নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের সাথে চলি, সময়ের কথা বলি।

সমালোচনা অপছন্দ করি না। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করি। গঠনমুলক সমালোচনাকে ভালবাসি।

সময়ের কন্ঠ

সত্য বলা পছন্দ করি। অন্যের কাছ থেকে শিখতে চাই। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করি।

সময়ের কন্ঠ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হযরত মুয়াবিয়াকে `সাহাবী’ বলা যাবে কিনা?

১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৫০


মুসলিম বিশ্বে যত ফিতনা, ফ্যাসাদ, বিভ্রান্তি, পথ ও মতের ভিন্নতা, আকিদার রকমফের সবকিছুর মুলে রয়েছেন এই হযরত মুয়াবিয়া। আমরা এখানে খুবই সংক্ষিপাতাকারে তা নিয়ে আলোচনা করব। হযরত মুয়াবিয়া মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। অবশ্য মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহন ব্যতীত কোন উপায়ও ছিল না। তার পিতা আবু সুফিয়ান, যিনি ছিলেন বদর যুদ্ধের প্রধান খলনায়ক, তিনিও ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। মুয়াবিয়ার মা হিন্দা এতোই ফ্যারসাস ছিলেন যে, রাসুলের চাচার কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিলেন। সে যাই হোক, পরবর্তীতে তারা ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। রাসুলের শেষ দুই বৎসরের কোন এক সময় মুয়াবিয়া রাসুলের নির্দেশে অহি লেখকের কাজও করেছিলেন। রাসুলের ওফাতের পর অনেক সাহাবী ইসলাম ত্যাগ করেন, অনেকে মুনাফেকির মধ্যে লিপ্ত হয়ে যান। আবার অনেকে ইসলাম ত্যাগ করার পর আবারো ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেন এবং ইসলামের জন্যে জীবন উৎসর্গ করেন। সাহাবা হযরত তুলায়হা (রা) ইসলাম ত্যাগ করে নিজেকে নবী দাবি করেছিলেন ও সাহাবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন! কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝে ইসলামে ফিরে সাহাবাদের সাথে নিয়েই ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বীরের মতন শাহাদাত বরণ করেছিলেন!
মুয়াবিয়ার পিতা আবু সুফিয়ান ছিলেন আরবের শক্তিশালী নেতা। মুয়াবিয়াও ব্যতিক্রম ছিলেন না। শক্তি আর আভিজাত্য তার রক্তে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে রাসুল ছিলেন খুবই সাধারন একটি পরিবারের সদস্য। রাসুলের ওফাতের পর রাসুল পরিবারের সদস্যরা খুব একটা অবহেলিত না হলেও, হযরত উসমান (রা) এর ওফাতের পর শুরু হয় মুয়াবিয়ার শক্তি প্রদর্শনের মহড়া। হযরত উসমান কিছু স্বজনপ্রীতি করেছিলেন বিধায় প্রচুর লোক তার বিরোধিতায় লিপ্ত ছিলেন। এক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। তাকে অবরুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা তাকে হত্যা করে। এই হত্যাকারীরা ছিল চরমভাবে সীমা লঙ্ঘনকারী। হযরত আলী এই বিদ্রোহীদের বিরোধিতা করলেও, পুরো মদীনা উসমানের বিরুদ্ধে ছিল বিধায় তিনি জোর গলায় কিছু বলতেও পারছিলেন না। কেননা উসমান বিরোধিরাই তাকে ঘিরে ছিলেন। তিনি অসহায় বোধ করছিলেন এবং তাকে খলিফা হতে বার বার অনুরোধ করা সত্বেও তিনি অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন। কেননা সেটা ছিল চরম ফিতনার সময়কাল। তবে বড় বড় সাহাবাদের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত হযরত আলী খিলাফতের দায়িত্ব হাতে নেন। হযরত জুবায়ের এবং হযরত তালহার মত বড় মাপের সাহাবীরা আলীর হাতে বায়াত করলেও তারা মক্কায় গিয়ে উম্মুল মুমেনীন আয়শা (রা)-কে