নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সব চরিত্র কাল্পনিক

১২ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১:৫২


পোস্ট মরটেমের প্রাথমিক রিপোর্টে হত্যার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু মনে হচ্ছে। যদিও ভিসেরা রিপোর্ট আসতে আরও কয়েকদিন দেরি হবে, তবে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, বিষ প্রয়োগের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই ইদ্রিস সাহেব অনুশোচনায় ভুগছিলেন। রেহানা ইয়াসমিনকে সন্দেহ করার বুদ্ধিটা এসপি সাহেবের মাথায় তিনিই ঢুকিয়েছিলেন। আসলে বেশ কিছুদিন আগে, ইনাম সাহেবের সাথে তাঁর একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।

কোন এক শীতে একবার ইনাম সাহেব ফ্যামিলিসহ কক্সবাজার এসেছিলেন। হঠাৎ প্ল্যানিং হওয়ায় কোন বুকিং না দিয়েই এসেছিলেন। ট্যুরিস্ট সিজন হওয়ায় ভাল কোন হোটেলে রুম পাচ্ছিলেন না। এমনকি ইদ্রিস সাহেব নিজেও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। লবিতে বসে যখন তিনি বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে রুম জোগাড়ের চেষ্টা করছিলেন তখনই তিনি জানোতে পারেন তাঁর প্রিয় পত্রিকা দৈনিক সচিত্র সময়ের সম্পাদক ইনাম খানই এই ইনাম খান। তখন তিনি তাঁর হাতে রিজার্ভ থাকা একটা ভিআইপি রুম ম্যানেজ করে দেন।
সেই থেকে চেনা পরিচিত কেউ কক্সবাজারে এলে, তিনি তাঁর ঠিকানা দিয়ে দেন। রেহানাও সম্ভবতঃ উনার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েই এখানে এসেছেন। আর গতকাল সন্ধ্যায় যখন ইনাম সাহেব এখানে আসেন, তখন ইদ্রিস সাহেবের সাথে খুব অল্প সময়ের জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। কি কারণে এসেছেন, তা না বললেও, জানান যে দিন দুয়েক এখানে থাকবেন।
পাহারা বলতে রুমের সামনে যে মহিলা কনস্টেবলকে বসানো হয়েছিল, খবরটা পাওয়ার পরে তাঁকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ইদ্রিস সাহেব নিজ দ্বায়িত্বে দুটো প্লেনের টিকিটও বুক করে রেখেছেন। এসময়ে প্লেনের টিকিট আকাশের চাঁদ হলেও, তাঁর জন্য যোগাড় এটা কোন সমস্যা না। ফ্লাইট বিকেল পাঁচটায়। সেকথা জানাতেই তিনি রেহানা ইয়াসমিনের রুমে নিজে এসেছেন। সারা রাস্তা ভাবতে ভাবতে এসেছেন কিভাবে কিংবা কতোটুকু বলবেন।
রেহানা ইয়াসমিনই দরজা খুললেন। তাঁকে বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে। বেশ শক্ত মহিলা। অন্য কেউ হলে এমন অঘোষিত হাউজ এরেস্টে ঘাবড়ে যেত। উনি বেশ শান্ত আছেন। ইদ্রিস সাহেবকে দেখে শান্ত স্বরে জানতে চাইলেন
— কিছু বলবেন?
— ঢাকা থেকে ফোন এসেছিল
— কি ব্যাপারে?
— পোস্ট মরটেমে প্রাথমিকভাবে হত্যার কোন লক্ষণ পাওয়া যায়নি।
— তো?
— মানে, যেহেতু মার্ডারের কোন সম্ভাবনা নেই, তাই ঢাকা থেকে জানিয়েছে আপনারা চাইলে এখন যেতে পারেন।
— আই সি। মানে পুলিশের ধারণা ছিল আমি মেরেছি ইনামকে?
— ঠিক পুলিশের না, আমার।
— আপনার? কেন?
— উনি আসলে আপনার সাথে দেখা করতেই এখানে এসেছিলেন।
— আমার সাথে?
— আমাকে উনি তাই বলেছিলেন।
— কেন, তা কি কিছু বলেছিলেন?
— না। শুধু জানতে চেয়েছিলেন আপনার রুম নম্বর কত?
রেহানা এবার সত্যিই বেশ অবাক হলেন। ঢাকায় তো দেখা হয়েইছিল। ওর বাসাতেও দাওয়াত দিয়েছিল। কি এমন কথা যা তখন বলা গেল না, বলতে এখানে আসতে হল। আর আসলই যখন তখন না বলে এভাবে…। নাহ মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। এই পরিস্থিতিতে মাথা এমনিতেও কাজ করছে না। এসব নিয়ে ভাবতে হলে সবার আগে এখান থেকে বেরোনো দরকার।
— টিকিটের কোন ব্যাবস্থা করা যাবে?
— ইনফ্যাক্ট আমি দুটো টিকিট বুক করেও রেখেছি। বিকেলে ফ্লাইট। কনফার্ম করে দিব?
— দিন।
— ঠিক আছে ম্যাডাম। আর কিছু?
— হাতে তো ঘণ্টা পাঁচেক সময়, কাছেপিঠে ঘুরতে যাওয়ার মত আর কি আছে?



