নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডানা কাটা পরী

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৩


— দেখেছিস?
— ইয়েস।
— গায়ের রং দেখেছিস?
— ইয়েস
— কি বলব খুঁজে পাচ্ছি না।
— একদম ডানা কাটা পরী
কথোপকথনটা আমার আর ফরহাদের মধ্যে হচ্ছে। যাকে নিয়ে হচ্ছে সে অপরূপাটি বসে আছে আমাদের পাশের সিটে। পাশে বলতে ঠিক পাশে না, অন্য পাশের যে সিট তার একটাতে। বাসটায় দুই কলাম সিট আর প্রতিটা রো’তে তিনটে সিট। মাঝখানে প্যাসেজ। প্যাসেজের একদিকে দুটো সিট অন্যদিকে একটি। নতুন স্ক্যানিয়া এসি বাসগুলোতে সিট অ্যারেঞ্জমেন্টটা এরকম। প্রতিটা সারিতে একটা সিট কম থাকায় ভাড়া খানিকটা বেশি। মাঝে স্পেস অনেকটাই বেশি আর সারির সংখ্যা কম, ফলে পায়ের সামনে বেশ অনেকটাই জায়গা। আর আমরা যাচ্ছি সিলেট।
মেয়েটা ঢাকা থেকেই উঠেছে। এমন সুন্দরী সত্যিই আমি কখনও দেখিনি। শুধু আমি না, বাসের অনেকেই মেয়েটার দিকে স্টেয়ার করছে। পুরুষরা তো বটেই, অনেক মেয়েও চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। ‘কি স্কিন? একদম মাখনের মত, না?’ আমার সামনের সিটে বসা দম্পতির রমণী অংশটি মন্তব্য করলেন। স্বামীটি করলে মনে হয় এতক্ষণে কড়া একটা ঝাড়ি খেতেন। গাড়িতে ব্যাচেলার আর কে কে আছে জানি না, তবে আমরা দুজন শুদ্ধ ব্যাচেলার। শুদ্ধ মানে হচ্ছে, গার্লফ্রেন্ডও নেই। সো, সুন্দরী নারী দেখে মনে মনে প্রেমে পড়া, এখনও গর্হিত অন্যায়ের ভেতরে পড়ে না। সেই কাজটাই করছিলাম এতক্ষণ।
আমি বসেছি জানালার পাশের সিটে, সো সরাসরি দেখতে পারছি না, ফরহাদকে টপকে, ঝুঁকে আমাকে দেখতে হচ্ছে মেয়েটাকে। বার কয়েক দেখলামও। ওভাবে দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে দেখা আপাততঃ বন্ধ রেখেছি। ফরহাদ চালিয়ে যাচ্ছে। আমি দেখছি না দেখে ফরহাদ ভাবল আমাকে ব্যাপারটা ইনফরম করা দরকার। সেকারণেই জানাল, পাশের সিটে এক অপরূপা বসে আছে। আমি তখন নেটে। ফেসবুকিং করছি আর অপেক্ষায় আছি কখন খাবারের বিরতি হয়। বাড় কয়েক ঘড়ি দেখলাম। পাঁচ ঘণ্টা জার্নির দুই ঘণ্টার মাথায় সাধারনতঃ খাবার বিরতি হয়। ঘণ্টা দেড়েক পার হয়েছে। আর আধ ঘণ্টা খানেক। তারপরই…। তখন ফরহাদের সিটে বসব। ব্যাপারটা ফরহাদ আঁচ করেছে। বলল
— তুই যদি ভেবে থাকিস ফুড ভিলেজের পরে সিট চেঞ্জ করবি, ভুলে যা
— তুই একাই দেখবি?
— ব্যাড লাক ডুড। উইন্ডো সিটে বসার আবদার তোমার ছিল। এখন কপাল চাপড়া।
— কিছুক্ষণ দিস।
— নো ওয়ে। নট ফর অ্যা সিঙ্গেল মোমেন্ট।
কথা আমার সাথে বলছে, বাট তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। মেয়েটাও একমনে রাস্তা দেখছে। আমরা যে হা করে তাকিয়ে আছি, তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ নাই।
— একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছিস? মেয়েটা একা।
— কিভাবে বুঝলি?
