নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১২


রক্ত হিম হওয়া বলতে যা বোঝায়, এই মুহূর্তে নীরবের অবস্থা অনেকটা সেরকমই। প্রাথমিক ইতস্ততঃভাবটা কেটে যাওয়ায় অদিতি বাকী কথাগুলো বেশ সাবলীলভাবেই জানায় নীরবকে। বড়লোকের একমাত্র ছেলে। বাবার বিশাল ব্যাবসা। তাই পড়াশোনা খুব জরুরী না। ভবিতব্য নির্ধারিত হয়েই আছে, আজ নয়তো কাল ব্যাবসায় যোগ দিবে। একসময় হয়তো বাবার মতোই ব্যাবসায়ী হয়ে উঠবে।
এমন সুপুরুষ ধনীর দুলালের জন্য আগ্রহী মেয়ের সংখ্যাও নেহাত কম না। গাড়ি করে লঙ ড্রাইভে যাওয়া, দামী হোটেলে থাকা, এসবের জন্য দেখা গেল অনেকেই রাজী। ব্যাপারটায় দেখা গেল ফয়সালও বেশ মজা পাচ্ছে। ফলে শুরুতে অদিতির প্রতি সম্পর্কটা প্রেমের থাকলেও, অচিরেই ব্যাপারটা কেবল শরীর কেন্দ্রিক হয়ে গেল। আর ধীরে ধীরে সেটাও কমতে লাগল। ফয়সালের স্বভাবের এই অংশটা প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বন্ধু বান্ধবের টাইপও পাল্টে গেল। সুন্দরী নারীদের খোঁজ খবর দিতে পারে এমন বন্ধুরা এখন তার সঙ্গী। ওদিকে বার কয়েক বেডে যাওয়ার পরে অদিতি সম্পর্কে আগ্রহ হারাতে শুরু করে ফয়সাল। ফোন করলে 'পরে কথা বলছি, এখন একটু ব্যস্ত’ জাতীয় বাহানা বাড়তে লাগল। একসময় অদিতি বুঝতে পারে, এই সম্পর্কের আর কোন ভবিষ্যৎ নেই।
ঠিক এই সময়েই একদিন রেপ কেসে ফেঁসে যায় ফয়সাল। বার্থডে পার্টির বাহানায় একজন মেয়েকে ডেকে আনে হোটেলে। এরপরে জোর করেই সব কিছু ঘটায়। মেয়েটাকে যতটা নরম ভাবা হয়েছিল, তেমনটা হয়নি। কেস করে বসে। মিডিয়ায় পরিচিতি থাকায়, ব্যাপারটা বেশ পাবলিসিটিও পায়। ফলে ধনীর দুলাল হওয়া সত্ত্বেও জেলে যাওয়া আটকাতে পারে না।
ঠিক একই সময় বিয়ের প্রস্তাব আসে অদিতির। সেও বুঝতে পারে, এই সুযোগ হাতছাড়া করা হবে চরম বোকামি। দেখতে সুন্দরী, ফ্যামিলি ভাল আর বয়সও কম। পাত্র পক্ষ এর বেশি আর কি চায়। বিয়ে হয়ে গেল। অধরনের বিয়েতে ব্যর্থ প্রেমিক যে ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে, তা করার তেমন কোন সুযোগ ফয়সাল পায় না। অবশ্য তেমন কিছু করত কি না তা নিয়েও সন্দেহ আছে। অদিতিকে সে এখন তেমন ভালোও বাসে না।
গত দুবছর তেমন কোন সমস্যা ছাড়াই কেটে যায়। ফয়সালের কি হয়েছে, তার সাম্প্রতিক খবর অদিতি আর রাখেনি। রাখলে জানতে পার্ট, কেসের একটা ফয়সালা হয়ে গেছে। মেয়েকে বেশ বড়সড় একটা ক্ষতিপূরণ ধরিয়ে কেস উইথড্র করা গেছে। টাকা দিয়ে মিডিয়ারও মুখ বন্ধ করা হয়েছে। তাই এনিয়ে কোথাও তেমন কোন উচ্চবাচ্য নেই। বেরিয়ে এসে বেশ কিছুদিন বাবার কড়া শাসনে ছিল। সুবোধ বালকের মত ব্যাবহারও শুরু করে। সুমতি হয়েছে ভেবে ফয়সালের বাবাও ছেলের ওপর নজর রাখা কমিয়ে দেয়।
এরপরে একদিন আসে সেই ফোন। নেশা জড়ানো কণ্ঠ শুনে প্রথমে চিনতে পারে না। পরের দিন যখন ফোন করে নিজের পরিচয় দেয়, তখন ভয়ে কুঁকড়ে যায় অদিতি। ওর কথা জানাজানি হলে কি হবে, তা ভেবে শিউরে উঠে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফয়সাল শোনায় সে কি চায়। অদিতি জানায়, তার পক্ষে সম্ভব না। সে এখন বিবাহিতা। কথা কানে নেয় না ফয়সাল। জানায়, তার প্রস্তাবে রাজী না হলে সব কিছু জানিয়ে দেবে তার স্বামীকে।
