নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:১৯


সিদ্ধান্ত নিতে পারে না অদিতি। ফোনটা ধরবে? না ধরবে না? নিজের অজান্তেই নওরিনের দিকে তাকায়। মেয়েটার প্রতি কেমন একটা আস্থা জন্মে গেছে। চোখের দৃষ্টিতে সম্ভবতঃ কিছু একটা ছিল, নওরিন মুহূর্তে বুঝে যায়, অদিতি ভয়ানক কোন বিপদে আছে, আর তার সাহায্য চাইছে। দ্রুত নিজের বিছানা থেকে উঠে এসে অদিতির পাশে বসে। ইশারায় জানতে চায়, কি করবে?
অদিতির ফ্যালফ্যালে দৃষ্টি বুঝিয়ে দেয়, সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। নওরিন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। ফোনটা রিসিভ করে। মোলায়েম কণ্ঠে বলে
— হ্যালো
— কি সিদ্ধান্ত নিলা?
নওরিন বুঝতে পারে, আওয়াজ যে অদিতির না, ব্যাপারটা অপর পক্ষ বুঝতে পারেনি। সে তাই ব্যাখ্যা দেয়
— অদিতি আপু একটু বাথরুমে। আপনি কি একটু পরে ফোন করতে পারবেন?
— ঠিক আছে। আমি মিনিট দশেক পরে করব। ওকে একটু জানিয়ে দেবেন, ফয়সাল ফোন করেছিল।
ফোনটা রেখে নওরিন অদিতির দিকে তাকায়। অদিতির চোখে তখনও একরাশ ভীতি। শিরিনও ব্যাপারটা লক্ষ্য করে। সে ভাবছিল আজকে কি কি হয়েছে তার কিছু কিছু বর্ণনা দিবে, কিন্তু পরিস্থিতি এখন একেবারেই ভিন্ন। অদিতি বিপদে বুঝতে পেরে সে ও উঠে এসে অদিতির পাশে বসে। কাঁধে হাত রাখে। নওরিনের দিকে তাকায়। ইশারায় জিজ্ঞেস করে, কি করবি? নওরিন ইশারায় বোঝায়, যা করার আমি করছি। এরপরে অদিতির মুখটা নিজের দিকে ঘোরায়, বলে
— ঝামেলায় যে আছো, বুঝতেই পারছি। যদি বিশ্বাস রাখতে পার, তাহলে বলে ফেল। হালকা লাগবে
অদিতি তখনও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। তবে এটা বুঝতে পারে, এদের বিশ্বাস করা যায়। হয়তো কোন সাহায্য করতে পারবে না, তবে ক্ষতিও করবে না। সিদ্ধান্ত নেয়, সব খুলে বলবে
— দশমিনিট পরে কিন্তু আবার ফোন করবে।
নওরিন তাগাদা দিল। অদিতি একবার শিরিন, একবার নওরিনের দিকে তাকিয়ে সব কথা বলতে শুরু করে। কথাগুলো শুনে শিরিন মাঝে মাঝে চমকে উঠলেও নওরিন ঠাণ্ডা মাথায় সব কথা শোনে। কিছুক্ষণ ভাবে। এরপরে পায়চারী শুরু করে। অদিতির চোখে ভেসে ওঠে নীরবের পায়চারী। সেদিন নীরব ভাবছিল, ওর কি হবে। আর আজ নওরিন ভাবছে, অদিতির কি হবে। কেমন যেন সবকিছু অচেনা মনে হয়। মনে হয়, জীবনে দেখার আর শেখার অনেক বাকী।
নওরিন ঝট করে একবার ঘড়ির দিকে তাকায়। একবার ভাবে, ঠিক দশ মিনিটের মাথায়ই কি ফোন করবে? না খানিকটা দেরী করবে? এমন সময় হোস্টেলের খালা ডাকতে আসে।
— আপা, খাইয়া নেন।
নওরিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, অদিতির দিকে তাকিয়ে বলে
— আক্টিং করতে পারবা?
— মানে?
— মানে তুমি বলবা, তুমি রাজী। শর্ত হচ্ছে, সব ছবি তোমার সামনে ডিলিট করতে হবে।
— রাজী হবে না।
— হবে। এই শালা যদি চালু চিজ, অবশ্যই টোপ গিলবে। রাজী হবে আর কপি রেখে তোমার সামনে ছবি ডিলিট মারবে।
— তাহলে লাভ?
— পুলিশের ডলা যেহেতু একবার খেয়েছে, তাই ভয় আছে। পুলিশকে দিয়ে একবার থ্রেট দাওয়ানো গেলে কাজ হতেও পারে।
— যদি না হয়?
— সে রিস্কটা আমাদের নিতে হবে।
অদিতি অবাক হয়ে নওরিনের দিকে তাকায়। কি অবলীলায় বলে ফেলল ‘আমাদের'। পরিচয়ের চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি। অথচ মুহূর্তেই অদিতির সমস্যাকে নিজের সমস্যা ভেবে ফেলল। কৃতজ্ঞতায় অদিতির মনটা ভরে যায়।
— গেট আপ দেন। খেয়ে আসি। দরকার হলে, আমারাই ফোন করব।
অদিতি কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। একবার শিরিনের দিকে তাকায়। শিরিনও ইশারায় বোঝায়, নওরিন যা বলছে, ঠিকই বলছে। অদিতি সম্মত হয়। ধীরে ধীরে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে যায়। শিরিন যাবে কি না তা ভাবে। জিজ্ঞেস করে
— আমিও আসব?
নওরিন বারণ করতে যায় এমন সময় অদিতি নিজেই বলে
— প্লিজ।
এরপরে তিনজনেই ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে যায়। এরপরে তেমন কোন ঘটনা ছাড়াই ডিনার পর্ব শেষ হয়। রুমে ফিরে এসে নওরিন অদিতির পাশে এসে বসে।
