![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রকৃত ইতিহাস সন্ধানী।
আমাদের দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বুদ্ধিজীবীরা সর্বত্র সবসময়ই বলে আসছেন, প্রকৃত ইসলাম সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষকতা করে না। সমস্যাটি হল তারা যে কথাই বলুন না কেন, যে বিষয়েই হোক না কেন তা মানুষ গ্রহন করে না, কারণ তারা কাজ করেন ঠিক উল্টো।
বাংলায় ১২০৪ থেকে ১৭৫৭ পর্যন্ত মুসলিম শাসন স্থায়ী ছিল। এসময়ে সনাতন ধর্মের অসংখ্য অনুসারী ইসলাম গ্রহন করেছে। কোথাও এমন কোন প্রমান নেই যে মুসলিম শাসকরা জোর করে কাউকে ধর্মান্তরিত করেছেন। অথচ এমন প্রমান আছে যদি কোন অঞ্চলের কোন সরকারী কর্মকর্তা অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের প্রতি অন্যায় করেছেন, তাহলে সেই কর্মকর্তাকে সুলতান কর্ত্রৃক সাজা ভোগ করতে হয়েছে। এমন কোন নজির নেই যে কোথাও মন্দির ধংস করা হয়েছে। বরং উল্টো মন্দিরের জন্য মুসলিম শাসকরা মন্দির, প্যাগোডার জন্য সরকারী জমি বরাদ্দ দিয়েছেন।
সেনরা যখন পালদের হটিয়ে বাংলার গদি দখল করেছিল তখন বাংলায় বৌদ্ধ সঙ্খ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু সেনরা এতই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে যে, অধিকাংশ প্যাগোডা ধংস করেছে। সেখানে মন্দির স্থাপন করেছে। এমনকি কোন কোন প্যাগোডার দেয়ালে ভিক্ষুরা সনাতন (হিন্দু ধর্ম) ধর্মের বিভিন্ন প্রতীক একে রাখতো যাতে বোঝা যায়, যে এটা মন্দির কোন প্যাগোডা নয়। ফলে তারা হয়তো ধংসের হাত থেকে রক্ষা পেত। এগুলো ইতিহাস কোন কেচ্ছা নয়। বাংলা অঞ্চলে একদা একক সঙ্খ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের একদম শ্যুন্যের কোথায় নামিয়ে এনেছে এই সনাতন বা হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেন বংশের শাসকগন।
ইখতিয়ারুদ্দীন বখতিয়ার খিলজি যে বিহার আক্রমন করে সকল বোদ্ধদের হত্যা করে বিপুল জ্ঞানভান্ডার ধংস করে দিয়েছেন বলে যে কেচ্ছা প্রচার করা হয় এর পক্ষে আদৌ কোন সত্যনিষ্ঠ প্রমান নেই। তিনি সেনাঘাটির মত বিহার আক্রমণ করে দেখলেন মাথা মুন্ডানো একদল ভিক্ষুর আবাস কোন সামরিক ঘাটি নয়। তিনি ফিরে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন কিছু ধংস করেন নি। আর হ্যা, এভাবে আক্রমণ করাটা ছিল মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য কোন ধর্মের নয়। প্রমান চাইলে ভারতীয় রাজাদের গজনী আক্রমনের ইতিহাস পড়ে দেখতে পারেন।
আওরঙ্গজেবের আমলে কয়েকটি মন্দির ধংস করা হয়েছিল কারণ, ঐসব মন্দিরগুলো বিদ্রোহীদের আখরায় পরিণত হয়েছিল। এক লাইনের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব না হলে আরসি মজুমদারের An Advanced History of India পড়ে দেখতে পারেন।
মুক্তমত ও ইসলামঃ
সম্প্রতি মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায় ও ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান আততায়ীদের হাতে নিহত হয়েছেন। একটি হামলায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট , অভিজিৎ রায়ের উপর হামলায় এখণো কোন অগ্রগতি না থাকায় আসলে কি ঘটেছে বলা কঠিন। অনুমান করে অনেক কিছুই বলা সম্ভব যার সবটুকু সবার ভাল লাগবে না। তবে জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত হবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। তারা যাই নিয়ে লেখালেখি করতেন না কেন ইসলাম তাদের হত্যার অনুমোদন দেয় না।
সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশে সকল মুসলমান তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পেলেও তাকে ফাঁসির সাজার অনুমোদন ইসলামে নেই, যা ইরান ঘোষনা করেছিল। তসলিমা নাসরিনের বেলায়্ব একি কথা প্রযোজ্য। অবশ্য তার অশ্লীলতার জন্যই তিনি বেশী সাজা পেয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তার ক্ষেত্রে একজন পুরুষ হলে সম্ভবত তাকেও অভিজিৎ রায়ের মত দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করতে হত।
