নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সামছুল হুদা

আমি একজন ছাত্র

সামছুল হুদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বহুরূপী ভালবাসা

১২ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:০৫

লিখেছেন : সামছুল হুদা



না হারালে মানুষ বুঝতে পারে না হারানোর কষ্টটা কি ? আমি ও হারিয়ে বুঝতে পেরেছি। এতো ভালোবাসার পরও আমার জীবন থেকে ও হারিয়ে যাবে ,আমি তা কখনো ভাবতে পারিনি। কি কারণে আমি তোমাকে হারালাম আজও তা জানা হল না। আজও তোমাকে আমি ভালবাসি, তোমার কথা ভাবি, তোমার ছবি মনে আঁকি। তোমাকে স্বপ্ন দেখে আচমকা ঘুম থেকে জাগি। বলছিলাম আলো নামের মিষ্টি মেয়েটির কথা।







তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তাম। এক সময় ক্লাশ সেভেন থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠি । নতুন বছরের ক্লাশ শুরু হল। আমি ইংরেজীতে কাঁচা, আমার ইংরেজী প্রাইভেট পড়া খুব দরকার । এ নিয়ে আমাদের ইংরেজী শিক্ষকের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, ‌‌‌‌‍‌'তোমরা পড়তে হলে আমার বাড়িতে এসে পড়তে হবে।' তখন আমরা সবাই রাজি হলেও আলো ও তার বান্ধবী রাজি হল না । কারণ ওদের বাড়ি থেকে স্যারের বাড়ি অনেক দূরে । তখন স্যার বললেন তোমাদের ছেলেদের মধ্যে সাইকেল আছে কার কার? তখন আমি ও আরেকজন হাত উঠিয়ে বললাম ‘আমার আছে স্যার’। স্যার বললেন তাহলে তুমি আলোকে আর সানি রুজিনাকে সাইকেলে করে আমার বাসায় নিয়ে আসবে প্রতিদিন।







স্যারের কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল আমার চেয়ে সুখী মানুষ বোধহয় পৃথিবীতে আর কেউ নাই । ভালোবাসার মানুষটি ভালোবাসুক আর নাই বাসুক তাকে সাইকেলে নিয়ে ঘুরার মজাটাই আলাদা। অজানা এক পুলকে নেচে উঠল মন। দেহের রক্ত কণিকাগুলোতে আনন্দের ঢেউ খেলে গেল। তখন আমি যেন পাখি হয়ে নীল আকাশে উড়ছি।







স্যারের রুম থেকে বের হওয়ার পর আলো আমাকে ডাক দিয়ে বলে তোর নাম্বারটা দে, আমি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তোকে কল দিলে তুই আমার বাড়ির সামনে চলে আসিস । আলো আমাকে তুই করে বলত।



একদিন আলোকে নিয়ে স্যারের বাসায় যাচ্ছি হঠাৎ সাইকেলের চেইন ছিঁড়ে যায়। তখন কি আর করা আমরা দু’জন হাঁটতে শুরু করলাম ।







আলো আমাকে জিজ্ঞেস করে, তোর কেমন মেয়ে পছন্দ?



আমি বলি তোর মত মেয়ে আমার পছন্দ ।







আমার মত মেয়ে পাব কোথায়! আমি ছাড়া আমার মত আর কেউ নাই । তুই আমার সাথে প্রেম করতে পারিস। করবি ?







আমি বললাম মজা করিস না, তুই তো প্রেম করিস তাইনা?