আলীর বিরুদ্ধে মাঠে আসতে উদ্ভুদ্ধ করেন এবং অনাকাঙ্খিত উষ্ট্রের যুদ্ধে প্রচুর প্রানহানি ঘটে। এই যুদ্ধের অন্যতম উস্কানীদাতা ছিলেন হযরত মুয়াবিয়া। শেষ পর্যন্ত মা আয়শা যুদ্ধে পরাজিত হলেও আলী তাকে মায়ের মর্যাদায় বিদায় করেন এবং পক্ষে বিপক্ষের সকলকে ক্ষমা করেন এবং সকলের লাশ সমমর্যাদায় দাফন কাফন করেন। মা আয়শা মুয়াবিয়ার সর্মথক হলেও, তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন এবং পরবর্তী সময়ে আফসোস করে জীবন নির্বাহ করেন। মা আয়শা এমনিতেও আলীর বিরুদ্ধে ছিলেন। কেননা আলী সারাক্ষণই মা খাদিজার গুনগান করতেন যা আয়শার অপছন্দ ছিল। আলী মা খাদিজাকেই তার মায়ের আসনে বসিয়েছিলেন। একারনে আলী ও আয়শার মধ্যে একটা মানসিক দন্দ্ব আগে থেকেই ছিল। এদিকে উসমান হত্যার বিচারের দাবীতে মুয়াবিয়া অনড় অবস্থান গ্রহন করেন এবং আলীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে থাকেন। আলী খিলাফতের দায়িত্ব পালনে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। মুয়াবিয়াও প্রচন্ড শক্তি নিয়ে খলিফা আলীর বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। খলিফার সিদ্ধান্ত মানতে মুয়াবিয়া অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন এবং সিফফিনের যুদ্ধে পরাজয়ের মুখে মুয়াবিয়া ধূর্ততার আশ্রয়ে শান্তির প্রস্তাব দিয়ে নিজেকে খিলাফতের দাবীদারে পরিণত করেন। মুয়াবিয়াকে এই দুষ্কর্মে সহায়তা করেন সাহাবী আমর ইবনুল আস এবং মুগীরা ইবনে শোবা। সিফফিনের যুদ্ধে পরাজয় এড়াতে আমর ইবনুল আসের পরামর্শে মুয়াবিয়া কোরআনের দোহাই দেওয়ায় আলীর সৈন্যরা মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে অস্বীকৃতি জানান এবং শেষপর্যন্ত আলী তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। তার এই সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়ে একদল লোক আলীকে ত্যাগ করেন এবং তারা খারিজী নামে পরিচিতি লাভ করেন। খারিজীদের দ্বারা মুলতঃ মুয়াবিয়াই শক্তিশালী হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে খারিজীরা আলীকে হত্যা করলে মুয়াবিয়ার বড় বাধা দুর হয়ে যায়। কিন্তু মদীনাবাসী হযরত হাসানকে খলিফা নিয়োগ করলে মুয়াবিয়া আবারো বিদ্রোহ শুরু করেন এবং যুদ্ধ পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে শান্তিকামী হাসান ক্ষমতা ত্যাগ করেন এবং মুয়াবিয়ার সাথে এই মর্মে শান্তি চুক্তি করেন যে, মুয়াবিয়া ইসলামের পথে দেশ পরিচালনা করবেন। যেহেতু পুরাটাই মুসলিম সাম্রাজ্য সেহেতু ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনভাবে দেশ পরিচালনার কথা চিন্তাও করা যেতো না। মহানবী থেকে শুরু করে খোলাফায়ে রাশেদীনের সকলে ইসলামী বিধানে দেশ পরিচালনা করে এসেছেন। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহনের পর মুয়াবিয়া নানা ছলছাতুরীর মাধ্যমে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা থেকে সরে আসেন এবং বরাবরের মতই আহলে বাইতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেন। ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করেন এবং রাজতন্ত্র কায়েম করেন। তিনি হন মুসলিম দুনিয়ার প্রথম বাদশাহ। তার শাসনামলে তারই নির্দেশে গর্ভনররা মসজিদের মসজিদে আলীর বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াতেন। সাহাবী নামে খ্যাত মুগীরা ইবনে শোবা এবং মারওয়ান বিন হাকাম প্রতি জুমার খোতবায় আলীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেন। কুফায় বসবাসরত হুজর ইবনে আদী নামীয় এক বিশিষ্ট সাহাবী এর প্রতিবাদ করলে তাকে ও তার সাথীদের জীবন্ত কবর দেন মুয়াবিয়া। মা আয়শা এর প্রতিবাদ করলেও শুনেননি মুয়াবিয়া।
