নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:১৫


লেডিস হোস্টেলটা অদিতির বেশ পছন্দই হল। বাড়ীটা ভদ্রমহিলার নিজস্ব। নিচতলা গ্যারেজ। দোতলায় তিনি নিজে থাকেন। তিন আর চার তলাকে লেডিস হোস্টেল বানিয়েছেন। ভাড়ার চেয়ে আয় বেশি। এলাকাটা ধানমন্ডি হওয়াতে বেশ অনেক চাকুরীজীবী মহিলাই এখানে থাকেন। বিশেষ করে যাদের ঢাকায় থাকবার তেমন কোন জায়গা নেই। তেমন কোন মানে আত্মীয় হয়তো আছে, তবে দিনের পর দিন রাখার মত উদার তাঁরা হয়তো নন। একেবার নিকটাত্মীয় না হলে ব্যাপারটা প্র্যাক্টিক্যালও না।
একজন মেয়েকে রাখা মানে, একরাশ রেস্পন্সিবিলিটি ঘাড়ে নেয়া। থাকা খাওয়া ছাড়াও আছে এক্সট্রা কিছু টেনশান। ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরল কি না, বাইরে কোথাও কিছু ঘটিয়ে ফেলল কি না, এসব আর কি। সেদিক দিয়ে এই হোস্টেলগুলো একদিক দিয়ে একসাথে অনেক সুবিধা এনে দিয়েছে। প্রথম দিয়েছে একটি থাকবার জায়গা। দ্বিতীয় দিয়েছে, সুরক্ষা। অন্ততঃ একবার ঘরের ভেতর ঢুকে গেলে, আপাততঃ নিরাপদ। থাকা, খাওয়া একেবারে নিজের ইচ্ছেমত যে হবে না, তা জানা কথা। তারপরও চেষ্টা চলে, একটি স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করার। সেটা যত উঁচু, ভাড়াও ততো বেশি।
হোস্টেলের মালিক ভদ্রমহিলার সাথে নীরবের এক কলিগের ভাল পরিচয় আছে। তিনিই ব্যবস্থা করে দেন। ভাগ্যক্রমে একটা সিট ফাঁকা ছিল। সেটা অদিতি পেয়ে যায়। তবে নীরব বুদ্ধি করে বেশ কিছু মিথ্যে তথ্য দেয়। বিবাহিত ব্যাপারটা গোপন করে। কারণ তাহলে প্রশ্ন আসবে, বিবাহিত হলে এখানে কেন? স্বামীর সাথে থাকতে কি সমস্যা। মহিলাকে বলা হয়েছে, পড়াশোনা শেষে ঢাকায় এসেছে চাকরির খোঁজে। পরিবারের ঠিকানা হিসেবে দেয়া হয়েছে নীরবদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা। সেখানকার চেয়ারম্যানের দেয়া নাগরিকত্ব সার্টিফিকেটও জোগাড় করা গেছে।
নীরব দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। ভেতরে ঢোকেনি। সব বুঝিয়ে দিয়েছে। কি কি বলতে হবে, কি কি গোপন রাখতে হবে। অদিতি প্রথমে ভেবেছিল যদি ফয়সাল আবার ফোন দেয় কিংবা ওর দাবীতে রাজী না হয়, তখন হয়তো হোস্টেলে আসবার ব্যাপারটা ঘটবে। কিন্তু নীরব সেই ঝুঁকি নিতে রাজী হয়নি। ওর এই মুহূর্তের চাওয়া হচ্ছে, যেন সকলকে বলতে পারে, এই মেয়ের সাথে সে অনেক আগেই সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছে। ফয়সালে এই ফোন না করাকে সে বেশ আশীর্বাদ হিসেবেই নিয়েছে।
হোস্টেলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা যখন নীরব অদিতিকে জানায়, তখন অদিতি একবার ভেবেছিল প্রতিবাদ করে। অনূর্ধ্ব করে আর কোন উপায় আছে কি না খুঁজে দেখতে। কিন্তু করেনি। নীরবের চোখে সে কোন ভালবাসা খুঁজে পায়নি। ওর চোখে মুখে তখন একটাই উদ্বেগ, কিভাবে নিজেকে এই স্ক্যান্ডাল থেকে দূরে রাখবে। কিভাবে সবাইকে বোঝাবে, ‘এসব ঘটনার জন্য তাদের সম্পর্ক চুকেবুকে যায়নি’ একথা প্রমাণ করতে পারলে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে স্ক্যান্ডালটা তখন নীরবের বউয়ের হবে না হবে কেবল অদিতির।
ফয়সাল হঠাৎ করে চুপ করে গেল কেন, তা অদিতি এখনও জানে না। হয়তো রাত কাটানোর জন্য নতুন কাউকে পেয়েছে। কিংবা হয়তো অদিতিকে কিছুটা সময় দিতে চাইছে। কারণ যা ই হোক, অদিতি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কি বলবে। সব জায়গায় ছবিগুলো প্রচার হলে কি কি হতে পারে তা নিয়ে গত কয়েক রাত ভেবেছে। একসময় আবিষ্কার করল, ব্যাপারটায় সে আর দুশ্চিন্তা বোধ করছে না। একরাশ ছি ছি আর কিছু লোলুপ দৃষ্টির মোকাবেলা তাকে করতে হবে। এর বেশি আর কি হবে?
— একটা ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট লাগবে। কোন ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসারের।
নিচতলা গ্যারেজ হলেও সেখানে শুধু নিজের গাড়ি রাখেন। দুটো রুম আছে। তার একটায় থাকে হোস্টেলের দারোয়ান, আর অন্যটাকে ভদ্রমহিলা নিজের অফিসরুম বানিয়েছেন। সেখানেই এক বিশাল সেক্রেটেরিয়েট টেবিলের সামনে বসে আছে অদিতি। কি কি কাগজ জমা দিতে হবে সে খোঁজ খবর নেয়ার কাজ নীরবই করেছিল। সেই অনুযায়ী সব কাগজপত্রই সে দিয়েছিল। কেমন করে যেন এই ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট বাদ পরে যায়। ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত হওয়ার কথা না। এসব কাগজ জোগাড় করা নীরবের জন্য কোন ব্যাপার না। কিন্তু নীরব তাকে পৌঁছে দিয়ে অফিসে চলে গেছে। অদিতি ব্যাপারটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করল
