নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২২ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:১৩


নীরবের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও হয়তো ও এতোটা অবাক হত না। ঘটনাটা শোনার পরে তার প্রথম প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, এমন ঘটনা তো কেবল অন্য মানুষের জীবনে ঘটে, তার সাথে কেন ঘটল। অদিতির সাথে তার সেটল ম্যারেজ। অদিতিদের ফ্যামিলি খারাপ না। মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত। দুই ভাই এক বোন। বেশ আদরেই মানুষ। একমাত্র মেয়ে যেমন আহ্লাদী টাইপ হয়, অনেকটা সেরকম। মাস্টার্স পড়ার সময় বিয়ে। প্রায় দুবছর হতে চলল। বাচ্চা কাচ্চা এখনও হয়নি। নিচ্ছি নিব অবস্থায় আছে।
বিয়ের পরে সময়টা খারাপ কাটেনি। নীরবদের অবস্থাও এমন আহামরি কিছু ছিল না। তবে সম্প্রতি হয়েছে। চাকরী কিংবা ব্যাবসার বদৌলতে না, বাবার বদৌলতে। নীরব বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা একসময় ঢাকায় একখানা জমি কিনেছিলেন, যা একসময় সোনার চেয়ে দামী হয়ে ওঠে। আর সেই জমির কারণে আজ সে দশটি ফ্ল্যাটের মালিক। বাবা আগেই মারা গেছেন। মা আছেন। উনি কিছুদিন ঢাকায় থাকেন আর কিছুদিন গ্রামের বাসায় যান। বৈষয়িক মহিলা। জমিজমা তিনি দেখাশোনা করছেন বলেই, এখনও জমিগুলো নিজেদের দখলে আছে। নীরব সেসব দিকে নজর দিবে বলে মনে হয় না। মা মরলে, হয়তো সেসব বেঁচে দিবে।
মা এখন গ্রামের বাড়িতে। এসব কথা জানতে পারলে মা কি করবেন ভেবেই নীরবের হাত পা পেটের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। সে নিজেও চিন্তা করে পাচ্ছে না কি করবে। অদিতির সাথে বিয়েটা সেটল ম্যারেজ হলেও তাদের কেমিস্ট্রি নেহাত খারাপ না। দুজনের বোঝাপড়া বেশ ভালোই। নীরবের পছন্দ অপছন্দ যেমন বোঝে অদিতি, অদিতির অভিমানও চেনে নীরব। কখন অদিতি কি চায়, কি করলে অদিতির চোখে আনন্দের দ্যুতি বয়ে যাবে, তা নীরবের জানা। তাই অদিতির পাংশু মুখ দেখেই সে বুঝে যায়, এই মুহূর্তে অদিতির মুড ঠিক করার একটাই উপায়, ওকে কোথাও থেকে ঘুরিয়ে আনা।
সমস্যার আকস্মিকতায় প্রথমটায় হতভম্ব হয়ে গেলেও কিছুক্ষণের ভেতরেই সে নিজেকে সামলে নেয়। মাথা ঠাণ্ডা করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। বুঝতে পারে, এখন রাগ কিংবা ঘৃণার সময় না। সেসব পরেও করা যাবে। এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তারও আগে জানা দরকার ছেলেটা কে? কেমন টাইপের আর কি চায়।
অদিতি মাথা নিচু করে বসে আছে, কিছুই বলছে না। সম্ভবত নীরব রেগে যাবে ভেবে চুপ করে আছে। ব্যাপারটা নীরব বুঝতে পারছে। কথা তাকেই শুরু করতে হবে। পুরো ব্যাপারটা জানা জরুরী। বিশেষ করে আরও বড় কিছু হয়ে যাওয়ার আগে ব্যাপারটা ট্যাকল দেয়া দরকার। ছবিগুলো একবার ছড়িয়ে গেলে, কাউকে মুখ দেখাবার উপায় থাকবে না।
অদিতি ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে আছে। নীরব বেশ কিছুক্ষণ ধরেই পায়চারী করছিল। এবার বসল। অদিতিকে কিছুটা সাহস দেয়া দরকার। হাত বাড়িয়ে ওর হাতটা ধরল। অদিতির শরীরটা একটু কেঁপে উঠল বলে মনে হল। সে এখনও মাথা নিচু করে আছে। নীরবের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। হয়তো কিছুটা লজ্জাও পাচ্ছে। অদিতির না তাকানোর ব্যাপারটা নিয়ে নীরব মাথা ঘামাল না। এই মুহূর্তে বেশি জরুরী, পুরো ব্যাপারটা জানা। গলার স্বর যতটা সম্ভব নরম করে নীরব জানতে চাইল
