নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাই সেকেন্ড ম্যারেজ

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৪৯

১৩
— দ্যাট গাই ওয়াজ ব্রাইবড
এই হচ্ছে নিবেদিতার কনফেশান। আর এখানে ‘দ্যাট গাই’ মানে হচ্ছে সেই ঘটক বাবাজী। উনাকেই ঘুষ দেয়া হয়েছিল। সন্দেহ আমার আগেই হয়েছিল। যে ঘটকের এতো নাম ডাক, সেই ঘটক একটাও ভাল পাত্রীর প্রস্তাব আনতে পারবে না, তা ও কি হয়? প্রমাণ ছিল না বলে অভিযোগ করতে পারিনি। ব্যাপারটা সন্দেহের লেভেলেই ছিল, সিওর ছিলাম না। নিবেদিতা বলাতে ব্যাপারটা এবার পরিষ্কার হল।
সেই ঘটক ব্যাটাকে ঘুষটা অবশ্য নিবেদিতা দেয়নি, ওর বাবা দিয়েছিল। নিবেদিতা জানত, কিন্তু বাধা দেয়নি। কিংবা বলা যায়, নীরব সমর্থন দিয়েছিল। ডিল ছিল, আমাকে ভাল কোন মেয়ে দেখানো হবে না, আর ঠিক পনের দিন আগে, নিবেদিতাকে দেখানো হবে। অ্যান্ড হি ডিড দ্যাট। বিয়েটা দিতে পারলে সম্ভবতঃ এক্সট্রা কিছু বখশিশও ছিল। কত টাকা ঘুষ, কিংবা বখশিশ দেয়া হয়েছিল কি না, সেটা এখন ইস্যু না, ইস্যু হচ্ছে নিবেদিতা মাথা নিচু করে আছে। আমি স্মিত হাসি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
ম্লান একটা হাসি দিল নিবেদিতা। এরপরে চোখ তুলে তাকিয়ে বলতে লাগল
— আই অ্যাম সরি। আই ওয়াজ হেল্পলেস। আর পারছিলাম না সহ্য করতে। গত কয়েক বছর কি মানসিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে যে গেছি। বিয়ের প্রস্তাব আসে আর পুরনো কাহিনী শুনে ভেঙ্গে যায়। বাকী কাহিনী তেমনভাবে জানাজানি না হলেও একজন ছেলের সাথে পালানো ব্যাপারটা মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। ঢাকায় থেকে বিয়ে হচ্ছে না দেখে পাবনায় এক দুঃসম্পর্কের মামার বাসায় রেখেও বিয়ের চেষ্টা নেয়া হয়। তাও পারা যায়নি। একেকটা বিয়ে ভাঙতো, আর অপমানে মাথা হেট হয়ে যেত। বাবার মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। সিগারেট আগে মাঝে মাঝে খেতাম, সেটা রেগুলার হয়ে গেল। ড্রিঙ্কও শুরু করলাম।
বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। কি বলব বুঝে উঠতে পারছি না। আমার মুখের স্মিত হাসিটা বদলে একরাশ কষ্ট এসে নামল। মনে হল নিবেদিতাকে জড়িয়ে ধরে বলি, আই ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট ইয়োর পাস্ট। নিবেদিতার দিকে তখনও তাকিয়ে আছি। ও এখনও ম্লান মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া লাগছিল। ও বলে চলল
— এরপরে তো তোমার সাথে বিয়ে হল। একজন ডিভোর্সি ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে শুনে সেরাতে খুব কেঁদেছিলাম। এরপরে যখন দেখলাম বাবা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন, তখন ঠিক করি এই বিয়ে করব। বাট, তখন আই হ্যাড অ্যানাদার প্ল্যান। আমার উদ্দেশ্য ছিল তোমার ঘাড়ে চড়ে শুধু আমেরিকা পর্যন্ত যাওয়া। আসলে এদেশের ওপরই ঘেন্না ধরে গিয়েছিল। শুধু চেয়েছিলাম, পালাতে। ইভেন অ্যাট দ্যা কষ্ট অফ বিয়িং অ্যা বুয়া কাম বেড পার্টনার। আমেরিকা গেলেই পালাতাম। অবশ্য তোমাকে বলেই পালাতাম। আর তখন কনফেসটা করতাম। এরপরে নতুন করে নিজের জীবন শুরু করতাম।
ওর অপরাধী ভাব কাটাবার জন্য নিজের সম্পর্কেও বললাম
— অন্যদের দোষ দিব কি, আমি নিজেও তো একই কাজ করছিলাম। তোমাকে অ্যাজ বুয়া কাম বেড পার্টনার হিসেবেই নিয়ে যাচ্ছিলাম।
— যদি আদৌ তোমার সাথে থাকতাম।
— মানে?
— তোমার সাথে জীবন কাটাবার কোন ইচ্ছাই আমার ছিল না।
নিজের অজান্তেই ভ্রু কুঁচকে গেল। বললাম
— সেজন্যই কি চাইছিলে আমি ইশিতার কাছে ফিরে যাই?
এবার নিবেদিতা চোখ তুলে তাকাল। মিষ্টি হাসিটা হেসে বলল
— নাহ। ওটা করেছিলাম তোমাকে বাঁচাতে। তুমি করুণা আর ভালবাসার মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছিলে। ইশিতার এই মুহূর্তে তোমাকে দরকার। তোমার বাড়ি না। বাড়িটা ওকে হেল্প করবে, বাট ওটা দিয়ে জীবন চলবে না। একাকীত্ব কাটবে না। শি নিডস পার্টনার। তোমাকে না পেলে কিছুদিন কষ্ট পাবে, বাট তারপর ও নিজেই খুঁজে নেবে বা কেউ ওকে খুঁজে নেবে।
— যদি না নেয়?
নিবেদিতা হেসে ফেলল
— পৃথিবীর সব দুঃখী মেয়েকে কি তুমি বিয়ে করবে?