সমস্ত সীরাত, হাদিছ আর ইতিহাস ঘেঁটে বিচার বিশ্লেষন করলে মুয়াবিয়াকে সাহাবীর মর্যাদা দেয়া তো দুরের কথা, তাকে মুসলমান প্রমাণ করাই কষ্টকর। মুয়াবিয়ার দুষ্কর্মের সহযোগি আমর ইবনুল আস সাহাবী ছিলেন। তিনি মৃত্যুকালে স্বীকার করেন যে, তার দুনিয়া সৃষ্টি হয়েছে বটে, তবে আখেরাত ধ্বংস হয়েছে।’ উমাইয়া-আব্বাসীয় আমলে রাজ ফরমানকেও হাদিছ হিসাবে লিপি করানো হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ বানোয়াট ও মিথ্যা হাদিছের ছড়াছড়ি ছিল। হাদিছ সংগ্রাহকরাও যে স্বাধীন ছিল না, তা একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দেয়। মুয়াবিয়াকে সম্মান না দেয়ায় হাদিছ সংগ্রাহক ইমাম নাসায়ীকে রাজপথেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। উমাইয়া শাসন শুরুর পর থেকে আজ অব্দি মুসলিম বিশ্ব স্বাধীন হতে পারেনি। মক্কা-মদীনাতে আজো এজিদী শাসন চেপে আছে। মুয়াবিয়ার পক্ষে অনেক অনেক হাদিছ, সীরাত লিপি করানোর পরও সত্য চেপে রাখা যায়নি। মনে রাখতে হবে যে, মুয়াবিয়া মুসলিম বিশ্ব শাসন করেছিলেন, কাজেই তাকে মুসলিম খোলসে থাকতে হয়েছে। পরবর্তীকালে পরিবেশ পরিস্থিতি তো বটেই কোরআন-হাদিছের ব্যাখ্যাকেও উমাইয়াদের অনুকুলে নিয়ে আসা হয়। মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে লোক যখন ইসলাম গ্রহন করছিল, সেই সময়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। শিক্ষিত হওয়ায় তিনি মহানবীর নির্দেশে কোরআন লিখার কাজ করেছিলেন। ব্যস এটুকুই তার কীর্তি। যারা মুয়াবিয়াকে সাহাবীর সম্মান দিয়েও খুশি হতে পারেননি তারাই তার নামের আগে “কাতেব-এ অহি” জুড়ে দেন। মক্কা বিজয়ের অনেক পরে মুয়াবিয়া ইসলাম গ্রহন করেছিলেন। কোরআনের প্রায় সব আয়াতই তখন নাজিল হয়ে গেছে। কোরআন সম্পূর্ণ হতে তখন মাত্র আর কয়েকটি আয়াত বাকি ছিল। অহি লিখার সৌভাগ্য হল তার কি ভাবে? তাছাড়া কোরআনের কোন আয়াত মুয়াবিয়া লিখলেও তাতে কি হয়েছে? কখনও কখনও মুনাফিকদের সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে দিয়েও অহি লিখিয়েছেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। অথচ এই উবাইকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করে সুরা মুনাফেকুন নাজিল হয়েছে। মারওয়ানকেও অনেকে কাতেব-এ অহি বলে থাকেন কিন্তু তাকে তো সাহাবার মর্যাদা দেয়া হয় না। মুয়াবিয়ার অসংখ্য মুনাফেকি থাকা সত্ত্বেও যারা মুয়াবিয়ার সমালোচনা করলে ঈমান চলে যাবে বলে ফতোয়া দেন তাদের আগে নিজের ঈমান কতটুকু আছে তা ভেবে দেখা উচিত। মহানবীর ওফাতের পর তিনি ইসলামের খোলসে থেকেই একের পর এক ইসলামবিদ্বেষী কাজ করে গেছেন। আসুন মুয়াবিয়ার সেইসব কীর্তিকলাপ সম্পর্কে জানি-
১। মুয়াবিয়া আদ্যপান্ত আহলে বাইতের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করেছেন। আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য আলীর খেলাফতের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারন করেছেন।
