নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্লায়েন্ট

২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:১৮


কেন যেন আজকে বেশ সকালেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। উঠে পড়ব? না শুয়ে থাকব? প্রীতি এখনও ঘুমাচ্ছে। বেশ সুন্দর লাগছে ওকে দেখতে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের ওপর ছড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। একবার ভাবলাম ডাকি। রোমান্টিক সকালটা দুজনে মিলে গল্প করি। তারপরে ভাবলাম, থাক। সময়টা বরং একাকীই কাটাই।

আমার সন্তান বলতে দুই মেয়ে, স্বপ্না আর অর্না। ফ্ল্যাটটা তিনটে বেডরুমের। অন্যটায় দুই মেয়ে থাকে। একটা ফাঁকাই থাকে। ড্রইং রুমটা বেশ বড়। সাথে একটা ব্যাল্কনিও আছে। সেখানে দাঁড়ালে সামনের রাস্তাটা দেখা যায়। ব্যাল্কনিতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে আবার ড্রয়িং রুমে ফিরে আসলাম। সোফায় বসতে বসতে পাশের ছোট টেবিলটায় রাখা ছিল ম্যাগাজিনগুলোর দিকে নজর পড়ে গেল। প্রীতি বেশ কিছু মেয়েলি পত্রিকা নেয়। সেসবের মাঝে হঠাৎ চোখে পড়ল ঐ ঈদ সংখ্যাটায়।
এটা কবে এসেছে? প্রীতিই বা আমাকে কেন বলেনি এটার কথা? কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে পত্রিকাটা নিলাম। বছর দুয়েকের পুরনো। আচ্ছা, এতোদিন কেন চোখে পড়েনি? হয়তো ড্রইং রুমে বসাই হয় না। কিংবা বসা হলেও, এদিকে চোখ পড়েনি। বেডরুমে আরেকটা টিভি আছে। অফিস থেকে ফিরে বাকী সময় আমার কাটে টিভি দেখে আর নয়তো নেটে পত্রিকা পড়ে। এসব ভাবতে ভাবতে পত্রিকা উল্টাতে শুরু করলাম। সূচিপত্রে এসেই চোখ আঁটকে গেল।