— টিকিট চেকার যখন আসল, মেয়েটাই টিকিট দেখাল।
— তো?
— ইজ দ্যাট নরমাল? কখনো দেখেছিস, ফ্যামিলি নিয়ে বের হলে ফিমেল প্যাসেঞ্জারের কাছে টিকিট থাকে।
এতক্ষণ ধরে মেয়াটাকে স্টেয়ার করলেও, মেয়েটা একা হতে পারে এমনটা একেবারেই ভাবিনি। ভেবেছিলাম ফ্যামিলির বাকই মেম্বার হয়তো অন্য কোন সিটে আছে। ফরহাদ ব্যাপারটা লক্ষ্য করাতে ব্যাপারটা প্রথমবারের মত খেয়াল করলাম। আশেপাশে তাকিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম, কেউ কি ফ্যামিলি মেম্বারের দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে? মনে হল না। সব দৃষ্টিই, আমাদের টাইপ-- চোখ দিয়ে গেলা।
— তাহলে?
— তাহলে মানে?
— মানে মেয়েটার সাথে আলাপের চেষ্টা নেয়া যায়?
ফরহাদের অনেক সাহস। মেয়েদের সাথে আলাপও জমাতে পারে ভাল। প্রচুর জায়গা সম্পর্কে জানে আর দেশের বহু জায়গায় রয়েছে ওর আত্মীয়। দেখা যাবে, বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করার কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটার সাথে দারুণ একটা সম্পর্ক আবিষ্কার করে ফেলেছে। লয়টায় পাতায় তার মামাতো বোনের বান্ধবী টাইপ কিছু একটা। কাজটা এতক্ষণ শুরু করেনি, কারণ ও ধরে নিয়েছিল সাথে ফ্যামিলি আছে। এখন যখন বুঝে গেল, মেয়েটা একা, ওকে আর আটকানো যাবে না। চোখের ইশারায় জানতে চাইলাম, ‘কখন?’
এমন সময় বাসের সুপারভাইজার জানালেন, এখন বিশ মিনিটের যাত্রা বিরতি।


বাসে উঠলেই আমি একটা টেনশানে থাকি। হিসু। সো, এসব যাত্রাবিরতিতে খাওয়া দাওয়া সারি আর না সারি, টয়লেটে অবশ্যই যাই। বাসের বাকই জনতার সাথে আমিও নেমে গেলাম। ফরহাদ তখনও বাসে বসে আছে। ওর হাবভাবে মনে হচ্ছে মেয়েটা যদি না নামে, সে ও নামবে না। আমি নেমে দ্রুত আমার গন্তব্যের দিকে এগোলাম। দ্রুত কাজটা সারতে চেষ্টা করলাম, হল না। রাজ্যের পানি যেন আমার শরীর থেকে বেরোনো শুরু করল। এরপরে যত দ্রুত সম্ভব ওখান থেক বেরিয়ে খাবারের এলাকায় আসলাম। সন্ধানী চোখদুটোতে রাডার ফিট করে খুঁজতে শুরু করলাম। যদিও আমার খোঁজা উচিত ফরহাদকে, কিন্তু আসলে খুঁজছি মেয়েটাকে। কিংবা হয়তো দুজনকে একত্রে। এতক্ষণে কি আলাপ শুরু করে ফেলেছে? কতদূর এগোল। কি কি জানতে পারল? নাকি কিছুই হয়নি? আমার চোখ তখনও ওদেরকে খুঁজছে। পেলাম না।
তাহলে কি বাস থেকে নামেনি? এই এসি বাসগুলো আবার যাত্রী নাম্বার পরে লক করে দেয়। সো কেউ যদি ভেতরে থাকে আগামী বিশ মিনিট ভেতরেই থাকবে। ওরা দুজনই কি ভেতরে? ইস, মিসড দ্যা অপারচুনিটি। কেন যে নামলাম? গাড়ীটা খুঁজতে লাগলাম। যেখানে নামিয়েছিল, সেখানে নেই। অনেক সময় গাড়ির ভিড় বেশি হলে আশেপাশেই, একটু এদিক ওদিক পার্ক করে। বাস আজকে অনেকগুলো দাঁড়িয়ে আছে। আমাদেরটা যেহেতু আলাদা চেহারার, তাই চোখে পড়ার কথা। কোথায় গেল?