প্লেন ঘণ্টা খানেক দেরি হবে। আকাশের অবস্থা নাকি ভাল না। এখন এয়ারপোর্টে বসে থাকা ছাড়া আপাততঃ কিছু করার নাই। বাংলাদেশের সাথে কোন এক দেশের ক্রিকেট খেলা চলছে। লাউঞ্জের টিভিতে তাই খেলার চ্যানেল চলছে। আপাততঃ রক্ষা। যেভাবে ছবি প্রচার হয়েছে, রাস্তা ঘাটে এখন আর কারো চিনতে বাকী থাকবে না।
— কি চিন্তা করছ?
অনেকক্ষণ থেকেই মাকে লক্ষ্য করছে ঈশিতা। বেশ আনমনা। পুলিশ যখন ওদেরকে ডিটেইন করে, তখনও মা বেশ শান্ত ছিল। সকালে ম্যানেজার সাহেবের সাথে কথার পর থেকে মায়ের চেহারায় চিন্তার ছাপ সেঁটে গেছে। বুদ্ধিস্ট টেম্পলগুলো ঘোরা হল, কিন্তু মা আদৌ কিছু লক্ষ্য করেছে বলে তো মনে হয়নি। সারাক্ষণ শুধু ভেবেছে। কিছু জিজ্ঞেস করলেই, একটা ফ্যাকাসে হাসি দিয়েছে। ইনাম সাহেব কেন দেখা করতে এসেছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত মা স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না।
— ভাবছি ঢাকায় যাওয়ার পরে তো মিডিয়া ছেঁকে ধরবে।
— কি করবে? দেশে থাকবে? না ফিরে যাবে?
— ভাবছি ইনামের শেষকৃত্যে থাকব।
অবাক হল না ঈশিতা। এমনকি ইনাম সাহেবের সাথে কদিন হানিমুন করলেও অবাক হত না। মা এমনই। নিজের ইচ্ছায় চলা টাইপ। কে কি ভাবল, তা নিয়ে ভেবে নিজের জীবন নষ্ট করতে রাজি না। পাঁচটা বিয়ে হওয়ার পরে হেন গালি নাই, যা মা কে শুনতে হয়নি। পুরুষদের জন্য গালি বলতে তো সে পুরুষের মা বা বোনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ইঙ্গিত। এমনটা জানালেই তা পুরুষের জন্য গালি হয়ে যায়। আর মেয়েদের জন্য তো ভাণ্ডার আরই কম। ঘুরে ফিরে একটাই, পতিতা কিংবা তার দেশি কোন প্রতিশব্দ। পতিতা মানে কি, ওয়ান টাইপ অফ পলিগ্যামি, বাট অর্থের বিনিময়ে, এই তো? যদি কোন মেয়ের টাকার চাহিদা না থাকে? যদি মেয়েটা নিজেই চায়? পলিগ্যামি ছেলেরা করলে, নিজের ইচ্ছায় আর মেয়েরা করলে অর্থের লোভে?
— কি ভাবছিস?
— এতো কিছুর পরেও তুমি যাবে?
— সেজন্যই তো যাব। ও আমার সাথে দেখা করতে এখানে আসল, আর আমি ওকে শেষবারের মত দেখব না?
— সবাই কিন্তু তোমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।
— সেসব ফেস করার অভ্যাস আমার আছে। ভাবছি আমাকে কি বলতে চেয়েছিল?
