নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোখের জলে মুক্তা

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩



রাফির মায়ের অনেক দিনের শখ, ভাইয়ের মেয়ে তাকিয়া কে রাফির বউ করে ঘরে আনবেন। রাফির বাবাও রাজি, কিন্তু কিছুতেই রাফিকে রাজি করানো যাচ্ছে না।

রাফিকে বললে বলে, "মা আরও দুইটা বছর যাক, আমি এলাকায় এসে নিজের চেম্বার দিয়ে নেই।"
রাফি ডেন্টিস্ট, চট্টগ্রামে একটা প্রাইভেট চেম্বারে প্রেক্টিস করে, বাড়ি রাজশাহী।
কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়ির দূরত্ব, ছুটি সব মিলিয়ে বাড়িতে তেমন যাওয়া হয় না।
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে সে, বিয়ে করে বউ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে চলে গেলে মা বাবা কষ্ট পাবেন। আবার বাড়িতে বউ রেখে গেলে নিজে কষ্ট পাবে, উভয় সংকট....!

সব কিছু ভেবেই রাফি বিয়ের জন্য পিছিয়ে যায়। কিন্তু মা এবার ছাড়ছেন না, কোরবানির ঈদ করতে বাড়ি গেলে বিয়েটা করিয়েই ফেলবেন।
বাবার সাথে রাফির বন্ধুত্ব সম্পর্ক, বাবার সাথে সেদিন ফোনে কথা হল, বাবা বললেন, "বেটা এবার বিয়ের জন্য না করিসনে, নয়তো তোর মা ঈদের বারটা বাঁজাবে, আর আমার তোর তেরটা বাঁজাবে!!! বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আসিস.....!"

মনে মনে মায়ের উপর রাফির রাগ হচ্ছে, "কি এমন ক্ষতি হতো আরো বছর দুয়েক সময় দিলে।
রাগ করে তাকিয়ার ইদানিং এর কোন ছবিও দেখেনি, সেই ছোটবেলায় দেখেছে। এখানে যেন তাকিয়ারও দোষ সে কেন বিয়েতে রাজি হলো ....!"

রাফি মনটা খারাপ করে বাড়ি গেলো, বাড়ি গিয়ে দেখে বাড়িতে বিয়ে বাড়ির সাজ। মা বাবা জানে তার ছেলে কখনো ওদের অবাধ্য হবে না।
ঈদের পরদিন গায়ে হলুদ, বড় আপুর পরিবার, ছোট আপুর পরিবার, দাদা বাড়ির সবাই এসে হাজির।
নানা বাড়ির কেউ আসেনি এখন তো ওরা রাফির শ্বশুরবাড়ী পক্ষ....!
রাফি যেন ঘোরের মধ্যে, দুলাভাইয়েরা শেরওয়ানী পাগড়ী পড়িয়ে কনের বাড়ি নিয়ে গেলেন। কখন যেন কবুল বললো কখন রেজিস্টার খাতায় সিগনেচার করলো.....!

ঘোর কাটলো লাল বেনারসি পড়া কনেকে বসিয়ে আয়নায় যখন বউয়ের মুখটা দেখালো, কবুলের সময় তাকিয়ার কান্নায় কাজল লেপ্টানো মুখটা আয়নায় এক ঝলক দেখে মনে মনে মুগ্ধ হলো, " নাহ, বলতে হবে মা বাবার পছন্দ আছে....!"
তাকিয়ারা এক ভাই এক বোন, তাকিয়া ছোট। তাকিয়ার বাবা, রাফির মামা থেকে শ্বশুড়আব্বা হয়ে গেলেন.....!
বিদায়ের সময় মামা তাকিয়ার হাত রাফির হাতে দিয়ে বললেন, "বাবা মেয়েটাকে অনেক আদর করে বড় করেছি, জানি তোমাদের পরিবারে আমার মেয়ের কোনো অযত্ন হবে না। তবু আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো।"
বাবার গলা জড়িয়ে বাপ মেয়ের কান্নায় সবার চোখ ভিজে গেলো।