এমন সময় বাসটা নজরে পড়ল। বের হওয়ার সুবিধার জন্য ড্রাইভার বুদ্ধি করে রাস্তার পাশে রেখেছে। যেখানে নামিয়ে দিয়েছিল, তার থেকে অনেকটা পেছনে। দ্রুত বাসের দিকে এগিয়ে গেলাম। যা ভেবেছি, ঠিক তাই। নামেনি। এবং যথারীতি গল্প জুড়ে দিয়েছে। আমাকে যেন দেখতে পায় তেমন দূরত্বে দাঁড়িয়ে হাত নাড়লাম। একবার মনে হয় দেখতে পেল, কিন্তু প্রত্যুত্তর দিল না। কোন ইশারাও করল না। না করারই কথা। ওর জায়গায় আমি থাকলে, আমিও তাই করতাম। শালাকে হিংসে হচ্ছে এখন। ফোন করব? করা তো যায়ই, বাট ধরবে?
এমন সময় কাঁধে একটা হাত পড়ল। ঘুরে দেখি শিবলি। আমাদের সাথেই পড়ে। সিলেট মেডিকেল কলেজে। ছুটি শেষে সে ও ফিরছে। অনেকে অবশ্য গতকালই ফিরেছে। আমরা কজন ব্যাকবেঞ্চার গ্রুপ একটু পড়ে আসছি। প্রক্সি দেয়ার লোক সেট করা আছে, সো পারসেন্টেজ নিয়ে সমস্যা হবে না। শিবলি গল্প শুরু করবার পাঁয়তারা করছিল, আমি থামালাম। মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে। বললাম
— ফোনটা একটু দিস তো দোস্ত।
ফোনটা এগিয়ে দিল। আমার মোবাইল থেকে ফরহাদের নম্বরটা দেখে টুকে নিলাম। শিবলি বেশ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল আমার দিকে। তাই না চাইতেও ব্যাখ্যা দিলাম
— ব্যালেন্স শেষ দোস্ত।
রিং বাজছে। শিবলি ঠিক আমাদের ফ্রেন্ড গ্রুপের না। ওর নাম্বার ফরহাদের কাছে না থাকারই কথা। আননোন নম্বর দেখেই বোধহয় ফোনটা ধরল।
— শালা, ফোন ধরছিস না কেন?
— তুই? এরপরে ফিসফিস করে বলল 'ডিস্টার্ব করিস না।’
— কতদূর এগোলি?
