের বিদ্রোহ হয়। সবচেয়ে আগে বিদ্রোহ করে তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ। একবার জেগে উঠতে পারলে বন্দুক, ক্রসফায়ার, গুম, হুমকি কিছুই দমাতে পারে না এদের। ক্ষমতা পাকা রাখতে আর ক্ষমতা বজায় রাখতে তাই প্রথমেই গলা টিপে ধরতে হয় এদের। হুমকিটা বিশ্বাসযোগ্য রাখতে মাঝে মাঝে দু-একটা খুন-জখম করতে হয়।
শিক্ষাঙ্গনে ঢুকে পুলিশ গোয়েন্দার পক্ষে খুন-জখম করা সম্ভব না। সম্ভব সাধারণ ছাত্রসমাজেরই কিছু সার্বক্ষণিক সহপাঠীর পক্ষে। সম্ভব ছাত্র নামধারী কিছু মার্সেনারি বা ভাড়াটে সৈনিক বা লাঠিয়ালের পক্ষে। বদরুলদের জন্ম এই কুৎসিত প্রয়োজন থেকেই। একটু টাকা, একটু আরাম, একটু ভোগবিলাসের লোভে এরা হয়ে ওঠে ক্ষমতার লাঠিয়াল।
এরা জানে শিক্ষককে অপদস্থ করলে, সহপাঠীর ওপর চড়াও হলে, প্রতিপক্ষকে মেরে ফেললে সমস্যা নেই। এরা জানে ছাত্রাবাসে আসন করায়ত্ত করে রাখলে, টেন্ডারে বখরা নিলে, ব্যবসায় জোর করে চাঁদা তুললেও কোনো সমস্যা নেই। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার কারও সাহস নেই, মামলা হলে জামিন ঠেকানোর কেউ নেই, জামিন হলে সাক্ষী দেওয়ার লোক নেই, মামলার পাহাড় জমে গেলে তাকে ঠেকানোর আর কেউ নেই! যত সে বেপরোয়া লাঠিয়াল, ততই তার কদর, ততই সে বড় ছাত্রনেতা!
কিন্তু তাকে নেতা বানায় ছাত্ররা নয়, ছাত্রলীগও নয়। বানায় সে বা ছাত্রলীগ, যাদের লাঠিয়াল সেই কারিগরেরাই। এই কারিগরেরাই সাজায় পুলিশ-গোয়েন্দা, আইন-আদালত। এদের প্রশ্রয়েই দিনে দিনে বেসামাল আর বেপরোয়া হয়ে ওঠে এদের লাঠিয়াল আর পাহারাদার। একদিন এদের চোখ পড়ে অন্যের জমি, অন্যের টাকা, অন্য নারীর দিকে। কখনো বঞ্চিত হলে এদের কোপ নেমে আসে খাদিজাদের ওপর।
এই গল্পের শেষ নেই। কার বিচার চাইব আমরা? সবচেয়ে সহজ শুধু বদরুলদের বিচার চাওয়া। বদরুলের কপাল খারাপ তার পাপের অকাট্য স্থিরচিত্র আর ভিডিও আছে, হাতেনাতে ধরা পড়েছে সে। কয়েক বছর আগে খাদিজাকেই উত্ত্যক্ত করতে গিয়ে সে পিটুনি খেয়েছিল আশপাশের মানুষের কাছে। সে উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে জামায়াত-শিবির নাম দিয়ে। তার গল্পে বিভোর হয়ে কলাম লেখা হয়েছে, তার পক্ষে মিছিল হয়েছে, তাকে আরও বড় নেতা বানানো হয়েছে।
এবার তার কপাল সত্যিই পুড়েছে। মোবাইল ফোনে তার উন্মত্ততার ছবি না তোলা থাকলে বলা যেত খাদিজাকে আসলে জামায়াত-শিবির মেরেছে। জনতার হাতে ধরা না পড়লে সে পালিয়ে যেতে পারত অন্য বহু খুনির মতো। এখন এসব আর সম্ভব নয়।
তার এখন কিছু করার নেই। বিশ্বজিতের খুনিদের মতো শাস্তির রায় পেতে হবে তাকে। বিশ্বজিতের খুনিদের হুকুমদাতা (যারা সেদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে রাজপথে নেমেছিল আন্দোলন প্রতিরোধ করতে) বা তাদের নেপথ্য নির্মাতাদের কোনো সমস্যা হয়নি তাতে। তাঁরা আইনের শাসন আর দলনিরপেক্ষ বিচার করার একটা উদাহরণ পেয়েই নানাভাবে গর্ব করেছেন। বদরুলের ক্ষেত্রেও তাই হয়তো হবে।
৪.
আমরা তবু বদরুলের বিচার চাই। দ্রুত, কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেটা হয়তো হবে। হয়তো ছাত্রলীগও আরও কিছু গালমন্দ শুনবে। কিন্তু এটুকুই শুধু হবে আমাদের সান্ত্বনা। কারণ আমরা জানি বদরুলের মতো পশুদের তৈরির কারখানা থেকে যাবে এই পোড়া দেশে। সেই কারখানার মালিকদের বন্দনাও চলতে থাকবে। নতুন বদরুল তৈরি হবে।
আমরা বহু খাদিজা, বহু সনিকে রক্ষা করতে পারিনি। পারিনি আবুবকর বা জুবায়েরদের রক্ষা করতেও। দানব বানানোর কারখানা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতেও পারব না।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:



