নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাই সেকেন্ড ম্যারেজ

১০ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৫



(পূর্ব প্রকাশিতের পর)



— চেঞ্জ করবে না?

নিবেদিতা। কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্য করিনি। আমি রুমের সাথে লাগোয়া ব্যালকনিতে এসেছিলাম। এটা আমাদের নিজেদের বাসা আর কলেজ লাইফ থেকেই এটা আমার নিজের রুম। রুমের সাথে লাগোয়া এই ব্যালকনিটা আমার বেশ ফেভারেট। ব্যাচেলর জীবনের বেশ অনেকটা সময়ই আমি এখানে কাটিয়েছি। খুব সুন্দর বাতাস আসে। এখনও সুযোগ পেলেই এখানে এসে দাঁড়াই। এখন অবশ্য এসেছিলাম ওকে মোবাইলে ব্যস্ত দেখে। সিগারেটটা কেবল ধরিয়েছি এমন সময় নিবেদিতা পাশে এসে দাঁড়াল। ওর দিকে একবার তাকালাম। এরমধ্যে নিবেদিতা শাড়ী ছেড়ে একটা নাইটি পড়েছে। মুখে সম্ভবতঃ ক্রিম ট্রিম কিছু মেখেছে। কেমন একটু ফর্সা দেখাচ্ছে। এমনিতে ওর গাইয়ের রং শ্যামলা, তবে চেহারাটা বেশ মিষ্টি। চেহারায় আরও কি যেন একটা আছে। ওটাকে কি বলা যায়? ঠিক কিশোরী টাইপের চঞ্চলতা ওটা না। কেমন যেন একটা প্রাণবন্ত ভাব ছিটকে বেরোচ্ছে। শুধু মানাচ্ছে না চুলগুলো। এই চেহারায় মাথার ওপর বসে থাকা বিদঘুটে খোপাটা কেমন বেমানান লাগছে।

— করব, এটা শেষ করেনি।

সিগারেটের দিকে ইশারা করলাম। উৎরে কিছু না বলে সিগারেটের দিকে কিছুক্ষণ তাকাল। ভাবলাম বোধহয় সিগারেট সম্বন্ধীয় উপদেশ দিবে। না, তেমন কিছু বলল না। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আমার মতই রাস্তা দেখতে লাগল। কিছু কি বলবে? না আমার মত ব্যলকনি উপভোগ করছে?

আমিও কথা খুঁজে পাচ্ছি না। একবার ওকে একবার রাস্তার দিকে দেখছি। কিছু একটা বলা উচিত, বাট মাথায় তেমন কিছু আসছে না। ফেসবুকে কি কি করল, জানতে চাইব? এমন সময় হঠাৎ নিবেদিতাই কথা বলল।

—ক্যান আই?

ইঙ্গিতটা সিগারেটের দিকে। ছোটখাট ধাক্কা নাম্বার টু। এবার কেন যেন মজা লাগল। ঠোঁটের কোনে স্মিত একটা নিয়ে সিগারেটটা এগিয়ে দিতে দিতে জানতে চাইলাম

— অভ্যাস আছে?

— একসময় ছিল।

ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসিটায় এখন কিছুটা ভাললাগা যুক্ত হয়েছে। ওর সিগারেট টানা দেখছিলাম। বোঝাই যাচ্ছে, নতুন, অ্যামেচার টাইপ না। আগে খেয়েছে এবং সম্ভবতঃ দেদারসে খেয়েছে। এই দৃশ্য দেখার পরে যে মধ্যম সাইজের ধাক্কাটা খাওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো খেলাম, তবে ব্যাথা পেয়াম না। মনে হচ্ছে হঠাৎ করে পুরো পরিস্থিতি উপভোগ করতে শুরু করেছি। অদ্ভুত লাগছে? আমার নিজেরও লাগছে। এতো কষ্ট করে ছুটি বাগিয়ে আমেরিকা থেকে এতদূর তো এসেছিলাম শুধু আধ হাত ঘোমটা টানা টিপিক্যাল বাঙ্গালি বউয়ের সন্ধানে। বোধহয় আমার মনের ভেতর একটাই ভয়ই শুধু কাজ করছিল, আবার যেন ছেড়ে না পালায়। অ্যান্ড দেয়ার শি ইজ, স্মকিং ইন হার ওয়েডিং নাইট।

আচ্ছা, নিবেদিতার যে বর্ণনা দিলাম, তা শুনে চোখের সামনে কি ভেসে উঠছে? বাংলা সিনেমায় লক্ষ্মী নায়িকার বিপরীতে যে আলট্রা মডার্ন খলনায়িকা থাকে, তেমন কেউ, তাই না? নিজের ছলাকলা দিয়ে নায়ককে সিডিউস করছে টাইপ? আমরা বাঙ্গালি দর্শকরা এদের সম্পর্কে আরও একটা ব্যাপার ধরে নিই। আর সেটা হচ্ছে, দে আর অ্যাভেইলেবল। একটু তরল টাইপের ভাবি কিংবা বিদেশে স্বামী থাকা কোন মহিলা যদি একটু ফ্রি লি কথা বলে, তাঁদের ব্যাপারে যেমনটা ভেবে থাকি আরকি।