২। আলীর বিরুদ্ধে সিফফিনের যুদ্ধে আলীর পক্ষের যোদ্ধা হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির শহীদ হন। এই আম্মার সম্পর্কে মহানবী ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন এই বলে যে, বাগী তথা বিদ্রোহী দল তাকে হত্যা করবে, যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডাকে। হযরত আম্মার-এর শাহাদতের ঘটনা মুয়াবিয়ার সেনাদের অনেকের মধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টি করে। কেউ কেউ বলতে থাকে- তাহলে প্রমাণিত হল আমরা যারা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি তারা জুলুমবাজ, বিদ্রোহী। ধূর্ত মুয়াবিয়া তাদের শান্ত করার জন্য বলেন যে, যারা আম্মারকে যুদ্ধক্ষেত্রে ডেকে এনেছে সেই আলীর দলই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী, তারাই আম্মারের হত্যাকারী! জবাবে হযরত আলী বলেছিলেন, তাহলে তো বলতে হয় রাসূল-ই তাঁর চাচা হযরত হামজার হত্যাকারী ছিলেন, (নাউজুবিল্লাহ!) কারণ, তিনিই তাঁকে ওহুদের যুদ্ধে নিয়ে এসেছিলেন! ইমাম বুখারির বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ বুখারিতে (বুখারি, খণ্ড-১, পৃ-৩৯৪) এসেছে: .... হায়রে আম্মার! বিদ্রোহী গোষ্ঠী তোমাকে হত্যা করবে। আম্মার তাদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকবে আর তারা (বিদ্রোহীরা) তাকে দোযখের আগুনের দিকে ডাকবে। (অর্থাত মুয়াবিয়ার দল জাহান্নামের দিকে আহ্বান জানাত। আর আম্মার ডাকতেন আলীর পথের দিকে তথা জান্নাতের দিকে।) এমন স্পষ্ট হাদিসের পরও মুয়াবিয়ার যুদ্ধকে ইজতিহাদি ভুল আখ্যা দেয়ার কোন সুযোগ থাকে কি? মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস তা জানা সত্ত্বেও আলী’র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অব্যাহত রেখেছিলেন এবং তারা আম্মারকে হত্যা করার পরও সঠিক পথ ধরেননি।
৩। মুয়াবিয়া বদরী সাহাবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং অনেক বদরী সাহাবীদের হত্যা করেছেন।
৪। মুয়াবিয়া সারা মুসলিম জাহানে মসজিদে মসজিদে আলীর বিরুদ্ধে খোতবা দিতে বাধ্য করেছিলেন। তার এই নীতির বিরোধিতা করায় বিখ্যাত সাহাবী হুজর ইবনে আদী ও তার সঙ্গীদের হত্যা করেছেন। মুসলিম শরীফের ফাজায়েল-এ আলী ইবনে আবু তালিব অধ্যায়ে লিখা আছে যে- মুয়াবিয়া তার সমস্ত প্রদেশের গভর্নর এর উপর এ আদেশ জারী করেন যে, সকল মসজিদের খতিবগণ মিম্বর থেকে আলীর উপর অভিসম্পত করাকে যেন তাদের দায়িত্ব মনে করেন। (মুসলিম শরীফ) কারো মৃত্যুর পর তাকে গালি দেয়া ইসলামী শরিয়তের পরিপন্থী।
৫। মুয়াবিয়া তৃতীয় খলিফা ওসমান হত্যার বদলা নেয়ার নাম করে সব কিছুর আগে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলে আলী'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিলেন। তার এইসব দাবি যে প্রতারণা ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় তিনি যখন আলী'র শাহাদতের পর থেকে নিজের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বহু বছরের মধ্যেও কখনও আর তৃতীয় খলিফাকে হত্যার বিচার প্রসঙ্গ মুখেও আনেনি এবং এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নেননি। অর্থাৎ ক্ষমতা দখলই ছিল মুয়াবিয়ার আসল লক্ষ্য।
৬। মুয়াবিয়া ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে রাজতন্ত্র কয়েম করে যান।
৭। মুয়াবিয়া তার ৪১ বৎসরের শাসনে একটি মসজিদও নির্মাণ করেননি।
৮। মুয়াবিয়ার কোষাগারের প্রধান (সেই সময়ে কোষাগার প্রধানই ছিলেন রাজার পরের স্থানে) ছিলেন একজন খৃষ্টান যাজক।
৯। মুয়াবিয়ার সেনাবাহিনীর বেশীর ভাগই ছিলেন খৃষ্টান সম্প্রদায়ের।
১০। ইহুদী এবং মুসলমানেরা উচ্চ পর্যায়ে খুব কমই ছিলেন।
১১। মুয়াবিয়ার প্রচলিত মুদ্রায় ছিল খৃষ্টানদের ক্রশ-এর চিহ্ন।
