নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২১ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫


সকাল থেকেই বেশ টেনশানে আছে অদিতি। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। একবার ভাবছে নীরবকে সব খুলে বলে। আবার ভাবছে নীরব যদি রিয়াক্ট করে? যদি ওর সাথে সম্পর্ক…। নাহ আর ভাবতে পারছে না অদিতি। মোবাইল ফোনটা সকাল থেকে এক মুহূর্তের জন্য হাতছাড়া করেনি। গতকাল বিকেলে যখন ফোনটা আসে তখন ভেবেছিল ফালতু কেউ। নেশা জড়ানো কণ্ঠ, ঠিকমত কথাই বলতে পারছে না। এরপরে অ্যাজকে আবার ফোনটা আসে। নীরব অফিসে চলে যাওয়ার পরে। এবার আর চিনতে ভুল হয়নি। কণ্ঠস্বরও জড়ানো না।
এরপর থেকে ভয়ে গলা শুকিয়ে এসেছে অদিতির। কেউ ফোন করলেই আঁতকে উঠেছে। নম্বরটা চিনে রেখেছে। ঠিক করেছে এরপরে ফোন আসলে আর ধরবে না। কিন্তু ম্যাসেজ? কথাটা মনে আসবার পর থেকে বার কয়েক ফোনের ম্যাসেজ বক্স চেক করেছে। কোন একটা ম্যাসেজের আওয়াজ আসলেই বুকটা ধক করে উঠেছে। মনে হয়েছে এই বুঝি আসল। তবে স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, এখনও কোন ম্যাসেজ আসেনি।
নীরবের ফেরার সময় হয়ে এসেছে। কি করবে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি অদিতি। কারো সাথে যে আলাপ করবে, সে ও সম্ভব না। বাবা কিংবা মাকে বললে যা হবে টা হচ্ছে টেনশানটা ট্রান্সফার করা হবে। এখন সে নিজে টেনশান করছে, মা জানলে উনিও ভয়ে ঘুমাতে পারবেন না। তবে খুব বেশিদিন যে এই অবস্থা চলবে না, সেটাও জানে অদিতি। তার হাতে আছে বড়জোর আজকের দিনটা।
কলিং বেলের আওয়াজ হল। আওয়াজের প্যাটার্নটা নীরবের মত। একসাথে দুতিনবার। ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলল অদিতি। নীরব এসেছে। সাথে একটা আনারস এনেছে। মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে জানাল দিল
--কালকে খেতে চেয়েছিলে, নিয়ে আসলাম।
বলে আনারসটা অদিতির হাতে দিলে। আনারসটা দেখে অদিতির যতটা খুশি হওয়ার কথা ছিল, ততোটা হাসি অদিতির মুখে ফুটল না। ব্যাপারটা নীরবেরও চোখ এড়াল না। জিজ্ঞেস করল
--শরীর খারাপ?
বলে অদিতির কপালে হাত রাখল নীরব। নাহ জ্বর নেই। তাহলে? নীরব কি কিছু বলেছেন? একবার ভাবল নীরব। তেমন তো কিছু মনে পড়ছে না। সকালেও অদিতির মুখ শুকনো ছিল। নীরব ভেবেছিল হয়তো রাতে ভাল ঘুম হয়নি। এখন বুঝতে পারছে, কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। ওদের বাসায় কি কোন সমস্যা? ওর বাবার বয়স হয়েছে, টুকটাক ঝামেলা লেগেই থাকে। উনার কি বড়সড় কিছু হল?
--নাহ, কিছু হয়নি।
অদিতির ইউজুয়াল উত্তর। প্রথমে সাধারণতঃ কিছুই বলে না অদিতি। বার কয়েক জিজ্ঞেস করবার পরে, ধীরে ধীরে সমস্যার কথা জানায়। ব্যাপারটার সাথে নীরব যথারীতি পরিচিত। তাই আর কিছু বলল না। বিকেলে চা খাওয়ার সময় আরেকবার জানতে চাইবে। নীরবের ধারণা, তখনও অদিতি কিছু বলবে না। ও সম্ভবতঃ মুখ খুলবে রাতের খাওয়ার সময় আর নয়তো বিছানায় শুয়ে। নীরবের কাজ হচ্ছে উত্তর জানবার আগ্রহ প্রকাশ করা।
আপাততঃ নীরবের আর কিছু করার নেই। তাই সে ঘরে ধুকে পড়ল। রাস্তায় আসবার সময় যেহেতু আনারস কিনতে বাজারে ঢুকেছিল, তাই জুতায় কিছু কাদা লেগে গেছে। দরজার কাছেই জুতা জোড়া খুলল। অদিতি দরজায় দাঁড়িয়ে ওর জুতো খোলা দেখল। ব্যাপারটা অবাক করল নীরবকে। অদিতি সাধারণতঃ দরজা লাগিয়ে ভেতরে চলে যায়। নীরবের গেঞ্জি আর লুঙ্গি বের করে বিছানায় রাখে। নীরব সেগুলো নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায়।
এবার নীরব ভয় পেয়ে যায়। বুঝতে পারে ব্যপার বেশ গুরুতর। জুতো খোলা হলে সেটাকে স্যু র‍্যাকে রাখে। এরপরে অদিতির দুই ঘাড়ে হাত রাখে। অদিতি মুখ তুলে তাকায়। চোখে রাজ্যের ভয়। মনে হচ্ছে এখনই কেঁদে দেবে। নীরব হাত ধরে অদিতিকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসে। এল করে সাজানো দুটো সোফার একটায় সে বসে আর অন্যটায় অদিতিকে বসায়।
--কি হয়েছে?