ভাবনাটা ঈশিতার মাথাতেও এসেছিল। জাস্ট দেখা করা? কক্সবাজারের সৈকতে দুজনে হাত ধরাধরি করে হাঁটা? মাকে যতটা চিনেছে, ইনাম সাহেব চাইলে এমনটা হয়তো মা করতেন। হয়তো এক রুমে দুরাত থাকতেনও। কিন্তু সেটাই কি কারণ? জানবার কি কোন উপায় আছে?
— উনার কোন ক্লোজ ফ্রেন্ড? মানে যাকে উনি সবকিছু বলেন।
— ক্লোজ বলতে উনার স্ত্রী। ওকে সবকিছু বলে। বাট…
মনে ঘুরঘুর করা কথাটা বলেই ফেলল ঈশিতা।
— পুরনো প্রেম জেগে উঠেছিল বলছো?
— সেটাতেও মন সায় দিচ্ছে না।
হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ঈশিতার মনে আসল। কোন কিছু চিন্তা না করে বলে ফেলল
— আমার সাথে দেখা করতে আসতে পারেন না?
— একথা কেন মনে আসল?
— মে বি অ্যা পসিবিলিটি, উনি হয়তো আমাকে উনার মেয়ে ভাবছেন।
মাকে কেমন চিন্তিত মনে হল। আমার জন্মের পরে ইনাম সাহেব অনেকভাবেই জানতে চেয়েছেন, আমি উনার মেয়ে কি না। উল্টোভাবেও জানাতে বলেছেন। ‘অন্ততঃ এটা বল, ঈশিতা আমার মেয়ে না।’ মা সেটাও বলেননি। ব্যাপারটা এমন যে ঈশিতাও কখনো জানোতে চায়নি। সাসপেন্সটা ঈশিতা কেমন যেন এঞ্জয় করত? না মায়ের শিক্ষা? যদিও তার ধারণা কবি ইলিয়াস আর ইনাম সাহেবের মধ্যে কেউ একজন হবে। আজ দুজনেই মৃত। মাও নিজে থেকে না বললে জানবার আর কোন সম্ভাবনা নেই। হয়তো এই সাসপেন্স নিয়েই তাঁকে সারা জীবন চলতে হবে।
— আনলাইকলি। দুদিন পরে তো ফিরছিলামই। তোমাকে দেখতে চাইলে তখন দেখতে পারত।
— একসঙ্গে সমুদ্র দেখার শখ হতে পারে না?
— তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
— উনাকে আমার বাবা মনে হয় কি না?
— না, তোর বাবা সম্পর্কে তুই যে কোনদিন জানতে চাসনি, সেটা কেন? আমি কষ্ট পাব বলে? না তোর ইচ্ছে হয়নি?
প্রশ্নটা নিয়ে ঈশিতা নিজেও ভেবেছে। যে মা কারো সাহায্য ছাড়া, একাই তাঁকে আগলে রেখেছে, তার কথা না ভেবে একজন জৈবিক সাহায্যকারীর পরিচয় মুখ্য হয়ে ওঠাটাকে সে নিজেও মানতে পারছিল না। অনেকটা জোর করেই সে প্রশ্নটা মনে আসতে দেয়নি। কিন্তু সত্যিই কি সে জানতে চায় না? একটা বাবা টাইপ মানুষের সান্নিধ্য কি সে চায়নি? কেবল ভ্রূণ তৈরির হেল্পার ছাড়া কি মানুষটার আর কোন ভূমিকা থাকত না তাঁর জীবনে?
— কিছু বলছিস না যে?
— ভাবছি
— কি ভাবছিস?
— বাবা কি শুধু ফিজিক্যাল একটা ব্যাপার? না ইমোশনাল ব্যাপারও থাকে?


