![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রকৃত ইতিহাস সন্ধানী।
ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার, রকেট বানিয়ে নিজের প্রকৌশল যোগ্যতা প্রমাণ করে হয়ে গেলেন ভারতের পারমানবিক কর্মসূচির ফিচার হিরো। রামেস্বরেমের মৎস্যজীবী পরিবারের নিম্ন-মধ্যবিত্ত্ব তরুনের পুজি ছিল তাঁর ভাইয়ের ভালবাসা আর নিজের প্রতি অসম্ভব আস্থা আর সততার মানসিকতা। স্কুলে মধ্যম মানের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে কালাম ছিলেন তাঁর শিক্ষকদের নিকট মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্র। ম্যাট্টিকুলেশন শেষ করে সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে ফিজিক্সে গ্রাজুয়েট শেষ করে মাদ্রাজে আসেন এবং ১৯৫৫ সালে ‘মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অভ টেকনোলোজি’তে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন। অল্পের জন্য যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্নীল সুযোগ মিস করেন তিনি।
তাঁর স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও ভারতের ১২০ কোটি মানুষের স্বপ্নের ভার তিনি নিয়েছিলেন অত্যন্ত আনন্দের সাথে আর সে ভার বয়ে বেড়িয়েছেন জীবনের শেষ ক্ষণ পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সাথে। তাঁর শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ৪ দশক কেটেছে প্রধানত Defence Research and Development
Organisation (DRDO) এবং Indian Space Research Organisation (ISRO) এর বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে। এসময়ে কালাম ভারতের বেসামরিক মহাকাশ কর্মসূচী ও সামরিক মিসাইল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামে অন্তরঙ্গ ভাবে জড়িত ছিলেন। ব্যালস্টিক মিসাইল উন্নয়ন ও লঞ্চ ভেহিকেল প্রযুক্তির জন্য তিনি শীগ্রই ভারতে ‘মিসাইল ম্যান’ হিসেবে পরিচিতি পান। তিনি ১৯৯৮ সালে ভারতের পোখরান-২ পারমানবিক বোমার পরীক্ষায় সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। কালাম ভারতের Integrated Guided Missile Development Programme (IGMDP) এর অধীনে অনেক মিসাইল তৈরীর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন। এর মাঝে অগ্নি, পৃথ্বী উল্লেখযোগ্য।
কালাম ১৯৯২ সালের জুন থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা গবেষনা ও উন্নয়ন সংগঠনের সচিবের হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পোখরান-২ পারমানবিক পরীক্ষা এই সময়ে সংঘটিত হয় এবং এক্ষেত্রে তিনি রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। পারমানবিক পরীক্ষার পর্যায়ে কালাম এর ‘প্রধান সমন্বয়কে’র দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৮ সালে কালাম ও কার্ডিওলজিস্ট সোমা রাজু যৌথ ভাবে বক্ষব্যাধির জন্য কম মূল্যের মেডিসিন আবিষ্কার করেন,যা দ্বারা প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র রোগীদের চাহিদা মেটানো হচ্চে। ২০১২ সালে এটির নাম রাখা হয় ‘কালাম-রাজু ট্যাবলেট’।