— অলমোস্ট দেয়ার।
এরপরে লাইন কেটে দিল। দূর থেকে দেখছি হাত পা নেড়ে বেশ আনন্দের সাথে কিছু একটা বোঝাচ্ছে মেয়েটাকে। মেয়েটাও ওর কথায় দারুণ হাসির কিছু খুঁজে পেয়ে খিলখিল করে হাসছে।


হোস্টেলে রুমে পৌঁছতে বিকেল চারটা বেজে গেল। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে রুমে এসে ঢুকলাম। ফরহাদ আসেনি। ওর বোঁচকা আমার ওপরে চালান করে দিয়েছে। আমার হাতে ওর ব্যাগের ট্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বলল
— রুমে রেখে দিস।
আমিও বন্ধুর নির্দেশ মত ওর বোঁচকা এবং আমার ব্যাগ নিয়ে টলমল করতে করতে রুমে এসে পৌঁছলাম। নিচে দারোয়ান ছিল না, তাই দুটো ব্যাগই আমাকে টানতে হল। রাগে গা জ্বলে যাওয়া বলতে যা বোঝায়, এই মুহূর্তে আমার অনুভূতি অনেকটা তেমনই। খেতে যেতে ইচ্ছে করছে না। আজকে ডাইনিং হবে না, সামনের হোটেলে যেতে হবে। অবশ্য ফোন করে দিলে রুমে দিয়ে যাবে। ও নো, ফোন ও তো করতে পারছি না। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। রুম হাতড়াতে শুরু করলাম। বিছানার নিচে একটা টিনে আছে, যেটা হচ্ছে আমাদের ইমাজেন্সি ফুড ব্যাঙ্ক।
টিনটা বের করলাম। হাতে নিয়ে মনে হল ভেতরে কিছু আছে। টোস্ট টাইপ কিছু হলেও আমার চলবে। টিন খুলে বেশ অবাক হলাম। টোস্ট বিস্কুটে ভর্তি। কে আনল? এই রুম আমাদের তিনজনের। অন্য রুমমেট মনে হচ্ছে এখনও আসেনি। বিছানা ওলটানো। কে আনল তাহলে? ছুটির আগে কি কিনে রেখে গিয়েছিল কেউ? তাহলে তো নেতিয়ে গেছে। একটা হাতে নিলাম। টিপে দেখলাম, ভালোই তো আছে। কামড় দিলাম। এ তো টাটকা। মনে হচ্ছে আজকেই কেনা। বিছানায় হেলান দিয়ে খেতে শুরু করলাম আর সাথে চলতে থাকল আজকের সারাদিনের স্মৃতি রোমন্থন।
ফুড ভিলেজে খাবার বিরতি শেষ হওয়ার পরে বেশ অনেকগুলো ঘটনা ঘটল। শুরু থেকেই বলি।
নিজের সিটে বসতে বসতে বেশ কড়া চোখে ফরহাদের দিকে তাকালাম। ওর ঠোঁটে তখন বিজয়ীর হাসি। মেজাজটা গরম হচ্ছে। নিজের ওপর, না ফরহাদের ওপর, বুঝতে পারছি না। সিটে বসে আবার মেয়েটার দিকে তাকালাম। মেয়েটা আবার জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে। ঢং। এতক্ষণ তো ঠিকই ফরহাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলি, এখন আবার লজ্জাবতী সাজার কি আছে? এদিকে ফরহাদও নতুন ঢং শুরু করেছে। সিট হেলিয়ে দিয়ে ঘুমের অ্যাক্টিং করছে। মেজাজ আরও এক দফা চড়ে গেল। সিটে বসে কনুয়ের গুঁতো দিয়ে ফরহাদকে জাগালাম। ‘ইউ মিসড ইট’ টাইপ একটা দৃষ্টি দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করল।
— এতো মুড মারছিস কেন?
— বিকজ আই হিট দ্যা জ্যাকপট।
— প্রেমে পড়ে গেছে?
— যাবে। ঠিকানা পেয়ে গেছি
— মানে?
— মানে ম্যাডাম সিলেট পর্যন্ত যাচ্ছেন না, তার আগেই নামবেন।
— কোথায়?
— কোন এক অচিন্তপুর।
— অচিন্তপুরটা আবার কোথায়?
— সেটা তো জানা জরুরী না, ওকে পৌঁছে দিতে আমিও সঙ্গে যাব, এটাই জরুরী
— আর তোর ব্যাগ?
