নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৪২

১১
একাকীত্ব ব্যাপারটা এই কদিন বেশ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নীরব। অফিস থেকে ফিরে এসে সময় আর কাটতে চায় না। টিভি দেখার চেষ্টা করে, হয় না। খাওয়া দাওয়া নিয়েও হয়েছে সমস্যা। কাছেই এক হোটেল আছে, ওদের বলে রেখেছে, প্রতিদিন খাবার পাঠিয়ে দিতে। সেভাবেই চলছে। খুব বিস্বাদ না, তবে প্রতিদিন সেসব খেতে আর ভাল লাগছে না। মাকে যে ডেকে পাঠাবে, সে সাহসও পাচ্ছে না। অদিতি কেন বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় আছে, এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবে?
ইতিমধ্যে অদিতির বাবা জেনে গেছেন, অদিতি এক লেডিস হোস্টেলে উঠেছে। কারণ জানবার জন্য তিনি ফোন করেছিলেন নীরবকে। নীরব ব্যাপারটার জন্য প্রস্তুত ছিল। সে ও জানিয়ে দেয়, তাঁদের সম্পর্ক ইদানীং ভাল যাচ্ছে না। সে ই তাকে বলেছে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। রাগ করে হোস্টেলে গিয়ে উঠেছে। কথাটা অদিতির বাবা বিশ্বাস হয় না, অবাক হয়ে ভাবেন তেমন কিছু হলে অদিতি তাঁর কাছে এল না কেন? তিনি অদিতিকে ফোন করেন। নীরব আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, সে অদিতির বাবাকে কি বলেছে। অদিতিও বাবাকে জানায়, সে বাবার বাড়িতে ইচ্ছে করেই ওঠেনি। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আপাততঃ উনি ব্যাপারটা বিশ্বাস করেছেন।
কিন্তু মা আসলে, ব্যাপারটা অন্য চেহারা নিবে।'বাড়ির বউ’ ‘বাড়ির সমস্যা’ এসব ব্যাপারে তিনি বেশ রক্ষণশীল। যা কিছুই হোক না কেন, বাড়ির সমস্যা বাইরে আলোচিত হতে দিতে তিনি নারাজ। এর আগে যে কবার অদিতির সাথে নীরবের ঝগড়া হয়েছে, প্রতিবার তিনি অদিতির পক্ষ নিয়েছেন। অদিতিকে রাগ করে বাপের বাড়ি যেতে দেননি। এবারও তিনি তা ই করবেন।
মা আজকে ফোন দিয়েছিলেন। উনার কানেও ব্যাপারটা গেছে। অদিতি বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। উনি জানালেন আগামীকাল উনি আসছেন। নীরব নিশ্চিত এসেই হয় মা নিজে যাবেন আর নয়তো নীরবকে পাঠাবেন অদিতিকে নিয়ে আসতে। আর এটা আটকাবার একটাই পথ, মাকে সবকিছু বলা। সেটা নীরব পারবে না। অন্ততঃ নিজের মুখে বলতে পারবে না। মা কে কিভাবে ডিল করবে, সেটা নীরব এখনও ঠিক করেনি।
আজকে সকালেই অদিতি ফোন করেছিল। জানিয়েছে, সে ফয়সালকে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। যেকোন সময়ে হয়তো সে ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবে। আর সেটা হলে, পরিস্থিতি কি হবে, তা ভাবতেই পারছে না। সবাইকে কি মুখ দেখাবে? পথে ঘাটে তখন একটাই কথা তাকে শুনতে হবে ‘ভাই কথাটা কি সত্যি নাকি?’ কেউ কেউ হয়তো আরও স্পষ্টভাবে জানতে চাইবে, ‘আপনার ওয়াইফের নাকি কি সব ছবি বেরিয়েছে?’
ঘটনা যেদিন জানতে পারে, সেদিন তো প্রথমে কথাটা বিশ্বাসই করতে পারেনি। সেই রাতে একফোঁটা ঘুমাতে পারেনি। তবে অদিতিকে নিয়ে যত না ভেবেছে তার চেয়ে বেশি ভেবেছে, 'এখন কি হবে’ তা নিয়ে। ব্যাপারটা সবাই জানলে তার সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। অদিতি যা করেছে, তার শাস্তি না হয় সে পেল, কিন্তু সে কি অন্যায় করেছে? তাকে কেন সবার সামনে ছোট হতে হবে?