ঝিরঝিরে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা এখন। আজ আমাদের ব্যাঙ্কের ক্লোজিং ছিল। এই দিনগুলোতে সাধারনতঃ দেরি হয়। প্রীতি জানে। তাই তাগাদা দেয়া ফোন এখনও আসেনি। সাধারনতঃ ড্রাইভারকে রাখি, কিন্তু আজ ওর কি কাজ আছে দেখে, ছুটি চাইল। আমিও আপত্তি করলাম না। অফিসের গাড়ি চাওয়া যেত, কিন্তু সেটাও নিলাম না। ড্রাইভারের কাছ থেকে চাবি রেখে দিলাম। আজ নিজেই ড্রাইভ করে যাব। খুব ভালো ড্রাইভ করতে না পারলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারি।
একটা কারণে আজ মেজাজ বেশ ফুরফুরে। একটা পত্রিকা থেকে অফার পেয়েছি ঈদ সংখ্যায় লেখা দেয়ার। অফার বললে ভুল হবে, আদায় করে নেয়া। লেখালেখির অভ্যাস ঠিক কবে থেকে বলতে পারব না, তবে লিখি। আগে যখন চাকরী সূত্রে রাজশাহীতে ছিলাম, তখন প্রথমবারের মত আমার একটা গল্প ছাপা হয়েছিল। লেখাটা ছাপবার একটা কারন হতে পারে, ওদের একটা লোন পাশ করিয়ে দিয়েছিলাম।
এরপরে চাকরী সূত্রে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া। এবং সেসব শহরের লোকাল পত্রিকায় আমার গল্প ছাপা হওয়া। গল্প লেখায় তেমন কোন উন্নতি না হলেও, আমার চাকরী জীবনে হয়েছে। এখন একটি প্রাইভেট ব্যাংকের জিএম। দারুণ ক্ষমতাধর, এমনটা বলব না, তবে কিছু ক্ষেত্রে, ক্ষমতা আছে। আজকে তেমনই একটা ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ ছিল। অনুরোধটা নিয়ে যিনি এসেছিলেন, তিনি এক বড় পত্রিকার সম্পাদক।
সম্পাদনার সাথে সাথে তিনি একটা প্রকাশনা সংস্থারও কর্ণধার। প্রতিযোগিতা বাড়ছে, তাই নিজের অফসেট প্রেস চাই। আর তা করতে চাই কিছু লোন। বিশাল আকারের কিছু না। তবে এধরনের কেসে সাধারনতঃ আমরা খুব একটা ইনভল্ভড হতে চাই না। তাই সম্ভবতঃ জুনিয়র অফিসাররা ভদ্রলোককে ঘুরাচ্ছিলেন। হতাশ সম্পাদক সাহেব তাই আজকে আমার সাথে দেখা করতে সিদ্ধান্ত নেন। কার্ডটা যখন পিওন এসে দিল, তখন বেশ বিরক্তির সাথেই সেটাতে নজর বুলালাম। আজকের দিনে কোন উৎপাত পছন্দ হওয়ার কথা না। ‘গিয়ে বল স্যার বিজি’ বলতে গিয়েও আঁটকে গেলাম।
আসলে সম্পাদক আর পত্রিকার নাম, এই শব্দদুটোতে চোখ আঁটকে গেল। যদিও কাজের চাপ, তারপরও উনাকে সময় দিলাম। কেসটা শুনলাম। আমার একটা কথাতেই লোনটা পাশ হয়ে যাবে। সো, সুযোগটা কাজে লাগালাম। বাই দ্যা ওয়ে জানাচ্ছি এমন ভাব করে নিজের সুপ্ত প্রতিভার কথাটা বললাম। উনি শুনে উৎসাহ দেখালেন। হয়তো বা বাধ্য হয়েই দেখালেন। লোনটা চাইলেই আমি পাশ করতে পারি, উনি জানেন।
জুনিয়র যে অফিসারের কাছে উনার ফাইলটা আছে, তাঁকে ডেকে, লোনটা 'ওকে' করে দিলাম। ভদ্রলোক দেখলাম, আমার চেয়েও একধাপ এগিয়ে। জানালেন, আজকেই সব কাজ হয়ে গেলে নাকি উনার ভাল হয়। লোনটা যে উনার চেহারার বদলে উনার সম্পাদক পোস্টের কারণে দিচ্ছি, ব্যাপারটা সম্ভবতঃ আঁচ করে ফেলেছেন।
এনিওয়ে, উনার এই দাবীও পূরণ করলাম। এখন আমি অপেক্ষা করছি, অফারটা আসুক। অফিশিয়াল প্রসেডিওর শেষে ফাইল আমার রুমেই পাঠিয়ে দিতে বললাম। এই ফাঁকে আমার একটা লেখা পড়তে অনুরোধ করলাম। ভদ্রতার খাতিরেই হোক আর প্রয়োজনের খাতিরে, উনি পড়তে রাজি হলেন।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভদ্রলোকের মুখের দিকে চাইলাম। চেহারা দেখে মনে হল না খুব ভালো লেগেছে। যাইহোক, পড়া শেষে প্রশংসা করলেন। যদিও ‘প্রশংসা’ ঠিক এই মুহূর্তে আমার চাওয়া না। অপেক্ষায় আছি, আমার প্রত্যাশিত অফারটা উনি দেন কি না?
‘এবারের আমার পত্রিকার ঈদ সংখ্যার জন্য একটা লেখা দেন না।’ লোন স্যাংশানের কাগজটা পেয়ে বিদায় নেয়ার সময় ভদ্রলোক হঠাৎ বললেন। অফার? না ভদ্রতা? সাহিত্যিক এবং সম্পাদক হিসেবে উনার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে। ‘হেঁজিপেঁজি' গল্প ছাপিয়ে সেটার বারোটা বাজাবার লোক উনি না। মনে হচ্ছে আশ্বাসটা মিথ্যা। জমা হয়তো নেবেন কিন্তু ছাপবেন না। তারপরও কেন যেন আরেকটা গল্প লিখতে মন চাচ্ছে।
গাড়ী নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েই চারদিকে গল্প খোঁজা শুরু করলাম। ঐ সামনে যে বৃদ্ধ রিকশাওয়ালাটা যাচ্ছে, ওরও তো একটা গল্প আছে। হয়তো ছেলেগুলো বড় হয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছে। কিংবা হয়তো ছেলে নেই, সব গুলো মেয়ে, বিয়ে করে চলে গেছে। আচ্ছা, ঐ যে রাস্তার ধারে ‘জামাই বউ’ চানাচুর বিক্রি করছে, ওর কোন গল্প নেই? যাই দেখছি তার ভেতরেই গল্প খোঁজার চেষ্টা করছি। স্মৃতি রোমন্থন, ক্লায়েন্টদের গল্প, কলিগদের গল্প সব কিছুই ঘুরছে মাথায়, কিন্তু গল্প হচ্ছে না।

— ক্যান আই হ্যাভ আ লিফট প্লিজ?


