নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৩


দিনটা বেশ ভালোই কাটল অদিতির। আন্টির রুম থেকে বেরিয়ে আর এক মুহূর্তে দেরী না করে অদিতিকে সাথে নিয়ে দ্রুত ওপরে উঠতে থাকে নওরিন। যাওয়ার পথে সিঁড়িতে আর করিডোরে হোস্টেলের বেশ অনেক কয়েকজনের সাথেই পরিচয় হল। বিভিন্ন রুমের পাশ দিয়ে আসতে আসতে সেই রুমের বাসিন্দাদের সম্পর্কে একটা মিনি ইন্ট্রোডাকশান দিচ্ছিল নওরিন। মেয়েটা বেশ হাসিখুশি। সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে পারে। সুন্দরী এবং বেশ বুদ্ধিমতী। খুব দ্রুত হোস্টেল সম্পর্কে জরুরী তথ্য দিয়ে দিল।
কবে কবে মুরগী, কবে গরু। কি কি মাছ সাধারনতঃ দেয়া হয়। কি কি জিনিস নিজের সংগ্রহে রাখতে হবে। গোসলের সুযোগ কখন পাওয়া যায়, কে বেশি সময় নিয়ে গোসল করে। কাকে কাকে এড়িয়ে চলা ভাল। যদিও সব মনে রাখতে পারেনি, তারপরও বেশ মনোযোগ দিয়ে সবকিছু শুনেছে অদিতি। মনে হচ্ছে, কোন এক নতুন রাজ্যে এসে হাজির হয়েছে। অবশেষে অদিতিরা তাঁদের নিজেদের রুমে এসে পৌঁছে। ওদের রুম চারতলায়। মোটামুটি মাঝারি সাইজের রুম। তিনটে বেড, তিন দেয়ালে। মাঝে খুব অল্প জায়গা, তবে হাঁটাচলার জন্য যথেস্ট। রুমে একটা সিলিং ফ্যান। এরচেয়ে বেশি বাতাসের প্রয়োজন হলে, নিজে টেবিল ফ্যান কিনতে হবে। দেখা গেল রুমের বাকী দুজনের দুটো আছে।
নওরিনের দেয়া তথ্যের যতটুকু মনে আছে তা হচ্ছে, এখানে কিছু আছে ইউনিভারসিটির ছাত্রী, কয়েকজন চাকুরীজীবী। দুজন ডাক্তার আর কিছু আছে, পড়াশোনা শেষ, এখন চাকরির চেষ্টা করছে টাইপ। চাকরীজীবীদের বেশিরভাগই ততোক্ষণে বেরিয়ে গেছে। ছাত্রীদের দুএকজন আছে। হয়তো ক্লাস নেই, কিংবা ফাঁকি দিয়েছে।
অদিতিকে রুমে পৌঁছে দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই নওরিন নিজের কাজে চলে চায়। কোথাও শুটিং আছে। যাওয়ার আগে রুমের কিছু খুঁটিনাটি ব্যাপার বুঝিয়ে দিয়েছে। ওদের একটা কমন ফান্ড আছে। সেটা দিয়ে ওরা চায়ের ব্যবস্থা করেছে। সাথে বিস্কুট। সেগুলো কোথায় আছে দেখিয়ে দিয়েছে। হোস্টেলের ডাইনিং তিনতলায়। চাইলে ওখানে গিয়ে চা করে আনা যায়।
সকালটা অনেকটা শুয়ে বসেই কাটাল। দুপুরে খাওয়া সেরে একটা ভাতঘুম। ঘুম ভাঙল বিকেলে। ওদের দরজার সাথে লাগোয়া একটা ব্যালকনি আছে, তবে গ্রিল দেয়া এবং একটা ঝালড় ঝুলানো। রাস্তার পাশে বলে সম্ভবতঃ এই ব্যবস্থা। মেয়েরা ব্যালকনিতে দাঁড়ালে রাস্তার ওপাশে রোমিওদের আড্ডা বসে যেত। সম্ভবতঃ ইচ্ছে করেই এই ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
অদিতিদের রুমের তৃতীয় জন হচ্ছে শিরিন। এমবিএ পাশ করে এখন চাকুরী করছে। ওর সঙ্গে সকালে অবশ্য দেখা হয়নি। বিকেলে হল। মেয়েটা বেশ সুন্দরী। স্মার্টও। খুব বেশিক্ষণ আলাপ হয়নি। অফিস থেকে এসে দ্রুত একটা শাওয়ার নিল এরপরেই খুব দ্রুত তৈরি হয়ে নিল। জানাল এক্ষুনি একটু বাইরে বেরোতে হবে, হাতে একদম সময় নেই। ঝটপট প্রসাধন সেরে ফেলল। যাওয়ার আগে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে জানিয়ে গেল, ‘আসি তাহলে, রাতে কথা হবে’। সেই অল্প সময়ের আলাপেই মেয়েটাকে বেশ চৌকশ মনে হল অদিতির।
শিরিন চলে যাওয়ার কিছু পরেই নওরিন এল। দেখে বেশ টায়ার্ড লাগল। শাওয়ারের জন্য এগিয়ে যেতে যেতে কেবল বলল,
— আমার পাঁচ মিনিট লাগবে। বেরিয়ে এসে গল্প করছি।
বলে স্মিত একটা হাসি দিয়ে মেয়েটা বাথরুমে ঢুকে গেল। মেয়েটা আসলেই বেশ সুন্দরী। মডেল হওয়ার মতই। এখানে এসে যে সমস্যাটা বেশি করে ফিল করছে, তা হচ্ছে একাকীত্ব। সারাদিন একা থাকা যে এতোটা বিরক্তিকর ব্যাপারটা, সেটা আগে কখনও লক্ষ্য করেনি। বিয়ের আগে তো আশেপাশে সবাই ছিল। বাবা, মা কিংবা ভাইদের সাথে সময় কাটত। কিংবা পড়াশোনা নিয়ে। ফোন, আর বান্ধবীদের সঙ্গ তো ছিলই। বিয়ের পরও সংসার সামলাতে কখন সময় পার হয়ে যেত টেরই পেত না।
নওরিন বেরিয়ে আসবার পরে দুজনে গেল তিনতলায়। ওখানে গিয়ে চা বানাল। এরপরে চা খেতে খেতে গল্প শুরু করল নওরিন।
— এবার বল।
— কি?
— তোমার হিস্ট্রি।
— হিস্ট্রি তেমন কিছু না।
— বুঝলাম।
— কি বুঝলা?
— কাহিনী জটিল এবং গোপনীয়।