— ছেলেটা কে?
অদিতি এবার মুখ তুলে তাকাল। চোখে একরাশ কষ্ট, ভয়, গ্লানি। কিছুক্ষণ নীরবের দিকে তাকিয়ে থাকল। ঠোঁট একবার নাড়াবার চেষ্টা করল, কিন্তু কিছু বলতে পারল না। নীরব কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরে অদিতির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। এরপরে যখন বুঝল ও কিছু বলতে পারছে না, তখন গলার স্বর আরও নরম করে বলল
— ব্যাপারটা পুরোটা জানতে না পারলে আমিও তো কিছু করতে পারছি না।
অদিতি আবার চেষ্টা করল। এবার অস্ফুটে শুধু বলতে পারল
— আমাদের পাড়াতেই থাকত।
— ভালোবাসতে?
মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানাল। এরপরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। নীরব এবার খানিকটা বিরক্ত হয়। কান্নার অনেক সময় পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে দরকার এ সমস্যা সমাধানের একটা উপায় খুঁজে বের করা। গলা খানিকটা কর্কশ করেই বলল
— প্লিজ, পুরো ব্যাপারটা আমাকে না বললে তো সমস্যার কোন সমাধান আসবে না।
অদিতি সম্ভবতঃ নিজেও বুঝল। চোখ মুঝে নীরবের দিকে তাকাল। খোঁজার চেষ্টা করল, ওর চোখে ঘৃণা আছে কি না। মনে হল না। মনে হল ও সত্যিই চাইছে ব্যাপারটার একটা সুরাহা করতে। অদিতি কিছুটা সাহস পেল। এই মানুষটা তো তার পাশে আছে। ধীরে ধীরে সে বলতে লাগল।
— ছেলেটার নাম ফয়সাল। আমাদের পাড়াতেই থাকত। বাবা বেশ বড়লোক। নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে ঘুরে বেড়ায়। দেখতেও সুন্দর। পাড়ার অনেক মেয়েই ওকে পছন্দ করত।
তথ্যগুলো এই মুহূর্তে খুব জরুরী না। তারপরও নীরব চুপচাপ কথাগুলো শুনল। কিছু ব্যাপার ক্লিয়ার হল। ব্যাপারটা টিন এজ প্রেম। যখন সুন্দর একটা চেহারা আর চাকচিক্য দেখেই একটা মেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। অদিতিও তাই করেছিল। কিন্তু জানা দরকার এরপরে কি হল। কেন সে ছেলেটাকে নিজের ন্যুড ছবি দিল।
— তারপর?
— আমদের প্রেম হল। কলেজ পালিয়ে ওর সাথে দেখা করতাম। এদিক ওদিক ঘুরতে যেতাম। সিনেমায় যেতাম…
অদিতি হঠাৎ চুপ করে যায়। নীরব বুঝতে পারে, এরপরের অংশ বলতে অদিতি লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু ব্যাপারটা নীরবের জানা দরকার। তাই সে খানিকটা সহজ করে দেয় ব্যাপারটাকে
— গায়ে হাত টাত দিত?
অনেকটা নমনীয়ভাবে বললেও নীরব যা বোঝানোর বুঝিয়ে দিয়েছে। জানতে চাইছে, সম্পর্ক কতদূর এগিয়েছিল। অদিতিও বুঝল, পুরো ব্যাপারটা বোঝাতে হলে তাঁকেও সবকিছু স্পষ্ট করে বলতে হবে। মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানায়।
— কিস টিস?
এবারও মাথা ঝোঁকানো সম্মতি তবে মাথা এবার নিচু করে। মাটির দিকে চোখ রেখে। নীরবের এবার বুক কাঁপছে। প্রশ্নটা কি করবে? না অদিতি নিজেই বলবে। অদিতি মাথা নিচু করে আছে। বুঝতে পারে, অদিতি নিজে থেকে বলবে না। ওকে দিয়ে বলাতে হবে।
