নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২০


২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, প্রতিদিনের মতোই নাফিস নাস্তা শেষ করে, নাস্তার টেবিলে বসা মহুয়া আর বাবা মার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে।
মহুয়ার পেটে তাদের অনাগত সন্তান। মহুয়ার নয় মাস চলে। আর কয়টা দিন বাকি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগমনে......
মা নাফিসকে মনে করিয়ে দিলেন, "আজ কিন্ত অবশ্যই বৌমাকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাস, শেষের দিকে নিয়মমাফিক ডাক্তার দেখাতে হয়।"
নাফিস অপরাধীর সুরে বললো, "মা আজ পিলখানা দরবার হলের অনুষ্ঠানটা শেষ করেই মহুয়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।"
নাফিস একজন বি.ডি.আর মেজর।
মা- বাবার পছন্দেই এমবিএ করা মহুয়াকে সে বিয়ে করেছে।
তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় দেড় বছর। নাফিস মা-বাবা আর মহুয়াকে নিয়ে পিলখানায় মেজরদের জন্য বরাদ্দকৃত কোয়ার্টার এ থাকে।
সবাইকে নিয়ে নাফিসের দিনগুলি সপ্নের মতো কাটছিলো......
নাফিস একদিন মহুয়াকে বললো, "আমি যদি না থাকি, আমার ছেলে হলে নাম রাখবা 'স্পর্শ' আর মেয়ে হলে 'ছোয়া'।"
মহুয়া চোখ বড় বড় করে বললো, "না থাকি মানে....!!"
নাফিস হাসতে হাসতে বললো, "আরে বোকা..চাকুরিটাই তো দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার, কখন যে বুকের বাম দিকে গুলি এসে বিঁধে........!!!"
"হয়েছে হয়েছে চুপ করো",বলে মহুয়া নাফিসকে থামিয়ে দিলো। ভালবাসার মধ্য দিয়ে এভাবেই দিনগুলো কাটছিলো.......
আজ নাফিস যাওয়ার কিছুক্ষন পর থেকেই পিলখানায় অনেক গুলাগুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে। মহুয়া ভাবলো প্রায়ই তো মহড়া চলে, আজও হয়তো মহড়া চলছে।
নাফিসের মা বাবা রুম থেকে ছুটে এসে বললেন, "বৌমা এত গুলাগুলি হচ্ছে কেনো?"
"বাবা মনে হয় ওদের মহড়া চলছে।"
নাফিসের মা বললেন, "বৌমা আজকের শব্দটা শুনে বুকটা কেমন জানি করছে।"
মানুষ বলে সন্তানের বিপদ হলে মায়ের মন সবার আগে টের পায়......
মহুয়ার ফোনটা হঠাৎ কর্কশভাবে বেজে উঠলো....
ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে, ওপাশ থেকে নাফিসের ভয়ার্ত কন্ঠ... " মহুয়া কিছু বিডিআর জওয়ান বিদ্রোহ করেছে, দরবার হলে ডি আই জি স্যার সহ অনেক জনকে মেরে ফেলছে। আমি বাথরুমে লুকিয়ে আছি।
তোমরা দরজা জানালা ভালো ভাবে বন্ধ করে বসে থাকো, আম্মু-আব্বুকে দোয়া করতে বলো। তোমার আর বাবুর খেয়াল রেখো, বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে.......
মহুয়া শুনছে অনেক মানুষের হৈ চৈ, রাইফেলের বাট দিয়ে যেনো বাথরুমের দরজাতে ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে, "দরজা খোল,দরজা খোল..."
