![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৭১। বাংলাদেশে তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। দেশ ছেড়ে লাখো মানুষ জীবন বাঁচাতে ছুটে আসছে কলকাতায়। আকাশবাণী রেডিও আর খবরের কাগজের মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে পাকবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের কথা। তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়ান কলকাতার সর্বস্তরের মানুষ। কলকাতার কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা কলম ধরেন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে।
সেই একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ডাকে সাড়া দেন কলকাতার এক গীতিকবি। তখন তাঁর বয়স ৪১ বছর। নাম গোবিন্দ হালদার। তিনি আয়কর দপ্তরের একজন কর্মী। কাজের ফাঁকে লেখেন কবিতা আর গান। তাঁর গান আকাশবাণীতে নিয়মিত প্রচার করা হতো। তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখে ফেলেন বেশ কিছু গান। কিন্তু কীভাবে এই গানগুলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচার করা যায়, এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে যান।
একদিন ঠিকই সুযোগ এসে যায় গোবিন্দ হালদারের। তাঁর গানগুলো এক এক করে প্রচার করা হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। তাঁর গানে আরও উজ্জীবিত হন মুক্তিযোদ্ধারা।
গোবিন্দ হালদারের লেখা সেই অবিস্নরণীয় গানগুলো হলো−”মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে”, “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে”, “পূর্ব দিগন্তে সুর্য উঠেছে”, “লেফট রাইট লেফট রাইট”, “হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার”, “পদ্মা মেঘনা যমুনা”, “চল বীর সৈনিক”, “হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি” প্রভৃতি।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩৭ বছর পার করেছি আমরা। মুক্তিযুদ্ধের সেই অবিস্নরণীয় গানের গীতিকার গোবিন্দ হালদারের বয়স এখন ৭৮ বছর। বার্ধক্য আর অসুস্থতার কারণে তাঁর কলম এখন বন্ধ। ডান চোখ গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। শরীরও ভেঙে পড়েছে। গোবিন্দ হালদার আজ মৃত্যুর সায়াহ্নে। কলকাতার রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের এক সরকারি আবাসনের একচিলতে কোঠায় জীবনের শেষ প্রহর গুনছেন। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী। একমাত্র কন্যা গোপা হালদারের বিয়ে হয়ে গেছে। সরকারি পেনশন নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি আজও। ছেড়ে যাননি এই সরকারি আবাস। এখন অনেকটাই অসুস্থ। অস্পষ্ট তাঁর কন্ঠস্বর। তবে এখনো তাঁর কাছে জ্বলজ্বলে একাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্নৃতি, তাঁর লেখা মুক্তিযুদ্ধের গানের কথা।
তবু অতীত হাতড়িয়ে বললেন, “আমার এক বন্ধু ছিলেন। নাম কামাল আহমেদ। কমার্শিয়াল আর্টিস্ট। থাকতেন কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকার ঝাউতলা রোডে। কামালের স্ত্রী ঢাকা বেতারের উর্দু বিভাগে কাজ করতেন। এখন তাঁরা থাকেন কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে। যা-ই হোক, একদিন কামাল আমাকে বললেন, “তুমি তো ভালো গান লেখ। এবার তুমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর কিছু গান লেখো। আমি তা স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারের ব্যবস্থা করে দেব।” আমি তখন আয়কর বিভাগে কর্মরত থাকার মধ্যেই আকাশবাণীর তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে নিয়মিত গান লিখতাম। কামালের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করি গান লেখা। একটি লাইনটানা খাতায় একের পর এক লিখে ফেলি ১৫টি গান।”
