নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শার্দুল নামাঃ পরিবর্তনের প্রতীক্ষায়

এম ছানাউল্লাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রকৃত ইতিহাস সন্ধানী।

এম ছানাউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলার নারী ইলা মিত্র ও তেভাগা আন্দোলন

০৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪১

প্রখ্যাত নারীনেত্রী ও রাজনীতিক ইলা মিত্র যদিও জীবনের গোড়ার দিকে একজন নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে ভারতবর্ষের নজর কেড়েছিলেন, তথাপি তাঁর ১৯৪৬-৫০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত তেভাগা আন্দোলনে অন্যতম সংগঠক ও নেত্রী হিসেবে ভুমিকা ভারতবর্ষে কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে।

তিনি ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় নাগেন্দ্রনাথ ও মনোরমা সেনের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথম জীবনে একজন কৃতী ক্রীড়াবীদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৩৬ থেকে একটানা ৩ বছর জুনিয়র এথলেটিক্সের বাংলা চ্যাম্পিয়ন ইলা সেন ছিলেন বাঙালী সমাজের নানাবিধ কুসংস্কার দূরীকরনের পথিকৃৎ। তিনি ইউরোপীয় ও অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের ডিঙ্গিয়ে ১০০ মিটার দৌড়ে সর্বভারতীয় চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছিলেন। ১৯৪০ সালে জাপান অলিম্পিকে ভারতীয় দলে নির্বাচিত হয়েছিলেন যা পরবর্তীতে বিশ্বযুদ্ধের কারনে অনুষ্ঠিত হয়নি।

ইলা মিত্র ১৯৪০ সালে বেথুন স্কুল থেকে ম্যাট্ট্রিকুলেশন, ১৯৪২ সালে আই এ, এবং ১৯৪৪ সালে একই কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। চৌদ্দ বছর পর ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ করেন। ছাত্রাবস্থায়ই বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। মন্বন্তরের সময়ে ভুখা মিছিল, খাদ্য আন্দোলন, লঙ্গরখানা পরিচালনা সহ বিভিন্ন মানবিক কাজে জড়িত ছিলেন।

বিবাহসূত্রে ১৯৪৫ সালে তাকে চলে আসতে হয় চাঁপাই নবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরে। সামন্ত পরিবারের রক্ষনশীলতা ভেঙ্গে তিনি যুক্ত হন মেয়েদের গড়া নতুন স্কুলের সঙ্গে, শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তীতে পরিবারের শ্রেনী অবস্থানকে অতিক্রম করে নিজ স্বামী রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন জমিদারী প্রথ উচ্ছেদের স্থানীয় আন্দোলনে। ১৯৪৬ সালের নোয়াখালীর দাঙ্গায় মানবিক কার্যক্রমেও অংশ নেন তিনি।

১৯৪৬-৪৭ সালে ফসলের দুই-তৃতীয়াংশের ওপর কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে বাংলার ১৯ টি জেলায় গড়ে ওঠে তেভাগা আন্দোলন। তেভাগার দাবীতে রাজশাহী জেলার, বিশেষ করে নাচোলের কৃষকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ইলা মিত্র অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। আদীবাসী কৃষকদের মাঝে তাঁর এতই গ্রহনযোগ্যতা ছিল যে, তারা তাকে নিজেদের একজন বলে মনে করতেন। ইলা মিত্র ক্রমশই হয়ে ওঠেন সাঁওতাল ও অন্যান্য কৃষকদের ‘রানীমা’। সাঁওতাল মেয়েদের ভিতরে রাজনৈতিক চেতনার বিস্তার ও তাদেরকে সংগঠনে টনে আনার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন।
তবে নাচোলের মহাকাব্যিক প্রতিরোধ পাকিস্তান সরকারের অব্যাহত নির্যাতনের মুখে সফল হতে পারেনি। কৃষকদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে চারজন পুলিশ নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নাচোলের অধিবাসীদের উপর নির্যাতন শুরু করলে আন্দোলন ভেঙ্গে পড়ে। ইলা মিত্র নিজেসহ মোট ৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং ইলা মিত্রসহ ২৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। তাঁর এই কারাদন্ড পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন মানুষ কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন নি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হলে চিকিৎসার প্রয়োজনে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতা যাবার পর ইলা মিত্র আর পূর্ব বাংলায় ফিরে আসেননি।

ভারতে গিয়ে প্রথম কয়েক বছর তিনি বস্তিতে বসবাস করতে বাধ্য হন। অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করে সেখানেই অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত হন। ১৯৬২-৭৮ সময়ের মধ্যে তিনি পর পর চারবার পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে দুবার তিনি ছিলেন বিধান সভায় কমিউনিস্ট পার্টির ডেপুটি লিডার। ভারতে শিক্ষা আন্দোলন ও নারী আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা পালনকারী ইলা মিত্র ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রাদেশিক পর্যায়ের নেতৃত্বে সমাসীন ছিলেন।

ভারত সরকার তাঁকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামী’ হিসেবে এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার অ্যাথলেটিক্সে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করে। এ ছাড়া হিরোশিমার মেয়ে গ্রন্থানুবাদের জন্য তিনি সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার লাভ করেন। ইলা মিত্রের অসাধারণ সাহসী ও সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার প্রগতিশীল মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন লেখকের লেখায়, কবির কবিতায়, পত্রিকার প্রতিবেদনে ইলা মিত্রের সাহসী ও সংগ্রামী ভূমিকার কথা উপমা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।

১৩ অক্টোবর ২০০২ সালে ইলা মিত্রের কলকাতায় মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্রঃ বাংলাপিডিয়া

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.