আসিফ নজরুল মোটামুটি শিবির-মার্কা ইডিয়ট, সে আবার কি বলবে?

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৩

দূর পাহাড়ে বলেছেন: সেটাই.......নিরপেক্ষ কথা বলাই উত্তম।

২| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

মার্কো পোলো বলেছেন:
খুবই দুঃখজনক। মূল্যবোধ কতটা নিচে চলে গেছে। এতো কিছু ঘটে যাচ্ছে, কোনো বিচার নেই। :(
স্যারের লেখা অসাধারণ।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৪

দূর পাহাড়ে বলেছেন: বিচার চাইলেই কি হওয়া সম্ভব?

৩| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বদরুলের বিচার চাই। দ্রুত, কঠোর এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সেটা হয়তো হবে। হয়তো ছাত্রলীগও আরও কিছু গালমন্দ শুনবে। কিন্তু এটুকুই শুধু হবে আমাদের সান্ত্বনা। কারণ আমরা জানি বদরুলের মতো পশুদের তৈরির কারখানা থেকে যাবে এই পোড়া দেশে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১

দূর পাহাড়ে বলেছেন: লেখক ও বিদ্রোহী ভৃগুর সঙ্গে একমত না হয়ে পারা যায় না।

৪| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৩

রাবেয়া রাহীম বলেছেন: দানব বানানোর কারখানা বন্ধ হোক সেই সাথে সকল দানব ধ্বংস হোক।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২

দূর পাহাড়ে বলেছেন: এ দানব ধ্বংস হওয়ার নয় জনাবা.............

৫| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৮

মার্কো পোলো বলেছেন:
@ মি. যোগী, আপনার ভাষা সংযত করুন। এটা আপনার বিরূপ, অশ্লীল মন্তব্য করার জায়গা নয়। এটি ব্লগ। এখানে সিনিয়র, জুনিয়র সব ধরনের লোকই বিচরণ করে। গালমন্দ করে নিজের পরিচয়কে জাহির করবেন না।
লেখক সাহেবকে অনুরোধ করছি ৩ নং কমেন্টটি ডিলিট করার জন্য।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮

দূর পাহাড়ে বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সঠিক মন্তব্যের জন্য।

৬| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭

শিপন মোল্লা বলেছেন: রাবেয়া রাহীম বলেছেন: দানব বানানোর কারখানা বন্ধ হোক সেই সাথে সকল দানব ধ্বংস হোক।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২১

দূর পাহাড়ে বলেছেন: একই কামনা জনাব শিপন

৭| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২০

শিপন মোল্লা বলেছেন: যোগী ভাই মাফ করে দ্যান আসিফ নজরুল ব্যাটায় ভুল করে ফেলছে , সে বুঝে নাই বদরুল আসলে সোনার ছেলে।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৪

দূর পাহাড়ে বলেছেন: ভাই আসেন যোগী বাবার কাছে মাফ চাই........

৮| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২২

চাঁদগাজী বলেছেন:



ছাত্র রাজনীতি তরুণ ছেলেদের হাতে ক্ষমতা, টাকা,মাদক দিয়ে তাদেরকে দানব বানায়েছে যুগে যুগে, তারা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হাকে ধ্বংস করেছে।

যারা ছাত্র রাজনীতি করেছে, তারা অস্বভাবিক; এদের পতন ঘটানো জাতির জন্য বড় দায়িত্ব

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬

দূর পাহাড়ে বলেছেন: জয় হোক চাঁদগাজী ...........

