নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডাক্তারের কথা শুনে সায়মা অবাক, "আপনার বাচ্চার কোনো ঔষধ লাগবে না, তার ঔষধ 'স্পিচ থেরাপি'...তার সাথে আপনারা বেশি বেশি বাংলা কথা বলবেন.....!!!"
সায়মার ছেলে নাফির বয়স দুই বছরে উপরে, কিন্তু সে এখনো কথা বলে না। এই বয়সের বাচ্চারাতো টুকটাক কত কথা বলে, কিন্তু তার বাচ্চা মা-বাবাকে পর্যন্ত ডাকে না। এই নিয়ে সায়মা ভীষণ উদ্বিগ্ন, "তার স্বামী ও শ্বাশুড়ি বলেন, চিন্তা করো নাতো অনেক বাচ্চাই দেরীতে কথা বলে।"
সায়মা এই নিয়ে আর তেমন চিন্তা করে না। কিন্তু ইদানীং নাফি খুব বেশী কান্না করে, সব কিছুতে বিরক্তি প্রকাশ করে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। সারাক্ষণ চিল্লাচিল্লি.... কত আর ভালো লাগে!!!
সায়মা নাফিকে নিয়ে একজন ভালো শিশু ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার তার বাচ্চাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে, "একবার নাফির হাতে একটা কিছু দেন, আবার সেটা কেড়ে নিয়ে নেন।"
এসব দেখে সায়মাতো অবাক, মনেমনে ভাবে ডাক্তার এসব কি করছেন? সায়মা জিজ্ঞেস করে ফেলে। ডাক্তার বলেন, "এসব চিকিৎসারই অংশ, আপনার বাচ্চার কোন রোগ নেই, আপনার বাচ্চা সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। আপনার বাচ্চার প্রয়োজন "স্পিচ থেরাপি'' তার কথা বলার বয়স হয়েছে, কিন্তু কথা বলতে পারছে না। সে তার মনের ভাব প্রকাশ করতে না পেরে সব কিছুর প্রতি 'ইরিটেট'।"
সায়মা বাসায় এসে ডাক্তারের কথা "অবাক হয়ে ভাবছে, কথা বলানোও চিকিৎসা.....!!! "
তারা স্বামী স্ত্রী দুজনে চাকুরী করে, বাচ্চাকে খুব বেশী সময় দিতে পারে না, চাকুরী করে এত এনার্জি থাকে না, বাড়ী এসে বাচ্চার সাথে বকবক করার।
বাসায় নাফি বুয়া আর তার দাদুর কাছে থাকে। দাদু বয়স্ক মানুষ কি আর কথা বলবেন, বুয়া থাকে কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
সায়মা ভাবলো অফিস থেকে কিছুদিনের ছুটি নিবে, নাফিকে সময় দিবে, তার সাথে কথা বলবে।
বসের কাছে গিয়ে বলার পর, বস আকাশ থেকে পড়লেন, "এসব কি বলছেন মিস.সায়মা!!! বাচ্চার সাথে কথা বলার জন্য ছুটি চাইছেন, বাচ্চাকে স্পিচ থেরাপি দিবেন...? পাগলামীর আর জায়গা পান না! আপনি এক কাজ করুন, চাকুরীটা ছেড়ে দিন। চাকুরী ছেড়ে বাসায় বসে বসে বাচ্চাকে কথা বলানো শিখান।"
সায়মা তার নাফির সাথে কত না বলা কথা বলে। রাজা-রানীর গল্প, রূপকথার গল্প, দেশের কথা, ভাষা-আন্দোলনের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা। কথা বলতে বলতে সে হাঁপিয়ে যায়, কিন্তু তার বাচ্চাতো কোনো কথাই বলে না।
সায়মা জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে ভাবে, "কোনদিন তো ভেবে দেখিনি, যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষা মানুষের জীবনে এত বড় ভূমিকা রাখে।
নাফিকে বাঙলা ভাষা শিখানোর জন্য চাকুরীটাও ছেড়ে দিলো। আজ মনে পড়ছে সেই বীরদের কথা, যারা এই বাঙলা ভাষার জন্য যুদ্ধ করেছিলো। যাদের জন্য এই ভাষায় কথা বলা, তাদের কথাতো আমাদের মনেই পড়ে না।
'মা মা', অস্পষ্ট কন্ঠে দুইবার ডাকটা শুনার পর সায়মা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তার নাফি বিছানার উপর থেকে মার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। আনন্দে সায়মা কেঁদে ফেলে, তার আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে,
"আমার নাফি কথা বলেছে,
আমার নাফি আজ আমাকে মা ডেকেছে.....!!"