— আমার রুমমেট নিয়ে যাবে।
বলে আমার দিকে আড়চোখে তাকাল। হিংসে হলেও মনে মনে মেনে নিলাম, আসলেই জ্যাকপট হাঁকিয়েছে। প্রেম করতে পারলে আর ওকে পায় কে? মানিব্যাগ থেকে ওর টিকেট আর লকারের ট্যাগটা আমাকে দিল। ওর হাত থেকে ট্যাগটা নিতে নিতে বললাম,
— একটা শর্ত আছে
— নো ঝামেলা প্লিজ।
— ভেবে দেখ। রাজী না হলে ব্যাগ টানতে টানতে মেয়েটার সাথে যেতে হবে।
— বলকই শর্ত
— খানিকক্ষণের জন্য ওখানে বসব।
খানিকক্ষণ ভেবে ফরহাদ শর্তটা মেনে নিল। মেয়েটাকে এবার আরেকটু কাছে থেকে দেখবার সুযোগ পেলাম। যাকে বলে ফর্সা। ফরেনারদের মত ফ্যাকাসে ফর্সা না। অনেকটা আরবের মেয়েদের মত। গোলাপি ঠোঁট। গালটাতেও লাল আভা। চুল তো যাকে বল ঘন কালো। স্ট্রেট। পার্লারে নিয়ে একটু কাটিং দিতে পারলে আর দেখতে হবে না, পাবলিক গোগ্রাসে গিলবে। পরনের পোশাকটাই বরং বেমানান লাগছে। খ্রিস্টানদের বিয়ের ড্রেসের মত। অনেকটা ল্যাহাঙ্গা টাইপ তবে সাদা। জার্নিতে কেউ সাদা ড্রেস পড়ে? পায়ে হিলও পড়েনি। কোথায় যেন একটা সিপ্লিসিটি আছে। খুব হাইফাই ফ্যামিলির মেয়ে? নাকি নতুন টাকা হয়েছে টাইপ ফ্যামিলির। এদিকে তো আবার সব লন্ডনি পয়সা। ফ্যামিলি হয়তো তেমন কিছু না, বাট পয়সা আছে।
— তোর মোবাইলটা দে তো?
— কেন?
— একটু গুগল ম্যাপ চেক করব।
— অচিন্তপুর?
— হু। এই রাস্তায় তো অনেকবার গেছি, অচিন্তপুরের নাম তো কখনো শুনিনি।
— সব গ্রামের নাম কি জানিস নাকি?
— বাট, নামটা তো কানে লাগার মত, একবার শুনলেও মনে থাকত।
— খারাপ বলিসনি।
গুগল ম্যাপে টাইপ করলাম। পেয়ে গেলাম। শায়েস্তাগঞ্জ থেকে একটু সামনে। হাতের বামে। আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ভালভাবে লক্ষ্য করল। ফরহাদের মোবাইলটা স্মার্টফোন না। অফার দিলাম
— চাইলে রাখতে পারিস। হেল্প হবে
ধন্যবাদ টাইপ একটা হাসি দিয়ে মোবাইলটা রেখে দিল। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় হাঁপিয়ে গেলাম। মেয়েটার বাবা মায়ের ভেতর নিশ্চিত কেউ একজন বিদেশি কিংবা আরব এলাকার। বাঙ্গালি মেয়ে এতো ফর্সা আগে কখনো দেখিনি। শুধু ফর্সা না, চেহারায় একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। মিষ্টি একটা ভাব। একবার তাকালে বারবার তাকাতে ইচ্ছে করে।
সুপারভাইজার জানান দিল, শায়েস্তাগঞ্জ এসে গেছে। কেউ নামতে ছায় কি না। ফরহাদ জানাল আরেকটু পরে সে নামবে। জায়গাটার নাম অচিন্তপুর। বাসের সুপারভাইজার ভ্রু কুচকাল। জানাল সে চেনে না। ফরহাদ তখন ফুল মুডে। জানাল সমস্যা নাই, সে চেনে। ওর চোখ তখন মোবাইলের স্ক্রিনে। গুগল ম্যাপ জানাচ্ছে প্রায় পৌঁছে গেছে। একসময় ফরহাদ সিদ্ধান্ত নিল, এখানে নামলেই হবে। সে ইশারায় সুপারভাইজারকে ডাকল
— আমি আর ম্যাডাম এখানেই নামব। উনার স্লিপটা নিয়ে লকারের মালপত্র গুলো একটু নামিয়ে দেন।