আল্লাহর নবি মুহাম্মদ সঃ এক কবির ব্যাপারে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছিলেন কিন্তু কার্যকর করেন নি। সে ঘোষনাটা ছিল নিছকই গোত্রতান্ত্রিক আরব জাতির ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টকারী এক নির্লজ্য সাহিত্যিকের প্রতি এক চটোপাঘাত। তবে সেই কবিই আবার যখন মুহাম্মদের সঃ অপূর্ব ক্ষমার দৃষ্টান্তের প্রমান পেলেন তখন ইসলাম গ্রহন করে তিনিই হলেন “শায়েরে রাসুল” বা রাসুলের কবি।
এরকম ভুড়ি ভুড়ি উদাহরন আছে ইসলামে পরমত সহিষ্ণুতার ঘটনার।
এবার আসি চাঁদ তারা প্রসঙ্গেঃ
চাঁদ তারা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রতীক।সেদিক থেকে একজন নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি তরুন হিসেবে আমার কোন কথা নেই। কিন্তু চাঁদ তারা ইসলামি রাষ্ট্রেরও প্রতীক। পাকিস্তানকে আমি ঘৃনা করি বলে পাকিস্তানের ধর্ম ইসলামকেও আমি ঘৃনা করব। এখানে যদি যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্তদের বোঝানো হয় তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিডিনিউজে দেখলাম অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক হিসেবে মুক্তমত প্রবাহের প্রতীক হিসেবে এই মূর্তিটাকে বা হাত দিয়ে চেপে ধরা হয়েছে । সম্ভবত এই বিষয়টি পাকিস্তানের সাথে যায় না। এটাকে ইসলামের প্রতীক হিসেবেই ব্রান্ডিং করা হয়েছে। এখানে চালাকির সাথে একটু ফাক রাখা হয়েছে পুরো কাগজটি বা পেছনের রঙ সবুজ দিয়ে। কারণ পাকিস্তানের পতাকার রঙএ সবুজ আছে।
যদিও খাটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে চাঁদ তারা ইসলামের প্রতীক নয়। ইসলামের এধরণের কোন প্রতীক নেই। কিন্তু এঘটনার হোতারা এটা সম্ভবত জানেন না। জানার কথাও নয়। একজন কামিল পাস মাওলানাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন যে চাঁদ তারা ইসলামের প্রতীক কিনা সে বলবে, হ্যা। প্রমান চান! নিশ্চিত থাকেন দিতে পারবে না। সম্ভবত কোন পাঞ্জেগানা অজিফার উদাহরন দিবে।
কতপয় জঙ্গি দুর্বৃত্ত যেধরণের ব্লগারদের উপর যে ধরনের ন্যাক্কারজনক ও ক্ষমার অযোগ্য হামলা করেছে তা ইসলামের আসল চরিত্রে কালিমা লেপন করতে পারবে না। ইসলামের চরিত্র এতটা ঠুনকো নয় যে আঘাত দিলেই ভেঙ্গে যাবে। আর আশা করি আমাদের ধর্মীয় চেতনাও এতোটা ঠুনকো নয় যে এভাবে প্রতীক নিয়ে আঘাত দিলেও তা কাচের ঘরের মত ভেঙ্গে যাবে।
সমাজে সবসময়ই একদল লোক থাকেন যারা সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সহ্য করতে পারেন না। তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। তাইতো সবসময় ইস্যু খুজতে থাকেন। আপনি একজন মুক্তমনা ব্লগার, আপনি যদি কাউকে ধর্ষণ করেন আপনার অপরাধে নিশ্চয়ি মুক্তমনা প্লাটফর্ম নিয়ে গালিগালাজ করা বোকামি হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল একশ্রেনীর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী প্রগতিশীলতার নামে অন্যান্য লোকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে লেখার অযোগ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, কোন তথাকথিত মুসলিমের অপরাধকে পুরো একটি গোষ্ঠীর অপরাধ বলে চালিয়ে দেয়ার গোয়েবলসীয় প্রচারণা চালিয়ে যান।
তবুও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্তমতের সৌন্দর্যের উপর আস্থা হারানো যাবে না। মুক্তমতের প্রচলন থাকলেই সমাজে শান্তি সম্ভব। যারা অন্যের অনুভূতিতে আঘাত দেয় তারা মুক্তমতকে ব্যবহার করে, তারা আসলে চরম্পন্থীই রয়ে গেছে। একটুও উন্নতি হয় নি। কষ্ট হয় এদের অবস্থা দেখে।
©somewhere in net ltd.