ঠাস করে একটা আওয়াজ হয়ে লাইনটা কেটে গেলো..!!
আর নাফিসকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
মহুয়ার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো, ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।
বৌমা কি হয়েছে, "বাবা মা দু'জনেই চিৎকার করে উঠলেন। মহুয়ার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না.....
খারাপ কিছু টের পেয়ে, বাবা-মা আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন।
কয়েক ঘন্টা পর মহুয়াদের দরজায় লাথির আওয়াজ,"দরজা খোল, নাহয় বাসা উড়িয়ে দিবো....."
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মহুয়া দরজা খোলে বের হলো।মহুয়ার এই অবস্থায় দেখেও তাদের মায়া হলো না। লাল কাপড়ে মুখ বাধা কয়েকটা জওয়ান বললো, "সবাই ঘর থেকে বের হ।" যেই সকল সিপাহী কোনদিন চোখ তুলে তাঁকায়নি, আজ তারা তুই-তুকার করছে....!!!"
সবাই কে একটা রুমে নিয়ে ঢুকালো, অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে।
মহুয়া আরও কয়েকজন ভাবি ও বাচ্চদের দেখলো, সবাই ভয়ে কাঁদছে.....
নাফিসের মা বললো, "বাবারা আমরা কি দোষ করলাম, আমি হাই প্রেশারের রোগী, আমার বৌমা অসুস্থ। আমাদের এই গরম আর মশার কামড়ে কষ্ট দিচ্ছ কেন???"
একজন বললো, "তোদের ছেলেরা আরাম করে থাকে, আর দেখ আমরা কত কষ্ট করি, দেখনা!!"
লাইলি ভাবির মেয়েটা বার বার বলছে, আম্মু ক্ষিদে পেয়েছে।
এক সিপাহি বললো, "আমাদের মোটা রুটি আর ডালের পানি খেতে পারবি, তোদের তো চাই সেন্ডউইচ, আর বার্গার......"
থেমে থেমে গুলগুলির শব্দ হচ্ছে.......
কখন সকাল হচ্ছে, কখন বিকেল হচ্ছে বুঝাই যাচ্ছে না। হঠাৎ সবাইকে ছেড়ে দিলো," মৃত্যু যেন গাঁ ঘেষে চলে গেলো....!!"
অতিরিক্ত চাপ ও ভয়ে মহুয়ার সময়ের আগেই লেবার পেইন শুরু হয়ে গেলো.....
হাসপাতাল কে নিবে, কি ভাবে যাবে??
ভাগ্যিস নাফিসের আম্মু ধাত্রিবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন।
"নাফিসের 'স্পর্শ' জন্ম নিল কিন্ত নাফিসের স্পর্শ পেলো না......"
মহুয়া অপেক্ষায় আছে এই বুঝি নাফিস আসবে......
নাফিসের মরদেহ শনাক্ত করার জন্য পুলিশ অফিসার তার পরিবারকে নিতে এসেছে। মহুয়ার মন বলছে নাফিসতো বাথরুমেই লুকিয়ে আছে, তার তো কিছুই হয় নি.......তবুও কেন জানি নাফিসের 'স্পর্শকে' কোলে নিয়ে শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে মহুয়া দৌড়চ্ছে....... চারিদিকে লাশ আর রক্তের বন্যা।
কি নির্মম, কি বিভৎস মৃত্যু....!!!!
গণকবর থেকে বের করা অনেকগুলো লাশের মধ্যে, একটা হাত দেখে মহুয়া থমকে দাড়ালো.........
"নাফিসের অনামিকায় বিয়ের 'M' অক্ষরের আংটিটা জ্বলজ্বল করছে........."