সুপারভাইজার মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেল। লকারের ট্যাগ চাইল।


দরজায় দুমদাম আওয়াজে ঘুম ভাঙল। একে তো জার্নির ধকল, তার ওপর পেট ভরে টোস্ট খাওয়া। সব কিছু মিলিত ইফেক্ট হল, দারুণ এক ভাতঘুম, না ভুল হল, টোস্ট ঘুম। এতো দারুণ টোস্ট বিস্কুট আমি জীবনে খাইনি। পেট টইটুম্বুর না হওয়া পর্যন্ত খেলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, টের পাইনি। দরজায় ধাক্কা শুনে হুরমুড়িয়ে উঠলাম। ঘর বেশ অন্ধকার। সময়টা বুঝতে পারছি না। জানালা দিয়ে হালকা আলো আসছে। তাতে পুরোপুরি বোঝা না গেলেও দরজাটা বোঝা যাচ্ছে। রুমের সবকিছু যেহেতু পরিচিত, তাই আন্দাজেই এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললাম।
— কি রে শালা, কতক্ষণ ধরে ধাক্কা দিচ্ছি। আমি তো দরজা ভাঙব চিন্তা করছিলাম।
— ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম
— তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
ফরহাদ নিজেই আলো জ্বালল। আমার মোবাইলটা আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
— হোয়াট অ্যান এক্সপেরিয়েন্স।
— মানে?
— ইউ কান্ট ইম্যাজিন।
— দুতরফা প্রেম? এতো জলদি?
ফরহাদ মিটিমিটি হাসছে। আমার সাসপেন্স বাড়াচ্ছে। বেশি জোরাজুরি করলে আরও দামা বাড়াবে। তাই উৎসাহ দেখানো বন্ধ করলাম।
— রাতে খাবি কি?
— একটু বস, গোসলটা সেরে নি।
ধীর ধীরে নিজের ব্যাগ খুলে গামছা, লুঙ্গি বের করতে শুরু করল। আমি জানি এখনই বলতে শুরু করবে। অপেক্ষায় আছি।
— মেয়েটা সম্পর্কে আনইউজুয়াল কিছু লক্ষ্য করেছিলি?
ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবলাম। মেয়েটার চেহারার দিকে তাকাতেই এতো ব্যস্ত ছিলাম যে আর কিছু লক্ষ্য করার কথা মাথায় আসেনি। খানিকক্ষণ ভেবে হার স্বীকার করলাম
— না। একটু বেশি সুন্দরী এই যা। আর সম্ভবতঃ ক্রস, মানে পুরো বাঙ্গালি না
— মেয়েটার সাথে কোন লাগেজ ছিল না, লক্ষ্য করেছিলি?
— হ্যাঁ। সুপারভাইজার যখন বলল লাগেজের ট্যাগ দেন, তখন বলল যে লকার ওর কোন মাল নেই।
— ব্যাপারটা আনইউজুয়াল না?
ব্যাপারটা তখন অবাক লেগেছিল, কিন্তু মাথায় আটকায়নি। জিজ্ঞাসার দৃষ্টি নিয়ে ফরহাদের দিকে তাকালাম।
— ইভেন মেয়েটার কাছে কোন ভ্যানিটি ব্যাগও ছিল না।
তাই তো। একটা রুমাল, ছোট্ট একটা আয়না, চিরুনি এসব ছাড়া কি মেয়েরা চলাফেরা করে? আচ্ছা এসবের ভেতরে কি কোন রহস্য আছে? মেয়েটা কি পালাচ্ছিল? কোথায় পালাচ্ছিল? বাসা ছেড়ে? না কোন বন্দী দশা থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় যাচ্ছিল? এবার আর নিজেকে আটকালাম না। ফরহাদের হাত থেকে গামছা কেড়ে নিলাম। ওকে ধরে বিছানায় বসালাম
— কি ব্যাপার। পুরা খুলে বল।
— সে নাহয় বলব। তার আগে তুই গেস কর। কি হতে পারে?