অনেস্টলি স্পিকিং, আর দশজন বাঙ্গালি ছেলের মত বউ হিসেবে এমন মেয়ে আমি নিজেও অপছন্দ করি। কিন্তু নিবেদিতার ব্যাপারে তেমনটা ভাবতে পাড়ছি না। ওর ভেতরে কোথায় যেন একটা আকর্ষণ আছে। ভ্যাম্প টাইপ আকর্ষণ না, নায়িকা টাইপ আকর্ষণ। তার চেয়েও অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে ওর এই স্মার্টনেসটা, আই অ্যাম এঞ্জয়িং। কেন করছি, জানি না। হতে পারে পুরনো দিনে ফিরে গেছি। মনে হচ্ছিল সেই ইউনিভার্সিটি লাইফে দুই বন্ধু সিগারেট শেয়ার করছি। আবার হতে পারে, আমি মনে মনে এমন কাউকেই সঙ্গী হিসেবে চাইছিলাম। স্মার্ট আর বুদ্ধিমতী।

সিগারেটটায় আবার একটা টান দিল। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আমার দিকে সিগারেটটা এগিয়ে দিল। হাত না বাড়িয়ে ইশারায় বোঝলাম ইচ্ছে করলে আরও কিছুক্ষণ চালিয়ে যেতে পারে। উত্তরে মাথা দুদিকে নাড়াল, আর না। ওর হাত থেকে সিগারেটটা নিলাম। ঠোঁটে লাগালাম। টান দিতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, আমি নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে আছি। ঠিক কৌতূহলী দৃষ্টি না, সর্ট অফ মুগ্ধ দৃষ্টি। নিবেদিতা সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়েছিল। ধীরে ধীরে চোখ তুলে ও আমার দিকে তাকাল।

একটু বেশিক্ষণ যে তাকিয়েছিলাম ব্যাপারটা আবিষ্কার করলাম যখন ভ্রু দুটি কুঁচকে ও জানতে চাইল, কি ব্যাপার। আমিও স্মিত হেসে মাথা দুদিকে ঝাঁকালাম, বলতে চাইলাম, কিছু না। এরপরে আবার সামনের রাস্তার দিকে তাকালাম।
—আমরা কি একটু গল্প করতে পারি?
ওর শব্দ চয়নটাও ভাল লাগছে। সরাসরি, আবার একটু কৌণিক ভাবও আছে। ফেসিয়াল এক্সপ্রেশানে যেসব কথা বলছে, সেসবেও একটা বুদ্ধিদীপ্ত ভাব আছে। এসেছিলাম একটা বউ জোগাড় করতে, বাট মনে হচ্ছে একজন সঙ্গী পেয়ে গেছি। গল্প করতে আমারও এখন ইচ্ছে করছে। অনেকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়েছিলাম, তাই চোখ ফিরিয়ে আবার রাস্তায় চলমান গাড়ির হেডলাইটগুলোর দিকে তাকালাম। বললাম
—পারি।

— কিছু জানবার আছে? আমার সম্পর্কে?

নিজের অজান্তেই ভ্রু কুঁচকে গেল। ইজ সামথিং রং? আবার ধীরে ধীরে নিবেদিতার দিকে তাকালাম। ওর দৃষ্টি এখন আর আমার দিকে নেই। সামনে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাল্কনিতে আলাদা আলো নেই। ঘরের আলোর ছটা আসছে। সেটায় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, এটা প্রশ্ন, না খোঁচা? কটাক্ষ করছে? না আলাপচারিতা? চোখে বিষাদ? না ক্রোধ?

পরিবেশটা একটু হালকা করা দরকার। জানতে চাইলাম

— ফেসবুকে কি পোস্ট করলে?

— বিয়ের ছবি। ঠোঁটের কোনে স্মিত একটা হাসি হেসে যোগ করল— ' শ খানেক লাইক পড়ে গেছে।’
মনে হচ্ছে টপিক চেঞ্জ করা গেছে। আলাপচারিতাটা কন্টিনিউ করা উচিত। কি বলব? আসলে মন থেকে না আসলে আলাপচারিতা হয় না। বলার মত তেমন কিছু খুঁজে না পেয়ে গতানুগতিক টাইপ একটা উত্তর দিলাম 
— আই সি। ফেসবুক বেশ এঞ্জয় কর, না?
— নট অলওয়েজ। তবে ভণ্ডামি শেখার জন্য বেস্ট জায়গা।
এবার আর গতানুগতিক না, সত্যিকারের আলাপচারিতায় ঢুকে গেলাম।

— কেন?

— মেয়ের আইডি মানেই, শুরু কর ফ্লার্টিং।

— সে তো সব জায়গায়ই। অফিসে কলিগরা করে না?