আমি হেসে ফেললাম। তাই তো।
— তুমি সিওর ছিলে, আমি তোমার কাছে ফিরে আসব?
স্মিত হাসি হেসে
— মোর দ্যান সিওর। তোমার চোখে তো তখন ভালোবাসা গিজগিজ করছিল।
— যাক, ঘটক বেচারা ঘুষ খেয়ে কাজটা খারাপ করেনি। তোমার বায়োডাটা আগে দেখালে তো আমিও বাকী সব ছেলেদের মতোই করতাম। অ্যান্ড আই উড হ্যাভ মিসড ইউ। ‘না’ তো প্রায় বলেই দিয়েছিলাম। নেহাত একাকীত্ব আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল তাই হ্যাঁ বলেছিলাম। ইউ কান্ট ইমাজিন, প্রতিদিন রাতে একা একা থাকা কি কষ্টের। স্পেশালি একবার কঞ্জুগাল লাইফ লিড করার পরে।
ও ম্লান একটা হাসি দিল। হঠাৎ প্রশ্নটা মাথায় আসল।
— ডিসিশান কখন চেঞ্জ করলে?
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল
— পালিয়ে যাওয়ার? না কনফেস করার?
— পালিয়ে যাওয়ার।
— যখন তোমার প্রেমে পড়লাম।
— বাট কেন পড়লা? আমিও তো আর দশটা বাঙ্গালি ছেলের মতোই। ভার্জিনিটি ইস্যুতে রিয়াক্ট করেছিলাম। অলমোস্ট ডিসাইডেড টু ডিভোর্স।
— না। তুমি ডিভোর্সের ডিসিশান নাও নি। তুমি আসলে নিজেকে বোঝাচ্ছিলে, একাকীত্বের দোহাই দিয়ে আমাকে একসেপ্ট করার চেষ্টা করছিলে। তুমি ততোক্ষণে আমার প্রেমে পড়ে গেছ। ইনফ্যাক্ট হাঁটু পর্যন্ত প্রেমে পড়েছিলে যখন ওয়াই ফাইয়ের পাসওয়ার্ড চাই। এমন পাগলি কিসিমের সাবলীল বউ হতে পারে? দ্যাট ডিড স্ট্রাইক ইউ। আর প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করলে যখন সিগারেট চাইলাম।
খানিকটা ভাবলাম। এরপরে সম্মতি জানালাম। ঘড়ির দিকে তাকালাম। আরও ঘণ্টা খানেক আছে। উঠব? ওঠা যায়। ওঘরে সবাই অপেক্ষা করছে। সিদ্ধান্ত নিলাম, এখন যাব না। নিবেদিতাকে একটু সহজ করা দরকার। দারুণ একটা গ্লানি কাজ করছে ওর ভেতরে। বললাম
— একটা কথা বলব?
সেই আড়চোখে তাকানো, তবে মুখে এখনও হাসি নেই।
— বল।
— কনফেস করা কি জরুরী ছিল?
— ইয়েস। একটা মিথ্যের ওপর আমি সম্পর্ক তৈরি করতাম না। পরে, আর কারো মুখে জানতে পারলে, এই ছোট্ট ব্যাপারটাই শুনতে নোংরা লাগতো। এখন যতটা হেসে মেনে নিচ্ছ, তখন তা পারতে না।
— এতোদিন করনি কেন?
— কারণ এতদিন ডিসাইডেড ছিল না, আমরা সংসার করছি কি না। তুমি ফাইনাল ডিসিশান না নিলে আমি আমার আগের প্ল্যানে ফিরে যেতাম। আমেরিকায় গিয়ে পালাতাম।
— চেঞ্জ করলে কখন?
— একটু আগে, হোয়েন ইউ ফাইনালি ডিসাইডেড টু প্রপোজ মি।
স্মিত হাসি দিয়ে ব্যাপারটা মেনে নিলাম। বললাম,
— যা হবার তা তো হয়েই গেছে। লিভ ইট।
ধীরে ধীরে চোখ তুলল। চোখে এখনও অপরাধবোধ। বলল
— তুমিই প্রথম না। এই ট্রিক আরও অনেকের সাথেই ট্রাই করা হয়েছে।
হেসে ফেললাম
— বাকী দুজন জাল কেটে বেরিয়ে যায়?
কষ্টের একটা হাসি হেসে বলল
— হ্যাঁ। তুমি ফেঁসে যাও।
ওর সাবলীল স্বীকারোক্তিতে হেসে ফেললাম।
— ঘটক ব্যাটাকে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। অ্যান্ড ঘুষ সিস্টেমটাকেও স্যালুট করতে ইচ্ছে করছে।
— নো রিগ্রেট?
— নো রিগ্রেট।
— এরপরও আমাকে ভালবাসতে পারবে?
বড় একটা নিঃশ্বাস টেনে বললাম
— জানো, এই মুহূর্তে আমার কি ইচ্ছে করছে।
— কি?
— আর ফিরে যাব না। টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে গেছি। এখন একটু ভালবাসার পেছনে ছুটব।
এতক্ষণে নিবেদিতার ঠোঁটে বিখ্যাত স্মিত হাসি ফিরে এল। চোখে দুষ্টুমি
— যেয়ো না।
— টিকিটের টাকাটা গচ্চা যাবে।
— যাবে।
নিবেদিতার দিকে তাকালাম। বোঝার চেষ্টা করলাম ও সিরিয়াস, না দুষ্টুমি করছে। মনে হল সিরিয়াস। বললাম
-- সিওর?
আমার চোখে চোখ রেখে বলল
— সিওর।
জানতে চাইলাম
— তারপর?
— তারপর তোমকে সাথে নিয়ে পুরো দেশ ঘুরব। সবাইকে দেখাব, আমার একটা বিয়ে হয়েছে। একজন সঙ্গী পেয়েছি যে আমাকে ভালবাসে।
ওর চোখে পানি টলমল করছে। সেদিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম
— চাকরি চলে গেলে খাব কি?
— হওয়া।
নিবেদিতার দিকে তাকালাম। ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি নেই। স্থির দৃষ্টি। কেন যেন মনে হল, শি ইজ রাইট। ঝোঁকের মাথায় বললেও, আমিও তা ই চাই। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম
— ওকে। ডান। চল, ব্যালকনিতে যাই। খুব সুন্দর হাওয়া ওখানে।