বিপদ টের পেয়ে অনুনয় বিনয় শুরু করে অদিতি। লাভ হয় না। বরং ফয়সালের কাছে অদিতির পরিস্থিতি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। বুঝতে পারে, একে ফাঁসানো এখন সময়ের ব্যাপার। ব্যাপারটা অদিতিও বুঝতে পারে। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, ব্যাপারটা বরং নীরবকে খুলে বলবে। তাও ওর প্রস্তাবে রাজী হবে না। কথাটা ফয়সালকে জানিয়ে দিতেই ফয়সাল শেষ অস্ত্রটি ছাড়ে। জানায় ওর ন্যুড ছবিগুলো এখনও ওর কাছে আছে। আর যদি সে না চায় এসব অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ুক তাহলে তার প্রস্তাবে অদিতিকে রাজী হতে হবে, ওকে এখন থেকে ‘ডাকলেই যেতে হবে’।
সবকিছু শোনার পরে নীরব বুঝতে পারে কত বড় ঝামেলার ভেতরে সে পড়ে গেছে। একবার যদি ছবি অনলাইনে আসে, কাউকে আর মুখ দেখাবার উপায় থাকবে না। এলাকায় একটা সম্মান তাদের আছে। ফ্ল্যাটগুলো পাওয়ার পরে, আর্থিক সচ্ছলতা অনেকগুণ বেড়ে যায় নীরবের। গাড়ি কেনে। দামী দামী পোশাক, দামী হোটেলে যাওয়া আসাসহ সব ধরনের বড়লোকি চালই সে ইদানীং শুরু করেছে। এখন অনেকেই তার দিকে বেশ সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে তাকায়।
সে এখন পায়চারী করছে আর ভাবছে কিভাবে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া যায়। অদিতির সমস্যা নিয়ে এই মুহূর্তে সে আর ভাবছে না। ভাবছে নিজেকে নিয়ে। সিদ্ধান্ত অনেকটা সে নিয়েই নিয়েছে, এই সম্পর্ক আর সে রাখবে না। রাখা সম্ভব না। অদিতিকে সে সত্যিই মন থেকে ভালবেসেছিল, হয়তো এখনও কিছুটা বাসে, তবে একসাথে সংসার করার কথা সে ভাবতে পারছে না। এতোসব কাণ্ড যে মেয়ে আগে করেছে, তাকে মেনে নেয়ার আর কোন প্রশ্নই ওঠে না।
কথাটা বলতে কিছুটা ইতস্ততঃ বোধ করছে। এমন না যে সে হিপোক্র্যাট। কাজটা সে করবে। তবে কখন, তা নিয়েই ভাবছে। এই মুহূর্তে অদিতি ভয়ে কুঁকড়ে আছে, আর এখনই যদি সে তার সিদ্ধান্ত জানায় তবে অদিতির জন্য তা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। এদিকে খুব বেশি দেরী করাও সম্ভব না। যদি ছবিগুলো প্রকাশ হয়ই তবে যেন সে বলতে পারে, ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। কাদাটা তাহলে ওর গাইয়ে বিশেষ লাগবে না।
ঠিক করে, কথাটা আজই বলবে। যতদূর সম্ভব নরম করেই বলার সিদ্ধান্ত নেয় নীরব। সঙ্গে এটাও সিদ্ধান্ত নেয়, অদিতি যদি চায়, কোথাও লুকিয়ে থাকবার ব্যাবস্থা করে দেয়ার চেষ্টাও সে করবে। ঢাকায় আনাচে কানাচে বেশ কিছু লেডিস হোস্টেল আছে। সেসবের কোন একটাতে ওকে থাকার ব্যাবস্থা করে দেয়া সম্ভব। কথাটা আজ রাতেই বলতে হবে।
এরমধ্যে ফয়সালের আর কোন ফোন আসেনি। অদিতিও প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে উঠেছে। বিশেষ করে ফয়সাল যেভাবে সহানুভূতি দেখিয়েছে, তাতে তার ধারণা হয়েছে, এই পরিস্থতিতে নীরব তার পাশে দাঁড়াবে। যা কিছুই ঘটুক, একসাথে মোকাবেলা করবে। ব্যাপারটা বুঝতে পারার পরে অদিতি অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। হয়তো ভাবে, নীরব একটা কিছু ব্যাবস্থা করবে। পুলিশে ওর কিছু জানাশোনা আছে। ওদের দিয়ে হয়তো ছবিগুলো উদ্ধারের ব্যবস্থা করবে।