প্লেনে বিশেষ কথা হল না ঈশিতা আর রেহানার। ঢাকায় ফিরে কি কি হতে পারে তার একটা খসড়া মনে মনে করে ফেলল রেহানা। ইন্টারভিউ দেবে, না প্রেস কনফারেন্স করবে সেটা ঠিক করে উঠতে পারছে না। কলামও লেখা যায়। ঈশিতাকে এসবের বাইরে রাখতে চাইছে। কিন্তু মিডিয়া সম্ভবতঃ তেমনটা হতে দেবে না। কাহিনী কতটা নোংরা করবে নির্ভর করছে খবরের কাটতির ওপর। আপাতত সবচেয়ে খারাপটা ভেবেই চলতে চাইছে রেহানা।
মেয়েটাকে নিয়েও ভাবনা হচ্ছে। উদারমনা হতে যা দরকার সবটাই ঢেলে দিয়েছে ওর জন্য। মনে কোন কুসংস্কার কখনও ঢুকতে দেয়নি। স্বাধীনচেতা করেই গড়ে তুলেছে ওকে। কারো পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে নিজে কিছু একটা হওয়ার জন্য সবসময় উৎসাহিত করেছে। লেখালেখি ইদানীং শুরু করেছে। খারাপ লেখে না। ইনাম দুএকটা লেখা পড়ে বেশ প্রশংসা করেছে। মাঝে মাঝে কবিতাও লেখে।
আত্মজীবনীতে ইনামের সাথে বিচ্ছেদের বেশ বিস্তারিত বিবরণই আছে। কিভাবে দারুণ প্রগতিশীল একটা মানুষ বিয়ের পরে পাল্টে গেল, সারাক্ষণ নারী মুক্তির কথা বলা মানুষটা নিজের স্ত্রীকে কিভাবে সম্পত্তি হিসেবে ট্রিট করা শুরু করল, বিভিন্ন ঘটনা দিয়ে তার বর্ণনা সে দিয়েছে। পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করল যখন গর্ভবতী হওয়ার পরে সে অনাগত সন্তানটিকে অনাহুত ঘোষণা করে। পিতৃত্বের জন্য সে এখন প্রস্তুত না এমন সব অজুহাতে সন্তানটিকে নষ্ট করতে চাইল।
কারণ যাই বলুক, সে আসলে সন্তানটির পিতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠেছিল।
— খালামনি কি গাড়ী পাঠাবে?
ঈশিতার কথায় সম্বিত ফিরে পায় রেহানা। প্লেন ল্যান্ড করে গেছে। যাত্রীরা নামতে শুরু করেছে। প্লেনে ওঠার পরে মোবাইল ফোনটা বন্ধ রেখেছিল। রেহানা সেটা অন করল। মালার গাড়ী পাঠানোর কথা। সময়ও জানে। শুধু ড্রাইভারের নম্বরটা জানা নেই। মালাকে ফোন করতে যাবে এমন সময় ফোনটা আসল। নম্বরটা অপরিচিত।
—হ্যালো
— মিস রেহানা, আমি নওশাদ বলছি, এস পি, ডিটেকটিভ ব্র্যাঞ্চ। একটু কথা বলা যাবে?
— জ্বি বলুন।
— ইনাম সাহেবের বিলঙ্গিংসের ভেতর একটা খাম ছিল। সেটায় আপনার নাম লেখা।
— আমার নাম?
— ইয়েস, আমাদের ধারণা সেটায় কোন ক্লু থাকতে পারে, কেন উনি কক্সবাজার গিয়েছিলেন।
— আপনারা এখনও ব্যাপারটাকে স্বাভাবিক ভাবছেন না?
— আমরা আসলে সব পসিবিলিটি মাথায় রেখেই এগোতে চাইছি।
— আমাকে কি করতে হবে?
— চিঠিটা আমি আপনার বাসায় নিয়ে আসছি। শুধু একটা রিকুয়েস্ট।
— কি সেটা?
— চিঠিটা আমাদের সামনে খুলবেন। চিঠিটায় তেমন সাস্পিসাস কিছু পেলে আমাদের জানাবেন।
— ওকে। আমাদের প্লেন কেবল ল্যান্ড করল। আপনি বরং আমার বোনের মালিবাগের বাসায় চলে আসুন। আমরাও রওয়ানা দিচ্ছি।
— ওকে ম্যাডাম।
ফোনটা রেখে সে আড়চোখে একবার ঈশিতার দিকে তাকাল। মেয়েটা মন হয় ওদিকের কথাও কিছুটা শুনেছে। তেমন কিছু জানতে চাইল না। রেহানাও আর কিছু বলল না। গাড়ী নিয়ে তেমন কোন সমস্যা হল না। ড্রাইভারের কাছে ওদের ফোন নম্বর ছিল, সে ফোন করে তাঁদের অবস্থান জেনে নিল।
গাড়ীতে উঠে আবার চিন্তায় ডুবে গেল রেহানা। কি লেখা আছে চিঠিতে? ওটা চিঠি? না খামের ভেতরে অন্য কিছু আছে? ইনামকে নিয়ে মনের কোণে ছড়িয়ে থাকা স্মৃতিগুলো হাতড়াল। তেমন কিছু কি পাওনা ছিল ওর কাছে? ডিভোর্সটা ফর্মালি নেয়া হয়নি। সেটা আজ আর জরুরী না। কিছু ক্ষতিপূরণ হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু তার আর কোন দরকার এখন নেই।
— পুলিশ কেন ফোন করেছিল?
মানে ঈশিতা পুরোটা শোনেনি। শুধু বুঝতে পেরেছে ফোনটা পুলিশের।
— ইনাম আমার নামে একটা খাম রেখে গেছে।
— হোয়াট?
এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে ছিল রেহানা। মেয়ের এই রিয়াকশানে উঠে বসল। ও কি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হতে শূরু করেছে? এতো টিভি রিপোর্টিং, এতো স্ক্যান্ডালাস কথাবার্তা কি ওর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে? মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে? মেয়ের দিকে গভীরভাবে তাকাল।
— ডিপ্রেসড লাগছে?
ঈশিতা কেমন ভাবলেশহীন ভাবে মায়ের দিকে তাকাল। মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবে।
— কি হয়েছে?
— জানি না। এই ব্যাপারটা আর সহ্য করতে পারছি না।
মেয়েকে কাছে টেনে নিলেন। মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন
— জীবন তোমার ইচ্ছেমত চলবে না, ধাক্কা আসবেই। তোমাকে ঠিক করতে হবে, তুমি এর মোকাবেলা করবে, না আর পারছি না বলে হার মেনে নেবে।