সম্ভবতঃ চিন্তার জগতের বেশ ভেতরে প্রবেশ করে গিয়েছিলাম। তাই ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগল। গাড়িটা আমার তখন একটা সিগন্যালে দাঁড়িয়েছিল। এমন সময় গাড়ির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। বৃষ্টির ছাট ভাল লাগছে দেখে, আমার দিকের জানালাটা খোলাই রেখেছিলাম। অচেনা একটা মেয়ের এভাবে লিফট চাওয়া? আসলেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
বয়স বাইশ তেইশ হবে। বেশভূষায় কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড কিংবা থার্ড ইয়ারের ছাত্রী মনে হচ্ছে। কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেলাম। দুম করে 'না' বলতে কেমন যেন ইতস্ততঃ লাগল। 'কোথায় যাবে?’ জিজ্ঞেস করার সময় ছিল না। লাইট গ্রিন হয়ে গেছে। ইশারায় বোঝালাম পাশের দরজায় আসতে। দরজার লক খুলে দিলাম। মেয়েটা উঠে বসল।
—কোথায় যাবেন?
অবাক হলাম। প্রশ্নটা তো আমি করব। খুব সমস্যা না হলে হয়তো পৌঁছেও দিব। আমি কোথায় যাব প্রশ্নটায় সত্যিই হকচকিয়ে গেলাম। বললাম
—আমি তো বাসায় যাব। মেয়েটার ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল।
—আমাকে বাসায় নিয়ে যাবেন?
এবার সত্যিই ধাক্কা খেলাম। এইধরনের মেয়েদের যে গেটআপটা চোখে সেঁটে আছে, তার সাথে একদমই মিল নেই। মেয়েটা বেশ স্মার্ট। এমন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে তেমন মেয়ে ভাববার একেবারে উপায় নেই। সবচেয়ে ইন্টেরেস্টিং লাগল, নিজের পেশার পরিচয় দেয়ার স্টাইলটা। একটু ঘুরিয়ে, কিন্তু বেশ সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিল, ও আসলে কে।
আমাকে বোকাও ভাবতে পারেন কিংবা ভণ্ডও বলতে পারেন। তবে সৎ তথ্যটা হচ্ছে, আসলে তখন গল্পের প্লটের খোঁজ চলছিল মনে মনে। এবং কিছুটা হয়তো অন্যমনস্কও ছিলাম। তাই লিফটের প্রস্তাবটার সময়, প্রথমে প্রতিক্রিয়া ছিল চমকে উঠা। মনে যদিও প্রশ্ন জেগেছিল, ‘এতো রাতে এখানে কি করে?’ তারপরও বাজে পেশাটার কথা প্রথমেই মনে আসেনি। হয়তো বেশভূষা একটা কারণ হবে। নাকি এসেছিল? হলফ করে বলতে পারব না।
হয়তো মেয়েটার সৌন্দর্য আমাকে টেনেছিল। শ্যামলা রং। তবে বেশ মিষ্টি চেহারা। চোখটাও বেশ ঘন কালো। ‘একবার তাকালেই দেখা শেষ হয় না’ টাইপ। দ্বিতীয়বার তাকালাম। আবিষ্কার করলাম, মনের ভেতর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ‘এই মেয়ের হয়তো একটা দারুণ হৃদয়বিদারক কাহিনী আছে। একটু সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে হয়তো গল্পটা বলতেও পারে।’ নিজের ইচ্ছেকে জাস্টিফাই করবার টিপিক্যাল সস্তা যুক্তি আরকি।
গল্প উপন্যাসে এদের সম্পর্কে কিছু টিপিক্যাল গল্পই থাকে। হয়তো বেশিরভাগই সত্যিই। হয়তো কিছু গল্পকে ইচ্ছে করেই ‘মেলো ড্রামাটিক’ করা হয়। এব্যাপারে আমার নিজের ‘ফার্স্ট হ্যান্ড’ কোন এক্সপেরিয়েন্স নেই। তবে গল্প উপন্যাস পড়ে যতোটা মনে হয়, সাধারণতঃ এঁরা নিজেদের আসল গল্প বলে না। এই না চাওয়াটা কেউ সরাসরি বলে দেয় আবার কেউ অনেক মিথ্য গল্পও তৈরি রাখে।
পেছনে গাড়ির হর্ন বাজছে। আচ্ছা, মেয়েটা কি ইচ্ছে করেই সময়টা চয়েজ করেছিল? যেন আমি ভাববার সুযোগ না পাই? ইন্টেরেস্টিং? বুদ্ধিমান বলতে হবে। ধীরে ধীরে ‘দেখা যাক কি হয়’ টাইপ একটা অবস্থান মনে তৈরি হতে শুরু করল। ও হয়তো নিজস্ব খেলা খেলতেই লিফট চেয়েছিল, এখন হয়তো আমি আমার খেলা খেলতে এই লিফট দিচ্ছি।
— ব্যাচেলার তো না?
চিন্তায় বাধা পড়ল। ঠিক আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে না। সামনের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করল কথাটা। ততক্ষণে দ্বিধা ঝেড়ে ফেলেছি। ‘দেখি কি হয়’ অবস্থানে চলে এসেছি। এতে একটা সুবিধা হল, বেশ ইজি ফিল করতে শুরু করলাম। বেশ সাবলীল ভাবেই উত্তর দিলাম
— না। ম্যারিড। দুটো মেয়েও আছে।
— একটা কথা বলব?
— বল।
— এধরনের লিফট দিতে রাজী হওয়া মানে কিন্তু আমরা ধরে নিই, আপনি রাজী।
এবার মেয়েটার দিকে ভালোভাবে আবার তাকালাম। কেমন আট্রাকশান বোধ করছি। ঠিক এই পেশার মেয়ে মনে হচ্ছে না। আসলে এই পেশা ঠিক কোন উচ্চতায় পৌঁছেছে, সে সম্পর্কে বোধহয় আমার কোন ধারণাই নেই।
সব কিছু ছাপিয়ে কেন যেন ‘যা হওয়ার হবে’ টাইপ একটা ডেসপারেশান আমাকে পেয়ে বসল। কেন যেন মেয়েটার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। খেলা যখন শুরু হয়েই গেছে, শেষ পর্যন্তই দেখি। গল্প পাব কি না জানি না, তবে একটা অন্যরকম এক্সপেরিয়েন্সের লোভ পেয়ে বসল। বললাম,
— পরিচিত কোন জায়গা আছে? আই মিন সিকিউরড। যেখানে গেলে কেউ জানবে না।
মেয়েটা আড় চোখে তাকাল। আঁচ করার চেষ্টা করছে আমাকে। চোখে কিছুটা সন্দেহ। কিছুটা দ্বিধাও আছে। আমিই সম্ভবতঃ এরকম প্রথম ক্ল্যায়েন্ট না। হয়তো এর আগেও অনেকে এভাবে ভুল করেছে। হয়তো সেসব মানুষের জন্য ওর নির্দিষ্ট একটা ফর্মুলাও আছে। হয়তো ভাবছে কি করবে। নেমে যেতে চাইবে? আজকের রাতের ইনকামটা মাটি করবে? নাকি ফেরত গিয়ে আরেকবার ট্রাই করবে? খুব বেশিদূর আসিনি, এখনও ফিরে গিয়ে ট্রাই করলে ভালো কিছু জুটে যেতে পারে। একসময় দ্বিধা কাটিয়ে বলেই ফেলল,
— আমাকে বরং নামিয়ে দিন।