একটু বিরতি নিয়ে আবার শুরু করেন তিনি, “কামাল আমার গানের কলি দেখে দারুণ খুশি। আমাকে নিয়ে গেলেন স্বাধীন বাংলা বেতারের অন্যতম কর্ণধার কামাল লোহানীর কাছে। আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর তাঁর হাতে তুলে দেন ওই গানের খাতাটি। একদিন হঠাৎ শুনতে পাই আমার লেখা “পূর্ব দিগন্তে সুর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল”−গানটি স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত হয়েছে। গানটির সুর দিয়েছিলেন প্রয়াত সুরকার সমর দাস। এরপর আবার ভেসে আসে, “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি” গানটি। তারপর আরও কটি গান। আর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর সম্ভবত ২৩ কিংবা ২৪ ডিসেম্বর ভেসে আসে সেই অবিস্নরণীয় গানটি, “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা” গানটি। তখন কী যে আনন্দ আমার! গানটির সুর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও শিল্পী আপেল মাহমুদ।”
গোবিন্দ হালদার এ গানের কথা বলতে গিয়ে বললেন, “আপেল মাহমুদ তখন শিয়ালদহ স্টেশনের পূরবী সিনেমার পাশে মহাত্মা গান্ধী রোডের শ্রীনিকেতন বোর্ডিংয়ে থাকতেন। এখন অবশ্য ওই বোর্ডিংয়ের নাম বদলে গেছে। আপেল মাহমুদ সে সময় আমাদের বাসায় নিয়মিত আসতেন। মনে আছে, আমি ২১ ডিসেম্বরের দিকে আপেল মাহমুদের সেই বোর্ডিংয়ে যাই। তখন তিনি গানটি আমাকে গেয়ে শোনান। দারুণ লেগেছিল। আমার যতটুকু মনে পড়ে, একাত্তরের ২৩ কিংবা ২৪ ডিসেম্বর গানটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারে। গানটির লিডিং ভয়েস ছিল স্বপ্না রায়ের। আর কন্ঠ দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ ও সহশিল্পীরা। এখন স্বপ্না রায় কোথায় আছেন জানি না। স্বপ্না রায়ের বাড়ি ছিল কুমিল্লায়। তখন স্বপ্না রায়ের বয়স ছিল ২১-২২ বছর। মুক্তিযুদ্ধের সময় মা-বাবাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতেই ছিলেন স্বপ্না রায়। পাশের রুমে বসে গানের রেওয়াজ করতেন। পরে অবশ্য ওঁরা সোদপুর তারপরে দুর্গাপুর চলে যান। স্বপ্না রায়ের এক দাদা ছিলেন। তিনি চা-বাগানে চাকরি করতেন। আমি ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় স্বপ্না রায়ের বাড়িতে বেড়াতেও গিয়েছিলাম। বাঁশের বেড়ার বাড়ি ছিল। পরে শুনেছি ঢাকার এক শিল্পীর সঙ্গে তাঁর কলকাতায় রেজিস্ট্রি বিয়েও হয়। একসময় তিনি ঢাকায় চলে যান।”
গোবিন্দ হালদার জানান, বাংলাদেশ বেতার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর লেখা সাতটি গান প্রচার করা হয়েছিল। তিনি আরও বললেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক রেকর্ড করা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত মুক্তিযুদ্ধের গানের একটি লং প্লে রেকর্ডে তাঁর লেখা তিনটি গান ঠাঁই পায়। এ ছাড়া ১৯৭২ সালে এইচএমভি বিক্ষুব্ধ বাংলা নামের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি গীতি-আলেখ্যের লং প্লে রেকর্ডে তাঁর লেখা দুটি গান ঠাঁই পায়। এইচএমভি একই বছর বের করে বাংলাদেশের হূদয় হতে নামের আরেকটি লং পে রেকর্ড। তাতেও স্থান পায় তাঁর লেখা “পূর্ব দিগন্তে সুর্য উঠেছে” গানটি। বললেন, ৪০টি গান প্রচারিত হয়েছে আকাশবাণীতে। আর স্বাধীন বাংলা বেতারে সাতটি। তিনি ছিলেন আকাশবাণীর তালিকাভুক্ত গীতিকার। গোবিন্দ হালদার আরও দুঃখ করে বললেন, স্বাধীনতার পর তিনি কয়েক বছর ঢাকা বেতার কেন্দ্র ও টেলিভিশন থেকে তাঁর গানের জন্য রয়্যালটি পেলেও তা বন্ধ হয়ে গেছে বহু বছর আগে। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাঁর অসুস্থতার খবর শুনে কিছু আর্থিক সাহায্য করেছিল। এ ছাড়া মরমি কবি সাবির আহমেদ চৌধুরী গোবিন্দ হালদার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন করে কিছু চাঁদা তুলেও তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। এ বছরের নভেম্বরে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান স্কলারস বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনাবাসী বাংলাদেশিরা।
গোবিন্দ হালদার বললেন, “আমার সুনাম, যশ, প্রতিষ্ঠা−সবকিছু বাংলাদেশ ঘিরে। বাংলাদেশ আমার জীবন, আমার ভালোবাসা, আমার উত্থান, আমার প্রতিষ্ঠার মূল চাবি।”
২| ৩০ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৫৯
টেকনলজী বলেছেন: আপেল মাহমুদ তো দাবী করছেন তীরহার এই ঢেউয়ের সাগর তার লেখা
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ২:৩৪
সকাল রয় বলেছেন:
সুন্দর গল্প
ধন্যবাদ
সময় পেলে আমার একটা আছে পড়ে দেখুন।