— খ্যামটা আমরা ইচ্ছে করেই খুলিনি।
— খুললে আপত্তি করতাম না।
— আসলে, হোটেলের ম্যানেজার বেশ কিছু তথ্য জানায় আমাদের, সেকারণেই আপনার ওপর প্রথমটায় আমাদের সন্দেহ যায়।
— এখন সন্দেহ আর নেই বলছেন?
— না, নেই। উনার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।
— সেখানেও তো আমাকে দায়ী করা যায়। আমার অত্যাচারে অতিস্ট হয়ে উনি হার্ট অ্যাটাক করেন।
— আমাদের অবস্থাটাও বোঝার চেষ্টা করুন। এমন প্রমিনেন্ট একজন ফিগার, এমনভাবে মারা গেলেন, পুরো প্রেস আমাদের সামলাতে হচ্ছে। আর প্রেস মানে তো বোঝেনই।
এমন সময় ঈশিতা লেটার ওপেনারটা নিয়ে আসল। সেটা দিয়ে খামটা খুলল রেহানা। ভেতরে একটা মেডিকেল রিপোর্ট। সেটার দিকে তাকিয়ে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গেল রেহানার। কেন এভাবে লুকিয়ে কক্সবাজারে এসেছিল ইনাম। কেন তাকে আগে থেকে ওর আসার খবরটা জানায়নি।
— আমাদের কাজে লাগবার মত কিছু কি আছে?
এসপির দিকে তাকাল। মাথা নেড়ে জানাল, না।
— এটা একটা মেডিকেল রিপোর্ট।
— কোন অসুখ বিসুখের?
— না।
— ওকে, আমি আসি তাহলে।
—আসুন।
রেহানা সোফায় বসে আছে দেখে ঈশিতা এসপি সাহেবকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল। ফিরে এসে দেখল মা তখনও রিপোর্টটার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে পানি টলটল করছে। জীবনে প্রথমবারে মত মাকে কাঁদতে দেখছে। ঈশিতা ধীর ধীরে মায়ে পাশে বসল। হাত থেকে রিপোর্টটা নিল। এরপরে মায়ের দিকে আবার তাকাল। মা নিজেকে সামলে নিয়েছেন। আস্তে করে একটা হাত ঈশিতার হাতের ওপর রাখলেন। এরপরে নিজের মনেই বলতে লাগলেন
— সেদিন হঠাৎ করেই ইলিয়াস আমার অফিসে এসে হাজির হয়। অনুনয় শুরু করে। বলে ইনামকে ছেড়ে দিতে। আবার ওর কাছে ফিরে যেতে। আমি ইলিয়াসকে বারণ করি। ও শোনে না। এরপরে জোর করে আমাকে ওর বাসায় নিয়ে যায়। আমারও যে একেবার ইচ্ছে ছিল না, তা না। আমিও কেমন যেন দুর্বল হয়ে যাই। ওখানে গিয়ে ও আমাকে নিয়ে লেখা ওর নতুন কবিতাগুলো আমাকে দেখায়। এরপরে… উই ডিড ইট।
ঈশিতা অবাক হয়ে মায়ের এই নতুন চেহারা দেখতে থাকে।
— ব্যাপারটা এনাম জানতে পারে। সেজন্যই আমি যখন প্রেগন্যান্ট হই, ও এই সন্তানকে চায়নি। সন্দেহ করেছিল। আমার জন্য তুমি ছিলে, আমার সন্তান। বাবা কে, তা আমার জন্য জরুরী কিছু ছিল না। আমার সন্তান শুধু একটা সন্দেহের কারণে বলি হবে, ব্যাপারটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। তাই জেদ করেই সম্পর্কটা শেষ করে দিই। কথাগুলো পুরোটা আমার আত্মজীবনীতে লিখিনি। হয়তো নিজেকে পুরোটা প্রকাশ করবার সাহস ছিল না। কিংবা হয়তো পুরোপুরি সততা দেখাবার মত মানুষই আমি না।
ঈশিতা মাকে জড়িয়ে ধরল। রেহানা বলে চলল
— তোকে যে এতদিন তোর বাবার পরিচয় দিইনি, তার কারণ আমি নিজেই জানতাম না, কে তোর বাবা। সেদিনের সেই ঘটনার পরে আমি নিজেও কনফিউজড ছিলাম। তখন ভেবেছিলাম, সেদিনের ঘটনাটা ইনাম জানতে পারবে না, আর সব কিছু থেমে যাবে। বাট টা হয়নি। ও ব্যাপারটা জানতে পারে। আমি যেন কিছু না বুঝতে পারি, তাই পিতৃত্বের জন্য রাজী না টাইপ এক্সকিউজ দিতে থাকে। অ্যাবরশানের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু আমি ততক্ষণে তোর প্রেমে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই ব্যাপারটায় রাজী হইনি বরং সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।
ঈশিতা শুনে যায়