— বসো।
— এটা কার বাসা?
— এটা আমাদের অফিসের গেস্ট হাউজ।
মেয়েটা বেশ অবাক চোখে চারিদিক দেখছে। ধানমন্ডির এই বাসাটা অফিস থেকেই ভাড়া নেয়া। বাইরের শহরের কোন ব্রাঞ্চের বড় কোন অফিসার আসলে, থাকতে পারে। এছাড়াও মাঝে মাঝে ঘরোয়া আড্ডা হয়। আজকের দিনে এমন কিছুর কোন সম্ভাবনা নেই। আজকে কমবেশি সব জিএমই এখন ক্লান্ত। সারাদিনের ধকল শেষে এখন বাসার দিকে ছুটছে। তারপরও এখানে আসবার কিছু আগে কেয়ারটেকারকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে নিয়েছিলাম। ও জানালো, ‘কেউ নেই, পুরো ফাঁকা’।
-- আপনি সিওর?
-- কি ব্যাপারে?
-- কোন সমস্যায় পড়বেন না তো?
-- আশা করছি না।
মেয়েটার দিকে তাকালাম। ওর উদ্বেগটা নিখাদ। সত্যিই আমার জন্য ভাবছে। ধীরে ধীরে আমরা নিচের তলার ড্রইং রুমটার দিকে এগিয়ে গেলাম। ডুপ্লেক্স টাইপ বাসা। ওপর তলায় বেডরুম। নীচে ডাইনিং, কিচেন আর বড় একটা ড্রইং রুম। ড্রইং রুমের সোফায় বসতে বসতে ওকে আশ্বস্ত করলাম।
— আমাকে নামিয়ে দিতে পারতেন।
হ্যা, তা পারতাম। কিন্তু করিনি। কেন? হয়তো নিজেই জানি না। অ্যাট্রাকশান ফিল করছি? গল্প খোঁজাটা কি বাহানা? নতুন এক্সপেরিয়েন্সের শখ? সেসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। আপাততঃ দরকার মেয়েটার সঙ্গে একটা আলাপচারিতার সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রসঙ্গ চেঞ্জ করলাম
— দেখো, বুঝতেই তো পারছো, এটা আমার প্রথম এক্সপেরিয়েন্স। কিছু ব্যাপার কিন্তু আমার জানা নেই।
মেয়েটা ভ্রু কুঁচকে তাকাল। কি প্রসঙ্গে কথাটা বললাম বোঝার চেষ্টা করছে। ইঙ্গিতে কিছু কি বলতে চাইছি? কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো,
— যেমন?
— এই যেমন, তোমাদের খাওয়া অফার করতে হয় কি না? আই মিন কখন খেয়েছ? মেয়েটা হেসে ফেলল। বেশ সুন্দর হাসি। এরপর দুষ্টামি ভরা চোখে তাকাল
— কৃপণরা খাওয়ায় না। তবে অনেকেই খাওয়ায়। বিশেষ করে পুরো রাতের ক্লায়েন্টরা। ড্রিঙ্কও করায়, কখনো ড্রিঙ্ক করতে জোরও করে।
মেয়েটা কনফিউস করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে স্মার্টনেস দেখাচ্ছে, মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, খোঁচা দিচ্ছে। তবে ওর হাসিতে সত্যিই একটা যাদু আছে। আলাপে একটা সহজতা আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়াও কিছুটা পরিবর্তন হচ্ছে। অপরাধবোধ ব্যাপারটা সরে যাচ্ছে। দুজনেরই। পরিস্থিতির এই স্বাভাবিক হওয়াটা ধরে রাখতে হবে। তবে আরও একটা ব্যাপার ঘটতে শুরু করেছে। আর তা হচ্ছে, আই অ্যাম রিয়েলি ফিলিং ইন্টারেস্টেড। গল্প করতে ভাল লাগছে। হয়তো ওর সাবলীলতা কিংবা হতে পারে ওর সৌন্দর্য। কেমন একটা ভালোলাগা অনুভূতি হতে লাগল।
— আমি যদিও কৃপণ, বাট, আমার নিজেরও খাওয়া হয়নি, তাই খাওয়ার আনাবো। আর তোমাকে খেতে না দিয়ে শুধু শুধু সামনে বসিয়ে রাখতে বিবেকে লাগবে।
মেয়েটার চোখে দুষ্টুমির হাসি। আমার দিকে বেশ খানিকক্ষণ তাকাল। চোখ নাচিয়ে জানতে চাইলাম ‘কি ব্যাপার?’ মেয়েটা মাথা দুদিকে নেড়ে বোঝাল ‘কিছু না’। এরপরে কেয়ারটেকারকে খবার আনতে দিলাম। আমি নিজেও ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিলাম। ওকেও জানালাম ফ্রেস হতে চাইলে, যেতে পারে। জানালো প্রয়োজন নেই। বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিলাম, দেরি হবে। সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে বললাম।
— একটা কথা বলব?
মেয়েটা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্য করিনি। বইয়ের পাতা ওলটাতে ওলটাতেই বললাম
— না। খাওয়া শেষ হোক তারপরে বলো। আর হ্যাঁ পেট ভরেই খেও। তোমার পেমেন্ট থেকে কাটা যাবে না।
মেয়েটা হাসছে। এমন সময় কেয়ারটেকার এসে জানাল খাবার টেবিলে লাগিয়ে দিয়েছে। দুজন খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম।
— বসুন। আমি সার্ভ করছি।
— হাসছো কেন?
— খাওয়া শেষ হোক, তারপরে বলব।


