![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে... বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে
➨ এপ্রিল, ১৯৭৯ সাল
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই বাংলাদেশ সফরে এলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর না হয় যেন, সে জন্য আরবি উক্তি সংবলিত ঢাকা শহরের সব বিলবোর্ড ঢেকে দেয়ার নির্দেশ দেন (সূত্র: আলী যাকের, দৈনিক সমকাল, ১১/০৭/১১ )। সেইসাথে মোরারজি দেশাইকে কথা দেন যে তিনি (জিয়া) বাংলাদেশের মাটিতে অবস্থানরত ভারতের মিজো বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একশনে যাবেন যাতে তারা বাংলাদেশী ভুখন্ড ব্যবহার করতে না পারে। ( সূত্র: Foreign Policy of India: 1947-1987/Jayapalan, N, পৃষ্ঠা ৩৩০)
■ আলী যাকের, দৈনিক সমকাল, ১১/০৭/১১:
".....তাদের (বিএনপি) শাসনামলের প্রথম দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই যখন বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর না হয় যেন, সে কারণে আরবি উক্তিসংবলিত সব বিলবোর্ড ঢেকে দেওয়া হয়েছিল, সে কথা কি সবাই ভুলে গেছে? তাদের নেতাই এটি করেছিলেন। কেন? কারণ, যারা দুর্বল, তারা পেছনে অনেক কথাই বলতে পারে। সামনাসামনি দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলার সাহস তাদের নেই।...."
■ Foreign Policy of India: 1947-1987/Jayapalan, N, পৃষ্ঠা ৩৩০
➨ মে, ১৯৯২ সাল
মে মাসের (২৬-২৮ তারিখে) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে ঐ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এর সাথে দেখা করেন। দেশে ফেরার পর ফারাক্কা নিয়ে আলোচনা হয়েছিলে কিনা সেটা এক সাংবাদিক জানতে চাওয়ায় খালেদা জিয়া বলেন যে তিনি ফারাক্কার কথা বেমুলুম ভুলে গিয়েছিলেন!
"In this connection, she recalled the visit of Khaleda Zia to India when she was the Prime Minister and said at that time she totally forgot to raise the water-sharing issue."
➨ অক্টোবর ২০১২ সাল
আর আজকে খালেদা জিয়া বিরোধীদলের নেতা হিসাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কে বললেন -
“বিরোধীদলীয় নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, সরকারে থাকলে বিএনপি ভারতের বিরুদ্ধে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাস করতে দেবে না। এরকম কাজে দেশের ভূমি কখনোই কাউকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।”
খালেদা জিয়া বলেন, “নানামুখী সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা নিরসনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমি আন্তরিক ও দৃঢ়তার সঙ্গে একথা দিতে চাই- আমরা সরকারে থাকলে বাংলাদেশের মাটিতে কাউকে ভারতের বিরুদ্ধে কোনো রকম তৎপরতা করতে দেব না।”
কস্কি মমিন!
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:১৪
সামদ বলেছেন: রাজার নীতি হল রাজনীতি। আমরা আম জনতা দেখি শুনি আর বুঝতে চেষ্টা করি কেবল।
২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৩৬
বলদ বাবা বলেছেন: যত যাই বলুক, খালেদা কি কখনো দাদাদের কাছে হাসিনার মত সম্মান পাবে?
হাসিনাকে দাদারা বাংলাদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলে আপন করে নেয়,
হাসিনার কপালে কি সুন্দর করে নিজ বধুর মত সিঁদুর পড়িয়ে দেয়, এমন ভালোবাসা কি আর কারও কপালে জুটবে!!
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৫১
সামদ বলেছেন: আপনার নিকটা কিন্তু চমৎকার। নিজেকে কয়জন এভাবে পরিস্কারভাবে প্রকাশ করতে পারে?
৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:১৪
বলদ বাবা বলেছেন: হুম ঠিক কইচেন মিয়া বাই। মুখ্যমন্ত্রীও তেমনি হাসিনার জন্য উপযুক্ত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ভারতের মুখ্যমন্ত্রী টাইটেলেই তারে বেশী মানায়
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩৮
সামদ বলেছেন: এটা জিয়া ও খালেদা জিয়ার সাথে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের সাথে আলোচনা নিয়ে পোষ্ট। আর আপনে এসেছেন অন্য দলের লোকজনদের নিয়ে। পোষ্টের লাইনে থাকেন পারলে।
৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩০
কামরুল হাসান শািহ বলেছেন: আলী যাকের কেডা?? জিয়ার আমলের কোন লিংক আছে??
আইচ্ছা জিয়া বা খালেদা জিয়া ভারতের ুটু মারা রাস্তা দিতে কখনও নিজ দেশের নদীতে বাঁধ দিছে??
খালেদা জিয়া কি গোপন কোন চুক্তি করে এসে বলছে আমরা সফল হইছি? কিংবা ফটকাবাজীর পুরস্কার নিতে কখনও ভারত গেছে??
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৪৬
সামদ বলেছেন: আসলেই তো আলী যাকের কে? ঐ যে টিভিতে অভিনয় করে সেই লোক। আপনার মত বিখ্যাত জ্ঞানী গুনী পরিচিত কেউ না।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৪৭
সামদ বলেছেন: পোষ্ট থেকে -
মে মাসের (২৬-২৮ তারিখে) তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে ঐ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এর সাথে দেখা করেন। দেশে ফেরার পর ফারাক্কা নিয়ে আলোচনা হয়েছিলে কিনা সেটা এক সাংবাদিক জানতে চাওয়ায় খালেদা জিয়া বলেন যে তিনি ফারাক্কার কথা বেমুলুম ভুলে গিয়েছিলেন! /
"In this connection, she recalled the visit of Khaleda Zia to India when she was the Prime Minister and said at that time she totally forgot to raise the water-sharing issue."
৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩৬
ইঁন্দুর বলেছেন: ভারতের দালালী করার অধিকার একমাত্র হাম্বা লীগের । এই অধিকারে ভাগ বসানোর ইচ্ছায় ম্যাডামের ভারত ভ্রমনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৪০
সামদ বলেছেন: তা যা বলেছেন খাসা।
৬| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:০১
বলদ বাবা বলেছেন: ভাই, আমি তো পোষ্টের লাইনেই আছি। আপনে রেফারেন্সসহ পোষ্ট দিলেন, কিছু না কিছু সত্য তো আছেই। কিন্তু আপনের কথায় বুঝলাম না, খালেদার দোষটা কোন জায়গায়? তার কি মনমোহনের এই আমন্ত্রণ রক্ষা করা উচিত হয় নাই?
৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:২৯
সামদ বলেছেন: আপনি যদি ঠিক এই মন্তব্যটা প্রথমে দিতেন অযথা হাসিনারে টেনে না এনে, তাহলে আপনার সাথে আলোচনা চলতেই পারত। আপনে প্রথমেই দিলেন টিটকারী, এরপর কি আর র্যাশনাল কথাবার্তা কন্টিনিউ করা যায় ভাই?
৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ২:৫৮
বলদ বাবা বলেছেন: আপনে এমনে পিছলা দিলেন ভাই? আপনার কাঁছ থেকে উত্তরটা পাবার খুব ইচ্ছা ছিল। আমার কোন কমেন্টই লাইন ছাড়া বেলাইনে করি নাই
৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ ভোর ৬:৪২
সামদ বলেছেন: হা হা হা, বুঝাই যাচ্ছে আপনার আর আমার "প্রসঙ্গে থাকার" ডেফিনিশন আলাদা। যেমন আমি মনে করি বর্ষাকাল নিয়ে রচনা লেখা হলে সেই কাল নিয়ে আলোচনা করাটা প্রাসঙ্গিক। সেটা শেষ করে সময় সুযোগ থাকলে বাকি ৫টা কাল নিয়ে কথা হয়ত বলা যায়। আর আপনি ধারনা করেন যে সামার যেহেতু রেইনের চাইতে ভিন্ন তো অপোজিট টা আগে কইয়া আসি! মজাই লাগল।
৮| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ রাত ২:১৫
সামদ বলেছেন: দেবে আর নেবে মেলাবে, মিলিবে
আলী যাকের
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, পারস্পরিক সম্মান, সহযোগিতা ও সমঝোতা কেবল তখনই সম্ভব হয়, যখন স্বচ্ছ মনমানসিকতা নিয়ে দুই ব্যক্তি কিংবা দুই দেশ একে অন্যের প্রতি সত্যিকারের বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। ইন্দিরা গান্ধী ওই রকম মনমানসিকতা নিয়েই সমূহ বিপদ সামনে জেনেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতি। অথচ আমরা ভারতবিদ্বেষী কথা বলাকে আমাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি অবলীলায়। সেই সঙ্গে ধর্মের জিগির তুলতেও আমরা দ্বিধা করি না
সম্প্রতি ভারতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রী এবং সে দেশের ক্ষমতাসীন জোটের নেত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধীর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি মূলত এসেছিলেন ঢাকায় অনুষ্ঠিত অটিজম সম্পর্কিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন করতে। ওই উদ্বোধনের পর বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননাও তিনি গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রেখেছেন যেসব ভিন দেশি নাগরিক, তাদের সবাইকে বিশেষ সম্মাননা প্রদর্শন করা হবে। ইন্দিরা গান্ধীকে সেই সম্মাননার প্রথম প্রাপক হিসেবে নির্বাচন করা হয়। এ নির্বাচন যে সব দিক থেকেই সবচেয়ে উপযোগী ছিল, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সম্মাননা প্রদানের দিন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ওপর গৃহীত নানা তথ্যচিত্র সমন্বয়ে নির্মিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন দেখানো হয়। এ ছাড়া তার বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রস্তাব এবং দলিল-দস্তাবেজে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার আপসহীন, ঋজু নেতৃত্ব এবং বিচক্ষণ অবস্থান সম্বন্ধে আমরা সবাই সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারি। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নেতৃত্বে বিভিন্ন পশ্চিমা পরাশক্তি এবং আমাদের অতি নিকটের চীন দেশ পাকিস্তানের পক্ষে যেমন উলঙ্গভাবে অবস্থান নিয়েছিল, তখনকার ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের যে কোনো দুর্বল দেশ এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ অবলম্বন করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ত। কেবল তা-ই নয়, ওইসব পরাশক্তির হুমকি-ধমকির কাছে পরাজয় স্বীকার না করাই ছিল আশ্চর্যজনক এক বিষয়। প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী ওইসব বাধাবিপত্তিকে নানাভাবে তুচ্ছ করে এগিয়ে এসেছিলেন গণতন্ত্রের পক্ষে, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, সত্যের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিতে। তার একটি বচন আমার এখনও স্পষ্ট কানে বাজে। তাকে যখন মার্কিন সরকার এই বলে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছিল যে, তিনি কেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য ভারতের সীমানা খুলে দিয়েছিলেন এবং এখানকার সাধারণ মানুষকে সে সীমানা অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে প্রবেশ করতে দিয়েছিলেন? তখন তার উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, 'আমার পাশের ঘরে যখন আগুন লাগবে, মানুষের আর্তচিৎকার আমি শুনব, তাদের আবেদনকে তুচ্ছ করে আমি কি আমার ঘরের দরজা বন্ধ রাখতে পারি? এটা নিতান্তই মানবিক যে, আমার পাশের দেশের মানুষ যখন আক্রান্ত হয়, তখন তার আশ্রয়ে আমার দ্বার আমি খুলে দেব।'
সব রকম বিপদ-বাধাকে তুচ্ছ করে এ রকম একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ক'জন রাষ্ট্রনেতা আজ পর্যন্ত নিতে পেরেছেন, আমার জানা নেই। ইন্দিরা গান্ধী পেরেছিলেন। এবং এর পেছনে শক্তভাবে দাঁড়ানোর জন্য তিনি তার দেশের মানুষকে তৈরি করেছিলেন। তারা সবাই দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে এসেছিল পূর্ববঙ্গের লাঞ্ছিত, অবহেলিত, আক্রান্ত মানুষের পাশে ভাই হিসেবে দাঁড়াতে, বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দিতে। এ কথা কী করে ভুলি যে, ওই সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে? সেসব সৈন্যের রক্ত রঞ্জিত করেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিকে। মিলেমিশে গিয়েছিল বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সৈন্যের রক্ত। কী করে ভুলি যে, স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী ভারতীয় সৈন্য ফিরে গিয়েছিল নিজ দেশে? বাংলাদেশের প্রয়োজনের চেয়ে এক দিনও বেশি অবস্থান না করে। কী করে ভুলব যে, ওই যুদ্ধের সময় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল ভারতের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে? ভুলি কী করে যে, ইন্দিরা গান্ধী বিশ্বময় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে? চেষ্টা চালিয়েছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির এবং আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবল্পুব্দকে পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার?
অথচ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব দানকারী চার নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার পর একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয় আমাদের ভুলিয়ে দিতে যে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অথবা এর নেতাদের কী ভূমিকা ছিল। নিতান্ত ক্ষুদ্র মনের অধিকারী না হলে এ কৃতঘ্নতা কোনো দেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব বলে আমি মনে করি না। তবে এ বিষয়টি বোধ হয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে, যারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে কিংবা রাজনীতিতে হত্যা, ষড়যন্ত্র ও ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতাবদল ঘটিয়েছিল, তারা ছিল পাকিস্তানি পরাজিত শত্রুরই অনুচর। এরা মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই ষড়যন্ত্র করে চলেছিল, কী করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করা যায়। আমাদের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে, পাকিস্তানের বশ্যতা স্বীকার করে, আবার একটি আধা-উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যেসব দেশ নিদ্বর্িধায় তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, তাদের সঙ্গেও সম্পর্কচ্ছেদ করতে হয় বৈকি। এ কারণেই আমরা দেখতে পাই, আমাদের অতি নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির সূত্রপাত।
সেদিন অটিজম সম্পর্কিত সেমিনারের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছেন, অর্থনীতি থেকে শুরু করে গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে এ মুহূর্তে। ইন্দিরা যেমন মহৎ হৃদয়ের মানুষ ছিলেন এবং যেমন স্পষ্টবাদী ছিলেন, তারই সানি্নধ্যে লালিত সোনিয়া গান্ধীর উচ্চারণে সেই মাহাত্ম্যই প্রকাশ পেয়েছে। অথচ ক্ষুদ্রমনা আমরা এ মানসিকতার যথাযথ স্বীকৃতি দিতে সবসময়ই অপারগ।
সোনিয়া গান্ধী এক দিনে একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার পর ফিরে গেছেন দিলি্লতে। তার এ সফর পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতি রাতে আমাদের ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এবং পত্রপত্রিকায় প্রতিদিন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নানা রকম আলোচনার অবতারণা করা হচ্ছে। আমার আজকের প্রসঙ্গ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর এ আলোচনা এবং মতবাদের একটা বিশ্লেষণের চেষ্টা, যা থেকে আমরা হয়তো সত্যের অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হতে পারব। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য এ বিষয়টি নিতান্ত জরুরি। ইতিহাসের পদযুগল প্রোথিত থাকতে হবে শক্তভাবে শক্ত মাটির ওপর। আমারই কোনো নাটকের একটি সংলাপ ছিল, 'চোরাবালির ওপর ইমারত গড়া যায় না।' অর্থাৎ মিথ্যার বেসাতি দিয়ে যদি ভিত্তি স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়, সময়ে সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে বাধ্য। কিছু কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন কোনো রকম ধোঁয়াশা না রেখেই।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে যে সন্দেহ এবং বৈষম্য আমরা লক্ষ্য করি, তার শুরু কবে থেকে? আমরা সবাই স্বীকার করব যে, ১৯৭১-এ পাকিস্তানের সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে ভারত কেবল আমাদের পাশেই এসে দাঁড়ায়নি, আমাদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা প্রদান করেছিল এবং তারও অধিক, তারা আমাদের কাঁধে কাঁধ রেখে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। সে সময় ভারত সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এবং বঙ্গবল্পুব্দকে নৃসংশভাবে হত্যা করে এক স্বৈরাচারী সামরিক জান্তা যখন বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে নেয়, তখনও ভারতের নেতৃত্বে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি এবং গণতন্ত্রের প্রতি, এ কথা আমরা সবাই জানি। তিনি বাংলাদেশের এ বিপর্যয়কে কোনোমতেই মেনে নিতে পারেননি। তবুও একজন সত্যিকারে গণতান্ত্রিক সহনশীলতাসম্পন্ন নেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশে সংঘটিত সব দুরাচারকে আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে কখনোই কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয় তখনই, যখন বাংলাদেশের সামরিক জান্তা পাকিস্তানি স্টাইলে ভারতকে বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। এ কথা অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে বলেছিল বাংলাদেশের তখনকার ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা এবং তাদের উত্তরসূরিরা এখনও সময় সময় তাদের নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য ওই কথাই বলে বেড়ায়। যদিও অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সুর অনেকটা নরম হয়ে এসেছে। এক হাতে কখনও তালি বাজে না। আমার দেশসংলগ্ন একটি দেশ, যা আমাকে তিন দিক থেকে ঘিরে রয়েছে এবং আমার স্বাধীনতায় যার অবদান অনস্বীকার্য, তাকেই যদি আমি শত্রু হিসেবে গণ্য করি, তাহলে সে দেশটি কেন আমার প্রতি আহ্লাদে আটখানা হয়ে তার গলা বাড়িয়ে দিয়ে মাথাটা হারাবে? অতএব, এটাই স্বাভাবিক যে, ইট ছুড়ে মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। এবং যেমন ইংরেজিতে বলা হয়, 'কাচের দুর্গে বাস করে কারও প্রতি ঢিল ছোড়া যায় না।' এ চিন্তাগুলো বোধ হয় আমাদের সামরিক শাসকদের মাথায় কোনোদিন ঢোকেনি। সমূহ বিপদ জেনেও এ কথা বলার লোভ সংবরণ করতে পারছি না, যুক্তির কোনো কথাই কোনোদিন কি তাদের মাথায় ঢুকেছে? অতএব, যা হওয়ার তা-ই হয়েছিল। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ফলে গঙ্গার যে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি আমরা পাচ্ছিলাম, সেটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, সে ব্যাপারেও ভারত নিস্পৃহ হয়ে পড়েছিল। সীমান্তে গোলযোগ নিরসনে ভারতের কোনো উদ্যোগই আমরা দেখতে পাইনি। ছিটমহলগুলো সম্বন্ধে ওই মুজিব-ইন্দিরা বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তাও শীতল প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপিত হয়। এ রকম আরও হাজারো নিদর্শন হাজির করা যায়, এ আলোচনা প্রসঙ্গে যা থেকে আমি বিরত থাকব স্থান সংকুলানের স্বার্থে।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের শুরু হয় দুটি মানুষের মধ্যে। একজন সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি এ কথা মানি যে, দু'জন মানুষের মধ্যে ঠিক যেমন ভাবের আদান-প্রদান হতে পারে, হাতে হাত ধরে এগিয়ে চলা যেতে পারে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুখ ও দুঃখকে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে, অথবা তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে পারস্পরিক মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলা যেতে পারে, একইভাবে দুটি রাষ্ট্রের ব্যাপারেও সম্পর্কের অগ্রগতি, কী অধঃগতি নির্ভর করে। তবে এটা সত্য যে, দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও অনেক রাষ্ট্রের স্বার্থ হয়তো ভাবনা-চিন্তা করে দেখার বিষয় আছে। কিন্তু সর্বাগ্রে যে দুটি রাষ্ট্রের প্রতিবেশী হিসেবে অবস্থান, সে দুটির ইচ্ছা-অনিচ্ছাই সবচেয়ে প্রধান। আমরা জানি, পারস্পরিক বল্পুব্দত্বের মাধ্যমে অনেক কিছুই অর্জন করা যায়। আজকের বিশ্বের সবচেয়ে দাপুটে যে পরাশক্তি, সেই যুক্তরাষ্ট্রও তার একসময়ের সবচেয়ে বড় শত্রু চীনের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সম্পর্ককে মোটামুটি একটি সহনীয় জায়গায় নিয়ে এসেছে। হঠাৎ মনে পড়ল, সাম্যবাদী বিশ্বকে একসময়ের অতি জনপ্রিয় মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যান 'শয়তান' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। সে কথা ভাবলে এখন হাসি পায়।