অদিতি একবার ভাবে বলে ফেলে। চোখ তুলে নীরবের দিকে তাকায়। ভাবতে চেষ্টা করে কথাটা শুনে কি বলবে নীরব। বুঝে উঠতে পারে না। এমনিতে নীরব বেশ ভাল। অদিতির ছোটখাট অনেক ব্যাপারেই ও খেয়াল রাখে। অদিতির প্রিয় খাবার, প্রিয় রং, প্রিয় কবি, সবই ওর জানা। সবসময় সুযোগ খোঁজে কিভবে হঠাৎ কিছু করে অদিতিকে চমকে দেবে। অদিতির অবাক হওয়া চেহারা ওর সবচেয়ে প্রিয়। বিয়ের এক বছর হলেও নীরবের আচার আচরণে টা বোঝার উপায় নেই। মনে হয় যেন সেই হানিমুন সময়েই ওরা থেমে আছে।
অদিতি সিদ্ধান্ত নেয়, বলে ফেলবে। নীরব কি ভাববে, কিংবা কিভাবে নেবে ব্যাপারটাকে তা নিয়ে আর ভাবতে পারছে না। ধীরে ধীরে চোখ তুলে নীরবের দিকে তাকায়। কথাটা বলতে চেষ্টা করে। পারে না। চোখ নামিয়ে ফেলে। মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবে অদিতি। আপ্রান চেষ্টা করছে যেন না কাঁদে। পারছে না। চোখ থেকে টপ্টপ করে পানি ঝরতে লাগল। নীরব এবার সত্যিই ঘাবড়ে যায়। অদিতির থুতনিতে হাত দিয়ে উচু করে। মুখটা নিজের দিকে ঘোরায়। বলে
--কোন ভয় পেয়ো না। যা কিছু হয়েই থাক না কেন বলে ফেল। আমি তোমার পাশে আছি।
--ফয়সাল ফোন করেছিল।
নীরব অবাক হয়ে অদিতির দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে ভাবে। এরপরে ব্যাপারটা বুঝতে পারে। স্মিত হেসে অদিতির দিকে তাকায়।
--এক্স বয়ফ্রেন্ড?
অদিতি মাথা ঝুকিয়ে সম্মতি জানায়। অদিতির ভয় পাওয়া চেহারা দেখে এবার হেসে ফেলে নীরব। বলে
--ফোন করেছে তো কি হয়েছে? কেমন আছ জানতে চায়, এই তো? তো জানিয়ে দাও। এনিয়ে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে।
অদিতির মুখে এবার একটা হাসি আশা করেছিল নীরব। সেটা না দেখে বুঝতে পারে, সময় লাগবে ব্যাপারটাকে সহজ করতে। বলে
--তোমার মত সুন্দরীর প্রেম না থাকাটাই তো আনইউজুয়াল।
--ওর কাছে ছবি আছে।
নীরব এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারে। কেস অন্য। দেবদাস টাইপ প্রেমিক না, ব্ল্যাকমেইলার কিসিমের। আর সেকারণেই অদিতির মুখের এই অবস্থা। একটা হাত অদিতির কাঁধে রাখে। সান্ত্বনা দেয়ার ভঙ্গিতে দুবার থাবা দেয়।
--পাশাপাশি দাঁড়িয়ে, ঘাড়ে হাত দেয়া ছবি, এইতো? আই ডোন্ট কেয়ার। এসব নিয়ে তুমি একদম ভেবো না। যদি হুমকি দেয় আমার কাছে ছবি পাঠাবে, বলে দিও আজকেই যেন পাঠায়।
বলে নীরব উঠে যায়। বেডরুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে
--তুমি তৈরি হয়ে নাও। শাওয়ার সেরে বেরব। অ্যাজ সারাদিন ঘুরব। রাতে বাইরেই ডিনার করব।
অদিতি সোফাতেই বসে থাকে। ও জানে, আসল কথাটা জানলে এভাবে হেসে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিতে পারবে না নীরব। নাকি পারবে? পরিণতির কথা ভেবে এখন আর পিছিয়ে আসা সম্ভব না। কথাটা আজকেই বলবে। ধীরে ধীরে চোখ মুছে উঠে দাড়ায় অদিতি। রান্নাঘরে ঢোকে। শাওয়ার সেরে এককাপ চা খায় নীরব।
নীরব খুব দ্রুতই গোসল সারল। মন পড়ে আছে অদিতির কাছে। মেয়েটাকে স্বাভাবিক করা দরকার। বরং খানিকটা ঝাড়ি দেয়া দরকার। নীরবকে এতোটা ছোটমনের মানুষ ভাবল কিভাবে? কিছু ছবি কিংবা চিঠি ফিঠির জন্য ও মাইন্ড করবে?
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে বিছানায় বাসায় পড়ার পোশাক। অদিতি কি শুনতে পায়নি ও কি বলেছে। টাওয়েল জরিয়েই অদিতির খোঁজে ডাইনিং রুমে আসে নীরব। দেখে চা সামনে নিয়ে বসে আছে অদিতি। মুখ এখনও ম্লান। এবার কিছুটা বিরক্ত বোধ করে নীরব। কিন্তু প্রকাশ করে না। ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে।
--রেডি হবে না?
অদিতি চোখ তোলে। এখন অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে। নীরবের চোখে চোখ রেখে বলে
--একটু ধৈর্য ধরে পুরো কথাটা শুনবে?
নীরব নিজেও ব্যাপারটার একটা ইতি টানতে চায়। অদিতির দিকে তাকিয়ে বলে
--বেশ। বল আর কি বলার আছে
--ছবিগুলো খুব বাজে।
নীরব প্রথমটায় বুঝতে পারে না কি বলতে চাইছে অদিতি। এরপরে অদিতির পাংশু মুখের দিকে তাকিয়ে সব বুঝে যায় নীরব। এবার পরিস্তকার হয় কেন অদিতি ভয়ে কুঁকড়ে আছে। কেন এতো আশ্বাস দেয়ার পরেও ওর মুখে হাসি ফুটছে না। নীরব তখন অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করে
--ন্যুড ছবি?
চলবে