অদিতি ফ্যাকাসে টাইপের একটা হাসি দিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল
— না না। আসলে বলার মত তেমন কিছু নেই। মাস্টার্স পাশ করে এখন চাকরী খুঁজছি।
নওরিন একটা হাত অদিতির ঘাড়ে রাখল।
— শোন। মিথ্যে বলা একটা আর্ট। আক্টিংটাও। ভুল আক্টিং খুব বিচ্ছিরি লাগে দেখতে। সো, প্লিজ। মন না চাইলে বল না।
অদিতি কিছুটা অসহায় দৃষ্টিতে নওরিনের দিকে তাকাল। নওরিন বুঝল অদিতি ভয় পেয়ে গেছে। তখন সান্ত্বনার ভঙ্গিতে বলল
— সরি, আমারই ভুল হয়েছে। এভাবে ব্যক্তিগত ব্যাপার জানতে চাওয়া আমার উচিত হয়নি। আমি আর জিজ্ঞেস করব না।
অদিতি একবার ভাবল প্রতিবাদ করবে। কিন্তু করল না। মনে হল, নওরিন ঠিকই বলেছে। মিথ্যে যদি বোঝাই যায়, তাহলে না বলাই ভাল। সে মাথা নিচু করে রাখল। পরিবেশ সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে দেখে নওরিন কথার মোড় ঘোরাল।
— তোমার বয়স?
অদিতি অবাক হয়ে নওরিনের দিকে তাকাল। নওরিন ব্যাখ্যা দিল
— সর্বনাম ঠিক করতে হবে। কি বলব, তুই না তুমি।
— তোমার বয়স কত?
— তেইশ
— তাহলে তুমি আমার ছোট।
— গুড, সেক্ষেত্রে আমি আপু আর তুমি বলে ডাকব। চলবে?
অদিতি ঘাড় কাত করে জানাল, চলবে
— আর এখানকার অঘোষিত নিয়ম হচ্ছে, ছোটদের তুই ডাকা হয়। তুমিও তাই বলতে পার।
সম্পর্ক অনেকটা সহজ হয়ে আসল। অদিতি একবার ভাবল, নওরিনকে সব কিছু খুলে বলে। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল। নীরব বলে দিয়েছে, কাউকে যেন না জানায় সে বিবাহিত। তাহলেই প্রশ্ন আসবে, এখানে কেন? সেই ‘কেন'র ঠিকঠাক কোন উত্তর দিতে না পারলে শুরু হয়ে যাবে কানাঘুষা। আপাততঃ যে কাহিনী তাকে বলতে বলেছে নীরব, তা হচ্ছে, মাস্টার্স পাশ করে, ঢাকায় এসেছে চাকরীর খোঁজে।
গল্প আর বিশেষ জমল না। নওরিন কিছুক্ষণ নিজের স্যুটিংয়ের গল্প করল। ততোক্ষণে তাঁদের আলাপের সুর কেটে গেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নওরিনও থেমে গেল। রুমে ফিরে এসে কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। ব্যাগের ভেতর থেকে স্ক্রিপ্ট বের করে পড়তে লাগল। কিছুক্ষণ পরে শিরিন ফিরে এল। মুখ হাসি হাসি। বিছানায় ব্যাগটা ফেলে তাঁদের দুজনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল
— কি খবর রুমমেটস?
অদিতি উত্তরে স্মিত একটা হাসি দিল। নওরিন স্ক্রিপ্টের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিল
— শিহাব ভাইয়ের সাথে খুব এঞ্জয় করলে মনে হচ্ছে?
— ঐ, একটু ঘোরাঘুরি আর কি।
— তোমার চেহারা তো বলছে আরও কিছু হয়েছে।
— কি যে বলিস?
এরপরে অদিতির দিকে তাকিয়ে নওরিন জানায়
— শিহাব ভাই হচ্ছে ইনার ফিয়াসে। পাঁচ বছরের প্রেম। বিয়ে হব হব করছে। কিন্তু হচ্ছে না। তাই এভাবে পার্কের অন্ধকারকে কাজে লাগাচ্ছে।
অদিতি একবার শিরিন আর একবার নওরিনের দিকে তাকায়। শিরিন কপট রাগ দেখায়। আর সেই সাথে বুঝিয়ে দেয়, নওরিন যা বলেছে, ঠিকই বলেছে। হঠাৎ যেন অদিতি নিজেকে দেখতে পায়। ফয়সাল ভাইয়ের সাথে সেই লঙ ড্রাইভে যাওয়া। রেস্টুরেন্টের অন্ধকার রুমে নাস্তা খাওয়ার সময়…। নিজের অজান্তেই বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে অদিতি। ব্যাপারটা নওরিন আর শিরিন দুজনেই লক্ষ্য করে। চোখে চোখে একে অপরের কাছে জানতে চায়, কিছু জানে কি না। ইশারায় দুজনেই একে অপরকে উত্তর দেয়, জানে না।
— শিহাব ভাই কি শুধু খেল? না খাইয়েছেও?
শিরিন কপট রাগের ভঙ্গি করে বলে
— তোর মুখে কিছু আটকায় না, না?
নওরিন তখন অদিতির দিকে তাকিয়ে বলে
— ম্যাডাম মনে হচ্ছে খেয়ে এসেছেন। শুধু শুধু অপেক্ষা করলাম। চল, খেয়ে আসি।
শিরিন প্রতিবাদ করে কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু বলল না। নওরিনের ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। বুঝল, রাগ করেনি, দুষ্টামি করছে। অদিতিও বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াচ্ছিল, এমন সময় অদিতির ফোনটা বেজে উঠল। স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই অদিতির মুখটা শুকিয়ে গেল। ফয়সাল ফোন করেছে।
চলবে

