নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৮

১০
হোস্টেলে পৌঁছে ট্যাক্সি ছেড়ে দিল অদিতি। রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই নীরবের ফোন এল।
— তুমি নাকি বলছো তুমি এই চাকরী করবা না?
নীরবের এই প্রতিক্রিয়া যে হবে, অদিতি জানত। কি উত্তর দিবে, তা ও ঠিক করে রেখেছিল। মিথ্যেগুলো গুছিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করল।
— ওরা দুই বছরের বন্ড দিতে বলছিল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
— ভয়? তুমি কি পাগল? আমি তো আছি। কোন সমস্যা হলে আমি দেখতাম। তুমি চাকরী ছাড়লা কেন?
— বাদ দাও। আমি একটা কিছু খুঁজে নেব।
— খুঁজে নিবা মানে? চাকরী এতো সোজা নাকি?
— ভাবছি টিউশানি করব।
— টিউশানি? বাড়িতে গিয়ে? কোন দরকার নাই। আমি দেখছি।
এরপরে কেমন চলছে সব কিছু, কিছু লাগবে কি না, টাইপ কিছু কথাবার্তা দিয়ে ফোনালাপ শেষ হল। আজকের ঘটনাটা ভেবে মনে মনে হাসল অদিতি। এক সময় মনে হচ্ছিল টিপিক্যাল বাংলা সিনেমা চলছে আর সে সিনেমার কোন চরিত্রে অভিনয় করছে। ছেলেটার সেই কৃতজ্ঞ চেহারা এখনও চোখে ভাসছে।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে একচোট ঘুমিয়ে নিল অদিতি। এরপরে শিরিনকে ফোন লাগাল।
— কি খবর?
— আমার আর খবর কি? তুমি বল, চাকরীর কি হল?
— রুমে আয়, বলব।
— এজন্য ফোন করেছিলে?
— নাহ। করেছিলাম, পরিচিত কাউকে বলে আমার জন্য কিছু টিউশানি জোগাড় করে দিতে পারবি?
— কাউকে লাগবে কেন? আমিই পারব। কোন ক্লাস চাও?
অদিতি এতোটা ভেবে রাখেনি। কিছুটা ভয়ও পেয়ে যায়। কোন ক্লাস হলে সুবিধা হবে, ভেবে পায় না। এমন সময় শিরিনই বলে
— আই থিংক থ্রি, ফোর হলে ভাল হবে। সপ্তাহে তিনদিন, তবে সব সাবজেক্ট পড়াতে হবে। পারবে?
— মনে তো হয়, পারব।
— শুরু কর। সমস্যা হলে আমি হেল্প করতে পারব। দরকার লাগলে প্রক্সিও দিয়ে দিতে পারব।
— ঠিক আছে। আমি দেখি, কয়কজন পরিচিত আছে, ওদের সাথে কথা বলি।
ফোনটা রেখে একটা গল্পের বই নিয়ে বসল। খুব বেশিক্ষণ পড়তে পারল না। মনোযোগ আসছে না। আসলে আজকের ঘটনাগুলো না বলা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না। একবার ভাবল নওরিনকে ফোন করে। আবার ভাবল, সকালে তো ধরেনি। নিশ্চয়ই বিজি। ওকে আর ডিস্টার্ব না করাই ভাল।
আবার শুরু হল অলস সময়। কিছুক্ষণ শুয়ে, কিছুক্ষণ হেঁটে সময় কাটাবার চেষ্টা করল। হচ্ছে না। পাশের দুটো রুমে ট্রাই করল। আলাপ জমল না। আবার রুমে ফিরে আসল। এমন সময় নওরিন ফিরল। চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে টায়ার্ড। নাকি মন খারাপ? তারপরও মুখে হাসি টেনে বলল
— হল চাকরী?
— নাহ।
ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকাল অদিতির দিকে।
— কেন?
— নিলাম না।
— ভাল করেছ। আমি খুশি হয়েছি।
এ যেন অন্য নওরিন। এই কথা শুনে যতটা উত্তেজিত হবে ভেবেছিল, তার কিছুই হল না। কিছু একটা হয়েছে। নিজের গল্পের কথা ভুলে, ওর ব্যাপার নিয়েই চিন্তিত হয়ে গেল অদিতি। কাবার্ড থেকে নিজের কাপড় বের করল। এরপরে ‘আসছি' বলে ওয়াশরুমে গেল। সেই চলে যাওয়া পথের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল অদিতি।