২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০
আখেনাটেন বলেছেন: অসাধারণ।
সন্তানের প্রতি মায়ের মমতার তুলনা হতে পারে না। নাফির প্রতি সায়মার এই ভালোবাসা প্রতিটি মায়ের মনেই জাগ্রত হয়ে উঠুক।
চমৎকার এই লেখনির জন্য হিমালয়সম শুভেচ্ছা।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৮
সালমা রুহী বলেছেন: আপনাকেও হিমালয়সম ধন্যবাদ ।
৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ধন্যবাদ,আপু আপনাকে। পোষ্ট প্রসঙ্গে একটু শেয়ার করবো, আমার বাচ্চার এখন আট বছর বয়স।কাজের সুবাদে আমাদের দুজনের সারাদিন বাইরে থাকতে হয়। বাবামা দুজনেই গত হয়েছেন।মাসির/বুয়ার কাছে বাচ্চাকে রেখে যেতাম যদিও এখনও যেতে হয় । এই সমস্যা আমাদেরও হয়েছিল।ম্যাটারনিটি শেষ হলে এমনও দিন গেছে বাচ্চা মায়ের দিকে তাকাতো না।প্রচন্ড কান্নাকাটি করতো।অন্তত পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত এই সমস্যা পোহাতে হয়েছে।এখন অবশ্য ওর রাগ, কান্না, শরীরসহ নানান সমস্যা অনেক কমে গেছে।তাই ওয়ার্কিং মায়েদের জন্য আমার দৃষ্টিতে পোষ্টটি অত্যন্ত উপযোগী।
শুভ কামনা রইল।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:১৯
সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।
৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: "আমাদের ছোট ছেলেটা যখন দুই বৎসর পার হয়ে যাবার পরও মুখে কোন কথা বলতোনা, শুধু আকারে ইঙ্গিতে বলতো, তখন আমি আর আমার স্ত্রী খুব চিন্তিত হতে শুরু করেছিলাম। ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে। ডাক্তার সাহেব পরীক্ষা করে জানালেন সবকিছু ঠিক আছে। চিন্তার কোন কারণ নাই, ও কথা বলবে। তারও প্রায় মাস তিনেক পরে আমাদেরকে আনন্দে ভাসিয়ে ও প্রথমে আধো আধো বোলে, পরে স্পষ্ট করে সব কথাই বলা শুরু করলো। কিন্তু যখন কথা বলা শুরু করলো, তখন এমন অনর্গলভাবে বলা শুরু করলো যে তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা বাসার একে একে সবাই হাঁপিয়ে উঠতাম। মনে হতো, ও যেন ওর এতদিনের সব জমানো কথাগুলো একসাথে বলা শুরু করেছে।"
- আমার আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা "আমার কথা-১" থেকে উদ্ধৃত।
কথাগুলোর উল্লেখ এজন্য করলাম যে সন্তান সময়মত কথা না বলার জন্য গল্পের সায়মা'র মত আমরাও দুশ্চিন্তা ও উৎকন্ঠার ভেতর দিয়ে একটা সময় পার করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, পরে স্বাভাবিক নিয়মেই আমার ছেলে কথা বলা শিখেছিল।
আশাকরি আপনার এ লেখাটা পড়ে এরকম ভুক্তভোগী অনেক বাবা মা ধৈর্য ধরার সাহস পাবেন।
পোস্টে ভাল লাগা + +
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২১
সালমা রুহী বলেছেন: আপনাদের অনেক ধন্যবাদ আপনাদের ছেলের জন্য দুয়া রইল ।
৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৪৪
সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: বর্তমান শহুরে সভ্যতার কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। ভালো লাগলো।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২১
সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০৫
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: লেখক পোস্ট দিয়ে হাওয়া! জিডি করতে হবে
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৩
সালমা রুহী বলেছেন: লেখক আছে , জিডি করতে হবে না , আপনাকে ধন্যবাদ ।
৭| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৫১
কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
ছয়টা কমেন্টের কোন উত্তর নেই।
তাই কমেন্ট করলাম না।
যদি মাইন্ড করে বসেন!
