নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:২৪

১৩
— একটা অনুরোধ করতে আসলাম।
অদিতি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিল। এরপরে নওরিন আর শিরিনের দিকে তাকাল। দেখল ওরা একবার সেই ভদ্রলোকের দিকে আর একবার অদিতির দিকে তাকাচ্ছে।
— আমার দুই রুমমেট, ও নওরিন, আর ও শিরিন।
দুজনেই স্মিত হাসি দিয়ে অভিবাদন জানাল। এবার সেই ভদ্রলোকের দিকে ইঙ্গিত করে বলল
— ইনি…
— আশফাক আহমেদ।
ভদ্রলোক নিজে থেকেই বললেন। নওরিন আর শিরিনের চোখ থেকে বিস্ময় এখনও যাচ্ছে না। ভদ্রলোক আবার বললেন
— অনুরোধটা কি করতে পারি?
— আমার হাতে কিন্তু আর কোন চাকরী নাই।
নওরিন আর শিরিন সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলল লোকটি কে। নওরিন উত্তেজিত হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল। অদিতি হাত দিয়ে নওরিনের হাত ধরে ফেলল। ইশারায় বোঝাল শান্ত থাকতে। এরপরে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
— বলুন।
— ক্যান আই পে ইয়োর বিল?
অদিতি স্মিত হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে
— কৃতজ্ঞতা?
— সর্ট অফ।
অদিতি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে জানায়
— থ্যাংকস। আজকে আমার রুমমেট আমাদেরকে ট্রিট দিচ্ছে।
— আরেকটা ছোট্ট প্রশ্ন ছিল
এবার বেশ অবাক হয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকায় অদিতি। জিজ্ঞেস করে
— বলুন
— আপনি আসলে ঠিক কেন চাকরীটা ছেড়ে দিলেন। আই মিন সত্যিই কি আমার কথা বিশ্বাস করেছিলেন? না চাকরীটা করার ইচ্ছে ছিল না?
— সেটা কি জানা জরুরী?
— কিছুটা। কারণ যে গল্প আপনাকে আমি শুনিয়েছিলাম, সেটা মিথ্যে ছিল।
অদিতি বেশ অবাক হয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকাল।
— মানে?
— মানে একটা বানোয়াট গল্প বানিয়ে আপনাকে ইমোশানাল ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছিলাম। অ্যান্ড আপনি ফাঁদে পড়ে যান। বাট চাকরীটা আমার জন্য জরুরী ছিল। তবে বিয়ের ব্যাপারটা মিথ্যে ছিল। অ্যান্ড স্যালারির অর্ধেকটাও আমি দিব না।
অদিতির অবাক ভাবটা তখনও যায়নি। জিজ্ঞেস করল
— আর এই অনেস্ট কনফেশানের কারণ?
— কারণটা পার্সোনাল। যদি অনুমতি দেন তবে সবার সামনেই বলতে পারি।
এমন সময় নওরিন বলে উঠল
— প্রেমে পড়েছেন নাকি?
ভদ্রলোক নওরিনের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিল। এরপরে অদিতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
— আই নো ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত শোনাচ্ছে, বাট, ইটস ট্রু।
অদিতি এবার দুষ্টুমির হাসি দিল। জিজ্ঞেস করল
— প্রেমে পড়বার আগে এটা তো চেক করে দেখবেন, মেয়েটা ম্যারিড কি না?
— সেটা চেক করেছি। আপনার সিভিতে লেখা ছিল, আন ম্যারিড।
অদিতি আড়চোখে নওরিন আর শিরিনের দিকে তাকাল। দুজনেই মিটিমিটি হাসছে। অদিতি নিজের হাসি সামলে নিয়ে আবার ভদ্রলোকের দিকে তাকাল। ভদ্রলোক আবার বললেন
— আমার আসলে আপনার মত একজন গাধা মেয়েই পছন্দ।