যাকগে, উদারহণটি আমি এখানে টানলাম এ কারণে যে, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে সব দেশকেই ছাড় দিতে হয়। ভারত আগ বাড়িয়ে আমাদের সবকিছু দিয়ে যাবে আর আমরা কেবলই বলতে থাকব যে, তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়, এভাবে তো সম্পর্কের উন্নয়ন সম্ভব নয়? আজকালকার রাজনৈতিক আলোচনায়, কি গণমাধ্যমে, কি তার বাইরে, আমরা প্রথমেই শুরু করে দিই এ সন্দেহ দিয়ে যে, ভারত যা কিছু করুক, তার পেছনে নিশ্চয়ই একটি স্বার্থ কাজ করে। এসব আলোচকের জ্ঞাতার্থে বলতে চাই, স্বার্থ অবশ্যই কাজ করে। আপনি যখন বাংলাদেশের ধ্বজাবাহী হিসেবে নিজের বক্তব্য পেশ করেন, সেখানে আপনার স্বার্থ কাজ করে না? কেবল দুঃখ লাগে এ ভেবে যে, সেখানে দেশের চেয়ে বড় স্বার্থ হয়ে দাঁড়ায় একটি দল, কী সেই দলের নেতা। এবং তাদেরই মতবাদ নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। আমরা বিরক্ত হয়ে টেলিভিশনের কান মুচড়ে বন্ধ করে অথবা যে পত্রিকায় ওই ধরনের একপেশে মন্তব্য ছাপা হয়, সে পত্রিকাটি জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিই। এ মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের কলি মনে আসছে। 'হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছো অপমান, অপমানে হতে হবে তাদের সবার সমান।' আমরা যদি কৃতঘ্ন হয়েই থাকি, তার মূল্য আমাদের দিতে হবে। তবে তা দেওয়া হয়ে গেছে বলেই আপাতত আমি ধরে নেব। এ কারণেই এ লেখাটি যখন লিখছি তখন হঠাৎ মনে হলো, সত্যি বিচিত্র এ দেশ। এই অতি সম্প্রতি সোনিয়া গান্ধী যখন ঢাকায় এসেছিলেন, তখন আমাদের দেশের যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভারতবিদ্বেষী, তারা উভয় দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে দিয়েছিল। তিনি চলে যাওয়ার পরপরই তারাই আবার শুরু করে দিয়েছে সেই ভ্যান্তারা_ এটা দেখতে হবে, ওটা দেখতে হবে ইত্যাদি, প্রভৃতি। অথচ তারাও তো কয়েক দফায় ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালে সে সময় কখনও তো তারা তাদের পাকিস্তানপ্রেমিক/দোসরদের সঙ্গে আঁতাত করে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারেনি? সাহস হয়নি! তাদের শাসনামলের প্রথম দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই যখন বাংলাদেশ সফরে আসেন, তখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর না হয় যেন, সে কারণে আরবি উক্তিসংবলিত সব বিলবোর্ড ঢেকে দেওয়া হয়েছিল, সে কথা কি সবাই ভুলে গেছে? তাদের নেতাই এটি করেছিলেন। কেন? কারণ, যারা দুর্বল, তারা পেছনে অনেক কথাই বলতে পারে। সামনাসামনি দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলার সাহস তাদের নেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, জেলে চার নেতার হত্যা_ এসব দুষ্কৃতি যে মার্কিন-মধ্যপ্রাচ্য-চীন-পাকিস্তান আঁতাত এ দেশে ঘটিয়েছিল, যারা এ দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল একসময় রাতের অন্ধকারে মানুষ হত্যা করে, তারা ছিল সত্যিকার অর্থে দুর্বল।
এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, পারস্পরিক সম্মান, সহযোগিতা ও সমঝোতা কেবল তখনই সম্ভব হয়, যখন স্বচ্ছ মনমানসিকতা নিয়ে দুই ব্যক্তি কিংবা দুই দেশ একে অন্যের প্রতি সত্যিকারের বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। ইন্দিরা গান্ধী ওই রকম মনমানসিকতা নিয়েই সমূহ বিপদ সামনে জেনেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রতি। অথচ আমরা ভারতবিদ্বেষী কথা বলাকে আমাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি অবলীলায়। সে সঙ্গে ধর্মের জিগির তুলতেও আমরা দ্বিধা করি না। একটি বিশেষ দল ক্ষমতায় এলে অর্ধেক দেশ ভারতের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হবে কিংবা মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি দেওয়া হবে_ এ ধরনের নিকৃষ্টমানের সস্তা স্লোগান যেসব নেতাকর্মীর মুখে উচ্চারিত হয়, তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক স্থানে নিয়ে যাওয়া। এই দ্বিপক্ষীয়, কি বহুপক্ষীয় সম্পর্ক কেবল তখনই বিশ্বাসযোগ্যতা পায়, যখন সব দেশ সম্পর্কের ব্যাপারে সৎ ও নির্বিবাদী হয়। আমি বল্পুব্দত্ব কামনা করব, সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা কামনা করব এবং পারস্পরিক লেনদেনে সমতার কথা বলব, কিন্তু তার মধ্যে অস্বচ্ছতা থাকবে, অসত্য উচ্চারণ থাকবে_ এ বিষয়টি কারও পক্ষেই বোঝা দুষ্কর নয়। সুতরাং, আমার পাশের ঘরের প্রতিবেশী খুব সহজেই বুঝতে পারে আমার মনমানসিকতা এবং সেভাবেই আচরণ করে আমার সঙ্গে।
আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান যে ভুল বোঝাবুঝি এবং সমস্যাগুলো আছে, যার অধিকাংশের জন্ম বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তীকালে, তার সত্বর অপসারণ এখন আমাদের প্রধান কর্তব্য এবং উভয়ের মধ্যে একটি সম্মানজনক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাই কেবল আমাদের পথ চলাকে মসৃণ ও নিষ্কণ্টক করে তুলতে পারে।
আলী যাকের : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
৯| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ রাত ২:১৬
সামদ বলেছেন: PM warns of apt steps against any anti-Bangladesh move
Rajshahi: Prime Minister Sheikh Hasina on Thursday warned that Bangladesh will take appropriate steps if any country takes any move against Bangladesh's interest.
"We'll take appropriate steps if any country takes any move against Bangladesh's interest," she told a mammoth rally at the city's Madrasa Maidan.
The Rajshahi City unit of Awami League organised the rally with its president Bazlur Rahman in the chair.
In an oblique reference to Tipaimukh Dam issue, the Prime Minister said Awami League will not allow any country to take any step that will go against Bangladesh's interest as long as the party is in power.
On Wednesday, Prime Minister Sheikh Hasina told Parliament that a special envoy will be sent immediately to India to know about the New Delhi's latest position on the Tipaimukh Dam.
Replying to a question of independent member Mohammad Fazlul Azim, she said the government has already sought clarification through the Foreign Ministry from Indian government about the reports on 'promoters' agreement on the Tipaimukh Dam Project'.
The Prime Minister categorically said Bangladesh must be included in the survey if conducted on the Tipaimukh Dam to be constructed on the common river Barak. "Unilateral survey (by India) won't be acceptable," she told House.
Addressing the public rally, the Prime Minister said Awami League always thinks about the welfare of the country and works to protect the country's interest.
In this connection, she recalled the visit of Khaleda Zia to India when she was the Prime Minister and said at that time she totally forgot to raise the water-sharing issue.
She said when AL returned to power it worked for the welfare of the people. "But when BNP came to power, they just committed looting and amassed illegal money."
Hasina mentioned that the country was known as a safe haven of extremism and terrorism during the BNP-Jamaat regime.
About the opposition's threat to dislodge the government through a movement, Hasina said these threats by the opposition party and its chief will not be able to prevent AL from doing its works for the welfare of people.
Pointing her finger to the opposition leader, she said that the real face of the opposition leader has been unveiled.
"She is now trying to protect the collaborators. Let me ask you (Khaleda), don't you want Bangladesh's independence?" she questioned.
১০| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ রাত ২:১৮
সামদ বলেছেন: 29 Oct 2012 05:19:41 PM Monday BdST
‘শালুক চিনেছে গোপাল ঠাকুর’ সিনিয়র করেসটপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেছেন ‘শালুক চিনেছে গোপাল ঠাকুর’।
ভারতের বিরোধী দলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় তুলে মতিয়া বলেন, “নিজামী ভারত সফরে গিয়ে দেখা করেছিলেন আদভানির সঙ্গে। আর খালেদা জিয়া দেখা করলেন সুষমা স্বরাজের সঙ্গে।” বিজিপির সঙ্গেই বিএনপির মিলেছে।``
মনমোহন সরকারের দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে সপ্তাহব্যাপী সফরের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়া রোববার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পর বিকেল ৪টায় সুষমা স্বরাজের সফদরজং লেনের ৮নং বাসায় তার সঙ্গে দেখা করেন।
সেখানে সফরে খালেদা জিয়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে ক্রমাগত বাংলাদেশি হত্যা, তিস্তার পানিবণ্টন, অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগিসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলাপ করেন।
এ প্রসঙ্গে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “এর আগেও খালেদা জিয়া পনি আনতে ভারতে গিয়েছিলেন। ফেরার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিষয়টি তার মনেই নেই।”
‘`মনে রবে কিনা রবে আমারে, সে আমার মনে নেই মনে নেই।’` কবিগুরুর গানের উদ্ধৃতি দিয়ে মতিয়া বলেন, “তার হয়তো মনেই থাকবে না।”
ঈদের পর সোমবার প্রথম অফিস খুললে মতিয়া চৌধুরী সকাল ৯টার দিকে নীরবে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। তার নিজ দফতরে বসে কাজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মন্ত্রী।
সচিবালয়ে সকাল থেকে সংবাদের খোঁজে সাংবাদকর্মীরা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দফতরসহ বিভিন্ন অফিসে ছুটে যান। মতিয়া চৌধুরীকে পেয়ে তার সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মতিয়া চৌধুরী। রামুর ঘটনা, খালেদা জিয়ার ভারত সফর এবং ঈদে মানুষের সুখ-দু:খ নিয়ে কথা বলেন মতিয়া চৌধুরী।
তিনি জানান, কর্মকর্তাদের ভোগান্তি সৃষ্টি না করতে তিনি নিজ এলাকায় সাত দিন প্রটোকল ছাড়াই ঘুরে বেড়িয়েছেন মানুষের খোঁজ-খবর নিতে।
রামুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “প্রথম আলো বাইবেল নয়। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কাগজ লিখতেই পারে, অনেক কথা।”
``রামুর ঘটনায় দ্রুততম সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যরা ছুটে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীও গেছেন। সেখানকার মানুষকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে ``--বলে দাবি করেন তিনি।
২০০১ সালে নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন প্রসঙ্গ তুলে মতিয়া চৌধুরী বলেন, “আলতাফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছিলেন, ‘তেমন কিছুই হয়নি’। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কিছু বলেননি।”
‘‘আমরাতো তাদের মতো বলিনি’’ যোগ করেন মন্ত্রী।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, “বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া ঘটনার পর চীনসহ অন্যন্য দেশে গেছেন। ভরতেও গেলেন। অথচ রামুতে যেতে পারেননি।”
রামুর ঘটনায় দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “প্রতিবেদনটি আমি পড়িনি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।” তবে ঘটনাটি অনপ্রিভেত, গুরুতর ও স্পর্শকাতর।``
মতিয়া চৌধুরী দেশের সাধারণ মানুষের ঈদের দিন নিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এক কোটিরও বেশি মানুষকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। যেন কোনো মানুষ ঈদের দিন ভাতের জন্য হাত না পাতেন।’’
তিনি বলেন, “আর মরা কার্তিক, মঙ্গা নেই।”
তার নিজের এলাকাতেও খোঁজ-খবর নিয়েছেন বলেও জানান ``অগ্নিকন্যা``বলে পরিচিত এক সময়ের বাম নেতা মতিয়া চৌধুরী।
১১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ রাত ২:১৯
সামদ বলেছেন: ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় নয়: খালেদা
Mon, Oct 29th, 2012 2:57 pm BdST
সুমন মাহমুদ
প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
নয়া দিল্লি, অক্টোবর ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বলে মনমোহন সিংকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া।
প্রতিবেশী দেশটিতে সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও স্মরণ করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হলে তা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ভারত সরকারের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের সফরে রোববার নয়া দিল্লি পৌঁছান খালেদা জিয়া। সফরের প্রথম দিনে লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা বিজেপির সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
সোমবার দুপুরে নয়া দিল্লির ৭ নম্বর রেইস কোর্স সড়কে মনমোহন সিংয়ের সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন বিরোধীদলীয় নেতা।
ঘণ্টাব্যাপী আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দুই নেতা একান্তে কিছু সময় কথা বলেন বলে বিএনপির সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিরোধীদলীয় নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, সরকারে থাকলে বিএনপি ভারতের বিরুদ্ধে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে সন্ত্রাস করতে দেবে না। এরকম কাজে দেশের ভূমি কখনোই কাউকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।”
খালেদা জিয়া বলেন, “নানামুখী সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা নিরসনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমি আন্তরিক ও দৃঢ়তার সঙ্গে একথা দিতে চাই- আমরা সরকারে থাকলে বাংলাদেশের মাটিতে কাউকে ভারতের বিরুদ্ধে কোনো রকম তৎপরতা করতে দেব না।”
দেশে বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ভারতকে একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম আওয়ামী লীগকে নয়া দিল্লির ঘনিষ্ঠ বলে মনে করে এবং গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে গ্রেপ্তারে শেখ হাসিনার সরকারের ‘ভূমিকা’র প্রশংসা করে আসছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন বলেন, “বাংলাদেশের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নয়, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মনমোহন সিং।”
সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে ভারতে খালেদা জিয়ার এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ভারত বলছে, এটা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে নয়া দিল্লির যোগাযোগের অংশ।
মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে খালেদার সঙ্গে শমসের মবিন ছাড়াও ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবেক কূটনীতিক সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।
মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পুলক চ্যাটার্জি ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।
বৈঠকের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এক মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এতে বিজেপি নেতা ও সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এল কে আদভানি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার, প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি ও আবুল হাসেম খান চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও পার্লামেন্ট সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হোটেল তাজ প্যালেসে ফিরে এলে সেখানে বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন শমসের মবিন। এই সময় তার সঙ্গে তরিকুল ইসলাম, সাবিহ উদ্দিন ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খানও ছিলেন।
শমসের মবিন বলেন, “সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বিএনপি ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চায় বলে খালেদা জিয়া তার অবস্থান তুলে ধরেছেন। মনমোহন সিং বিরোধীদলীয় নেতার এরকম আগ্রহের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান।”
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম সার্কের মাধ্যমে সন্ত্রাস দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব বলে খালেদা জিয়া মনে করেন।
বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে গঠিত যৌথ কমিশনে বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা, বিরোধপূর্ণ সীমান্ত সীমানা নির্ধারণসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
শমসের মবিন বলেন, উষ্ণ ও আন্তরিক, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে।
বিরোধীদলীয় নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তিনি আশাবাদী তা আগামীতে দুই দেশের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে।
“জবাবে মনমোহন সিং বলেছেন, গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আপনার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আগামীতেও আপনার সঙ্গে আরো কথা-বার্তা বলার সুযোগ হবে,” বলেন শমসের মবিন।
বৈঠকে মনমোহন সিং বিরোধীদলীয় নেতার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কথা স্মরণ করেন বলে জানান বিএনপির সহসভাপতি।
“অন্যদিকে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।”
দারিদ্র্য বিমোচনসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে মনমোহন সিং মন্তব্য করেন। খালেদা জিয়াও এতে সহমত প্রকাশ করেন।
শমসের মবিন বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, ভারতের স্বার্থে বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চান তারা।”
বিরোধপূর্ণ সীমানার বিষয়ে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে- জানতে চাইলে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্টের জন্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এজন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
“তিনি আরো বলেছেন, দুই দেশের স্বার্থে মানুষজনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে এ বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করা যায়, ততই দুই দেশের জন্য উত্তম।”
সীমান্ত হত্যার বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শমসের মবিন বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছেন, এরকম ঘটনা দুই দেশে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং জনগণের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
“ভারতের প্রধানমন্ত্রীও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি (মনমোহন) মনে করেন, সীমান্ত কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ড যাতে না ঘটে।”
বৈঠকে মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক আদর্শ স্মরণ করে খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেন, সেই আদর্শের উত্তরসূরি হিসেবে ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর পর মঙ্গলবার বিকালে ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে খালেদা জিয়া বৈঠক করবেন।
এই সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও কংগ্রেসপ্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
আজমীরে সুফি সাধক হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.) মাজার জিয়ারতও বিরোধীদলীয় নেতার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে।
খালেদার এই সফরের সংবাদ জানাতে তার সঙ্গে রয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ।
সফর শেষে আগামী ৩ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন বলে প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০০৬ সালে ভারত সফরে যান। সেবার তিনি গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে প্রতিবেশী দেশটিতে এটাই তার প্রথম সফর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএম/এমআই/১৮১৩ ঘ.