৯| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

শূণ্য পুরাণ বলেছেন: জানোয়াররা অধরাই থেকে যায়

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৩

দূর পাহাড়ে বলেছেন: তাদের ধরবে কে বলুন তো? যারা ধরবে তারাই তো জানোয়ার।

১০| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:১৫

কৃষিসংবাদ বলেছেন: আসলে কি সত্য কথা একটু তেতো হয়। তাই অনেকে ক্ষেপে যান।

১১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:০২

আবু আল সাঈদ বলেছেন: এভাবে হিসাব করলে মন্ত্রিরাই বড় নির্মাতা

১২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:৫২

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
বদরুলের বিচার হোক। সে যা করেছে সেটা পশুত্বের চূড়ান্ত পর্যায়। এই অপরাধের বিচার হতেই হবে।

তবে, আমার কিছু প্রশ্ন আছে --- বদরুলের কোপানোর পিছনে আসল কারণটা কী?

বিশ্বজিতের খুনের সাথে খাদিজার ঘটনাটা মেলাচ্ছে অনেকেই, কিন্তু আমার কাছে দুটো ঘটনাকে এক মনে হচ্ছে না।

প্রথমত, বিশ্বজিতের খুনে পলিটিক্যাল একটা স্ট্যাটম্যান্ট দিয়ে দেওয়ার ব্যাপার ছিল। ঐ খুনটা পলিটিক্যাল ছিল। নিজেদের রাজত্ব, ক্ষমতাকে প্রকাশ করার একটা ধরণও ছিল এটা।

কিন্তু, খাদিজা নামের এক মেয়েকে কুপিয়ে কোন রাজনৈতিক সংগঠনের কী লাভটা আছে? আমি হিসাব মিলাতে পারছি না। বদরুল ছাত্রলীগ না করে যদি অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের হতো - তাহলেও বা কী লাভ ছিল কোন দলের?

ঘটনাটায় ছাত্রলীগ, সরকার, ছাত্রলীগের বড় কর্তা - সবাই সমালোচিত হচ্ছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে খাদিজাকে মেরে এদের কারোরই কোন লাভ নেই। এটা সম্পূর্ণটাই বদরুলের নিজস্ব কারণে ঘটা ঘটনা।
ছাত্রলীগকে এখানে ফাঁসতে হচ্ছে মূলত দুইটা কারণে। এক তাদের রেপুটেশন, দুই বদরুলকে আগের বার গণপিটুনী দেওয়ার পর সেটাকে শিবিরের কাজ বলে বদরুলকে রক্ষা করা, এমনকী তাকে একজন হিরো বানিয়ে দেওয়াটা।
এই এতটুক পর্যন্তই ছাত্রলীগের দোষ।

কিন্তু - যা ঘটেছে তাতে তো ছাত্রলীগের হাত নেই। বলা যেতে পারে, বদরুল ছাত্রলীগ করতো - তাই তার মানসিকতা এরকম। বাংলাদেশের রাজনীতির যে অবস্থা, তাতে অন্য দল সরকার পরিচালনা করলে বা বদরুল যদি অন্য ছাত্র সংগঠনেও থাকতো - তাহলেও সেম ব্যাপারটাই ঘটতো।
আসল সমস্যাটা বদরুলের নিজের। তার মানসিকতার। সে একজন মেধাবি ছেলে। শুধু পলিটিক্যাল কারণেই বদরুলকে নিয়ে আগের বার অনেকেই লেখালেখি করেনি - পলিটিক্সের সাথে সাথে তার বুদ্ধি, চৌকসতাও ছিল - এজন্যই তাকে নিয়ে ঐ সময় জাফর ইকবাল নিজেও লিখেছিল। অভাবের সংসার থেকে এসেছে - বড় হয়ে তার মূল মানসিকতা যে অর্থের পিছনেই থাকবে সেটাও স্বাভাবিক। যেদিকে প্রবাহ চলেছে - সে সেদিকেই গেছে। অভাব থেকে উঠে আসা মেধাবি অন্য আর আট-দশজনও সেভাবেই চলবে। সেভাবেই বলতে শুধু রাজনীতিতে জড়ানোটা মিন করছি না, যে কোন কিছুই হতে পারে। তার মানসিকতায় এতটুক পর্যন্ত খারাপ কিছু আসার সমস্যা দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু যখনই খাদিজা ফ্যাক্টর আসছে - তখনই তার মানসিকতার পরিবর্তনের একটা কারণ দেখা যাচ্ছে। সমস্যাটা মূলত এখানেই। খাদিজার সাথে তার একটা দ্বন্দ্ব অবশ্যই আছে।