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৪৫

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: হুমমমম! পড়লাম! প্রেম, বিয়ে, সম্পর্ক নিয়ে লেখা গল্প এত সাসপেন্সে ভরপুর হলে পড়ার অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায়। আপনার লেখার প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, একটি লাইন পড়ার পরে অন্য লাইনটি কি হবে সেটা নিয়ে কৌতুহল জন্মায় ভীষনভাবে।

পরের পর্বের অপেক্ষায়.....

২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: থাকছি আপনার সঙ্গেই পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায়। ভাল থাকবেন।

২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এমন টেনশনে শেষ করলেন? ইশশশ...

পরের পর্বের অপেক্ষায় :)

++++++++++

২১ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৯

শুভ_ঢাকা বলেছেন: ভাই আপনে পাঠকদের এত টেনশনে দেন কেলা। এই টেনশনের কারণে যদি কারও হার্ট এট্যাক হয়। এই দায় দায়িত্ব কে নিব। আর আগের গল্পের মত এই গল্পের নায়িকাও মনে হয় ল্যাফড়াবাজ। :D :P একটা গুডি গুডি নায়িকা ইন্ট্রডিউস করতে পারতেন তো। দিলেন তো আমারে একটা লুপের মধ্যে ফেলাইয়া। এখন প্রত্যেক দিন একবার আপনার ব্লগে হাজিরা দিতে হইবো নেক্সট পর্ব দিছেন কিনা জানার জন্য। :)

২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দিছি

৫| ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:০০

সানহিমেল বলেছেন: দ্বিতীয় পর্বের আপেক্ষায়।

২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: অপেক্ষা শেষ

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৪৪

রুহুল আমিন খান বলেছেন: লাস্ট লাইনেই সাসপেন্স

২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:২৮

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: জ্বি, জনাব

৭| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:২৭

কালো আগন্তুক বলেছেন: চমৎকার লেখা....। অনন্য পর্ব পড়তে শুরু করব এখনই।

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০২

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.