১২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:২১
সামদ বলেছেন: ট্রানজিট ইস্যুতেও নমনীয়তার ইঙ্গিত বিএনপির
সমকাল/বিবিসি
বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ভারত সফরে জঙ্গিবাদ দমনে দিলি্লকে দেওয়া তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই এটাকে ভারতের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানে মৌলিক একটি পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন। তবে শুধু জঙ্গি ইস্যুতে নয়, ট্রানজিট বা টিপাইমুখ প্রকল্পের মতো যেসব ইস্যুতে বিএনপি এত দিন কট্টর ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, এ সফরে সেসব ইস্যুতেও নমনীয়তার আভাস দিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতকে তাদেরই
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সহজে যোগাযোগের রাস্তা করে দেওয়া বা এককথায় ট্রানজিট, যা বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী_ এটা বিএনপির বহু পুরনো অবস্থান। মাত্র কিছুদিন আগেও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে বলেছেন, এটা আসলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাওয়ার কৌশল। কিন্তু এখন ভারত সফরে সেই অবস্থান থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন বিএনপি নেত্রী। এমনকি ট্রানজিটের জন্য শুল্ক বা ফি পেলে ভারতকে যে এই সুবিধা দিতে তাদের অসুবিধা নেই, দিলি্লকে সে ইঙ্গিতও দিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী ও সাবেক কূটনীতিক সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বিবিসিকে বলেন, 'অনেকের বোঝার ভুল আছে। অনেকে মনে করেন, আমরা ট্রানজিটের বিরুদ্ধে। আমরা ট্রানজিটবিরোধী কখনও ছিলাম না।' তিনি বলেন, আমাদের অবকাঠামো এখনও প্রস্তুত নয়। আমরা চাই, ট্রানজিটের জন্য তো বাংলাদেশ ফি পেতে পারে। ফলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ট্রানজিট প্রশ্নে হয়তো ভারত আশ্বস্ত থাকতে পারে_ যদিও এর জন্য কিছুটা বাড়তি মূল্য তাদের গুনতে হবে। একইভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মণিপুর রাজ্যের যে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক চলছে, সরাসরি সেটা বাতিল করার দাবি থেকেও অনেকটা সরে এসেছে বিএনপি। ভারত সফরে খালেদা জিয়া ভারতীয় নেতৃত্বকে একাধিকবার বলেছেন, টিপাইমুখ নিয়ে যৌথ সমীক্ষার জন্য যে সাব-কমিটি করা হচ্ছে, তাতে তারা খুশি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও খালেদা জিয়ার মধ্যে আলোচনার বিবরণ দিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী জানান, টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের বিষয়ে সাব-কমিটির ব্যাপারে স্বাগত জানানো হয়েছে। খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেন, গ্রহণযোগ্য বিশেষজ্ঞরা যেন এই সাব-কমিটিতে থাকেন। সমীক্ষার মাধ্যমে এ প্রকল্পের পরিবেশগত, আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে যে ধারণা মিলবে, তার ভিত্তিতেই বিএনপি টিপাইমুখ প্রসঙ্গে অবস্থান চূড়ান্ত করবে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে সাব-কমিটির বিশেষজ্ঞদের গ্রহণযোগ্য হতে হবে_ বিএনপির এই শর্ত যত না ভারতের জন্য, তার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য। ব্যাখ্যা করে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ট্রানজিটের জন্য চার্জ ধরলে অভদ্র হয়ে যাব_ যারা এমন মনে করেন, তারা যদি এই কমিটিতে থাকেন, তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।
আওয়ামী লীগপন্থি বিশেষজ্ঞরা কমিটিতে ঠাঁই পেলে বিএনপি মানবে না। কিন্তু আসল কথা হলো, টিপাইমুখ পুরোপুরি বাতিল করতে হবে_ বিএনপি এ কথাটা এখন আর মোটেও উচ্চারণ করছে না। আর সে কারণেই বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে ট্রানজিট বা টিপাইমুখ নিয়ে সংশয়_ এ ভাবনাও আপাতত দূরে সরিয়ে রাখার অবকাশ পাচ্ছে ভারত।
১৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:২৩
সামদ বলেছেন: সালমান খুরশিদকে খালেদা জিয়া: চাব না পশ্চাতে মোরা...
samakal
বিশেষ প্রতিনিধি, নয়াদিলি্ল থেকে
অতীতের আয়নায় না দেখে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন দিগন্তে উন্নীত করার অঙ্গীকার করলেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারতের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ। ভারত সফরের তৃতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার সালমান খুরশিদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া রবীন্দ্রনাথের পঙ্ক্তির কথা স্মরণে রেখে বলেছেন, 'চাব না পশ্চাতে মোরা...'। ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, 'খালেদা জিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, 'এ সফর নতুন দিনের সূচনা করেছে। পেছনে নয়, আমাদের তাকাতে হবে সামনের দিকে।' বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে সৈয়দ আকবর বলেন, 'আমরাও অতীতকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে তাকাতে চাই।' খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী শমসের মবিন চৌধুরী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাজ প্যালেস হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে জানান, বৈঠকে ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নতুনভাবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন খালেদা জিয়া।
খালেদার সঙ্গে সালমানের বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, সন্ত্রাসবাদ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও দু'দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সমস্যার সমাধান আলোচনার মধ্য দিয়ে হবে বলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। বৈঠকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথাও স্মরণ করেন সালমান খুরশিদ। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া এক ভোজেও অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে সকালে তাজ প্যালেস হোটেলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক
করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন। বৈঠকে মেনন বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে কনসোর্টিয়ামের আওতায় সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাতে খালেদা জিয়া লালকেল্লা পরিদর্শন করেন। সেখানে দিলি্লর ইতিহাসের ওপর আলো ও ধ্বনির প্রদর্শনী উপভোগ করেন তিনি।
সালমান খুরশিদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে শমসের মবিন জানান, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, 'ভারত বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনেকে সফর করে গেছেন।'
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, দলের সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক এমপি খালেদা রাব্বানী ও বিরোধীদলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই ও যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার-শ্রীলংকা ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত) হর্ষবর্ধন সিংলাসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সালমান খুরশিদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শমসের মবিন জানান, বৈঠকে বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, কানেকটিভিটি দুই দেশের জন্য অপরিহার্য। এটা কেবল দুই দেশ কিংবা দক্ষিণ এশিয়া নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দূরপ্রাচ্য পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে। এতে এ অঞ্চলের জনগণ লাভবান হবে।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সম্পর্কে বৈঠকে খালেদা বলেছেন, তিস্তার পানি বণ্টনের গ্রহণযোগ্য সমাধান যত দ্রুত করা যাবে, ততই দু'দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। শমসের মবিন বলেন, 'এ ব্যাপারে ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব নেবেন। ভারত বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখছে।'
সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, 'বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উদ্বেগের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার শেষ টানতে হবে। এ জন্য ভারত সরকার আলোচনার মাধ্যমে সব পদক্ষেপ নিয়েছে।'
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটিকে 'ইতিবাচক' অভিহিত করে শমসের মবিন আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়গুলো বাস্তবায়নে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করি।'
এক প্রশ্নের জবাবে বিরোধীদলীয় নেতার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বলেন, 'ভারতে খালেদা জিয়ার সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অপ্রমাণিত ও প্রমাণিত অভিযোগের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আর ফিরে যেতে চাই না।' সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
শিবশংকর মেননের সঙ্গে খালেদার বৈঠক
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা শিবশংকর মেননের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক প্রসঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, 'চীন সফরকালে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে খালেদা জিয়া চীনের যে সহযোগিতা চেয়েছেন, বৈঠকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তা তুলে ধরেছেন। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শিবশংকর মেনন। তিনি বলেছেন, ভারত ওই প্রকল্পে কনসোর্টিয়ামের আওতায় সহযোগিতা করতে চায়।
রাতের দিলি্ল ঘুরে দেখলেন খালেদা জিয়া
রাতের দিলি্ল ঘুরে দেখলেন ভারত সফরে আসা বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। সোমবার রাতে দিলি্লর নতুন মেট্রোরেল, চাঁদনিচক এবং শহর পরিদর্শন করেন তিনি। পরিদর্শনকালে খালেদা জিয়া বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে দিলি্লর অনেক উন্নতি হয়েছে। ঢাকায়ও মেট্রোরেল চালু হলে যানজট অনেক কমে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়াকে রাতে দিলি্ল ঘুরে দেখানোর আয়োজন করে। এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সাংসদ খালেদা রাব্বানী, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমুখ ছিলেন।
আজ বুধবার সকালে সড়কপথে জয়পুর যাবেন বিএনপি প্রধান। আমের কেল্লা ও সিটি প্যালেস পরিদর্শন শেষে সেখানে রাত যাপন করবেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে খালেদা জিয়া আজমির শরিফ যাবেন। সেখানে তিনি হজরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন এবং রাত যাপন করবেন। শুক্রবার দিলি্ল এসে আবার তাজ প্যালেসে উঠবেন। শনিবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
নয়াদিলি্ল সরকারের আমন্ত্রণে সাত দিনের সফরে গত রোববার খালেদা জিয়া নয়াদিলি্ল পেঁৗছেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ছাড়াও লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এরই মধ্যে বৈঠক করেছেন তিনি। সাধারণ নির্বাচনের এক বছর আগে ভারতে খালেদা জিয়ার সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ভারত বলছে, এটা বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে নয়াদিলি্লর যোগাযোগের অংশ।
১৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:২৫
সামদ বলেছেন:
শিবসেনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার গোপন বৈঠক
সমকাল প্রতিবেদক
ভারত সফররত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার সংক্রান্ত বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা। মঙ্গলবার রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে পৃথক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে 'উদ্বেগজনক' ও 'অপ্রত্যাশিত' আখ্যায়িত করে নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়া ভারতের শিবসেনার সঙ্গে গোপন বৈঠক করে মুসলমানবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে উৎসাহিত করেছেন। বিএনপি নির্বাচনের আগে এ ইস্যু কাজে লাগাতে চায়।
দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অভিযোগ করেন, ভারত সফরকালে খালেদা জিয়া সে দেশের শিবসেনার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। মুসলমান
বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতে তাদের উৎসাহিত করেছেন। বিএনপি নির্বাচনের
আগে এ ইস্যু কাজে লাগাতে চায়। এ ধরনের বৈঠক দেশের জন্যও ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, বিএনপি ভারত বিষয়ে দ্বৈতনীতি অনুসরণ করে। ক্ষমতায় থাকলে তারা ভারতবিরোধী বক্তব্য দেয় না। আবার নির্বাচন এলে ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল হিসেবে ভারতবিরোধী বক্তব্য রাখে। এ সম্পর্কে দেশবাসীকেও সজাগ থাকতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। তখন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বিশ্বের সন্ত্রাসীদের পক্ষে খালেদা সরকারের অবস্থান ছিল। জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নবাদীদের সহায়তায় বাংলাদেশে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালান এনেছিল।
তিনি বলেন, 'বাংলা হবে আফগান'_ এ স্লোগান যারা দেয়, তারাই খালেদা জিয়ার সঙ্গে জোট বেঁধেছে। ভারতকে তুষ্ট করে ক্ষমতায় যাওয়ার সস্তা কৌশল নিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ছলচাতুরী সম্পর্কে সজাগ রয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা ভারত সরকারকে প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন না করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য উদ্বেগজনক ও অপ্রত্যাশিত : হানিফ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় বিশেষ সমন্বয় কমিটির সভা শেষে স্থানীয় ডিসিকোর্ট চত্বরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বক্তব্য উদ্বেগজনক ও অপ্রত্যাশিত। কেননা তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিকে আর কখনও ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এর আগে দু'বার ক্ষমতায় থাকার সময় খালেদা জিয়া নিশ্চয় বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। সুতরাং তার এ বক্তব্য সমুচিত নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে এমনটিই রয়েছে।
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে খালেদা সরকারের অবস্থান ছিল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিএনপি নেত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশ্রয় দেবেন না। অর্থাৎ তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ দেশে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও বিশ্বের সন্ত্রাসীদের পক্ষেও তার সরকারের অবস্থান ছিল, সেটাও প্রকারান্তরে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা আনন্দিত যে, তিনি (খালেদা জিয়া) ভুল স্বীকার করেছেন। তার সরকার যে ভুল নীতি নিয়েছিল তাও তিনি স্বীকার করেছেন। বর্তমান সরকারের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে অবস্থান তা আজ সারাবিশ্বে প্রশংসিত বলে দাবি করেন তিনি।
১৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:২৬
সামদ বলেছেন: ভারত তথা কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
লোটন একরাম/গৌতম লাহিড়ী, দিলি্ল থেকে
ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সভানেত্রী ও ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সফররত বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হচ্ছে না। অবশ্য এখনও আশাবাদী বিএনপি। তবে সমকালকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে, শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে সোনিয়া গান্ধীর সাক্ষাৎ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। খালেদা জিয়ার এ সফরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে দু'পক্ষ দাবি করলেও কংগ্রেসের সঙ্গে 'সুসম্পর্ক' তৈরি হতে আরও সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র আভাস দিয়েছে। তবে খালেদা জিয়ার সফরের শেষদিকে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে পারে। জাতীয় কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি সমকালকে জানান, কংগ্রেস সভানেত্রী এ মুহূর্তে হিমাচল ও গুজরাটের নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। ফলে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময়সূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সরকারের আমন্ত্রণে তিনি এসেছেন। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ অনন্ত কুমার বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যতক্ষণ সম্পর্ক থাকবে, ততক্ষণ বিএনপির সঙ্গে কংগ্রেসের একটি 'দূরত্ব' থাকবেই। কংগ্রেসের সঙ্গে 'সম্পর্কোন্নয়ন' করতে চাইলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে বিএনপিকে।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্প্রতি ভারত সফরে এলেও সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি। তখনও দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ দেননি সোনিয়া গান্ধী। তবে এর কয়েক দিন পরই বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দিলি্ল সফরে এসে সোনিয়া গান্ধী ও তার ছেলে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সুদৃঢ় সম্পর্কের প্রমাণ মেলে বলে জানান ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বেগম জিয়ার সফরসূচির ন্যায় এরশাদও যথারীতি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন এরশাদকে ভারতের এ দুই নেতা বলেছিলেন, বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ দেখতে চায় ভারত। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আগামীতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, তা-ই চায় ভারত।
অবশ্য আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী হয়েই ভারত সফরে গেছেন খালেদা জিয়া। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংসহ অন্যান্য নেতার সঙ্গে বৈঠকেও তিনি অতীতের সন্দেহ ও সংশয় ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে বেগম জিয়া ভারতের বিরুদ্ধে কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাস করতে দেওয়া হবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, ভারত তথা কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। গতকাল ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে নবনির্বাচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ ইঙ্গিত দেন। খালেদা জিয়া ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থি শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আমাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করছি।
সম্প্রতি লন্ডনের একটি পত্রিকায় বেগম জিয়ার লেখা একটি নিবন্ধেও ভারতের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক শক্তিশালী করা যায় তার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার সেপ্টেম্বর মাসের মুখপত্রেও একই কথা পুর্নব্যক্ত করা হয়।
খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বিএনপি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে ২০০৬ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বিএনপিকে ভারতের ভুল বোঝা উচিত হবে না। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করবে বলেও জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান জড়িত নন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে এ ঘটনায় জড়িত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন জানান, ক্ষমতায় গেলে তারা ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষর করবেন।
সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে বিএনপির সহ-সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরীকে প্রশ্ন করলে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানান, 'তাদের বক্তব্য অনুযায়ী আমরা এখনও আশাবাদী।'
১৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:২৮
সামদ বলেছেন: মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক: ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় নয় : খালেদা জিয়া
লোটন একরাম/গৌতম লাহিড়ী, দিলি্ল থেকে
বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো গোষ্ঠীকে সন্ত্রাস করার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠককালে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। জবাবে খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে মনমোহন সিং বলেন, বাংলাদেশের কোনো বিশেষ দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে নয়, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী ভারত। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও স্মরণ করেন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন আরও বলেছেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হলে দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বৈঠকের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী তাজ প্যালেসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এক ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় দিলি্লর ৭ নম্বর রেসকোর্স রোডে মনমোহন সিংয়ের সরকারি বাসভবনে।
বৈঠকে তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ, যৌথ কমিশনে উভয় দেশের বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত, বিরোধপূর্ণ সীমানা, নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন, বাণিজ্য ঘাটতি দূরসহ দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন উভয় নেতা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মনমোহন-খালেদা দু'জনই একমত হয়েছেন, ভারতবিরোধী জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে বাংলাদেশের সঙ্গে যে সহযোগিতা চলছে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে কিছুক্ষণ একান্তে কথা বলেন মনমোহন সিং।
বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, দলের সহসভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে, মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পুলক চ্যাটার্জি ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই।
বৈঠক শেষে খালেদা জিয়ার সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এতে বিজেপির প্রধান এল কে আদভানি, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলেন। এ ছাড়া মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিং দেসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
ভারতের মন্ত্রিসভায় বড় ধরনের রদবদলের ঘটনার মধ্যে রোববার সাত দিনের দিলি্ল সফরে আসেন বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। সফরসূচিতে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। বিকেলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও পররাষ্ট্রসহ ১৭ নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের কারণে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। শুধু লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক এবং পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের সাক্ষাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল খালেদা জিয়ার রোববারের কার্যসূচি। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব পায় মন্ত্রিসভার রদবদলের ঘটনাটি।
গতকাল ছিল খালেদা জিয়ার সাত দিনের সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ বৈঠকের দিকে নজর রাখছেন উভয় দেশের রাজনীতিক ও জনগণ।
সংবাদ সম্মেলনে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। সন্ত্রাস দমনে বিএনপি ভারতের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চায় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শমসের মবিন বলেন, দু'দেশের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, ভবিষ্যতে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া। মনমোহন সিং বলেন, 'গত সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আপনার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আগামীতে আরও বৈঠকের সুুযোগ হবে।' রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কথাও স্মরণ করে মনমোহন। বৈঠকে মহাত্মা গান্ধীর গৌরবময় অবদানের কথা স্মরণ করেন খালেদা জিয়া। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের উত্তরসূরি হিসেবে ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সসুম্পর্ক বজায় রাখবে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নের কথা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। জবাবে মনমোহন সিং বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের কোনো বিশেষ দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক নয়, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এমন সব দলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। গত মে মাসে বাংলাদেশ সফরকালে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিও বিষয়টি পরিষ্কার করেছিলেন।
বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতাকে বলেছেন, 'উই ওয়ান্ট স্ট্রং ডেমোক্রেটিক মডারেট বাংলাদেশ_ ইজ ইন দ্য ইন্টারেস্ট অব ইন্ডিয়া।'
এক প্রশ্নের জবাবে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বিরোধপূর্ণ সীমানা পুনর্নির্ধারণের ব্যাপারে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ল্যান্ড বাউন্ডারি অ্যাগ্রিমেন্টের কারণে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এ জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
সীমান্ত হত্যার বিষয়টি বৈঠকে পুনরাবৃত্তি করেন বিরোধীদলীয় নেতা। এ ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করেছে এবং দু'দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। জবাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীও সীমান্ত হত্যার ঘটনার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। বৈঠকে দক্ষিণ এশীয় ফোরাম সার্কের অধীনে সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব বলেও জানান বিরোধীদলীয় নেতা।
এর আগে রোববার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে জেট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দিলি্লর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেতার সফরসঙ্গীদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সাংসদ খালেদা রাব্বানী, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমুখ রয়েছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকাসহ সাংসদ ও বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় দিলি্ল পেঁৗছেন খালেদা জিয়া। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার ডেস্কের দায়িত্বে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হার্ষ সিংলা, ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার মাহবুব হাসান সালেহ। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাজ প্যালেসে চলে যান খালেদা জিয়া। ভারতে অবস্থানকালে এ হোটেলেই থাকবেন তিনি।
বিরোধী দলের নেতা হিসেবে এই প্রথম ভারত সফর করছেন খালেদা জিয়া। এর আগে ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত সফর করেন তিনি। অবশ্য এবারের সফরটির প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিশেষ করে, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে অত্যন্ত 'গুরুত্বের' সঙ্গে বিবেচনা করছেন উভয় দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সফরের সংবাদ সংগ্রহ করতে দিলি্ল এসেছেন বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ২২ জন সাংবাদিক।
সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ সফর নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল। সফরে খালেদা জিয়া ভারত সরকারকে কী বলবেন? বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সরকার আমন্ত্রণ জানানোর উদ্দেশ্য কী? সেটা দু'দলের পারস্পরিক লাভবানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কি-না? দু'দেশের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানে নতুন গতি পাবে কি-না_ এসব প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে। অবশ্য সফরের আগেই উভয় পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এ সফর হবে 'তাৎপর্য' এবং 'গুরুত্বপূর্ণ', যা দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে একমত খালেদা-সুষমা স্বরাজ :সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই বিরোধীদলীয় নেতা। খালেদা জিয়া ভারত সফরের প্রথম দিনই লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠককালে তারা এ মত পোষণ করেন। দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
বিকেল ৪টা থেকে ৪৫ মিনিট স্থায়ী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় সফদার জংলেনে সুষমার সরকারি ভবনে। খালেদা জিয়া বিরোধী নেতার বাসভবনের সামনে পেঁৗছলেই আঙিনা থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্বাগত জানান সুষমা স্বরাজ। বৈঠকে শেষেও গাড়ি পর্যন্ত হেঁটে এসে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান তিনি।
বৈঠক শেষে শমসের মুবিন চৌধুরী জানান, তিস্তাসহ অভিন্ন সব নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে অবিরাম সংলাপের পক্ষে বৈঠকে মত ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া। টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে উভয় দেশের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দেন তিনি। খালেদা জিয়ার কমিশন গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান সুষমা স্বরাজ।
বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ বৈঠকে বলেন, তার দল বিজেপি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। একই সঙ্গে সুষমা এও বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠছে, তার ওপর নির্ভর করে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সফলতা। এ পর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ বজায় রেখে স্বচ্ছতা ও সমতার ভিত্তিতেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি।
শমসের মবিন বলেন, বৈঠকে খালেদা জিয়া ভারতের বিরোধীদলীয় নেতাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। সুষমা স্বরাজ আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক :সোমবার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এবং ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের সময়সূচি চূড়ান্ত হয়নি। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হবে। খালেদা জিয়ার সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে সকাল ১১টায় হোটেলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকরের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। রাত ৮টায় পুরান দিলি্লর লালকেল্লায় যাবেন তিনি।
১৭| ০১ লা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩৪
সামদ বলেছেন: খালেদা জিয়ার ভারতপন্থী হওয়ার চেষ্টা: মুনতাসীর মামুন
বেগম খালেদা জিয়াকে দেখে সত্যিই ভাল লাগল। জানি খালেদাবিরোধীদের এ মন্তব্য ভাল লাগবে না। ভাল লাগবে না এ কারণে যে, বাঙালীর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত দুর্বল। গত চার বছর টেলিভিশনে দেখেছিলেন খালেদা জিয়াকে? চুল উস্কোখুস্কো, মুখের বলিরেখা স্পষ্ট, সারামুখে বিরাগ অথবা বিরক্তি। তিক্তস্বরে শুধু সরকারের গিবত গেয়েছেন, তাঁর কর্মীরা যথারীতি জ্বালাও-পোড়াওয়ে অংশ নিয়েছে। হঠাৎ পরিবর্তন! চীন সফর শেষ করে এলেন। ভারত সফরে যাবেন। দেখা গেল পরনে উৎকট রঙিন শাড়ি, চুল পরিপাটি, মুখে কখনও মৃদু কখনও বা একগাল হাসি। ঘোষণা করা হলো চীন সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ। যেন তিনি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের, চীনে গেছিলেন রাষ্ট্রীয় সফরে এবং চীন দ্বিতীয় পদ্মা সেতু করে দেবে, কুনমিং থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রাস্তা করে দেবে। কবে দেবে? কেন তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে। প্রধানমন্ত্রী হতে তো আর বেশি দিন নেই। চীন তিনি জয় করে এসেছেন, এখন যাচ্ছেন ভারত জয় করতে। এ কথা যখন ঘোষণা করলেন, তখন মুখে ভুবন ভোলানো হাসি। যাক মনে খুব স্বস্তি পেলাম। যতদিন তিনি মৌতাতে থাকবেন, ততদিন অন্তত দেশে শান্তি থাকবে। এটি যদি এক বছর কনটিনিউ করে তা’হলে অন্তত সরকার এক বছর নিজের কাজকর্ম গুছিয়ে করতে পারবে।
খালেদা জিয়ার চীন ও ভারত সফর বিএনপি-জামায়াত জোটকে অত্যন্ত আনন্দিত করে তুলেছে। জামায়াতের নেতারা ভাবছেন, মাটি কামড়ে যদি এক বছর পড়ে থাকা যায়, তা হলেই হলো। ক্ষমতায় গেলে কোথায় যাবে যুদ্ধাপরাধ মামলা আর নির্বাচন কমিশনের হুমকি। বিএনপি নেতারা না হলেও খালেদা জিয়া ভাবছেন, তার সুপুত্ররা ফিরে আসবে এবং দেশে যাতে আওয়ামী লীগ করার মতো কেউ না থাকে সে ব্যবস্থা তিনি করবেন।
আমি আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থককে দেখছি খুবই চিন্তিত, অনেক নীতিনির্ধারকও। চীন থেকেও তারা বেশি চিন্তিত ভারত নিয়ে। ভারত যদি এক তরফাভাবে সমর্থন না করে বাংলাদেশকে তা’হলে কি আওয়ামী লীগের পক্ষে আবার ক্ষমতা আসা সম্ভব হবে? তা’ হলে, বাজারে যে গুজব বিএনপি এলো বলে [সে গুজবের সত্যতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বেগম জিয়ার হাসি ও সফরে] তা’ কি সত্যি?