দুলাভাইয়েরা কোন ফাকে রাফির রুম তাজা ফুল দিয়ে বাসর সাজিয়ে রেখেছে।
খাওয়া দাওয়া সেরে রাফি রুমে ঢুকলো, বিছানার নিচে টিস্যুর স্তুপ। বিছানায় বসা তার বউ টিস্যু দিয়ে সমানে নাক চোখ মুছেই চলেছে.....!
রাফির একটু একটু রাগ হচ্ছে, ভেবেছিলো 'বাসর রাত' বউয়ের সাথে কত গল্প করবে।
এখন দেখছে ছিচকাঁদুনে বউ, কেঁদেই যাচ্ছে....!
রাফি রাগে বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে গেলো, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলো। ভুলেই গিয়েছিলো বিছানায় তার বউকে বসিয়ে রেখে ঘুমিয়েছিলো....!
কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই, তাকিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো,"আব্বু আম্মুর কথা মনে পড়ছে।"
রাফি বললো, "এত রাতে আব্বু আম্মুকে কি আনা যাবে, না তোমাকে নেওয়া যাবে...?"
সকালে দিয়ে আসবো, এখন ঘুমাও...।"
রাফি ভালভাবে তাকিয়ার মুখের দিকে তাকিয়েও দেখেনি, হয়তো মায়ের সাথে রাগ করে।
এখন তাকিয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো, "এত মায়াভরা মুখ, এত সুন্দর চোখ, রাফি এই চোখের গহীনে কখন যেন নিজেকে হারিয়ে ফেললো....!"

সকালে রাফির ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে, তার বউ ভেজাচুলে একদৃষ্টে রাফির দিকে তাকিয়ে আছে। এখন যেন চোখ দু'টো আরো সুন্দর লাগছে।
"আব্বু আম্মুর কাছে দিয়ে আসবো, রাফি হেসে তাকিয়াকে জিজ্ঞেস করলো....?"
উত্তরে তাকিয়া হেসে রাফির গায়ে বালিশ ছুড়ে দিলো...!
রাফি তাকিয়ার ছোট একটা 'কোড নেইম' দিলো, তাকিয়ার 'তা' রাফির 'রা' "তারা" নীল আকাশের তারা.....!

বিয়ের পাঁচদিন চলছে, চেম্বার থেকে কলিগ ফোন করেছে।
কোরবানীর মাংস খেয়ে মানুষ দাঁতের বারোটা বাজিয়ে আসছে, তার কলিগ একা একা রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ক্লিনিকের এম ডির বউয়েরও রুটক্যানেল করা দাঁত, কোরবানীর হাড় লেগে ক্রেক হয়ে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।
রাফি বিয়ের পরের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাস্ত, বাবাকে বললো ওর জন্য একটা টিকেট কাটতে চলে যেতে হবে।

রাফি যাওয়ার জন্য ব্যাগ ঘুছাচ্ছে, তারা মন খারাপ করে বিড়ালের মত রাফির পিছু পিছু ঘুরছে। রাফিরও খারাপ লাগছে তারাকে ছেড়ে যেতে, আবার কতদিন পড়ে আসবে....!
রাফির সাহস হচ্ছে না বাবা মাকে বলার, "তারাকে সাথে নিয়ে যেতে, এত নতুন বউকে কি ওরা যেতে দিবে.....?"
আজ বারটায় রাফির ট্রেন, সবাই নাস্তার টেবিলে।
তারা গিয়েছে সবার জন্য চা আনতে, রাফি বাবার কাছে টিকেট চাইতেই বাবা দুইটা টিকেট হাতে দিয়ে বললেন,"বেটা এমন দিন তো আমার জীবনেও এসেছিলো না কি.....?"
শ্বশুড়ের একথা শুনে ভাগ্যিস চায়ের ট্রে টা তারার হাত থেকে পড়ে যায় নি, তাহলে তো বাংলা সিনেমাই হয়ে যেতো....!