— ভয় লাগছে?
— কি করতে চাও?
— পুলিশে আমার এক মামা আছেন। উনার হেল্প নিব। যেটা দরকার ব্যাটাকে হাতেনাতে ধরা। ছবিগুলো সহ ওকে পেলে সুবিধা। তা নাহলে অস্বীকার করবে যে ওর কাছে এমন কোন ছবিই নাই। একবার ধরা পড়লে, তখন রেসপনসিবিলিটি ঐ ব্যাটার। ছবি লিক হলে, তখন হারামজাদাকে ধরা যাবে।
— তখন আর ধরে কি লাভ? সবাইকে কি মুখ দেখাব?
— এই মুখই দেখাবে। শোন, যা হওয়ার, মাত্র কিছুদিনের জন্য হবে। কানাকানি, ফিসফিসানি সব কিছুরই একটা লাইফটাইম আছে। বাঙ্গালির জীবনে গসিপের অভাব কখনই হয় না। আর এক গসিপ এরা বেশিদিন করেও না। সেটা নিয়ে ভেব না।
— বাবা মা, ভাইয়েরা?
— শোন, এই হারামজাদা যা প্ল্যান করেছে, তা হচ্ছে তোমাকে লাইফ টাইমের জন্য রক্ষিতা বানাবে। তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সেটা হতে চাও, না চাও না। যদি না চাও, দেন, ডোন্ট হেজিটেট। যা হবে দেখা যাবে।
শিরিনও এসে অদিতির কাঁধে হাত রাখে।
— নওরিন ঠিকই বলেছে। যা হবে দেখা যাবে। তুমি শুধু শক্ত থাক।
এমন সময় নওরিন বলে
— আমি বরং মামার সাথে একটু কথা বলি। দেখি উনি কিছু ওয়ে আউট বের করতে পারেন কি না।
অদিতি বুঝে উঠতে পারে না কি করবে। তবে নওরিনের ওপর কেমন যেন ভরসা করতে শুরু করেছে। মেয়েটা বুদ্ধিমতি এবং সাহসই। ওর প্ল্যানটাও খারাপ লাগছে না। পুরো ব্যাপারটায় পুলিশ ইনভল্ভ হলে, হয়তো এতোটা বেপরোয়া আচরণ না ও করতে পারে।
নওরিন এই ফাঁকে মামার সাথে কথা সেরে ফেলে। এসে জানায়
— ছেলের ডিটেলস দাও। নাম কি, বাবা কি করে। এরপরে মামা জানাচ্ছে কি করতে হবে।
অদিতি সেসব জানায়। নাম ঠিকানা নিয়ে নওরিন আবার ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরে। কথা শেষে ফিরে এসে বলে
— মামা জানাচ্ছে। অ্যান্ড আপাততঃ নো দুঃখী দুঃখী চেহারা। তার চেয়ে বরং শিরিন আপুর রোমান্টিক গল্প শুনি।
— আর রোমান্টিক গল্প। আমারই তো ভয়ে গা কাঁপছে। অদিতিকে সাহস দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এমন কিছু আমার সাথে হলে আমি যে কি করতাম, ভাবতেই পারছি না।
শিরিনের হাবভাব দেখে নওরিন দুষ্টুমি করে বলে
— শিহাব ভাইও ছবি টবি তুলেছে নাকি?
শিরিন কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যায়। খানিকটা ভেবে বলে
— ভাল বলেছিস। পুরুষ মানুষকে আর যদি কোনদিন বিশ্বাস করেছি।
নওরিন হেসে ফেলে
— ও, কাম অন। সবাইকে একই ভাবছ কেন?
এমন সময় অদিতির মোবাইল ফোনটা আবার বেজে ওঠে। সবাই এগিয়ে আসে অদিতির বিছানার দিকে। নওরিন এসে অদিতির কাঁধে হাত রেখে বলে
— একদম ভয় পাবে না।
অদিতি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। নওরিন জানতে চায়
— হাসছো কেন?
— ফয়সাল করেনি। ও করেছে।
এই বলে অদিতি ফোনটা ধরে। ওপাশে নীরব জানতে চায়
— কেমন লাগছে হোস্টেলটা?
— ভালোই।
— রুমমেটরা?
— খারাপ না।
— শোন, ওখানে দুটো সম্ভবতঃ সিঙ্গেল রুম আছে। ওগুলোর জন্য বলে রেখেছি, কোনটা খালি হলে, তোমাকে দিবে।
— লাগবে না। এখানেই ভাল।
— যা ভাল মনে কর। আচ্ছা, ঐ ব্যাটা কি আর ফোন দিয়েছিল?
— হ্যাঁ। দিয়েছিল।
— কি বলল?
কি বলবে এক মুহূর্ত ভাবল অদিতি। নওরিনের প্ল্যানটা বললে নীরব রেগে যাবে। ঠিক করল, ওকে কিছু জানাবে না। বলল
— আমার সাথে কথা হয়নি। বাথরুমে ছিলাম। রুমমেট মেয়েটা ধরেছিল। ওকে বলেছে দশমিনিট পরে করবে। এখনও করেনি।
— ওদের কিছু বলনি তো?
অদিতি, নওরিন আর শিরিনের দিকে একবার তাকায়। নওরিন ইশারায় জানতে চায় ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে কি না। ইশারায় বারণ করে অদিতি। খুব দরকারি না হলে নীরবকে সাধারনতঃ মিথ্যে বলে না। কি করবে? মন চাইছে না সত্যিটা বলতে।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে কি করবে। বেশ সাবলীল ভাবেই মিথ্যেটা বলে
— নাহ। কাউকে কিছু বলিনি।
— ভাল করেছ। আচ্ছা শোন, যে কারণে ফোন করলাম, আমরা তো প্রটেকশান নিইনি এই কদিন। কোন সমস্যা না আবার হয়ে যায়। ডেট মিস হলে জানিও কিন্তু।
কথাটা শুনে ঘৃণায় মাথা থেকে পা পর্যন্ত রি রি করে উঠল অদিতির।
চলবে