পাঠক, আমাদের মতো দেশে ক্ষমতায় থাকা না থাকা অনেকটাই নির্ভর করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ভারতের ওপরে।
বাংলাদেশকে ঘিরে রেখেছে ভারত। নানামুখী চাপ সৃষ্টি করে সরকারের পতন ত্বরান্বিত করতে পারে ভারত। এ সব তত্ত্ব হয়ত অনেকাংশে ঠিক। কিন্তু এটিই সব নয়। নির্বাচন করবে বিভিন্ন দল। মানুষ ঠিক করবে কোন্ দলকে ভোট দেবে। তারাই প্রধান নিয়ামক।
চীনের কথা বলি। চীন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে সমর্থন করেনি। ১৯৭৫ সালের পর করেছে। সে জন্য বিএনপির ধারণা চীন বিএনপির অকৃত্রিম বন্ধু। চীন কখনও কারও অকৃত্রিম বন্ধু হয়নি। বন্ধুত্বের দাম এক সময় দিত সোভিয়েত ইউনিয়ন। পুঁজিবাদী চীন সব রাষ্ট্রেই সমান মনোযোগ দেবে। চীন সুপার পাওয়ার। বাংলাদেশের কৌশলগত মূল্য আছে তার কাছে। তবে চীন উৎসাহী বিনিয়োগে। বেগম জিয়ার মতো অনেক দেশের সরকারী নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা চীনে যাচ্ছে হরদম। চীন সাবাইকে যথাযথ আপ্যায়ন করে, বেশিমাত্রাই করে এবং সবাইকে সবকিছু করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। এতে খুব আশ্বান্বিত বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। পদ্মা সেতু বা কুনমিং চট্টগ্রাম রাস্তা হাতের মোয়া নয় যে বললেই দেয়া যাবে। বেগম জিয়া হয়ত জানেন বিষয়টা। কিন্তু এখন তাঁকে পারফর্ম করতে হবে। পারফর্মারের মতো। তা তিনি করছেন। চীন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভাবিত নয়। চীন জানে, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট থাকবে, যেমন থাকে আমেরিকার সঙ্গে। বেগম জিয়া একেবারে বোধহীন রাজনীতিবিদ, তা তো নয়। তিনি অনুধাবন করেছেন ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাঁকে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে, সেটি গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক যে পথেই হোক না কেন। না হলে আরও পাঁচ বছর তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে। তখন তাঁর বয়স হয়ে যাবে সত্তরের অনেক বেশি।
বাংলাদেশে কেউ রিটায়ার করে না। তিনিও করবেন না। তবে বয়স একটা ফ্যাক্টর তো বটে। তাঁর সুপুত্ররাও পাঁচ বছর দেশে আসতে পারবে না। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা মওদুদ আহমদ বা মির্জা ফখরুল তো এতদিন অপেক্ষা করবেন না। তাঁরা নতুন দল গড়বেন বা দল বদল করবেন। তাঁদের পথ অনুসরণ করবেন অনেকে। ২০১৯-এর নির্বাচনেও তা’হলে জেতার চান্স নেই। তাঁর একমাত্র রাজনৈতিক আদর্শ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা ও পাকিস্তানের পক্ষে থাকা। তাঁর বিশ্বস্ততা আসলে পাকিস্তানবাদের প্রতি। বেগম জিয়ার ধারণা ভারত অনুকূলে না থাকলে নির্বাচনে বোধহয় জেতা যাবে না। বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের আগ্রহ বেশি। সুতরাং ভারতকে সন্তুষ্ট করতে তিনি মরিয়া। বেগম জিয়ার ভারত ত্যাগের আগে ভুবন মোহিনী হাসি ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাস্যমুখর আলোচনা রবীন্দ্রনাথের একটি গান বার বার মনে করিয়ে দেয়। ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়...।’
মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা নিতে আসা ভারতীয় সাংবাদিক ও এ্যাকাডেমিশিয়ানদের সঙ্গে কথা বলে একটি সূত্র পাওয়া গেল। সাউথ ব্লকের খানিকটা পাকিস্তানপ্রীতি আছে। সাউথ ব্লক যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের পূর্ব পুরুষদের অনেকের আদি নিবাস পাকিস্তান। তাদের একাংশের মনে একটা ভাবনা এ রকম, বাংলাদেশ অন্যান্য যে কোন দেশের মতো একটা দেশ। ক্ষমতায় যে-ই থাকুক তাতে ভারতের কিছু যায় আসে না। ভারত তার নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুণœœ ও অটুট রাখতে চায়। সুতরাং সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা ঠিক হবে না। সব দল ভারতের বন্ধু। সব দল ভারতের শত্রু। সুতরাং, আওয়ামী লীগ প্রীতি যা কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট দেখিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতের কংগ্রেসের এখন নড়বড়ে অবস্থা। সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সব সময় ঝুঁকির মুখে আছে কংগ্রেস। সে জন্য সাউথ ব্লকের এ তত্ত্বনীতি নির্ধারকরা হয়ত গ্রহণ করেছেন বা করতে বাধ্য করেছেন। কারণ এই নীতির পেছনে একটা রাজনৈতিক শক্তিও আছে কিন্তু বলে রাখা ভাল, এর বিপক্ষের দলও কম শক্তিশালী নয়।
একটা কথা আমরা ভুলে যাই বিশেষ করে তাত্ত্বিকরা যে, চিরাচরিত ধারণা ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে খাটে না। গবেষণা করে দেখেছি ভারতে কংগ্রেস জোট এবং বাংলাদেশে আওয়ামী জোট ক্ষমতায় থাকলে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। এর কারণ ঐতিহাসিক। ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু মুজিব এর অনুঘটক। তা’ ছাড়া দুটি দলেই মধ্য মৃদু বামের একটা প্রভাব আছে। ভারতে দক্ষিণপন্থী এবং বাংলাদেশে দক্ষিণপন্থী দল ক্ষমতায় থাকলে দু’পক্ষের সম্পর্কের অবনমন হয় না কিন্তু সম্পর্কের তেমন উন্নয়নও হয় না। বাংলাদেশ কিছুই পায় না। হিসাবটা মিলিয়ে দেখুন ভুল হলে জানাবেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ভারত যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা অন্য কোন দলকে ভারত কখনও দেয়নি। বলা যেতে পারে, এ প্রতিশ্রুতির কতটা পূরণ করতে পেরেছে ভারত? হয়ত সবটা এখনও পারেনি। কিন্তু এক বছর বাকি আছে। দেখা যাক! সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে যদি ভারতে নির্বাচন হয় এবং কংগ্রেস যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তা’হলে সে মমতার মতো পার্টনারদেরও পাত্তা দেবে না। তখন কংগ্রেস বিএনপি ইকোয়েশনটা কী হবে? বা কংগ্রেস ক্ষমতায় এলো না। কে আসবে তাও নিশ্চিত নয়। নিশ্চয় কোয়ালিশন হবে। তা সে কোয়ালিশন খোয়াখোয়ি করবে না খালেদা-হাসিনা দেখবে।
এবার মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা নিতে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ভারত যে খালেদাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাতে তাঁরা মহাবিরক্ত। তাঁদের যুক্তি সোজাসাপটা, শেখ হাসিনা খোলা মনে কোন তাস আঁচলে না ঢেকে কথা বলেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। ভারতকে তার প্রতিশ্রুত রাখতে হবে। যেসব নীতিনির্ধারক এরশাদ-খালেদাকে আমন্ত্রণ জানানোর কৌশল নিতে বলছেন তাঁরা ভ্রান্ত। কারণ তারা ইতিহাস জানে না। তাঁরা এসব ভ্রান্ত মতের বিরোধিতা করবেন দেশে গিয়ে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, সাউথ ব্লকের এসব মাতব্বরিতে ভারত সীমান্তের ছয়টি রাজ্য খুবই অসন্তুষ্ট। তাদের নীতিনির্ধারকরা নাকি জানিয়েছেন শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলে তাদের মাশুল দিতে হবে এবং এ মাশুল তারা একা নয় কেন্দ্রকেও দিতে হবে।
তাঁদের অনেকে বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় ১৯৭১ থেকে। সেই মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যে ক’বার তাঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে জিয়ার, একবারও তিনি ভারতের পক্ষে একটি কথাও বলেননি। খালেদা তাঁর স্ত্রী। ৩৫ বছর ধরে যে নীতি পালন করে এসেছে বিএনপি তা হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই বাদ দিয়ে দেবে তা কখনও হয়? তাঁদের মতে, বিএনপির এটি সাময়িক কৌশল। কারণ খালেদা যদি আন্তরিকও হন তাঁর সমর্থকরা তা মানতে রাজি হবে কেন? তারা ভালবাসে পাকিস্তানবাদকে। যদি তা ত্যাগই করতে হয় তা’হলে আওয়ামী লীগ করলে দোষ কী? খালেদা জিয়া শুধু চান ভারত সরকার তাঁকে নিয়ে একটু মাতামাতি করুক, তা’হলে বাংলাদেশে জনমনে এ গুজব দৃঢ়ভাবে শেকড় ছড়াবে যে, ভারত বিএনপিকে সমর্থন করছে তা’হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। সুতরাং হিসাবটা কিন্তু এত সহজ বলে মনে হচ্ছে না। মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করার আগে বেগম জিয়ার নামে একটি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে, যেখানে তিনি ভারতপ্রীতির কথা উল্লেখ করেছেন। চীন-ভারত সফরের তারিখ দু’সপ্তাহের মধ্যেই রেখেছেন। যাতে এর ইতিবাচক খবর অভিঘাত হানে। মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র বলেছেন বাংলাদেশের মাটি ভারতীয় বিছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে সব সময় বলেছেন, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন ঘাঁটি নেই। এখন তাঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে, আগে ছিল এখন আর হতে দেবেন না। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে, বেগম জিয়ার কথামতো যদি বিছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটি না থাকে তা’হলে শেখ হাসিনা কাদের বহিষ্কার করলেন? কেন ভারত ও আমেরিকা শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানাল? শেখ হাসিনা বিছিন্নতাবাদীদের শক্তি বিনষ্ট করে দিয়েছেন। খালেদার আশ্বাসে এখন কিছুই আসে যায় না। ভারত কি ভুলে গেছে। হাসিনা যখন বিছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তখন খালেদা জিয়া জোরাল ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, ওরা বিছিন্নতাবাদী নয়। ওরা দেশপ্রেমিক। হাসিনা ভারতীয় দেশপ্রেমিকদের হেনস্থা করছেন। এ প্রসঙ্গে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, উলফা বা অন্যদের যুদ্ধও এক ধরনের মুক্তিযুদ্ধ।
একটু পিছিয়ে যাই গতবারের ঘটনাটা একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ পরিচিত ভারত সমর্থক হিসেবে। বিএনপি-জামায়াত পরিচিত ভারতবিরোধী হিসেবে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে এবং ভারতের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়, তখনই বিএনপি- জামায়াত প্রবলভাবে ভারতবিরোধী প্রচারণা শুরু করে যার মূল বক্তব্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে বা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ থাকলে তাকে ভারত সমর্থন জানায় এ কারণে যে, আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে জাতীয় স্বার্থ বিকিয়ে দেবে। এর আরেকটি কারণ হতে পারে যে, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যাসমূহের মীমাংসা হলে ভারতবিরোধী রাজনীতি কার্যকর হবে না এবং এই ধরনের ভারতবিরোধী আক্রমণ শুরু হলে আওয়ামী লীগ রক্ষণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করে। আবার বিএনপি বা বিএনপি-জামায়াত যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ভারতবিরোধী কোন প্রচারণা তারা করে না। এ থেকে আবার প্রমাণিত হয়, ভারতকে তারা ভয় করে। ক্ষমতায় আসার জন্য বা ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকারীভাবে তারা ভারতের বিরোদ্ধাচারণ করে না। আরেকটি বিষয় হলো, সাধারণ মানুষ বোঝার চেষ্টা করে ভারত কোন্ পক্ষে আছে বা যাবে। যে পক্ষে তারা মনে করে ভারত আছে বা থাকবে সে পক্ষকে আবার অবলীলাক্রমে ভোট দেয়। অবশ্য, অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভোটের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, এ ক্ষেত্রে দুটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেই বিজেপি কোয়ালিশন ভারতে ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামায়াত ভারতবিরোধী প্রচারণা চালালেও, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক শীতল হয়ে আসে। ট্রানজিট এবং বাংলাদেশ থেকে গ্যাস সরবরাহ প্রস্তাব এলেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। বরং শেখ হাসিনাকে ঘোষণা করতে হয়, পঞ্চাশ বছরের গ্যাস মজুদ রেখে বাংলাদেশ গ্যাস রফতানির কথা চিন্তা করবে। এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই জনমনে এই ধারণা গড়ে ওঠে যে, হাসিনার এই ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এ অনুমানটির যে ভিত্তি আছে তার প্রমাণ ভারতীয় ওয়াকিবহাল এক সম্পাদকের রিপোর্ট। একটি রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেছেন “...হাসিনা ভালভাবেই জানতেন যে বাজপেয়ী ও এলকে আদভানির মনে একটা বাড়তি ক্ষোভ জমা হয়ে রয়েছে কারণ কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারত গঙ্গাজল ভাগাভাগি নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করলেও তিনি (হাসিনা) বাংলাদেশ থেকে ভারতে গ্যাস রফতানি করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে অস্বীকার করেছিলেন। পদস্থ ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার সময় হাসিনাকে ভারতের তরফ থেকে বার বার এ কথা শুনতে হয়েছে, ‘গঙ্গা পানিকে বদলে সে হামে কেয়া মিলা?’ ভারতকে সরবরাহ করার মতো পর্যাপ্ত গ্যাসের ভা-ার বাংলাদেশের নেই হাসিনার এই যুক্তিতে ভারতীয় নেতৃবৃন্দ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এর কারণ হলো তাঁর প্রধান প্রতিশ্রুতি বিএনপির খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র তারেক বিজেপী নেতৃত্বকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, ২০০১-এর সংসদীয় নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় এলে তাঁরা পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করার জন্য উদ্যোগী হবেন। মাতা-পুত্র দু’জন ভারতের নীতিনির্ধারকদের এটা বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন যে তারাই ভারতের স্বার্থ ভালভাবে দেখতে পারবেন। তারেক জিয়া তৎকালীন ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারকে এ কথাও বলেছিলেন, ‘আমরা যেহেতু ভারতের দালাল নই, তাই বাংলাদেশীরা ভারতকে আমাদের গ্যাস বিষয়টি বিশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করবে, কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার সেটা করতে গেলে আমাদের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণœœ হচ্ছে বলে কথা উঠবে।’
ভারতীয় নীতি প্রণেতাদের বোকা বানাতে তারেক ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসারের মাধ্যমে এই বার্তাও ছড়িয়ে দেন যে ‘ব্যবসা করতে হলে বিএনপিই ভাল বাজি। পরে এক ভারতীয় গোয়েন্দা অফিসার তারেককে মুম্বাইয়ে একটি বড় কর্পোরেট হাউসে নিয়ে যান ভারত- বাংলাদেশ গ্যাস পাইপ লাইন পাতার পরিকল্পনা করছিল। খালেদা তাঁর পুত্র গ্যাস ইস্যুতে ভারতকে যে বিভ্রান্ত করছিল তা অনেকদিন পর ধরা পড়ে। কিন্তু ততদিনে তাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনাকারী পাকিস্তানের আইএসআই মদদপুষ্ট জেহাদী গোষ্ঠীগুলোর অভয়ারণ্যে পরিণত করে ফেলেছে বাংলাদেশকে।১০২
শেখ হাসিনার শেষ সময়ে বিডিয়ার বিএসএফ সংঘর্ষে ১৬ (?) জন বিএসএফ সদস্য নিহত হয় এবং বিডিআর সে সব লাশের যথাযথ মর্যাদা না করার আলোকচিত্র সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এটি কতটুকু সত্য তা আলোচ্য নয় কিন্তু তারেক জিয়ার ভারত সফর ও এই ঘটনা এ ধারণাই সৃষ্টি করে যে, আগামী নির্বাচনে ভারত বিএনপিকে সমর্থন জানাবে। নির্বাচনে যে বিএনপি জোট জিতবে সে ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে দেখা গেল, জনগণের আশঙ্কাই সঠিক হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। এ প্রসঙ্গে ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর লেখেন, “সংবিধান অনুযায়ী প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান সরকারপ্রধান হলো। দেখা গেল, নীতিহিসেবে ন্যায়নীতি তাঁর অজানা। ৪২ ভাগ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ লাভ করে সংসদের ৬২টি আসন কারণ বিএনপি সরকারের সঙ্গে মিলে ভোট কারচুপি করে। বিএনপি নিয়েছিল ৩৮ ভাগ ভোট। জামায়াত পায় ১৪ ভাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেখায় বিএনপি-জামায়াত জোট পেয়েছে ২৩৮টি আসন। আমার নির্বাচনী এলাকায় [আওয়ামী লীগ সরকারের তিনি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী] পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে টাকা দিয়ে কিনে নেয়া হয়। আমাদের কর্মী ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রের ধারে কাছে ভিড়তে দেয়া হয়নি। সংখ্যালঘু ভোটাদেরকে পিটিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয় এবং তাদের ভোটগুলো দেয়া হয় বিএনপি পক্ষে।”১০৩ অন্যদিকে বিজেপিও ভারতে ক্ষমতায় আসীন হয়। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসেন। বিএনপির অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন গ্যাস মাটির নিচের জন্য নয়, তা বিক্রি করার জন্য। টাটা প্রস্তাব নিয়ে আসে তারা একটি ইস্পাত মিল গড়তে চায় বাংলাদেশে, যা সম্পূর্ণভাবে হবে গ্যাসনির্ভর এবং স্বল্প দামে তা সরবরাহ করা হবে। ট্রানজিটের বদলে অন্য শব্দ ব্যবহার করে ট্রানজিট ভারতকে দেয়া যায় কিনা সেটিও আলোচনায় আসে। তখন ভারত বিরোধিতা না করলেও আওয়ামী লীগ ও অন্যরা প্রশ্ন তোলেন যে দল কয়েকদিন আগে মাত্র এসব ইস্যুতে বিরোধিতা করেছে তারা এখন সে সব ইস্যুর পক্ষে কিভাবে অবস্থান নেয়?
