নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:০৮


গত সাত দিনে ফয়সালের ফোন আর আসেনি। কেন আসেনি, বুঝতে পারছে না। অন্য কাউকে পেয়েছে? না আর ইচ্ছে নেই? নওরিন একবার বলেছিল, ফোন দিতে। ব্যাটাকে ট্র্যাপে ফেলা দরকার। অদিতি যেতে সাহস না পায়, বোরখা পড়ে সে নিজেই যাবে। প্ল্যানও তৈরি করে ফেলেছিল। রুমে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেবে আর তখন পুলিশ নিয়ে ওর মামা গিয়ে হাজির হবে। অদিতি রাজী হয়নি। আসলে সে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এখনও আশায় আছে, হয়তো ফয়সাল এতো নীচে নামবে না।
সবচেয়ে বড় যে সমস্যা এখন অদিতির হয়েছে, তা হচ্ছে একাকীত্ব। সময় কাটতেই চায় না। এর ওর কাছ থেকে কিছু গল্পের বই নিয়ে এসেছিল। সেসবের কিছু শেষ করেছে, কিছু পড়তে ভাল লাগেনি। সেই কম বয়সের ভাল লাগা বইগুলোই এখন বিরক্তিকর লাগছে। নওরিন আর শিরিন ফিরে আসবার পরে সময়টা খারাপ কাটে না, কিন্তু বাকী সময় নিয়ে হয়েছে সমস্যা। আরও কয়েকজনের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। ডাক্তার দুজন বেশ ভাল। ওদের গল্প বলতে, রুগীর সাথে ঘটা বিভিন্ন ঘটনা, ক্লিনিকের এমডি র ব্যাবহারের বর্ণনা আর কলিগদের সাথে হওয়া কিছু দুষ্টামি।
এর মাঝে নীরবও ফোন করেছিল। ওর আপাততঃ একটাই চিন্তা, অদিতি কনসিভ না করে ফেলে। সেদিন জানিয়ে দিয়েছে, সম্ভাবনা নেই, ডেট মিস হয়নি। আপাততঃ তাই নীরব নিশ্চিন্ত। প্রথমদিন যেদিন কথাটা বলেছিল, সেদিন মনটা বিরক্তিতে ভরে গিয়েছিল। এই একই কথা অন্যভাবে বললে, মনটা আনন্দে ভরে যেত। পিতৃত্বের আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ মানুষটার চেহারা এখনও মনে ভাসছে। কি আগ্রহ নিয়ে প্রতিদিন জিজ্ঞেস করত কথাটা!
নীরবের ব্যাপারে তাঁর অনুভূতি নিয়ে অদিতি নিজেও সংশয়ে আছে। মানুষটাকে সে ভালবাসে। বেশ ভালবাসে। ওর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, ও সবসময় অদিতির খুঁটিনাটি ব্যাপার লক্ষ্য করত। কি পছন্দ, কি অপছন্দ। কি করলে খুশি হয়। সবসময় চেষ্টায় থাকত, তাকে সারপ্রাইজ দিতে। হঠাৎ করে সিনেমার টিকিট কিনে এনে হাজির হত।
— এক্ষুনি তৈরি হও।
কপট রাগ দেখাত অদিতি। এভাবে তৈরি হওয়া যায় নাকি? কত কাজ বাকী। রান্না এখনও করিনি। নীরব কি উত্তর দেবে ও জানে। এসব বাহানা যে শুনবে না, সেটাও তার অজানা না। তারপরও ওর কথাগুলো শুনতে ইচ্ছে করত। বলত
— অনলি ফাইভ মিনিট। নো সাজগোজ, জাস্ট শাড়ি চেঞ্জ।
নওরিন অবশ্য নীরবের ওপর বেশ খাপ্পা।
— স্বার্থপর একটা লোক। বউয়ের কি হবে তা নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই, আছে নিজের সম্মানের কি হবে তা নিয়ে। ছেড়ে দাও।
একমত হতে পারে না অদিতি। সে ভাল করেই জানে, এই সমস্যা না হয়ে যদি অন্য কিছু হত, যদি ওর কোন কঠিন অসুখ ধরা পড়ত, জান হাতে করে নীরব ওর জন্য ফাইট করত। প্রয়োজনে বাড়ি বিক্রি করে হলেও ওর চিকিৎসা করাত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে? অদিতি নিজেকে একবার নীরবের জায়গায় রেখে ভাবতে চেষ্টা করল। সে নিজে কি করত? কিংবা কাল যদি ওর দুই ভাইয়ের কোন বউয়ের সম্পর্কে এমন কিছু শোনে, সে কি করবে? কিংবা এমন কোন মেয়ের সাথে কি সে তার নিজের ভাইয়ের বিয়ে দিত? উত্তর পায়, না, দিত না। সে ও একই কাজ করত।
নওরিনের কথাও আবার ফেলে দিতে পারে না। বিপদের বন্ধু চেনা যায়। ওর সাফ কথা, বিয়ে মানেই দুজন এখন একজন। যা হবার, যা বিপদ, দুজনের। মোকাবেলা করতে হলে একসাথে করতে হবে। এখানে কোন কিন্তু নেই। আর অতীত, মানে অতীত। বর্তমান নিয়ে থাক না বাবা।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে শিরিনের জীবনে। এর মধ্যে শিহাবের সাথে একচোট ঝগড়া হয়ে গেছে। ওকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ের ব্যাবস্থা কর। আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও। বাবা মা রাজী হবে না, বাট উনাদেরকে আমি সামলাব। শিহাব একটু সময় চাইছে, বলার মত চাকরী ওর এখনও হয়নি। একটা ডেভেলপার কোম্পানিতে মার্কেটিং অফিসার। হাজার পনের বেতন। সাথে ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারলে কমিশন। মেসে থেকে আর বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে কোনমতে নিজের চলে যায়। খান দুয়েক টিউশানি শুরু করেছে, তার একটা ধানমন্ডির দিকে। তখন আসত শিরিনের সাথে দেখা করতে। সেটাও এখন বন্ধ।