এগুলো ছাড়াও ইসলাম এবং আহলে বাইতের বিরুদ্ধে তিনি অনেক পদক্ষেপ কার্যকর করে গেছেন। ইমাম হাসান-কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা এবং এই মহান ইমামের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো লঙ্ঘনের কথা (যেমন, ইয়াজিদকে যুবরাজ নিয়োগ করা) বলা যায়।
ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে মুয়াবিয়া যে রাজতন্ত্র কায়েম করে গেছেন, সেই ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান আছে। রাজতন্ত্রীরাই আজো মক্কা-মদীনা শাসন করছেন। ইসলামের ইতিহাস এবং তাদের বানানো সহীহ হাদিছ দিয়ে তারা সবকিছু নিজেদের মত করে সাজিয়ে নিয়েছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন। মদীনা থেকে এই রাজতন্ত্রের দীক্ষা দেয়া হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সেজন্যে মদীনায় কোন ফিতনা বা দজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না মর্মে কথিত ‘সহীহ হাদিছ’ রচনা করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। মদীনা থেকে মগজ ধোলাই করে সারাবিশ্বে তথাকথিত সহীহ আকিদার মোল্লাদের প্রচারের জন্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে। তাদের কাছে সহীহ আকিদা বলতে সাহাবী মুয়াবিয়ার আকিদা। মুয়াবিয়ার ইসলাম বিদ্বেষী কাজ এবং আহলে বাইতের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপকে ‘ইজহিতাদ’ আখ্যা দিয়ে ইন্ডেমিনিটি দেয়া হয়েছে। মুয়াবিয়াকে কাতেবে ওহি জলিল কদর সাহাবী বানানো হয়েছে। তার দুরাচারী পুত্র ইয়াজিদকেও ইসলামী শাসকের তোকমা লাগানো হয়েছে। এইসব মানহাজের আকিদা হলো আলীও সঠিক, মুয়াবিয়াও সঠিক, ইয়াজিদও সঠিক, হুসাইনও সঠিক। হত্যাকারীও সঠিক, হত্যার শিকার ব্যক্তিও সঠিক, অর্থাৎ ন্যায়ও সঠিক, অন্যায়ও সঠিক। এই ধরনের একটা ম্যাসাকার আকিদার নাম হয়েছে ‘সহীহ আকিদা’ বা সালাফি বা আহলে হাদিস বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত। অথচ এরা কোরআন এবং রাসুলের প্রকৃত ইসলামের ধারেকাছেও নেই। যারা মুয়াবিয়াকে ভালবাসেন তারা কখনোই আলীর ভক্ত হতে পারেন না এবং যারা ইয়াজিদের পক্ষাবলম্বন করেন তারা কখনোই হুসাইনের পক্ষের লোক হতেই পারেন না। এটা মানসিকভাবেও সম্ভব নয়। কিন্তু মিথ্যাচার এবং ধোঁকাবাজির মাধ্যমে এই সব রাজতান্ত্রিক আলেমরা এ ধরনের ভ্রান্ত আকিদাকে ‘সহীহ আকীদা’ নাম দিয়ে মানুষকে গেলাবার জন্যে আধাজল খেয়ে নেমেছেন।
জ্ঞানপাপী এইসব রাজতান্ত্রিক আলেমরা শতশত বছর ধরে অবান্তর হাদিসের ভিত্তিতে দুশ্চরিত্র মুয়াবিয়াকে সাহাবী বানিয়ে রেখেছে৷যদিও পবিত্র কোরআন কারা সাহাবী হিসেবে গণ্য হবে তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে। তারপরও তারা নির্লজ্জের মত ফোর্থ হ্যান্ড হাদীস দেখিয়ে দাঁত কেলাচ্ছে! এবার দেখা যাক কোরআন কি বলছে- সূরা তওবা: আয়াত ১০০: ‘আর যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনছারদের মাঝে পুরাতন, এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ সে সমস্ত লোকদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন কানন-কুঞ্জ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত প্রস্রবণসমূহ। সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। এটাই হল মহান কৃতকার্যতা।’ মুয়াবিয়া আনসার বা মুহাজির কোনটাই ছিলেন না। রাজতন্ত্রের মোল্লারা অনাবশ্যকভাবে মুয়াবিয়াকে এ আয়াতের সাথে ফিট করে দেবার অপকৌশল চালিয়ে এসছেন। আল্লামা ইবনে জওযী রাঃ বর্ণনা করেন- আহমদ ইবনে হাম্বল তার পুত্রের প্রশ্নের জবাবে বলেন –হযরত আলীর মর্যাদা সম্পর্কে যে সমস্ত হাদিস মহানবী বলে গেছেন আর কোন সাহাবা সম্পর্কে এত হাদিস বর্ণিত হয়নি। কিন্তু হযরত আলীর শত্রুরা এই সব হাদিস বিকৃত করে ওইসব হাদিসে মুয়াবিয়ার নাম ঢুকিয়ে দেন। অতঃপর মুয়াবিয়ার নামে নতুন হাদিস রচনা শুরু হয়ে গেল।(আলে রাসুল ও মুয়াবিয়া)