দুর্নীতি, সন্ত্রাস, দলের কাছে সরকারের অধঃস্তনতা সবকিছু তাদের পূর্ববর্তী আমলের রেকর্ড ভঙ্গ করে। কালো টাকা এত পুঞ্জীভূত হয় যে, সরকার তা সাদা করার জন্য ভাল ব্যবস্থা গ্রহণ করে যার ফলে শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ডাক্তার, পুলিশ, রাজনীতিবিদ, সরকারী চাকুরেও লাভবান হয়।১০৪ দুর্নীতিকে আর অপমানজনক মনে হতো না। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ এক মন্ত্রণালয়ের সচিব ঘোষণা করেন, সবাই দুর্নীতি করে তাই তিনিও দুর্নীতি করেন।১০৫ ৫০,০০০ কোটি টাকার কালোবাজারি মামলা স্থগিত রাখা হয়। কারণ মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সরকারী কর্মচারী, কূটনীতিবিদদের নেটওয়ার্ক সহায়তা করেছে স্মাগলারদের।১০৬ দুর্নীতিতে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ পর পর তিনবার প্রথম হয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য নরকতুল্য। আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘুদের ওপর প্রচ- অত্যাচার শুরু হয়। সংখ্যালঘুদের অনেকে দেশ ত্যাগ করতে থাকেন। অন্যদিকে, সরকার দেশের অভ্যন্তরে উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া শুরু করে।১০৭ উলফার ঘাঁটি তৈরি হয় বাংলাদেশে, যা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান থেকে উগ্রবাদীরা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এ সময় দশ ট্রাক অস্ত্র হঠাৎ ধরা পড়ে। অনুমান করা হচ্ছিল এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য আনা হয়েছে, যা পরে প্রমাণিত হয়েছে। তখন তদন্ত অসমাপ্ত রাখা হয়। আইএসআই সক্রিয় হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়, তাঁকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা হয়।১০৮ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকে হত্যা করা হয়। জেলে নেয়া হয় অনেককে।১০৯ উগ্র জঙ্গীবাদীরা বিভিন্ন জায়গায় হামলা শুরু করে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চরম আকার ধারণ করে।১১০
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে তখন অগ্রগতি হয়নি। বেসরকারীভাবে ভারতীয় সরকারের কর্মকর্তা ও অন্যদের সঙ্গে সাক্ষাতকারের এসব বিষয়, বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও উত্তর-পূর্বে ভারতে উগ্রবাদীরা পরস্পরকে সহায়তা করে সেখানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে, এ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু ভারত সরকারের তরফ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এবং তখন জনমনে এই ধারণা হয় যে, ভারতের সমর্থন আছে এই সরকারের প্রতি সুতরাং অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই।
এ সময় লক্ষণীয় যে, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা নেয়। প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী পাকিস্তান সফরে যান। পাকিস্তানের সঙ্গে বাস সার্ভিস চালু হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নের কোন প্রচেষ্টাই তখন নেয়া হয়নি। বরং এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, ভারতের রাডারে বাংলাদেশ নেই।
এরই মধ্যে বাম দলের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস কোয়ালিশন সরকার গঠন করে। এই সরকার পূর্ববর্তী সরকারের নীতি বজায় রাখলেও উত্তর-পূর্ব
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যে বাংলাদেশ সহায়তা করছে সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। ভারতে বাংলাদেশের অবৈধ অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গও উত্থাপিত হয়, যা বাংলাদেশ অস্বীকার করে। সীমান্ত সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। দুর্নীতির দায়ে তারা উভয় দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনাকেও গ্রেফতার করলে জনমত সামরিক সরকারের বিপক্ষে চলে যায়। এ পরিস্থিতিতে ভারত নতুন বাঙালী রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে প্রেরণ করে। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ভারত সফরে যান। তাঁকে পরম অভ্যর্থনা জানানো হয়। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করে ভারত সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। একজন বাঙালী (প্রণব মুখার্জী) পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন, যার সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠতা সবার জানা। সবাই আশা করতে থাকে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে এবং এর পরই বাংলাদেশের পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে। দুই নেত্রীকে মুক্তি দেয়া হয় এবং সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়। ভারতীয় মন্ত্রীদের কয়েকজন ঢাকায় আগমন করেন বিভিন্ন উপলক্ষে এবং এ ঘোষণা দিতে তাঁরা দ্বিধা করেননি, তাঁরা বাংলাদেশে একটি অসাম্প্রদায়িক সরকার আশা করেন। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের বিভিন্ন কর্মকা- ও বক্তব্যে অনুমিত হয় যে, তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সামরিক সরকার অথবা বিএনপি-জামায়াত সরকার পছন্দ করবে না। ইতোমধ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারতে সরকার গঠিত হয়। কোয়ালিশন হলেও কংগ্রেসই প্রধান হয়ে ওঠে, ড. মনমোহন সিং পুনর্বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। জনমনে এই ধারণা হয় যে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতবে। প্রথমত দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা গত সাত বছরে এমন নরকতুল্য হয়ে উঠেছিল যে, মানুষজন আশা করছিল আওয়ামী লীগ সরকার এ থেকে তাদের মুক্তি দেবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে পরিষ্কার ঘোষণা করা হয়েছিল, নির্বাচনে জিতলে তারা ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি, ট্রানজিট এবং ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যাসহ দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবে। ফলে জনগণের মনে আরেকটি ধারণা জন্মে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এবং সেনাবাহিনী ‘নিরপেক্ষ’ থাকবে। দেখা যায়, ২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে। তিন দশক পর আবার বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং কোয়ালিশন হলেও ভারতে কংগ্রেস প্রবলভাবে ক্ষমতাসীন হয়। দু’পক্ষই ঘোষণা করে দ্বিপাক্ষিক সব সমস্যার তারা সমাধান করবে। এবং ক্ষমতায় আসার পরই শেখ হাসিনা সে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এবং ভারত সাড়া দেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। ভারত-বাংলাদেশ ৫০টি অনুচ্ছেদের এক যৌথ বিবৃতি দেয়, যাতে বলা হয় গত তিন দশকের জমে থাকা সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে ও কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৭৫ সালের পর আবার ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচিত হয়।
এ ইতিহাস বিবৃত করলাম এ কারণে যে, এত তাড়াতাড়ি ভারত নিশ্চয় এসব ভুলে যায়নি। মাত্র দশ মাস আগে খালেদা জিয়া বিবিসিকে এক সাক্ষাতকারে বলেন, “বর্তমান সরকার দেশের যা কিছু আছে সবই তলে তলে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে। সরকার দেশের ও দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলছে না। সরকার অন্য দেশের হয়ে কাজ করছে। কাজেই বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততই দেশের ক্ষতি হবে। দেশের সর্বনাশ হবে।” [জনকণ্ঠ, ১২.১২.১১]
কুষ্টিয়ার জনসভায় তিনি বলেন, “এ সরকার ভারতীয়দের সরকার। তাদের কথামতো দেশ পরিচালনা করছে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করে। বিএসএফ এ দেশের জায়গা-জমি দখল করে কিন্তু এ সরকার প্রতিবাদ করে না।” [ওই ২৭.১১.১১]
এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি সুস্পষ্টভাবে দুটি বিষয় তুলে ধরেছেন-
১. “স্বাধীনতার পর তারা ভারতের সঙ্গে ২৫ বছরের গোলামি চুক্তি করেছিল। তখন পুরোপুরি এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তাই এখন ক্ষমতায় এসে এ চুক্তি বাস্তবায়ন করছে।”
২. “তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা না দিলে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট, করিডরসহ সব ধরনের ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানান।” [ওই ২৮.২.১২]
পল্টনের এক সমাবেশে এর আগে বলেছিলেন বাংলাদেশের বুকের ভেতর দিয়ে ট্রানজিটের কোন গাড়ি চলতে দেয়া হবে না, হবে না। বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করেছে এই সরকার। প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে দেশ বন্ধক দিয়ে এসেছেন।” [ইত্তেফাক ৮.১১.১০]
আরও আগে ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সাভারে দেযা বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন এখন থেকে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। অর্থাৎ ভারত জোর করে সব মুসলমানকে হিন্দু বানাবে। ১৯৯৬ সালের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি হলে বলেছিলেন, ফেনী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত সব ভারতের অধীনে চলে যাবে। ১৯৪৭ সালের পর এত কদর্য ভাষায় এমন সাম্প্রদায়িক উক্তি আর কোন রাজনৈতিক নেতা করেননি। এটি তার মনের কথা। এ জন্যই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির এত মহব্বত।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই বিএনপি চরম ভারত ও হিন্দুবিদ্বেষী। এবং এ ধারাবাহিকতা খালেদার ভারত সফরে যাওয়ার আগে পর্যন্ত ছিল বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, এর আগেও ভারত সরকারকে কথা দিয়ে কথা রাখেননি। ভারত যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া বলেছেন, এখন থেকে তাঁরা মন বদলাচ্ছেন। দিল্লী গিয়ে মনমোহন সিংকে বলেছেন, ‘প্লিজ, ভেবে দেখুন।’
আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে যেসব দাবি করেছিল খালেদাও সেসব দাবি করেছেন। তিনি যেটা বলতে চাইছেন তাহলো ক্ষমতায় গেলে তিনি আওয়ামী লীগের বন্ধুত্বপূর্ণ নীতি অনুসরণ করবেন।
খালেদাকে কোন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কি না তা আমরা জানি না। তাদের সঙ্গে মূল কী কথাবার্তা হয়েছে তাও খালেদা বা মনমোহন সিং ছাড়া কেউ জানবেন না। এখন যেসব লেখালেখি হবে তার সবই অনুমাননির্ভর। যেহেতু ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্ন সেহেতু ভারতের জিজ্ঞাসা থাকতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী খালেদা নির্বাচনে যাবেন কি না? না গেলে ক্ষমতায় যাবেন কিভাবে? ক্ষমতায় না গেলে যা দেবেন বলছেন তা দেবেন কিভাবে? আন্দোলন করে তিনি ক্ষমতা হাতে পাবেন কি না? এ প্রশ্নের উত্তর তিনি কী দিয়েছেন তা জানা যাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলে।
সংখ্যালঘুদের প্রশ্নে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কী? এ বিষয়ও ভারত জানতে চাইতে পারে। এবং এক্ষেত্রে খালেদা পটভূমি তৈরি করে গেছেন। বিএনপি-জামায়াত রামুতে বৌদ্ধদের ওপর হামলা করে তাদের সব মন্দির ধ্বংস করেছে। খুব ভেবেচিন্তেই কাজটি করা হয়েছে। কারণ খালেদা জানেন, পাকিস্তানীমনা হিসেবে তাঁকে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এখন তিনি তুরন্ত বলবেন, আওয়ামী লীগ আমলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। আওয়ামী লীগের লোকেরাই আগে মিছিল করেছে।
তবে সবচেয়ে কঠিন যে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তাহলো উগ্র মৌলবাদ যা তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত ছড়িয়েছিল তার কী হবে? এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার চলবে কি না? দুটি প্রশ্নের উত্তরই আপাতত হ্যাঁ হবে। কিন্তু আমরা জানি, ক্ষমতায় গেলে এ দুটি প্রশ্নের উত্তর হবেÑ না। কারণ খালেদা জিয়া নিজের ও পুত্রদের আখের গোছানোর জন্য পাঁচ বছর সময় চান। কয়েক দিন আগেও তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। বাংলাদেশে বিএনপি এখন যুদ্ধাপরাধ সমর্থনকারী দল হিসেবে পরিচিত। মৌলবাদীদের প্রশ্ন এখনও তিনি কিছু বলেননি।
একজন প্রৌঢ়ার মিনতিতে একজন প্রৌঢ়ের মন গলবেই, কূটনীতি এমন সোজা নয়। তবে আওয়ামী নীতি গ্রহণ করে তিনি মনমোহন সিংয়ের সমবেদনা হয়ত কুড়াতে পারবেন। আমরা ভুলে যাচ্ছি যে, জেনারেল এরশাদকেও ভারত আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তুরন্ত তিনি ছুটে গেছেন দিল্লীতে। দিল্লীর ক্ষমতা তিনিও জানেন। দিল্লীওলারা এও জানে সুযোগ পেলেই এরশাদ খালেদাকে সমর্থন জানাবেন।
আসলে কূটনীতির সাফল্য নির্ভর করে দেশের ওজনের ওপর। আমাদের নেতারা ক্ষমতায় গেলে ভাবেন, দেশের ওজনটা বোধহয় খুব বেশি। আর তাদের ওজন তো দেশের থেকেও বেশি। আসলে ওজন অত বেশি নয়। তাই বড় দেশের ডিক্টাট আমাদের মেনে চলতে হয়, হবে। ওজনদার হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে।
বন্ধু বদলানো যায়, প্রতিবেশী তো বদলানো যাবে না। তাই আওয়ামী লীগ ভারতের প্রতি সহনশীল বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। ভারতের নতুন তাত্ত্বিকরা বিএনপিকে যতই ভারত বন্ধু বলে মনে করুক আমরা তো জানি, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। আর এও জানি ভারত প্রায় ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়। ভারত শুধু বঙ্গবন্ধুর সময় এবং শেখ হাসিনার সময় কিছু প্রতিশ্রুতি পালন করেছে। ইন্দিরা সব প্রতিশ্রুতি রেখে ছিলেন। কিন্তু উপমহাদেশের পরবর্তী রাজনীতিবিদরা তো ইন্দিরা ও বঙ্গবন্ধুকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। আবার আমেরিকা, চীন এমনকি পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও ভারত প্রতিশ্রুতি রাখবে। তাদের তারা ভয় করে। সেক্ষেত্রে তাদের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অবস্থা বাংলাদেশের মতো।
সুতরাং ভারত হাসিনাকেও চাপে রাখার জন্য খালেদার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু বজায় নয়, তাকে সাহায্যও করতে পারে। তাতে আওয়ামী লীগের খুব একটা ক্ষতি হবে না। খালেদা, নিজামী এবং বিএনপি-জামায়াত কী জিনিস তা আমরা হাড়ে হাড়ে জানি। সে জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতও আমরা। কারণ আওয়ামী লীগের ভুলের মাসুল আমাদের দিতে হবে নেতাদের নয়, তারা কখনও দেয়নি, প্রয়োজনে তারা দেশত্যাগ করবে [আ. লীগ নিযুক্ত অধিকাংশ উপদেষ্টা ক্রাইসিসে প্রবাসে সময় কাটিয়েছেন, নেতা-মন্ত্রীদের অনেকেও] অথবা সংস্কারবাদী হবেন। কিন্তু আমরা জানি খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসামাত্র কমপক্ষে কুড়ি লাখ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হবে। মিয়ানমার থেকে পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত ভারতের ‘দেশপ্রেমিকদের’ ব্যবহার করতে দেয়া হবে। কার্যত আইএসআইয়ের নির্দেশে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতি কার্যকর হবে। পাকিস্তানবাদ আরও দৃঢ় হবে। ‘হাম হ্যায় পাকিস্তানী’ এ সঙ্গীতই হয়ত জাতীয় সঙ্গীত হবে [জাতীয় সঙ্গীত বদলাবার প্রস্তাব বিএনপির নেতারা দিয়েছিল] ভারতে গিয়েও বিএনপি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলেছে। সে জন্যই বলেছিলাম কয়লা ধুলেই ময়লা যায় না। যে ভারত ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করেছে স্বাধীনতার আহ্বায়ক হিসেবে সে ভারতে গিয়ে যদি বিএনপি নেতারা সরাসরি মিথ্যা বলে এখন, তাহলে ভবিষ্যতে? সুতরাং ভারত যদি তার সীমানায় দুই প্রান্তে দুটি পাকিস্তান নিয়ে থাকতে চায় তাতে আমাদের অসুবিধা কী?