খাবার টেবিলে তেমন কোন কথা হল না। কেয়ারটেকার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। ‘কিছু লাগবে কি না’ এমন ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও, আড় চোখে মেয়েটাকে দেখছে। চোখে রাগ না ঘৃণা বোঝা যাচ্ছে না। খাওয়া শেষ হল। মেয়েটা ড্রইং রুমের দিকেই যাচ্ছিল। ওকে ডাকলাম
— চল।
— কোথায়?
— দোতলায়, ব্যল্কনিতে।
বলে দোতলায় উঠতে শুরু করলাম। মেয়েটাও প্রথমটায় কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে পেছন ফিরে দেখলাম, ও হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাতের ইশারায় ডাকলাম, ওপরে আসবার জন্য। ডুপ্লেক্স বাসাটার দোতলায় একটা বেশ সুন্দর ব্যালকনি আছে।
আমার আবার ব্যাল্কনি প্রীতি আছে। এখানে আসলে, আমি সাধারনতঃ ব্যাল্কনিতে একা একা বসে থাকি। আজকেও ইচ্ছা করছে, ওখানে বসেই গল্প করি। মেয়েটা সিঁড়ির নীচেই দাঁড়িয়ে থেকে জানতে চাইল
— মানে?
এরপরে হয়তো বুঝল, ওপরে উঠতে বলছি। ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আসতে লাগল। ব্যালকনিতে একটা ছোট্ট টেবিল আর চারটে চেয়ার আছে। এদিকে ওদিকে কিছু ফুলের টব। বেশ রোমান্টিক পরিবেশ। আমি ব্যলকনিতে রাখা একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। ধীরে ধীরে মেয়েটা ব্যাল্কনিতে এসে আমার সামনের দাঁড়াল।
— কিছুক্ষণ আগে তুমি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলে। বল। সেটা শুনবো।
মেয়েটাকে এবার প্রথমবারের মত কনফিউসড লাগল। একবার আমার দিকে তাকাল। এরপরে অনেকটা স্বগতোক্তির মত করে বলল
— খুব জরুরী কিছু না।
— তা হয়তো। তারপরও, শুনবো। আসলে এখানে আমি একটা সিগারেট খাবো। একা একা বসে থাকার চেয়ে বরং দুইজন গল্প করি।
বেশ অনিচ্ছা নিয়েই মেয়েটা এসে বসল। ব্যল্কনিটা বেশ বড়। একটা ছোট টেবিল আর চেয়ারগুলো ছাড়া আর তেমন কোন ফার্নিচার নেই। বাকী পুরো জায়গায় ইচ্ছে করলে পায়চারি করা যায়। ঠিক আমার সামনের চেয়ারটায়, আমার মুখোমুখি বসল। একটা সিগারেট ধরালাম।
— ব্যাড ম্যানার্স।
অবাক হলাম। ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকাতেই ইশারায় সিগারেটটা দেখাল। অপরাধ মেনে নিলাম। বেনসনের প্যাকেটটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। সেখান থেকে একটা বের করল। লাইটারটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। ও ধরাতে যাচ্ছিল এমন সময় নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম,
— এক কাপ চাপ হলে বেশ ভালো লাগতো, না?
— বানাবো?
— লোভ হচ্ছে। বাট আই থিংক কেয়ারটেকার উইল ডু ইট।
— আমার বানানো খেতে খারাপ লাগবে?
ব্যাপারটা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে দেখে ক্ষান্ত দিলাম। বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম।
— ওকে। বানাতে পারো। কিচেনে সবকিছুই থাকার কথা। আমি বরং কেয়ারটেকারকে ডাকছি, ও দেখিয়ে দিবে।
— লাগবে না। আমি খুঁজে নেব।
— আমি হেল্প করবো?
স্মিত একটা হাসি দিল। যার মানে হতে পারে ‘অ্যাজ ইউ উইশ’। অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, সময়টা কেন যেন উপভোগ করতে শুরু করেছি। ওকে সঙ্গে নিয়ে কিচেনে গেলাম। দক্ষ হাতে খুব দ্রুত কিচেন থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে ফেলল। দ্রুত স্টোভ জ্বালিয়ে চায়ের পানি বসিয়ে দিল।
--পারেন?
--কি?
--চা বানাতে?
--না।
— শিখবেন?
— আপত্তি নাই।
— যেহেতু কিছুটা পানি ভেপার হবে, তাই যতোটা চা খাবেন তার চেয়ে কিছু বেশি পানি দেবেন। এরপরে চা দেয়ার অনেকগুলো ফর্মুলা আছে। কেউ পানি ফুটতে শুরু করলে দেয়, কেউ আগেই দেয়।
অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, মেয়েটাকে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। কেমন ঘরোয়া একটা ফিলিং দিচ্ছে।
— চা পাতা দেয়া ডিপেন্ড করে, আপনি কতটা স্ট্রং খাওয়া পছন্দ করেন। কতটা স্ট্রং খান জানেন? না বউ করে দেয়, আর আপানি খান।
— অনেকটা সেরকমই।
—চিনি কতটা খান? নাকি সেটাও জানেন না?
এই মেয়ে ভোগাবে। কিভাবে মেয়েটার আসল গল্প বের করবো, এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি। আসলে নিজেকে কেমন যেন নিয়তির ওপর ছেড়ে দিয়েছি। মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে। একটা খুব সুন্দর গল্প পাবো।