.........দাওয়াত রইলো।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৬
সালমা রুহী বলেছেন: কমেন্টের উওরে দেরি করায় আমি দুঃখিত । মাইন্ড করার কি আছে , পাঠক আছে বলেই একজন পাঠক লেখক হয়ে উঠে , আমি আগে আপনাদের মত পাঠক , তারপর লেখক । ধন্যবাদ।
৮| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর পোষ্ট।
আমি মুগ্ধ!
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২৬
সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।
৯| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৯
নূর-ই-হাফসা বলেছেন: কি সুন্দর করে লিখেছেন । সন্তানের মুখে মা ডাক শুনা সবচেয়ে আনন্দের তাইনা । হয়তো শ্রেষ্ঠ মুহুর্ত ।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩০
সালমা রুহী বলেছেন: ঠিক বলেছেন আপু , ধন্যবাদ ।
১০| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:০১
সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: ভাল পোসট
১১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:০৩
জসীম অসীম বলেছেন: 0+0+0=৯
১২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৮
উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: বাংলাদেশে থাকা কোন বাচ্চারাও এ ধরনের সমস্যায় পড়ে নাকি? বাংলাদেশ তো মানুষে ভর্তি। বাচ্চাদের সাথে কথা বলাও একটা বড় কাজ।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৩
সালমা রুহী বলেছেন: বাংলাদেশের অনেক মা বাবারও চাকরি করে তারাও ব্যস্ত থাকে , ধন্যবাদ ।
১৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০
উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: "বাংলাদেশের অনেক মা বাবারও চাকরি করে তারাও ব্যস্ত থাকে , ধন্যবাদ ।"
মজার বিষয় হল আমার ছেলে বাংলাদেশে গিয়েই কথা বলা শেখে। সেটা আবার গৃহপরিচালিকা, দারোয়ান এবং তাদের সন্তানদের কাছ থেকে। আমার কাছ থেকে খুব একটা শেখেনি। আসলে আমি একটু স্বল্পভাষী। একটি কথা দ্বিতীয়বার বলতে বিরক্ত লাগে। যেহেতু আমার নিজের মধ্যে কথা বলার স্বভাব বেশী ছিল না, সেকারনে আমার সাথে থেকে ঘুম পাড়ানী গান শুনেও সে খুব একটা কথা বলতে শেখেনি। এদিকে মেইডদের সন্তানেরা আবার স্বভাব বাচাল। তাদের সাথে থেকে খুব দ্রুত কথা শিখে যায়। কিন্তু দেশ থেকে চলে আসার পরে আবার ভুলে যায়। এখনো বাংলা খুব একটা ভাল বলতে পারে না।
শেখ হাসিনা সারাক্ষন কথা বলেন বলে তার ছেলে জয় সুন্দর বাংলা বলতে পারে। কখনো কখনো বাচালতাও একটি বড় গুন হয়ে পড়ে।
আরেকটা বিষয়। স্পিচ থেরাপিতে বাবা মায়ের চেয়েও বেশী কাজ করে সমবয়েসীরা। যাদের সাথে সে খেলা করে সময় পার করে। বাবা মা বাচ্চার সংগ পছন্দ করলেও অনেক সময়ে শিশুতোষ খেলাগুলো বেশীক্ষন চালিয়ে যেতে পারে না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৪
নীল-দর্পণ বলেছেন: সব মা যদি সায়মার মত সচেতন হন তবে কিছু ক্ষেত্রে অনাকাঙ্খিত ব্যাপার এড়ানো যায়।