১৮| ০২ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৯
সামদ বলেছেন: বিএনপি নেতাদের উপলব্ধি: ভারতবিরোধী অবস্থান ভুল ছিল
সমকাল, শুক্রবার | ২ নভেম্বর ২০১২
হাসান শিপলু
অতীতে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ছিল না বলে মনে করেন দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। তারা বলছেন, উভয় পক্ষের 'ব্লেইম গেমের' কারণে সম্পর্কের টানাপড়েন ছিল, যার কারণে দুটি দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএনপির ভারতবিরোধী অবস্থানও ছিল 'ভুল'। এ অবস্থা থেকে সরে এসে নতুনভাবে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে সবারই স্বাগত জানানো উচিত।
জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম প্রধান শরিক জামায়াত এবং দলের ডানপন্থি নেতাদের বিরোধিতার মুখেও খালেদা জিয়া ভারত সফরে গেছেন। জামায়াতের কারণেই অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির ভারতবিরোধী মনোভাব ছিল বলে জানান দলের নেতারা। অবশ্য দেরিতে হলেও খালেদা জিয়াকে দলের অপর একটি অংশ বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে লাভ হবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন জরুরি। অবশ্য বিএনপি যে ভারতপন্থি নয়, এ বিষয়টি বোঝাতে এরই মধ্যে চীন সফর করেছেন খালেদা জিয়া।
সূত্রমতে, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু কয়েক মাস ধরেই ভারত সফরের বিষয়ে কাজ করেছেন। গত মাসের প্রথমেও ভারত গিয়েছিলেন মোরশেদ খান। যদিও
মোরশেদ খান বলেন, ব্যক্তিগত কাজে তিনি ভারত সফর করেছিলেন।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জোট সরকারের আমলে বিএনপির সঙ্গে ভারতের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। সে সময় দলের তরুণ নেতারা ভারত লবিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। 'লো প্রোফাইলের' ওই সব নেতা ক্ষমতার মোহে অনেক বিষয়ে ভারতকে তাচ্ছিল্য করেন। এমনকি তখনকার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের সঙ্গেও ভারতের নানা বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়। দলের সিনিয়র নেতারা ওই সময় বিষয়টি খালেদা জিয়াকে অবহিত করলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। চলতি ভারত সফরে এসব বিষয়ে দূরত্ব ঘুচবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খানের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের আলাপ হয়। উভয়ই খালেদা জিয়ার ভারত সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি এ-ও বলেন, যারা ভাবেন, ভারতের সঙ্গে সখ্য হলে বিএনপির ভোটব্যাংকে আঘাত আসবে, তারা ভুল করছেন। জনগণকে বোকা ভাবা ঠিক নয়। মানুষ এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কেও অবগত রয়েছে।
বুধবার বিকেলে মোরশেদ খানের সঙ্গে তার মহাখালীর ব্যবসায়িক কার্যালয়ে ভারত সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময় তিনি এ সফর নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। মোরশেদ খান বলেন, বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ছিল না। কারণ, দোষারোপের রাজনীতি ছিল। ভারত সফরের মাধ্যমে এই দোষারোপের রাজনীতি পরিহারের পাশাপাশি নতুন মানসিকতা তৈরি হবে।
মোরশেদ খান বলেন, 'ভোটের রাজনীতির ভয় দেখিয়ে ভারতবিরোধী মনোভাব জিইয়ে রাখা যাবে না। আমরা জোট করেছি বলে নিজেদের স্বকীয়তা বিসর্জন দিইনি। জোটভুক্ত দলগুলো নিজেদের মতো দলীয় কর্মসূচি পালন করছে। আমরাও অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি নিজেদের মতো করে এগোব।'
সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'সকল সমস্যার সমাধান টেবিলে বসে করতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে নানা বিষয়ে সমস্যা থাকাটাই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার পার্শ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ ও অমীমাংসিত বিষয়ে নানা ঝামেলা রয়েছে। আমাদেরকে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমস্যাগুলো নিয়ে ইতিবাচকভাবে আলোচনায় বসতে হবে। তাহলে অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান অত্যন্ত সহজে হবে।'
লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ভারতের সঙ্গে সঠিক সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বিএনপি বেশ কিছু ভুল করেছে। জোট সরকারের সময় থেকেই নানা ভুল হয়ে আসছিল। দেরিতে হলেও বিএনপি তাদের অবস্থার পরিবর্তন করেছে।
সাবেক এই সেনাপ্রধান স্বীকার করেন, জামায়াতসহ দলের একটি অংশের কারণে বিএনপির ভারতবিরোধী মনোভাব ছিল স্পষ্ট। দেরিতে হলেও তারা দলীয় প্রধানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন_ এ অবস্থান সঠিক নয়।
২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার সময় থেকে ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে বলে স্বীকার করেন তিনি। সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ভারত মনে করে, ওই ঘটনার সঙ্গে ভারতের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত ছিল। কিন্তু বিএনপি এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে ভারতকে বোঝানো যায় ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জোট সরকারের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
খালেদার সফরে ভারতের গণমাধ্যমে সাড়া
বিবিসি জানায়, ভারতে সফররত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার আজমির শরিফে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির মাজার জিয়ারত করেছেন। খালেদা জিয়ার এ সফর নিয়ে দেশে নানা বিচার-বিশ্লেষণ ও রাজনৈতিক বিতর্কের পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমেও সাড়া পড়েছে।
খালেদার সফর সম্পর্কে খবরাখবর রাখা বিবিসির সাংবাদিক জানান, ভারতীয় নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার এ সফরকে নজিরবিহীন গুরুত্ব দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় ও মন্তব্য প্রতিবেদনেও এসেছে নানা বিষয়। এর মধ্যে টাইমস অব ইন্ডিয়া গুরুত্ব দিয়েছে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনাকে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, খালেদা জিয়া তিস্তা চুক্তি ত্বরান্বিত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে অনুরোধ জানিয়েছেন। দ্য হিন্দু গুরুত্ব দিয়েছে, মনমোহন খালেদাকে কী বলেছেন তার ওপর। পত্রিকাটি এক প্রতিবেদনে জানায়, মনমোহন সিং খালেদা জিয়াকে বলেছেন, ভারত কখনও এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, যা বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। এ সফর নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরেছে রিয়ারভিউ মিরর পত্রিকা।
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের বছরখানেক আগে খালেদার ভারত সফর নিয়ে দেশে যেমন জল্পনা-কল্পনা চলছে, ভারতীয় বিশ্লেষকরাও বলছেন অনেক কথা। ভারতের পাইওনিয়ার পত্রিকার এক সম্পাদকীয়কে প্রশ্ন ছুড়ে বলা হয়েছে, বিএনপি কি আবার ভারতের বন্ধু হতে চলেছে? তাদের মতে, এখনও তা নয়। খালেদা মুখে যা বলেছেন, তাকে আগে তা কাজ করে দেখাতে হবে।
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদকীয়তে অবশ্য এ বিষয়ে সংশয়ের চেয়ে আশার সুর বেশি। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার এ সফর সম্পর্কের আশা জাগিয়েছে।
ভারতের স্ট্র্যাটিজিক থিংক ট্যাংক খ্যাত ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস-আইডিএসএ বলেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে এটি দেখাতে হচ্ছে, খালেদার নেতৃত্বে ঢাকায় কোনো সরকার গঠিত হলে, তাদের সঙ্গে নানা বিষয়ে ডিল করার সদিচ্ছা তাদের রয়েছে।
এদিকে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় মজা করে একটি খবর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে ভারতের নতুন নগর উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি খালেদা জিয়ার কাছে অনুযোগ করেছেন, ইদানীং পদ্মার ইলিশ কলকাতায় খুব কমই আসছে। এ বিষয়ে খালেদা বলেন, এ বছর পদ্মায় ইলিশ কম ধরা পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গবাসীকে পদ্মার ইলিশের স্বাদ নিতে হলে আরেক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
১৯| ০২ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩০
সামদ বলেছেন: জামায়াতের মনোভাবও ইতিবাচক
(সমকাল, শুক্রবার | ২ নভেম্বর ২০১২)
রাজীব আহাম্মদ
জামায়াতের ভারতনীতিতেও পালা বদলের হাওয়া লেগেছে। অতীতের তীব্র ভারত-বিরোধিতার পথ ছেড়ে তারা বাস্তবতাকেও মেনে নেওয়ার কথা বলছে এখন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে তাই তারা ইতিবাচক বলেই মনে করছে।
বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। এতকাল দলটির রাজনীতির মূল ভিত্তি ভারত-বিরোধিতা হলেও এখন অনেকটাই 'নমনীয়' তারা। দলের একাধিক নেতা এ তথ্য
জানিয়ে বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে জামায়াতের ভারতনীতিও অনেকটা বদলে গেছে।
খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে বাংলাদেশের 'জাতীয়তাবাদী ও ইসলামিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী' শক্তির সঙ্গে সেদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করে জামায়াত। এমন দাবি দলটির নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ এমপির। তিনি বলেন, 'আমরা কখনও ভারতবিরোধী ছিলাম না। বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করতেই বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করতে হয়েছে।'
খালেদার ভারত সফরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের একক 'মিত্রতা' কমবে বলেও মনে করে জামায়াত। ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতায় জামায়াত-বিএনপির মিত্রতা নষ্ট হবে না_ এমন মন্তব্য জামায়াতের মজলিসে শূরা সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামিক শক্তি ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়; ভারতের বন্ধুত্ব হতে হবে বাংলাদেশের সঙ্গে। ভারতকে এখন তার আন্তরিকতা প্রমাণ করতে হবে।' খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভারত সেই পথে কিছুটা হলেও এগিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, 'ভারত কাকে আমন্ত্রণ জানাবে, কাকে জানাবে না_ তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তারা জামায়াতকে আমন্ত্রণ জানালেও আমাদের কিছু বলার নেই। '
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতারা আটক হওয়ার পর থেকেই নমনীয় হয় দলটির ভারতনীতি। দেশীয় রাজনীতিতে একা হয়ে পড়া জামায়াত অন্য কোনো দেশের 'বিরাগভাজন' না হতেই এই মনোভাব। গত বছর মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকে স্বাগতও জানিয়েছিল দলটি। এমনকি ভারতকে এখন আর ট্রানজিট দিলেও আপত্তি নেই জামায়াতের। অথচ আওয়ামী লীগের ৯৬ থেকে ২০০১ সালের শাসনামলে ভারতকে ট্রানজিট না দিতে একাধিক হরতাল পালন করেছিল দলটি। ওই সময় ভারতের সঙ্গে যে কোনো চুক্তির বিরোধী অবস্থানে ছিল জামায়াত। মনমোহনের বাংলাদেশ সফরের সময় জামায়াতের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম দলীয় এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, 'আমরা ট্রানজিটের বিরোধী নই।' মাশুলের বিনিময়ে ট্রানজিট দেওয়া হলে এর বিরোধিতা না করার ইঙ্গিত দেন তিনি।
২০| ০২ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৫
সামদ বলেছেন: Friday, November 2, 2012
It was a 'mistake': Many top BNP leaders say party shifting from 'anti-India' stance
Rashidul Hasan
Realising that its long-held “anti-India” stance was a mistake, the BNP appears to be making a turnaround in its policy towards the big neighbour, party insiders say.
Now on a visit to India, BNP Chairperson Khaleda Zia has clearly signalled that she wants to reverse the stance on relations with New Delhi. She has assured Indian leaders that her party would not allow Bangladesh territory to be used by terrorists and insurgents to target India.
Political analysts say that after benefiting from its anti-India polemics over the years, the BNP is shifting its strategy because of the changing socio-economic and political conditions at the national, regional and global level.
According to some top BNP leaders, the growing realisation that the party had to pay much for its anti-India strategy and that India is now a big factor in regional and international politics is the reason behind this shift.
Talking to The Daily Star on Wednesday, former foreign minister M Morshed Khan said the relations between the BNP and India could not grow to an expected level due to “politics of blame game”.
“And madam's visit certainly marks a change in her mindset regarding India.”
He also said that it would be foolish to bank on anti-India politics just to please the country's people, as they very well understand the importance of good relations with India.
“Those days of anti-India politics are gone and it would be a mistake if anyone still maintains that stance.”
Speaking to this correspondent, at least three BNP leaders said that two allies -- Jamaat-e-Islami and Islami Oikya Jote -- some BNP policymakers and close aides to the chairperson had convinced Khaleda to take the anti-India position.
The party made various mistakes regarding relations with India, Lt Gen (retd) Mahbubur Rahman, a BNP standing committee member, told The Daily Star at his Banani DOHS residence on Tuesday.
“The party had been pursuing wrong policies, especially from 2001, when it made a political alliance with the Jamaat-e-Islami and Islami Oikya Jote.”
The former army chief said, “The BNP's new stance on India reflects the changed mindset of the party chairperson as well as her realisation to this end.”
“The two Islamist parties [Jamaat and IOJ] had Islamised the BNP-led four-party alliance and with the support of a section of BNP policymakers, they convinced the chairperson to follow an anti-India stance to exploit popular sentiment against India.”
He said the party chief after long years had understood that the anti-India stance would not do her party any good.
“Many of us had earlier tried to make the party chief realise the matter but failed as our opposition in the party and in the alliance was more powerful and the party chief had no alternative but to listen to the powerful lobby.
“Although it was not on the agenda, some of the policymakers, including myself, at several meetings called upon the party chairperson to shed the anti-India stance,” Mahbubur recalled. He declined to go into details.
He said his relations with the party had certainly deteriorated over the 10-truck arms haul during the past BNP-Jamaat rule in 2004. India widely considered that the arms cache had been brought in for some Indian separatist organisations.
Besides, the BNP's ties with the world's largest democracy deteriorated further after the August 21 grenade attack on an Awami League rally in 2004.
“And there were BNP Senior Vice-Chairman Tarique Rahman's various controversial activities when the party was in power in 2001-06,” he said.
“BNP policymakers now realise that the party has to be sincere to resolve all unresolved bilateral problems with India when it takes office.”
However, he added, “It's also true that the BNP had not seen a cordial attitude from India either till 2010.”
According to party insiders, the former army chief along with senior leaders Tariqul Islam, Moudud Ahmed, M Morshed Khan and Shamsher Mobin Chowdhury are among those who played a vital role to “repair” the party's relations with India.
Before Khaleda's New Delhi visit this week, M Morshed Khan toured India twice to do the groundwork to this end. Even Mosaddek Ali Falu, a close aide to Khaleda, had gone to India for the same purpose, BNP sources said.
Talking to this correspondent at his Mohakhali office on Wednesday, Morshed Khan admitted he had visited India for seven days from October 9. But, he said, it was a personal visit and it had nothing to do with the visit of Khaleda Zia.
Also, Indian President Pranab Mukherjee played a vital role in changing his country's stance on relations with the main opposition party of Bangladesh.
“We have got a clear signal of its changed mindset when Pranab Babu categorically mentioned that his country wanted to maintain good relations with all democratic parties of Bangladesh and the people of Bangladesh, not with any particular party,” said BNP standing committee member Moudud Ahmed.
He added this was for the first time any Indian prime minister had invited Khaleda Zia when she was in opposition.
“We have to accept that we have to have good relations with India to resolve all outstanding issues with the largest and powerful neighbour.”
Another BNP policymaker, seeking anonymity, said the party and its allies had used “indecent” language against India on several occasions, especially when the party was in opposition. This attitude breached Indian trust and confidence in the BNP.
২১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৭
সামদ বলেছেন: ট্রানজিট ও টিপাইমুখ ইস্যু : ভারতের চাহিদা পূরণে সাবিহ উদ্দিনের অতিউত্সাহ
মাহাবুবুর রহমান, নয়াদিল্লি থেকে
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ভারত সফরে পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা, প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসের মাঝে হঠাত্ লাইমলাইটে এসেছে ‘ট্রানজিট’ ইস্যু। এ ইস্যুতে দলের ‘স্থায়ী অবস্থান’ অপরিবর্তনীয় থাকলেও ভারতের চাহিদা পূরণে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের অতিউত্সাহ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নয়াদিল্লিতে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তার ‘বিএনপি কখনও ট্রানজিটের বিরুদ্ধে ছিল না’ ও ‘প্রিমিয়াম বেশি পেলে আমরা ট্রানজিট দিতে পারি’ মন্তব্য নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তবে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ট্রানজিট ইস্যুতে দলের আগের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ট্রানজিটের নামে করিডোর দেয়ার পক্ষে নই আমরা। পারস্পরিক স্বার্থ বিবেচনা করে তিন বা ততোধিক দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ট্রানজিট হতে পারে।’ অন্যদিকে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের ব্যাপারেও বিএনপির দীর্ঘদিনের অবস্থান পরিবর্তনের কথা জানিয়েছেন সাবিহ উদ্দিন।
ট্রানজিট ও টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বুধবার রাতে বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাত্কার দেন বেগম জিয়ার সফরসঙ্গী ও উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কখনই ট্রানজিটের বিপক্ষে ছিল না। এটা বৃহত্তর কানেকটিভিটির আদলে হতে পারে। তবে এজন্য বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ উপযুক্ত নয়।’ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভারতকে দীর্ঘ দূরত্বের দুর্গম পথ পার হতে হয়। সেজন্যই ভারত ট্রানজিটের নামে করিডোর (ভারতের এক স্থান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ফের ভারতে প্রবেশের সুবিধা) পেতে চায়। বিবিসির সংবাদে এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, সাবেক কূটনীতিক ও বর্তমানে বিএনপি নেতা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রিমিয়াম পেলে ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে চাই এবং প্রকৃতপক্ষে এটাই আমরা বলতে চাই।’ সাবিহ উদ্দিন বলেন, ‘ট্রানজিট পেলে ভারতের যে অর্থ সাশ্রয় হবে আমরা তো তার একটা অংশ প্রিমিয়াম হিসেবে চাইতেই পারি।’
বুধবার রাতে বিবিসি ওই রিপোর্ট প্রচার কালে ট্রানজিট নিয়ে খালেদা জিয়ার একটি কঠোর বক্তব্যও প্রচার করে যেখানে বেগম জিয়া বলেন, ‘ ট্রানজিট হলো সৈন্য, পণ্য ও অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করার একটি ভারতীয় কৌশল।’ ঢাকার একটি ইংরেজি ও একটি বাংলা দৈনিকে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়। ইংরেজি পত্রিকার সংবাদে শিরোনাম ছিল—‘বিএনপি ওয়াজ নেভার এগেইনস্ট ট্রানজিট’ অর্থাত্ বিএনপি কখনোই ট্রানজিটের বিরুদ্ধে ছিল না।
সাক্ষাত্কারে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়েও বিএনপির এতদিনের অবস্থানের আমূল পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলেন সাবিহ উদ্দিন ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। বিবিসির খবরে বলা হয়, টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধের দাবি থেকেও সরে এসেছে বিএনপি। তার পরিবর্তে বেগম জিয়া এখন উভয় দেশের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটির মাধ্যমে যৌথ সমীক্ষার দাবি জানান বলে জানান শমসের মবিন চৌধুরী । এ ব্যাপারে সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ড. মসিউর রহমানের নামোল্লেখ না করেই বলেন, ভারতের কাছে ট্রানজিটের জন্য ফি চাইলে আমরা অভদ্র হয়ে যাব বলে যারা মন্তব্য করেছেন, সে ধরনের লোকদের এই কমিটিতে রাখা যাবে না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে গত ২৮ অক্টোবর ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে বেগম জিয়া ৭ দিনের সফরে নয়াদিল্লি আসেন। প্রথম তিন দিনে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন, বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা সরাজ ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রতিটি বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারস্পরিক চাহিদা এবং বিদ্যমান সব সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। তিস্তাসহ পানির ন্যায্য হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট, কানেকটিভিটি, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ইস্যুতে বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া তার দল এবং দেশের মানুষের অবস্থান তুলে ধরেন বলে জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ট্রানজিট ইস্যুতে ভারতের আগ্রহের জবাবে আগের মতোই তিন বা ততোধিক দেশের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। বাংলাদেশ-ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো হয়ে দূরপ্রাচ্য পর্যন্ত কানেকটিভিটি চায় দলটি। ভারতীয় উচ্চপদস্থদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রানজিট ইস্যুতে এ কথাই বলা হয়েছে বলে জানান খালেদা জিয়ার ভারত সফরের প্রতিনিধিদলের সদস্য ও মুখপাত্র শমসের মবিন চৌধুরী।
এ সংবাদকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার ভারত সফর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ার প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনাকে পেছনে ফেলে ‘ট্রানজিট’ ইস্যু সামনে চলে আসে। বিশেষ করে ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ট্রানজিট ও করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে ‘আমৃত্যু’ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া বেগম জিয়ার নীতির পরিবর্তন হয়েছে কি-না, এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ১৯৯৬-০১ এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ‘ট্রানজিট’ ও ‘করিডোর’ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেয়া বক্তব্যে যারা আন্দোলিত হয়েছেন, তারা অনেকে গণমাধ্যমে ফোন করে প্রকৃত তথ্য জানতে চান। এমনকি ক’জন বিশিষ্ট নাগরিক আমার দেশ-এ ফোন করেন এবং ভারত সফরে বেগম জিয়া ট্রানজিট ইস্যুতে ‘নীতির পরিবর্তন’ করেছেন কিনা জানতে চান। বিএনপির একজন শুভানুধ্যায়ী বুদ্ধিজীবী এ প্রতিবেদককে ফোনে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলে বেগম জিয়ার সফরের ‘ট্রানজিট’ ইস্যুতে সংঘটিত আলোচনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়। ‘ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ট্রানজিট দিতে বিএনপি সম্মত নয়’—এমনটি জানানো হলে জবাবে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়ার সফরসঙ্গীরা কেন ও কি উদ্দেশ্যে যে যার মতো করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত এ সফরকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে—এতে স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার ভারত সফরে আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন সফরসঙ্গী ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।
‘ট্রানজিট’ ইস্যুর এসব বিতর্কে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে সাবিহ উদ্দিন আহমদের কাছে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাত্কারের তথ্যের পক্ষে যুক্তি দেন। বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষেই বিএনপি কখনও ট্রানজিটের বিপক্ষে ছিল না। তবে সেটা আমরা টোটাল কানেকটিভিটির আদলে দেয়ার কথা বলছি।’ অবশ্য প্রিমিয়াম চাওয়ার প্রশ্নটি তিনি এড়িয়ে যান।
‘ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিবিড় করতে বেগম জিয়ার সফর চলাকালীন সময়েই ট্রানজিটসহ স্পর্শকাতর ইস্যুতে এভাবে দেয়া অগোছালো বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি-না’ জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেগম জিয়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব বৈঠকেই বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদাকে তুলে ধরেছেন। দেশ ও জনগণের স্বার্থ অধিকতর রক্ষা করে কীভাবে দু’দেশের বিবদমান সমস্যাগুলো সমাধান করা যায়—তা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। প্রতিটি বৈঠকের পর গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা এসব বিষয় স্পষ্টভাবে গণমাধ্যমকে ব্রিফিং দিয়েছি। এরপর জনগণের মাঝে যেমন ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই, তেমনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছেও আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট।’
খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে ভারত-বাংলাদেশে তত্পর আ.লীগ : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দিল্লি সফর নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশেই তত্পর আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এ সফরের আগেই ভারতে এসেছিলেন। শিলংয়ে তিনি ক’দিন অবস্থান করে সফরের সার্বিক খোঁজ নেন।
অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণকে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে কী কথা হয়েছে জানা না গেলেও খোদ ভারতের সাংবাদিকরাই বলছেন, ‘খালেদার সফর নিয়ে এত উত্সাহ-উদ্দীপনা সহ্য করতে না পেরেই হাইকমিশনারকে এভাবে তলব করা হতে পারে।’ আর ঢাকায় প্রকাশ্যভাবেই এ সফর নিয়ে বিষোদ্গার করেছেন সরকারদলীয় নেতারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ সফরকে ‘অর্থহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফও এ নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে এখনও সাক্ষাত্ করেননি। তিনি অফিসিয়াল কাজের জন্য সফর শুরুর আগেই ভারতের একটি রাজ্যে অবস্থান করছেন। তবে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার এনামুল হক চৌধুরী প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর রাখছেন।
এসব বিষয়ে প্রেস মিনিস্টার এনামুল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ সফর নিয়ে ঢাকা থেকে সরকারিভাবে আমাদের কিছুই বলা হয়নি। এমনকি সফরের দু’দিন আগে আমরা অফিসিয়ালি জেনেছি। ভারত সরকার বা বিএনপিও আমাদের সেভাবে জড়াতে চায়নি বলে আমরা দূরে থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায়, তা-ই করছি।’
খালেদা জিয়ার সফর নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ার জবাবে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘কে কি বলল, তাতে কিছু আসে যায় না। আমরা বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এখানে কথা বলেছি। ভারতের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে।’
২২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৪
মো: সালাউদ্দিন ফয়সাল বলেছেন: আসেন এখন খালেদাকে ভাদা ট্যাগ দিয়া দেই
০৩ রা নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৮
সামদ বলেছেন: বিএনপি নেতাদের উপলব্ধি: ভারতবিরোধী অবস্থান ভুল ছিল
সমকাল, শুক্রবার | ২ নভেম্বর ২০১২
২৩| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৩১
সামদ বলেছেন: Daily Star: Sunday, November 4, 2012
BNP's India politics at a crossroads: Hardliners show no change of heart; liberals want a change
Rezaul Karim
While the mainstream BNP welcomes Khaleda Zia's latest steps to reverse its long-held anti-India stance, hardliners are yet to believe the big neighbour can be friendlier to the party.