একমাত্র রাজতন্ত্রী আলেম ছাড়া আর কেউ মুয়াবিয়াকে সাহাবীর মর্যাদা দেন না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যারা মুমীনদের হত্যা করে, তারা জাহান্নামী (সুরা নিসা, ৯৩)। ১৪৪ আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে অংকুরোদগম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যক্তিই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক ব্যক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে। [সহিহ মুসলিম ই ফা হাদিস নং ( অন লাইন) ১৪৪] সাহাবীরা বলেন “আমরা আলীর প্রতি ঘৃনা দেখে মুনাফেকদেরকে চিনতাম” [*ফাযাইলে সাহাবা , ইমাম হাম্বাল হাদিস নং ১০৮৬] “ আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন “রাসুল সাঃ আলী, ফাতেমা, হাসান আঃ হুসাইনের দিক দৃস্টিপাত করলেন এবং বললেন ‘আমি তাদের সাথে যুদ্ধরত থাকি যারা এদের সাথে যুদ্ধরত হয়, আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে”।[ফাদাইলে সাহাবা, খন্ড ২ হাদিস নং ১৩৫০, ইমাম হাম্বাল, মুস্তাদ্রাক ‘আলা সাহিহাইন, হাকিম নিশাবুরি। (অধ্যায় মান মানাকিবে আহলে রসুল)। “যায়েদ বিন আরকম রাঃ বলেছেন ‘ আল্লাহর রসুল সাঃ আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনদের সমদ্ধে বলেছেন আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে, আমি তাদের সাথে যুদ্ধরত হই যারা এদের সাথে যুদ্ধ করে”।[সুনান তিরমিযি (বাব/ অধ্যায় ফাযাইলে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ),(অধ্যায় মান মানাকিবে আহলে রসুল সাঃ) এবং সুনান ইবনে মাজা, অধ্যায় ফাযাইলে হাসান ও হুসাইন]
হযরত আলী(রা) বলেন-আমার ও মুয়াবিয়ার মহব্বত এক সাথে কোন ব্যক্তির হৃদয় থাকতে পারে না। (নাসাঈ এ কাফিয়া)
আবু জর গিফারী, আবু সাঈদ খুদরী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ‘আমরা সাহাবাগণ আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম’। সূত্র:-সহীহ্ মুসলীম, খঃ-১, হাঃ-১৪৪, (ই,ফাঃ); জামে আত তিরমিযী, খঃ ৬, হাঃ ৩৬৫৪-৩৬৫৫ (ই, সেন্টার); মেশকাত, খঃ-১১, হাঃ-৫৮৪১ (এমদাদীয়া); কাতবীনে ওহি, পৃঃ-২১২, (ই,ফাঃ); আশারা মোবাশশারা, পৃঃ-১৯৭ (এমদাদীয়া); হযরত আলী, পৃঃ-১৪ (এমদাদীয়া)] কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, যাঁদের উপর দরুদ না পড়লে নামাজ কবুল হয় না, (আহযাব-৫৬) যাঁদের আনুগত্যপূর্ণ ভালাবাসা পবিত্র কোরআনে ফরজ করা হয়েছে, (শুরা-২৩), সেই পাক পবিত্র আহলে বাইতের প্রথম সদস্য হযরত আলীর সাথে মহানবী (সাঃ)-এর ইহজগৎ ত্যাগ করার পর কতইনা জালিমের মত ব্যবহার করা হয়েছে। যার খলনায়ক মুয়াবিয়া এবং আমর ইবনুল আস গং।
একথা বলাই বাহুল্য যে, সীরাত এবং হাদীছ পর্যালোচনা করলে মুয়াবিয়াকে সাহাবী তো দুরের কথা, মুসলমান প্রমাণ করাই অতীব কষ্টসাধ্য। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোন মুসলমান তাদের সন্তানের নাম মুয়াবিয়া, আমর কিম্বা ইয়াজিদ রাখেননি। কেয়ামত পর্যন্ত তা কেউ রাখবেনও না। যারা মুয়াবিয়াকে সম্মান করেন, সাহাবী প্রমাণের অপচেষ্টা করেন তারা মুসলমান কিনা সীরাত এবং হাদীস গবেষনা করে আপনি নিজেই বিচার করে নিন।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