কালাম ২০০২ সালে ভারতের প্রধান দুই দল (ক্ষমতাসীন বিজেপি ও বিরোধী জাতীয় কংগ্রেস) এর সমর্থনে ভারতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে আসীন ছিলেন। কালাম ছিলেন ভারতের ৩য় রাষ্ট্রপতি যিনি ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত হয়েছিন। তবে তিনি ভারতরত্ন উপাধি লাভ করেছিলেন তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পূর্বে। তাঁর প্রেসিডেন্সির সময়ে তিনি আত্যন্ত আবেগময়ভাবে ভারতের জনগনের নিকট ‘জনতার রাষ্ট্রপতি’ নামে পরিচিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দন্ড মওকুফের ক্ষমতা তাঁর হাতে থাকলেও তিনি কোন দন্ড মওকুফ করেন নি, আবার একটি ছাড়া কোন দন্ড মওকুফের আবেদন প্রত্যাখ্যানও করেন নি। যে আবেদনটি তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তা হল ধর্ষক ধনঞ্জয় চ্যাটার্জীর দন্ড মওকুফের আবেদন। ২০০৭ সালে তাঁর প্রথমবারের মেয়াদ শেষে ২য় বার প্রেসিডেন্সির জন্য লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও শিভ সেনা, ইউপিএ সহ বাম দলগুলোর সমর্থনহীনতার কারনে সেই ইচ্ছা ত্যাগ করেন। ২০১২ সালেও বিজেপি, তৃনমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি কালামকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করার ব্যাপারে সমর্থন দিলেও পরবর্তীতে নানা কারনে তা হয়ে ওঠে নি।
প্রেসিডেন্টে হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরে কালাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং প্রফেসর ও ফেলো হিসেবে কাজ করেন, এর মধ্যে আই আই আই টি, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি উল্লেখযোগ্য। ২০১২ সালের মে মাসে কালাম তরুনদের জন্য দূর্নীতিবিরোধী একটি কর্মসূচী হাতে নেন যা what can I give movement নামে পরিচিত ছিল।
গত ২৭ জুলাই কালাম the Indian Institute of Management Shillong এ “Creating a Livable Planet Earth” এর উপর লেকচার দেয়ার জন্য শিলং যান। বিকেল ৬টা ৩৫ এর দিকে, যখন তাঁর লেকচার শুরুর মাত্র পাচ মিনিট অতিক্রান্ত হয়েছে তখন তিনি ডায়াস থেকে পড়ে যান। সঙ্কটজনক অবস্থায় দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নেয়া হলে কিছুক্ষন পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কালাম তাঁর ‘ইন্ডিয়া ২০২০’ বইয়ে ভারতকে ২০২০ সালের মধ্যে একটি নলেজ পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা পেশ করেন। এছাড়াও তাঁর জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ ‘উইংস অভ ফায়ার’ ও ‘ইগনাইটেড মাইন্ড’ বিশ্বের বাজারে বেস্টসেলার।
তাঁর রচিত গ্রন্থসমুহঃ
• India 2020: A Vision for the New Millennium; New York, 1998.
• Wings of Fire: An Autobiography; Universities Press, 1999
• ]Ignited Minds: Unleashing the Power Within India; Viking, 2002
• The Luminous Sparks ; Punya Publishing Pvt Ltd, 2004
• Mission India by; Penguin Books, 2005
• Inspiring Thoughts; Rajpal & Sons, 2007
• Indomitable Spirit; Rajpal and Sons Publishing
• Envisioning an Empowered Nation; Tata McGraw-Hill, New Delhi
• You Are Born To Blossom: Take My Journey Beyond; Ocean Books, 2011
• Turning Points: A journey through challenges; Harper Collins India, 2012.
• Target 3 Billion"; December 2011 | Publisher Penguin Books.
• My Journey: (titled எனது பயணம் - Tamil) Transforming Dreams into Actions; August 2013 by the Rupa Publication.