As Khaleda during her just-concluded India visit said she would never support insurgents or terrorists and her party did not oppose transit, some top party leaders told the press the anti-India policy was a “mistake”.
However, there is still a stream within the party that believes the country's experience with India did not inspire the party into trusting a neighbour which had always tried to bully Bangladesh with its big brotherly attitude.
They say her statements would adversely affect their politics and it might have a negative impact on the party at the next general elections.
But this section is not willing to go on record as opposing Khaleda's latest stance just yet. Those in the group say they have to at first talk with the chairperson to hear from her about her position on India.
Several senior as well as many mid-level leaders in Dhaka have given their mixed reaction over the party chief's India visit that concluded yesterday, especially her interaction with the New Delhi leadership.
Liberal BNP leaders said the visit along with efforts to come out of anti-Indian politics was a bold step as such politics had become obsolete.
Talking to The Daily Star on Wednesday, former foreign minister M Morshed Khan said it would be foolish to bank on anti-India politics just to please a section of the country's people, as people in general very well understood the importance of good relations with India.
“Those days of anti-India politics are gone and it would be a mistake if anyone still maintains that stance.”
But hardliners say late president Ziaur Rahman founded the BNP through challenging Indian hegemony and people who strongly opposed India joined the party. The party's main strength is anti-India politics, they added.
They say the people who are new in the BNP and believe in shortcuts think the party can go to power by winning Indian trust, and they have apparently misguided the party chief into saying many things during this tour.
“Those who are the mainstream BNP can't be pro-India … the BNP was born with anti-India sentiment as the majority of people in the country are anti-India,” said a senior leader of the party, expressing apprehension that the BNP might lose mass support and true foreign friends if its “new policy to please India” continued.
It would not be wise for the BNP to keep faith in India or expect anything from it because, ultimately, New Delhi will help the Awami League win a second term in office.
Another BNP leader said although media reports suggest Khaleda Zia went to Delhi only to give commitments to India, he was confident that the party chief would not overnight change her mind and policy towards India.
Many mid-ranking BNP leaders think the visit is part of a conspiracy because her statements in India will weaken the BNP and its mainstream supporters and activists will be unhappy because they are part of the BNP for its anti-India stance.
Asked whether the unity of the 18-party alliance, a combine of extreme right-wing political parties, would be affected by this visit, a top BNP leader said, “Our unity with the Jamaat or other rightwing parties are not based on principles.”
This is a strategic alliance and the allies play no role in BNP policy making, the party leader said.
On Khaleda's commitment regarding anti-India militants and insurgency groups, he said the BNP had never said it instigated the activities of separatists or militants. So her statement in this context was not new.
২৪| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৩৩
সামদ বলেছেন: Sunday, November 4, 2012
Wait and see: Say two ex-Indian envoys in Dhaka on outcome of Khaleda's visit
Pallab Bhattacharya, New Delhi
The taste of the pudding is in its eating. The old saying is applicable to BNP Chairperson Khaleda Zia's remarks made during her interactions with Indian leaders here, according to two former Indian High Commissioners to Bangladesh.
If the briefing by BNP Vice-Chairman Shamsher Mobin Chowdhury is anything to go by, Khaleda had, during her luncheon meetings with Indian Prime Minister Manmohan Singh and Foreign Minister Salman Khurshid, conveyed to them that she wanted to make a "new beginning" in relations with India.
The former Bangladesh premier, known for her strident anti-India stance, sought to address issues of India's concerns relating to security, connectivity and illegal migration, and indicated her willingness to accept India's participation in building a deep sea port at Sonadia. While in Delhi, she made all the right noises.
However, the big question is whether Khaleda or her party will be able to follow through on the words and warmth expressed in the Indian capital during her visit.
Bangladesh observers here would like to see if this is a genuine change of heart on the part of the BNP or just another instance of posturing.
According to Veena Sikri, a former Indian High Commissioner to Bangladesh, it remains to be seen whether the BNP or its chief will express the same sentiments on Khaleda Zia's return to Bangladesh or will walk the talk if they come back to back.
Sikri told The Daily Star that the BNP had said the same things when it was in power from 2001 and 2006, but “things on the ground were completely different from their words at that time”.
She, however, said Khaleda's visit to Delhi was a “useful exercise” and it should be seen in the context of India's readiness to engage all shades of opinion in the democratic polity of Bangladesh.
The former Indian diplomat pointed to serious incidents during the BNP's last period of rule (2001-06), such as the massive arms haul in Chittagong in April, 2004 which were meant for the north eastern Indian insurgent outfit ULFA, the 2004 serial bomb attacks across Bangladesh and the deadly August 21 grenade attack on an Awami League rally in Dhaka, all of which showed how Bangladesh had become a happy hunting ground for extremist elements.
Sikri said it remained to be seen if Khaleda's remarks made to Indian leaders would be reflected in the BNP's manifesto for the 2013 parliamentary elections, and what action would be made on the ground to match those remarks.
“Trust but verify” is the message from Dr Muchkund Dubey, another former Indian High Commissioner to Bangladesh and India's ex-Foreign Secretary, when he was asked to comment on Khaleda's remarks made in Delhi.
Dubey told The Daily Star that while India had to take at face value Khaleda Zia's remarks made in Delhi, “it must verify on the ground if her words are matched by her actions in Bangladesh”.
He said it was, however, “quite right” for the Indian government to invite Khaleda and have talks with her “because in a democratic system, there should be relationship with all mainstream political parties. It is the right thing done by India”.
The former envoy said it should not be India's strategy to help this party or that party in Bangladesh as “this is totally misguided and counter-productive”.
২৫| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৩৪
সামদ বলেছেন: জনকন্ঠ: রবিবার, ৪ নভেম্বর ২০১২, ২০ কার্তিক ১৪১৯
বাংলাদেশে ‘বিস্ময়’ বলে আর কোন শব্দ রইল না
মুনতাসীর মামুন
ভাই, আপনারা শুধু সমালোচনা আলোচনা করে গেলেন কিন্তু তাঁর যে প্রশংসাটুকু প্রাপ্য সেটি প্রদানে আপনারা কুণ্ঠা প্রকাশ করছেন। ব্যয়কুণ্ঠ জাতি হিসেবে আমাদের যে খ্যাতি সেটি আপনারা অটুট রাখলেন। প্রাচীন আমল থেকেই বলা হয়, বাঙালী খালি ছিদ্রান্বেষণেই ব্যস্ত থাকে। এবারও আমরা সে দুর্নাম মোচন করতে পারলাম না। এটিই দুঃখ।
আমি বাংলাদেশের বর্তমান বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে বলছিলাম। এ সফর নিয়ে ভারতে না যতটা, তারচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে বাং লাদেশে, পত্রপত্রিকায়, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক-শোতে। ভারতে যে একেবারে আলোচনা হয়নি তা নয়; তবে, স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার দিনটিই সংবাদে এসেছে। সেটি স্বাভাবিক। প্রতিদিন সেখানে কোন না কোন দেশের অতিথি আসছেন। খালেদা তো হিলারি ক্লিনটন না। ভারতে, আমাদের দেশের মতো কোন দেশের রাষ্ট্রদূত দেখলেই মাইক্রোফোন নিয়ে সাংবাদিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েন না। কবে যে আমাদের বাল্যকাল কাটবে!
বেগম জিয়া বেশ কিছু দিন ধরেই ভারত সফর ও ভারত সম্পর্কে তাঁর দলের নীতি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছিলেন। বিদেশী এক জার্নালে এ সম্পর্কে প্রথম তাঁর নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। তিনি ঠিকই অনুধাবন করেছিলেন, ভারত গেলে তাঁকে নতুন কিছু বলতে হবে যা গ্রহণযোগ্য। কেননা এর আগে বিজেপি যখন ক্ষমতায় তখন তিনি যা বলেছিলেন তা করেননি। মধ্য ও বামপন্থী দলের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নেই। ডান দলের গ্রহণযোগ্যতাও তিনি হারিয়েছিলেন।
এবিএম মূসা তাঁর এক নিবন্ধে লিখেছেন বা ইঙ্গিত করেছেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি জিততে পারে এ পূর্বাভাস থেকেই ভারত তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এ ধরনের পূর্বাভাস অবশ্য অনেকেই করছেন। কারণ কি? সরকারের বিভিন্ন নীতিতে ব্যক্তি ক্রুদ্ধ বা ক্ষুব্ধ হতে পারেন, কিন্তু সমষ্টি কি এতই ক্রুদ্ধ? শ্রদ্ধেয় জনাব মুসা এর আগে একবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তারেক জিয়া হবে নতুন রাজনীতির কাণ্ডারি [এটি উদ্ধৃতি নয়। কিন্তু সে লেখাটি পড়ে আমার তাই মনে হয়েছিল। ভুল হলে আশা করি লেখক নিজগুণে আমাকে ক্ষমা করবেন]।
কিন্তু শ্রদ্ধেয় মুসা ভাই, তারেক ভ্রাতৃদ্বয় যা করেছিল তা কি নতুন রাজনীতির যোগ্য? বা আওয়ামী লীগ আমলে যা হয়েছে বা হচ্ছে তা কি ২০০১ -৬ সাল থেকেও খারাপ? আওয়ামী লীগের আমলকে স্বর্ণযুগ মনে করার কোন কারণ নেই। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাখতে গেলে এ দুটো দলের মধ্যে থেকেই বাছাই করতে হবে। আমি নিশ্চিত, প্রাণ গেলেও জনাব মুসা জেনারেল এরশাদ বা নিযামীকে সমর্থন করবেন না। বরং যদি বলেন, এ দ’ুটি দুষ্ট প্রকৃতি থেকেই একটিকে বাছতে হবে তা’ হলেও তা যৌক্তিক ঠেকে। কি করব বলেন, গাড্ডায় পড়ে গেছি আমরা!
জনাব মুসার ইঙ্গিত ধরেই বলি, এর আগে জেনারেল এরশাদকেও একইভাবে ভারত আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তা হলে কি জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আসার চান্স আছে? কি বলেন? জেনারেল এরশাদ অবশ্য মনে করেন তিনি ক্ষমতায় আসবেনই। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও একইভাবে আমন্ত্রণ জানান হয়েছে। তা’ হলে কি আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় আসবে? কি বলেন?
না ভাই, মনে হয় না সমীকরণটা এত সরল। যাক, পুরনো কথায় ফিরে আসি। বেগম জিয়ার সফর ও তা নিয়ে তর্ক-বির্তক।
বিএনপি বর্তমান ভারত নীতি গ্রহণ করার আগে দলীয় কোন ফোরামে আলোচনা হয়েছিল বলে খবর পাইনি। হলে জনাব গর্জন সিংয়ের গর্জনে তা জানতে পারতাম। খুব সম্ভব দু’ এক জনের প্রভাবে তিনি সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নিলে দলের নেতাকর্মীরা এত বিপদে পড়ত না। তারা কি বলে যেন ইংরেজীতে, রীতিমতো শক্ড।
এক হার্ডকোর বিএনপি খালেদা জিয়ার এই নীতির সমালোচনা করছিলেন আমার বন্ধু কাজী ইকবালের কাছে। ইকবাল বলছিলেন, এটি খুব ভাল হয়েছে। এতদিন তিনি ফার্স্ট ডিভিশনে খেলতেন, এখন প্রিমিয়ার লীগে খেলবেন। এত পুরনো দল হিসেবে ম্যাচুয়র্ড ও শক্তিশালী হওয়ার লক্ষণ। ভবি ভুলবার নয়। বললেন, ভাই, তিনি তো সবই দিয়ে দিচ্ছেন। সমস্যা হলো , বিএনপি-জামায়তীরা তো কাওয়ালি ও গজলের ভক্ত, রবীন্দ্র সঙ্গীতের নয়। হিন্দুদের খালি হিন্দী গান তাদের পছন্দ। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার উল্লেখ করি। আমি এক দশক আগে গেছি পরাজিত পাকিস্তানী জেনারেল নিয়াজির সাক্ষাতকার নিতে। পাগড়ি-টাগড়ি পরে জেনারেল অনেক সুখাদ্য নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর কন্যা আমাকে বার বার বলছিলেন, যা হবার হয়েছে, আমরা যেন ইন্ডিয়া মানে হিন্দুদের সঙ্গে মাখামাখি না করি। জেনারেলও কন্যার কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়ছিলেন। এক পর্যায়ে আমি বললাম, আমার মনটা আজ খুব খারাপ। কেন? কেন? পিতাপুত্রী আকুল হয়ে জানতে চাইলেন। বললাম, ‘অপনাদের বাসায় আসার পথে মার্কেটে গিয়েছিলাম। তা সব দোকানে দেখি হিন্দুস্তানীদের সিনেমার ভিডিও, হিন্দুস্তানী গায়ক-গায়িকাদের গানের সিডি কি হলো আপনাদের? হিন্দুদের দ্বারা এত প্রভাবিত কেন আপনারা?
