নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউঃ লাল নীল দীপাবলি এবং হুমায়ুন আজাদের সংকীর্ণতা

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪০



হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলির নাম অনেক শুনেছি। কেন যেন পড়া হয়ে উঠেনি। আজ সকালে পড়া শুরু করলাম। অনন্য সাধারণ!! মনে হল একটা চমৎকার সাজানো ফুলের বাগানে ঢুকেছি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের মত একটা তাত্ত্বিক বিষয়, এত পরিপাটি করে, অদ্ভুদ সুষমা দিয়ে লিখেছেন। বইয়ের প্রতিটা অধ্যায় যেন এক একটা ফুল গাছ। লাইনগুলো ডাল। আর শব্দগুলো এক-একটা ফুল আর মন ভোলানো সবুজ পাতা। এক বেলাতেই পড়ে ফেললাম পুরো বইটা [কয়েক বছর পর এমন হল]
তবে খুবই আশাহতে হয়ে লক্ষ করলাম বাগানে একটি বড় গাছ নেই! অনুপস্থিত দুই-একটি সুগন্ধ ছড়ানো ফুল গাছ। আবার আকাশ ছোঁয়া ডালপালা ছড়ানো বট গাছ, এ বাগানে বনসাই হয়ে গেছ!!
হুমায়ুন আজাদ এখানেও তার সীমাবদ্ধতা, তার সংকীর্ণতা অতিক্রম করতে পারেন নি। এই বইয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিগন তো বটেই, হারু ঠাকুর, ভবানী, কেস্টা মুচির মত সস্তা কবিয়ালদের কথাও বলেছেন। অথচ অবলীলায় এড়িয়ে গেছেন পর্বত সমান লালনকে। রবীন্দ্রনাথসহ লালন পরবর্তী প্রায় সব সাহিত্যিক লালনের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। এমনকি মার্কিন মুলুকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি অ্যালেন গিন্সবার্গও লালনের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। সেই লালন কেন নেই? [আমার অনুমান] কারন লালন ছিলেন মুসলিম। লালনকে পাশে রেখে, [একটু পর পর অতি ভক্তি দেখিয়ে] রবীন্দ্রনাথকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বলাটা হয়তো কঠিন হয়ে যেত তাই।
আলাওলকে মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি বলতেও ড. আজাদের বেশ কষ্ট হয়েছে। তাই তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বলেছেন।
তিনি অনুবাদ নিয়ে বলতে গিয়ে আরও একটি নির্জলা মিত্যা বলেছেন। ৬৩ পৃষ্ঠার মাঝামাঝিতে, “বাংলায় কোরান অনুবাদ করতে গিয়েও কম বাধা আসে নি”। কথাটা চরম অসত্য। প্রথম কুরআন বাংলায় অনুবাদ করেন গিরিশ চন্দ্র সেন ১৮৮১ সালে। তিনি ছিলেন একজন অমুসলিম। এরও আগে চতুর্দশ শতকের সিলেটে মুসলিমরা নাগরী নামে একটা নতুন লিপিরই প্রচলন করে স্বল্প শিক্ষিত মানুষের কাছে কুরআন সহজে প্রচারের জন্য।
৪৮ পৃষ্ঠার দিকে তিনি বৈষ্ণব সাহিত্য নিয়ে বলেছেন, “ এ-সময়ে বিশেষ কোন ধর্মীয় আবেগে রচিত হয় নি বৈষ্ণব পদাবলী”। এটাও একটা অসত্য বচন। বৈষ্ণব পদাবলীযে বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান বই। বৈষ্ণব ধর্ম জনপ্রিয় হয় বৈষ্ণব সাহিত্যর জন্য। বাংলা পিডিয়াতে বৈষ্ণব সাহিত্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, “বৈষ্ণব সাহিত্য, বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগে রচিত একটি কাব্যধারা”।
বইয়ের শেষের দিকে বিশ শতকের কবিদের নিয়ে বলার সময় ড. আজাদ সুগন্ধ ছড়ানো একটি অনিন্দ্য সুন্দর ফুল গাছ পা দিয়ে মাড়িয়ে গেছন। তিনি কুমুদুরঞ্জন মল্লিক, যতীন্দ্রমোহন বাগচীর মত অখ্যাত কবিদের কথা বলেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ দও, জসীমউদদীন, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, অমিয় চক্রবর্তীদের কথাও বলেছেন। অথচ অবলীলায় এড়িয়ে গেছেন ফররুখ আহমদের মত শক্তিমান কবিকে। যিনি বাংলা সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ রুপক কবিতা রচয়িতা। নজরুলের পরে একমাত্র ফররুখই অতি পান্ডিত্যের সাথে কবিতায় প্রচুর আরবি, ফার্সি, উর্দু শব্দ ব্যবহার করেছেন। ফররুখ আহমদ মুসলিম রেনেসাঁর কবি। সম্ভবত এই কারনেই ড. আজাদ তার কথা বলেননি। আর তাই তার এই বইয়ে বাংলা রুপক কবিতা নিয়ে কোন আলোচনা নেই। লাল নীল দীপাবলিতে একটি মিষ্টি আলো ছড়ানো বাংলা রুপক কবিতা দীপটি নেই। বইটা থেকে গেছে অসম্পূর্ণ......।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২০