শিরিনকে একবার বোঝানোর চেষ্টা করেছিল অদিতি। সবাই তো একরকম হয় না। শিরিন নিজেও সেটা জানে। ওভার রিয়াক্ট করছে, সেটাও বুঝতে পারে। তারপরও একটা চাপা অভিমান কাজ করে ওর ভেতর
— দুজনের বেতনে একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে। শুরু তো করি। এতো ভয় পেলে হয়? কবে ভাল চাকরী পাবে, কবে বিয়ে হবে? আর এভাবে ভাল লাগে? তুমিই বল।
শিরিনও অদিতির ছোট। এই মুহূর্তে অদিতি হচ্ছে ওদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ। দুজনকে তুই তুই করে বলে। কোথায় যেন একটা বড়বোন ফিলিংস কাজ করে ওদের জন্য। নীরব ওর জন্য ব্যাংকে বেশ কিছু টাকা রেখে দিয়েছে। নিজের খরচের জন্য। সেদিন কিছু তুলে ওদের জন্য গিফট কিনেছে। খুশি হয়েছে বলেই মনে হল। নওরিন সঙ্গে সঙ্গে পড়ে ফেলল।
— আজকে এটা পড়েই স্যুটিংয়ে যাব।
শিরিনের মন খুব ভাল নেই। 'কি দরকার ছিল' টাইপ উত্তর দিল। অদিতি আর কিছু বলল না। শিহাবের জন্য কিছু করতে ইচ্ছে করছে। নীরবকে বলবে? নাহ, নিজেই চেষ্টা করুক।
আজকে নীরব ফোন করলে বরং ও নিজের জন্য বলবে। একটা চাকরী পেলে মন্দ হয় না। মাস্টার্স করা আছে। বিয়ের পরে এই একটা কাজ করেছিল। পড়াশোনাটা শেষ করেছিল। নীরবের উৎসাহেই করেছিল। এখন মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস করেছিল। সার্টিফিকেটগুলো ও বাড়িতে থেকে গেছে। আনতে হবে। যাবে কি একদিন? বাড়ির চাবি অবশ্য আছে ওর কাছে। গেলে যেতেই পারে। তারপরও সিদ্ধান্ত নিল, নীরবকে জানিয়েই যাবে। ফোনটা কি এখনই করবে? না নওরিনের সাথে আলাপ করে নেবে?
এই এক সমস্যা হয়েছে। ইদানীং নওরিনের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করতে শুরু করেছে। এমনটা আগে ছিল না। নওরিনের সুবিধা হচ্ছে, ও হেজিটেট করে না। সোজা সাপটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। সাথে যুক্তিও দেখিয়ে দেয়। সব যুক্তি সঠিক মনে হয় না। ওর ধারণা নীরব এই বিয়ে কন্টিনিউ করবে না। আজ হোক কাল হোক ওকে ডিভোর্স করবে। অদিতি ঠিক প্রতিবাদ করে না। সম্ভাবনা যে আছে, তা ও জানে। তারপরও বিশ্বাস করতে মন চায় না। মনে হয়, ডিভোর্স করলে তো সেদিনই করে দিত। এখানে রেখে, ওর পেছনে টাকা খরচ করত না। নীরব আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, কি করবে। ভালোবাসা আর লোকলজ্জার মাঝে একটা যুদ্ধ চলছে। ওকে সময় দেয়া উচিত। সিদ্ধান্ত নিক।
পাঁচটা বাজি বাজি করছে। এখনই শিরিন আর নওরিন ফিরে আসবে। জ্যামের ওপর নির্ভর করছে কে আগে ফিরে আসবে। ছোট্ট একটা ভাতঘুম দিয়েছিল অদিতি। এখনই ভাঙল। একটু ফ্রেস হওয়া দরকার। উঠতে যাবে এমন সময় ফোনটা আসল। নীরব করেছে।
— শোন, একটা ঠিকানা লিখ। কাগজ কলম আছে?
— কিসের ঠিকানা?
— আহ, এত জেরা কর কেন? কাগজ কলম আছে কি না?
— দেখি।
বলে এদিক ওদিক তাকায়। নওরিনের বিছানার পাশে একটা ছোট্ট টেবিল আছে। ওখানে কলম আছে। এদিক ওদিক তাকাল। কাগজ খুঁজছে। এমন সময় ব্যাপারটা মাথায় আসল
— লেখার কি দরকার, তুমি ম্যাসেজ কর।
— ওহ, শিট। এটাই মাথায় আসেনি। শোন, একটা ঠিকানা পাঠাচ্ছি, কাল সকালে ওখানে চলে যাবে।
— কেন?
— তোমার জন্য একটা চাকরীর ব্যাবস্থা করেছি। কালকে ইন্টারভিউ। নাম কা ওয়াস্তে। চাকরীটা তোমারই হবে, তারপরও ফর্মালিটি আর কি।
মনটা আনন্দে নেচে উঠল। নীরবের এই ব্যাপারটাই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে অদিতি। না বলতেই কেমন করে যেন সব বুঝে যায় সব কিছু। জানতে চাইল
— কোথায় চাকরী?
— একটা প্রাইভেট ব্যাংক। দশটায় ইন্টারভিউ।
— একা যাব? তুমি যাবে না?
— কিচ্ছু লাগবে না। তুমি গিয়ে শুধু পরিচয় দেবে।
— কিন্তু সার্টিফিকেটগুলো তো ঐ বাসায়।
— ওহ হো। আমারও মাথায় আসেনি ব্যাপারটা। এদিকে আজকে আমার ফিরতে রাত হবে। আচ্ছা দেখি, কি করা যায়।
— আমি গিয়ে নিয়ে আসি?
— খবরদার, একদম না। ও বাড়ির আশেপাশেও যাবে না।
চলবে