তিন বার কবুল আর একটা রেজিস্টার খাতায় সাইন করা মানুষটা তারার এত আপন হয়ে গেলো যে, তার সাথে অজানা অচেনার পথে পা বাড়ালো.....!
রাজশাহী থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। এত লম্বা জার্নির বিরাট ধকল গেলো তারার উপর, দু'দিন লাগলো ঘোর কাটতে।
ফাঁকে ফাঁকে রাফি বেড়াতে নিয়ে যায়, আনাড়ি হাতে তাকিয়া রান্না করে। রাফিও রান্না করে, ভালই কাটছে দু'জনের নতুন জীবন....!
রাফি বাসায় থাকলে তারার খুব ভালো সময় কাটে, রাফি চেম্বারে চলে গেলে 'তারা' বাড়ির জন্য মন খারাপ করে একা বসে বসে কাঁদে।
দশ পনের দিন পর বাড়ি থেকে ফোন আসে 'স্মার্টকার্ড' দিবে তারাকে যেতে হবে। তারা আবার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।
রাফির ছুটি নেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত সে নিয়ে যাবে, তারার ভাই এসে ঢাকা থেকে রাজশাহী নিয়ে যাবে।

কমলাপুর নেমে রাজশাহী যাওয়ার 'ধুমকেতু' ট্রেনে রাফি তারাকে তুলে দিলো, পাশের সিটে ওর ভাই।
এতদিন 'তারা' খালি বলতো আবার কখন বাড়ি যাবে, আজ বাড়ি যাওয়ার সময় শক্ত করে রাফির হাত ধরে আছে। হাত ছাড়ছে না, চোখ দু'টো ছলছল করছে।
গাড়ি হুইসেল দিচ্ছে এক্ষুনি ছেড়ে দিবে, জোর করে হাত ছাড়িয়ে রাফি নেমে গেলো।
'ধুমকেতু' রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো, "তারা' জানালা দিয়ে তার ভালবাসার মুখটাকে কিছুক্ষণ খুঁজলো, না পেয়ে মাথা নিচু করে কেঁদেই চলছে....!"

'তারা' এতক্ষণ ধরে টপটপ করে পরা চোখের পানিতে কোল ভিজিয়ে ফেলেছে।
এখন আর চোখের পানিতে কোচড় ভিজছে না, কিভাবে ভিজবে ছিচকাঁদুনে বউয়ের টপটপ করে পড়া চোখের পানিরূপী মুক্তা গুলো পাশে বসা রাফির হাতে জমছে.....!

'তারা' তার ভালবাসার মানুষটার জন্য কাঁদতে কাঁদতে হয়রান হয়ে, চোখ মুছে ভাইয়ের দিকে তাকালো।
"তারা' ভুত দেখার মত চমকে উঠলো, তার পাশে রাফি বসে মিটমিট করে হাসছে.....!"

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৯

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সুন্দর তো।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪০

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ....

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: তিন বার কবুল আর একটা রেজিস্টার খাতায় সাইন করা মানুষটা
তারার এত আপন হয়ে গেলো যে,
তার সাথে অজানা অচেনার পথে পা বাড়ালো.....!

......................................................................................
জীবনের এটা একটা গুরুত্ব পূর্ণ মোড়
এখানে কেউ জিতে কেউবা হারে

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৪৯

সালমা রুহী বলেছেন: আমিও এই পথের পথিক, তিন বার কবুল আর একটা রেজিস্টার খাতায় সিগনেচার।
তারপর অচেনা অজানা পরিবেশ......

৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:২৪

ওমেরা বলেছেন: তিন অক্ষরের ছোট্ট একটা শব্দ কবুল, কিন্ত কি অসীম শক্তিশালি।অচেনা আজানা দুজন মানুষকে কত কাছে এনে দেয় কত আপন করে বেঁধে রাখে বছরের পর বছর ।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মায়াবী একটা গল্পের জন্য।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৫০

সালমা রুহী বলেছেন: এত সুন্দর কমেন্ট আশা করি নি, অনেক ধন্যবাদ......

৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভালো লাগেনি।
মোটামোটি।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

সালমা রুহী বলেছেন: আপনার মোটামুটিকেই ধরে নেবো ভাল, ধন্যবাদ।
শুভ জন্মদিন......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.