এভাবে ধীরে ধীরে আলোর সাথে আমার সম্পর্ক গভীর হতে লাগল । আমাদের সম্পর্ক এমন পর্যায়ে চলে গেল যে, আমি একদিন স্কুলে না এলে আলোও আসত না। আলো আগে স্কুলে আসলে ও আমার জন্য রাস্তার ধারে কদম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকত। আলোর প্রিয় ফুল হল গোলাপ। কিন্তু কতদিন যে ও আমার মাথায় কদম ফুল গুঁজে দিয়েছে তার হিসেব নেই।



এভাবে আলোর সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় ৩ বছর চলল । এক সময় আমি ঢাকায় চলে আসি, আলোও গ্রাম থেকে সদরে চলে যায়। আমি প্রতি সপ্তাহে সদরে যেতাম ওর সাথে দেখা করতে । আমি ওর সামনে গেলে ও যখন আমাকে জড়িয়ে ধরত তখন আমার মনে হত এত দূর থেকে আমার আসাটা বুঝি সার্থক হয়েছে । ওর সাথে এভাবে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে দেখা করতে সদরে যেতাম ।







আগে আমি কল না দিলেও আলো কল দিত । একবারের জায়গায় দশবার দিত । কিন্তু দিনদিন ও কেমন পরিবর্তন হয়ে গেলো ।



এরপর একদিন ঢাকা থেকে আমি বাড়িতে যাই এবং আলোকে কল দেই । বলি আলো, তোর সাথে আমি দেখা করবো। সে আমার সাথে দেখা করতে রাজি হল।



আলোর সাথে দেখা করতে গেলাম । সেখানে যা ঘটল তা আমার জীবনে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। আলো আমার সামনে দাড়িয়ে রকির সুনাম করতে লাগল । ও আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিল না । হঠাৎ করে আলো বলে, রকি আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে ,দেরি হলে ও রাগ করবে । তখন আমার চোখ দিয়ে নীবরে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল । একবারও সে আমার দিকে ফিরে তাকালো না।







পরে ওর এক বান্ধবীর সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম। সে বান্ধবী আমাকে বলল, 'আমরা সবাই জানি যে আলো আপনার সাথে প্রেম করে । আপনাকে ছেড়ে অন্য ছেলের সাথে প্রেম করার কারণে আমরা ওর সাথে কথা বলি না । আমার ভাবতে অবাক লাগে এতো বছরের সম্পর্ক ও কি ভাবে ভুলে গেল । আমার মনে হয় ও আপনার সাথে সত্যিকারের প্রেম করেনি । আপনার সাথে ও প্রতারণা করেছে ।'







ওইদিনই আমি ঢাকা চলে আসি । ঢাকা এসে সিদ্ধান্ত নিলাম আলোকে আর কখনও কল দিবনা, ওর সামনে যাবনা। আলো যদি আমাকে ভুলে যেতে পারে আমি কেন পারবো না। কিন্তু আমি তা পারিনি । আমি ঠিকই আলোকে কল দিলাম।







আলো আমাকে ভুলে গেলও আমি আলোকে আজও ভুলতে পারিনি । কারণ ওকে ভালবেসেছি ভুলার জন্য নয় ওকে কাছে পাওয়ার জন্য । আজও আলোকে ভালোবাসি – ভাসবো । কখনও ভুলতে পারবো না । এ মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথের একটি গান আমার মনে পড়ে গেল-‌'নয়ন সমুখে তুমি নাই, নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই।'



চোখ মেলে আমি ওকে দেখতে না ফেলেও ও যে আমার পুরো অস্তিত্বই দখল করে আছে।







ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাই আমার কাছে ছিল অনেক মজার । ওদের বাড়ির মুরগি ও ফুল চুরির ঘটনা আজও মনে পরে । ওর সাথে রাতে দেখা করতে গিয়ে ওর মায়ের বকুনি আজও ভুলিনি।







আলোকে না হারালে কখনও বুঝতে পারতাম না ভালবাসায় এতো কষ্ট । অনেকেরই ধারণা ভালবাসলে মানুষ সুখী হয় । আসলে এই ধারণাটা ভুল । আমি কোন কবি বা সাহিত্যিক এর মত ব্যাখ্যা দিতে পারব না । শুধু সোজাসাপটা এতটুকু বলতে পারবো আমার কাছে ভালোবাসা মানে সুখ – দুঃখ দু'টাই। যে ভালোবাসা পায় সে হয় সুখী, আর যে হারায় সে দুঃখী। আমার কাছে ভালবাসাটা হল বহুরূপী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.