— আমি কিন্তু পেমেন্ট নিব।
চায়ে চুমুক দিতে যাচ্ছিলাম। কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। মেয়েটা কি ভেবেছে পেমেন্ট দিবো না? নাকি এখনই অগ্রিম টাকা দেয়া নিয়ম। কিন্তু মেয়েটার কথার ভেতরে অন্য কি যেন একটা ছিল। জিজ্ঞেস করলাম,
— পেমেন্ট দেব না এমন সন্দেহ কেন করছো?
— কারণ পদস্খলন হওয়া টাইপ মানুষ আপনি না। সো, আজকে হয়তো আর কিছুই ঘটবে না। আর তেমন কিছু না হলে… মেয়েটা ইচ্ছে করেই থেমে গেল।
--অ্যান্ড সেক্ষেত্রে আই মে নট পে ইউ, এই তো?
— আমাকে কেন এনেছেন?
বেশ সরাসরি প্রশ্ন। যদিও বুঝে ফেলেছে, এভাবে এধরনের কোন মেয়েকে লিফট দেয়া কিংবা ওর মত মেয়েদের এন্টারটেইন করা টাইপ মানুষ আমি না। আমি নিজেও হয়তো কিছুক্ষণ পরে বলতাম। শুধু একটু সময় চাইছিলাম। কিছু আলাপচারিতা করতে পারলে হয়তো আমার আসল উদ্দেশ্যটা বলতে সুবিধা হত। আসলে, কি বলব, কিভাবে বলব কথাগুলো, সেটাই গুছাচ্ছিলাম। অনেকটাই তৈরি করে ফেলেছি। কিভাবে শুরু করবে ভাবছি।
— চা টা সুন্দর হয়েছে।
— অনেস্টলি স্পিকিং, আপনার টাইপ ক্লায়েন্ট খুব একটা কম পাইনা।
-- আমার টাইপ মানে?
-- এই যে, প্রথমে বুঝতে পারে না আমি কোন টাইপের মেয়ে। যখন বুঝে তখন একটা করুণা এসে ভর করে, আজকের রাতের আয় নষ্ট করে দেয়ার গ্লানি পেয়ে বসে। এরপরে...
-- পেমেন্ট দিয়ে কাহিনীর ইতি টানে। এইতো?
-- ইয়েস। প্রথমে মনে হয়েছিল আপনি সেই টাইপ। কিছুক্ষণের ভেতরেই আমার আজকের রাতের উপার্জনটা পুষিয়ে দেয়ার অফারটা দেবেন। শুধু টাকা দিলে আমি ভিক্ষা মনে করে নাও নিতে পারি ভেবে হেজিটেট করতে পারেন ভেবে হিন্টটা দিলাম।
-- ইউ আর অলমোস্ট দেয়ার।
-- সো?
— গল্প করতে কি খারাপ লাগছে?
— না। বাট ঠিক গল্প তো হচ্ছে না। অ্যাম আই রাইট?
মুগ্ধ হয়ে মেয়েটার কথাগুলো শুনলাম। এঁরা সম্ভবতঃ খুব ভালো সাইকোলজিস্ট হয়। মেয়েটার কথা বলায় কোথায় যেন একটা রাগ ছিল। আমার বোকামির জন্য রাগ? নাকি এভাবে টাকা নিতে রাগ? এটাও বুঝলাম, গল্প বের করতে বেশ কসরত করতে হবে। আবার না ও হতে পারে। দেখা যাবে খুব সহজেই নিজের অতীত মেলে ধরছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। অনেস্ট কনফেশান করব।
-- শোন। তোমার নাম যেন কি?
-- শিউলি
-- আসল নাম?
-- ডাজ ইট ম্যাটার?
-- একটা কথা বলব?
-- বলুন।
-- তোমাকে ঠিক... আই মিন...
-- কলগার্ল মনে হয় না, এইতো?
-- সরি, বাট আসলেই, তোমাকে দেখতে খুব ভালো ঘরের মেয়েদের মত দেখায়
-- অ্যান্ড অলসো স্মার্ট
-- ইয়া। কেন... আই মিন
-- কেন আমি এই পথে নামিলাম, ইহা জানিতে আগ্রহ বোধ করিতেছেন, এই তো?
আমি সম্মতি সূচক মাথা নাড়লাম।
-- দেখুন, আপনাদের মত দরদি ক্লায়েন্টদের জন্য আমাদের কালেকশানে কিছু কষ্টের গল্প থাকে। চাইলে সেসব থেকে একটা শোনাতে পারি। শুনবেন?