নওরিন একটু বেশি সময় নেয় শাওয়ারে। তাই এই সময়টা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। গল্পের বইয়ে আবার মন বসাতে চেষ্টা করল। এমন সময় শিরিন ফিরে আসল। অদিতি ভেবে রেখেছিল দুজনে ফিরে আসলে আজকের ঘটনাটা বেশ মজা করে বলবে, কিন্তু এখন আর সে উৎসাহ নেই। আগে জানা দরকার নওরিনের কি হয়েছে।
শিরিন ফিরেই জানতে চাইল
— কি হল আজকে?
— নওরিন আসুক।
— আসেনি?
— এসেছে। শাওয়ার নিচ্ছে।
— ওহ।
বলে শিরিন নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। রুমটা অগোছালো ছিল, দ্রুত গুছিয়ে ফেলল। এমন সময় নওরিন ফিরে আসল। আজ নওরিনের ব্যাবহারে তেমন কোন উচ্ছ্বাস নেই। ব্যাপারটা শিরিনও লক্ষ্য করল। অদিতির দিকে তাকিয়ে ইশারায় জানতে চাইল, কি হয়েছে। অদিতি শ্রাগ করে বোঝাতে চাইল, সে জানে না। একসময় নওরিন ওদের দিকে তাকাল। দুজনেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে হেসে ফেলল
— কি ব্যাপার। কি দেখছ?
শিরিন আর অদিতি একে অপরের দিকে তাকায়। এরপরে অদিতিই জানতে চায়
— কি হয়েছে?
নওরিন অবাক হওয়ার ভান করে বলে
— কি হবে?
— কিছু একটা হয়েছে।
নওরিন হাসবার চেস্টা করে বলে
— দূর, বাদ দাও। স্যুটিংয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। তোমার কি খবর বল?
অদিতি বিশ্বাস না করলেও কথা বাড়ায় না। গল্প বলার যে উচ্ছ্বাস ছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও দুজন যেহেতু অপেক্ষা করে আছে সবকিছু শোনার জন্য, তাই বলতে শুরু করে। সবকিছু শুনে শিরিন রেগে ওঠে
— বা রে, একজন এসে বলল, ওর চাকরী বেশি দরকার, আর তুমি দিয়ে দিলে?
অদিতি স্মিত হাসে।
— সেজন্য দিইনি।
শিরিন উত্তেজিত হয়ে ওঠে
— তাহলে?
— ও বলল, চাকরীর জন্য ওর বিয়ে আটকে আছে।
— তো?
— তো, তখন তোর কথা মনে পড়ে গেল। একবার মনে হয়েছিল এই ছেলেটাই বুঝি শিহাব। নাম ও জানতে চাইলাম।
শিরিন এবার হেসে ফেলে।
— তুমি না একটা পাগল। ভাল চাকরীর জন্য কত ছেলের বিয়ে আটকে আছে, জানো? সবাইকেই কি তুমি চাকরী গিফট করবে নাকি?
এমন সময় নওরিন বলে ওঠে
— একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। ঐ লোকের কোন হেল্প নাওয়া আমার একদম ভাল লাগছিল না।
শিরিন এবার অদিতির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে
— এবার তো তাহলে তোমাকে মডেলিংয়ে নামতে হবে। কিসের অ্যাড রে?
নওরিন উত্তর দিল
— ম্যালামাইনের বাসন কোসন। স্টিল ফটো স্যুট। কথা বলেছিলাম, হবে না মনে হচ্ছে।
— কি বলল?
— পার্টি আমাকেই চায়। নতুন ফেস নেবে না। শাড়ি ফারি পড়িয়ে বাঙ্গালী বানাবার চেষ্টা করা হবে আমাকে।
অদিতির দিকে তাকিয়ে শিরিন বলে
— যাহ। তোমার মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল।
নওরিন প্রতিবাদ করে
— শেষ হবে কেন?
অদিতি এবার ওদের দুজনকে থামায়।
— কুল ডাউন এভ্রি বডি। আমার মডেলিং ক্যারিয়ার নিয়ে পরে আলাপ করা যাবে। এখন বেশি জরুরী হচ্ছে এটা জানা যে নওরিনের কি হয়েছে।
নওরিন এবার কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে যায়। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বলে
— বলছি তো কিছু হয়নি। দিনটা জাস্ট খুব হেক্টিক গেছে।
অদিতি এবার নওরিনের দিকে তাকায়।
— আর একবার জানতে চাইব, যদি না বলিস, আর জিজ্ঞেস করব না।
