নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Shondhi Muhid

সন্ধি মুহিদ

ভেতরে বৈরাগ্য, বাইরে সংসারী মুখোশ!

সন্ধি মুহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন মেতেছে : প্রথম পর্ব

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:২০

"বাবা তোমার মন খারাপ?", আমার ছোট্ট কন্যা সন্ধ্যা মালতীর মিষ্টি কণ্ঠ। সন্ধ্যা বেলায় অন্ধকার বারান্দায় চুপচাপ বসে ছিলাম। হ্যাঁ মনটা খারাপই ছিলো। স্ত্রীর কথা মনে পড়ছিল। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, হাতে টেডি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বললাম, "মামণি, ঘুম শেষ?"

মেয়ে আমার কিছুই বললো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কাছে চলে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আহারে, আমার মেয়েটার কত কষ্টটাই না হচ্ছে। আমি ওকে আমার সাথে ধরে রাখলাম। ওর চুলের গন্ধ পাচ্ছি। স্ত্রীর চুলেও এমন গন্ধ ছিলো।

আমার গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি বোধয় সন্ধ্যাকে ব্যাথা দিচ্ছিলো। সে আমাকে টেনে বললো, "বাবা আসো, শেভ করবা চলো।"

আমি চললাম, তার পিছু পিছু। শেভ তো করা দরকারই। ছন্নছাড়া হয়ে থেকে কী লাভ?

কন্যাই কি আমাকে এখন দেখে রাখবে, নাকি আমি কন্যাকে দেখে রাখবো। ইশ, স্ত্রী যদি থাকতো…



স্ত্রী গত মঙ্গলবার চিরকুট রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছে। নিরুদ্দেশ বলা যায় না অবশ্য। আমি জানি সে কোথায় আছে। চিরকুটে লেখা ছিলো, "আমি আবীরের সাথে গেলাম। তোমরা ভালো থেকো।"

আবীর ছিলো আমার বন্ধু মানুষ। সে ছিলো আমার স্ত্রী তিথীরও বন্ধু। আমি খানিকটা টের পেয়েছিলাম আগেই। কিন্তু কিছু বলিনি। চিরকুটটা কন্যাকে দেখিয়ে বলেছিলাম, "তোমার মা তোমার আবীর আঙ্কেলের সাথে চলে গিয়েছে। আর আসবে না।"



সন্ধ্যার বয়স মাত্র সাত। সে কী বুঝলো কে জানে। এই বিষয়ে সে আর কোনো কথা বলে নি।



২.

রাত দুটো। আমি আবার বারান্দায় বসে আছি। সন্ধ্যা বোধয় ঘুমুচ্ছে। আমি আকাশ দেখছি। বারান্দায় স্ত্রীর পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা ফুলের গাছ মৃদু বাতাসে নড়ছে। আমার ফোন কেঁপে উঠলো। দেখলাম তিথীর এসএমএস, "tomader kotha mone pore." আমি ওর নম্বরটা ব্লক করে দিলাম। যে গেছে, তাকে আর সুযোগ দিয়ে লাভ নেই।



একটু পর শুনলাম, কন্যা কানের কাছে এসে বলছে, "বাবা, ঘুমাতে আসো।" ওর দিকে তাকাতেই ক্যানো জানি খুব আনন্দ হলো। বাপ বেটিতে মিলে ঘরে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে রাত দুপুরে হার্মোনিয়াম তবলা বের করে বসলাম। প্রাণ খুলে গাইতে লাগলাম। আমি হার্মোনিয়াম বাজাই। কন্যা গান করে, আমিও গান করি।



"ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে।

তারে আজ থামায় কে রে।

সে যে আকাশ পানে হাত পেতেছে,

তারে আজ নামায় কে রে!"



স্ত্রী থাকলে সে হার্মোনিয়াম ধরতো, আমি তবলায় বসতাম। এই হার্মোনিয়াম, তবলাই যত নষ্টের গোড়া। আবীর আবার গান টান গাইতো। আর সেই টানেই মাঝে মাঝে আসতো।



তবু গানেই মুক্তি। গান গাইতে গাইতেই বাপ বেটিতে সব ভুলে গেলাম। খুব একটা মন্দ লাগছে না তো। যে চলে গেছে, তাকে ভেবে কী লাভ। আমি ভাল আছি। আমরা ভাল আছি। আমরা ভাল থাকবো।



.

সন্ধি মুহিদ

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:২৩

ইকরাম বাপ্পী বলেছেন: য চল গেছ, তােক

ভেব কী লাভ। আিম ভাল আিছ। আমরা ভাল আিছ।

আমরা ভাল থাকবা।


Khub e kothin kintu bastob kotha.....hariye jaoa manush jeno fire fire na ashe.....ta she jevabei hariye jak na.....

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

সন্ধি মুহিদ বলেছেন: জ্বি, বাস্তবতাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলাম

২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৫:৩৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: পৃথিবী বড়ই রহস্য আর বড়ই দুঃখময়।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৭

সন্ধি মুহিদ বলেছেন: দুঃখ আছে বলেই কিন্তু সুখের মর্ম বোঝা যায়

৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৩৬

ডরোথী সুমী বলেছেন: ভাল থাকার চেষ্টা করুন। দেখলেনই তো ভাল থাকা কত সহজ।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৫

সন্ধি মুহিদ বলেছেন: জ্বি

৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৪০

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কথাগুলো স্পর্শ করে গেল।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

সন্ধি মুহিদ বলেছেন: লেখাটা সার্থক হলো তবে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.