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৫৮

শুভ_ঢাকা বলেছেন: অদিতির হোস্টেলের রুমের বর্ণনাটা ভাল লেগেছে। আপনার প্রতিটা পর্বের সূচনা আর শেষটা ইউনিক।

যথারীতি টেনশন দিয়ে শেষ করলেন। পরের পর্বের প্রতীক্ষায়......

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০৯

সোহানী বলেছেন: হুম... অকে নতুন চরিত্র এনেছেন এবার। চলুক, ভালোলাগছে।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: একটু বেশি সাহস দেখিয়ে ফেলেছি

৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:০৮

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: ইয়েস! ফয়সাল! এই চরিত্রটি অবশেষে সামনসামনি আসবে পাঠকের! অপেক্ষায়...

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দেখা যাক

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:২৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গতরাতেই পড়েছিলাম মন্তব্য করতে পারিনি আজ নতুন পর্বের আগে মন্তব্য করে যাওয়া জুরুরী মনে করে মন্তব্য করা। অনেক নিপুন কারুকাজ বাক্য ঘটন রীতি অামাকে মুগ্ধ করেছে। চরিত্র বিন্যাসও সেরকম। পরের পর্ব পড়তে গেলাম।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:২১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: যান। শুভকামনা

৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:০৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন জম্পেস জমে উঠেছে....

++++

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৫৪

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:০৯

এলেবেলে ঝড় বলেছেন: আমি আপনার লেখনীর একজন নবীন পাঠিকা ।আপনার লেখা খুবই সাবলীল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.