অদিতি এবার বেশ অবাক হয়। অনুভব করল কথাটা শুনে রাগের বদলে কেমন কৌতূহল কাজ করছে
— তা গাধা মেয়ের উপকারিতা?
— প্রথম উপকারিতা, মিথ্যে বলে পার পাওয়া যায়। বাইরে যা খুশি করে আসি না কেন, একটা গল্প বানিয়ে বললেই কাহিনী শেষ। আর সেকেন্ড উপকারিতা, এরা খুব ভাল ভালবাসতে পারে। খাঁটি টাইপের প্রেম আর কি। ওটাও পাওয়া যাবে।
অদিতি বেশ হাসি মুখ নিয়েই কথাগুলো শুনল। এরপরে ভদ্রলোকের টেবিলের দিকে ইঙ্গিত করে বলল
— আপনার টেবিলে খাবার সার্ভ হচ্ছে।
ভদ্রলোক ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের টেবিলের দিকে তাকাল। এরপরে অদিতির দিকে তাকিয়ে জানাল
— দে উইল ওয়েট। হোস্ট তো আমিই। চাকরী পাওয়া উপলক্ষে ট্রিট দিচ্ছি আর কি। এনিওয়ে, আপনাকে আজকেই উত্তর দিতে হবে না, টেক ইয়োর টাইম।
এরপরে পকেট থেকে নিজের কার্ড বের করে টেবিলের ওপরে রাখল।
— আপনি যদি সত্যিই গাধা হন, তবে তিনদিনের ভেতরে আমাকে ফোন করবেন, আর যদি না হন, তবে আপনাকে আমার দরকার নাই। ফোন না করলেও চলবে।
কথাটা বলে ভদ্রলোক নিজের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। অদিতি বেশ অবাক হয়ে ভদ্রলোকের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকাল। নওরিন আর শিরিনও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল। নওরিনই প্রথম কথা বলল
— কি অভদ্র একটা লোক
— বাট ইন্টেরেস্টিং।
অদিতির মুখে এই কথা শুনে দুজনেই বেশ চমকে উঠল। শিরিন চোখ গোল গোল করে তাকাল।
— মানে?
কার্ডটা হাতে নিয়ে অদিতি বেশ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল। এরপরে কার্ডের দিকে তাকিয়েই বলল
— ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখ, কথাগুলো তো সত্যি। চিনি না জানি না একজন লোক একটা গল্প বলল, আর আমি বিশ্বাস করে চাকরীটা ওকে দিয়ে দিলাম, কাজটা তো গাধামীই। তাই না? বলেছে বাজেভাবে, এই যা।
শিরিন প্রতিবাদ করল
— ব্যাপারটা কিন্তু পুরোপুরি তা না। শিহাবের গল্পের সাথে মিলে গিয়েছিল, বলেই হয়তো তুমি লোকটার প্রতি সফট হয়ে গিয়েছিলে। হয়তো সেজন্যই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলে।
— তারপরও, কাজটা গাধামি। শিহাবের জন্য করলে সেটা হত তোকে হেল্প করা, বাট ঐ একই টাইপের গল্প হওয়ার কারণে আরেকজনের জন্য চাকরী ছেড়ে দেয়া, আই থিংক, হি ইজ রাইট।
নওরিন এবার সন্দেহের চোখে অদিতির দিকে তাকায়
— আমার ধারণা তুমি এই ব্যাটাকে তিনদিনের ভেতরেই ফোন করবা।
অদিতিও বেশ সন্দেহভরা চোখে নওরিনের দিকে তাকাল। এরপর স্বগতোক্তির মত করে বলল
— সেই কিশোরী বয়সের মত এক্সাইটেড ফিল করছি।
এমন সময় খাবার এসে গেল। খাওয়া সার্ভ করা হলে নওরিন আবার আলাপ তুলল
— দ্যা গাই ইজ রিয়েলি হ্যান্ডসাম। তুমি কোন কারণে মিস করলে, বল। আই উইল ট্রাই।
সবাই হেসে উঠল। এরপরে এনিয়ে আর আলাপ হল না। মাঝে মাঝে কেবল দুএকবার সেই টেবিলের দিকে তাকাল। ভদ্রলোক আর একবারও ফিরে তাকাল না। ব্যাপারটা বেশ অবাক করে দিল সবাইকে। তবে কথাটা নওরিনই বলল
— একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছ? ব্যাটা কিন্তু ড্যাম কনফিডেন্ট। অন্য কেউ হলে এক আধবার কিন্তু ঘাড় ঘুরিয়ে দেখত।
শিরিন মৃদু প্রতিবাদ করল
— ওটাও ওর প্ল্যানের অংশ হতে পারে। ও জানে, ফিরে তাকালেই ও হালকা হয়ে যাবে।
অদিতির আর এই ব্যাপারে আলাপ করতে ইচ্ছে করছিল না। বলল
— লিভ ইট। তারচেয়ে বরং তোর সেই ডিরেক্টরের গল্প কর। তোকে আর রিকোয়েস্ট করল?
নওরিন বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
— নাহ। বেচারা বড় ধাক্কা খেয়েছে। সম্ভবতঃ বেশ কনফিডেন্ট ছিল, আমি হ্যাঁ বলব।
— তারপরও, আরও দু এক বার তো ট্রাই করবে।
— মনে হয় না। আরেক হিরোইনের সাথে দেখলাম সেদিন।
— মানে?
— মানে ইউ ডিড রাইট থিং। ব্যাটা এতো হালকা টাইপ হবে, ভাবতে পারিনি। একজন না বলল কি আরেকজনের পেছনে দৌড় শুরু।
অদিতি হেসে ফেলল। বলল
— যদিও ব্যাপারটা দুঃখের, বাট শান্তি লাগছে। একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল।
— আমারও। উচিত ছিল জেলাস ফিল করা, বাট… আসলে ছেলেদের চেনা টাফ। এখনই মনে হয়, বেশ পারসোনালিটি আছে, আবার এমন একটা কিছু করে যে, মনে হয় এর চেয়ে ফাউল ছেলে আর হয় না।
খাওয়া দাওয়া কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। বিলও দেয়া হয়ে গেছে। ওরা উঠবে। এমন সময় লক্ষ্য করল সেই ভদ্রলোক এবং তার দলবলও উঠছে। এখন বেরোলে দরজায় গিয়ে আবার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা। অদিতি ইচ্ছে করেই ওদের তাই থামাল।
— একটু পরে উঠি।
নওরিন অবাক হল। জিজ্ঞেস করল
— কেন?
— এখন উঠলে দরজার কাছে গিয়ে ওদেরকে আবার ফেস করতে হবে।
নওরিন বেশ অবাক হয়ে অদিতির দিকে তাকাল। জানতে চাইল
— তো? ওকে ভয় পাই নাকি?
— ইয়েস। আর বার কয়েক দেখা হলে মনে হচ্ছে প্রেমে পড়ে যাব।
নওরিন আর শিরিন এবার সত্যিই অবাক হয়ে অদিতির দিকে তাকাল।
— আর ইউ সিরিয়াস?
অদিতি কিছু উত্তর দেয়ার আগেই অদিতির মোবাইলে ম্যাসেজ আসবার টোন শোনা গেল। অদিতি মোবাইল বের করে সেদিকে তাকাল। দেখা গেল ইংরেজিতে লেখা কিছু একটা ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাসেজটা কে পাঠিয়েছে সেটাও লেখা আছে। ফয়সাল পাঠিয়েছে। ম্যাসেজটা নওরিনকে দেখাল। নওরিন ম্যাসেজ আর ম্যাসেজের সেন্ডারের নাম দেখে বলল
— এটা একটা লিঙ্ক। মনে হচ্ছে ছবিগুলো আপলোড মেরেছে। লিঙ্কে ক্লিক করলে দেখা যাবে।
চলবে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গেজ মিললনা! দারুন নতুন ইস্যু টেনে এনেছেন!!!

দেখা যাক শেষ কোথায়?

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৩৯

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: অসাধারণ লাগল ভদ্রলোক আর অদিতির কথাগুলো!

আর শেষের সাসপেন্স তো অসাধারণ জবাব নেই!

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এইটুকু আজ পড়লাম। দীর্ঘবিরতির পর গল্পটি পড়ে শেষ করবো ভাবছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.