সমস্যার কোন সুরাহা করতে পারে না। আইডিয়াটা নিয়ে যে কারো সাথে আলাপ করবে, তার উপায় ছিল না। এক বন্ধুর সাথে আলাপ করতে গিয়েছিল, বলেছিল পরিচিত এক মেয়ে এই সমস্যায় পড়েছে। সে সোজা উত্তর দিয়েছিল, ওর বরের উচিত ওকে লাথি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়া। নীরব বুঝল, ব্যাটা মোটা বুদ্ধির লোক। কিন্তু তাঁর দরকার ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়ার লোক। তেমন বলতে হাতের কাছে কাউকেই পাচ্ছে না। একজনের নামই মনে এসেছিল, মায়ের কথা। কিন্তু এই ব্যাপারে মনে হয় না তিনিও এতোটা মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারবেন।
তাই অবশেষে সে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়। লেডিস হোস্টেলের আইডিয়াটা হঠাৎ করেই মাথায় আসে। ধানমণ্ডির হোস্টেলে একসময় তাঁর এক কলিগ থাকতো। মাঝে মাঝে সেখানকার গল্প করত। পরিবেশ ভাল, খাওয়া দাওয়া ও ভাল। তাঁর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে সব ব্যাবস্থা করে। আর এর মাঝে সে ধীরে ধীরে সবাইকে বলতে থাকে, স্ত্রীর সাথে বনিবনা হচ্ছে না। সে আলাদা থাকছে।
তাঁর এই প্ল্যান কতোটা কাজে দেবে, তা অচিরেই বোঝা যাবে। ছবিগুলো প্রচার হলে, তখন বোঝা যাবে, মানুষজন ব্যাপারটাকে কিভাবে নেয়। অদিতির স্ক্যান্ডাল? না নীরবের বউয়ের? বউ এখন আলাদা থাকে, ব্যাপারটা এতদিন ধরে রটিয়ে আদৌ কোন উপকার হল কি না? কাজে দিলে, তখন ভাবতে বসবে, অদিতির সাথে সম্পর্কের কি করবে। ঠিক করেছে, ওকে যদি ছেড়ে দেয়ও, ওর জন্য একটা কিছু ব্যবস্থা করবে। চাকরীর একটা ব্যাবস্থা করেছিল, মেয়েটা গাধার মত সেটা হাতছাড়া করে দিল।
সকালে খবরটা জানবার পর থেকেই সারাদিন টেনশানে কেটেছে। প্রতি মুহূর্তে মোবাইলের দিকে তাকিয়েছে, অদিতি আর কোন খবর দেয় কি না। দেয়নি। বিকেলে একবার ফোন করেছিল, অদিতি ধরেনি। রাগ করেছে? না ঘুমাচ্ছিল? বোঝার উপায় নেই। সন্ধ্যায়ও যখন ফোন ধরল না, তখন নীরব ঘাবড়ে গেল। ছবিগুলো কি তবে ছড়িয়ে দিয়েছে?
কিছুক্ষণের ভেতরেই টেনশান চরমে উঠল। দেখলে, সে আর স্থির থাকতে পারছে না। ঠিক করল, ধানমন্ডি যাবে। গিয়েই দেখবে কি অবস্থা। ভেবে দেখল, গাড়ি নেয়াটা ঠিক হবে না, তাই ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সময়টা জ্যামের। তাই পৌঁছতে ঘণ্টা দুয়েক লেগে গেল। যখন পৌঁছল তখন প্রায় সাড়ে নটা। বাইরের গেস্ট রাত দশটা পর্যন্ত অ্যালাউড।
পৌঁছেই অদিতির জন্য কল পাঠাল। দারোয়ান একবার ঘড়ি দেখল। এরপরে বিরক্ত মুখে চারতলার ইন্টারকমে ফোন দিল। জানাল অদিতি ম্যাডামের গেস্ট এসেছে। নাম নীরব। কিছুক্ষণ পরে অদিতি নেমে আসল। নীরব বেশ উৎকণ্ঠার সাথেই জানতে চাইল,
— ফোন ধরনি কেন?
উত্তরে অদিতি জানাল
— ঘুম আসছিল না, তাই আজকে ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলাম। তারপরে এমন ঘুম। খালা এসে ডেকে উঠাল।
— আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তুমি আবার কিছু করে বসলা কি না।
অদিতি স্মিত হাসে
— নাহ। সুইসাইড ফুইসাইড করব না। যা হওয়ার হবে।
এমন সময় দেখা গেল নওরিন আর শিরিন সিঁড়ি দিই নেমে এল। ওদের দেখে অদিতি স্মিত হাসি দিল। এরপরে বলল
— আয়।
এরপরে নীরবের দিকে তাকিয়ে বলল
— এরা আমার রুমমেট। ও নওরিন আর ও শিরিন। আর এ হচ্ছে…
অদিতিকে কথাটা শেষ করতে না দিয়ে নীরব বলে ওঠে
— পরিচিত।
অদিতি কিছুটা অবাক হয়ে নীরবের দিকে তাকায়। এরপরে নওরিন আর শিরিনের দিকে। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। নওরিন ব্যাপারটা সামলাতে নিজে থেকেই বলে
— তোমরা গল্প কর, আমরা রুমে গেলাম।
ওরা চলে যাওয়ার পরে অদিতি নীরবের দিকে তাকায়। নীরব চাপা স্বরে বলে
— এখনই তো সব প্ল্যানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিলা।
অদিতি কোন উত্তর দেয় না। ওর কথা বলার রুচি নষ্ট হয়ে গেছে। অদিতি মন খারাপ করেছে দেখে নীরব বোঝানোর চেষ্টা করে
— এখানে তোমাকে এনেছিই তো একটা কারণে। কেউ যেন না জানে আমরা একসাথে আছি।
— আর কিছু বলবা?
নীরব বোঝে, অদিতি বেশ রেগে গেছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। জিজ্ঞেস করে
— রাতের খাবার খেয়েছ?
— নাহ। এখন খাব।
— দরকার নাই, চল আজকে বাইরে খাব।
অদিতি নীরবের দিকে তাকায়। ওর যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছে নাই। জানায়
— এখানে ঢোকার লাস্ট টাইম রাত সাড়ে দশটা। এখন বেরোলে এগারোটার আগে ফিরতে পারব না।
নীরব নিজের ঘড়ির দিকে তাকায়। সমস্যাটা বোঝে। মালিক ভদ্রমহিলাকে ফোন করা যায়, কিন্তু তাহলে আবার নিজের পরিচয় জানাতে হবে। ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন এতো রাতে সাথে নিয়ে যাচ্ছে। তারচেয়ে বরং…। সেটাই ভাল। অদিতির দিকে তাকিয়ে নীরব বলে
— দরকার নেই ফেরত আসার। কোন হোটেলে থেকে যাব। তুমি বরং জানিয়ে আস যে রাতে আর ফিরবা না।
চলবে

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:২৬

বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাঁড়ুদাড় বলেছেন: অদিতি

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

সানহিমেল বলেছেন: প্রতিদিন নিয়ম করে আপনার গল্পগুলো পড়তে ভালোই লাগছে। প্রতিটা পর্বের পর অপেক্ষায় থাকি কখন পরবর্তী পর্ব আসবে।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৫৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এই পর্বে এসেও দৌড় থামলা না পরের পর্বে যাই। ভাল থাকবেন ভাই।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:৩২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দারুন হচ্ছে!

কাহিনীর সাসপেন্স বাড়ছেই কেবল :)

+++

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩৭

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: দারুণ!

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.