এবারও ইশারায় জানালাম, শুনব। শুরু হল ম্যাড়ম্যাড়ে টাইপের একটা গল্প। ভণ্ড প্রেমিকের পাল্লায় পড়া এক মেয়ের গল্প। এরপরে এক পতিতালয়ে বিক্রি। অতঃপর আরও বড় এজেন্টের কাছে বিক্রি। ওর স্মার্টনেসের সাথে একেবারেই মেলে না। তারপরও শুনলাম।
— গল্পটা খারাপ না। বাট...
-- আমার সাথে মেলে না, এই তো?
-- ঠিক তা না। আসলে একটা বেশ নামকরা পত্রিকা থেকে একটা অফার পেয়েছি, একটা গল্প দেয়ার জন্য, সো
-- সো, এই কলগার্লকে এক রাতের জন্য গেস্ট হাউজে নিয়ে আসা?
মেয়েটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হাত দুটো বুকের ওপর আড়াআড়ি করে ভাজ করা। ও কি অন্য কিছু বলতে চাইছে?
প্রথমবারের মত সব এলোমেলো হতে শুরু করল। সত্যি সত্যিই বুঝে উঠতে পারছি না, কি বলব। মেয়েটা এবার বেশ গম্ভীরভাবে আমার দিকে তাকাল। কাটা কাটা ভাবে বলল
—সত্যি করে বলুন তো, কি চাই আপনার?
-একটা গল্প।
মেয়েটা দুদিকে মাথা নেড়ে না সূচক ইঙ্গিত করল। অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটাকে এখন অনেক বেশি মায়াবী লাগছে। মনে হচ্ছে ওর সঙ্গে আরও সময় কাটাই। উপভোগ করি ওর সঙ্গ।
—শুনুন। মেয়েরা খুব ভাল সাইকোলজিস্ট হয়। আর আমাদের টাইপ মেয়েদের হতে হয় খুব ভাল থট রিডার। ক্লায়েন্টদের মনের কথা বুঝে আমাদের সেভাবে রিয়াক্ট করতে হয়। যে স্মার্টনেস আপনি আমার ভেতরে দেখছেন, সেটাই আমাদের অস্ত্র। শুধু ফ্লেশের জন্য কেউ দ্বিতীয়বার আমাদের কাছে আসে না। আসে এই স্মার্টনেসের জন্য। এই কথার ফুলঝুরি দিয়েই আমাদের ক্লায়েন্ট আটকাতে হয়।
আমি তখন মন্ত্রমুগ্ধের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি। ওর কথা বলা, ওর ভ্রুকুটি সবকিছুই কেন যেন অপূর্ব লাগছে।
-- আপনার ব্যাপারে প্রথমে ভুল করেছিলাম, তবে এখন বোধহয় আর ভুল করছি না। প্রথমে হয়তো গল্পের লোভেই আমাকে লিফট দিতে রাজী হয়েছিলেন। বা হয়তো কেবল টাইম পাস টাইপ কিছু করতে চেয়েছিলেন। বাট আই থিংক এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অ্যাম আই রাইট?
প্রতিবাদ করতে চাইলাম, বলতে চাইলাম, ‘তুমি যা বলছ সব ভুল’, কিন্তু কেন যেন পারছি না।
-- আমার স্মার্টনেসের কারণেই হোক আর সৌন্দর্যের কারণেই হোক, আমার প্রতি আপনি একটু দুর্বল হয়ে পড়েছেন। দুর্বলতাটাকে ঠিক অনুরক্ত বলা বোধহয় ঠিক হবে না, আপনার বর্তমান অবস্থাকে, আমাদের ভাষায় আমরা বলি ক্লায়েন্ট… ইউ নো হোয়াট আই মিন। আমার ভেতর তখন ঝড় শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটা কি সত্যি বলছে? সত্যিই কি আমার পদস্খলন হতে যাচ্ছে? ওর কথার প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে করছে না কেন? প্রীতির চেহারাটা মনে করবার আপ্রাণ চেস্টা করছি। মেয়ে দুটোর কথা ভাবতে চেষ্টা করছি। হচ্ছে না। পারছি না।