বকবক মকমক

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:০৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: ভালো লিখেছেন। আপনার বিশ্লেষণ ফেলে দেয়ার মতো না, প্রচুর চিন্তা-ভাবনার ব্যাপার আছে। শেষের মুদ্রা দু'টা কোন আমলের?

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:২১

নতুন বলেছেন: হযরত মুয়াবিয়াকে `সাহাবী’ বলা যাবে কিনা?

ইসলাম ধর্মে সাহাবী শব্দ (Arabic: الصحاب "সহচর";) দ্বারা মুহম্মদ (স) এর সাথী বা সহচরদের নির্দেশ করে। এর বহুবচন শব্দ সাহাবা।

তাই তাকে আপনি সাহাবী না বলার কোন কারন নাই।
তিনি হয়তো ভালো কাজ করেন নাই। তাই বলে তাকে আপনি সাহাবীদের কাতার থেকে বাদ দিতে পারেন না।

বলতে পারেন তিনি ভালো সাহাবী ছিলেন না। খারাপ মানুষ ছিলেন কিন্তু তিনি সাহাবী না সেটা অস্বীকার করার কিছু নাই।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:২৯

রেজাউল করিম ফকির বলেছেন: ইতিহাসের পাতায় হযরত মুয়াবিয়া সম্পর্কে লেখকের বর্ণনাই স্থান পেয়েছে। এগুলো আমি ছোটবেলা থেকেই পড়ে জেনেছি। কিন্তু এগুলো আমাদের দেশের আলেমদের কাছে পেশ করা হলে, তাঁরা বলেন যে, এসব ইসলাম সম্পর্কে শিয়া আলেমদের অপব্যাখ্যা।

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: অতীত দিনের সব ভুলে যান। নতুন করে বাচুন। নতুনের সাথে বাচুন। অতীতের কর্মকান্ড দিয়ে বর্তমান চলে না।

৬| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:২৬

জগতারন বলেছেন:
মুসলিম বিশ্বে যত ফিতনা, ফ্যাসাদ, বিভ্রান্তি, পথ ও মতের ভিন্নতা,
আকিদার রকমফের সবকিছুর মুলে রয়েছেন এই হযরত মুয়াবিয়া।


ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে মুয়াবিয়া যে রাজতন্ত্র কায়েম করে গেছেন,
সেই ধারাবাহিকতা আজো বিদ্যমান আছে।
রাজতন্ত্রীরাই আজো মক্কা-মদীনা শাসন করছেন।
ইসলামের ইতিহাস এবং তাদের বানানো সহীহ হাদিছ দিয়ে
তারা সবকিছু নিজেদের মত করে সাজিয়ে নিয়েছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন।
মদীনা থেকে এই রাজতন্ত্রের দীক্ষা দেয়া হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
সেজন্যে মদীনায় কোন ফিতনা বা দজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না
মর্মে কথিত ‘সহীহ হাদিছ’ রচনা করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
মদীনা থেকে মগজ ধোলাই করে সারাবিশ্বে তথাকথিত সহীহ
আকিদার মোল্লাদের প্রচারের জন্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল এবং এখনো হচ্ছে।
তাদের কাছে সহীহ আকিদা বলতে সাহাবী মুয়াবিয়ার আকিদা।



সহমত!

৭| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:০৩

ফটিকলাল বলেছেন: আপনি হযরত মুয়াবিয়া (সাঃ) এর ব্যাপারে বক্তব্য রেখেছেন, তাহলে সর্বাধিক হাদিস সংগ্রহকারি আহাদিস সম্রাট হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কে কি নিয়ে কি মত? তার হাদিস গুলোর ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ কি? ইসলামী শরীয়াহর একটা বড় অংশ হযরত হুরায়রা (রাঃ) বর্নিত হাদিসের ওপর ভিত্তি করে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং কেয়ামত, কবরের আজাব, পরকালের জান্নাত জাহান্নাম থেকে শুরু তাফসিরের একটা বড় অংশ জুড়ে তিনি আছেন। সেক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?

৮| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:১৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রাসুল (সা.)-এর দৃষ্টিতে হজরত মুয়াবিয়া (রা.)

