নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদিতি

৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৪:০৭

১৪
ছবির লিঙ্কটা দেখার পরে প্রথমটায় রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল অদিতির। হাত কাঁপছিল। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। নওরিন ঘাড়ে হাত রেখে সাহস দিল। বলল
— একদম ঘাবড়াবে না। যা হওয়ার হবে। খুব বেশি কি হবে, কিছু পারভার্ট এসব দেখে মাস্টারবেট করবে। এই তো। এজন্য এতো কুঁকড়ে যাওয়ার কি আছে?
কথাটা বলা যত সহজ, পুরো ব্যাপারটা ততোটা সহজ না। এর সঙ্গে আরও যোগ হবে মানুষজনের নোংরা দৃষ্টি, গসিপ আর ফিসফিসানি। দরজার দিকে তাকিয়ে যখন দেখল, সেই গ্রুপ বেরিয়ে গেছে, তখন ওরাও উঠে পড়ল। চাইনিজটা ছিল হোস্টেলের কাছেই। আসবার সময় হেঁটেই এসেছিল। এবারও তাই করল। হেঁটেই ফিরতে শুরু করল। রাত তেমন একটা বেশি হয়নি।
পুরো রাস্তা অদিতি তেমন কথা বলল না। নওরিন কয়েকবার চেষ্টা করল। পারল না। হু হা ছাড়া তেমন কোন কথা বলছিল না অদিতি। বাধ্য হয়ে সবাই চুপ করে গেল। রুমে পৌঁছেই অদিতি বলল
— ওটা কিসের ম্যাসেজ, একটু চেক করে দেখবি?
নওরিন আশ্বস্ত করল। এখনই দেখে দিচ্ছে। অদিতি মোবাইলে ইন্টারনেট নেই। তাই সে দ্রুত ম্যাসেজটা নিজের মোবাইলে ফরওয়ার্ড করে নিল। এরপরে লিঙ্কে ক্লিক করল। যা ভেবেছিল তাই। অদিতি পাঁচটা নগ্ন ছবি। তখন অদিতির বয়স ছিল আঠার কিংবা উনিশ। ছবিগুলোতে একবার চোখ বুলিয়েই অদিতি সরে গেল। ও আসলে ভয় পেয়েছে, না লজ্জা পাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে না। নিজের বিছানায় চুপ করে বসে থাকল কিছুক্ষণ। শিরিন আর নওরিন বুঝে উঠতে পারছে না, ওরা কি করবে। একা থাকতে দিবে, না সান্ত্বনা দিবে। এমন সময় ফোনটা আসল। স্ক্রিনে দেখা গেল নামটা। ‘ফয়সাল’।
ফোনটা টনিকের মত কাজ করল। হঠাৎ অদিতি আমূল পাল্টে গেল। চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। নওরিন তাকিয়ে থাকল অদিতির দিকে, মনে প্রত্যাশা, শক্তভাবে যেন মোকাবেলা করে। ফোনটা ধরল অদিতি
— দেখলা ছবিগুলো?
— হ্যাঁ, দেখলাম
— সরি, তুমি আর কোন অপশান রাখো নাই। তাই কাজটা করতে হল।
— ফোন করেছ কেন?
— এই খবর নিতে। কেমন আছ?
— ভাল।
— একটা কথা শুনলাম, সত্যি নাকি?
— হ্যাঁ সত্যি
— শুনলাই তো না কি কথা।
— আর কিছু বলার আছে?
— তোমার হাসবেন্ড কি তোমারে এই ছবির জন্য তাড়ায়া দিছে?
অদিতি অনেক কষ্টে রাগ চাপল। আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল স্বাভাবিক গলায় কথা বলার। নিজের রাগ সে ফয়সালকে দেখাতে চায় না। ফয়সাল বলে চলল
— তুমি না একটা বোকা। হাসব্যান্ডরে এইসব কেউ বলে? তুমি রাজী হইলে কি আর আমি এসব ছড়াইতাম? একটু ম্যানেজ কইরা আসলেই তো আর কোন সমস্যা হইত না। শুধু শুধু জেদাজেদি করলা।
— কথা শেষ?
— এখন কি করবা?
— কিছুই না।
— থাকার জায়গার সমস্যা হইলে আমি হেল্প করতে পারি।
— জানা থাকল। আর কিছু?