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৫৫

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: অদিতির চোখে ভেসে ওঠে নীরবের পায়চারী। সেদিন নীরব ভাবছিল, ওর কি হবে। আর আজ নওরিন ভাবছে, অদিতির কি হবে। কেমন যেন সবকিছু অচেনা মনে হয়। মনে হয়, জীবনে দেখার আর শেখার অনেক বাকী।
মেয়েরা মেয়েদের শত্রু এই কথাটি খুব একটা ঠিক নয়। ক্ষেত্রবিশেষে হয়ত ঠিক। তবে সত্যিটা হচ্ছে একজন মেয়ে অন্য মেয়েকে শুধু শরীর দিয়ে বিচার করেনা। একজন মেয়ের বুকফাটা আর্তনাদ, অসহায়ত্ব আরেকজন মেয়েই সবচেয়ে বেশি বুঝতে পারে। অনুভব করতে পারে ভেতর থেকে। আর হোস্টেলের এই মেয়েগুলো তো ভীষনই ভালো। খুব ভালো লাগছে চরিত্রগুলোকে।

নীরব আর ফয়সাল দুটো চরিত্রই যথেষ্ট ঘিনঘিনে। মেয়েটি কিশোরি বয়সে ভুল করেছিল কিছু না বুঝে। এই দুইজন পাপ করছে। ছি!

যাই হোক, অপেক্ষায় পরের পর্বের....

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:০৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এই পর্বও ভাল লেগেছে।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০২

শুভ_ঢাকা বলেছেন: প্রতিটা পর্বই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন। জেগে ওঠার দৃঢ়তা ভাল লাগল :)

++++

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.