হজরত উম্মে হারাম (রা.) বলেন, 'আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের সর্বপ্রথম সামুদ্রিক অভিযানে অংশগ্রহণকারী বাহিনীর জন্য জান্নাত অবধারিত'- (সহিহ বোখারি, হা. ২৯২৪) ।

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাল্লাব (রহ.) বলেন, 'হাদিসটিতে হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কেননা হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-ই ছিলেন ওই বাহিনীর সিপাহসালার'- (ফাতহুল বারী : ৬/১০২)

রাসুল (সা.) থেকে তাঁর সূত্রে ১৬৩টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবি উমায়রা (রা.) বলেন, 'রাসুল (সা.) মুয়াবিয়ার জন্য এ দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! মুয়াবিয়াকে সঠিক পথে পরিচালনা করুন ও তাঁকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কবুল করুন'- (তিরমিজি, হা. ৩৮৪২) ।

অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে হজরত ওমর (রা.) তাঁর খেলাফতকালে তাঁকে দামেস্কের আমির নিযুক্ত করেছিলেন। হজরত ওসমান (রা.) তাঁকে পুরো শামের (সিরিয়ার) আমির নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁদের খেলাফতকালে মুয়াবিয়া (রা.) ইসলামের বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক দেশ জয় করেছিলেন।

ইয়াজিদকে খলিফা বানানোর কারণ -

হজরত মুয়াবিয়া (রা.) যখন জীবন সায়াহ্নে পৌঁছলেন, বিশিষ্ট সাহাবি হজরত মুগিরা ইবনে শু'বা (রা.) যিনি বাইআতে রিদ্ওয়ানে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তিনি মুয়াবিয়া (রা.)-কে পরামর্শ দিলেন যে, হজরত ওসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর মুসলমানদের যে করুণ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, তা আপনার সামনেই রয়েছে। তাই আমার পরামর্শ হলো, সব প্রাদেশিক গভর্নরকে ডেকে আপনার জীবদ্দশায়ই ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত নিয়ে উম্মতকে রক্তক্ষয়ী হাঙ্গামা থেকে রক্ষা করুন। এ পরামর্শ আনুযায়ী হজরত মুয়াবিয়া (রা.) সব গভর্নরের কাছে এ মর্মে চিঠি প্রেরণ করলেন যে, আমি জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে গেছি, তাই চাচ্ছি যে, মুসলমানদের কল্যাণে আমার জীবদ্দশায়ই একজন খলিফা নিযুক্ত করে যাব। অতএব তোমরা নিজ নিজ পরামর্শ ও তোমাদের পরামর্শদাতাদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের পরামর্শও লিখে পাঠাও।

এতে বেশির ভাগ আমিরই ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার পক্ষে রায় দিলেন। কুফা, বসরা, শাম ও মিসরের লোকেরা ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে নিল। বাকি মক্কা-মদিনার গুরুত্ব বিবেচনা করে মুয়াবিয়া (রা.) স্বয়ং হিজাযে উপস্থিত হয়ে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এতে মক্কা-মদিনার জনসাধারণও ইয়াজিদের বাইয়াত গ্রহণ করে নিলেন। আর হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.), হুসাইন ইবনে আলী (রা.). ও আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর (রা.)- এ পাঁচজনের ব্যাপারে খেলাফত মেনে না নেওয়ার শঙ্কা থাকায় মুয়াবিয়া (রা.) পৃথক পৃথক প্রত্যেকের সঙ্গে মিলিত হয়ে পরামর্শ করেন। এতে প্রথমোক্ত চারজন এ বলে মেনে নিলেন যে, সব লোক স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শুধু হজরত আবদুর রহমান ইবনে আবী বকর (রা.) এতে দ্বিমত পোষণ করলেন। এভাবে বেশির ভাগ উম্মতের রায় মতে ইয়াজিদের খেলাফত নিশ্চিত হলো। তাই মুয়াবিয়া (রা.)-এর ইন্তেকালের পর ইয়াজিদ থেকে যেসব অন্যায় কাজ সংঘটিত হয়েছিল, তার দায়ভার মুয়াবিয়া (রা.)-এর ওপর বর্তাবে না, বরং ইয়াজিদের অন্যায়ের জন্য তিনি নিজেই দায়ী

৯| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:১৭

ইসলামি দরবার বলেছেন: মুয়াবিয়া এ সাহাবী বলা যায় কি না তা বলা কঠিন।
তবে ওনাকে মুসলমান বলা আরও কঠিন।
মক্কার বিশেষ কিছু পরিবারের ইসলাম গ্রহনের প্রতি নবীজি সাঃ বিশেষ আগ্রহী ছিলান। আর নবীজি সাঃ এর এই আগ্রহকে বড় বড় সাহাবীগণ খুবই গুরুত্ব দিতেন। যার ফলে মুয়াবিয়া এত কিছু করার সুযোগ পেয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.