— তা ও ঠিক। বাই দ্যা ওয়ে, আমরা কিন্তু অন্য টপিকে ছিলাম।

সো, লাভ হবে না। এই মেয়ে নাছোড়বান্দা টাইপ। অ্যান্ড অলসো টু দ্যা পয়েন্ট। মাথার ভেতর তখন ঝড়ের গতিতে শার্লক হোমস ঘুরছে। কি বলতে চাইছে? নিজের সম্পর্কে কিছু? কোন আবদার? দাবী? না আমাকে জানতে চাইছে? কেন যেন মনে হচ্ছে, শেষেরটা। নিজের প্রয়োজনের কথা এতো ফর্মালিটি করে চাওয়ার মেয়ে এ না। সো, মিস্টার হোমসের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, সম্ভবত নিজের পাস্ট সম্পর্কে কিছু একটা বলার আছে।
কথাটা শোনা যায়। আমি তো প্রেম ফ্রেমের কথা জানিই। ওসব নিয়ে আলাপ করতে এখন মন চাইছে না। কারণ অবশ্য সেটাও না, আসলে ওর বর্তমানটা এঞ্জয় করছি, ওর এই সাবলীল কথা বলা, নির্দ্বিধায় স্বামীর কাছে সিগারেট চেয়ে খাওয়া। এর মাঝে পুরনো প্রেমিকের গল্প? একটা শেষ চেষ্টা করলাম। বললাম

— এসব নিয়ে পরেও তো আলাপ করা যাবে।
ধীরে ধীরে রাস্তা থেকে চোখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকাল। চোখে চোখ রেখে স্পষ্টস্বরে একটা একটা করে শব্দগুলো উচ্চারণ করল

— যদি আমাদের মধ্যে পরে বলে কিছু তৈরি হয়, দেন।

এবার সত্যিই ধাক্কা খেলাম। বড়সড় ধাক্কা। আবার? এই মেয়েও থাকবে না? আমাকে তাহলে বিয়ে করল কেন? আমেরিকা যাওয়ার জন্য? নাকি দেশ থেকে পালাবার জন্য? নাকি অন্য কিছু? পাস্ট লাইফ? খোঁজ কিছুটা নিয়েছিলাম। দুটো প্রেমিক লস্ট কেস। ড্রাগ ফ্রাগ নেয়। বাট থার্ড রোমিও ইজ স্টিল ইন ট্র্যাক। ছেলেটা ব্রিলিয়ান্ট। এমবিএ করা। ভাল চাকরিও করে।

বিয়েটা কি তবে পার্ট অফ এনি প্ল্যান? ওর বাবা খুব প্রভাবশালী না হলেও পুলিশে ভাল জানাশোনা আছে। এবং তিনি সেই ছেলেকে ফ্যামিলিতে অ্যালাও করবেন না। তবে এখান থেকে পালাতে পারলে হয়তো… ইজ হি অলসো ট্রাইয়িং ফর আমেরিকা?
আই কান্ট বিলিভ মাই লাক। আমার সাথেই বারবার কেন এমন হয়? নাহ, আমি বোধহয় ওভাররিয়াক্ট করছি। হয়তো তেমন কিছুই বোঝাতে চাইছে না। যেটাই হোক, আই স্যুড ফেস ইট। সরাসরি নিবেদিতার দিকে তাকালাম। নিবেদিতা তখনও আমার দিকে তাকিয়েছিল। সোজাসুজি। চোখ থেকে চোখ না সরিয়ে রেখে ঠাণ্ডা গলায় জানাল

— আই হ্যাভ সামথিং টু টেল

বুকটা দুরদুর করছে। ঘামছি কি? কৌতূহলও হচ্ছে। ভয়ও লাগছে। মিস্টার হোমস বলছেন, সামথিং বিগ ইজ কামিং। নিজেকে শান্ত করলাম। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে বললাম,

— বেশ। বল।

এখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে নিবেদিতা। সেভাবেই চোখে চোখ রেখে বলল

—আই আম নট অ্যা ভার্জিন।
চলবে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:২২

খালিদ আহসান বলেছেন: লিখুন।৩য় পর্বের অপেক্ষায়। :)

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: এসে গেছে

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। ভাল থাকবেন ততক্ষন।

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দিলাম ৩য় পর্ব

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৮

টারজান০০০০৭ বলেছেন: আই আম নট অ্যা ভার্জিন।

প্রেমিকরে লইয়া ভাগিয়া যাওয়ার পর একটা মাইয়া ভার্জিন থাকে কিভাবে? ইহা কি বলিতে হয় ?

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ফর্মালিটি আর কি

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০৯

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: এসেছিলাম একটা বউ জোগাড় করতে, বাট মনে হচ্ছে একজন সঙ্গী পেয়ে গেছি।
লাইনটা কিন্তু বেশ লাগল।

আপনার লেখনী ভালো, আর গল্পটি ইন্টারেস্টিং গতিতে এগোচ্ছে। পড়ে মজা পাচ্ছি। গতানুগতিক দিকে নিয়ে যাবেন না আশা করি। কি হয় কি হয় ভাবটা ধরে রেখেই শেষ করবেন প্লিজ।

পরের পর্বের অপেক্ষায় অবশ্যই....

১১ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: নো মোর অপেক্ষা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.