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০০

শুভ_ঢাকা বলেছেন: ভেবেছিলাম বাহ! আজকের লেখাটা তো অনেক বড়। কিন্তু পরে দেখলাম ডাবল হয়ে গেছে। :( পরের পর্বের অপেক্ষায়...

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: এডিট করলাম। ধন্যবাদ

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৭

সোহানী বলেছেন: লিখাটা ডাবল হয়েগেছে..... পরের পর্বের অপেক্ষায়।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: এডিট করেছি। ধন্যবাদ

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৭

এ্যান্টনি ফিরিঙ্গী বলেছেন: সামু পাগলা০০৭ আপু এখনো মন্তব্য করেনি দেখে অবাক হচ্ছি।
আর বিরক্ত হচ্ছি লেখকের কিপ্টামি দেখে। সব সময় কেন এতো অল্প অল্প করে লেখা পোস্ট করতে হবে! বেশি করে লেখা পোস্ট করলে কি হয়???

যাই হোক,,,, চলবে

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ রইল

৪| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:১৭

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: আপনি আরেকটু বড় লিখবেন প্লিজ! আমরা ওয়েট করে থাকি!

যাই হোক, যা লিখেছেন তা নিয়ে বলি। নীরব চরিত্রটির ভালোবাসা আর লোকলজ্জার মাঝে একটা যুদ্ধ চলছে!!! নাহ অদিতির সাথে একমত হতে পারছি না। ভালোবাসায় শুধু ভালোবাসায় থাকে। কোন কনফিউশন, যুদ্ধ থাকে না। এখন বাচ্চা আসলে ওর দায়িত্ব নিতে হবে সে ভয়ে যে ছেলে কুকড়ে যায় তার আবার ভালোবাসা!

চাকরির ব্যবস্থা করেছে আবার বাড়িতে কিছুক্ষনের জন্যেও আসতে দেবে না! এটা থেকে ওনার মনের যুদ্ধ দেখানো হলেও, কোন সিমপ্যাথি আমার মনে তৈরি হয়নি ওনাকে নিয়ে। নওরিনের সাথে একমত আমি। ফয়সাল ও নীরব দুজনেই দুভাবে অদিতিকে আরো কষ্টের দিন দেখাবে! অদিতির আরো স্ট্রং হওয়া উচিৎ।

ধন্যবাদ আপনাকে।
অপেক্ষায় পরের পর্বের.........

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:২০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গতিময়তা পেয়েছে দারুন।

ধরে রাখছে সব্বাইকে ;)

++++

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৫৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:২২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: কখন যে পর্বটি চলে এলো খবরি পেলাম না। যাই হোক ৯ দেখে মনে হল যে ৭, ৮ পড়া হয়নি। দারুণ। চলুক আমি সামনে যাই।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.