— একসময় সে ব্যাপারটা মেনে নিতেও চেয়েছিল। কিন্তু আমি জানি, সেদিনের ঘটনা ও ভুলত না। ভুলেওনি। এই সন্তানকেও হয়তো সে মেনে নিত, কিন্তু পিতৃত্ব সম্পর্কে জানবার ইচ্ছে তার থামত না। শিওর হওয়ার জন্য যে কোন কিছুই সে করত। সেটাই ও সেদিন করে। ওর বাড়িতে আমাদের দাওয়াত দিয়েছিল, তোর স্যাম্পল নেয়ার জন্য। আর সেটা টেস্ট করে রিপোর্টটা পেয়েই ও সোজা আসে আমাদের সাথে দেখা করতে।
— কি আছে রিপোর্টে?
— তোমার পিতৃ পরিচয়। জানতে চাও?


—শেষ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:২০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম পিতৃপরিচয়হীন হিসেবেই ছেড়ে দিলেন !!!!

তবুও কি শিক্ষা হয়? হবে?
পিতৃত্ব কেবলই একটা জৈবিক সহকারীর ভূমিকা নয়! এটাও একটা অনুভব !
গভীর বোধের, চেতনার, ভালবাসার!

ভোগবাদী চেতনায় কেবলই ভোগের দুর্বল যুক্তির পরিণতি এমনই হয় বুঝি!

++++

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৪৪

সোহানী বলেছেন: খুব ভালোলাগলো। হয়তো কারো ছায়া আছে গল্পে তারপরও সব চরিত্রের সঠিকভাবে বিশ্লেষন লিখাটিকে সত্যের কাছাকাছি নিয়ে গেছে....

১২ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৫৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.