এটা অস্বাভাবিক কিছু না যে পলিটিক্সের সাথে জড়িত কোন ছেলে কোন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হলে - তারা ঐ মেয়ের ক্ষতি করবে না। ঐ মেয়ের ক্ষতি হবেই। আমাদের দেশীয় চলে এমনটাই হচ্ছে। এর জন্য অনেক মেয়েকে জীবনও দিতে হচ্ছে। কিন্তু - এখন পর্যন্ত আমি কখনো শুনি নাই যে - ঐসব মেয়েকে মেরে ফেলার আগে তাদেরকে ভোগ করা হয়নি। এটাই কমন ফ্যাক্টর যে, এইসব ক্ষেত্রে প্রথমেই মেয়ের ইজ্জতটাই যায়। এই কেসে সেটা ব্যতিক্রম। বদরুল এতটাই ক্ষিপ্ত ছিল যে সে এসবের কোন চিন্তা না করেই কুপিয়ে মেয়েকে মেরেই ফেলার সিদ্ধান্ত নিল।

সমস্যাটা এখানেই। বদরুলের মানসিকতার একটা বড়সর বিকৃতি ঘটেছিল কোন একটা কারণে। ঐ কারণটা হয়তো কখনোই প্রকাশ পাবে না। সে নিজেই কারণটা প্রকাশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

তাকে শাস্তি পেতেই হবে। তবে এটার জন্য রাজনীতিকেই বেশি সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। এর কারণ হয়তো বদরুল রাজনীতি করতো বলেই। এই ঘটনায় রাজনৈতিক কোন ফায়দা আমার চোখে পড়েনা। এতে উলটো নিজেরাই পঁচছে।
ঘটনার পিছনে মূল যে কারণ লুকিয়ে আছে - তাতে আমার মনে হয় রাজনীতি না করা ব্যক্তিও এমনটা করতে পারতো।

আমার কথায় হয়তো মনে হতে পারে আমি বদরুলের পক্ষে বলছি বা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করছি - আদতে ঐসবের কিছুই না। বদরুলের কঠোর শাস্তি আমি চাই - প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কোপানো কোন সমাধান না। আর, আমাদের দেশের রাজনীতির যে অবস্থা - তাতে কোন দলকে সমর্থন করারও কোন মানে হয় না।

ছাত্রজীবন শিক্ষা অর্জনের জন্য। রাজনীতির শিক্ষাও অর্জন করতে হবে এইসময়। তবে সেটা পার্সোনাল কোন উপকারের জন্য না, নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাইরের/ভিতরের শক্তির বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। এখন সময় এসেছে রাজনীতির ধারার খোলনাচল ঢেলে সাজানোর।

১৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৪৫

মোহাম্মদ বাসার বলেছেন: আসিফ নজরুল আমার ক্লাসমেটকে বিয়ে করেছিলেন, সে এখন অর্ধ পাগল। আসিফ নজরুল রোকেয়া প্রাচীকে বিবাহ করেছিলেন, সে এখন ভগ্ন হৃদয়ের। আসিফ নজরুলের অনেক কিচ্ছা কাহিনী শুনেছি। আসিফ নজরুল শিলাকে বিবাহ করেছেন, শোনা যায় শিলা তার বাবা কতৃক তার প্রিয় বান্ধবীকে বিবাহের জেদ হিসেবে তার চেয়ে ২১ বছরের বড় আসিফ নজরুলকে বিয়ে করেছেন তার যখন ১৮/১৯ বয়স।। বিয়ে পাগল আসিফ নজরুলের এটাই শেষ বিবাহ হোক তাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

১৪| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৭:১০

আশাবাদী অধম বলেছেন: @মোহাম্মদ বাসার
আপনাকে কে বলেছে রোকেয়া প্রাচী এখন ভগ্ন হৃদয়ের? সে ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থান নিয়ে এত বেশি চিন্তিত যে আসিফ নজরুল কি করল না করল তা ভাবার টাইম তার নাই। এটা রোকেয়া প্রাচী নিজে সাক্ষাতকারে বলেছে।

এ জাতীয় মেয়েরা কোন দরবেশের সংসারেও টিকতে পারে না।

ঢাবির ইন্টারন্যাশনাল হলের এক কর্মচারীর সাথে একবার কথা হয়েছিল। আসিফ নজরুল ঐ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। দেখলাম স্যারকে পাগলের মত ভক্তি করে।

১৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৫৬

বিলুনী বলেছেন: বদরুলের দৃস্টান্তমুলক শাস্তি হোক এটা চাই একান্তভাবে । এটাও ঠিক বদরুলদের পয়দাকারীদেরও শাশ্তি হোক নির্মমভাবে । তবে এই ঘটনা ঝটে যাওয়ার পর কিছু কিছু মানুষের গল্প কবিতার আড়ালে তাদের চাপা হাসি আনন্দ চোখে ভেসে উঠে স্পষ্টভাবে। মনে হয় তারা ঘটনায় হয়েছেন মহা খুশী তাই প্রেমে ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে ব্যক্তিগত ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রং দেয়ার জন্য গল্প কবিতায় উঠেছেন মেতে । রাজপথে প্রতিবাদী না হয়ে মোবাইলে তুলা ছবি নিয়ে দলবেধে উঠে এসেছেন কাগজের পাতাতে , জনগনকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক বিশৃংখলা বাধিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা বানাতে । দেখা যায় পাষন্ড বদরুল , মোবাইলে দৃশ্যধারনকারীগন ও এ বিষয়ে গল্প কবিতা রচয়ীতাগন নীজের অজান্তেই প্লশ্রযুক্ত হয়ে গেছেন প্রকারান্তরে । বদরুলের বিচারের ব্যপারে তাদের লিখা দেখে মনে হয় তারা খুশী নন তেমন করে । জনতার হাতে বদরুল ধরা পড়ে তাদের কবিতা গল্পে কিছুটা ছেদ পড়ে । তা না হলে গল্প কবিতা হতো আরো জোড়ে সোরে । তার পরেও কাগজের পাতা গরম থাকবে আরো কিছুদিন ধরে । খাদিজাকে কোপানোর পরে কবিতা ও গল্পকাররা তাকে ঘটনাস্থলে সাহায্য করতে বা হাসপাতালেও দেখতে যাননি ,সেলফি না তুললেওতো দেখা যেত তাদেরে !!!! ঘটনা নিয়ে রাজনীতি না করে ঘটনার মুলোৎপাটন করা দরকার একেবারে । দেশ এখন স্বাধীন , বড় কিছু চাওয়ার নেই আজ , এখন দেশ গড়া প্রয়োজন , দেশ গড়তে হলে নীজেকে গড়তে হবে আগে । নীজেকে গড়তে হলে ভাল করে ছাত্রজীবন শেষ করতে হবে । ছাত্র জীবন শেষ করে তার পরে রাজনীতিতে নামতে হবে যদি কেও রাজনীতিকে পেশা হিসাবে নীতে চায় । ছাত্র রাজনীতি সম্পুর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে । ছাত্রলীগ , ছাত্রদল , শিবীর , ছাত্র সমাজ কোনটারই প্রয়োজন নেই একেবারে । দেশ স্বাধীনের পরে ছাত্র রাজনীতির যে ধারা ও কুফল দেখা গেছে তা কাংখীত নয় একেবারে , একে সুযোগ সন্ধানীরা ব্যবহার করেছে নীজের ইচ্ছে মতন করে । তাই আইন করে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হোক চিরতরে । পাশ্চাত্তের মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি ছাত্র সংসদ থাকতে পারে শুধুমাত্র নীজেদের শিক্ষাসংক্রান্ত সুযোগ সুবিধা ও দাবী দাওয়ার প্রতিনিধিত্ব করার ব্যপারে । এরা কোন ধরনের বড় সড় মিটিং মিছিল , বা শোডাউন করতে পারবেনা, এরা শুধু কতৃপক্ষের সাথে সিমীত আকারের বৈঠক করে নিজেদের দাবী দাওয়া তুলে ধরতে পারবে এর বেশী কিছু নয় ।

১৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৪৬

নির্ঝরের_স্বপ্ন বলেছেন: আওয়ামী লীগ তথা ভারতীয় পা চাটা কুত্তারা যতই আজেবাজে পাঠের অযোগ্য মন্তব্য করে থাকুক না কেন, সামুর মডারেটরগণ ঠুলি পড়ে থাকাকেই ন্যায্য মনে করেন। আর তাদের মন্তব্যে কেউ রিপোর্ট করতে গেলেই তাকে ব্লক করে দেওয়া হয়। এই ব্লগ আসলে কাদের প্রয়োজন পূরণ করতে বানানো হয়েছে?

১৭| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৪:২৬

হাবিবুর রাহমান বাদল বলেছেন: বদরুলের মতো পশুদের তৈরির কারখানা থেকে যাবে এই পোড়া দেশে। সেই কারখানার মালিকদের বন্দনাও চলতে থাকবে। নতুন বদরুল তৈরি হবে।------------ বদরুলের মতো পশুদের তৈরির কারখানা বন্দ করা হোক এটাই বিবেকের দাবি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.