শেষ

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এখানেই শেষ করে দিলেন! আর সামনে যাবেন সাথে থাকবো ভাবছিলাম। ধন্যবাদ। অনেক সুন্দর লিখেছেন।

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৯

শুভ_ঢাকা বলেছেন: গল্পের পরিণতি আমি আগেই গেস করেছিলাম। কিন্তু আজকের পর্বেই এইভাবে শেষ করে দিবেন, it's beyond my wildest imagination. এনি ওয়ে খুব আনন্দের সাথে আপনার লেখা পড়েছি। :)

লেখক আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:৪৫

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: মোর দ্যান সিওর। তোমার চোখে তো তখন ভালোবাসা গিজগিজ করছিল।
ওও! সো কিউট! হাহা। নিবেদিতা ভীষনই বুদ্ধিমতী একজন মেয়ে!

হুমম, ভেবেছিলাম গল্পটির হ্যাপি এন্ডিং হলে অনেক ভালো লাগবে। কিন্তু লাগছে না। শেষ হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে এই গল্পটি আরো চলুক,আমেরিকা পর্যন্তই নাহয় যেত। আরো টুইস্টে ভরপুর কিছু পর্ব পড়তাম! তবে শেষ তো একদিন হতেই হতো! আপনি প্লিজ প্লিজ এমনই কোন গল্প আবারো লিখবেন।

অনেক ঝরঝরে সাবলীল বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীতে আন্তরিক মুগ্ধতা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেলাম।
ভীষন ভীষন ভালো থাকুন।
দেখা হবে যদি আবারো এমনকিছু লেখেন, নাহলে বিদায়........

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ভালো হওয়ার গ্যারান্টি দিচ্ছি না, তবে লিখব

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৬

রায়হান চৌঃ বলেছেন: অ-সাধারণ লিখেন আপনি, বলতে পারেন প্রেমে পড়েছি আপনার লিখার, জাষ্ট ওয়ের করছি নতুনের জন্য... ভালো থাকবেন

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২০ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২৬

রুহুল আমিন খান বলেছেন: শেষ #:-S

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: জ্বি, শেষ। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:২২

সোহানী বলেছেন: মানে কি......... আরো চাই.............

২১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.