‘ইয়ে মানে, কেকটা আপনার জন্য তৈরি করেছিলাম, এক টুকরো খান, খুবই সুস্বাদু।’
যদি বিএনপি-জামায়াতীরা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতেন তা’ হলে সান্ত¡না পেতেন। জীবনের সব পর্যায়ের জন্য তিনি কিছু না কিছু বলে গেছেন। সেটি শুনে আমরা বাঙালীরা সান্ত¡না পাই গভীর শোকেও। তাঁর এমন একটা গান হলো ‘আমার যে সব দিতে হবে, সেতো আমি জানি।’
কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। প্রেমিক-প্রেমিকাকেও। আর এত কঠিন রাজনীতি। খালেদা জিয়া জানতেন যে তাঁর সব দিতে হবে। না হলে, জেনারেল এরশাদ বা সৈয়দ আশরাফের মতো তিনি আমন্ত্রণ পাবেন না। আর যদি তিনি তা না পান, তা’হলে সবার একটা ধারণা হবে, তিনি ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য নন। ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে আমেরিকার কাছেও নয়। আমেরিকার কাছে না হলে ইউরোপের কাছেও নয়। শুধু মওদুদ আর পিন্টু মিন্টু আলু-পটলের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে তো চলবে না। ক্ষমতার রাজনীতি যাঁরা করেন তাঁরা এ ব্যাপারটা ভাল করে বোঝেন। বেগম জিয়াকেও সেটি বোঝানো হয়েছে। তিনি তা অনুধাবন করেছেন। যে সব দেয় সে বোঝে কষ্টটা কি। ভাই, আপনি বুঝবেন না। আমরা তো খালি পেতে অভ্যস্ত।
কি দিলেন খালেদা জিয়া? পাকিস্তানবাদ যা ছিল তার আদর্শ, তাঁর দলের আদর্শ। নিয়াজিদের মতো বা পাকিস্তানীদের মতো তিনি বিশ্বাস করতেন, সব খারাপের প্রতীক হিন্দু ভারত। অতএব তাদের নিকেশ করতে হবে। পাকিস্তানবাদের অন্তর্গত সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র জঙ্গী মৌলবাদ, শোষণ-নিপীড়ন, সামরিকায়ন ও দমন এবং ধর্মের ব্যবহার। বিএনপির ৩৫ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস দেখুন। জিয়ার সামরিকায়ন, নিপীড়ন, সাম্প্রদায়িকতা; বেগম জিয়ার জঙ্গী, মৌলবাদ প্রীতি, সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ ও দমন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। আমাদের ২৫ বছর লেগেছে পাকিস্তানবাদ ছাড়তে, বেগম জিয়ার লাগল ৩৫ বছর। বিএনপি শাসনের মৌলিক চরিত্রটি বোঝা যাবে দু’টি ঘটনায়। ১৯৯৬ সালে সাভারে এক সভায় তিনি বললেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। এরকম কদর্য উক্তি রাজনীতিতে বিরল। আমাদের ঐ যে, কি বলে সুশীল সমাজ, শেখ হাসিনা কিছু বললেই বিরক্ত হয়।
কিন্তু বেগম জিয়া শুধু সে কথাই নয়
১. আওয়ামী লীগ এলে টুপি পরা যাবে না।
২. আওয়ামী লীগ এলে মসজিদে যাওয়া যাবে না।
যখন বার বার এসব কথা বলেন তখন কিন্তু তারা বিরক্ত হয় না। মুখে না বললেও মনে মনে তারিফ করে বলে, বেড়ে বলেছে তো।
২০০১ সালের পরের ঘটনা। খালেদা জিয়ার ‘সোনার ছেলে’রা এক গ্রামে গভীর রাতে এক বিধবার বাড়িতে হানা দিয়েছে। করাঘাত শুনে বৃদ্ধা হারিকেন নিয়ে দরজা খুলে দিলেন। তারপর হারিকেন নামিয়ে হাতজোড় করে সোনার ছেলেদের বললেন, বাবারা, তোমরা একজন একজন করে আস। আমার মেয়েটা খুব ছোট। ভাই, আপনাদের এসব কথা মনে পড়ে না, না? এইসব পাকিস্তানী ঘটনা আপনারা মন থেকে মুছে ফেললেন? এই পাকিস্তানবাদ বহন করেছে বিএনপি গত ৩৫ বছর, খালেদা জিয়া প্রায় ৩০ বছর। সেটি ফেলে দিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান হঠাৎকরে নিলে তো প্রশ্ন উঠবেই, আলোচনা হবেই।
খালেদা জিয়ার যেমন কষ্ট হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে তাঁর সমর্থকদের। ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়ার কষ্ট কেটে যাবে। তাদের কি হবে? কি নিয়ে থাকবে তারা? বিএনপির মুখপত্র বলে পরিচিত দৈনিক আমার দেশ-এ শিরোনাম ‘ভারতের চাহিদা পূরণে সাবিহউদ্দিনের অতি উৎসাহ।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘এ সংবাদকে কেন্দ্র করে খালেদা জিয়ার ভারত সফর ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ার প্রক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনাকে পেছনে ফেলে ‘ট্রানজিট’ ইস্যু সামনে চলে আসে। বিশেষ করে ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ট্রানজিট ও করিডর দেয়ার বিরুদ্ধে ‘আমৃত্যু’ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া বেগম জিয়ার নীতির পরিবর্তন হয়েছে কি না, এ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ১৯৯৬-০১ এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ‘ট্রানজিট’ ও ‘করিডর’ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেয়া বক্তব্যে যারা আন্দোলিত হয়েছেন তাঁরা অনেকে গণমাধ্যমে ফোন করে প্রকৃত তথ্য জানতে চান। এমনকি ক’জন বিশিষ্ট নাগরিক আমার দেশ-এ ফোন করেন এবং ভারত সফরে বেগম জিয়া ট্রানজিট ইস্যুতে ‘নীতির পরিবর্তন’ করেছেন কিনা জানতে চান। বিএনপির একজন শুভানুধ্যায়ী বৃদ্ধিজীবী এ প্রতিবেদককে ফোনে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলে বেগম জিয়ার সফরের ‘ট্রানজিট’ ইস্যুতে সংঘটিত আলোচনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরা হয়। ‘ভারতের চাহিদা অনুযায়ী ট্রানজিট দিতে বিএনপি সম্মত নয়’ এমনটি জানানো হলে জবাবে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়ার সফরসঙ্গীরা কেন ও কি উদ্দেশ্যে যে যার মতো করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন খালেদা জিয়ার বহুল আলোচিত এ সফরকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে এতে স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। [আমার দেশ ২.১১.১২]
বোঝা যায় বিএনপি সমর্থকরা খুশি নন। বহুরূপী মওদুদ আহমদের মতো মৃদু হাস্যে বলতে পারছেন না সফর সফল। একদিক থেকে মওদুদ ঠিকই বলেছেন, কথায় অন্তত পাকিস্তানবাদ ঝেড়ে ফেলেছেন সেদিক থেকে খালেদা সফল। বিএনপির সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা নানা নির্বস্তুক কথা বলছেন। খুবই অসুবিধায় পড়েছেন তারা। বলতে পারছেন না সরাসরি, এতদিন পর আওয়ামী লীগের নীতি অনুসরণ করার মাধ্যমে তারা যে ভ্রান্ত ছিলেন তা প্রমাণিত হলো। রাজনীতিতে এ ধরনের স্বীকারোক্তি বড় কষ্টকর।
আমাদের পরিচিত সজ্জন এক ঘনিষ্ঠ ডাক্তার বললেন, আপনি ঠিকই লিখেছিলেন, বেগম জিয়াকে এখন অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক মনে হয়। সেটি স্বাভাবিক।
কারণ, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তিনি সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসছেন। সে কারণেই তাঁকে অনেকটা সুস্থ লাগছে। আর সত্যি সত্যিই যদি তিনি সুস্থ হন তাহলে জাতির জন্য হবে তা বোনাস। অসুস্থ পরিবেশে থাকলে মানুষকে সুস্থ লাগে না। সে জন্য আমি ব্যতিক্রমী বাঙালী হতে চাই। বেগম খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানাতে চাই। ভাই, আমি আপনাদের মতো সবসময় নিন্দার ঝুড়ি বহন করতে চাই না। আমি মহামানবদের অনুসরণ করে বলতে চাই, পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই। ভারতীয়রা খুব কম ক্ষেত্রেই প্রতিশ্রুতি রাখে। ভারতীয় আমলাতন্ত্র অত্যন্ত শক্তিশালী। তারাই নীতি তৈরি করে। আমলাতন্ত্র বাংলাদেশকে খুব একটা পাত্তা দিতে চায় না। নানা কটু মন্তব্য করে। পাকিস্তানী দেখলে তারা তেল দিতে দিতে অস্থির হয়ে পড়ে। ঐ আমলাতন্ত্রের বিএনপি-জামায়াতের মতো পাকিস্তানবাদের প্রতি মোহ আছে। হিনা রাব্বানীকে দেখলে আবেগে তারা কেঁদে ফেলে। দীপুমণি গেলে তাদের চোখমুখ কঠোর হয়ে যায়। কংগ্রেস সরকার যেহেতু এখন দুর্বল, তাই এ নীতি তারা কংগ্রেসকে গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে। খালেদার মতো কংগ্রেসের জন্যও এ নীতি নতুন। তবে, আমলাতন্ত্রের এই নীতিতে পুরোপুরি সময় এখনও কংগ্রেস দেয়নি। খালেদার দিল্লী থাকার সময় সোনিয়ার সাক্ষাত না পাওয়া এর উদাহরণ। কারণ দিল্লীতে সোনিয়া এখন সব ক্ষমতার উৎস। ভারত/কংগ্রেস দেখতে চায়, খালেদা তাঁর কথা রাখেন কিনা, নাকি গতবারের মতো জুডাসের ভূমিকা গ্রহণ করবেন।
ভারতের আমলাতন্ত্রের একাংশ, মতামত সৃষ্টিকারীরাও কংগ্রেসের এই নীতি বদলকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, খারাপ কি হলো? ৩৫ বছর পর খালেদাকে সব দিতে হলো। বিএনপি যত কথাই বলুক না কেন, মূল কথাতো হলো খালেদাকে সব দিতে হলো।
আমি ভেবে পাই না, আওয়ামী লীগের কিছু নেতার এতে এত গাত্রদাহ কেন? তাদের সমস্যাটি কি? খালেদা হাসিনার নীতি অনুসরণ করলেন বাধ্য হয়ে; এতে তো তাদের নেত্রীর জয়। আসলে, আওয়ামী লীগে কয়েকজন মওদুদ আহমদ দরকার।
খালেদার নীতি পরিবর্তনে আমাদের খানিকটা সমস্যা হবে। ভারত সাধারণত তার সব প্রতিশ্রুতি রাখে না, রাখতে পারে না, যেহেতু বাংলাদেশ পাকিস্তান নয় প্রায় প্রতিদিন সীমান্তে একজন হত্যাকে এখনও বলা হয় হত্যা নয় মৃত্যু। মমতাকে উপেক্ষা করে কংগ্রেস এফডিআই চালু করতে পারে [যেহেতু আমেরিকা তা চায়] কিন্তু তিস্তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত করতে পারে না। যখন, এখন আবারও সীমান্ত হত্যা হবে, বাণিজ্য ঘাটতি পড়বে, পানি পাওয়া যাবে না, কিন্তু ট্রানজিট দিতে হবে ফি ছাড়া; টিপাইমুখসহ অন্যান্য বাঁধ হবে, তখন কি হাসিনা খালেদা এক সুরে বলতে পারবেন, চীন যদি ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দেয় তাহলে আমরা তা সমর্থন করব? বলতে পারলে মনে করা যাবে জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ তখন জিতবে, তার আগে নয়।
বেগম জিয়া ফিরে আসবেন। মজাটা তখনই হবে। দেশে ফিরলেই তাঁর এ্যাসিড টেস্ট। আমাদের মজা। পুকুরে ঢিল ছোড়ে দুষ্টু বালকরা, মারা পড়ে ব্যাঙ-রা। জামায়াতসহ ধর্ম ব্যবসায়ী দলগুলো এখন হতবাক। বেগম জিয়া ফিরলে তাদের একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে তাঁকে। যুদ্ধাপরাধকে, জামায়াতকে সমর্থন করা মানে পাকিস্তানবাদ সমর্থন করা। সন্ত্রাস ও উগ্র জঙ্গীবাদকে সমর্থন করা। এখন যুদ্ধাপরাধের বিচার সমর্থন করতে হবে, জামায়াতকে বলতে হবে গুডবাই সম্ভব? তাঁর দলের নেতাকর্মীরা এখন আর নতজানু পররাষ্ট্র নীতি, দেশ বিক্রি করে দেয়া, দেশ বাঁচাও স্লোগান দিতে পারবে না। বিএনপির নতুন স্লোগান তা হলে কি হবে?
সবশেষে বলি, যদি আমরা ভাবি ভারতে খালি খালি বেগম জিয়াকে এত খাতির যত্ন করা হয়েছে তা হলে ভুল হবে। সামনে নির্বাচন। ক্ষমতায় যেতে হলে নির্বাচনে যেতে হবে। শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কয়েকটি বিকল্প পন্থা দিয়েছেন। খালেদা সেগুলো গ্রহণ করবেন, না তত্ত্বাবধায়ক গ্রহণ করবেন? এখন বিশ্বে পাকিস্তান শুধু তত্ত্বাবধায়ক গ্রহণে রাজি। তফসিল ঘোষণার পর খালেদা কি বলেন তাতে দেখা যাবে আসলে ভারত কেন তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আপাতত বাংলাদেশে আর কেউ ভারতবিরোধী নয় নয়া দিল্লীর এটিই জয়।
আমরা, দুর্জনরা কিন্তু প্রায়ই প্রশ্ন করব, শেখ হাসিনা নাকি দেশ বিক্রি করেছিলেন, তা হলে খালেদা কি বিক্রি করলেন? তার কথামতো তো ফেনী থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম হিন্দুস্থান হয়ে গিয়েছিল। তাহলে কি হিন্দুস্থানই আবার হিন্দুস্থানকে বিক্রি করল? বেচা দেশ এখন শুধু জাল দলিল করে ডবল বিক্রি নয়, দলিলটাও হিন্দুদের হাতে দিয়ে এলেন?
ভাই, বাংলাদেশ থেকে ‘বিস্ময়’ শব্দটি বিলুপ্ত হলো।
২৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:৩৬
সামদ বলেছেন: বিরোধী খোলস পাল্টে ‘ভারতপ্রেমী’ বিএনপি
ভোরের কাগজ : ০৪/১১/২০১২
খোন্দকার কাওছার হোসেন : জন্ম থেকেই ‘ভারতবিরোধী রাজনৈতিক দল’ হিসেবে পরিচিত বিএনপি খোলস পাল্টে হঠাৎ ‘ভারতপ্রেমী’ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দলটির নেতারা ভারত বন্দনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এমন গুঞ্জন সর্বত্র। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্ব কমিয়ে আনতে ভারত বন্দনা শুরু করেছে দলটি। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উড়ছে জল্পনা-কল্পনার নানা ফানুস।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তাদের এ ভারতপ্রীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশে সংসদ নির্বাচনের এক বছর আগে ৭ দিনের ভারত সফরে গিয়ে খালেদা জিয়া অতীত দূরে রেখে ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নতুনভাবে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। এরপর থেকেই দলের নেতাদের মুখে ভারত বন্দনা শুরু হয়।
খালেদা জিয়া তার স্বভাবসুলভ চিরাচরিত নিয়মে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেনÑ ফেনী পর্যন্ত ভারতকে দিয়ে দেয়ার, ভারতের কাছে আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে দিচ্ছেÑ এমন অভিযোগ তার প্রতি মুহূর্তের।
সেই তিনি হঠাৎ ভারতের করুণাপ্রার্থী হলেন। ভারতের চিরদিনের প্রার্থিত বাংলাদেশের মাটি ভারতের কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে দেবেন নাÑ এমন জোরালো প্রতিশ্রুতি দিলেন। এসব ইস্যু আলোচনার বিষয়বস্তু তো হবেই। এ মন্তব্য রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিএনপি ভারতের বিরোধিতা করে আসছে। ভারতবিরোধী দল হিসেবে তাদের পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। কিন্ত হঠাৎ করে তাদের ভারতমুখী হওয়ার কারণ কীÑ তা খুঁজছেন রাজনীতি বোদ্ধারা।
রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন নির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। এ ইস্যুতে দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে না পেরে বিএনপি এখন বিদেশীদের দিয়ে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।
কারো মতে, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ভারত দখল করে নেবে’ বলে এতোদিন যে জুজুর ভয় দেখানো হতো, আওয়ামী লীগ দুবার ক্ষমতায় আসার পরও যখন দেশ এখনো বহাল রয়েছে, তখন আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভারতবিরোধী সে থেরাপি আর কাজ করবে না বুঝতে পেরেই বিএনপি নতুন এ পথে হাঁটছে।
আবার কেউ বলছেন ভিন্ন কথা। বিশ্বায়নের এ যুগে যেখানে অবাধ তথ্যপ্রবাহ বিরাজমান সেখানে সারা পৃথিবীতে কী হচ্ছে এক নিমিষেই জানা যাচ্ছে। সে কারণে তরুণ প্রজন্ম এখন আর ভারতবিরোধী নয়। তারা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতে চায়।
এসব বিশ্লেষণ করে বিএনপির ভারতবিরোধী ভোটার দিনদিন কমছে। ভারতের বিরোধিতা করে আর ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না এ পর্যবেক্ষণ থেকে বিএনপি দিন দিন ভারতবিরোধী মনোভাব থেকে দূরে সরে আসছে। সর্বশেষ খালেদা জিয়ার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে তার যবনিকাপাত ঘটানো হলো।
খালেদা জিয়া যে ভারতবিরোধী প্রপাগান্ডা রাজনীতির মাঠে বলে বেড়ান, সেটাই তো রাজনীতিতে তার শক্তিশালী পুঁজি। সেই পুঁজি কি হারাবেন তিনি? রাজনীতির মাঠ থেকে তাহলে তো তাকে ছিটকে পড়তে হবে। এমন হিসেব-নিকেশও রয়েছে বিএনপির মধ্যে। তারপরও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তাই কৌশলগত কারণে নির্বাচনী
আশীর্বাদ নিতে তিনি ভারত সফর করেছেন।
এ অবস্থায় কেউ কেউ মনে করতে চেষ্টা করছেন ২০০৬ সালের কথা। তখনকার জোট সরকারের শেষ দিকে বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। সে প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার সেই সফর ছিল বিশেষভাবে গুরুত্ববহ। আজকের প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার ভারত সফরকে তাই অনেকে সেই কারণে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। সফরকে দেখছেন ইতিবাচকভাবে হিসেবে।
জানা যায়, খালেদা জিয়ার ভারত সফরে সব কিছুই হয়েছে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। এ সফরে সে দেশের সরকারের আন্তরিক প্রটোকলও পেয়েছেন তিনি। আলোচনায় তার অবস্থান ছিল কূটনৈতিক। তিনি ভারতের বড় দাবি মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এতে ভারতের কয়েক যুগের চিন্তার অবসান হতে পারে। এ কারণে তার জন্য যে কোনো সহানুভূতি দেখাতে পারে ভারত।
ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি অর্থমন্ত্রী হিসেবে এ বছর বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছিলেন কোনো বিশেষ দলের ওপর নির্ভর করতে চায় না তার দেশ। এজন্য ভারত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। খালেদা জিয়ার সফরের মধ্য দিয়ে এর প্রকাশ ঘটেছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ভারত সফরে সীমান্ত সমস্যা, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ, ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও পূর্বমুখী নীতি প্রসঙ্গে ভারতের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আদায়ের প্রচেষ্টা চালান খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে আগামীতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যই ভারতের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন তিনি।
বিএনপির ভারত বন্দনা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী রাজনীতি। এ অবস্থান বাদ দিলে তাদের ভোটবাক্স শূন্য হয়ে যাবে। বিদেশীদের মন জয় করে কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশের মানুষের মন জয় করতে হবে। কারণ তারাই ভোট দেবে। এ উপদেশও দেন তিনি।
নয়াদিল্লি সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। দৃঢতার সঙ্গে একথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো কিভাবে শক্তিশালী করা যায় তা নিয়ে আমি নয়াদিল্লির সঙ্গে খোলামেলাভাবে কথা বলেছি। ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি কি ভারতের সঙ্গে তাদের অতীত নীতি বদলাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সরাসরি তা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমরা যা কিছু করবো তা সবই আলোচনার মাধ্যমে হবে।
সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন, বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ, বিজেপি সভাপতি নীতিন গড়কারী ও লালকৃষ্ণ আদভানির সঙ্গে বৈঠক করলেও কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর সাক্ষাৎ না হওয়ায় এ সফরে কিছুটা হলেও ঘাটতি রয়ে গেছে বলে তারা মনে করছেন। এ নিয়ে আপসোসও রয়েছে তাদের। বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি, তা বিএনপি নেতৃবৃন্দের কথায় প্রকাশ পেয়েছে।
অন্যদিকে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকে ভালো চোখে দেখেনি দিল্লি এমন খবরও রটেছে সেখানকার রাজনৈতিক পরিম-লে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি সব সময়ই ভারতসহ অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। ভারতের গণমানুষের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিভেদ নেই। খালেদা জিয়ার এ সফর বাংলাদেশের জন্য সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে আনবে। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ভারত সুসম্পর্ক চায় বলেই খালেদা জিয়াকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
মওদুদ আরো বলেন, ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেস দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জনগণের ওপরে আস্থা না রেখে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ওপরে আস্থা রেখে আসছিল। খালেদা জিয়ার এ সফরের সাফল্যে প্রমাণিত হলো, ভারত বাংলাদেশের প্রতি তার পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করেছে।
ভারতের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক রক্ষার পাশাপাশি দেশের স্বার্থ বজায় রেখেই কাজ করবে বিএনপি।
ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন, সমুদ্রসীমা ও স্থলসীমা নির্ণয় এবং সীমান্ত হত্যাসহ বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয়ের উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব দিয়েই এ সমস্ত বিষয়ে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ সফর নিয়ে অবশ্য সরকারি দল আওয়ামী লীগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গতকাল শনিবার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সেখানে কী আলোচনা হয়েছে সব আমরা জানি। সময়মতো সংবাদ সম্মেলন করে তা জানানো হবে। এর আগে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদও কড়া সমালোচনা করেছিলেন।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন এ মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বন্ধু বাছাই করা গেলেও প্রতিবেশী বাছাইয়ের কোনো সুযোগ নেই। আর প্রকৃত উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কের কোনো বিকল্প নেই।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে সব দলের আন্তরিকতা নিঃসন্দেহে সুফল বয়ে আনবে। দেশের স্বার্থ চিন্তা করে প্রতিবেশীর সঙ্গে যদি রাজনৈতিক দলগুলো অবস্থান নিতে পারে তাতে লাভের পাল্লাই ভারী হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:০১
চলতি নিয়ম বলেছেন: শেষ পর্যন্ত তাহারাও দাদাদের ধুতি ধরতে গেলো, এখন কি হপে? এ মা জাত মান আর কিছুই রইলো না যে।