— দেখুন, ওটা হয়তো বাসায় থেকে গেছে। আমি কালকে অবশ্যই দিয়ে দিব।
মহিলা ঘড়ির দিকে একবার তাকালেন। সকাল সাড়ে নয়টা।
— দেখুন, সবগুলোই হয়তো কেবল এক টুকরো কাগজ, তারপরও ওগুলো হাতে থাকলে আমি নিরাপদ থাকি। কখনও কিছু ঘটলে পুলিশকে দেখাতে পারি, আমি সব খোঁজ খবর নিয়ে এখানে বোর্ডার রেখেছি।
কথাটার মানে অদিতি ঠিক বুঝতে পারল না। আগামীকাল দিলে হবে? না হবে না। মহিলার ঘড়ির দিকে তাকানোটা কি একটা ইঙ্গিত? বোঝাতে চাইছেন, যেখানে আছে সেখান থেকে এখনই নিয়ে আসুন। নীরবকে হয়তো ফোন করা যায়, তবে প্রথমে চেষ্টা করে দেখতে চায়, ওটা ছাড়াই যদি ভদ্রমহিলা অদিতিকে রুমে ঢুকতে দেয় কি না।
— আগামীকাল দিলে হবে না?
— আপনার লোকাল ঠিকানা তো দিয়েছেন বাড্ডা। কাছেই তো। একটু কষ্ট করে গিয়ে নিয়ে আসুন না।
অদিতি বুঝল, মহিলা বেশ ধুরন্ধর কিসিমের। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের কাজ আদায় করা টাইপ। দীর্ঘ শ্বাস ফেলল অদিতি। নীরবকে ফোন করে ব্যাপারটা জানাতে হবে। আরেকবার রিকোয়েস্ট করবে কি না ভাবছে এমন সময় একটা মেয়ে রুমে ঢুকল। পড়নে ফতুয়া আর জিনসের প্যান্ট। ঢুকেই ভদ্রমহিলার দিকে এগিয়ে গেল।
— ডেকেছিলেন আন্টি?
— হ্যাঁ। তোমাদের রুমে ইনাকে দিলাম। উনি একটু বাড্ডা যাবেন ক্যারেক্টার সার্টিফিকেটটা আনতে। নিয়ে আসলেই সবকিছু ওপরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মেয়েটা অদিতির দিকে তাকাল। অদিতি কাল রঙের একটা শাড়ি পড়ে আছে। সাজগোজ তেমন করেনি। খুব হালকা প্রসাধন। অদিতির দিকে এক নজর তাকিয়েই মেয়েটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। আন্টির দিকে তাকিয়ে বলল
— ওর ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট আমি।
—চেন ওকে?
— হ্যাঁ। বাড্ডায় আমার মামার বাড়ি আছে না? ঐ বাসারই নিচ তলায় থাকে ও। ওদের বাসায়ও তো গিয়েছি।
কথাটা বলে সে আন্টিকে আড়াল করে, অদিতির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে। অদিতি ব্যাপারটায় বেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তবে এটাও বোঝে এই মেয়েকে থামানো দরকার। নইলে মিথ্যে ধরা পড়ে যাবে। তাই সে নিজে থেকেই বলে ওঠে
— ওটা আমার এক রিলেটিভের বাসা।
ভদ্রমহিলা কিছুক্ষণ ভাবলেন। এরপরে মেয়েটির দিকে তাকালেন। সেই তাকানোতে হয়তো কিছুটা প্রশ্ন ছিল। তাই মেয়েটি আবার বলে
— এই মেয়ের গ্যারান্টি আমার। কিছু হলে আমি রেসপন্সিবল। তাহলে হবে?
মহিলা কিছুক্ষণ ভাবলেন। এরপরে কি ভেবে সম্মতি জানালেন। বেল বাজিয়ে দারোয়ানকে ডাকলেন। দারোয়ান এসে দাঁড়ালে তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন
— উনার ব্যাগপত্র ওপরে নিয়ে যাও।
এবার অদিতি দিকে তাকিয়ে বললেন
— প্লিজ ডোন্ট টেক ইট আদার অয়াইজ, এগুলো ঠিক ফর্মালিটি না, এগুলো বলতে পারেন রক্ষাকবজ। পাঁচ দশ টাকা দিলেই যে কেউ আজকাল এসব জোগাড় করতে পারে, তারপরও এগুলো কাছে রাখতে হয়। বোঝেনই তো, একা মহিলা মানেই হাজারটা প্রশ্ন।
মহিলা হয়তো আরও কিছু ব্যাখ্যা দিতে চাইছিলেন, এমন সময় মেয়েটি কথা বলে উঠল।
— চল, তোমাকে রুমের নিয়ম কানুন বুঝিয়ে আমি একটু বেরোব।
বলে অদিতির হাত ঢোরে টেনে তোলে। অদিতিও দেখল এই মহিলার হাত থেকে বাঁচবার এটাই সুযোগ। সে ও উঠে দাঁড়ায়। মেয়েটি অনেকটা হিড়হিড় করে টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে অদিতিকে। বাইরে এসে অদিতিকে ফিসফিস করে বলে
— কোন ঝামেলার কেস না তো তুমি?
অদিতি স্মিত হাসে। কি বলবে ভেবে পায় না।
— হলেও অসুবিধা নাই। আই হ্যাভ কন্টাক্টস। পরিচয় থাকলে, এদেশে কোন ঝামেলাই, ঝামেলা না। চল।
— কোথায়?
— কোথায় আবার? রুমে।
— তোমার নামটা জানতে পারি?
এদিক ওদিক তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে
— আস্তে। তোমার বাসায় আমি এতবার গিয়েছি আর তুমি আমার নাম জান না?
— ভয় লাগল না? যদি ধরা পড়ে যেতে?
— কি আর হত? বলতাম, একদম একই চেহারা।
অদিতি হেসে ফেলে। সেদিকে তাকিয়ে মেয়েটিও হাসিতে যোগ দেয়। এরপরে অদিতির দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়
— আই অ্যাম নওরিন। মডেল কাম ছোটখাট আক্ট্রেস।
চলবে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:৪৯

