নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১১ টি। (৮টি কবিতার বই, ২টি উপন্যাস ও একটি ছোটগল্পের বই।)

সানাউল্লাহ সাগর

সৃজনশীল লেখালেখি, গবেষণা ও সম্পাদনা

সানাউল্লাহ সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অসমাপ্ত গরুর রচনা

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:১৬

সালাউদ্দিনের সাথে আমার পরিচয় ক্লাস টু’তে। পশ্চিম ভূতের দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়। আমরা তাকে সালাউদ্দিন বলতাম না; বলতাম―ছালাকাডা। সে মিটমিট করে হাসতো। রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করতো না। এমনকি কাদের বিশ্বাস স্যারের গড়পড়তা বেত খেয়েও তার কোনো বিকার হতো না। আমরা সরল হাসি মুখে একজন হাসি-কান্নাকে গুরুত্বহীন মনে করা বালককে দেখতাম।
সালাউদ্দিনকে নিয়ে আমরা অনেক পরিকল্পনা করতাম। শৈশবের সেইসব হাস্যকর চিকিৎসায় পাদের লটারীও বাদ যেত না। নিদোষ হয়েও বারবার পাদের লটারী জিতে নিতো সে। বলা ভালো আমাদের কৌশল তাকে জিতিয়ে দিতো। আমরা হাসতাম। টিটকারি করতাম। সালাউদ্দিন নির্বিকার। পড়ালেখা কিংবা অন্যসব খেলার চেয়ে তার আগ্রহ ছিলো কুস্তিতে। রোজ রুটিনের অংশ হিসেবে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে আমরা মারামারি করতাম। সালাউদ্দিনের বিপরীতে আমরা দু’জন। আমি আর চাচাতো ভাই মাসুম। তখনও জিতে যেতো সে। রেফারির ভূমিকায় থাকা অগ্রজ সরোয়ার ভাই আমাদের শান্তনা দিতেন। আমরা মলিন মুখে বাড়ি ফিরতাম। আর পরের দিন জেতার জন্য বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা করতাম।

তারপর বহুদিন―বহুবছর আর সালাউদ্দিনের সাথে মারামারি হয় না। দেখা কিংবা কথাও হয় না তেমন। বরাবর জিতে যাওয়া সালাউদ্দিন এসএসসি পাশের আগে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে আবারও জিতে যায় ! আর আমি, মাসুম সরকারি-বেসরকারি লেখা পড়ার চাপে পিষ্ট হতে থাকি। হারতে হারতে কুজো হয়ে যাই। যেন হারতেই জন্মেছি আমরা ! আমাদের অবসর নেই কোনো―

শুনেছি শৈশব ছাড়িয়ে কৈশোর কিংবা ফুটতে থাকা কাঁচা যৌবনে সাঁতারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। জীবনের পথ-মত, মুগ্ধ সবুজ, ফলের মাঠ সাঁতরে এগিয়ে যায় দূরবীন রাখা ভোরে। দুপুরের কর্কশ
যাপন আর ফুলেল সন্ধ্যায় সাধ্যের ফুয়েল নিয়ে দৌড়ে যায় বিস্তর। সেখানে কোনো বিদ্যালয় নেই। একাকী সালউদ্দিন―অদ্ভূত নিঃসঙ্গতায় লেপ্টে রাখে সুখ।

আমার বন্ধু সালাউদ্দিন―পুরুস্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু। সাঁতারের লোভে খাল-নদী পেড়িয়ে আসমান ছুঁয়েছে এখন। শৈশবে যারা জেতার অভ্যাস করে তারা হয়তো সারা জীবনই জিতে যায়। লটারীর ক্ষোভ আটকাতে পারে না তাদের―ক্লাস ফোরের বই হাতে পৌঁছে যায় চাঁদ-তারার গ্রামে । পশ্চিম ভূতের দিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়। অবশিষ্ট লটারি নিয়ে বসে থাকি আমি―আমরা। ফেরে না সে। তার এখন নতুন স্কুল। পুরতন রেফারি। আর চির-পরিচিত কাদের বিশ্বাস স্যার। সবাই জিতে গেছে তারা। আগে কিংবা পরে।

আমার হাতে নিঃসঙ্গ লটারী। অসমাপ্ত সাঁতার। আর খরচ অযোগ্য কিছু অদ্ভূত স্মৃতি। মুখে মুখে লেপ্টানো হারের লজ্জা । তবু সালাউদ্দিনের সাথে দূরত্ব নেই আমাদের। নেই কোনো লটারীর কৌশল কিংবা হার-জিতের প্লান। সে এখন অনেক আপন আমাদের। সে এখন সমুদ্র সাঁতরায়। আকাশ সাঁতরায়।

সানাউল্লাহ সাগর
১০ জুন ২০২০ খ্রি., ধানমন্ডি, ঢাকা।

[ গত মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে যাওয়া বাল্যবন্ধু সালাউদ্দিনের প্রতি... ]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:২২

শোভন শামস বলেছেন: সে এখন অনেক আপন আমাদের। সে এখন সমুদ্র সাঁতরায়। আকাশ সাঁতরায়।

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৫

শেরজা তপন বলেছেন: আঁচ করতে পারছিলাম এমন কিছু হবে।

ওপারে ভাল থাকুক আপনার বন্ধু সালাউদ্দিন! ভাল থাকুন আপনারাও

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:১০

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: স্মৃতি মানুষকে অন্যলোকে নিয়ে যায়।

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৮

সাগর শরীফ বলেছেন: ভাল থাকুক আপনার বন্ধু!

৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধুকে হারিয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন, নাকি গরুর রচনা লিখছেন শুধু?

৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪

আফরোজ ন্যান্সি বলেছেন: খারাপ লাগলো লেখাটা পড়ে

৭| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: দুঃখজনক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.