সুমন কর বলেছেন: বইটি পড়া হয়নি, তাই এ বিষয়ে বলতে পারলাম না। আপনার কথাগুলো পড়ে গেলাম। ধন্যবাদ।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫১

যাযাবর চিল বলেছেন: পড়তে পারেন। অসাধারন একটা বই। তবে পড়ে পারলে আবার রিভিউ টা দেখবেন। ।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৬

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

লাল নীল দিপাবলী তবুও একটি অন্যতম সেরা বাংলা সাহিত্য পরিচিতি বই। লেখকের নিজস্ব ভঙ্গীমায় এমন সহজ করে আর কেউ সাহিত্য ইতিহাস তুলে ধরতে পারে নি। তবে আপনি যে বিষয় গুলো তুলে এনেছেন তা শতভাগ সত্য! সাহিত্য ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে গিয়েও তিনি নিজ মতাদর্শ ভুলে গিয়ে নিরপেক্ষতা রেখে ইতিহাস তুলে আনেন নি কিন্তু তার মত করে আর কেউ এতো সহজ করে সাহিত্যকে উপস্থাপন করতে পারেন নি।

লেখকের সীমাবদ্ধতাকে বিশ্লেষণ করা তাকে ছোট করা নয় বরং তার মহৎকর্ম তুলে ধরাই সমালোচকের কাজ। আর আপনি সে দ্বায়িত্ব সুনিপুণ ভাবেই করেছেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়লে মনে এক অন্য দোলা লাগে।

কারন-

সখি হামারি এ দুখের নাহি ওর,
ভরা বাদর- মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর। - বিদ্যাপতি


রূপলাগি মোর আখি ঝুরে, গুনে মন ভোর- জ্ঞান দাস!
সবার উপর মানব সত্য, তাহার উপর নাই- চন্ডীদাস
আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে- ভারত চন্দ্ররায়গুনাকর।


চর্যাগীতি কথা নাই বলি আর। মধ্যযুগ,, আধুনিক যুগ সে যেন এক বিশাল বৃক্ষ। ডালে ডালে কবিতা ছত্র!



খুব ভাল পোষ্ট। অনেক দিনপর কিছু নিয়ে মন খুলে লেখতে ইচ্ছে হল! শুভকামনা!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৫০

যাযাবর চিল বলেছেন: কোন সন্দেহের অবকাশ নেই, এই ধরণের বই আর নেই।

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৩০

শূণ্য পুরাণ বলেছেন: বইটি সত্যি অসাধারণ,তবে অাপনি যেসব বিষয় তুলে ধরলছেন তা অাগে চোখে পড়ে নি,এটাই তো নিরপেক্ষ সমালোচকের কাজ যা ষা এসেছে যা অাসেনি সব তুলে ধরা,ধন্যবাদ,অারে বিস্তারিত লিখতে পসরতেন।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৪

যাযাবর চিল বলেছেন: ভাইয়া প্রথমেই কিন্তু আমি এই বই সম্পর্কে লিখেছি। এই কয়েকটা পয়েন্ট ছাড়া, বইটা একটা মাস্টার পিস।

৪| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮

আরজু পনি বলেছেন: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচির সুবাদে স্কুলের শেষ সময়কালে পড়ার সুযোগ হয়েছিল।
হুমায়ুন আজাদ স্যারকে তখন থেকে চিনেছি।
তবে সুযোগ পেলে বইটা আবার পড়বো।
ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩

ইছামতির তী্রে বলেছেন: বইটি সত্যি অসাধারণ, তবে অাপনি যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন তা পুরোপুরি সত্য। আমি নিজেও এসব ব্যাপার খেয়াল করেছিলাম এবং বাংলায় পড়া একজনের সাথে শেয়ারও করেছিলাম।

লেখক সাহেব বেশীরভাগ সময়েই মুসলিম লেখকগণকে এড়িয়ে গেছেন। মধ্যযুগে অনেক প্রথিতযশা মুসলিম সাহিত্যিক ছিলেন; কিন্তু উনাদের নাম প্রায় বলাই হয়নি। এমনকি কাজী নজরুল ই্সলামের নামও এক বা দু'লাইনে শেষ করেছেন।

যাইহোক, এতে অবশ্য ঐ সমস্ত লেখকগণের কিছু যাবে-আসবে না। বরং এতে এই বইয়ের লেখকের মানসিক দৈনতা প্রকাশ পেয়েছে।

আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি বিষয় শেয়ার করার জন্য।

৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯

অন্তু নীল বলেছেন:
বইটি পড়েছি কয়েক বছর আগে।
আসাধারণ বই। তবে লালনের বিষয়টা আর ফররুখ আহমেদের বিষয়টা সে ভাবে খেয়াল করিনি।

যাই হোক। সীমাবদ্ধতা মানুষেরই থাকে। সেগুলো বাদ দিলে বাংলা সাহিত্যে এমন বই আর নেই। এত সাবলীল ভাবে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বর্ণনা আর কোনো বইয়ে পাওয়া যায় না।

৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হুমায়ূন আজাদ পণ্ডিত মানুষ হলেও তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক বলয়ে বন্দী থাকার কারণে একদেশদর্শী ছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.