আজো ২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি দিনটির কথা মনে করলে যেন জনতার হৃদয়ে বেজে ওঠে শিল্পী হায়দার হাসানের,,,,,,

"কতটুকু অশ্রু ঝড়ালে, হৃদয় জলে সিক্ত,
কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই, জীবন আলো উদ্দীপ্ত,
কত ব্যথা বুকে চাপালেই, তাকে বলি আমি ধৈর্য।
নির্মমতা কতদূর হলে, জাতি হবে নির্লজ্জ......
আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া,
করিতে পারিনি চিৎকার,
বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে, নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার......"

[ বি.দ্রঃ পিলখানা 'বিডিআর বিদ্রোহ' নিয়ে আমার লেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কারো সাথে কাকতালীয় ভাবে মিলে গেলে, ক্ষমা মার্জনীয়। ]

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ।

২| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দেশের ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ৯মবার্ষিকী আজঃ দেশের এই বীর শহীদদের স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়
কর্ণেল জাহিদ ও ছন্দা ছবিটি
আমার ছোট ভাই কর্ণেল জাহিদ ও ছন্দা ছবিটি
আমাকে আবারো কষ্টের অতল গহ্বরে নিয়ে গেলো।

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৬

সালমা রুহী বলেছেন: কাউকে কষ্ট দেয়া আমার একদম উদ্দেশ্য ছিলো না । ছবিটার জন্য কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি অন্তরিক ভাবে দুঃখিত ।

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৩

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাস্তবতা আপনার কল্পনার চেয়েও আরও কঠিন! আরও বেদনাময়!

সবই ধোঁয়াশায় ঢাকা! তবে সত্যের সূর্যারোক উঠবেই একদিন!
সেইদিন স্পর্শরা শান্তি খূঁজে পাবে-অপরাধীদের ন্যায় সংগত শাস্তি দিয়ে!

০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৪৭

সালমা রুহী বলেছেন: ইনশাল্লাহ বিচার হবেই ।

৫| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:১৯

মেরিনার বলেছেন: view this link

৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৪১

শায়মা বলেছেন: ভীষন কষ্টের।

৭| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:০২

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আপনার কষ্টের গল্পটা হয়তো গল্পই লিখেছেন কিন্তু এই গল্পের সামনের (পেছনের না)সত্যি কাহিনীর মত নির্মম একটা ঘটনাও আমাদের জীবনেই দেখতে হলো দেশে ! এই দুঃখটা আর বাকি জীবনেও যাবে না মনে হয় |

৮| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৩০

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল লিখেছেন তবে কষ্টের।

০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১২

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ । লিখতে গিয়ে আমারও বার বার চোখ ভিজে গেছে ।

৯| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: কেন এমন ঘটনা ঘটল দেশে। আর যেন না ঘটে।

১০| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৪৭

তারেক ফাহিম বলেছেন: দিনটির কথা মনে পড়লে খুবই খারাপ লাগে।

অল্প সময়ে সর্বাধিক হত্যা, সর্বাদিক ফাঁসির রায়, অাজব দেশে অাছি অামরা :(

১১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:১২

কানিজ রিনা বলেছেন: বিশ্বের সবচেয়ে বর্বরচিত হত্যা পিলখানা
হত্যা ট্রাজেডি। নবমবার্ষিকীতে তাদের রুহের
মাগফেরাত কামনা করি। ধন্যবাদ স্মৃতি চারনে।

০৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১৩

সালমা রুহী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

১২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:০২

আহমেদ মারুফ বলেছেন: যারা আমাদের দেশকে রক্ষা করবে, দেশের অহংকার তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এই দিনটি চলে গেল। সোশ্যাল মিডিয়ায় এর কোন কিছুই টের পেলাম না। আমি যদি এই কথা গুলো বলি তাহলে আপনারা মনে করবেন আমি বর্তমান সরকারের বিরোধী দলীয় সাপোর্টার। কিন্তু আমি রাজনীতি পছন্দ করি না। আমরা এই দিবস, সেই দিবস যেগুলোর নাম মনে থাকে না নতুন নতুন দিবস উদযাপিত হয়। কিন্তু পিলখানা হত্যার কোন কথাই কোন মিডিয়া বলে নাই। কেন তাদের হত্যা করা হল, কোন কারণে হয়ত তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বর্তমান সরকার এগুলোর কোন পাত্তাই দিলনা ।সশস্ত্র বাহিনী না থাকলে তোমার সোনার দেশকে কেমন করে সোনার দেশে রূপান্তরিত করবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে সবাইকে যে, সত্য কখনও ঢাকা থাকে না, হয় আজ না হয় কাল এদের বিচার হবে এই বাংলায়। একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেল, যে গর্ত খনন করবে অন্যকে মারার জন্য সেই গর্তে কিন্তু আপনাকেই পড়ে মরতে হবে। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.