— খাবে এসো।
ডাইনিং টেবিল রেডি করে নীরবকে ডাকে অদিতি। ড্রইং কাম ডাইয়ানিংয়ের ড্রইং রুমেই বসে ছিল নীরব। টেবিলে খাওয়ার লাগানো যে হয়ে গেছে ব্যাপারটা নীরব আগেই লক্ষ্য করেছে। ইচ্ছে করেই উঠছিল না। কথাগুলো গোছাচ্ছিল। অদিতি ডাকবার পরে, ধীরে ধীরে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায় নীরব। টেবিলে বসে থালা টেনে নেয়। রাতে রুটি খায় দুজনেই। হটপটে রাখা রুটির স্তূপ থেকে নিজের জন্য দুটো রুটি নেয়। সেদিকে তাকিয়ে থাকে অদিতি। নীরবের নেয়া হলে সে নিজেও রুটি নেয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। সম্ভবতঃ ঠিক করতে পারে না, কে আগে শুরু করবে। নীরবের নিস্তব্ধতা দেখে অদিতিই কথা বলে ওঠে
— কিছু ঠিক করলে, কি করবে?
মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানায় নীরব। আগ্রহ নিয়ে নীরবের দিকে তাকিয়ে থাকে অদিতি।
— আমার মনে হয়, ঐ ব্যাটার ডিমান্ড মিট আপ করা উচিত হবে না। ঐ ব্যাটা এখানে থেমে থাকবে না। এরপরে আর কি কি চাইবে, ঠিক নাই।
— আমিও তাই ভাবছিলাম। এবার ফোন আসলে স্পষ্ট করে বলে দেব। এরপরে যা হওয়ার হবে।
নীরবের দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বলল অদিতি। নীরব কি কথাগুলো শুনল? মনে হল ও অন্য কিছু ভাবছে। অদিতি এখনও তাকিয়ে আছে নীরবের দিকে। নীরব কিছুক্ষণ চুপচাপ রুটি খেল। এরপরে একসময় মুখ তুলে বলল।
— আমার পরিচিত এক মহিলার একটা প্রাইভেট লেডিস হোস্টেল আছে। বেশ ভাল। খাওয়া দাওয়াও স্টান্ডার্ড। ধানমন্ডিতে।
— মানে?
এতক্ষণ রুটি খেতে খেতেই কথা বলছিল নীরব। এবার চোখ তুলে তাকায়। অদিতির চোখে চোখ রেখে বলে
— এখান থেকে দূরেও হবে, কেউ না জানলে, ওখানে কেউ তোমাকে খুঁজতে যাবে না। আমার মনে হয় তোমার কিছুদিন ওখানে গিয়ে থাকা উচিত।
— কি বলছ এসব?
— ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখ। ব্যাপারটা জানাজানি হলে কি হবে? তোমার তো প্রেস্টিজ নষ্ট হবেই, সাথে আমারটাও হবে। তোমাদের ফ্যামিলিরও। তোমার বাবা মার অবস্থা ভেবে দেখেছো? তোমার দুই ভাইই ম্যারিড। উনাদের ফ্যামিলি আছে, শ্বশুর বাড়ি আছে। দেখা যাবে এসব নিয়ে উনাদের সবার ফ্যামিলিরই প্রেস্টিজ নষ্ট হয়ে যাবে। দুই ফ্যামিলির কেউই আর মুখ দেখাতে পারবে? আমার মনে হয় এটাই বেস্ট সলিউশান। উনারা অ্যাটলিস্ট এটাতো বলতে পারবেন, এই মেয়ের সাথে আমাদের আর কোন সম্পর্ক নেই। আমাকেও কিছু একটা বলে সামাল দিতে হবে।
এবার ব্যাপারটা খানিকটা আঁচ করতে পারে অদিতি। নীরবকে তাহলে ও কি ভুল বুঝেছিল? ওর পুরনো সব কিছু জানতে চাওয়া মানে ওকে সাহায্য করা না? কেবল জানতে চেয়েছিল, সম্পর্ক কতোটা এগিয়েছে? কিংবা আসলে জানতে চেয়েছিল, অদিতি শুয়েছিল কি না। পরিস্থিতি এক মুহূর্তে পরিষ্কার হয়ে যায় অদিতির কাছে। যদিও উত্তর জানে তারপরও প্রশ্নটা করল
— আমাকে কি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছো?
চলবে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম...