— মেয়েটা বাড়ি থেকে পালাচ্ছিল।
— তাহলে সাথে কিছু নেই কেন?
— সময় পায়নি।
— মেয়েটা ওরকম সাদা ল্যাহেঙ্গা টাইপ ড্রেস পড়েছিল কেন?
— পছন্দের ড্রেস, কিংবা হাতের কাছে যা পেয়েছে, পড়েছে।
ফরহাদ মিটিমিটি হাসছে। সাসপেন্স বাড়াচ্ছে। অপেক্ষা করে আছে কখন আমার ধৈর্য শেষ সীমায় পৌঁছায়। সত্যি বলতে কি আমি কেমন যেন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।
— তুই তোর ওয়াল্ডেস্ট ড্রিমেও ভাবতে পারবি না কি হয়েছে?
— মানে? একেবারে বিয়ে সেরে ফেলেছিস নাকি?
বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এরপরে আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বলতে লাগল।
— অচিন্ত্যপুর নামটা কোনদিন শুনিনি কেন জানিস? কারণ এমন কোন জায়গাই নাই।
— গুগল যে দেখাল?
— কারণ মেয়েটাই সেটা করিয়েছিল। ইভেন তোর ক্ষুধার জন্য বিছানার নিচের টিনে টোস্ট বিস্কুট রাখবার ব্যবস্থাও ও করেছিল।
— বলছিস কি?
— ইয়েস। যেখানে আমরা নামলাম সে জায়গাটার নাম বিশ্বনাথ না কি যেন। সেখানে নেমে মেয়েটা গুগল ম্যাপ দেখে দেখে হাঁটতে লাগল। সেখান থেকে কিছুদূর যাওয়ার পরেই আছে বিশাল এক পুরনো বটগাছ।
— চিনি জায়গাটা। সবাই বলে ভূত আছে নাকি ঐ বটগাছে। ওখান থেকে কোনদিকে গেলি?
— কোনদিকে না।
— বাট ওটা তো একটা মাঠের মধ্যে। আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই।
— বাড়িঘরে যাওয়ার জন্য তো আমরা ওখানে যাইনি।
— কি বলছিস আবোল তাবোল?
— মেয়েটাকে দেখে প্রথমে তুই কি কমেন্ট করেছিলি মনে আছে?
— দারুণ দেখতে টাইপ কিছু…
— না। বলেছিলি ডানা কাটা পরী।
— ও হ্যাঁ। মনে পড়েছে। বাট ওটা তো একটা বিশেষণ।
— বাট দ্যাট’স হোয়াট শী ইজ।
— মানে?
— ছোটবেলায় রূপকথায় পড়েছিলি না? পরীর দেশের রাজকন্যা, শাস্তি স্বরূপ পরীর রাজ্য থেকে যাকে বের করে দেয়া হয়।
— বলতে চাচ্ছিস মেয়েটা পরীর দেশের রাজকন্যা?
— ইয়েস। গাছের কাছে পৌঁছে মেয়েটা আমাকে ওর সব রহস্য জানায়। টিনে বিস্কুট রাখবার ঘটনাটাও।
— অসম্ভব
— এডজ্যাক্টলি এভাবেই আমি রিয়াক্ট করেছিলাম। তখন ও ওর পিঠের কাটা দাগটা দেখায়। যেখান ওর ডানা ছিল। যেটা শাস্তিস্বরূপ কেটে ফেলা হয়েছে।
— তুই নিজে দেখলি?
— ইয়েস।
— মানে…
— ইয়েস ডিয়ার। মানে তুই বিশেষণ হিসেবে যা বলেছিলি সেটাই সত্য। শী রিয়েলি ইজ অ্যা ডানা কাটা পরী।


--শেষ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৫১

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর। +++

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:১৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:১২

হাফিজ হুসাইন বলেছেন: ভালো হয়েছে

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:৪৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.