— ঐ পর্যন্তই? না…
নীরব নিজেও আর জিজ্ঞেস করতে পারে না। অদিতি চোখ তুলে নীরবের দিকে তাকায়। সেই চোখে একরাশ অপরাধবোধ। যেন বলতে চাইছে, অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু মূল প্রশ্নের উত্তর এখনও নীরব পায়নি। ন্যুড ছবিটা কোথা থেকে পেল এই ছেলে।
— ছবিগুলো কে তুলেছিল?
যন্ত্র চালিত পুতুলের মতকথা বলতে লাগল অদিতি
— ফয়সাল
— ও তোমাকে ঐ অবস্থায় পেল কিভাবে?
অদিতির চোখে পানি টলমল করছে। যে ব্যাপারটা নীরব সন্দেহ করছে, সম্ভবত তেমনটাই ঘটেছে। তারপরও জানতে চাইল
— বেডে গিয়েছিলে?
চোখ থেকে এবার পানিগুলো ঝড়তে লাগল। হালকা একটু মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানাল বলেই মনে হল। ব্যাপারটা অনেকটাই পরিষ্কার এখন নীরবের কাছে। ঘিন্না লাগছে, তবে অদিতির জন্য কষ্টও লাগছে। ভুল যে করেছে, তা অদিতি এখন বুঝতে পারছে, কিন্তু এখন বুঝে তো আর কোন লাভ নেই। এমন সময় প্রশ্নটা মাথায় আসল।
— তো ওকে বিয়ে করোনি কেন?
— একটা রেপ কেসে ওকে পুলিশ এরেস্ট করে।
ও, এই ব্যাপার। এই ব্যাটা তার মানে প্রফেশনাল। মেয়ে ফাঁসানো আর তাদের সাথে বিছানায় যাওয়া। এর মধ্যে কেউ একজন হয়তো কেস করে দেয়। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নীরব। অদিতির জন্য কিছুটা সহানুভূতিও হয়তো জাগে মনে। জানতে চায়
— তারপর?
— এরমধ্যে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়।
— হঠাৎ আআব্র কোত্থেকে হাজির হল?
— কিছুদিন হল জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারে নীরব। কোন একদিন হয়তো ইরোটিক ফিলিংস পেতে ছবিগুলো তুলে রেখেছিল। হয়তো বিশ্বাস করেই ছবিগুলো তুলতে দিয়েছিল অদিতি। এখন সেগুলোকে হাতিয়ার বানিয়ে টু পাইস কামাতে চাইছে এই ব্যাটা।
কি করবে যদিও বুঝে উঠতে পারছে না নীরব, তারপরও নিজের অজান্তেই প্রশ্নটা করে ফেলল
— কি চাইছে ব্যাটা? কত টাকা?
— টাকা চায় না।
এবার ভয়ে নীরবের মুখও পাংশু হয়ে যায়। অস্ফুটে কোনমতে উচ্চারণ করে
— তাহলে?
চলবে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০৯

শুভ_ঢাকা বলেছেন: ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত নানান ধরনের ল্যাফড়াবাজির কেইস দেখার ও শুনার সুযোগ হয়েছে। তাই আপনার লেখার সাথে রিলেট করতে পারি। ওয়ান্স এগেইন ওয়েল রিটেন।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৫:৫৬

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: শেষে এসে আবারো সাসপেন্স ধরে রাখলেন। পরের পর্বের অপেক্ষায়........

২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ। দিয়েছি পরের পর্ব

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৭:১৪

সোহানী বলেছেন: ওকে চলুক... চেনা কাহিনী অচেনা মানুষ.............

২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: চলুক। পরের পর্ব দিয়েছি

৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:৫০

সানহিমেল বলেছেন: যথারীতি পরের পর্বের অপেক্ষায়।

২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: অপেক্ষা শেষ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.