--চা কে বানিয়ে দিল?
প্রীতি কখন ড্রইং রুমে এসে পাশের সোফায় বসেছে, লক্ষ্যই করিনি।
--আমিই
--পারো?
--ঐ, পানি গরম করে সব কিছু দিয়ে দিলাম।
-- দেখি।
হাত থেকে কাপটা নিয়ে এক চুমুক দিল। প্রীতিকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। এমন সময় ঈদ সংখ্যাটার দিকে নজর পড়ল। সেটা দেখিয়ে জানতে চাইলাম
--এটা কবে দিয়ে গেছে?
প্রীতি পত্রিকাটা হাত থেকে নিল। উলটে দেখল। এরপরে চিনতে পেরে বলল
--এটা তো সেটা, যেটায় তোমার লেখা ছাপা হয়েছিল।
--পড়েছ?
--হ্যা
--কেমন হয়েছে?
--ভালোই তো। লেখালেখিটা তুমি তো চালিয়ে গেলেই পাড়তে। অ্যান্ড, চা টাও মন্দ হয়নি।
--একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
--হঠাৎ এতো ফর্মালিটি।
--আসলে ঠিক পারমিশান চাইছি না, একটা অনেস্ট অপিনিওন চাইছি।
--বেশ, বল।
--হোয়াট ইফ... আই মিন, স্টোরিটা যদি সত্যি হয়? অ্যা ট্রু ওয়ান?
--মানে?
--মানে ধরো যদি সত্যিই আমি কোন কলগার্লের সাথে...
-- কি বলছ এসব আবোল তাবোল
--সত্যি বলছি প্রীতি। দ্যাট ডে আই রিয়েলি ক্রসড দ্যা সিলভার লাইন।

শেষ

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৪৭

অবনীলের ডানা বলেছেন: সবকিছু ছাপিয়ে প্রীতির অনুভূতি টা চোখে ভাসছে!

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:৫০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৮ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫

মক্ষীরাজা বলেছেন: ভাইয়ুমণিতা!!!!!!!!!

বাহ!!!!!!!!

মুগ্ধ মুগ্ধ মুগ্ধ!!!!!!!!

ঠিক পরীর দেশের রাজণ্যদের লেখা !!!!!!!!

উলে জাদুরে। উম্মা :>

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৫

সানহিমেল বলেছেন: সুন্দর গল্প, শেষ পর্যন্ত আকর্ষনটা ছিলো।

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫২

মামুন্‌ বলেছেন: চাকরী আছে এখনো? :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.