অদিতির গলার আওয়াজে কিছু একটা ছিল। নওরিন প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে যায়। এরপরে ধীরে ধীরে অদিতির কাছে এগিয়ে আসে। বলে
— সেই ডিরেক্টর ব্যাটাকে আজকে 'না' বলে এসেছি।
অদিতি নওরিনের দিকে তাকায়। এরপরে ধীরে ধীরে বলে
— খারাপ লাগছে?
নওরিন ইশারায় বোঝায়, হ্যাঁ। এরপরে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে অদিতির পাশে বসে। বলে
— এতোটা খারাপ লাগবে বুঝতে পারিনি।
— মনে তো হচ্ছে, প্রেমে পড়ে গিয়েছিস।
নওরিন ঠোঁট উল্টিয়ে শ্র্যাগ করে। বোঝাতে চায়, সিওর না।
এমন সময় ফোনটা আসল। ফয়সাল ফোন করেছে। নওরিনও দেখতে পায়। মুহূর্তে নওরিনের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। অদিতির দিকে তাকায়। বলে
— যা শিখিয়ে দিয়েছি, বল। এই শালাকে আমি ছাড়ব না।
অদিতি এবার আর হেজিটেট করে না। বেশ শান্ত ভাবেই ফোনটা হাতে নেয়। রিসিভ বাটন চেপে ফোনটা রিসিভ করে। মুখ চোখ শক্ত হয়ে যায়। বেশ স্থির গলায় স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করে
— বলো
— কি ঠিক করলা? আসবা?
— না। তুমি যা খুশি করতে পার।
— ভেবে দেখ। সারা জীবনের জন্য বদনাম হইয়া যাবা।
— ভেবেই বলছি। চাইলে আজকেই ছড়িয়ে দিতে পারো।
— তারপরে কি হবে ভেবে দেখেছো?
— না, ভাবিনি। ছড়াও, তারপরে ভাবব।
— কাজটা কি ভাল করলা?
— না। খুব খারাপ করলাম। আর কিছু বলবা?
আর কিছু না বলে ফয়সাল ফোনটা রেখে দিল। অদিতিও ফোনটা রাখে। এতো সহজে কিভাবে কাজটা করতে পারল, তা ভেবে অবাকই লাগল অদিতির। একটা নির্ভার অনুভূতি সারা শরীরে ছড়িয়ে গেল। মনে হল মাথা থেকে বিশাল এক চিন্তার বোঝা নেমে গেল। ধীরে ধীরে চোখ তুলল।
দেখল শিরিন আর নওরিন ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অদিতি স্মিত হাসে। নওরিনের চোখে খুশি ঝড়ে পড়ছে। সে বলে ওঠে
— বাঘের বাচ্চা। আই কান্ট বিলিভ ইট। তুমি এতোটা সাহসী হয়ে উঠবা, আমি ভাবতেই পারিনি। গ্রেট ডিসিশান।
শিরিনও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। থেমে গেল। অদিতি ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে নওরিনের হাত ধরে।
— তোর জন্যই পারলাম। আমার ভেতরে বোধহয় তুই বেশ অনেকটা সাহস ঢুকিয়ে দিয়েছিস।
নওরিন স্মিত হাসি হেসে প্রশংসাটা মেনে নেয়। অদিতি তখনও বলে চলে। নওরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে খুব নরম স্বরে বলে
— বাট, তোর বোধহয় খুব বড় একটা ক্ষতি করলাম। তোকে হয়তো একটা ভুল ডিসিশান নিতে এনকারেজ করে ফেললাম।
চলবে

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: অনেকগুলো পর্ব মিস হয়ে গিয়েছিল তাই পরের পর্বে যাচ্ছি। ভাল থাকুন।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:২৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ইন্টারেষ্টিং!!! তারপর?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১১

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩৬

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: পড়েছি! সুন্দর বরাবরের মতোই!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১০

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.