• A Manifesto for Change: A Sequel to India 2020 ; July 2014 by Harper Collins
• Forge your Future: Candid, Forthright, Inspiring , Rajpal and Sons, 29 October 2014
• Reignited: Scientific Pathways to a Brighter Future ; by Penguin India, 14 May 2015
• Transcendence: My Spiritual Experiences with Pramukh Swamiji
স্বপ্নবাজের অমর উক্তিঃ
কালামের আজীবনের সাধনা যদি হয় ভারতের তারুন্যের জয়গান তাহলে বলতেই হবে তিনি তাঁর কাজ অত্যন্ত সফলতার সাথে সমাপ্ত করেছেন। তিনি সবসময় যে কারো চাইতে তরুনদের সঙ্গ বেশী উপভোগ করতেন। জীবনের শেষ মুহুর্তটিও তিনি কাটয়েছেন তরুনদের সংস্পর্শে। তিনি বিশ্বাস করতেন এই তরুনদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভার আগুনকে উস্কে দিতে পারলে ভারত জ্ঞানের দিক থেকে এক পরাশক্তিতে পরিণত হতে পারবে। একাজ করতে গিয়ে তাকে অসংখ্য বক্তৃতা, সেমিনার ও আলোচনা করতে হয়েছে। এসব আলোচনা ও তাঁর লিখিত বইয়ের কিছু লাইন আজকের তরুনদের মনে সারাক্ষণ অনুপ্রেরনা হয়ে ঘুরে বেড়ায়। যারা কালামের সংস্পর্শে আসতে পারেন নি, যারা তাঁর বক্তৃতা শুনতে পারেন নি তাদের কাছে তাঁর এসব উক্তিগুলোই কালামের স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁর এ অমর উক্তিগুলোর কিছু নিচে দেয়া হলঃ
• মানুষ যা ঘুমিয়ে দেখে তা স্বপ্ন নয়, বরং যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না তাই স্বপ্ন।
• স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে।
• পরম উৎকর্ষ হলো একটি চলৎ প্রক্রিয়া। এটা হঠাৎ করেই আসে না।
• আল্লাহর উপর ভরসা রাখো তিনি তোমাদের ভবিষ্যতের পথ আলোকিত করবেন।
• জীবন হলো এক জটিল খেলা। ব্যক্তিত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে তুমি তাকে জয় করতে পার।
• সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ জটিল হওয়া উচিত।
• যদি আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মে কাছে একটি সমৃদ্ধি ও নিরাপদ ভারত দিয়ে যেতে পারি তা হলে আমরা স্মরণীয় হতে পারবো।
• যাঁরা হৃদয় দিয়ে কাজ করে না তারা যা অর্জন করে তা ফাঁকা, তা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।
• শিক্ষাবিদদের উচিত শিক্ষার্থীদের মাঝে অনুসন্ধানী, সৃষ্টিশীল, উদ্যোগী ও নৈতিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়া, যাতে তারা আদর্শ মডেল হতে পারে।
• আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। যাঁরা স্বপ্ন দেখে ও সেমতো কাজ করে তাদের কাছে সেরাটা ধরা দেয়।
• যদি কোনো দেশ দুর্নীতিমুক্ত হয় ও সুন্দর মনের মানসিকতা গড়ে ওঠে, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করি সেখানকার সামাজিক জীবনে তিন রকম মানুষ থাকবে, যাঁরা পরিবর্তন আনতে পারেন। তারা হলেন পিতা, মাতা ও শিক্ষক।
• তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার আহ্বান হলো ভিন্নভাবে চিন্তা করার সাহস থাকতে হবে, আবিষ্কারের নেশা থাকতে হবে, যেপথে কেউ যায় নি সেপথে চলতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস থাকতে হবে, সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে এবং তারপর সফল হতে হবে। এগুলোই হলো সবচেয়ে মহৎ গুণ। এভাবেই তাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে এটাই আমার বার্তা।
• প্রথম বিজয়ের পর বসে থাকবেন না। কারণ দ্বিতীয়বার যখন আপনি ব্যর্থ হবেন তখন অনেকেই বলবেন প্রথমটিতে শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলেন তিনি।
• সফলতার গল্পে কেবল একটি বার্তা থাকে। কিন্তু ব্যর্থতার গল্পে সফল হওয়ার উপায় থাকে।
• কাউকে হারিয়ে দেয়াটা খুব সহজ, কিন্তু কঠিন হলো কারোর মন জয় করা।
• ছাত্রদের মাঝে অনুসন্ধান, সৃজনশীলতা, উদ্যোক্তা এবং নৈতিক নেতৃত্বের সক্ষমতা তৈরি করা উচিত শিক্ষাবিদদের।
মূল লেখাটি পড়ুন এখানে>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
এ ধরনের ইতিহাসভিত্তিক আরো লেখা পড়তে ঘুরে আসুন @@@ সমীক্ষণ @@@
©somewhere in net ltd.