— নাহ আর কিছু না। এখন থাকতাছো কোথায়? তোমাদের বাসায়ও তো দেখি আসো নাই।
— একটা লেডিস হোস্টেলে থাকি। ঠিকানা লাগবে?
— নাহ। তোমারে যে আর পাওয়া যাবে না, তা তো বুইঝাই গেছি। তারপরও যদি সমস্যা হয়, ফোন নম্বর তো আছেই।
— হ্যাঁ, জানাবো। রাখি তাইলে?
কথাগুলো শেষ করে কেমন একটা শান্তি বোধ করল। এতদিন যে চাপা দুশ্চিন্তাটা ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল, হঠাৎ করেই যেন সেটা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেল। নওরিনকে ডাকল।
— নিয়ে আয় তো মোবাইলটা।
নওরিন বোঝার চেষ্টা করল অদিতি ঠিক আছে কি না। কিছুটা সন্দেহ হল। কিছুটা সংকোচ নিয়েই অদিতি বিছানায় এসে বসল
— ছবিগুলো আরেকবার দেখব।
নওরিন লিঙ্কে ক্লিক করল। প্রথম ছবিটা ভেসে উঠল। ছবিটার দিকে তাকিয়ে অদিতি বলতে লাগল
— এটা দ্বিতীয়বার। গাজীপুরের দিকে একটা গেস্টহাউজ টাইপ ছিল। ওখানে গিয়েছিলাম। বাসায় বলে গিয়েছিলাম বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছি। রাতে ওখানে থাকব। আর এই কাজ করেছিলাম। ভাবতে পারিস, কতোটা বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিলাম। আসলে তখন ফয়সাল ছাড়া আর কিছুই বুঝতাম না।
ছবিগুলোর দিকে নওরিন বেশ কয়েকবার তাকাল। কি বলবয়ে বুঝতে পারছে না। তারপর বলল
— একটা কথা বলব?
অদিতি স্মিত হাসি দিয়ে সম্মতি জানাল
— ইউ রিয়েলি হ্যাড অ্যা নাইস ফিগার।
অদিতি নিজেও আবার ছবিটার দিকে তাকাল। মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানাল। নওরিনের কেমন যেন সন্দেহ হল। জানতে চাইল
— তুমি ঠিক আছ তো?
অদিতি মিষ্টি করে হাসল।
— ভয় নাই। পাগল হয়ে যাইনি। ঠিকই আছি। কেমন একটা রিলিফ ফিল করছি। একটা ঘটনা ঘটবে, এই টেনশানের চেয়ে ঘটনাটা ঘটে যাওয়াই বরং সুবিধার।
এমন সময় শিরিন বলল
— নীরব ভাইকে কি একটু ফোন করে জানিয়ে দিলে হত না?
অদিতি একটু ভাবল। তারপর বলল
— খারাপ বলিসনি। ওর খবরটাও একটু নেয়া দরকার। বাট তার আগে বাবাকে ফোন করি।
ফোনটা হাতে নিয়ে বাবাকে লাগাল অদিতি। রাত সাড়ে দশটা তখন। বাবা রাতে খবর, টক শো এসব দেখে তবে ঘুমাতে যান। তাই ঘুমাতে ঘুমাতে বারোটা বাজে। ফোনটা ধরলেন
— কি খবর রে মা।
— এই তো। তোমার খবর অনেকদিন নেয়া হয় না। তাই ফোন করলাম।
— তোদের সমস্যা মিটল?
— হ্যাঁ। মিটে গেছে।
— মিটে গেছে মানে কি? বাসায় ফিরে এসেছিস?
— মিটে গেছে মানে ডিভোর্স নিব ঠিক করেছি। এতদিন ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। আজকে নিয়ে ফেললাম।
— কি বলছিস এসব?
— কাল আমি বাসায় এসে তোমাকে ডিটেলস বলব।
— সে আয়। কিন্তু আজকে আরেকটা কথা শুনলাম।
— কি কথা?
— আজকে ফয়সাল এসেছিল। ঐ যে, ইলিয়াস সাহেবের ছেলে, ও নাকি কার কাছে শুনেছে, তোকে নাকি নীরব তাড়িয়ে দিয়েছে বাসা থেকে।
— ঠিকই শুনেছে।
— মানে? তাড়িয়ে দিবে কেন?
— শোন বাবা। কারো কাছে কিছু শোনার দরকার নাই। আম কাল এসে সব কথা বলব। ঠিক আছে?
— সেটা না হয় বলবি, কিন্তু তাড়িয়ে দেয়ার মত কি ঘটল?