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: একথা প্রমাণ করতে পারলে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে স্ক্যান্ডালটা তখন নীরবের বউয়ের হবে না হবে কেবল অদিতির। হুমম!

আমি ভেবেছিলাম এ পর্ব শুরু হবে অদিতির প্রতিবাদ দিয়ে। কেননা নীরবকে ও নিজের পাশে যেভাবে চেয়েছিল সেভাবে পায়নি। কিন্তু একেবারে হোস্টেল থেকে শুরু হবে বুঝিনি! দেখা যাক, এই হোস্টেলের চরিত্রগুলো বেশ ইন্টারেস্টিংই হবার কথা। অদিতির জীবন এখন নানা দিকে যেতে পারে। কোন দিকে যায় তা দেখতে অপেক্ষায় পরের পর্বের...

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:২৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আসবে অচিরেই

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৬:৩৩

সোহানী বলেছেন: আই লাভ দিস টার্নিং........ চলুক.......

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:২৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: আশাকরছি, চলবে

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩৫

রুহুল আমিন খান বলেছেন: Waiting

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:২৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: কিপ ইট।

৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৭

শুভ_ঢাকা বলেছেন: সোহানী বলেছেন: আই লাভ দিস টার্নিং........ চলুক.......

আই এগ্রীইড উইদ হার কমপ্লিটলি।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.