তারপর?

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৪৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আসবে

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০০

সোহানী বলেছেন: গুড এন্ড রিয়েল কন্টিনিউশান। চলুক.........

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৪৯

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: জ্বি, চলুক

৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৪০

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: নীরবকে প্রথমে বেশ আদর্শ ও ব্যতিক্রমী স্বামী ও চরিত্র ভেবেছিলাম। এখন দেখছি একেবারেই সাদামাটা। দেখা যাক, মেয়েটি এখন কি করে?

পরের পর্বের অপেক্ষায়....

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৫০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আসছে

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৭

শুভ_ঢাকা বলেছেন: শুরুতে অদিতির প্রতি সম্পর্কটা প্রেমের থাকলেও, অচিরেই ব্যাপারটা কেবল শরীর কেন্দ্রিক হয়ে গেল। আর ধীরে ধীরে সেটাও কমতে লাগল। ফয়সালের স্বভাবের এই অংশটা প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে বন্ধু বান্ধবের টাইপও পাল্টে গেল। সুন্দরী নারীদের খোঁজ খবর দিতে পারে এমন বন্ধুরা এখন তার সঙ্গী। ওদিকে বার কয়েক বেডে যাওয়ার পরে অদিতি সম্পর্কে আগ্রহ হারাতে শুরু করে ফয়সাল। ফোন করলে 'পরে কথা বলছি, এখন একটু ব্যস্ত’ জাতীয় বাহানা বাড়তে লাগল। একসময় অদিতি বুঝতে পারে, এই সম্পর্কের আর কোন ভবিষ্যৎ নেই।

বাস্তব জীবনের এই ধরনের সম্পর্ক দেখার ও জানার সুযোগ আমার হয়েছিল।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৫১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ভুল বলছই না তাহলে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.