— শোন বাবা, আমি বলছি তো সব বলব। এখন একদম টেনশান করবে না। একটা ঘুমের ওষুধ খাবে আর সুন্দর একটা ঘুম দিবে। কাল সকালে এসেই আমি সব জানাব।
ফোনটা রেখে অদিতি খানিকটা ভাবে, কাজটা ঠিক করল কি না। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুটা টাচ দিয়ে রাখা জরুরী ছিল। ফয়সাল তার মানে ওদের বাসায় গিয়েছিল। রিয়াকশান দেখতে? মনে হচ্ছে বাড্ডাতেও একটা চক্কর মেরে এসেছে। কতোটা ক্ষতি করল, তার হিসেব করছে।
যাক, কথাটা নীরবকেও জানানো দরকার। ডিভোর্সের ব্যাপারেও একটা ফয়সালা করা জরুরী। নীরব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফোনটা লাগাল। রিং হচ্ছে। কেউ একজন রিসিভ করল। অদিতি কথা শুরু করল
— হ্যালো
— হারামজাদী, তোর সাহস তো কম না, এতোসব কাণ্ড করে আবার নীরবকে ফোন করিস।
নীরবের মায়ের গলা। যা বোঝার বুঝে গেল অদিতি। নীরবের মা সবকিছু জেনে গেছেন। নীরব কিংবা অন্য কারো কাছে জেনেছেন। তাঁর সিদ্ধান্তও বোঝা হয়ে গেল। শুধু জানতে পারল না, নীরবের কি অবস্থা। ফোনটা কেটে দিল।
— কি বলল?
পাশ থেকে উৎকণ্ঠিত শিরিন জানতে চাইল। ফ্যাকাসে একটা হাসি হেসে অদিতি জানাল
— ওর মা ধরেছিল। উনি সব জেনে গেছেন।
— কি বললেন?
অদিতি মিষ্টি একটা হাসি হেসে উত্তর দিল
— হারামজাদী।
এমন সময় ফোনটা আবার বেজে উঠল। নীরব ফোনটা করেছে। ধরবে কি না এক মুহূর্ত ভাবল। এরপরে ফোনটা রিসিভ করল
— বলো
— সরি, আমি একটু বাথরুমে ছিলাম। মায়ের তরফ থেকে আমি সরি বলছি।
— সরির কি আছে। উনি ঠিকই করেছেন। বাট উনাকে সবকথা বলল কে?
— ফ্ল্যাটের দারোয়ান।
— দারোয়ান? ও জানল কি করে?
— ঐ হারামজাদা এসে দারোয়ানের সাথে আগে দোস্তালি করে। ওর ফেসবুক ফ্রেন্ড হয়। তারপর ওকে ছবিগুলো ম্যাসেজ করে। ফ্ল্যাটের সবাই জেনে গেছে। ইচ্ছা করেই এই কাজ করেছে, যেন তুমি বিপদে পড়। ছবিগুলো তো ছড়িয়েছে তিনদিন আগে। কোন রিয়াকশান হয়নি দেখে আজকে এই কাজ করে গেছে।
— ও।
— মা আজকেই গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছে। এসেই দেখে এই কাণ্ড। তিনতলা আর পাঁচতলার ভাবি এসে ছবিগুলো মাকে দেখিয়ে গেছেন। ছবি দেখে তো রেগে আগুন হয়ে গিয়েছিল। বলছিল এখনই এই মেয়েকে তালাক দে। উনাকে অনেক কষ্টে বুঝালাম, তালাকের সবকিছু রেডি করছি।
— রাগ কমেছে?
— নাহ। যখন বললাম, তোমার চরিত্র নিয়ে আমার আগে থেকেই সন্দেহ ছিল, তাই বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। তারপর থামল।
— ভালোই করেছ। এখন কি করবা? তালাকটা কবে দিবা?
চলবে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৪০

সানহিমেল বলেছেন: একই লেখা ডাবল এসেছে।

২| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অবশেষে বৃষ্টি নামল...
আশংকা ভয়, টেনশন. শেষ এবার সমাধানের পালা :)

+++

৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:৪০

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: লাইক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.